নমস্কার!
আমরা এইমাত্র যাঁদের বক্তব্য শুনলাম তাঁরা হলেন ইউএনইপি-র কর্ণধার মাননীয়া ইঙ্গার অ্যান্ডারসন, ইউএনডিপি-র কর্ণধার মাননীয় আকিম স্টেইনার, বিশ্বব্যাঙ্কের সভাপতি, আমার বন্ধু মিঃ ডেভিড ম্যালপাস, লর্ড নিকোলাস স্টার্ন, মিঃ কাস সানস্টেন, আমার বন্ধু মিঃ বিল গেটস, শ্রী অনীল দাশগুপ্ত, ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী শ্রী ভূপিন্দর যাদব,
আপনাদের বক্তব্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ,
ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ
প্রিয় বন্ধু,
নমস্কার।
আজকের এই অনুষ্ঠান এবং আজকের দিনটি – দুটিই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমরা পরিবেশ আন্দোলনের জন্য জীবনশৈলী – ‘লাইফ’এর সূচনা করলাম। এবছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের শ্লোগান হল ‘শুধুমাত্র একটি পৃথিবী।‘ এবারের মূল ভাবনা ‘প্রকৃতির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে স্থিতিশীলভাবে জীবনযাপন করা।’ এই ভাবনার মধ্যে বিষয়টির গুরুত্ব ও সমাধান দুটিই রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের গ্রহের সমস্যাগুলি আমাদের সকলেরই জানা। সময় এসেছে স্থিতিশীল উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানবকেন্দ্রিক এক যৌথ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। গত বছর গ্লাসগোতে COP26 সম্মেলনে আমি মিশন লাইফ – লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্টের প্রস্তাব রেখেছিলাম। সারা বিশ্বজুড়ে এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে। আমি আনন্দিত যে, লাইফ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্তটি আজ কার্যকর হল। এই রেকর্ড পরিমাণ সমর্থনের জন্য আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে মিশন লাইফ ব্যক্তিগতস্তরে ও যৌথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি উন্নত গ্রহের জন্য আমাদের পক্ষে যা যা সম্ভব আমরা তাই করব। লাইফের উদ্দেশ্য হল আমাদের গ্রহের নিয়মের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে জীবনযাপন করা, যাতে গ্রহের কোনো ক্ষতি না হয়। যাঁরা এই ধরণের জীবনযাপন করবেন তাঁদের ‘প্রো-প্ল্যানেট পিপল’ (গ্রহদরদী মানব) হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে। অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সময়কালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
বন্ধুগণ,
পৃথিবীর দীর্ঘ জীবনের মূল রহস্য হল আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রকৃতির সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলতেন। যখন প্রথার প্রশ্ন আসে, তখন দেখা যায় পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই খুব সহজ সরল ও স্থিতিশীল সমাধান রয়েছে।
ঘানায় প্রচলিত নিয়ম কচ্ছপের সংরক্ষণকে সাহায্য করে। তাঞ্জানিয়ার সেরেঙ্গাটি অঞ্চলে হাতি ও বুশবাক হরিণকে পবিত্র বলে বিবেচনা করা হয়।
তাই, এইসব প্রাণীরা অবৈধ শিকারের হাত থেকে রেহাই পায়। ইথিওপিয়ার ওকপাঘা ও ওকরিকি গাছগুলি বিশেষভাবে পূজিত হয়। জাপানে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ফুরোশিকিকে বিবেচনা করা হয়। সুইডেনের লাগম দর্শন একটি সুষম জীবনযাত্রা অতিবাহিত করতে উৎসাহ দেয়। ভারতে আমরা প্রকৃতিকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করি। আমাদের দেবদেবীদের নিজস্ব গ্রহ রয়েছ এবং কোনো না কোনো প্রাণী তাঁদের সঙ্গে যুক্ত। আমি তো মাত্র কয়েকটি উদাহরণ দিলাম। এধরণের বহু আচার ব্যবহার রয়েছে। সম্পদের ব্যবহার কমানো, সেটির পুনর্ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা আমাদের জীবনশৈলীর অঙ্গ। আমাদের সংস্কৃতিক ও জীবনযাত্রায় বৃত্তীয় অর্থনীতি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
বন্ধুগণ,
আমি ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দেশে আমাদের পরিবেশের জন্য বহু ভালো কাজ আমরা করেছি। আমাদের বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সিংহ, বাঘ, লেপার্ড, হাতি এবং গন্ডারের সংখ্যাও বেড়েছে। নির্ধারিত সময়ের ৯ বছর আগেই মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ জীবাশ্ম নয়, এধরণের জ্বালানির মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে প্রায় ৩৭ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে, প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ বেঁচেছে। যার ফলে, প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড কম মিশ্রিত হচ্ছে। আজ ভারত নির্ধারিত ৫ মাস আগেই জ্বালানিতে ১০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। নভেম্বর মাসে এই লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা ছিল। যা ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে।
২০১৩-১৪ সময়কালে জ্বালানির মধ্যে মাত্র ১.৫ শতাংশ ইথানল মেশানো হত। ২০১৯-২০ সময়কালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। এর ফলে, ভারতে জ্বালানি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ কমেছে, আমরা ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় করতে পেরেছি। এর ফলে, প্রায় ২৭ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইড কম নিঃসৃত হচ্ছে। আবার কৃষকের আয়ও ৫৫০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের সরকার এই ক্ষেত্রের উন্নয়নের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
বন্ধুগণ,
আগামী দিনে আরও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য প্রতিক্ষেত্রে আমরা উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করব। প্রযুক্তি এক্ষেত্রে আমাদের সব থেকে বড় সমর্থক হতে পারে। যখন প্রযুক্তি এবং প্রথার মেলবন্ধন ঘটে, তখন জীবনযাত্রার ধারণার পরিবর্তন হয়। আমি এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে শিক্ষা জগতের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, গবেষক এবং আমাদের স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের౼ বিষয়গুলি নিয়ে ভাবার প্রস্তাব জানাচ্ছি। তাঁদের তারুণ্যে ভরপুর উৎসাহ উদ্দীপনা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সারা পৃথিবীর অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের ভালো নিয়মগুলি আমরা অন্যদের মধ্যে ভাগ করে নেবো এবং অন্যেরা যে বিষয়গুলি মেনে চলে সাফল্য অর্জন করেছেন আমরা সেগুলি শিখবো।
মহাত্মা গান্ধী এমন এক জীবনশৈলীর কথা বলেছিলেন, যেখানে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হবে শূন্য। আসুন আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সেই পথ অনুসরণ করি।
আমরা স্থিতিশীল বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাকে গ্রহণ করি। সম্পদের পুনর্ব্যবহার, কম সম্পদ ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য নীতি অনুসরণ করে চলি। আমাদের গ্রহ একটিই, কিন্তু আমাদের উদ্যোগ অনেক। এক গ্রহ অনেক উদ্যোগ।
বন্ধুগণ,
উন্নত পরিবেশের জন্য যে কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করতে ভারত প্রস্তুত, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মঙ্গল হবে। আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড সেকথাই বলছে। আজ যোগ অভ্যাসকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা গর্বিত। আন্তর্জাতিক সৌর জোট, ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া, কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতো উদ্যোগগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্ব এই উদ্যোগগুলিকে সমর্থন যোগানোয় আমরা আনন্দিত। আমি নিশ্চিত লাইফ আন্দোলন আমাদের আবারও একত্রিত করবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে। আরও একবার আমি সারা পৃথিবীকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে আমাদের গ্রহকে সুন্দর করে তুলবো। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। এটাই কাজের সময়, লাইফের জন্য কাজের সময়, জীবনযাত্রার জন্য কাজের সময়, পরিবেশের জন্য কাজের সময়।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
(প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি ইংরেজিতে দিয়েছেন)