যোগ বর্তমানে এক আন্তর্জাতিক উৎসব হয়ে উঠেছে। এটি কোনভাবেই এখন আর ব্যক্তি কেন্দ্রিক নয়। তা এখন হয়ে উঠেছে মানব কেন্দ্রিক। আর ঠিক এই কারণেই এবারের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মূল থিমই হল মানুষ তথা মানব জাতির জন্য যোগ। রাষ্ট্রসংঘ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই থিমের মধ্য দিয়ে যোগের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সমগ্র মানব জাতির কাছে।
কর্ণাটকের মাইশূরু প্রাসাদ গ্রাউন্ডে অষ্টম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, যোগাভ্যাস মানুষের জীবনে শান্তি সুনিশ্চিত করে। শুধুমাত্র ব্যক্তির কাছেই নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছেই যোগের মাধ্যমে পৌঁছে যায় শান্তির বার্তা। এই কথাটি খুব সুন্দরভাবে ভারতীয় মহর্ষিরা ব্যক্ত করেছেন এই মন্ত্রটির মধ্য দিয়ে- “ইয়ৎ পিন্ডে তৎ ব্রহ্মান্ডে”। আমাদের শরীর ও আত্মা থেকে সূচনা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের। যোগ সাধনা মানুষের শরীর ও অন্তরে যা কিছু রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে তোলে এবং পৌঁছে দেয় সচেতনতার এক বিশেষ বার্তা। নিজেকে জানা এবং অনুভব করার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে জানা ও বোঝার আগ্রহ সৃষ্টি হয় যোগ সাধনার মধ্য দিয়ে। আর এইভাবে যখন আমরা নিজেদের তথা সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি তখনই আমরা চিহ্নিত করতে পারি কোন কোন বিষয়ে পরিবর্তন সাধন আশু প্রয়োজন সে সম্পর্কেও।
ব্যক্তি মানুষের জীবনশৈলীর সমস্যা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ এবং সেইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের মতো সমস্যা সমাধানের পথও আমরা খুঁজে পেতে পারি আত্ম তথা বিশ্ব উপলব্ধির মাধ্যমে। এইসমস্ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে যোগ আমাদের যোগ্য করে তোলে। কোটি কোটি মানুষের অন্তরে যদি শান্তি বিরাজ করে তাহলে বিশ্ব শান্তির পথও সুপ্রশস্ত হয়। এইভাবেই যোগ মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিভিন্ন দেশের মধ্যেও। যোগ সাধনাকে তাই মুশকিল আসান বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হয় না।
শ্রী মোদী বলেন, এ বছর ভারতে আমরা যোগ দিবস পালন করছি দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা উদযাপনের প্রাক্কালে। এই অমৃত মহোৎসবে যোগ দিবসের বাণী পৌঁছে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভারতে ৭৫টি শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলিতে উদযাপিত হবে যোগ দিবস। অন্যান্য শহরগুলিতেও একইভাবে যোগ সাধনার ঘটনা আমরা চাক্ষুস করতে পারবো। ভারতের ইতিহাস এবং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত সবকটি অঞ্চলই পরস্পর মিলিত হচ্ছে যোগ দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে। মাইশূরুর এই প্রাসাদ ভবনটিও ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের অতীত, ভারতের বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি সমবেত যোগ সাধনার মধ্য দিয়ে আমরা আবার নতুন করে খুঁজে পাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে যোগ জীবনের একটি অংশমাত্র নয়, বরং তা জীবনে এগিয়ে চলার একটি পথও। যোগাভ্যাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের দৈনন্দিন জীবন। তবে যোগ সাধনাকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেঁধে রাখা যায়না। দিনের যেকোন সময়ই যোগাভ্যাস তথা প্রাণায়াম করা সম্ভব। অনেকেই অফিসে কাজের ফাঁকে দন্ডাসন অভ্যাস করেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা আবার নতুন করে কাজ করার শক্তি ও উৎসাহ খুঁজে পান। আমাদের যেকোন ধরনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয় মাত্র কয়েক মিনিটের ধ্যানাভ্যাস। তাই যোগাভ্যাস তথা যোগ সাধনাকে অভ্যাস করার পাশাপাশি তার প্রসারের জন্যও আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। তাই যোগাভ্যাশ তথা যোগ সাধনার পাশাপাশি তার প্রসারের জন্যও আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।