মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আজ সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের অভিভাষণ সমস্ত সাংসদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এই অভিভাষণে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে। আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতিজীর অভিভাষণকে সমর্থন জানাতে এই সভায় আপনাদের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছি।

৪৫ জনেরও বেশি মাননীয় সদস্য এই অভিভাষণ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন। এটি বরিষ্ঠ সদস্যদের সভা, অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সভা। প্রত্যেকেই আলোচনাকে তথ্যপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করেছেন। শ্রী গুলাম নবী আজাদ, শ্রী আনন্দ শর্মা, শ্রী ভূপেন রাঘব, শ্রী সুধাংশ ত্রিবেদী, শ্রী সুধাকর শেখর, শ্রী রামচন্দ্র প্রসাদ, শ্রী রামগোপাল, শ্রী সতীশ চন্দ্র মিশ্র, শ্রী সঞ্জয় রাও, শ্রী স্বপন দাস, শ্রী প্রসন্নাচার্য, শ্রী এ নবনীত – এর মতো অনেক মাননীয় সাংসদ বক্তব্য রেখেছেন।

আপনারা নিজেদের ভাষণে কে কী বলেছেন, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে শুনেছি যে, আপনাদের বক্তব্যে অনেক নতুন নতুন বিষয় উঠে এসেছে। এই সভা এজন্য গর্ব করতে পারে যে, আমাদের বিগত অধিবেশন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছিল। সমস্ত মাননীয় সদস্যের সহযোগিতার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য এই সভার সকল সদস্যই অভিনন্দনযোগ্য।

কিন্তু এই সভা অভিজ্ঞ ও প্রবীণ সদস্যদের সভা, সেজন্য আপনাদের প্রতি দেশবাসীর প্রত্যাশাও অপার। আমার নিজেরও আপনাদের থেকে অনেক প্রত্যাশা ছিল যে, আপনাদের বক্তব্য থেকে অনেক ভালো ভালো কথা দেশের কাজে লাগবে, আমার মতো নতুন মানুষদের নতুন পথ দেখাবে। কিন্তু নতুন দশকে নতুন কলেবরে যেমন প্রত্যাশা ছিল, তা অপূর্ণ রয়ে গেছে, আমার অভিজ্ঞতা নিরাশাজনক।

এমন মনে হচ্ছে, আপনারা যেখানে থেমেছেন, সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন না, সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার কখনও কখনও মনে হয়, আপনারা পিছিয়ে পড়ছেন। হতাশা-নিরাশার আবহ তৈরি না করে, আপানারা যদি নিজেদের বক্তব্যে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা, নতুন ভাবনাচিন্তা, নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার, দেশবাসীকে নতুন পথ দেখাতেন, তাহলে সরকার ঋদ্ধ হ’ত। কিন্তু আপনারা হয়তো থেমে থাকাকেই নিজস্ব গুণাবলীতে পরিণত করেছেন। আপনাদের অবস্থা দেখে আমার কাকা হাথরসীর একটি ব্যঙ্গ কবিতা মনে পড়ছে।

অত্যন্ত সুন্দরভাবে তিনি লিখেছেন –

প্রকৃতি বদলায় প্রতি মুহূর্তে দেখো,

বদলাচ্ছে অণু, প্রতিটি কণা দেখো

তুমি নিষ্ক্রিয় হয়ে আছো

অদৃষ্টবাদ আঁকড়ে আছো।

ছাড়ো বন্ধু! পুরনো ঢাক,

জীবনে পরিবর্তন আনো

পরম্পরা থেকে উঁচুতে উঠে

উন্নত কিছু রচনা করো।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আলোচনা শুরু করে গুলাম নবীজী যখন বলেছিলেন, কিছু আক্রোশ ছিল, সরকারকে দায়ী করার প্রচেষ্টা ছিল, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু তিনি কিছু ভুল কথাও বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেন যে, সংসদে আলোচনা না করেই জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশবাসী নিশ্চয়ই সারাদিন ধরে টিভিতে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে সংসদে আলাপ-আলোচনা শুনেছেন ও দেখেছেন। আর সমস্ত প্রান্ত থেকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এটা ঠিক যে দুটো পর্যন্ত কয়েকজন ভ্যানে ছিলেন, কিন্তু যখন বাইরে থেকে খবরের পর খবর আসতে শুরু করেছে, তখন তাঁরাও সভাকক্ষে ফিরে আসা সমীচীন মনে করেছেন। দেশবাসী দেখেছেন যে, অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, বিস্তারিত চর্চা হয়েছে, আর বিস্তারিত আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাননীয় সদস্যরা তাঁদের মূল্যবান ভোটদানের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কিন্তু তিনি যখন এই প্রসঙ্গ তুলেছেন, আমি গুলাম সাহেবকে একটি ঘটনার কথা মনে করাতে চাই। পুরনো কথা মানুষ এতো তাড়াতাড়ি ভোলেন না। যখন তেলেঙ্গানা রাজ্যের জন্ম হয়েছিল, তখন এই সভার আবহ কেমন ছিল? দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, টিভি সম্প্রচারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আলোচনার কোনও সুযোগই সেদিন আপনারা দেননি। আর যে পরিস্থিতিতে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন আইন পাশ করা হয়েছিল, তা কেউ ভুলতে পারবেন না। আর সেজন্য আমাদের যত খুশি বকুন, আপনি অগ্রজ সদস্য, কিন্তু সত্যটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।

কয়েক দশক পর আপনাদের সামনে একটি নতুন রাজ্য গঠনের সুযোগ এসেছিল। আপনারা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ করতে পারতেন। এখন আনন্দজী বলছিলেন যে, রাজ্যগুলিকে জিজ্ঞেস করেছেন, অমুককে জিজ্ঞেস করেছেন, তমুকের কাছে জানতে চেয়েছেন? – অনেক কিছুই বলছিলেন। কিন্তু আপনারা তো তখন অন্ধ্র-তেলেঙ্গানার মানুষকেই জিজ্ঞেস করেননি যে, তাঁদের কী ইচ্ছা। কিন্তু আপনারা যা করেছেন, সেটা ইতিহাস। আর সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংজী লোকসভায় একটি কথা বলেছিলেন, যা আমি মনে করি, আজ আমাদের স্মরণ করা উচিৎ।

তিনি বলেছিলেন, তেলেঙ্গানা নিয়ে লাগাতার প্রতিবাদ ও আন্দোলন ভারতীয় গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করছে। অটলজীর নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পূর্ণ সম্মান, শান্তি ও সদ্ভাব বজায় রেখে তিনটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন – উত্তরাখন্ড, ঝাড়খন্ড এবং ছত্তিশগড়। আজ এই তিনটি রাজ্যই নিজেদের মতো করে দেশের প্রগতিতে নিজস্ব অবদান রাখছে। জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে – তা দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবদিক বিচার-বিবেচনা করেই নেওয়া হয়েছে। এখানে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে। কিছু পরিসংখ্যান আমার কাছেও আছে। আমার মনে হয়, এই সভায় সেই পরিসংখ্যানগুলি তুলে ধরা উচিৎ।

২০শে জুন, ২০১৮ রাজ্য সরকারের পতনের পর রাজ্যপালের আদেশ জারি হয়, তারপর রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয়। আর সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই আমি বলতে চাই যে, নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে স্বাধীনতার পর প্রথমবার গরিব সাধারণ মানুষ ‘সংরক্ষণ’ – এর সুবিধা পেয়েছেন।

জম্মু ও কাশ্মীরে প্রথমবার নানা পাহাড়ি ভাষায় কথা বলা মানুষেরা সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের মহিলারা প্রথমবার রাজ্যের বাইরের কোনও পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করার অধিকার পেয়েছেন, এরকম বিয়ে করলে এখন তাঁরা আর পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবার ঐ অঞ্চলগুলিতে ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচন হয়েছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে রেরা আইন চালু হয়েছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে স্টার্ট আপ পলিসি, গ্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট পলিসি, লজিস্টিক পলিসি রচিত হয়েছে এবং চালু করা হয়েছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে অ্যান্টি করাপশন ব্যুরো স্থাপিত হয়েছে – এই তথ্য জেনে দেশবাসী নিশ্চয়ই আশ্চর্য হবেন।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্তপার থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য টাকা আসায় লাগাম টানা গেছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অতিথি আপ্যায়নের পরম্পরায় যতিচিহ্ন টানা সম্ভব হয়েছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী মিলেমিশে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ করছে।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ কর্মীরা সেসব ভাতা পাচ্ছেন, যা অন্য সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা অনেক দশক ধরে পেয়ে আসছেন।

প্রথমবার জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ কর্মীরা এলটিসি নিয়ে সপরিবারে কন্যাকুমারী, উত্তর-পূর্বাঞ্চল কিংবা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে যেতে পারবেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, রাজ্যপাল শাসনের ১৮ মাসে সেখানে ৪ হাজার ৪০০-রও বেশি গ্রামপ্রধান এবং ৩৫ হাজারেরও বেশি পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত করার জন্য শান্তিপূর্ণ ভোটদান সম্পন্ন হয়েছে।

১৮ মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ২.৫ লক্ষ শৌচালয় নির্মিত হয়েছে।

১৮ মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ।

১৮ মাসে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩.৫ লক্ষ থেকেও বেশি মানুষকে আয়ুষ্মান যোজনার গোল্ড কার্ড প্রদান করা হয়েছে।

মাত্র ১৮ মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের দেড় লক্ষ বয়স্ক এবং দিব্যাঙ্গ মানুষকে পেনশন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

এই সভায় একথাও আজাদ সাহেব বলেছেন যে, উন্নয়ন তো আগেও হ’ত! আমি কখনও অস্বীকার করিনি। কিন্তু কেমন উন্নয়ন হ’ত, তার একটা উদাহরণ দিতে চাই।

জম্মু ও কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে মাত্র ৩.৫ হাজার বাড়ি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরের কম সময়ে ২৪ হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে।

এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার, স্কুলগুলির উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, পর্যটন উন্নয়নের জন্য পিএম প্যাকেজ সহ অন্য কয়েকটি প্রকল্পের কাজ দ্রতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

মাননীয় ভাইকোজীর একটি নিজস্ব স্টাইল রয়েছে। তাঁর বক্তব্য থাকে সর্বদা আবেগপূর্ণ। তিনি বলেছেন যে, ৫ই আগস্ট, ২০১৯ তারিখ জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি ‘কালা দিবস’। ভাইকোজী, এটা ‘কালা দিবস’ নয়, এটা সন্ত্রাস এবং বিচ্ছিন্নতাকে উৎসাহ প্রদানকারীদের জন্য ‘কালা দিবস’ হয়ে গেছে। সেখানকার লক্ষ লক্ষ পরিবারের জন্য একটা নতুন বিশ্বাস, একটা নতুন আশার কিরণ আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

শ্রদ্ধেয় সভাপতিজী, এখানে উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজাদ সাহেব বলেছেন যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলগুলি জ্বলছে। যদি সত্যিই জ্বলতো, তা হলে আপনারা অবশ্যই নিজেদের সাংসদদের প্রতিনিধিদল ওখানে পাঠাতেন, সংবাদ সম্মেলন করতেন, ছবিও ওঠাতেন। সেজন্য আমার মনে হয়, আজাদ সাহেব ২০১৪ সালের আগের কথা বলছেন। সেজন্যই আমি এই মুহূর্তে আপনাদের মনে করাতে চাই যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন অভূতপূর্ব শান্তি বজায় রেখে ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ৪০-৫০ বছর ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যেসব হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন হ’ত, বন্ধ-হরতাল চলতো, সবাই জানতো যে, এগুলি বড় চিন্তার বিষয় ছিল! কিন্তু আজ সেসব আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটেছে, বন্ধ-হরতাল আর হয় না, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।

আমি আরেকটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করতে চাইবো, বিগত প্রায় ২৫ – ৩০ বছর ধরে ব্রু-জনজাতিদের সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অনিশ্চয়তায় জীবন কাটাচ্ছিলেন। একেকটি অস্থায়ী কুঁড়েঘরে ১০০ জন শরণার্থী বাধ্য হয়ে অনেক কষ্টে থাকতেন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে তাঁরা এই যাতনা সহ্য করেছেন। অথচ, তাঁরা কোনও অপরাধ করেননি। এখন মজা দেখুন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেকগুলি রাজ্যে আপনাদের দলেরই সরকার ছিল। ত্রিপুরাতেও আপনাদের সঙ্গী দলের সরকার ছিল, আপনাদের বন্ধু দল, প্রিয় বন্ধু। আপনারা চাইলে তো মিজোরাম সরকার আপনাদের হাতে ছিল, ত্রিপুরায় আপনাদের বন্ধুদলের শাসন ছিল, কেন্দ্রে আপনারা বসে ছিলেন। আপনারা চাইলে ব্রু-জনজাতির সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারতেন না। কিন্তু আজ, এত বছর পরে আমরা সেই সমস্যার সমাধান এবং স্থায়ী সমাধান করতে আমরা সফল হয়েছি।

আমি কখনও ভাবি, এত বড় সমস্যা নিয়ে এতো উদাসীনতা কেন ছিল? কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি, এই উদাসীনতার কারণ হ’ল ব্রু-জনজাতির যে মানুষেরা নিজেদের বাড়ি এবং গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, নিঃস্ব হয়েছিলেন, তাঁদের যন্ত্রণা অপরিসীম ছিল, কিন্তু ভোট ছিল খুব কম। এই ভোটের জন্যই আমরা তাঁদের অপরিসীম দুঃখকে অনুভব করতে পারিনি। এর পুরনো ইতিহাস আমাদের ভোলা উচিৎ।

আমাদের ভাবনা আলাদা, আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস’ – এই মন্ত্র নিয়ে সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে আমরা যতটা সম্ভব এই সমস্যাগুলি সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছি। আমরা তাঁদের সমস্যা বুঝি। আজ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, দেশের এই ২৯ হাজার মানুষ নিজস্ব বাড়ি পাবেন, তাঁদের নিজস্ব পরিচয় গড়ে উঠবে, নিজেদের একটা জায়গা হবে। তাঁরা এখন নিজেদের মতো করে স্বপ্ন দেখতে পারবেন, তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন। এটাই ব্রু-জনজাতি তথা সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নান সমস্যা সমাধানের পথ।

আমি বোড়োদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে চাই না। কিন্তু, এক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য হ’ল, সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিংসার পথ ছেড়ে একসঙ্গে মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। আর সকলে চুক্তিপত্রে লিখেছেন যে, এরপর বোড়ো আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, আর কিছু বাকি নেই।

শ্রদ্ধেয় সুখেন্দু শেখর সহ অনেক বন্ধু এখানে আর্থিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই অধিবেশনের আগে যখন সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছিল, তখন আমি সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম, যাতে এই অধিবেশনে আমরা সবাই শুধু আর্থিক বিষয় নিয়ে কথা বলি, অধিবেশনটি যেন আর্থিক বিষয়ে বিশদ আলাপ-আলোচনা হয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে সব কথা উঠে আসা উচিৎ। মেধা সরকার পক্ষে কিংবা বিরোধী পক্ষের, মেধা একজোট করে আমরা সবাই মিলে এমন নতুন পথ খুঁজি, নতুন উপায় সৃষ্টি করি, যার মাধ্যমে আজকে বিশ্ব মন্দার পরিস্থিতি থেকে ভারতকে মুক্ত রাখা যায়। ভারত কিভাবে বেশি লাভবান হবে, নিজেদের আর্থিক শেকড় আরও সম্প্রসারণ করবে – এসব নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাই। আমি সর্বদলীয় বৈঠকে সবার সামনে এই অনুরোধই রেখেছিলাম। আর এখনও আমি চাই, বর্তমান অধিবেশনটি সম্পূর্ণ রূপে আর্থিক বিষয়ে সমর্পিত হোক।

বাজেট নিয়ে আলোচনা হলে, চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ হলে এ থেকে অমৃত বেরিয়ে আসবে। দেশের স্বার্থে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যতই দোষারোপ করি না কেন – এই মন্থন ও মতবিনিময় থেকে অমৃত বেরিয়ে আসুক। সেজন্য আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে আমাদের অর্থ-ব্যবস্থা, আর্থিক স্থিতি, আর্থিক নীতি নিয়ে আলোচনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ডঃ মনমোহন সিংজীর মতো অভিজ্ঞ মহানুভব ব্যক্তি আমাদের মধ্যে রয়েছেন। আপনাদের উপস্থিতি যেন দেশের উপকারে লাগে, সেটা আমাদের দেখা উচিৎ। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের খোলা মনে এগিয়ে আসা উচিৎ।

কিন্তু এতক্ষণ অর্থ-ব্যবস্থা নিয়ে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমি বলতে চাই, এত নিরাশ হওয়ার কিছু হয়নি। আজও দেশের অর্থ-ব্যবস্থার মৌলিক সিদ্ধান্ত ও মানদন্ডের সমস্ত মানকের ক্ষেত্রে আমাদের অর্থ-ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ণ শক্তির অধিকারী। এর অনুপম অন্তঃসলিলা উৎকর্ষ আমাদের দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য যথেষ্ট।

কোনও দেশ ছোট ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। দেশের যুবশক্তির প্রত্যাশা পূরণ করতে আমাদের বড় কিছু ভাবতে হবে, দূরদৃষ্টি রাখতে হবে, বেশি ভাবনা ও বেশি শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মূলমন্ত্র নিয়েই দেশকে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম দিনই যদি বলে দিই, না না এটা সম্ভব নয়, তা হলে কেমন করে হবে! শুধু যা সম্ভব ততটাই করতে হবে। দু’ধাপ সম্ভব হলে আমাদের ৫ ধাপ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ৭ ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সাহস রাখতে হবে। কখনও তো আমার সঙ্গে আসুন।

এই নিরাশা দেশের ভাল করতে পারে না, ৫ লক্ষ কোটি ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন দেখার সুন্দর পরিণাম হ’ল যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদেরকেও এখন ৫ লক্ষ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার কথা বারবার উচ্চারণ করতে হচ্ছে। এর মানে তাঁরাও এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চিন্তা করছেন। আমার সাফল্য এখানেই। সকলের ভাবনায় একটা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের সামনে অর্থনৈতিক তৎপরতার একটি ক্যানভাস তো দাঁড় করিয়ে দিয়েছি। এখন মানসিকতা পরিবর্তনের ফলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য গ্রাম ও শহরগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে বস্ত্র শিল্প উন্নয়ন, অন্যান্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এটাই তো চেয়েছিলাম। বস্ত্র শিল্প এগিয়ে যাক, স্টার্ট আপ এগিয়ে যাক, পর্যটনে আরও অনেক বড় সুযোগ তৈরি হোক, বিগত ৭০ বছরে আমাদের পর্যটন নিয়ে ভারতকে যেভাবে ব্র্যান্ড করা উচিৎ ছিল, কোনও না কোনও কারণে আমরা তা করে উঠতে পারিনি। আজ সেই সুযোগ এসেছে। আজ ভারতকে প্রথমে নিজেদের দৃষ্টিতে পর্যটন উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের পর্যটন উন্নয়ন করলে চলবে না, আমাদের মতো করে উন্নত করতে পারলেই বিশ্ববাসী ভারত ভ্রমণে আসবেন। তা না হলে শুধুই আমোদ-আহ্লাদের জন্য বিশ্বে অনেক জায়গা আছে, তাঁরা সেখানেই যাবেন।

আমরা যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’য় জোর দিয়েছিলাম, তার সুফল এখন দেখা যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগের পরিসংখ্যান থেকেই তা আপনারা বুঝতে পারবেন।

আমরা লাগাতার কর কাঠামো থেকে শুরু করে সমগ্র প্রক্রিয়াকে সরল করার চেষ্টা করে গেছি। সেজন্য বিশ্বে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ র‍্যাঙ্কিং থেকে শুরু করে দেশে ‘ইজ অফ লিভিং’ – এর ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা উভয় ক্ষেত্রে এগিয়েছি। আমার মনে পড়ে, আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন প্রায়ই জাতীয় খবরের কাগজগুলিতে অনেক বড় বড় অর্থনীতিবিদের লেখা পড়েছি, তাঁরা চাইতেন যে, ব্যাঙ্কগুলির একত্রীকরণ উচিৎ। তাঁদের চোখে তখন ব্যাঙ্ক একত্রীকরণই একটি বড় আর্থিক সংস্কার। আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সহজেই বেশ কয়েকটি বড় ব্যাঙ্ক সংযুক্ত করে দিয়েছি। আজ দেশে শক্তিশালী ব্যাঙ্ক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করে তুলেছে।

ব্যাঙ্কগুলির অনেক টাকা বাজারে ফেঁসে থাকার কারণে আজ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগোতে হবে। আমি প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত বলেছিলাম, আর আমি বারবার কাউকে নিচু করে দেখানোর চেষ্টা করি না। দেশের সামনে যে সত্য তুলে ধরা উচিৎ, তা হুবহু তুলে ধরে আমি নিজের পথে এগিয়ে যাই। এনিয়ে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। বলার জন্য সবসময়েই আমার নতুন অনেক বিষয় থাকে।

আরেকটি বিষয় বারবার আপনাদের আলোচনায় উঠে এসেছে যে, জিএসটি আইনে বারবার কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এটা কি ভালো না খারাপ? আমি অবাক! ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এই জিএসটি রচনাকে আমি একটি বড় সাফল্য বলে মনে করি। এই পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থায় এখন রাজ্যগুলির ভাবনা প্রাধান্য পায়। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও সমান গুরুত্ব পায়। আমরা কি একথা বলে দিতে পারি যে, আমরা যা করেছি, সেটাই চূড়ান্ত, ঈশ্বর সমস্ত বুদ্ধি আমাদেরকেই দিয়েছেন। এতে কোনও পরিবর্তন হবে না – এরকম বলা কি উচিৎ? আমরা এরকম ভাবি না। আমরা ভাবি যে, সময়ের সঙ্গে যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ। এত বড় দেশ, এত বিচিত্র বিষয়! যখন রাজ্যগুলির বাজেট পেশ হয়, তখন আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, বিক্রয় করের ক্ষেত্রে বাজেট নিয়ে আলোচনার পর অনেক পরিবর্তন আনতে হ’ত। এখন এসব বিষয় রাজ্যগুলি থেকে সরে এসে একত্রিত হয়েছে বলে একটু বেশি মনে হয়।

দেখুন, যাঁরা এখানে বলেছেন, পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থা অনেক সরল হওয়া উচিৎ ছিল – আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই, এত জ্ঞান যদি আপনাদের ছিল, তা হলে এত বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন কেন ভাই। এখন গুজব রটাবেন না।

এখন আমি বলবো আর আপনারা শুনবেন। প্রণবদা যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, দাদা এই প্রযুক্তিচালিত ব্যবস্থা নিয়ে কতটা কাজ এগিয়েছে। এছাড়া তো এই প্রক্রিয়া চালানোই সম্ভব নয়। তখন দাদা বলেন, দাঁড়াও ভাই, তোমার প্রশ্নের জবাব দিতে আমি সচিবকে ডাকছি। তিনি সচিবকে ডেকে বলেন, দেখো ভাই, এই মোদীজী কি বলছেন। আমি সচিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করি, এই প্রযুক্তিচালিত ব্যবস্থা নিয়ে কতটা কাজ এগিয়েছে? এছাড়া তো এই প্রক্রিয়া চালানোই সম্ভব নয়। সচিব সাহেব বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই কাজ করার জন্য আমরা কোনও কোম্পানিকে দায়িত্ব দেবো। তখন আমি বলেছিলাম যে, আপনাদের পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থা সফল করতে শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির সমস্যা আগে সমাধান করতে হবে। তামিলনাডু, কর্ণাটক, গুজরাট, মহারাষ্ট্র – এরকম ১১টি শিল্পোন্নত রাজ্য রয়েছে। উপভোক্তা রাজ্যগুলির জন্য এতটা সমস্যা নেই। আর আমি আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, প্রয়াত অরুণ জেটলি যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এই বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করে এর সমাধান করেছেন। তাঁর অবদানের ফলেই আজ জিএসটি সারা দেশে জনপ্রিয় হয়েছে।

সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আমি যে প্রশ্ন তুলেছিলাম, পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেই সমস্যা সমাধানের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই সমাধানই জিএসটির পথকে প্রশস্ত করবে।

শুধু তাই নয়, আমরা যদি এর কোনও অংশের পরিবর্তন চাই, তা হলে পরবর্তীকালে প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয় যে, বারবার কেন পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমাদের সংবিধান রচয়িতা মহাপুরুষেরা এত চিন্তাভাবনা করে সংবিধান রচনার পরও তাতে সময়োচিত সংশোধনের সুযোগ রেখেছেন। প্রত্যেক ব্যবস্থায় সংস্কারকে সর্বদাই স্বাগত জানানো উচিৎ। আর আমরা দেশের স্বার্থে প্রত্যেক নতুন ও সুপরামর্শকে স্বাগত জানানোর মতো খোলা মন নিয়ে চলি।

শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, ভারতের অর্থ-ব্যবস্থায় আজও একটি জিনিস নিয়ে কম কাজ হয়েছে, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। দেশে সার্বিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলি দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে এবং উন্নয়নে অবদান রাখছে। খেলাধুলোর ক্ষেত্রেও দেখবেন, এই শহরগুলির ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসছে। শিক্ষা ও স্টার্ট আপের ক্ষেত্রেও তাঁরা সমভাবে এগিয়ে আসছে। সেজন্য আমাদের দেশে উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবসম্প্রদায় খুব একটা কায়দা-কানুনের চাপে থাকা পছন্দ করে না, তাঁদের কথা ভেবেই আমরা এই ছোট শহর ও শহরতলীগুলির অর্থ-ব্যবস্থায় যাতে উন্নতি হয়, সেই লক্ষ্য রেখে কাজ করার চেষ্টা করছি।

আমাদের দেশে ডিজিটাল লেনদেন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, বাজেট অধিবেশনে যিনি ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তিনি নিজে যদি তাঁর ভাষণের রেকর্ডিং শোনেন, তা হলে আশ্চর্য হবেন যে, আমি এরকম বলেছিলাম! অনেকে তো মোবাইল নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেছেন। আমি তাঁদের কথা শুনে অবাক হয়েছি। কারণ, আজ দেশের যে কোনও জায়গায় বিলিং ব্যবস্থা বদলে গেছে। ডিজিটাল লেনদেন এত বেড়েছে যে, টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলিতে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। আমাদের রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। বিমানবন্দর, উড়ান যোজনা – এই গত পরশুই দেশে ২৫০তম এয়ার রুট চালু হয়েছে। এর মানে দেশের মধ্যে ২৫০টি বিমান চলাচলের পথ রয়েছে, যা দ্রুতগতিতে আমাদের বিমানযাত্রার ব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে।

আমরা বিগত পাঁচ বছরে দ্রুতগতিতে কাজ করেছি। ২০১৪ সালে দেশে সক্রিয় বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল ৬৫টি। আজ সেই সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে। তেমনই বিগত পাঁচ বছরে শুধু সরকার বদলায়নি, ভাবনাও বদলেছে, কর্মসংস্কৃতিও বদলেছে। আমরাও নিজেদের দৃষ্টিকোণ বদলেছি। শুধু ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে যদি বলি, ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজ শুরু আগে হয়েছিল। পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ৫৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছেছিল। আর আমরা বিগত পাঁচ বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিয়েছি। শুধু এতেই ক্ষান্ত থাকিনি, সরকারি স্কুল, গ্রাম পঞ্চায়েত ও অন্যান্য দপ্তরে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও গ্রামে গ্রামে ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’-ও চালু করেছি।

২০১৪ সালে আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন দেশে ৮০ হাজার ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’ছিল।আর আজ দেশে এই ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’-এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার হয়েছে। গ্রামের যুবক-যুবতীরাই এই ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’গুলি চালাচ্ছেন। আর গ্রামগুলির প্রয়োজন পূরণের উপযোগী প্রযুক্তি পরিষেবা তাঁরাই প্রদান করছেন।

আমাদের দেশের গ্রামে ১২ লক্ষেরও বেশি এরকম যুবক-যুবতী রয়েছেন, যাঁরা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাবা-মাকেও সাহায্য করেন। প্রয়োজনে চাষের কাজেও হাত লাগান। এই কমন সার্ভিস সেন্টারগুলিতে ১২ লক্ষ গ্রামীণ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

আমাদের দেশের জন্য গর্ব হওয়া উচিৎ। অনেকে সরকারের সমালোচনার জন্য ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছিলেন, তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, আজ বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ভীম অ্যাপ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নিরাপদ মঞ্চ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। সারা পৃথিবীতে এর স্বীকৃতি প্রতিদিন বাড়ছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সারা পৃথিবী থেকে মানুষ সরাসরি যোগাযোগ করছেন। এটা দেশের জন্য গর্বের কথা। এই অ্যাপ নরেন্দ্র মোদী আবিষ্কার করেনি। আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের মেধা ও প্রতিভার সুবাদে আজ ডিজিটাল লেনদেনে এমন একটি উন্নত মঞ্চ আমাদের কাছে আছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এ বছর জানুয়ারি মাসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভীম অ্যাপ ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়েছে। শুধু জানুয়ারি মাসেই ১৬ হাজার কোটি টাকা! এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, আমাদের দেশ এই বিবর্তনকে কিভাবে আপন করে নিয়েছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, রুপে কার্ড কিভাবে শুরু হয়েছিল, সে বিষয়ে আপনারা সবাই জানেন। মাত্র কয়েক হাজার রুপে কার্ড দিয়ে এর সূত্রপাত হয়েছিল। ডেবিট কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করতেন মাত্র ০.৬ শতাংশ মানুষ। আর আজ দেশে রুপে কার্ডের ব্যবহার প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বের অনেক দেশে রুপে ডেবিট কার্ডের স্বীকৃতি ক্রমবর্ধমান। ভারতের রুপে কার্ড আজ গোটা বিশ্বে যে সম্ভ্রম আদায় করে নিচ্ছে, সেজন্য আমাদের গর্ব করা উচিৎ।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এভাবে আমাদের সরকারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীর আরেকটি বিষয় হ’ল ‘জল জীবন মিশন’। আমরা দেশের মৌলিক নাগরিক পরিষেবা প্রদানের সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শৌচাগার – ১০০ শতাংশ

নিজস্ব বাড়ি – ১০০ শতাংশ

বিদ্যুৎ – ১০০ শতাংশ

সব গ্রামে বিদ্যুৎ – ১০০ শতাংশ

আমরা প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেশকে সমস্যামুক্ত করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি।

আমরা বাড়ি বাড়ি বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি বড় অভিযান শুরু করেছি। এর বৈশিষ্ট্য হ’ল – এটি পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি, কেন্দ্রই এর ব্যয়ভার বহন করছে। অর্থাৎ, চালিকাশক্তি কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু বাস্তবায়নে শাসন ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম একক, দেশের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কাজ করছে। গ্রামের জনপ্রতিনিধিরাই পরিকল্পনা করছেন, কিভাবে প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়। তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে অর্থ জমা করছে।

আমাদের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর একটি উত্তম উদাহরণ – ১০০টিরও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলায় উন্নয়নের কাজ শুরু করা। আমাদের দেশে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। পাশাপাশি, অনেক অঞ্চল অনুন্নয়নের শিকার হয়েছে। দেরীতে হলেও আমরা ক্ষমতায় আসার পর এই অঞ্চলগুলির উন্নয়নের কাজ দ্রুতগতিতে শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অনেক রাজ্যের বেশ কিছু জেলা সম্পূর্ণ পশ্চাদপদ। আমরা যদি শুধু সেই রাজ্যে গড় উন্নয়ন মাত্রায় সেই অঞ্চলগুলির উন্নয়ন পরিকাঠামোকে পৌঁছে দিতে পারি, তা হলে দেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে। অনেক জেলায় সবচেয়ে অকর্মণ্য আধিকারিকদের পোস্টিং দেওয়া হ’ত। আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর তেজি আধিকারিকদের পোস্টিং উন্নত জেলাগুলিতে হ’ত। আমরা সেই দৃষ্টিভঙ্গী বদলেছি। সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্য থেকে উন্নয়নের মাপকাঠিতে পিছিয়ে পড়া এ ধরনের শতাধিক জেলাকে চিহ্নিত করে আমরা সেগুলিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা নাম দিয়েছি। এগুলির উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এগুলির প্রশাসনিক ব্যবস্থায় প্রাণসঞ্চার করার জন্যে সবচাইতে সক্রিয় আধিকারিকদের পাঠিয়ে তাদের সবরকম সাহায্য করার ব্যবস্থা রেখেছি।

আজ আমরা বুঝতে পারছি যে জেলাস্তরেও এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বাস্তবায়ন সংস্থা রূপে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। এই জেলাগুলির আধিকারিকদের মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা চলছে। টিকাকরণের ক্ষেত্রে কে কার থেকে বেশি এগিয়ে গেছে, এই নিয়ে প্রতিযোগিতা প্রত্যেক সপ্তাহে অনলাইনে অন্যদের সাফল্যের খতিয়ান দেখে পরের সপ্তাহে নিজের জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা – এই সাফল্যের কারণ।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ক্ষেত্রেও আমরা এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ঐ জেলাগুলির বিভিন্ন জনজাতি ভাইবোন এবং দিব্যাঙ্গদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ সংবেদনশীলতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।

বিগত পাঁচ বছরে দেশের সমস্ত জনজাতির বীর সৈনিকদের সম্মানিত করার কাজ করেছি। সারা দেশে জনজাতির মানুষেরা স্বাধীনতা আন্দোলনে যে অবদান রেখেছিলেন, তার স্মারকগুলি সংরক্ষণ করে বিভিন্ন সংগ্রহশালা, গবেষণা সংস্থা নির্মাণ করেছি। দেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তাঁদের কীর্তি ও শৌর্যগাথা দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবে। দেশের ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করার কাজেও সুফলদায়ক হবে – এই ভাবনা নিয়েই আমরা কাজ করে চলেছি।

আমাদের দেশের জনজাতি শিশুরা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক সামর্থ্য রাখে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যথাযথ সুযোগ পেলে তারা যে কারও থেকে কম নয় – তা প্রমাণ করে দিতে পারে। আমরা দেশের জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে অনেক একলব্য স্কুল খুলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের সুযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি, ঐ অঞ্চলগুলিতে ৩০ হাজার স্বরোজগার গোষ্ঠী গঠন করে ঐ বন ধন থেকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেছি।

নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের অভিভাষণে সংক্ষেপে অনেক সাফল্যের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমরা ঐতিহাসিকভাবে স্কুলে ছাত্রীদের দৈনিক উপস্থিতির স্বীকৃতি দিয়েছি। মিলিটারি পুলিশেও মহিলাদের নিযুক্তির কাজ চালু করেছি।

দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ৬০০টিরও বেশি ওয়ান স্টপ সেন্টার গড়ে তুলেছি। দেশের প্রত্যেক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

যৌন অপরাধীদের চিহ্নিতকরণের জন্য একটি জাতীয় ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে। এতে এ ধরণের মানুষদের দিকের শ্যেনদৃষ্টিতে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, অপহরণের ব্যবসা রুখতে একটি অভিনব একক স্থাপনের প্রকল্প রচনা করেছি।

শিশুদের যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে পসকো আইন সংশোধনের মাধ্যমে অপরাধের পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে আমরা এই অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারি। এই মামলাগুলিতে যাতে দ্রুত বিচার হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সারা দেশে ১ হাজারেরও বেশি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠন করা হচ্ছে।

শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়েও এই সভায় আলোচনা হয়েছে। এখানে বারবার বলার চেষ্টা করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের নামে যে হিংসা ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলিকে আন্দোলনের মর্যাদা দেওয়া হোক। বারংবার অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপকে সংবিধানের সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি কংগ্রেসের সমস্যাগুলি বুঝতে পারি। কিন্তু কেরলের বামফ্রন্টের বন্ধুরাও কেন ব্যাপারটা বুঝছেন না? এখানে বলার আগে তাঁদের জানা উচিৎ ছিল, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেছেন, সেখানকার আন্দোলনকারীদের পেছনে অনেক উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।

শুধু তাই নয়, তিনিই তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেবেন বলেছেন। কেরলে যে ধরণের অরাজকতা আপনাদের বিব্রত করছে, দিল্লি এবং দেশের অন্যত্র সে ধরণের অরাজকতাকে আপনারা কিভাবে সমর্থন করতে পারেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যেসব কথা বলা ও প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে তাঁদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিৎ। দেশবাসীকে ভুল কথা বলা, বিভ্রান্ত করার এই পথ ত্যাগ করা কি আমাদের উচিৎ নয়। আমি জানি, সিএএ-র পক্ষে কথা বললে, আপনাদের রাজনৈতিক লাভ হবে না। তা সত্ত্বেও নিছকই বিরোধিতার স্বার্থে বিভ্রান্তি ছড়ানো কোনও পথ হতে পারে না। সবাই মিলে বসে ভাবুন যে আপনারা ঠিক পথে চলছেন কিনা! এ কেমন দ্বৈত চরিত্র! আপনারা ২৪ ঘন্টা সংখ্যালঘুদের দোহাই দেন। অনেক সুন্দর সুন্দর শব্দ প্রয়োগ করেন। এই অধিবেশনে আমি আনন্দজীর বক্তৃতাতেও এরকম অনেক সুন্দর শব্দ শুনেছি। কিন্তু আপনাদের অতীতের ভুলের কারণে আমাদের প্রতিবেশী দেশে যাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যে অত্যাচার ও নিপীড়ন চলছে, তা আপনাদের মনে ঝড় তোলে না। এহেন সংবেদনশীল বিষয়ে জনগণকে ভয় না দেখিয়ে তাঁদের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশবাসী আমাদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করেন। বিরোধী পক্ষের অনেক বন্ধুর সাম্প্রতিক উৎসাহ আমাকে অবাক করেছে। যাঁরা আগে নীরব ছিলেন, তাঁরাও আজকাল উগ্রতা দেখাচ্ছেন। সভাপতি মহোদয়ের বদান্যতার প্রভাব। কিন্তু আমি আজ এই সভাকক্ষে এ বিষয়ে দেশের কয়েকজন সর্বমান্য মহাপুরুষের বক্তব্য পড়ে শোনাতে চাই।

প্রথম বক্তব্য হল – “এই সংসদের অভিমত হ’ল যে, পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি এবং মর্যাদা রক্ষার প্রেক্ষিতে/নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের/পাকিস্তানের ঐ অংশে সাধারণভাবে মানবাধিকার অস্বীকার করা, ভারত সরকারের উচিৎ/সাধারণ বিধিনিষেদের পাশাপাশি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির/পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী হয়ে আসা মানুষদের স্থানান্তর সীমাবদ্ধ করার পাশাপাশি, বিশ্ব মতামতের তালিকাভুক্ত/তালিকাভুক্তকরণের পদক্ষেপগুলি বিবেচনা করা উচিৎ”।

এই কথাগুলি এই সভাকক্ষেই বলা হয়েছিল। আপনারা হয়তো ভাবছেন, কে এই কথা বলেছেন? হয়তো কোনও জনসংঘের নেতা। সেই সময় তো বিজেপি ছিল না, জনসংঘ ছিল। কিন্তু এই বক্তব্য কোনও জনসংঘের নেতার নয়। তাঁর বলা দ্বিতীয় একটি উক্তি আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন – পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমস্ত অমুসলিমদের বের করে দেওয়ার সপক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র। একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে তারা ভাবে, শুধু মুসলমানরাই থাকতে পারবে, অন্যরা নয়। সেজন্য হিন্দু ও খ্রীস্টানদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি যতদূর জানি, প্রায় ৩৭ হাজারেরও বেশি খ্রীস্টান শরণার্থী হয়ে ভারতে এসেছেন। বৌদ্ধদেরও সেদেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

এই বক্তব্য কোনও জনসংঘ কিংবা বিজেপি নেতার নয়। আমি এই সভার সদস্যদের বলতে চাই যে, এই উক্তি দেশের মানুষের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীদের অন্যতম শ্রদ্ধেয় লালবাহাদুর শাস্ত্রীজীর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত। এখন আপনারা তাঁকেও হয়তো ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দেবেন। আপনারা তাঁকেও হয়তো হিন্দু আর মুসলমানের বিভাজনকারী বলে দেবেন।

এই সংসদে দাঁড়িয়ে লালবাহাদুর শাস্ত্রী এই বক্তব্য রেখেছিলেন তেসরা এপ্রিল, ১৯৬৪ সালে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেহরুজী। তখন ধর্মীয় কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিতাড়িত অসংখ্য শরণার্থীদের নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছিল। তখনই শাস্ত্রীজী একথা বলেন।

শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, এখন আমি সভাকক্ষের মাননীয় সদস্যদের আরেকটি বক্তব্য শোনাতে চাই, এগুলি আমি বিশেষ করে আমার সমাজবাদী বন্ধুদের সমর্পণ করছি। হয়তো তাঁরা এই বক্তব্য থেকে প্রেরণা পেতে পারেন। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। “হিন্দুস্তানের মুসলমান বাঁচুক আর পাকিস্তানের হিন্দু বাঁচুক। আমি এটা মানি না যে পাকিস্তানের হিন্দুরা পাকিস্তানের নাগরিক বলে আমাদের তাদের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে হবে না। পাকিস্তানের হিন্দু যেখানকার নাগরিকই হোন না কেন, হিন্দুস্তানের হিন্দু কিংবা মুসলমানকে রক্ষা করা আমাদের যতটা কর্তব্য ততটাই কর্তব্য পাকিস্তানের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা”।

একথা কে বলেছেন? একথাও কোনও জনসংঘ কিংবা বিজেপি নেতা বলেননি। একথা বলেছিলেন, শ্রদ্ধেয় রামমনোহর লোহিয়াজী। আমাদের সমাজবাদী বন্ধুরা, আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ আমাকে মানুন কিংবা না মানুন, কিন্তু কমপক্ষে আপনারা লোহিয়াজীকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করবেন না।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আমি এই সভাকক্ষে শ্রদ্ধেয় লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আরেকটি বক্তব্য উদ্ধ্বৃত করতে চাই। শরণার্থীদের প্রতি দেশের রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা নিয়ে তিনি একথা বলেছিলেন। আজ ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির ফলে রাজ্যগুলির বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করে যেরকম খেলা শুরু হয়েছে, লালবাহাদুর শাস্ত্রীজীর এই বক্তব্য আপনারা শুনে নিন। আপনারা বুঝতে পারবেন যে, আপনারা কোথায় যাচ্ছিলেন, কোথায় ছিলেন, আপনাদের কী হয়েছে?

সভাপতিজী, লালবাহাদুর শাস্ত্রীজী বলেছিলেন –

“আমাদের সমস্ত রাজ্য সরকার এটা (শরণার্থী পুনর্বাসন) জাতীয় স্বার্থে গ্রহণ করেছে। সেজন্য আমরা তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই আর এমন করে আমাদের খুবই আনন্দ হয়। বিহার হোক কিংবা ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ হোক কিংবা উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র হোক কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশ, আমাদের সমস্ত রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছে যে, তাঁরা নিজেদের রাজ্যে শরণার্থী পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত। কেউ ৫০ হাজার শরণার্থী, কেউ ১৫ হাজার পরিবার আবার কেউ ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রস্তুত”।

শাস্ত্রীজী এই বক্তব্য যখন রেখেছিলেন ১৯৬৪ সালে, তখন দেশের অধিকাংশ রাজ্যে কংগ্রেসেরই সরকার ছিল। আজ আমরা যখন আপনাদের অসম্পূর্ণ কাজ করছি, আপনারা ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আমি আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই, ২৫ নভেম্বর, ১৯৪৭ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মাস পরই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি একটি প্রস্তাব পাশ করে। সেই প্রস্তাবে লেখা ছিল – ‘কংগ্রেস দল, পাকিস্তান থেকে যে অমুসলমানরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছেন, তাঁদের জীবন ও সম্পত্তির সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে বাধ্য”। আর আজ আপনারা অমুসলমানদের জন্য কেমন শব্দাবলী ব্যবহার করছেন।

শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, আমি মনে করি না যে, ১৯৪৭ সালের ২৫শে নভেম্বর কংগ্রেস ‘সাম্প্রদায়িক’ ছিল। আর আজ হঠাৎ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হয়ে পড়েছে – এটাও মনে করি না। ১৯৪৭ সালের ২৫শে নভেম্বর আপনারা ‘অমুসলমান’ না লিখে ‘পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা সবাই’ কেন লেখেননি? ‘অমুসলমান’ কেন লিখেছিলেন?

দেশ বিভাগের পর যে হিন্দুরা পাকিস্তানে থেকে গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন আমাদের দলিত ভাই-বোন’ তাঁদেরকে বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন –

“আমি পাকিস্তানে থেকে যাওয়া বিভিন্ন অনুসূচিত জাতির বন্ধুদের বলতে চাই – আপনারা ভারতে চলে আসুন”।

এই সমস্ত কথা যে মহান ব্যক্তিরা এসব বক্তব্য রেখেছেন, তাঁরাই এই দেশটাকে তৈরি করেছেন। তাঁরা সবাই কি ‘সাম্প্রদায়িক’ ছিলেন? কংগ্রেস ও সহযোগী দলগুলি আজ ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে সেই রাষ্ট্রনির্মাতাদের ভুলে যেতে বসেছে, এটা দেশের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এখানে উপস্থিত অনেকেই হয়তো ১৯৯৭ সালেও এখানে ছিলেন। সে বছরই তৎকালীন সরকারের নির্দেশে ‘হিন্দু’ এবং ‘শিখ’দের ব্যবহার শুরু হয়। আগে হ’ত না, তখনই যুক্ত করা হয়েছে। ২০১১ সালে এতে পাকিস্তান থেকে আগত ‘খ্রীস্টান’ কিংবা ‘বৌদ্ধ’ শব্দগুলির ক্যাটাগরিও তৈরি করা হয়েছে। এসব কিছু ২০১১ সালে হয়েছে।

২০০৩ সালের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। ‘নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ২০০৩’ নিয়ে যে ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ পার্লামেন্ট’ আলাপ-আলোচনা করে এটাকে এগিয়ে নিয়ে আসেন, সেই কমিটিতে কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের অনেক সদস্য আজও এই সভাকক্ষে উপস্থিত আছেন। ঐ ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ পার্লামেন্ট’ – এর রিপোর্টে লেখা ছিল “প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আগত সংখ্যালঘুদের দু’ভাগে ভাগ করে দেখতে হবে। প্রথমত, যাঁরা ধর্মীয় নিপীড়নের ফলে এসেছেন এবং দ্বিতীয়ত, যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা সামাজিক অশান্তির কারণে এসেছেন”। আজ যখন ১৭ বছর পর সরকার এই কথাগুলিই বলছে, তখন এটা নিয়ে হাঙ্গামা হচ্ছে কেন?

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, ২০০৪ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি মেনে কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্থানের দুটি জেলা এবং গুজরাটের ৪টি জেলার কলেক্টরদের অধিকার দিয়েছিল যে, তাঁরা পাকিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মের মানুষদের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারবেন। এই নিয়ম ২০০৫ এবং ২০০৬ সালেও চালু ছিল। ২০০৫ – ০৬ – এ আপনারাই ক্ষমতায় ছিলেন। তখন এটা সংবিধানের মূল ভাবনার জন্য সংকট সৃষ্টি করেনি, এর বিরুদ্ধে ছিল না।

আজ থেকে ১০ বছর আগে পর্যন্ত যা ঠিক ছিল, যা নিয়ে কোনও হট্টগোল হ’ত না, আজ হঠাৎ করে আপনাদের দুনিয়া বদলে গেছে। পরাজয়, পরাজয় যে আপনাদের এত সমস্যায় ফেলবে তা আমি কখনও ভাবিনি।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এনপিআর নিয়েও অনেক আলোচনা হচ্ছে। আদমসুমারি আর এনপিআর হ’ল সাধারণ প্রশাসনিক গতিবিধি, যা দেশে আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির কারণে আপনাদের এমন অসহায় অবস্থা যে, ২০১০ সালে যাঁরা এনপিআর চালু করেছিলেন, তাঁরাই আজ গুজব রটাচ্ছেন, বিরোধিতা করছেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, জনগণনার ক্ষেত্রেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, নথিভুক্তিকরণের সময় প্রত্যেক নাগরিকের যত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, পরবর্তী দশকগুলিতে আরও অনেক বেশি বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে নাগরিকদের জন্য সরকারের পরিষেবা বৃদ্ধির প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহের বিষয় বেড়ে যেতে থাকে। ফর্মে ছোটখাটো পরিবর্তন হতে থাকে। আমাদের গুজব রটানোর চেষ্টা করা উচিৎ নয়। আমাদের দেশে মাতৃভাষা নিয়ে এমন সঙ্কট আগে কখনও হয়নি। আজ গুজরাটের সুরাট শহরে ওড়িশা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসা অসংখ্য মানুষ রয়েছেন। এখন গুজরাট সরকার যদি বলে, আমরা ওড়িয়া মাধ্যম স্কুল চালাবো না – এই অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না। আমি মনে করি, সরকারের কাছে এই তথ্য থাকা উচিৎ যে, কার মাতৃভাষা কী? তাঁর বাবার মাতৃভাষা কী ছিল? এ ধরণের তথ্য হাতে থাকলে তবেই গুজরাট সরকার সুরাটে ওড়িয়া মাধ্যম স্কুল চালু করতে পারবে। আগে দেশের মধ্যে এতো স্থানান্তরন হ’ত না। এখন যেহেতু জীবন-জীবিকার কারণে ব্যাপক স্থানান্তরণ হচ্ছে – তাই এইসব তথ্য সংগ্রহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আগে আমাদের দেশে অনেক কম স্থানান্তরণ হ’ত। সময় থাকতে থাকতে বড় শহরগুলির প্রতি গ্রামের মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি, শহরগুলির দ্রুত উন্নয়ন, জনগণের প্রত্যাশা বৃদ্ধির ফলে বিগত ৩০-৪০ বছর ধরে আমরা নিয়মিত শহরগুলিতে জীবিকার খোঁজে গ্রামের মানুষের ভিড় বাড়তে দেখেছি।

এখন কোন জেলাগুলি থেকে বেশি মানুষ কোন শহরগুলিতে গিয়ে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছেন, কতজন গেছেন – এসব তথ্য জানলে তবেই ঐ জেলাগুলির উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হবে।

আপনারাই ২০১০ সালে এনপিআর এনেছেন। আর আপনারাই এখন মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন, বিরোধিতা করছেন। আমরা ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা কি আপনাদের সংগ্রহ করা এনপিআর তথ্যাবলী নিয়ে কোনও রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছি। সমস্ত নথি তো এখন আমাদের কাছে রয়েছে। এখন এনপিআর কেন হবে না? কেন মিথ্যে কথা বলছেন? মানুষকে কেন ভুল বোঝাচ্ছেন? আপনাদের সংগ্রহ করা এনপিআর তথ্যাবলী আমাদের কাছে আছে। এদেশের কোনও নাগরিককে সেই এনপিআর – এর ভিত্তিতে আমরা প্রতারিত করিনি।

শুধু তাই নয়, মাননীয় সভাপতি মহোদয়, ইউপিএ-র তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এনপিআর – এর উদ্বোধনের সময় প্রত্যেক সাধারণ নাগরিকের এনপিআর তালিকায় নথিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকেরই এই তালিকায় নাম তোমা উচিৎ। তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছেও আবেদন রেখেছিলেন যে, তারা যেন এনপিআর সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার করেন।

ইউপিএ সরকার ২০১০ সালে এনপিআর চালু করে ২০১১ থেকে এর জন্য বায়োমেট্রিক তথ্যাবলী সংগ্রহ শুরু করে। ২০১৪ সালে আমাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই দেশের কোটি কোটি নাগরিকের ফটো স্ক্যান করে রেকর্ড রাখার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বায়োমেট্রিক তথ্যাবলী সংগ্রহের কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। এটা আমি আপনাদের শাসনকালের কথা বলছি।

আমরাও দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালে আপনাদের এনপিআর তথ্যাবলী আপডেট করেছি। এই তথ্যগুলির মাধ্যমেই এই তথ্যাবলীর মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মতো সরকারের যাবতীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সামিল করেছি। অনেক গরিব মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

কিন্তু আজ রাজনৈতিক কারণে আপনারা এনপিআর – এর বিরোধিতা করছেন, আর কোটি কোটি গরিব মানুষ সরকারের জনকল্যাণকারী প্রকল্পগুলির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আপনারা তুচ্ছ ক্ষমতার লোভে এই পাপ করছেন। আপনাদের দরিদ্র বিরোধী ভাবমূর্তি প্রকট হচ্ছে।

২০২০ সালের জনগণনার পাশাপাশি, আমরা এনপিআর তথ্যাবলী আপডেট করাতে চাই, যাতে গরিব মানুষের স্বার্থে শুরু করা প্রকল্পগুলি আরও কার্যকরিভাবে সততার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু আপনারা যেহেতু এখন বিপক্ষে রয়েছেন, নিজেদের চালু করা এনপিআর আপনাদেরই পছন্দ হচ্ছে না।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, দেশের সমস্ত রাজ্য সরকার এনপিআর-কে নোটিফিকেশন জারি করে অনুমোদন দিয়েছে। এখন কয়েকটি রাজ্য সরকার উল্টোপথ নিয়ে এই প্রক্রিয়ায় বিপত্তি সৃষ্টি করছে। আর সচেতনভাবেই এর গুরুত্ব এবং গরিবদের জন্য সুফলের দিকটিকে নস্যাৎ করছে। আপনারা যেসব কাজ গত ৭০ বছর ধরে করেননি, এখন বিপক্ষে বসে সেগুলি নিয়ে বিরোধিতা করা শোভা পায় না। কিন্তু যে প্রক্রিয়া আপনারাই শুরু করেছেন, এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছেন – এখন সেটিকেও অস্পৃশ্য করে বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন! এটাই প্রমাণ করে যে, আপনাদের ভাষ্য শুধুমাত্র ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি হিসাবে ঠিক হয়। বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে তুষ্ট করতে আপনারা উন্নয়ন ও বিভাজনের মধ্যে বৃশ্চিকের দাঁড়ার মতো আত্মদংশনের মাধ্যমে বিভাজনের পথই বেছে নেন।

এহেন সুযোগসন্ধানী বিরোধিতায় কোনও রাজনৈতিক দলের লাভ কিংবা লোকসান হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই দেশের ক্ষতি হয়। দেশে অবিশ্বাসের আবহ গড়ে ওঠে। সেজন্য আমার অনুরোধ, আমরা সবাই যেন সত্যকে, সঠিক পরিস্থিতিকে জনগণের সামনে তুলে ধরি।

এই দশকে ভারতের প্রতি বিশ্ববাসীর অনেক প্রত্যাশা, আর আমাদের প্রতি ভারতবাসীর অনেক প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাদের সকলের প্রচেষ্টা ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুরূপ হওয়া উচিৎ।

এটা তখনই সম্ভব, যখন দেশের স্বার্থে এই সভা সকল বিষয়ে ‘সংগচ্ছধ্বম্‌, সম্বদ্‌ধ্বম’’ অর্থাৎ সঙ্গে চলো, একই ছন্দে এগিয়ে চলো – এই সংকল্প নিয়ে তৎপর হবে। তুমুল তর্ক-বিতর্ক হোক, আলোচনা হোক, তারপর সিদ্ধান্ত হোক। শ্রী দিগ্বিজয় সিং একটি কবিতা শুনিয়েছেন। আমারও একটি কবিতা মনে পড়ছে।

আমার কোনও বাড়ি নেই, শুধু উন্মুক্ত পরিসর

যা সততা, করুণা, ইচ্ছা আর স্বপ্নে ভরা

আমার দেশকে উন্নত ও মহান দেখার ইচ্ছা

চারপাশে সুখ আর শান্তির স্বপ্নেরা!!

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের এই পঙক্তিগুলি আমার খুব প্রিয়। আপনারা এই প্রবাদটিও হয়তো শুনেছেন, ‘যিনি যেমন ভাবেন, তেমনভাবেই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি দেখতে পান’। এখন আপনাদের ঠিক করতে হবে, নিজেদের পছন্দ বদলাবেন, নাকি একবিংশ শতাব্দীতেও বিংশ শতাব্দীর স্মৃতিমেদুরতা নিয়ে বেঁচে থাকবেন!

এই নতুন ভারত এগিয়ে চলেছে, কর্তব্যের পথে এগিয়ে চলেছে। আর কর্তব্যই যে সমস্ত অধিকারের মূল – একথা তো মহাত্মা গান্ধীই বলে গেছেন। আসুন, আমরা গান্ধীজীর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে গিয়ে এক সমৃদ্ধ, সমর্থ এবং সংকল্পঋদ্ধ নতুন ভারত নির্মাণে লেগে পড়ি। আমরা সকলের মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ভারতের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যেক সংকল্প সিদ্ধ করতে পারি।

আমি আরেকবার রাষ্ট্রপতি মহোদয় ও সব সদস্যকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আর আমি এই ভাবনা নিয়ে দেশের ঐক্য ও সংহতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে, ভারতের সংবিধানের উন্নত ভাবনাগুলিকে সম্মান জানিয়ে আমরা সবাই এগিয়ে যাবো, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাই মিলে হাত লাগাবো – এই ভাবনা নিয়ে আরেকবার মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি, এই বাজেট বিতর্ককে সমৃদ্ধ করে তোলা সমস্ত মাননীয় সদস্যকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report

Media Coverage

India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM to participate in ‘Odisha Parba 2024’ on 24 November
November 24, 2024

Prime Minister Shri Narendra Modi will participate in the ‘Odisha Parba 2024’ programme on 24 November at around 5:30 PM at Jawaharlal Nehru Stadium, New Delhi. He will also address the gathering on the occasion.

Odisha Parba is a flagship event conducted by Odia Samaj, a trust in New Delhi. Through it, they have been engaged in providing valuable support towards preservation and promotion of Odia heritage. Continuing with the tradition, this year Odisha Parba is being organised from 22nd to 24th November. It will showcase the rich heritage of Odisha displaying colourful cultural forms and will exhibit the vibrant social, cultural and political ethos of the State. A National Seminar or Conclave led by prominent experts and distinguished professionals across various domains will also be conducted.