মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি মাননীয়া রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উত্তরে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছি। নতুন এই সংসদ ভবনে যখন আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া আমাদের সকলকে সম্বোধন করতে এসেছেন আর যে গৌরব এবং সম্মানের সঙ্গে সেঙ্গোল সহ সম্পূর্ণ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, আমরা সকলে তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটছিলাম।
নতুন সংসদ ভবনে এই নতুন পরম্পরা ভারতের স্বাধীনতার সেই পবিত্র মুহূর্তের প্রতিবিম্ব, যখন সেঙ্গোল সাক্ষী হয়, তখন গণতন্ত্রের মহিমা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবস, এরপর নতুন সংসদ ভবন সেঙ্গোলের কাণ্ডারীর ভূমিকা - এই সম্পূর্ণ দৃশ্য নিজেই অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ছিল। আমি যখন এখান থেকে সমগ্র কর্মসূচির অংশীদার হয়েছিলাম, এখান থেকে তো এর অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য ততটা দেখা যায় না, কিন্তু যখন আমি ওখান থেকে দেখেছি, সত্যি এই নতুন ভবনে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির গরিমাময় উপস্থিতিতে আমাদের সকলের মনকে প্রভাবিত করা সেই দৃশ্য আমি সারা জীবন মনে রাখবো। প্রায় ৬০ জনেরও বেশি মাননীয় সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিজীর কৃতজ্ঞতা সূচক প্রস্তাবে নিজেদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন, আমি বিনম্রতার সঙ্গে নিজেদের বক্তব্য রাখা সেই সকল মাননীয় সাংসদকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশেষ রূপে আমাদের বিরোধী দলের নেতাদের তাঁদের সংকল্পের জন্য প্রশংসা জানাই । তাঁদের ভাষণের প্রতিটি শব্দ থেকে আমার ও দেশের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে যে, তাঁরা দীর্ঘকাল সভাকক্ষের ওপাশে বসার সংকল্প নিয়েছেন। আপনারা কয়েক দশক ধরে যেভাবে এদিকটায় বসেছিলেন, তেমনভাবেই কয়েক দশক ধরে আপনাদের ওদিকে বসার সংকল্প থেকে প্রমাণ হয় যে, জনগণই ঈশ্বরের স্বরূপ। আর আপনারা এখন যেরকম পরিশ্রম করছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ঈশ্বররূপী জনগণ আপনাদের অবশ্যই আশীর্বাদ দেবেন। আপনারা এখন যে উচ্চতায় বিরাজ করছেন, তার চেয়ে বেশি উচ্চতায় অবশ্যই পৌঁছবেন। আর পরবর্তী নির্বাচনকে আপনারা দর্শকের মতো দেখবেন। অধীররঞ্জনজী এবার আপনি নিজের কন্ট্রাক্ট ওনাকেই দিয়ে দিয়েছেন কি? আপনারা কথা থেকে তো তাই মনে হয়!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনে লড়ার সাহসও হারিয়েছেন। আর আমি শুনেছি যে, গতবার যেমন অনেকে আসন বদলেছিলেন, এবারও আসন বদলানোর চেষ্টা করছেন। আর এটাও শুনেছি যে, অনেকেই এখন লোকসভার বদলে রাজ্যসভায় যেতে চান। সেজন্য পরিস্থিতি আন্দাজ করে তাঁরা নিজের নিজের পথ খুঁজছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
রাষ্ট্রপতিজীর এই ভাষণ তথ্য ও বাস্তবের-ভিত্তিতে রচিত একটি দলিলের মতো। রাষ্ট্রপতিজী দেশের সামনে যে দলিল রেখেছেন, তা যদি আপনারা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করেন, তা হলে দেখতে পাবেন যে, দেশ কত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কী পরিমাপে কর্মযজ্ঞের বিস্তার ঘটছে! মাননীয়া রাষ্ট্রপতিজী ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ৪টি মজবুত স্তম্ভের দিকে আমাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আর তাঁর এই দিক-নির্দেশ অত্যন্ত সঠিক। দেশের এই ৪টি স্তম্ভ যত বেশি শক্তিশালী হবে, যত বেশি বিকশিত হবে, যত সমৃদ্ধ হবে, আমাদের দেশও ততটাই সমৃদ্ধ হবে, তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। এই ৪টি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করে তিনি দেশের নারী শক্তি, যুব শক্তি, দরিদ্র ভাই-বোন, কৃষক, মৎস্যজীবী, পশুপালকদের ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। এঁদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। মাননীয়া রাষ্ট্রপতিজী বলেছেন, “ভালো হ’ত, আমাদের দেশে মৎস্যজীবীদের যদি সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা না হতো, পশুপালকদের যদি সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা না হতো, কৃষকদের যদি সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা না হতো, মহিলাদের যদি সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা না হতো, যুবসম্প্রদায়কে যদি সংখ্যালঘু হিসেবে দেখা না হতো….. কী হ’ল দাদা? এখানে কি দেশের যুবকদের কথা হচ্ছে না, সমাজের সকল শ্রেণীর কথা কি হচ্ছে না, দেশের মহিলাদের কথা কি হচ্ছে না! আর কতদিন আপনারা টুকরো টুকরো করে ভাববেন, আর কতদিন আপনারা সমাজকে বিভাজিত করতে থাকবেন। শব্দে লাগাম টানুন, অনেক ভেঙেছেন দেশকে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
খুব ভালো হ’ত যদি যাওয়ার আগে কমপক্ষে এবারের আলোচনায় কিছু ইতিবাচক কথা হ’ত। কিছু ইতিবাচক পরামর্শ আসতো। কিন্তু, প্রত্যেকবারের মতোই আমার বিরোধী বন্ধুরা দেশকে অত্যন্ত হতাশ করেছেন। কারণ, তাঁদের এই ভাবনার মর্যাদা দেশবাসী বোঝেন। তাঁদের এই অবস্থা দেখে দেশবাসীর কষ্ট হয়। এদের ভাবনাচিন্তার মান এতটাই!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নেতারা বদলে গেলেও সেই একই টেপ রেকর্ডার বাজছে। একই রকম কথা, নতুন কোনও কথা আসে না। আর পুরোনো ঢোল এবং পুরোনো রাগের গান, তাঁরা একইভাবে বাজিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের বছর ছিল, তাঁরা আরও একটু পরিশ্রম করতে পারতেন, নতুন কিছু নিয়ে এসে জনগণের কাছে কিছু বার্তা দিতে পারতেন, এক্ষেত্রেও বিফল আপনারা।চলুন, এটাও আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ বিরোধী পক্ষের অবস্থা যা হয়েছে, তার অধিকাংশ দায় কংগ্রেস দলের। খুব ভালো বিরোধী পক্ষ হওয়ার সুযোগ তাঁরা পেয়েছিলেন। ১০ বছর কম সময় নয়। কিন্তু, তাঁরা বিগত ১০ বছরে এই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ বিফল। আর তাঁদের এই বিফলতার প্রভাব বিরোধী পক্ষের অন্যান্য সক্ষম নেতাদেরকেও সঠিকভাবে উঠে আসতে দেয়নি। বিরোধী পক্ষের সমস্ত তেজস্বী নেতাদেরকেও তাঁরা পেছনে ঠেলে রেখেছেন। আমাদের সভায় অনেক নবীন সাংসদ রয়েছেন, যাঁরা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ভরপুর। তাঁদেরকে মুক্তভাবে বলতে দিলে যদি বিশেষ কারও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যায়, সেই ভয়ে নবীন সাংসদরা যাতে বলতে না পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে অধিবেশনগুলিকে চলতেই দেওয়া হয়নি। এভাবে তাঁরা যেমন নিজেদের ক্ষতি করেছেন, বিরোধী শক্তির ক্ষতি করেছেন, সংসদের ক্ষতি করেছেন, এমনকি দেশের অনেক বড় ক্ষতি করেছেন। সেজন্য আমি সর্বদাই চাই যে, দেশ যেন একটি সুস্থ ও ভালো বিরোধী পক্ষ পায়। আমাদের দেশ যতটা পরিবারবাদের কুফল ভুগেছে, কংগ্রেস দলও ততটাই কুফল ভুগেছে। এখন অধীরবাবুও ভুগছেন। এখন আমরা অধীরবাবুর দুর্দশা দেখছি। এখন তাঁর সংসদে থাকার কথা ছিল। কিন্তু, পরিবারবাদের সেবা করলে এরকম তো করতেই হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন অবস্থা দেখুন, আমাদের খাড়গেজী এই ভবন থেকে ঐ ভবনে শিফট্ হয়ে গেছেন, আর গুলাম নবীজী তো দল থেকেই শিফট্ হয়ে গেছেন। এরা সবাই পরিবারবাদের শিকার। একটাই প্রোডাক্ট বারবার লঞ্চ করার জন্য কংগ্রেসের দোকানে তালা লাগানোর সময় এসে গেছে। আর এই কাজ আমরা করছি না, আপনারাই করছেন। আমাদেরকে লক্ষ্য করে আপনারা বলেন না যে, দোকান খুলে বসেছেন। সবসময়েই বলেন। এখন আপনাদের দোকানে তালা লাগাবার সময় এসে গেছে।
এদিকে আমাদের দাদা নিজের অভ্যাস ছাড়তে পারেন না। তিনি ঐ দিকে বসেই পরিবারবাদ নিয়ে নানারকম মন্তব্য করছেন। আজ একটু আমি আপনাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি। ক্ষমা করবেন অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি আজ একটু সময় নিচ্ছি। আমরা কোন পরিবারবাদ নিয়ে সমালোচনা করি। যদি কোনও পরিবারের একাধিক সদস্য জনগণের সমর্থনের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়, সেই পরিবারের এগিয়ে যাওয়াকে আমরা কখনও পরিবারবাদ বলিনি। আমরা পরিবারবাদ তখনই বলি, যখন কোনও দলকে পরিবার চালায়। যখন কোনও দল পরিবারের সদস্যদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যখন দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত পরিবারের সদস্যরাই নেয় – এটাকেই আমরা পরিবারবাদ বলি। রাজনাথ সিংজী কিংবা অমিত শাহজী আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দলের নেতা নন। গণতন্ত্রে দলের পদাধিকার যে কেউ পেতে পারেন, একই পরিবারে ১০ জনও রাজনীতিতে আসতে পারেন। এতে কোনও অন্যায় নেই। আমরা তো চাই যে, নবীন প্রজন্মের মানুষ রাজনীতিতে আসুন। কিন্তু, গণতন্ত্রের জন্য পরিবারবাদী রাজনীতি পারিবারিক দলগুলির রাজনীতি আমাদের সকলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হওয়া উচিৎ। সেজন্য আমি কোনও পরিবারের দু’জন বা দশ জন সক্ষম রাজনীতিবিদ যদি জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যান, তাঁদেরকে স্বাগত জানাবো। দেশের নবীন প্রজন্মের যত যোগ্য ছেলেমেয়ে রাজনীতিতে আসবেন, তাঁদেরকে স্বাগত জানাতে হবে। কিন্তু, নির্দিষ্ট কিছু পরিবার দলগুলিকে চালাবে – এটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা। এই বিষয় নিয়ে কখনও বলিনি – আজ আপনার কথায় বলে দিলাম।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটাই প্রোডাক্ট বারবার লঞ্চ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস একটি নির্দিস্ট পরিবারের জালে আটকে গেছে। দেশের কোটি কোটি পরিবারের আকাঙ্ক্ষা ও সাফল্য তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না। নিজের পরিবারের বাইরে তাকাতে তাঁরা প্রস্তুত নন। সম্প্রতি কংগ্রেসে ‘একটি ক্যান্সেল কালচার’ গড়ে উঠেছে। যাই বলো না কেন, ‘ক্যান্সেল’। আর এই ক্যান্সেল কালচারে কংগ্রেস নিজেই ফেঁসে গেছে। আমরা যদি বলি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তা হলে কংগ্রেস বলে ‘ক্যান্সেল’। আমরা যদি বলি আত্মনির্ভর ভারত, তা হলে কংগ্রেস বলে ‘ক্যান্সেল’। আমরা যদি বলি ভোকাল ফর লোকাল, তা হলে কংগ্রেস বলে ‘ক্যান্সেল’। আমরা যদি বলি বন্দে ভারত ট্রেন, তা হলে কংগ্রেস বলে ‘ক্যান্সেল’। আমরা যদি বলি নতুন সংসদ ভবন, তা হলে কংগ্রেস বলে ‘ক্যান্সেল’। আপনাদের এই মনোভাব দেখে আমি অবাক! এগুলি কী মোদীর সাফল্য ? এগুলি তো দেশের সাফল্য! আপনারা কতদিন নিজেদের অস্তিত্বে এত ঘৃণা লালন করবেন? আর কতদিন দেশের সমস্ত সাফল্যকে ক্যান্সেল করে বসে থাকবেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মাননীয় রাষ্ট্রপতিজী উন্নত ভারতের পথচিত্র নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিস্তারিতভাবে আর্থিক দিকগুলিও তুলে ধরেছেন। আমাদের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলিকে নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আলোচনা করেছেন। ভারতের মজবুত অর্থনীতিকে আজ গোটা বিশ্ব প্রশংসা করছে। যখন বিশ্ববাসী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের এই সাফল্য সবারই ভালো লাগছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় সমস্ত দেশবাসী দেখেছেন যে, বিশ্বের বড় বড় নেতারা ভারত নিয়ে কী ভাবেন, কী বলেন। বিগত ১০ বছরের শাসনকালের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আজকের শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের তৃতীয় শাসনকালে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে। দেশবাসীর উদ্দেশে এটা মোদীর গ্যারান্টি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনি কি এঁদের আগে কথা বলার সুযোগ দেননি, সবাইকে তো দিয়েছিলেন, তাই না। হ্যাঁ, যা বলছিলাম।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবো…. আমাদের বিরোধী দলের অনেকেই বলছেন, তাতে কী, ভারত তো এমনিই তৃতীয় বৃহত্তম হয়ে উঠবে। এতে মোদীর ভূমিকা কী। তাঁদের এই কুযুক্তির জবাবে আমি দেশবাসীকে, বিশেষ করে দেশের যুবসম্প্রদায়কে বলতে চাই যে, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করার ক্ষেত্রে সরকারের কী ভূমিকা হওয়া উচিৎ, কেমন হওয়া উচিৎ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১০ বছর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করা হয়েছিল, তখন কারা ক্ষমতায় ছিলেন, তা তো আপনারা জানেন-ই, দেশবাসীও জানেন। ১০ বছর আগে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যা বলেছিলেন, আমি তা উদ্ধৃত করছি, তাঁর একেকটি শব্দ অত্যন্ত মূল্যবান। যখন কিছু মানুষ বলেন যে, দেশ তো নিজে থেকেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে, তখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর এই শব্দগুলি তাঁদের বুঝতে হবে। তিনি বলেছিলেন, “আমি এখন ভবিষ্যতের জন্য একটি দূরদর্শী ভাবনা তুলে ধরতে চাই”। সেই সময় ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিবিদ বলছেন, “আমি এখন ভবিষ্যতের জন্য একটি দূরদর্শী ভাবনা তুলে ধরতে চাই”। তারপর তিনি বলেন, “আপনাদের মধ্যে কতজন লক্ষ্য করেছেন যে, জিডিপি-র নিরিখে ভারতের অর্থনীতি এখন বিশ্বের মধ্যে ১১তম বৃহৎ অর্থনীতি”। অর্থাৎ, ২০১৪ সালে ১১ নম্বরে পৌঁছনোর জন্য তিনি কত গর্বিত ছিলেন। তা হলে আজ যখন আমরা ৫ নম্বরে পৌঁছেছি, তখন আপনাদের গর্ব হচ্ছে না?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি পরের অংশটা পড়ছি, গগৈজীকে ধন্যবাদ। আপনি খুব সুন্দর বলেছেন। আমি আবার তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যটি পড়ছি, বন্ধুগণ একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। তিনি বলেছিলেন, “জিডিপি-র নিরিখে ভারতের অর্থনীতি এখন বিশ্বের মধ্যে ১১তম বৃহৎ অর্থনীতি”! অত্যন্ত গর্বের কথা! তারপর তিনি বলেন, “অনেক যুক্তিতর্কের মাধ্যমে যে কথাটি উঠে আসছে তা হল, আগামী তিন দশকে ভারতের জিডিপি দেশের অর্থনীতিকে আমেরিকা ও চীনের পর তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দিতে পারবে”! অর্থাৎ, সেই সময় ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন যে, আগামী ৩০ বছরে আমরা তিন নম্বরে পৌঁছে যাবো। তা হলে, ২০১৪ থেকে ৩০ বছর, অর্থাৎ, ২০৪৪ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠার ভাবনা তাঁর ছিল। আমরা তাঁর সেই ভাবনাকে মর্যাদা দিয়েছি। কিন্তু এখন তাঁরা স্বপ্ন দেখারও সামর্থ্য হারিয়েছেন, সংকল্প গ্রহণ করা তো অনেক দূরের কথা! তিনি আমার দেশের যুব প্রজন্মকে ৩০ বছর অপেক্ষা করার কথা বলে গেছেন। কিন্তু, আমরা আজ আপনাদের সামনে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, এই পবিত্র সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমরা ৩০ বছর অপেক্ষা করাবো না। এটা মোদীর গ্যারান্টি। আমার তৃতীয় শাসনকালেই এই দেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে। তাঁরা কেমন লক্ষ্য স্থির করতেন, তার কতটা বাস্তবায়িত হ’ত – তা ভাবলে করুণা হয়। তাঁরা ১১ নম্বর নিয়ে গর্ব করতেন, আর আমরা ৫ নম্বরে পৌঁছে দিয়েছি, এতে তাঁদের খুশি হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তাঁরা কেমন যেন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারের কাজ করার গতি কত দ্রুত, আমাদের লক্ষ্য কত বড়, আমাদের সাহস কত বেশি, তা আজ গোটা বিশ্ব দেখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
উত্তর প্রদেশে একটি প্রবাদ আছে যে, ৯ দিনে চলে আড়াই ক্রোশ! আমার মনে হয়, এই প্রবাদ এখন কংগ্রেসকেই পরিভাষিত করে। কংগ্রেসের এই অসুস্থ শ্লথগতির কোনও তুলনা হয় না। আজ দেশ যে গতিতে কাজ করছে, কংগ্রেস সরকার এই গতির কল্পনাও করতে পারতো না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা দেশের গরীবদের জন্য ৪ কোটি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। এর মধ্যে ৮০ লক্ষ পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি শহরের গরীবদের জন্য। কংগ্রেস যে গতিতে কাজ করতো, সেই গতিতে কাজ করলে, এই পরিমাণ বাড়ি বানাতে ১০০ বছর লাগতো। পাঁচ প্রজন্ম লেগে যেত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত ১০ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেলপথ বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে। কংগ্রেসের গতিতে চললে এই কাজ করতে ৮০ বছর লেগে যেত অর্থাৎ, চার প্রজন্ম পেরিয়ে যেত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা গত ১০ বছরে ১৭ কোটিরও বেশি রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদান করেছি। কংগ্রেসের গতিতে চললে এই কাজ করতে ৬০ বছর লেগে যেত অর্থাৎ, তিন প্রজন্ম ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করে কষ্ট পেতেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সরকার শৌচালয় নির্মাণের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ থেকে ১০ বছরে ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে। কংগ্রেসের গতিতে চললে এই কাজ করতে ৬০-৭০ বছর লেগে যেত অর্থাৎ, নিদেনপক্ষে তিন প্রজন্ম লাগতো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের মানসিকতা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। কংগ্রেস দেশের সামর্থকে কখনও বিশ্বাস করেনি। তাঁরা নিজেদের শাসক মানতেন আর জনগণকে নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের নাগরিকদের তাঁরা কেমন ভাবতেন, আমি জানি নাম বললেই তাঁদের খোঁচা লাগবে। কিন্তু, ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী নেহরু বলেছিলেন, “ভারতীয়দের মধ্যে সাধারণত অনেক পরিশ্রম করার অভ্যাস নেই। ইউরোপ, জাপান, চীন, রাশিয়া বা আমেরিকার মানুষ যত পরিশ্রম করেন, আমরা তত পরিশ্রম করি না। এটা ভাববেন না যে, কোনও যাদু মন্ত্রে তাঁরা সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা তাঁদের পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হয়েছেন”। অগ্রণী দেশগুলিকে এই শংসাপত্র তিনি দিয়েছিলেন ভারতের জনগণকে নীচু দেখিয়ে। অর্থাৎ, নেহরুজী ভাবতেন যে, সাধারণ ভারতীয়রা অলস। তিনি এও ভাবতেন যে, ভারতীয়দের বুদ্ধি কম।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ইন্দিরাজীর ভাবনাও এ থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না। ইন্দিরাজীও একবার ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের স্বভাব হ’ল – কোনও শুভ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ি। আর যখন কোনও সমস্যা আসে, তখন হতাশ হয়ে পড়ি। কখনও তো এমন মনে হয় যে, গোটা দেশই পরাজয়ের ভাবনাকে আপন করে নিয়েছে”। আজ কংগ্রেসের নেতাদের দেখে মনে হয়, ইন্দিরাজী দেশের জনগণকে ঠিক মতো বুঝতে না পারলেও নিজের দলের লোকেদের সঠিকভাবেই বুঝেছিলেন। কংগ্রেসের শাহী পরিবারের লোকেরা আমাদের দেশের জনগণকে এরকমই ভাবতেন, কারণ তাঁরা সবাই এরকমই ছিলেন। আজও আমরা তাঁদের এভাবেই ভাবতে দেখি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের বিশ্বাস যে, সর্বদাই একটি পরিবারের উপর ছিল। সেই একটি পরিবারের বাইরে তাঁরা কিছু দেখতেও পারেন না, এমনকি ভাবতেও পারেন না। কিছুদিন আগে ভানুমতীর জাদুকাঁথা জোড়া লেগেছিল। কিন্তু, তারপরই ‘একলা চলোরে…’ শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেসের নেতারা সম্প্রতি মোটর মেকানিকের কাজ শিখেছেন। আর সেজন্য ‘অ্যালাইনমেন্ট’ বা প্রান্তিককরণ কাকে বলে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন। কিন্তু, আমি দেখতে পাচ্ছি, তাঁদের জোটেরই প্রান্তিককরণ বিগড়ে গেছে। তাঁদের এই ভানুমতীর কাঁথায় পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস নেই। তা হলে, তাঁরা দেশবাসীকে কিভাবে বিশ্বাস করবেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা দেশের সামর্থ্যকে বিশ্বাস করি। আমরা জনগণের শক্তিকে ভরসা করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের জনগণ আমাদেরকে প্রথমবার সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। সেজন্য আমরা আমাদের প্রথম শাসনকালে ইউপিএ – এর শাসনকালের যত খানাখন্দ গর্ত ছিল, সেই খানাখন্দগুলি ভরতে অনেকটাই সময় ও শক্তি ব্যয় করেছি। আমরা প্রথম শাসনকালে এই খানাখন্দগুলি ভরার পর আমরা দ্বিতীয় শাসনকালে নতুন ভারতের ভিত্তি স্থাপন করেছি। আর তৃতীয় শাসনকালে আমরা উন্নত ভারত গড়ার কর্মযজ্ঞকে নতুন গতি প্রদান করবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রথম শাসনকালে আমরা স্বচ্ছ ভারত, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও …. এর মতোই সুগম্য ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া …. এমনই কত না জনহিতকর প্রকল্পের কর্ম-অভিযান চালিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। কর ব্যবস্থাকে সহজ করতে আমরা জিএসটি-র মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এই কর্মপদ্ধতি দেখে দেশের জনগণ আমাদেরকে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। জনগণ আমাদের অনেক আশীর্বাদ দিয়েছেন। আগের থেকেও বেশি আশীর্বাদ দিয়েছেন। আমাদের দ্বিতীয় শাসনকাল নানা সংকল্প ও প্রতিশ্রুতি পূরণের শাসনকাল ছিল। দেশবাসী দীর্ঘকাল ধরে যে সাফল্যগুলির অপেক্ষা করছিলেন, তাঁরা আমাদের দ্বিতীয় শাসনকালে সেইসব কাজ বাস্তবায়িত হতে দেখেছেন। আমরা সবাই সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হতে দেখেছি। মাননীয় সাংসদদের চোখের সামনে এবং তাঁদের ভোটের শক্তিতেই ৩৭০ বিলুপ্ত হয়েছে। তাঁদের ভোটের শক্তিতেই আমাদের দ্বিতীয় শাসনকালে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ আইনে পরিণত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অন্তরীক্ষ থেকে শুরু করে অলিম্পিক পর্যন্ত, সশস্ত্র সেনা থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত নারী শক্তির সামর্থ্যের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আজ দেশ এই অভূতপূর্ব নারী ক্ষমতায়নকে দেখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম দেশের সর্বত্র মানুষ অনেক দশক ধরে থেমে থাকা বিভ্রান্ত হওয়া, ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলিকে আমাদের শাসনকালে সময় নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হতে দেখেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ব্রিটিশ শাসনকালে প্রণীত আইনগুলি দন্ড-প্রধান ছিল। সেই দন্ড-প্রধান আইনগুলিকে সরিয়ে আমরা দেশে ন্যায়সংহিতা চালু করেছি। আমাদের সরকার কয়েক হাজার এমন আইনকে বিলুপ্ত করেছে, যেগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল। আমাদের সরকার ৪০ হাজারেরও বেশি ‘কমপ্লায়েন্সেস’ বিলুপ্ত করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারত আজ ‘অমৃত ভারত’ এবং ‘নব ভারত’ ট্রেনগুলির মাধ্যমে ভবিষ্যতের উন্নতির স্বপ্ন দেখেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের প্রত্যেক গ্রামের মানুষ, কোটি কোটি জনগণ উন্নত ভারতের সংকল্প যাত্রাকে দেখেছেন। আর সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের পেছনে কতটা পরিশ্রম লাগে, তাও দেখেছেন। প্রত্যেকের অধিকার অনুযায়ী, তাঁদের বাড়ির দরজায় গিয়ে পরিষেবা প্রদানের প্রচেষ্টাও দেশবাসী প্রথমবার দেখেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভগবান রাম আজ শুধু নিজের বাড়িতেই ফিরে আসেননি। এমন মন্দির নির্মিত হয়েছে, যা ভারতের মহান সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে নতুন প্রাণশক্তি যোগাতে থাকবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন আমাদের সরকারের তৃতীয় শাসনকাল বেশি দূরে নয়। খুব বেশি হলে ১০০-১২৫ দিন বাকি। এখন সবাই বলছেন, ‘আপ কি বার মোদী সরকার’। গোটা দেশ বলছে। খাড়গেজীও বলছেন, ‘আপ কি বার মোদী সরকার’। কিন্তু অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি সাধারণত এরকম পরিসংখ্যানের পেছনে ছুটি না। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি, দেশের মেজাজ অনুভব করছি । এবার দেশবাসী এনডিএ-কে ৪০০ পার করিয়ে ছাড়বেন। কিন্তু, ভারতীয় জনতা পার্টিকে দেশবাসী ৩৭০টি আসন অবশ্যই দেবেন। অর্থাৎ, বিজেপি-কে ৩৭০টি আসন এবং এনডিএ-কে ৪০০টিরও বেশি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের তৃতীয় শাসনকালে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলাম, আর রামমন্দির প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরও আমি একথা পুনরুচ্চারণ করেছি। আমি বলেছিলাম, দেশকে আগামী কয়েক হাজার বছর ধরে সমৃদ্ধি ও সিদ্ধির শিখরে দেখতে চাই। আমাদের তৃতীয় শাসনকাল আগামী ১ হাজার বছরের জন্য একটি মজবুত ভিত্তিস্থাপনের শাসনকালে পরিণত হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি ভারতবাসীর জন্য, দেশবাসীর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে তৈরি; অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। আমি দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকের সামর্থ্যে অটুট বিশ্বাস রাখি। গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষ কিভাবে দারিদ্র্য সীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন - এই সামর্থ্য সেটা দেখায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি চিরকাল বলে আসছি যে, গরীব যদি সুযোগ পায়, গরীব যদি এগিয়ে যাওয়ার জন্য ন্যূনতম অর্থের যোগান পায়, গরীব যদি আত্মাভিমান নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে – তা হলে আমাদের দেশের গরীবরা দারিদ্র্যকে পরাস্ত করার সামর্থ্য রাখেন। আমরা সেই পথই বেছে নিয়েছি। আর আমার গরীব ভাইরা দারিদ্র্যকে পরাস্ত করে দেখিয়েছেন। আর এই ভাবনা নিয়েই আমরা দরিদ্রদের পরিকাঠামো দিয়েছি, অর্থের যোগান দিয়েছি, সম্মান দিয়েছি, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার আবহ দিয়েছি। আজ দেশের ৫০ কোটি গরীব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আগে তাঁরা কখনও ব্যাঙ্কের সামনে দিয়েও যেতেন না। আজ ৪ কোটি গরীবকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। বাড়িগুলি তাঁদের আত্মসম্মান গড়ে তুলতে নতুন সামর্থ্য যোগাচ্ছে। ১১ কোটিরও বেশি পরিবারকে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিয়েছি। ৫৫ কোটিরও বেশি গরীব মানুষ আয়ুষ্মান ভারত কার্ড পেয়েছেন। বাড়িতে যে কেউ অসুস্থ হলে সেই অসুস্থতার কারণে যেন পরিবারটি আবার দারিদ্র্যসীমার নীচে না চলে যায়, তা সুনিশ্চিত করতেই এই কার্ড তাঁদের ভরসা। বাড়ির যে কেউ, যত অসুস্থই হোন না কেন, তাঁরা জানেন যে, চিন্তা নেই - মোদী বসে আছে। ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মোদী যাঁদের খোঁজখবর নিয়েছে, আগে তাঁদের খোঁজখবর কেউ নিতেন না। দেশে প্রথমবার পথের দু’পাশে ব্যবসা করা ঠেলাওয়ালা ও রেলপথের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা বন্ধুদের সম্পর্কে ভাবা হয়েছে। পিএম-স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে তাঁরা এখন ঋণ নিয়ে পাচ্ছেন। মহাজনদের কাছ থেকে এখন আর চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে না। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এখন তাঁরা তাঁদের ব্যবসা বাড়াচ্ছেন। দেশে প্রথমবার দক্ষতা উন্নয়নকে রাষ্ট্র নির্মাণে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমবার আমার বিশ্বকর্মা সাথীদের নিয়ে ভাবা হয়েছে। তাঁদের আধুনিক সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ, অর্থ সাহায্য যেমন করা হয়েছে, তেমনই তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য বিশ্ব বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রথমবার পিভিটিজি অর্থাৎ বিভিন্ন আদিবাসী জনজাতিদের মধ্যেও যাঁরা বেশি পিছিয়ে রয়েছেন, ভোটের সংখ্যায় তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ বলে তাঁদের দিকে কারও নজর পড়েনি। কিন্তু, আমরা ভোটের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁদের সঙ্গে অন্তরের যোগাযোগ গড়ে তুলেছি। সেজন্য আমরা পিছিয়ে পড়া জনজাতির মধ্যে বেশি পিছিয়ে পড়া জনজাতি গোষ্ঠীগুলির জন্য ‘পিএম জন মন যোজনা’ রচনা করে তাঁদের কল্যাণে মিশন মোডে কাজ করেছি। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির উন্নয়ন এতদিন একদমই হয়নি। আমরা সে গ্রামগুলিকে প্রান্তিক গ্রাম না ভেবে প্রথম গ্রাম ভেবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়নের দিশা বদলে দিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যখন বারবার বাজরা ইত্যাদি মোটা দানার শস্যের পক্ষে কথা বলি, আমি মোটা দানার শস্যের জগতে গিয়ে আলোচনা করি। আমি জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির জনগণকে গর্বের সঙ্গে মোটা দানার শস্য খাওয়ার কথা বলি, এর পিছনে আমার হৃদয়ে রয়েছে দেশের তিন কোটিরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষক, যাঁরা বাজরা চাষ করেন, বিশ্ববাসীর সুষম পুষ্টির পাশাপাশি এই কৃষকদের কল্যাণচিন্তাও আমার বলার পেছনে কাজ করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যখন ‘ভোকাল ফর লোক্যাল’ বা স্থানীয় পণ্যের পক্ষে সোচ্চার হই, যখন আমি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কথা বলি, তখন আমি কোটি কোটি গৃহশিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প এবং এগুলির সঙ্গে জড়িত আমার লক্ষাধিক পরিবারের কল্যাণের কথা চিন্তা করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
খাদিকে কংগ্রেস পার্টি ভুলে গেছে, তাঁদের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলোও ভুলে গেছে। আজ আমি খাদিকে প্রাণশক্তি জোগাতে সফলভাবে এগিয়েছি, কারণ কোটি কোটি তাঁতীর জীবন খাদি এবং তাঁতের সঙ্গে জড়িত, আমি তাঁদের কল্যাণকে সুনিশ্চিত করতে চাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সরকার দেশের প্রতিটি কোণ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে এবং দরিদ্রদের সমৃদ্ধ করার জন্য বিভিন্নরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাঁদের জন্য গরিবরা শুধু ভোটব্যাংকই ছিলেন, তাঁদের পক্ষে গরিবকল্যাণ সম্ভব ছিল না। আমাদের জন্য গরিবদের কল্যাণই জাতির কল্যাণ তাই আমরা তাঁদের কল্যাণের পথই অনুসরণ করেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস দল এবং ইউপিএ সরকার ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রতি কোনও ন্যায়বিচার করেনি, তাঁরা অবিচার করেছে। এই দলের নেতারা ওবিসি নেতাদেরকে সবসময় অপমান করে গেছে। কিছুদিন আগেই, যখন কর্পুরী ঠাকুর জিকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছিল, আমরা যখন তাঁকে সেই সম্মান দিয়েছিলাম, তখনও তাঁরা কী না করেছেন! কিন্তু মনে রাখবেন, ওবিসি সম্প্রদায়ের সেই মহান ব্যক্তি, কর্পুরী ঠাকুরজি, অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় থেকে উঠে এসেছিলেন, তাঁর প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে! কিভাবে তাঁর প্রতি অন্যায় করা হয়েছে ! ১৯৭০ সালে তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হয়। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য কত কিছুই না করা হয়েছিল!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস অত্যন্ত অনগ্রসর শ্রেণীর একজন ব্যক্তিকেও সহ্য করতে পারেনি। ১৯৮৭ সালে, যখন সারা দেশে কংগ্রেসের পতাকা উড়ছিল, তখন তাঁদের হাতে অসীম ক্ষমতা ছিল। তারপর কংগ্রেস নেতৃত্ব কর্পুরী ঠাকুরকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন, এর কারণ হিসেবে বলেন যে তিনি নাকি সংবিধানকে সম্মান করতে জানেন না। কর্পুরী ঠাকুর, যিনি গণতন্ত্রের নীতি এবং সংবিধানের মর্যাদার জন্য তাঁর সমগ্র জীবন ব্যয় করেছিলেন, তিনি কংগ্রেস দলের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে অপমানিত হয়েছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজকাল, আমাদের কংগ্রেস সহকর্মীরা এই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে বর্তমান সরকারে কতজন ওবিসি সদস্য রয়েছেন, তাঁরা কতগুলি পদ অলংকৃত করছেন এবং কোথায় কোথায় রয়েছেন – তাঁরা এর হিসাব রাখেন। কিন্তু আমি আশ্চর্য হচ্ছি, তাঁরা এই সব থেকে বড় ওবিসি মানুষটিকে দেখতে পান না। চোখ বন্ধ করে কোথায় বসে আছেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি একটু সেই কথাগুলি বলতে চাই, যা নিয়ে তাঁরা সারা পৃথিবীতে বলে বেড়াচ্ছেন। ইউপিএ সরকারের সময় একটি ‘এক্সট্রা কন্সটিটিউশনাল বডি’ তৈরি করা হয়েছিল, যার সামনে সরকারের কিছুই চলতো না। তৎকালীন ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের তালিকা বের করে দেখুন, তাতে কোনও ওবিসি সদস্য ছিলেন কিনা! বের করে দেখুন! এত বড় ‘পাওয়ারফুল বডি’ তৈরি করা হয়েছিল আর অন্যদিকে নিযুক্ত করা হচ্ছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত ১০ বছরে নারী শক্তি ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের নেতৃত্বে সমাজের ক্ষমতায়নের কাজ করা হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ভারতে এমন কোনও ক্ষেত্র নেই, যেখানে দেশের মেয়েরা কাজ করছেন না, দেশের কোনও কাজের দরজা আজ মেয়েদের জন্য বন্ধ হয় না। আজ আমাদের দেশের মেয়েরা ফাইটার জেট ওড়াচ্ছেন। এর পাশাপাশি, তাঁরা দেশের সীমান্ত সুরক্ষার কাজও করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের গ্রামীণ ব্যবস্থা আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেও আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ১০ কোটি বোনেরা যুক্ত রয়েছেন আর তাঁরা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুন শক্তি যোগাচ্ছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ এই সকল উদ্যোগের পরিণাম-স্বরূপ দেশে প্রায় ১ কোটি লাখপতি দিদি সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। আমি যখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলি, তাঁদের মুখে যে আত্মবিশ্বাস দেখতে পাই, তা থেকে আমার এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হচ্ছে যে, আমাদের পরবর্তী শাসনকালেই আমরা দেশের মধ্যে ৩ কোটি লাখপতি দিদিকে দেখতে পাবো। তা হলে আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, গ্রামের অর্থনীতিতে কত বড় পরিবর্তন আসবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের দেশে মহিলাদের নিয়ে আগে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গী ছিল, সেটাই সমাজের মধ্যে ছেয়ে গিয়েছিল, মানুষের মনে বাসা বেঁধেছিল। আজ সেই ভাবনা কত দ্রুত বদলাচ্ছে। একটু সূক্ষ্মভাবে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তা হলে বুঝতে পারবো, কত আনন্দদায়ক পরিবর্তন আসছে। আগে আমাদের দেশে একটি মেয়ের জন্ম হলে পরিবারের মানুষ চিন্তায় পড়তেন। কারণ, তার খরচ কিভাবে সামলাবেন, তাকে কিভাবে পড়াশোনা করাবেন, তার ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে – মেয়েটি যেন একটি বোঝা! তাকে নিয়ে এ ধরনের আলোচনা হ’ত। কিন্তু, আজ যখন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, তখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, তার নামে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে কিনা! এই পরিবর্তন এসেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আগে প্রশ্ন উঠতো যে, কোনও মহিলা গর্ভবতী হলে চাকরি করতে পারবেন কিনা। আজ বলা হয়, ২৬ সপ্তাহের সবেতন ছুটি এবং তারপরও যদি ছুটির দরকার হয়, সেটা পাওয়া যাবে – এই পরিবর্তন এসেছে। আগে সমাজে প্রশ্ন উঠতো যে, মহিলা হয়ে কেন চাকরি করতে চায়? স্বামীর বেতন কি কম পড়ছে? আজ জিজ্ঞেস করা হয় যে, ম্যাডাম, আপনার স্টার্টআপ তো অনেক উন্নতি করছে, সেখানে কি আমি চাকরি পাবো? এই পরিবর্তন এসেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটা সময় ছিল, যখন প্রশ্ন করা হ’ত, মেয়ের বয়স বাড়ছে, কবে বিয়ে দেবেন? আজ জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার কন্যা তো ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই কত সুন্দর ভারসাম্য রাখছে, কিভাবে রাখছে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটা সময় ছিল, যখন বলা হ’ত বাড়ির মালিক বাড়িতে আছেন কিনা, কিংবা বাড়ির কর্তাকে ডাকুন। কিন্তু, আজ সরকারের তৈরি করে দেওয়া বাড়ির মালিকানা হচ্ছে মহিলাদের নামে। বিদ্যুৎ বিল, জল, রান্নার গ্যাস সব তাঁদের নামেই আসে। পরিবারে মা ও বোনেদের সম্মান বেড়েছে – এই পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন অমৃতকালে আমরা যে উন্নত ভারত গড়তে চাই, সেই অভিযানে একটি বড় শক্তি রূপে উঠে আসছে। সেই শক্তিকে আমি অনুভব করতে পাচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কৃষকদের জন্য চোখের জল ফেলার অভ্যাস আমরা অনেক দেখেছি। আর কৃষকদের প্রতি কী ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে, সেসবও দেশবাসী দেখেছেন। কংগ্রেস আমলে কৃষি বাবদ মোট বার্ষিক বাজেট হ’ত ২৫ হাজার কোটি টাকা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সরকারের বাজেটে কৃষি বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস তাঁদের ১০ বছরের শাসনকালে ৭ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ধান ও গম কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে কিনেছিল। আমরা বিগত ১০ বছরে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ১৮ লক্ষ কোটি টাকার ধান ও গম কিনেছি। কংগ্রেস সরকার কোথাও কোথাও নামমাত্র ডালশস্য ও তিলশস্য কিনতো। আমরা ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ডালশস্য ও তিলশস্য কিনেছি। আমাদের কংগ্রেস দলের বন্ধুরা পিএম কিষাণ সম্মান নিধি নিয়ে কত না ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন। যখন আমি প্রথম শাসনকালে এই প্রকল্প শুরু করেছিলাম, তখন কত না গুজব রটানো হয়েছিল! গ্রামে গ্রামে কৃষকদের বলা হয়েছিল যে, মোদীর থেকে এই টাকা নিও না। একবার নির্বাচনে জিতে গেলে এই টাকা তোমাদের থেকে সুদসমেত ফেরৎ চাইবে। এই ধরনের মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে কৃষকদের বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পিএম কিষাণ সম্মান নিধি বাবদ আমরা এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছি। পিএম ফসল বিমা যোজনার ৩০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে আমার কৃষক ভাই ও বোনেরা ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা করে পেয়েছেন। কংগ্রেসের শাসনকালে কখনও দেশের মৎস্যজীবী ও পশুপালক ভাই-বোনেদের হিতে কোনও প্রকল্পের কথা শোনা যায়নি। আমরা ক্ষমতায় এসে প্রথমবার দেশে মৎস্যজীবীদের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রক এবং পশুপালনের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রক গড়ে তুলেছি। প্রথমবার পশুপালক ও মৎস্যজীবী ভাই ও বোনেদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তাঁরা কম সুদে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে পারেন। কৃষক ও মৎস্যজীবীদের হিতে এই পদক্ষেপ দেশের প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি, মৎস্যজীবী ও পশুপালক ভাই ও বোনেদের জীবনেরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতির চক্র চালু রাখতে এই প্রাণী সম্পদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। আমরা গৃহপালিত পশুদের পা ও মুখগহ্বরের রোগ প্রতিরোধের জন্য ৫০ কোটিরও বেশি পশুকে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। আগে কখনও কেউ এভাবে ভাবেনি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ভারতে যুবসম্প্রদায়ের জন্য যত নতুন নতুন সু্যোগ তৈরি হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি। আজ সম্পূর্ণ বাগধারাই বদলে গেছে। যেসব শব্দ আগে কখনও শোনা যায়নি, তা এখন মানুষের দৈনন্দিন বার্তালাপের অংশ হয়ে উঠেছে। আজ চারিদিকে স্টার্টআপ – এর প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইউনিকর্ন গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আজ সারা দেশে একটি বৃহৎ ডিজিটাল ক্রিয়েটারদের শ্রেণী গড়ে উঠেছে। আজ সারা দেশে গ্রিন ইকনোমি বা পরিবেশ-বান্ধব অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই সমস্ত যুবক-যুবতীদের কথাবার্তায় নতুন ভারতের নতুন বাগধারা গড়ে উঠছে। এই নতুন অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের আবহ অভিনব, পরিচয়ও অভিনব। এই ক্ষেত্রগুলিতে নবীন প্রজন্মের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার অত্যন্ত ক্ষুদ্র ছিল। এই বিষয় নিয়ে তেমন আলোচনা হ’ত না। কিন্তু, আজ ভারত বিশ্বের অগ্রণী ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। এই সময় লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য অনেক অনেক সুযোগ, অনেক অনেক কর্মসংস্থান; অসংখ্য নতুন পেশার মানুষ হয়ে ওঠার সুযোগ গড়ে তুলবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ আমাদের দেশে তৈরি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ফোন বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা মোবাইল ফোন উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছি। এর ফলে, মোবাইল ফোনের দাম যেমন কমেছে, অন্যদিকে ডেটার দামও হ্রাস পেয়েছে। এই দুই কারণে একটি বড় বিপ্লব এসেছে। দেশ ও বিশ্বের অন্যত্র অত্যন্ত কম দামে আমাদের নবীন প্রজন্ম মোবাইল ফোনের যোগান দিচ্ছে। আজ ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অভিযান, দেশের রেকর্ড উৎপাদন এবং রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানীর একটি বিশেষ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সমস্ত কাজ আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য সর্বাধিক রোজগার করার উপযোগী কাজ। আর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য সুযোগ সৃষ্টিকারী কাজ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত ১০ বছরে পর্যটন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের দেশে এই অগ্রগতি এবং পর্যটন ক্ষেত্র এমনই, যেখানে ন্যূনতম বিনিয়োগে অধিকতম রোজগারের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পর্যটন ক্ষেত্র অত্যন্ত সাধারণ মানুষদেরও রোজগারের সুযোগ এনে দিয়েছে। স্বনির্ভরতার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা পর্যটন ক্ষেত্রে রয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। শুধুই বিমানবন্দর তৈরি হয়নি, ভারতে ইতিমধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অন্তর্দেশীয় বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। আমাদের সকলের আনন্দিত হওয়া উচিৎ যে, ভারতের এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলি ১ হাজারটি নতুন বিমান কেনার বরাত দিয়েছে। যখন এতগুলি বিমান আমাদের দেশের আকাশে ডানা মেলবে, তখন এই সমস্ত বিমানবন্দরের গতিবিধি ও ব্যস্ততা বাড়বে। কত নতুন পাইলট, ক্রু সদস্য, ইঞ্জিনিয়ার ও গ্রাউন্ড সার্ভিসের কর্মচারীর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র ভারতের জন্য একটি অনেক বড় সুযোগ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে অর্থনীতিকে আরও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, যাতে নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থানও হয়, সামাজিক সুরক্ষাও সুনিশ্চিত হয়। এই দুটি দিকসহ আরও যে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি আর দেশবাসী তা মেনে নেন, তা হ’ল ডেটা ইপিএফও। গত ১০ বছরে এই ডেটা ইপিএফও-তে ১৮ কোটি নতুন সাবস্ক্রাইবার-এর নথিভুক্তিকরণ হয়েছে। এই নথিভুক্তিকরণের সঙ্গে যেহেতু আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে, সেজন্য এখানে ভুয়ো নাম থাকার কোনও সুযোগই নেই। দেশে ৮ লক্ষ মানুষ মুদ্রা ঋণ নিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। আর কেউ যখন মুদ্রা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন, তখন তাঁর নিজের কর্মসংস্থান যেমন হয়, পাশাপাশি প্রত্যেকেই দু-একজনকে নিয়োগ করলে তাঁদেরও কর্মসংস্থান হয়। আমরা লক্ষ লক্ষ পথ বিক্রেতাকে সাহায্য করেছি। ১০ কোটি মহিলা এমন সব কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আমি আগে যাঁদের কথা উল্লেখ করেছি, সেই ১ কোটি ১ লক্ষপতি দিদিও রয়েছেন। আর আমি যেমনটি বলেছি, আমরা অদূর ভবিষ্যতেই দেশে ৩ কোটি লাখপতি দিদিকে দেখতে পাবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কিছু পরিসংখ্যান এমন, যা অর্থনীতিবিদরা যেমন বোঝেন, পাশাপাশি সাধারণ মানুষরাও বোঝেন। ২০১৪ সালের আগের ১০ বছরে পরিকাঠামো নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ ছিল প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। আর বিগত ১০ বছরে পরিকাঠামো নির্মাণ ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ৪৪ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে রোজগার কিভাবে বাড়ছে, এ থেকেই বোঝা যায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই বাজেট বরাদ্দ থেকে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তার ফলে কত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তা আপনারা আন্দাজ করতে পারেন। আমরা ভারতকে ম্যানুফ্যাকচারিং – এর গবেষণা ও উদ্ভাবনের হাব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের যুবশক্তিকে উৎসাহ যুগিয়ে চলেছি। এর সমর্থনে সব ধরনের ব্যবস্থা বিকশিত করে চলেছি। আর্থিক সহায়তারও বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে আমরা সর্বদাই পরনির্ভরশীল। শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে হলে আমাদের অনেক কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যে, পরিবেশ-বান্ধব শক্তি উৎপাদন বাড়াতে। হাইড্রোজেন নিয়ে আমরা অনেক বড় মাত্রায় অভূতপূর্ব বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে চলেছি। তেমনই আরেকটি ক্ষেত্র, যেখানে ভারতকে নেতৃত্ব দিতে হবে, সেটি হ’ল সেমিকন্ডাক্টর। আগের সরকার এক্ষেত্রে অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু সাফল্য পায়নি। এখন আমরা যে জায়গায় পৌঁছেছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের তিন দশক নষ্ট হয়ে থাকলেও আগামী দিনে আমরা অবশ্যই সাফল্য পাবো। আমরা এই সেমিকন্ডাক্টার ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আর তখন ভারত এক্ষেত্রে বিশ্বে অনেক বড় অবদান রাখবে। এই সমস্ত কারণে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, উৎকৃষ্ট কাজের সম্ভাবনা অনেক বাড়তে চলেছে। এই দিকটি লক্ষ্য রেখে আমরা একটি স্বতন্ত্র দক্ষতা মন্ত্রক গড়ে তুলেছি। এই মন্ত্রকের মাধ্যমে দেশের নবীন প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়ন সুনিশ্চিত হচ্ছে। আর আমরা ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র জন্য মানবসম্পদ তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমি চাই যে, দেশের সামনে কিছু সত্য উঠে আসুক। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে মূল্য বৃদ্ধিও বাড়ে। আমি এই সভায় আজ কিছু কথা বলতে চাই, যাঁরা আমাদের কথা বুঝতে পারেন না, তাঁরা হয়তো নিজেদের কথা বোঝার চেষ্টা করবেন। যে কথাগুলি বলবো, সেগুলি আপনাদের কোন নেতা কখন বলেছিলেন, তা আমি পরে বলবো। “প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা এতে বেড়েছে” - এই বক্তব্য কার? আমাদের পণ্ডিত নেহরুজী সেই সময় লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন। “প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা এতে বেড়েছে”। তিনি লালকেল্লার প্রাকার থেকেই সেই সময় স্বীকার করেছিলেন যে, দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বক্তব্যের ১০ বছর পরবর্তী নেহরুজীর আরেকটি বক্তব্য আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। “আজকাল মূল্য বৃদ্ধির কারণে আপনাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরাও সম্পূর্ণভাবে মূল্যবৃদ্ধিকে কাবু করতে পারিনি। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, অদূর ভবিষ্যতেই মূল্য বৃদ্ধিকে কাবু করতে পারবো”। তখন নেহরুজী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, তবুও মূল্যবৃদ্ধিকে লাগাম পরাতে পারেননি বলেই তাঁকে বারবার এই কথাগুলি বলতে হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন আমি আরেকজনের বক্তব্যের অংশ পড়ে শোনাবো। “যখন দেশ এগিয়ে চলে, তখন জিনিসপত্রের দামও কিছুটা বাড়ে। আমাদের এটাও দেখতে হবে, যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম টানা যায়”। একথা কে বলেছিলেন? ১৯৭৪ সালে যখন সারা দেশে অসংখ্য দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষকে জেলবন্দী করে দেওয়া হয়েছিল। মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছেছিল ৩০ শতাংশে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তিনি তাঁর ভাষণে আরও যা বলেছিলেন, তা শুনলে আপনারা চমকে উঠবেন। তিনি বলেছিলেন, “আপনাদের যদি ফসল ফলানোর জন্য জমি না থাকে, তা হলে মাটির টবে এবং ক্যানেস্তারায় সব্জি চাষ করুন”। তিনি এত উঁচু পদে বসে সাধারণ মানুষকে এই উপদেশ দিয়েছিলেন। তখন মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দেশে দুটি গান সুপারহিট হয়েছিল। প্রতিটি বাড়িতে গাওয়া হ’ত। এর মধ্যে একটি গান ছিল “মহেঙ্গাই মার গেয়ি….” আর দ্বিতীয়টি হ’ল “মহেঙ্গাই ডায়েন খায়ে যাৎ হ্যায়” – এই দুটি গানই কংগ্রেসের শাসনকালে গাওয়া হ’ত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ইউপিএ শাসনকালে মূল্য বৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে পৌঁছে গিয়েছিল। একথা আপনারা অস্বীকার করতে পারবেন না। আর ইউপিএ সরকারের যুক্তি ছিল, অসংবেদনশীলতা। একথা বলা হয়েছিল যে, “দাম দিয়ে আইসক্রিম যদি খেতে পারো, তা হলে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কেন কান্নাকাটি করছো”। যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল, তখন তাঁরা এই মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকেই আরও শক্তিশালী করেছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সরকার নিয়মিতভাবে মূল্য বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দু-দুটি যুদ্ধের পরও এবং ১০০ বছরের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় আসা সত্ত্বেও এই মূল্য বৃদ্ধি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আর আমরা তা করে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে অনেকেই রাগ দেখিয়েছেন। যতটা পারেন কঠোর শব্দ প্রয়োগ করে রাগ দেখিয়েছেন। আমি তাঁদের কষ্টের কথা বুঝতে পারি। তাঁদের সমস্যা ও রাগের কারণ আমি বুঝি। কারণ, তির নিশানায় লেগেছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি দুর্নীতিবাজদের উপর কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব নিয়েই এত রাগ। কত না কঠোর শব্দ তাঁরা প্রয়োগ করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১০ বছর আগে আমাদের সংসদে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হ’ত। অধিবেশনের অধিকাংশ সময়েই তো বিভিন্ন কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনায় কেটে যেত। দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হ’ত। নিয়মিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠতো। সংসদেই দাবি উঠতো, অ্যাকশন নাও – অ্যাকশন নাও – অ্যাকশন নাও! সেই সময়কালটা তো দেশবাসী দেখেছেনই। চারিদিকে দুর্নীতির খবর নিত্য-নৈমিত্তিক ছিল। আর আজ যখন সেই দুর্নীতিবাজদের উপর অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে, তখন ঐ মানুষেরা সেই দুর্নীতিবাজদের সমর্থনে হাঙ্গামা করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের সময়ে এই এজেন্সিগুলিকে শুধুই রাজনৈতিক কারণে প্রয়োগ করা হ’ত। এছাড়া তাদের কোনও কাজ করতে দেওয়া হ’ত না। এখন দেখুন, তাঁদের সময়কালে কী কী হয়েছে – পিএমএলএ আইন – এর মাধ্যমে আমরা আগের তুলনায় দু-গুণেরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছি। কংগ্রেসের শাসনকালে ইডি ৫ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। আমাদের শাসনকালে ইডি ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। দেশের সম্পত্তি যারা লুন্ঠন করেছে, তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আর যাদের এত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, নোটের পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। অধীরবাবু তো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। তিনিও এই নোটের পাহাড় দেখেছেন। কার কার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। কোন কোন রাজ্যে এই লুন্ঠনকারীরা ধরা পড়েছে। দেশবাসী এই নোটের পাহাড় দেখে চমকে চমকে উঠেছেন। কিন্তু, আপনারা এখন আর জনগণকে বোকা বানাতে পারবেন না। জনগণ দেখতে পাচ্ছেন কিভাবে ইউপিএ সরকারের সময় যে দুর্নীতির কথা হ’ত, তার মোট পরিমাণ ১০ – ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে।
আমরা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির যেমন রুখেছি, তেমনই সেসব কেলেঙ্কারি থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা গরীবদের উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছি। দালালদের পক্ষে এখন গরীবদের লুন্ঠন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে জন ধন অ্যাকাউন্ট, আধার, মোবাইল – এর শক্তিকে আমরা চিনতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আমরা সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়েছি। কংগ্রেসের একজন প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, কেন্দ্র থেকে ১ টাকা পাঠালে সাধারণ মানুষের কাছে ১৫ পয়সা পৌঁছায়। সেই হিসেবে আমরা যে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা পাঠিয়েছি, তাঁদের সময়ে হলে সেই টাকার কতটা অংশ কোথায় যে চলে যেত, তা কেউ জানতেন না। এর ১৫ শতাংশই মাত্র জনগণের হাতে পৌঁছতো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা ১০ কোটি ভুতুড়ে নাম আমাদের অর্থনীতি থেকে বাদ দিয়েছি। অনেকেই অবাক, আগে এত সুবিধাভোগী ছিল, তা এখন কেমন করে কমে গেল। তাঁরা এমন ব্যবস্থা বানিয়েছিলেন, যে মেয়ের জন্মই হয়নি, তার নামে সরকার থেকে বিধবা পেনশন যেত। আর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে অর্থ তছরূপ করার যত পথ ছিল, আমরা সেইসব পথ বন্ধ করেছি। কাজেই ওদের তো সমস্যা হবেই, কারণ অসৎ পথে দৈনন্দিন আয় বন্ধ হয়ে গেছে যে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই ভুতুড়ে নামগুলি সরানোর ফলে সরকারের প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ভুয়ো হাতে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। দেশের করদাতাদের প্রতিটি পয়সা সাশ্রয় করা আর সঠিক কাজে লাগানোর জন্য আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ভাবা উচিৎ, আর সমাজের প্রত্যেক মানুষের দেখা উচিৎ। আজ দেশের দুর্ভাগ্য যে, আগে শ্রেণীকক্ষে কেউ নকল করে ধরা পড়লে ১০ দিন পর্যন্ত নিজের মুখ কাউকে দেখাতো না। আজ যাদের উপর দুর্নীতির আরোপ প্রমাণ হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁরাও আজ সার্বজনিক ক্ষেত্রে নিজেদের মহিমা কীর্তন করছেন। তাঁরা দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? শাস্তি পাওয়া আসামীর মহিমা কীর্তন! যাঁদের ওপর আরোপ রয়েছে, তাঁদের নিয়ে কিছু বললে আমি মেনে নিতে পারি। কিন্তু, যাদের দোষ প্রমাণিত, যারা সাজাপ্রাপ্ত কিংবা সাজা কাটছে – এরকম মানুষের মহিমা কীর্তন করছেন তাঁরা। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে আপনারা এ কোন সংস্কৃতি তুলে ধরতে চান? আপনারা কাদের প্রেরণা যোগাতে চান, কোন পথ দেখাতে চান। আপনাদের এই অসহায়তার কারণ কী? যে দেশে সংবিধানের শাসন চলছে, যে দেশে গণতন্ত্র চলছে, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, সেখানে এই ধরনের দোষীদের মহিমা কীর্তন দীর্ঘকাল চলতে পারে না। আমার এই কথাগুলো তাঁদেরকে লিখে নিতে বলুন। এই মহিমা কীর্তনের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের সর্বনাশের ঘোষণাপত্রে নিজেরা স্বাক্ষর করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সরকারি এজেন্সিগুলির কাজ হ’ল তদন্ত করা। এই এজেন্সিগুলি স্বায়ত্ত্বশাসিত। সংবিধান এদেরকে স্বতন্ত্র রেখেছে। আর বিচার করার দায়িত্ব হ’ল – বিচারপতিদের। তাঁরা নিজেরা নিজেদের কাজ করছেন। সেজন্যই অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি এই পবিত্র সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে আরেকবার পুনরুচ্চারণ করতে চাই, যে যত খুশি আমার ওপর অন্যায় করুক না কেন, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো। যারা দেশকে লুন্ঠন করেছে, তাদেরকে সেই টাকা সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে, তাদের সেই সম্পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে। আমি দেশবাসীকে এই সংসদ ভবনের পবিত্র সভাঘর থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমার ওপর যে যত দোষারোপ করতে চান, করুন। কিন্তু, দেশকে লুন্ঠন করতে দেওয়া হবে না। আর যারা দেশকে লুন্ঠন করেছে, তাদের সেই সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশবাসী এখন সুরক্ষা ও শান্তি অনুভব করেন। বিগত ১০ বছরের তুলনায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশ আজ সত্যিই অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ও নকশালবাদ এখন কিছু ছোট পরিধির মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে আছে। সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারত যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে, গোটা বিশ্ব আজ ভারতের এই নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। ভারতের সেনাবাহিনীগুলি সীমান্ত থেকে শুরু করে সমুদ্র পর্যন্ত নিজেদের সামর্থ্য ও শৌর্যকে বারবার প্রমাণ করেছে। আমাদের সেনাবাহিনীর পরাক্রম নিয়ে আমাদের গর্ব হওয়া উচিৎ। কেউ যতই তাঁদের মনোবল ভাঙ্গার চেষ্টা করুক না কেন, আমার সেনাবাহিনীর উপর ভরসা রয়েছে। আমি তাঁদের সামর্থ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছি। কিছু রাজনৈতিক নেতা, সেনা সম্পর্কে উল্টো-পাল্টা শব্দ বলে দিলেই আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যাবে – এমন স্বপ্ন যারা দেখছেন, তাঁরা নিরাশ হবেন। তাঁরা দেশের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কারও এজেন্ট হয়ে দালালের মতো এ ধরনের ভাষা যদি তারা বলে থাকে, দেশ কখনও তা মেনে নেবে না। আর যারা সর্বসমক্ষে দেশের মধ্যে ভিন্ন দেশ তৈরি করার সপক্ষে কথা বলেন, জুড়তে পারা তো দূরের কথা, ভাঙ্গার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরকেও কেউ মেনে নেবেন না। আপনাদের সমস্যাটা কোথায়? দেশকে এত টুকরো করার পরও এখনও আপনাদের মনের জ্বালা মেটেনি। দেশকে আর কত টুকরো করতে চান আপনারা?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সংসদ ভবনে আগে যখনই কাশ্মীর নিয়ে কথা হতো, তখন হলে সর্বদাই দুশ্চিন্তার স্বর শোনা যেত। অনেক চেঁচামেচি, আরোপ-প্রত্যারোপ হ’ত। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর গর্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পর্যটন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাশ্মীরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে। গোটা বিশ্ব আজ সেই আবহের প্রশংসা করছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা নিয়ে কেমন হাওয়া বানিয়ে রাখা হয়েছিল। কাশ্মীরের জনগণ এই ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তকে যেভাবে মেনে নিয়েছেন, যেভাবে উদযাপন করেছেন, তাতে বোঝা যায়, আসলে এই সমস্যার পেছনে কারা ছিলেন! কারা দেশের সংবিধানে এই ধরনের বিভেদের বীজ পুঁতে রেখেছিলেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নেহরুজীর নাম উচ্চারণ করলে তাঁদের খুব খারাপ লাগে। কিন্তু, কাশ্মীরকে যত সমস্যায় ভুগতে হয়েছে, তার মূলে ছিল নেহরুজীর ভাবনা। এর ফলে, দেশকেও অনেক কষ্ট ভুগতে হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর তথা দেশের জনগণকে নেহরুজীর ভুলের অনেক খেসারত দিতে হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তিনি একের পর এক ভুল করে গেছেন। কিন্তু আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েও সেই ভুলগুলি শুধরানোর চেষ্টা জারি রেখেছি, আমরা থামবো না, আমরা থামার পাত্রও নই। আমরা এই দেশের জন্য কাজ করতে পথে নেমেছি। আমাদের জন্য ‘নেশন ফার্স্ট – দেশ সর্বাগ্রে’।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুরোধ জানাবো, সমস্ত মাননীয় সদস্যদেরকেও অনুরোধ জানাবো যে, ভারতের নাগরিক জীবনে একটি অনেক বড় সুযোগ এসেছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক আবহে ভারতের জন্য বড় সুযোগ এসেছে, একটি নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। রাজনীতি নিজের জায়গায় থাকুক, আরোপ-প্রত্যারোপ নিজের জায়গায় থাকুক। কিন্তু, দেশের চেয়ে বড় তো আর কিছু নেই! সেজন্য আসুন, আমি আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানাই। সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশকে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে যাই। আসুন, রাজনীতিকে নিজের জায়গায় রেখে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে চলার বাধা কোথায়? আপনারা এই উন্নয়নের পথকে ছাড়বেন না। আমি আপনাদের সঙ্গ চাইছি। ভারতমাতার কল্যাণের জন্য আপনাদের সঙ্গ চাইছি। নতুন আন্তর্জাতিক আবহে যে সুযোগগুলি এসেছে, সেই সুযোগগুলিকে আমাদের দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজে লাগাতে আপনাদের সঙ্গ চাইছি। ১৪০ কোটি দেশবাসীর জীবনকে আরও সমৃদ্ধ ও সুখী করে তুলতে আপনাদের সাহায্য চাইছি। কিন্তু, আপনারা যদি সাহায্য না করতে পারেন, আপনারা যদি আমার দিকে ইঁট-পাথর ছোঁড়েন, তা হলেও লিখে রাখুন, আপনাদের ছোঁড়া প্রতিটি ইঁট-পাথর আমি উন্নত ভারতের ভিত্তি প্রস্তুত করার জন্য তুলে নেব। আপনাদের ছোঁড়া প্রতিটি পাথরকে আমি যে উন্নত ভারতের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছি, তার ভিত্তিকে শক্তিশালী করার কাজে অর্পণ করবো আর দেশকে সেই সমৃদ্ধির দ্বারে নিয়ে যাবো। যত পাথর ছুঁড়তে চান ছুঁড়ুন, আপনাদের ছোঁড়া প্রতিটি ইঁট-পাথর আমি উন্নত ভারতের ভিত্তি প্রস্তুত করার জন্য তুলে নেব – আপনাদের সকলকে আমি এই আশ্বাস দিচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি জানি, বন্ধুদের সমস্যার কথা জানি। তাঁরা যাই বলুন না কেন, আমি দুঃখ পাই না। আর দুঃখ পাওয়াটাও উচিৎ নয়। কারণ, আমি জানি, তাঁরা নামী মানুষ। আর আমরা কাজের লোক। আমাদের মতো কাজের লোকেদের তো নামী মানুষদের কথা শুনতেই হয়। সেজন্য বলছি যে, নামী মানুষরা যাই করুন না কেন, যা খুশি বলার জন্মসিদ্ধ অধিকার তাঁদের রয়েছে। আর আমাদের মতো কাজের লোকেদের শুনে যেতে হয়, আমরা এভাবেই শুনে যাব আর দেশকে উন্নতও করে নিয়ে যাব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনি আমাকে এই পবিত্র সভাকক্ষে মাননীয়া রাষ্ট্রপতিজীর বক্তব্যের সমর্থনে বলার সুযোগ দিয়েছেন। আমি মাননীয়া রাষ্ট্রপতিজীর এই অভিভাষণকে সমর্থন জানিয়ে, ধন্যবাদ প্রস্তাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার বক্তব্যকে বিরাম দিচ্ছি।