মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য উপস্থিত হয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া তাঁর বক্তব্যে উন্নত ভারতের সংকল্পকে বিস্তারিত করেছেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া তাঁর বক্তব্যে আমাদের সকলকে এবং দেশবাসীকে আলোকবর্তিকা দেখিয়েছেন। সেজন্য আমি রাষ্ট্রপতিজিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গতকাল ও আজ অনেক মাননীয় সদস্য রাষ্ট্রপতিজির অভিভাষণের প্রেক্ষিতে তাঁদের ভাবনা তুলে ধরেছেন। আমি বিশেষ করে যাঁরা প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আমাদের মধ্যে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে যে মাননীয় বন্ধুগণ নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেছেন, সংসদের সমস্ত নিয়ম পালন করে বক্তব্য রেখেছেন, তাঁদের ব্যবহার এমন ছিল যেন এক একজন অভিজ্ঞ সাংসদ কথা বলছেন। আর সেজন্যই প্রথমবার বক্তব্য রাখা সত্বেও তাঁরা সভাকক্ষের গরিমা বৃদ্ধি করেছেন এবং নিজেদের সুচারু বক্তব্য রেখে এই বিতর্ককে আরও বেশি মূল্যবান করে তুলেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশ একটি সফল সাধারণ নির্বাচন অভিযান সুসম্পন্ন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচনী অভিযান ছিল। বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ নির্বাচনী অভিযানে অংশগ্রহণ করে দেশের জনগণ আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন।
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি কিছু সদস্যের যন্ত্রণা বুঝতে পারি। তাঁরা লাগাতার মিথ্যে প্রচার চালানো সত্বেও তাঁদের ঘোর পরাজয় হয়েছে। আর গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ নির্বাচনী অভিযানে অংশগ্রহণ করে ভারতের জনগণ আমাদেরকে নির্বাচিত করে তৃতীয়বার দেশের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদেরকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে কষ্টিপাথরে যাচাই করে দেশের জনগণ এই জনাদেশ দিয়েছে। জনগণ আমাদের ১০ বছরের ট্র্যাক রেকর্ডকে দেখেছে। জনগণ দেখেছে যে দরিদ্র দেশবাসীর কল্যাণে আমরা যে সমর্পণ ভাব নিয়ে কাজ করেছি, ‘জনসেবাই সর্বোপরি’ এই মন্ত্রকে শিরোধার্য করে আমরা যে কাজ করেছি, তার ফলে ১০ বছরে ২৫ কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র সীমার ঊর্ধ্বে উঠেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এতো কম সময়ে, এতো বেশি মানুষকে দারিদ্র সীমার ঊর্ধ্বে তুলে আনার এই সফল প্রচেষ্টা এবারের সাধারণ নির্বাচনে আমাদের জন্য জনগণের আশীর্বাদে প্রতিফলিত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা ২০১৪ সালে যখন প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে শাসন ক্ষমতায় আসি, তার আগের নির্বাচনী অভিযানে আমরা বলেছিলাম, আমরা দুর্নীতির প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলবো। আর আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি, যে দুর্নীতির জন্য দেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিধ্বস্ত, যে দুর্নীতি দেশকে কুড়ে কুড়ে ঘূণের মতো ফাঁপা করে দিয়েছে, সেই দুর্নীতি দূরীকরণে আমাদের সরকার এতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই আজ দেশবাসী আমাদের আশীর্বাদ দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ সারা পৃথিবীতে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সারা পৃথিবীতে ভারতের গৌরব বেড়েছে এবং ভারতের প্রতি সকলের দৃষ্টিভঙ্গী বদলেছে। এই গৌরবপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন আজ ভারতবাসী অনুভব করছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের জনগণ দেখেছে যে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল, ‘নেশন ফাস্ট’, ভারত সর্বাগ্রে। আমাদের প্রতিটি নীতি, প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজ একটাই দাঁড়িপাল্লায় মাপা হয়েছে, আর সেটি হল ভারত সর্বাগ্রে। ভারতকে সবার ওপরে তুলে ধরার ভাবনা নিয়ে আমরা সেজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেছি। আর সেই সংস্কার প্রক্রিয়া আমরা ক্রমাগত চালিয়ে গেছি। গত ১০ বছর ধরে আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ এই মন্ত্র নিয়ে ক্রমাগত দেশের আপামর জনগণের কল্যাণের চেষ্টা করে গেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা সেই সিদ্ধান্তগুলির প্রতি সমর্পিতপ্রাণ থেকেছি, যেগুলিতে ভারতের সংবিধানের মূল ভাবনা প্রতিফলিত, সংবিধানের মূল ভাবনা অনুসারে সর্বধর্মকে সমান মর্যাদা দিয়ে আমরা দেশের সেবা করার চেষ্টা করেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই দেশ দীর্ঘকাল ধরে তুষ্টিকরণের রাজনীতিও দেখেছে, এই দেশ দীর্ঘকাল ধরে তুষ্টিকরণের প্রশাসনিক মডেলও দেখেছে। আমরাই প্রথমবার দেশে ‘সেকুলারিজম’ বা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সর্বাগ্রে রেখে তুষ্টিকরণ নয়, সকল নাগরিকের সন্তুষ্টিকরণের ভাবনা নিয়ে কাজ করে গেছি। আর যখন আমি সন্তুষ্টিকরণের কথা বলছি, তার মানে হল, প্রত্যেক প্রকল্পের স্যাচুরেশন বা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন। সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুফলকে দেশের প্রান্তিকতম ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে আমরা তার স্যাচুরেশনের চেষ্টা করেছি। আর যখন আমরা স্যাচুরেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলি, তখন প্রকৃত অর্থে সামাজিক ন্যায়েরও স্যাচুরেশন হয়। আর এই স্যাচুরেশনই প্রকৃত অর্থে ‘সেকুলারিজম’-এর সঠিক বাস্তবায়ন। আমাদেরকে তৃতীয়বার নির্বাচন করে দেশবাসী আমাদের এই নীতি ও কর্মপদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তুষ্টিকরণ এই দেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে। আর সেজন্যই আমরা ‘জাস্টিস টু অল, অ্যাপিজমেন্ট টু নান’ বা সবার জন্য ন্যায়বিচার, কারও তুষ্টিকরণ নয় - এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে গেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের ১০ বছরের শাসনকালকে ভালোভাবে দেখে, যাচাই করে ভারতের জনগণ এবার আমাদের সমর্থন জানিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা আর একবার ১৪০ কোটি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এবারের নির্বাচন এটা প্রমাণ করেছে যে, ভারতের জনগণের রাজনৈতিক ভাবনা কতটা পরিপক্ক, ভারতের জনগণ কতটা বিবেকবান আর কতো উচ্চ আদর্শ নিয়ে তাঁরা নিজেদের বিবেককে সৎবুদ্ধির নিরিখে প্রয়োগ করেছেন। আর তারই ফল আজ তৃতীয়বার আমরা আপনাদের সামনে, দেশের জনগণের সামনে নম্রভাবে সেবা করার জন্য উপস্থিত হয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের জনগণ আমাদের নীতিগুলি দেখেছে। আমাদের উদ্দেশ্য, আমাদের নিষ্ঠা দেখে জনগণ আমাদের ওপর ভরসা রেখেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এবারের নির্বাচনে আমরা জনগণের কাছে একটি বড় সংকল্প নিয়ে আশীর্বাদ চাইতে গেছিলাম। আমরা আশীর্বাদ চেয়েছিলাম আমাদের উন্নত ভারতের সংকল্প নিয়ে। আমরা উন্নত ভারত গড়ে তোলার জন্য একটি দায়বদ্ধতা, শুভ নিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছি। জনগণ সেই উন্নত ভারতের সংকল্পকে আপন করে নিয়ে আমাদের আর একবার জয়ী করে তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের উন্নয়ন হলে কোটি কোটি জনগণের স্বপ্ন সফল হয়। দেশের উন্নয়ন হলে কোটি কোটি মানুষের সংকল্প বাস্তবায়িত হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের উন্নয়ন হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে ওঠে, আর তা থেকে তাঁরা নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতের উন্নয়ন হলে প্রত্যক্ষভাবে দেশের জনগণের গরিমা, আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। একটি উন্নত ভারত কোটি কোটি জনগণের জীবনযাত্রার মান বদলে দেবে। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এহেন পরিবর্তনের প্রতীক্ষায় হয়েছে।
দেশের উন্নয়ন হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভারতের উন্নয়ন হলে আমাদের গ্রামগুলির চেহারা বদলে যাবে, আমাদের শহরগুলির চেহারা বদলে যাবে। গ্রামের জীবনে গৌরব থাকে, গরিমাও থাকে আর উন্নয়নের নতুন নতুন সুযোগও থাকে। দেশ উন্নত হলে আমাদের শহরগুলির উন্নয়নও অবশ্যম্ভাবী। তখন সমগ্র বিশ্বের উন্নয়ন যাত্রায় ভারতের শহরগুলির জীবনযাত্রার মানও একইরকম উন্নত হবে- এটা আমাদের স্বপ্ন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
উন্নত ভারত-এর মানে হল কোটি কোটি নাগরিকের জন্য কোটি কোটি সুযোগ সৃষ্টি, অসংখ্য সুযোগ সৃষ্টি আর তার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা, ক্ষমতা এবং সম্পদ অনুসারে উন্নয়নের অনেক নতুন সীমা অতিক্রম করা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আজ আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, উন্নত ভারতের যে সংকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, সেই সংকল্পগুলির বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করবো। আমরা পূর্ণ নিষ্ঠা ও সততা নিয়ে, আমাদের শাসনকালের প্রতিটি মূহুর্ত আর আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষকে দেশবাসীর উন্নত ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজে লাগাবো। আমরা দেশের জনগণকে বলেছিলাম, ‘টুয়েন্টি ফোর বাই সেভেন ফর টু জিরো ফোর সেভেন’ (২৪ বাই ৭ ফর ২০৪৭)। আজ আমি এই সভাগৃহে দাঁড়িয়ে পুনরুচ্চারণ করছি যে, আমরা সেকাজ অবশ্যই সম্পূর্ণ করবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালের সেই দিনটির কথা মনে করুন, ২০১৪ সালের সেই দিনটির কথা মনে করলে আমাদের মনে পড়বে সেই সময় দেশের মানুষ তাঁদের আত্ববিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। দেশ হতাশার গহ্বরে ডুবে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের আগে দেশ সবচেয়ে বড় যে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল, সবচেয়ে বড় যে সম্পদ হারিয়েছিল, সেটি হল দেশের জনগণের আত্মবিশ্বাস। আর যখন বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায় তখন সেই ব্যক্তি, সমাজ, সেই দেশকে সাবলম্বী করে তোলা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর সেই সময় সাধারণ মানুষ শুধু একথাই বলতেন। সেই সময় দেশের যে কোনো জায়গায় সাধারণ মানুষের মুখে একথাই শোনা যেত- এদেশের কিছু হওয়া সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের আগে সারা ভারতে একথা শোনা যেত। এই বাক্যটি তখন ভারতবাসী হতাশার পরিচয় হয়ে উঠেছিল। সেই সময় প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই নতুন নতুন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির খবর দেখা যেত। শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি, রোজ নতুন নতুন দুর্নীতি, দুর্নীতির সঙ্গে দুর্নীতির প্রতিযোগিতা, দেশজুড়ে দুর্নীতিবাজদের রমরমা সময় ছিল সেটা। আর চক্ষুলজ্জা না রেখে সরকারিভাবে স্বীকার করে নেওয়া হত যে দিল্লি থেকে ১ টাকা পাঠানো হলে সাধারণ মানুষের কাছে ১৫ পয়সা পৌঁছায়। অর্থাৎ প্রত্যেক টাকায় ৮৫ পয়সার দুর্নীতি। এই দুর্নীতিগুলি দেশকে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল। সারা দেশ নীতি-পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। স্বজন-পোষণ এত বিস্তারলাভ করেছিল যে সাধারণ নবীন প্রজন্মের মানুষ আশা ছেড়ে দিয়েছিল। সুপারিশ করার কেউ না থাকলে যুবক-যুবতীদের জীবনের উন্নতি থেমে যাবে- এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সরকারি প্রকল্পের বাড়ি পেতে গৃহহীনকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সামান্য রান্নার গ্যাসের সংযোগের জন্য সাংসদদের কাছে গিয়ে দরবার করতে হত। তারপরও কাটমানি না দিয়ে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যেত না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিনামূল্যে রেশন পাওয়ার ক্ষেত্রেও যে কোন সময় বাজারে গিয়ে দেখা যেত যে রেশনের দোকানে বোর্ড ঝুলছে। অধিকাংশ মানুষই তাঁদের জন্য বরাদ্দ রেশন পেত না। এর জন্যও ঘুষ দিতে হত। ফলে আমাদের অধিকাংশ ভাই-বোনেরা এত হতাশ হয়ে পড়েছিল যে নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালের আগে সেই হতাশাজনক বাক্যটি ভারতের সমস্ত সাধারণ মানুষের মনে স্থায়ী বাসা বেঁধেছিল - এদেশের কিছু হওয়া সম্ভব নয় ! সমাজ হতাশার গহ্বরে ডুবে গিয়েছিল। এরকম ক্রান্তিকালে দেশের জনগণ আমাদেরকে সেবা করার জন্য বেছে নিয়েছিল। আর সেই মুহুর্তটি ছিল দেশের পরিবর্তিত যুগের সূচনাকাল। হ্যাঁ, আমি বলতে চাই, গত ১০ বছরে আমার সরকারের অনেক সাফল্য ও অনেক সিদ্ধি রয়েছে। কিন্তু একটি সিদ্ধি যা অন্য সমস্ত সিদ্ধিকে ছাপিয়ে গেছে, অন্যগুলিকেও শক্তিশালী করে তুলেছে; তা হল দেশবাসীকে হতাশার গহ্বর থেকে বের এনে আশা ও বিশ্বাস নিয়ে চলতে সাহায্য করা। ফলে, ক্রমে দেশের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ফলে, আগের হতাশাজনক শব্দগুলি নবীন প্রজন্মের অভিধানে স্থান পায়নি। ধীরে ধীরে দেশের জনগণের মন স্থির হয়েছে। যারা ২০১৪ সালের আগে বলতেন যে এদেশের কিছুই হওয়া সম্ভব নয়, তারাই এখন বলতে শুরু করেছেন যে, এখন এদেশে সবকিছু হতে পারে, এদেশে সবকিছু সম্ভব। আমরা জনগণের মনে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলার কাজ করেছি। আমরা সবার আগে দ্রুত গতিতে ৫জি রোল আউট করে দেখিয়েছি। আজ দেশ বলতে শুরু করেছে, দ্রুতগতিতে ৫জি রোল আউট হওয়ার সাফল্য দেখে দেশ গর্বের সঙ্গে বলছে, ভারত এখন সব কিছু করতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটা সময় ছিল যখন কয়লা দুর্নীতিতে অনেক বড় বড় মানুষের হাত কালো হয়েছিল। আজ কয়লার সর্বাধিক উৎপাদন, সর্বাধিক সংরক্ষণ দেখে দেশবাসী এখন বলতে শুরু করেছে ভারত এখন সব কিছু করতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালের আগে একটা সময় ছিল যখন ফোন ব্যাঙ্কিং করে বড় বড় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি হয়েছিল। নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যাঙ্কের কোষাগার লুঠ করা হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালের পর বিভিন্ন নীতি পরিবর্তন, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্রুততা, বাস্তবায়নে নিষ্ঠার পরিণামে আজ ভারতের ব্যাঙ্কগুলি আবার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাঙ্কগুলির সারিতে নিজেদের স্থান প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি বিশ্বের সর্বাধিক লাভজনক ব্যাঙ্কগুলির অন্যতম। জনসেবার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালের আগে একটা সময় ছিল যখন সন্ত্রাসবাদীরা যখন খুশি, দেশের যেখানে খুশি আক্রমন করে দিত। ২০১৪ সালের আগে এমন একটা সময় ছিল যখন সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে অসংখ্য নির্দোষ মানুষ মারা যেত। ভারতের নানা প্রান্তকে টার্গেট করা হত, আর সরকার চুপচাপ বসে থাকতো, মুখ খুলতে তৈরি ছিল না। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত সন্ত্রাসবাদীদের ডেরায় ঢুকে তাদেরকে মেরেছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে, এয়ার স্ট্রাইক করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের নাটের গুরুদের দেশের সামর্থ দেখিয়ে দিয়েছে।
আর আজ মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের প্রত্যেক নাগরিক জানে যে দেশের নিরাপত্তার জন্য ভারত সবকিছু করতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁরা ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারার পুজো করত, তারাই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে, এই ৩৭০ ধারার সুযোগ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিগড়ে দিয়েছিল। সেখানকার সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছিল। এই ধারার ফলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে ভারতের সংবিধানের অন্যান্য ধারা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা যেত না। আর আজ যাঁরা সংবিধানকে মাথায় রেখে নাচছে, তাঁরা ভারতের সংবিধানের অন্যান্য ধারাকে জম্মু-কাশ্মীরে প্রয়োগ করার সাহসও রাখত না। তাঁরা তো বাবাসাহেব আম্বেদকরকে অপমান করেছিল। এই ৩৭০ ধারার সুযোগ নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে তখন সেনাবাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়া হত। আর মানুষ হতাশায় ডুবে গিয়ে বলতো, এখন জম্মু-কাশ্মীরে আর কিছু হবে না। আমরা ক্ষমতায় এসে যখন সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছি, তখন থেকে এই পাথর ছোঁড়া বন্ধ হয়েছে। গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ আমাদের দেশের সংবিধানের ওপর ভরসা রেখে, ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার ওপর ভরসা রেখে, ভারতের গণতন্ত্রে ভরসা রেখে প্রবল উৎসাহে ভোটদানের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এই পরিবর্তন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৪০ কোটি দেশবাসীর মনে এই বিশ্বাস অঙ্কুরিত হওয়া, এই আশা জেগে ওঠার ফলে তাঁরাই উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠেছেন। হ্যাঁ, এই বিশ্বাসই উন্নয়নের নিয়ন্ত্রক শক্তির কাজ করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই বিশ্বাস উন্নত ভারত গড়ার, সংকল্প থেকে সিদ্ধির ওপর বিশ্বাস।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল, তখন দেশবাসীর মনে যে উদ্দীপনা ছিল, যে উৎসাহ ছিল, যে বিশ্বাস ছিল, স্বাধীনতা অর্জন করবই, আজ দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে সেই বিশ্বাস আবার জেগে উঠেছে। যে বিশ্বাসের ফলে আজ এক প্রকার বলা যায় যে উন্নত ভারতের মজবুত ভিত্তির শিলান্যাস দেশের জনগণ এবারের নির্বাচনে করে দিয়েছে। যে প্রবল আকাঙ্খা স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল, সেই আকাঙ্খাই আজ উন্নত ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ভারতের লক্ষ্য অনেক বড়। গত ১০ বছরের প্রচেষ্টায় আজ ভারত এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছে যে এখন আমাদের নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, আমাদেরই পুরনো সব রেকর্ড ভাঙতে হবে। আর আমাদের এই উন্নয়ন যাত্রা আমাদেরকে পরবর্তী লেভেলে নিয়ে যাবে। গত ১০ বছরে ভারত উন্নয়নের যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তা আমাদের প্রতিস্পর্ধার একটি উচ্চমান নির্ধারণ করেছে, একটি বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছে। বিগত ১০ বছরে আমরা যে গতিতে কাজ করছি, এখন আমাদের প্রতিযোগিতা সেই গতিকে আরও গতির দিকে নিয়ে যাওয়া। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের এই ইচ্ছাকে আমরা সেই গতিতেই বাস্তবায়িত করবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা প্রত্যেক সফলতাকে, প্রতিটি ক্ষেত্রকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত ১০ বছরে ভারতের অর্থনীতিকে আমরা বিশ্বে ১০ নম্বর স্থান থেকে ৫ নম্বর স্থানে নিয়ে গেছি। এখন আমরা পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যে গতিতে এগোচ্ছি, আমরা নিশ্চিত এখন দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দেবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত ১০ বছরে আমরা ভারতকে মোবাইল ফোন নির্মাণের হাবে পরিণত করেছি, বড় উৎপাদক দেশে পরিণত করেছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা ভারতকে মোবাইল ফোনের বড় রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেছি। এবার আমাদের বর্তমান শাসনকালে আমরা সেমি কন্ডাক্টর ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই সাফল্য পেতে চলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যতো চিপ্স ব্যবহৃত হবে, এই সমস্ত চিপ ভারতের মাটিতেই প্রস্তুত হয়। এটা আমাদের ভারতের নবীন প্রজন্মের বুদ্ধির পরিণাম। আমাদের ভারতের নবীন প্রজন্মের পরিশ্রমের পরিণাম- এই বিশ্বাস আমাদের হৃদয়ে রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা আধুনিক ভারত গড়ে তোলার পথেও এগিয়ে যাবো। আমরা উন্নয়নকে নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবো। কিন্তু আমাদের শিকড় নিজেদের মাটির গভীরে প্রোথিত থাকবে। আমাদের পা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। আমরা ইতিমধ্যেই ৪ কোটি গৃহহীন গরিব মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ করেছি। এবারের শাসনকালে আমরা দ্রুত গতিতে আরও ৩ কোটি গৃহহীন গরিব মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ করবো। এটা আমরা সুনিশ্চিত করবো যাতে এদেশে কাউকে খোলা আকাশের নীচে থাকতে না হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গত ১০ বছরে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা দেশের কোটি কোটি বোনদের নিয়ে শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এগিয়েছি। এখন আমরা তাদের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এখন আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে যত বোন কাজ করেন তাঁদের আর্থিক গতিবিধি এতটা বাড়াতে চাই, তাঁদের কাজের সুযোগ এতো প্রসারিত করতে চাই যে, অদূর ভবিষ্যতে এ রকম ৩ কোটি বোনদের লাখপতি দিদি করে তোলার সংকল্প নিয়ে এগোচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আগেও বলেছি, আজ আবার বলছি, আমাদের তৃতীয় শাসনকালের মানে হল, আমরা ৩ গুণ গতিতে কাজ করবো। আমাদের তৃতীয় শাসনকালের মানে হল, আমরা ৩ গুণ শক্তি প্রয়োগ করবো। আমাদের তৃতীয় শাসনকালের মানে হল, আমরা দেশবাসীকে ৩ গুণ পরিণাম এনে দেবো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এনডিএ-র তৃতীয়বার সরকার গঠন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এই সৌভাগ্য দ্বিতীয়বার কোনো সরকারের হয়েছে, আর তা হয়েছে ৬০ বছর পর। তার মানে এই সাফল্য অনেক কঠোর পরিশ্রমের পরই পাওয়া সম্ভব। অনেক অভূতপূর্ব বিশ্বাস সম্পাদনের পরই এটা সম্ভব। সাধারণ রাজনীতির খেলা দেখিয়ে এটা সম্ভব নয়। জনগণের সেবার মাধ্যমে পাওয়া আশীর্বাদের শক্তিতেই এটা সম্ভব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
জনগণ আমাদেরকে স্থিরতা এবং নিরন্তরতার জন্য জনাদেশ দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি মাননীয় সভাপতি মহোদয়, কিছু জিনিস মানুষের অগোচরে থেকে গেছে। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি আমাদের দেশের চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। এই চারটি রাজ্যেই এনডিএ অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। আমরা বিজয়ী হয়েছি। মহাপ্রভু জগন্নাথের ভূমি ওড়িশার জনগণ আমাদের অকুণ্ঠ আশীর্বাদ দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অন্ধ্রপ্রদেশে এনডিএ ক্লিন সুইপ করেছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অরুণাচল প্রদেশেও আমরা আর একবার সরকার গঠন করছি। সিকিমেও এনডিএ আর একবার সরকার গঠন করেছে। তাছাড়া ৬ মাস আগেই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আপনার নিজের রাজ্য রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে আমরা বিপুলভাবে জয়ী হয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
নতুন নতুন এলাকায় আমরা জনগণের ভালবাসা ও আশীর্বাদ পাচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় প্রথমবারের মতো কোনো আসনে জিতেছে। আমাদের কেরালার সেই সাংসদ আজ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে বসে আছে। তামিলনাড়ুতেও কয়েকটি আসনে বিজেপি খুব ভালো ভোট পেয়েছে। কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানে গত বারের তুলনায় বিজেপি বেশি শতাংশ ভোট পেয়েছে। আগামীদিনে তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে। যে রাজ্যগুলিতে নির্বাচন হবে, সেগুলি হল- মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং ঝাড়খণ্ড।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত বিধানসভায় এই তিনটি রাজ্যে আমরা যতো ভোট পেয়েছি, এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি রাজ্যে আমরা তার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পাঞ্জাবে বেশ কিছু আসনে আমাদের অভূতপূর্ব ভোট বেড়েছে। জনগণের আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের জন্য এদেশের জনগণ জনাদেশ দিয়েছে। আর জনাদেশ হল, আপনারা বিরোধী পক্ষে বসুন, বিতর্ক করার মতো কিছু না থাকলে হইচই, চিৎকার করতে থাকুন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের ইতিহাসে এই প্রথমবার এমন হয়েছে যখন ক্রমাগত ৩ বার কংগ্রেস ১০০-র পরিসংখ্যান পার করতে পারেনি, কংগ্রেসের ইতিহাসে এটি ততীয় সবচেয়ে বড় পরাজয়। ভালো হত যদি কংগ্রেস নিজেদের এই পরাজয় স্বীকার করতো, জনগণের আদেশকে মেনে নিয়ে আত্মমন্থন করতো। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে শীর্ষাসন করা শুরু দিয়েছেন আর কংগ্রেস ও তার বাস্তু ব্যবস্থা দিন-রাত আলো জ্বালিয়ে ভারতের জনগণের মনে এটা স্থাপন করার চেষ্টা করছে যে আমরা তাঁদের হারিয়ে দিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এ রকম কেন হচ্ছে? আমি নিজের জীবনের সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। কোনো ছোট বাচ্চা যখন নতুন সাইকেল শিখে চালাতে গিয়ে আছাড় খায়, সাইকেল থেকে পড়ে যায়, কাঁদতে থাকে, তখন বয়স্ক কেউ তার কাছে পৌঁছে তাকে ভোলানোর জন্য বলে, দ্যাখতো কতগুলো পিঁপড়ে মরে গেছে, দ্যাখতো পাখি উড়ে গেছে। তুই তো ভালোই সাইকেল চালাস, আরে তুই তো আছাড় পড়িসনি... এসব বলে ওর দুঃখ দূর করার চেষ্টা করে। ওর মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে বাচ্চাটাকে সান্ত্বনা দেয়। ভারতীয় রাজনীতিতেও আজকাল তেমনি সান্তনা দেওয়ার কাজ চলছে। কংগ্রেসের নেতা ও তাদের বাস্তু ব্যবস্থা আজকাল এই নিজেদের সান্ত্বনা দেওয়ার কাজ করছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৯৮৪ সালের সেই সাধারণ নির্বাচনের কথা মনে করুন। তারপর এদেশে ১০টি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে... ১০টি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে... ১৯৮৪-র পর ১০-১০টি লোকসভা নির্বাচন হওয়া সত্বেও কংগ্রেস লোকসভায় ২৫০-এর পরিসংখ্যানকে স্পর্শ করতে পারেনি। এবার কোনোভাবে ৯৯-এর ফেরে আটকে গেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমার একটি গল্প মনে পড়ছে। পরীক্ষায় ৯৯ নম্বর পেয়ে একটি বালক অহংকারে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সবাইকে দেখাচ্ছিল, দ্যাখো কতো বেশি নম্বর পেয়েছি। যে শুনছে ৯৯ পাওয়ার কথা, সেই সাবাশ সাবাশ বলে তার সাহস বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর তার শিক্ষক এসে জিজ্ঞেস করে, ভাই মিষ্টি বিতরণ করছো কেন? এই ৯৯ তো সে ১০০-র মধ্যে পায়নি, এটি সে ৫৪৩-এর মধ্যে পেয়েছে। এখন সেই বালক বুদ্ধিকে কে বোঝাবে যে তুমি ফেল করার বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছ। কংগ্রেস...
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য শুনলে হাসি পায়। তাঁদের বড় বড় কথা শোলে ফিল্মকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। আপনাদের সবার হয়তো শোলের সেই ‘মৌসিজি’ বা মাসিমার কথা মনে আছে... তৃতীয়বার তো হেরেছি, কিন্তু মাসিমা, এ কথা তো সত্যি যে তৃতীয়বারই হেরেছি। কিন্তু মাসিমা, এটা তো নৈতিক জয়, তাই না!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৩টি রাজ্যে তাঁদের আসন সংখ্যা শূন্য। আরে মাসিমা, ১৩টি রাজ্যে শূন্য এসেছে, কিন্তু হিরো তো বটে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আরে কংগ্রেস পার্টির ঘটি তো ডুবেইছে, আরে মাসিমা, দল এখনও তো শ্বাস নিচ্ছে। আমি কংগ্রেসের নেতাদের বলবো, জনাদেশকে ভুয়ো পরাজয়ের উদযাপন দিয়ে চেপে দেবেন না, জনাদেশকে একটু বোঝার চেষ্টা করুন, তাকে স্বীকার করুন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি জানিনা যে কংগ্রেসের যতো সহযোগী দল রয়েছে তারা এই নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করেছে কি না। এই নির্বাচন এই সহযোগীদের জন্যও একটি বার্তা বয়ে এনেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন কংগ্রেস দল ২০২৪ সাল থেকে একটি পরজীবী কংগ্রেস দল রূপে পরিচিত হবে। পরজীবী তারাই হয় যারা যে শরীরকে অবলম্বন করে বাঁচে, সেই শরীর থেকেই প্রাণরস সংগ্রহ করে। কংগ্রেসও যে দলের সঙ্গে জোট করে, সেই দলের ভোট খেয়ে নেয়। আর নিজেদের সহযোগী দলের শক্তিতে পুস্পিত পল্লবিত হয়। আর সেজন্যই বলছি, কংগ্রেস এখন পরজীবী কংগ্রেসে পরিণত হয়েছে। আমি যখন তাদেরকে পরজীবী বলছি, তখন তথ্যের ভিত্তিতেই বলছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি কিছু পরিসংখ্যান আপনার মাধ্যমে এই সংসদকে আর এই সংসদের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই। যেখানে যেখানে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই ছিল, অথবা যেখানে কংগ্রেস মেজর পার্টি ছিল, সহযোগীদের দুই তিনটি আসন ছিল, সেখানে কংগ্রেসের স্ট্রাইক রেট মাত্র ২৬ শতাংশ। কিন্তু যেখানে তারা কারো আঁচল ধরে চলতো, যেখানে তারা জুনিয়র পার্টনার ছিল, কোনো দল তাদেরকে কিছু সাহায্য করেছে সেই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের স্ট্রাইক রেট ৫০ শতাংশ। কংগ্রেস যে ৯৯টি আসন জিতেছে তার অধিকাংশ আসনই তার সহযোগীদের সমর্থকদের ভোটে জিতেছে। আর সেজন্যই আমি বলি, এই কংগ্রেস দল পরজীবী কংগ্রেস। ১৬টি রাজ্যে যেখানে কংগ্রেস একা লড়েছে, সেখানে তাদের ভোটের শতাংশ এবারের নির্বাচনে অনেক কমেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গুজরাট, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশ এই তিনটি রাজ্যে কংগ্রেস নিজের শক্তিতে লড়েছে। ফলে ৬৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টি জিততে পেরেছে। হ্যাঁ ৬৪-র মধ্যে ২। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস সম্পূর্ণরূপে পরজীবী হয়ে পড়েছে আর তাদের সহযোগী দলগুলির কাঁধে চড়ে নিজেদের পরিসংখ্যান বাড়িয়েছে। কংগ্রেস যদি তার সহযোগী দলগুলির সমর্থকদের এই ভোট না পেত তাহলে এবারের লোকসভায় তাদের এতো আসন জেতা সম্ভব ছিল না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন এমন একটা সময় এসেছে যখন দেশ উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে। দেশবাসী উন্নত ভারতের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এবার ভারতবাসীকে একজোট হয়ে সমৃদ্ধির নতুন যাত্রা পথ নির্ধারণ করতে হবে। এই সময়ে দেশের দুর্ভাগ্য যে ভারতে ছয় দশক ধরে শাসন ক্ষমতায় থাকা দল কংগ্রেস আজ অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তারা দক্ষিণে গিয়ে উত্তর ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বলে, আবার উত্তরে গিয়ে দক্ষিণ ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, পশ্চিম প্রান্তের মানুষদের বিরুদ্ধে বলে, মহাপুরুষদের বিরুদ্ধে বলে। তারা ভাষার ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করার সমস্ত রকম চেষ্টা করেছে। যে নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে ভারত থেকে আলাদা করার ওকালতি করেছিল, তাদেরকে এবারের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী করার পাপ কংগ্রেস দল করেছে। কংগ্রেস দল সর্বসমক্ষে এক জাতিকে অন্য জাতির বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি করছে, নতুন নতুন গুজব ছড়াচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের এক অংশের জনগণকে হীন প্রতিপন্ন করার প্রবৃত্তিকেও কংগ্রেসের নেতারা উৎসাহ যোগাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস দেশে অর্থনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা মাফিক কলকাঠি নাড়ছে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজ্যে তারা যেসব কথা বলেছে, তাদের ক্ষমতাধীন রাজ্যগুলিকে যে ধরণের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে তা দেশকে অর্থনৈতিক অরাজকতার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। তাদের ক্ষমতাধীন রাজ্যগুলি যাতে দেশের অর্থনৈতিক বোঝায় পরিণত হয়, তা সুনিশ্চিত করতে তারা সুপরিকল্পিতভাবে এই খেলা খেলছে। নানা স্থানে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে তারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যদি তাদের পছন্দ মতো নির্বাচনের ফল না আসে তাহলে ৪ জুন তারিখে দেশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। সমর্থকরা একত্রিত হয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করবে- একথা তারা বীরদর্পে বলেছে। এই অরাজকতা সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য। ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অসংখ্য প্রশ্ন দিয়ে ঘুরে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। সিএএ নিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের সম্পূর্ণ বাস্তু ব্যবস্থা এই অরাজকতা সৃষ্টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সারা দেশে দাঙ্গা সৃষ্টি করার চেষ্টা যে তারা করছে, এটা সমস্ত দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজকাল সমবেদনা পাওয়ার জন্য একটি নতুন নাটক শুরু হয়েছে, নতুন খেলা শুরু হয়েছে। আমি আপনাদের একটা গল্প শোনাচ্ছি। একটি বাচ্চা স্কুল থেকে এসে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেছে। তার কান্না দেখে তার মা ভয় পেয়ে যায়। তার মা যতই জিগ্যেস করে, ছেলেটি কাঁদতেই থাকে। তারপর এক সময় বলে, আজ স্কুলে ও আমাকে মেরেছে, আজ স্কুলে ও আমাকে মেরেছে। এ কথা বলে সে আবার জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে। মা ঘাবড়ে যায়। তিনি জিগ্যেস করেন, কে মেরেছে বাছা? কিন্তু সে কাঁদতে থাকে। আর মাঝে মধ্যে বিলাপ করে বলে আমাকে মেরেছে, আমাকে মেরেছে। ছেলেটা এ কথা বলছে না যে আজ স্কুলে সে অন্য একটি ছেলেকে মা তুলে গালি দিয়েছে। সে একথাও বলে না যে সে নিজে অন্য একটি বাচ্চার বই ছিঁড়ে দিয়েছে। সে এ কথাও বলে না যে শিক্ষক শাসন করতে এলে তাঁকেও সে চোর বলেছে। সে এ কথা বলে না যে সে অন্য বাচ্চাদের টিফিন চুরি করে খেয়ে নিয়েছে। আমরা গতকাল লোকসভায় এমনই শিশু সুলভ কান্ড দেখেছি। কাল এখানে বালক বুদ্ধির বিলাপ চলছিল, আমাকে মারা হয়েছে, আমাকে অমুক মেরেছে, আমাকে তমুক মেরেছে, আমাকে এখানে মেরেছে, আমাকে ওখানে মেরেছে- এ সবই চলছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সমবেদনা পাওয়ার জন্য এটি একটি নতুন নাটক। কিন্তু দেশবাসী এই সত্যিটা জানে যে এই হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি মামলায় তিনি জমানত পেয়ে বাইরে আছেন। তিনি ওবিসি-দের চোর বলার মামলায় সাজা পেয়েছেন। তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী দামোদর বীর সাভারকরের মতো মহান ব্যক্তিকে অপমান করার মোকদ্দমা চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের সর্ববৃহৎ দলের অধ্যক্ষকে হত্যাকারী বলার মোকদ্দমা চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক নেতা, আধিকারিক ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে মিথ্যা কথা বলার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, আর সেই মামলাগুলো এখনও চলছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বালক বুদ্ধিতে কথা-বার্তার কোনো লাগাম থাকে না, বালক বুদ্ধিতে আচার-ব্যবহারেও কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আর এই বালক বুদ্ধি যখন তুঙ্গে ওঠে, তখন সংসদের সভাকক্ষেও কাউকে জড়িয়ে ধরে। এই বালক বুদ্ধি নিজের সৌজন্যের সীমা হারিয়ে ফেললে সংসদের মধ্যে বসেই চোখ মারে, চোখ মারতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তুলসীদাসজি বলে গেছেন, অখিলেশজি শুনুন... তুলসীদাসজি বলে গেছেন, ‘ঝুটই লেনা ঝুটই দেনা। ঝুটই ভোজন ঝুট চবেনা।’ তুলসীদাসজি বলে গেছেন, ‘ঝুটই লেনা ঝুটই দেনা। ঝুটই ভোজন ঝুট চবেনা।’ কংগ্রেস মিথ্যের রাজনীতিকে হাতিয়ার বানিয়েছে। কংগ্রেসের মুখে মিথ্যের আস্তরণ। যেমন নরখাদক প্রাণী হয়, যাদের মুখে একবার রক্তের স্বাদ লাগে, তেমনি মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেসের মুখে মিথ্যের রক্ত লেগে গেছে। গতকাল ১ জুলাই তারিখে দেশবাসী ‘খটাখট দিবস’ পালন করেছে। ১ জুলাই তারিখে সবাই নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স চেক করছিলেন। তাঁদের প্রতিশ্রুতি মতো ৮৫০০ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এসেছে কী না। এই মিথ্যে প্রতিশ্রুতির পরিণাম দেখুন। কংগ্রেস কীভাবে দেশকে বিভ্রান্ত করছে। মা ও বোনোদের প্রত্যেক মাসে ৮৫০০ টাকা দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তাঁরা না রাখায় সেই মা ও বোনরা মনে যে ব্যথা পেয়েছে, তা অভিশাপ হয়ে এই কংগ্রেসের সর্বনাশ করে দেবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ইভিএম নিয়ে মিথ্যে, সংবিধান নিয়ে মিথ্যে, সংরক্ষণ নিয়ে মিথ্যে, তার আগে রাফেল চুক্তি নিয়ে মিথ্যে, এইচএএল নিয়ে নিয়ে মিথ্যে, এলআইসি নিয়ে মিথ্যে, ব্যাঙ্কগুলি নিয়ে মিথ্যে, কর্মচারিদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁদের সাহস এতো বেড়ে গেছে যে গতকাল সংসদকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। গতকাল অগ্নিবীর নিয়ে সংসদে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। কাল এখানে এই মিথ্যাও বলা হয়েছে যে কৃষকদের এমএসপি দেওয়া হচ্ছে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সংবিধানের গরিমা নিয়ে তাঁদের এই ছেলেখেলা অত্যন্য দুর্ভাগ্যজনক। অনেকবার নির্বাচনে জিতে যাঁরা লোকসভায় এসেছেন, সংসদের গরিমা নিয়ে তাঁদের এই ছেলেখেলা শোভা পায়না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে দল ৬০ বছর দেশের শাসন ক্ষমতায় থেকেছে, যারা সরকারের সমস্ত কর্মপদ্ধতি জানে, যাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ নেতা রয়েছে, তাঁরা যখন এই অরাজকতার পথ বেছে নেয়, মিথ্যের পথ বেছে নেয় তখন দেশ যে গভীর সংকটের মুখোমুখি তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সংসদের গরিমা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আমাদের সংবিধান রচয়িতাদের অপমান, এদেশের মহাপুরুষদের অপমান, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদান দেওয়া, বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান।
আর সেজন্যই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি জানি আপনি অত্যন্ত দয়ালু, উদার মনের মানুষ। আপনি সংকটের সময়ও মুচকি হেসে অনেক কিছু সহ্য করে নেন।
কিন্তু মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন যা হচ্ছে, গতকাল যা হয়েছে, এই সব কিছুকে কঠোরভাবে মোকাবিলা না করলে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবো না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই কুকীর্তিগুলিকে বালকবুদ্ধি বলে, বালকবুদ্ধি মেনে নিয়ে এখন আর ছোটো করে দেখা উচিত নয়, কখনোই ছোট করে দেখা উচিত নয়। আমি এজন্য এ কথা বলছি, কারণ এর পিছনে উদ্দেশ্য মহৎ নয়। এর উদ্দেশ্য গভীর বিপদের বার্তা বহন করছে। আর আমি দেশবাসীকে সচেতন করতে চাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এদের বলা মিথ্যে আমাদের দেশের নাগরিকদের বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে। এদের বলা মিথ্যে দেশের সাধারণ বিবেক বুদ্ধির গালে একটি থাপ্পর মারার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই কুর্কীতিগুলি দেশের মহান পরম্পরাকেও নস্যাৎ করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সভাকক্ষের গরিমা রক্ষা করার অনেক বড় দায়িত্ব আপনার ওপর ন্যস্ত রয়েছে। সংসদে শুরু হওয়া মিথ্যের পরম্পরাকে কঠোরভাবে দমন করুন। এটাই আপনার প্রতি এই সভার ও দেশবাসীর প্রত্যাশা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস সংবিধান এবং সংরক্ষণ নিয়েও সব সময় মিথ্যে কথা বলেছে। আজ আমি ১৪০ কোটি দেশবাসীর সামনে সত্যিটাকে তুলে ধরতে চাই। অত্যন্ত নম্রতা সহকারে তুলে ধরতে চাই। এই সত্য দেশবাসীর জানা খুব প্রয়োজন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই বছরটি জরুরি অবস্থা ঘোষণার ৫০তম বছর। নিছকই ক্ষমতার লোভে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। একনায়কত্বের মানসিকতা নিয়ে দেশে এই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। আর তখন কংগ্রেস ক্রুরতার সমস্ত সীমা পার করে গেছে। তারা নিজেরই দেশবাসীর ওপর ক্রুরতার থাবা বিস্তার করেছিল, দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার পাপ করেছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একের পর এক সরকার ফেলে দেওয়া, সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা, সংবিধান বিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপ, সংবিধানের বিভিন্ন ধারা উলঙ্ঘন, সংবিধানের অনেক শব্দের বিরুদ্ধাচরণ। এরাই তাঁরা যারা শুরুতে দেশের দলিতদের বিরুদ্ধে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের বিরুদ্ধে ঘোর অন্যায় আচরণ করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আর সেজন্যই বাবাসাহেব আম্বেদকর কংগ্রেসের এই দলিত বিরোধী, পিছিয়ে থাকা জনগণ বিরোধী মানসিকতার ফলেই নেহরুজির মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। নেহরুজি কীভাবে বিভিন্ন দলিত ও পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্যায় করেছেন, তার পর্দা ফাঁস করেছিলেন বাবাসাহেব। তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার সময় যে কারণ দেখিয়েছিলেন, তা তাঁর দৃঢ়চেতা মানসিকতার পরিচায়ক। বাবাসাহেব আম্বেদকরজি বলেছিলেন, আমি তপশীলি জাতিদের প্রতি সরকারের উপেক্ষা দেখে নিজের মনে যে আক্রোশ জেগে উঠেছে তা দমিয়ে রাখতে পারিনি। এটাই ছিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের ইস্তফা পত্রের বয়ান। তপশীলি জাতিদের প্রতি কংগ্রেস সরকারের উপেক্ষা দেখে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মনে ক্ষোভ জেগেছিল। সেজন্য বাবাসাহেব আম্বেদকরের এই সরাসরি প্রতিবাদের পর নেহরুজি বাবাসাহেব আম্বেদকরের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শুরুতে ষড়যন্ত্র করে বাবাসাহেব আম্বেদকরকে নির্বাচনে হারানো হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শুধু নির্বাচন হারিয়ে তাঁর শান্তি হয়নি, তিনি বাবাসাহেব আম্বেদকরের এই পরাজয়ের আনন্দ উদযাপন করেন। নিজের খুশির কথা সর্বসমক্ষে বলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটি চিঠিতে তাঁর এই খুশির প্রকাশ লিপিবদ্ধ আছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতোই দলিত নেতা বাবু জগজীবনজিকেও তাঁর অধিকার দেওয়া হয়নি। জরুরি অবস্থার পর জগজীবন রামজির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জগজীবন রামজি যেন কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, ইন্দিরা গান্ধী তা সুনিশ্চিত করেছেন। একটি বইয়ে লেখা আছে ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছেন, ‘যাতে কোনোভাবেই জগজীবন রামজি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। যদি তিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে সারা জীবন তাঁকে সে পদ থেকে সরানো যাবে না’। উপরোক্ত বইয়ে ইন্দিরা গান্ধীর এই উক্তি লিপিবদ্ধ আছে। কংগ্রেস চৌধরী চরণ সিংজির সঙ্গেও এই ব্যবহার করেছে। তাঁকেও ছাড়েনি। বিহারে কংগ্রেসের অধ্যক্ষ পিছিয়ে পড়া জাতির নেতা সীতারাম কেশরীকেও অপমান করার পাপ এই কংগ্রেস করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস দল শুরু থেকেই সংরক্ষণের ঘোর বিরোধী। নেহরুজি মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে স্পষ্ট শব্দে সংরক্ষণের বিরোধীতা করেছিলেন। কংগ্রেসের আর এক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজি মন্ডল কমিশনের রিপোর্টকে ঠান্ডা বাক্সে ঢুকিয়ে কয়েক বছর চেপে রেখেছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস দলের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধী যখন বিরোধী পক্ষে ছিলেন, তাঁর দীর্ঘতম ভাষণ ছিল সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। সেই ভাষণ আজও সংসদের রেকর্ডে রয়েছে। আর সেজন্যই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আজ আমি একটি গুরুতর বিষয় নিয়ে আপনার এবং দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কাল যা হয়েছে, এই দেশের কোটি কোটি দেশবাসী আগামী অনেক শতাব্দী ধরে তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৩১ বছর আগে স্বামী বিবেকাননন্দজি শিকাগো ধর্ম মহাসভায় বলেছিলেন, ‘আমি গর্বিত যে আমি সেই ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করছি যে ধর্ম গোটা বিশ্বকে সহিষ্ণুতা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে শিখিয়েছে।‘ ১৩১ বছর আগে হিন্দু ধর্মের জন্য বিবেকাননন্দজি আমেরিকার শিকাগোয় বিশ্বের মহা পণ্ডিতদের সামনে একথা বলেছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
হিন্দু সহনশীল ধর্ম, হিন্দুরা সবাইকে আপন করার ইচ্ছা নিয়ে বেঁচে থাকা একটি মানবগোষ্ঠী। এর ফলে ভারতের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য প্রাচীন, ভারতের এত বৈচিত্র্য, এত বিশালত্ব সেইজন্যই অঙ্কুরিত হয়েছে এবং আরও অঙ্কুরিত হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সংকটের বিষয় হল আজ হিন্দুদের ওপর মিথ্যে আরোপ প্রদানের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, গভীর ষড়যন্ত্র রচিত হচ্ছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এখানে বলা হয়েছে যে হিন্দুরা নাকি হিংস্র। এটাই আপনাদের শিষ্টাচার, এটাই আপনাদের চরিত্র, এটাই আপনাদের ভাবনা, এটাই আপনাদের ঘৃণা, এদেশের হিন্দুদের সঙ্গে আপনারা এই ব্যবহার করছেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই দেশ এই অপমান অনেক শতাব্দীকাল ধরে ভুলবে না। কিছুদিন আগে হিন্দুদের মনে যে শক্তির কল্পনা রয়েছে, তাকে বিনাশ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আপনারা কোন শক্তিকে বিনাশ করার কথা বলছেন? এই দেশ অনেক শতাব্দীকাল ধরে শক্তির উপাসক। আমাদের বাংলার মানুষ মা দুর্গার পুজো করে, শক্তির উপাসনা করে। আমাদের বাংলার মানুষ মা কালীরও উপাসনা করে, মনে সমর্পণ ভাব নিয়েই করে। আপনারা কি সেই শক্তিকে বিনাশ করতে চান? মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এঁরা সেই মানুষ যাঁরা হিন্দু সন্ত্রাসবাদ, এই শব্দ রচনার চেষ্টা করেছে। এদের সঙ্গীরা হিন্দু ধর্মের তুলনা করেছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এ ধরণের শব্দ দিয়ে। আর অন্যরা হাততালি দিয়েছে। এই দেশ কখনও তাদের ক্ষমা করবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটি সুপরিকল্পিত রণনীতি নিয়ে এদের পুরো বাস্তুব্যবস্থা হিন্দু পরম্পরা, হিন্দু সমাজ, এদেশের সংস্কৃতি, এদেশের ঐতিহ্যের প্রতি হীনভাব প্রদর্শন করা, গালি দেওয়া, অপমানিত করা, হিন্দুদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করাকে এরা ফ্যাশানে পরিণত করেছে। আর এই লোকেরাই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে কারো কারোর সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করার কথা বলছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখতে শিখতে বড় হয়েছি। গ্রামের ছেলে-মেয়ে হই কিংবা শহরের, গরিব হই কিংবা ধনী, এদেশের প্রত্যেক শিশু একথা জানে। ঈশ্বরের প্রতিটি রূপ... মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ঈশ্বরের প্রত্যেক রূপ সকলের দর্শনের জন্য। ঈশ্বরের কোনও রূপ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বা প্রদর্শনের জন্য হয় না। যার দর্শন হয়, তার প্রদর্শন হয় না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের দেব-দেবীদের অপমান ১৪০ কোটি দেশবাসীর হৃদয়ে গভীর আঘাত হানছে। কারও রাজনৈতিক স্বার্থে ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ নিয়ে এ ধরণের ছেলেখেলা! মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এই দেশ কীভাবে ক্ষমা করবে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গতকাল এই সভাগৃহের দৃশ্যগুলি দেখে এখন হিন্দু সমাজকেও ভাবতে হবে যে এই অপমানজনক বক্তব্য নেহাতই কাকতালীয়, নাকি কোনো প্রয়োগের প্রস্তুতি। এটা হিন্দু সমাজকে ভাবতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সেনাবাহিনী দেশের অহংকার। সমস্ত দেশবাসী তাদের সাহস এবং শৌর্য দেখে গর্বিত। আর আজ গোটা দেশ দেখছে আমাদের সেনাবাহিনীকে, আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ স্বাধীনতার পর থেকে এত বছরে যত সংস্কার হয়নি, গত ১০ বছরে তার থেকে বেশি সংস্কার হচ্ছে। আমাদের সেনাবাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের সেনাবাহিনী প্রত্যেক আক্রমণকে যাতে যথোচিত জবাব দিতে পারে সেজন্য যুদ্ধের সামর্থ সম্পন্ন সেনাবাহিনী তৈরি করতে আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছি। দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সংস্কার আনছি, নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিগত কয়েক বছরে অনেক কিছু বদলেছে। সিডিএস পদ সৃষ্টির পর তিন সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংহতি আরও মজবুত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের সশস্ত্র সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের যুদ্ধশাস্ত্রে নিষাদের মত ছিল যে, ভারতে ‘থিয়েটার কম্যান্ড’ প্রয়োজনীয়। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে সিডিএস ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পর দেশে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ‘থিয়েটার কম্যান্ড’ গড়ার লক্ষ্যে অগ্রগতি হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে আমাদের সেনাবাহিনীগুলিকেও আত্মনির্ভর করে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রেও আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। আমাদের দেশের সেনাবাহিনীতে নিয়মিত নবীনদের যোগদান সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী চাই। আমাদের নবীন প্রজন্মের প্রতি আমাদের ভরসা থাকা উচিত। সেনাবাহিনীগুলিতে নবীনদের শক্তি বাড়াতে হবে। সেজন্য আমরা ক্রমাগত যুদ্ধযোগ্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখার উদ্দেশ্যে সংস্কার করে যাচ্ছি। যথাসময়ে সংস্কার না করার ফলে আমাদের সেনাবাহিনীগুলির অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এর বিস্তারিত বিবরণ সর্বসমক্ষে বলা যাবে না, সেজন্য আমি আমার মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের নিরাপত্তা একটি গুরুতর বিষয়। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এহেন সংস্কারের উদ্দেশ্য হল, যে কোন পরিস্থিতিতে যদি যুদ্ধ লাগে, তার মোকাবিলা করা। এখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধের রূপ বদলাচ্ছে, অস্ত্রশস্ত্র বদলাচ্ছে, যুদ্ধ কৌশলও বদলাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনীগুলিকেও এই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য তৈরি রাখা আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক গালিগালাজ শোনার পরও, মিথ্যে আরোপ সহ্য করেও আমরা মুখে তালা লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, দেশের সশস্ত্র সেনাবাহিনীকে যখন আমরা আধুনিক ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি, সেই সময় কংগ্রেস কী করছে? তারা গুজব রটাচ্ছে। এই প্রতিরক্ষা সংস্কারের প্রচেষ্টাগুলিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আসলে কংগ্রেসের নেতারা কখনও ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হতে দেখতে চান না। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কে না জানে যে নেহরুজির সময়ে দেশের সেনাবাহিনীগুলি দুর্বল ছিল। আমাদের সেনাবাহিনীগুলিতে কংগ্রেস যতো লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে, তা দেশের সেনাবাহিনীগুলিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। জল, স্থল এবং আকাশে সেনাবাহিনীর প্রতিটি প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর থেকেই তারা দুর্নীতির পরম্পরা গড়ে তুলেছে। জিপ দুর্নীতি থেকে শুরু করে সাবমেরিন দুর্নীতি, বোফর্স দুর্নীতির মতো বড় বড় কেলেঙ্কারি দেশের সেনাবাহিনীগুলির শক্তিকে যথাযথভাবে বিকশিত হতে দেয়নি। এমন একটা সময় ছিল মাননীয় সভাপতি মহোদয়, কংগ্রেসের শাসনকালে আমাদের সেনাবাহিনীর কোনো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটই ছিল না। এভাবে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা দেশের সেনাবাহিনীগুলির সর্বনাশ করে গেছে। সেগুলিকে দুর্বল করে রেখেছে। আর এখন বিরোধী পক্ষে থাকা সত্ত্বেও তারা একই চেষ্টা করে যাচ্ছে। যখন এই কংগ্রেস সরকারের দায়িত্বে ছিল, তখন বিমানবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় ফাইটার জেট কেনেনি। আর যখন আমরা কেনার চেষ্টা করেছি, তখন কংগ্রেস একে আটকানোর জন্য সব রকম ষড়যন্ত্র করেছে। এই ফাইটার জেটগুলি যাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে না পৌঁছাতে পারে তা সুনিশ্চিত করতেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই বালকবুদ্ধি দেখুন, রাফেল যুদ্ধ বিমানের ছোট ছোট খেলনা বানিয়ে তারা সেগুলি উড়িয়ে হাসি-ঠাট্টা করে, দেশের বিমান বাহিনীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস এভাবে প্রত্যেক পদক্ষেপ প্রতিটি সংস্কারের বিরোধীতা করে যা ভারতের সেনাবাহিনীগুলিকে শক্তিশালী করে তুলবে, সেগুলির বিরোধীতা করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আর সময় বাড়ানোর জন্য আপনার প্রতি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন কংগ্রেসের নেতারা জেনে গেছে যে আমাদের নবীন সৈনিকদের প্রাণশক্তি, আমাদের সৈনিকদের আত্মবলই আমাদের সশস্ত্র সেনাবাহিনীগুলির সবচাইতে বড় শক্তি। তাই এখন এই আত্মবলের ওপর আক্রমণ করার একটি নতুন পদ্ধতি তারা বেছে নিয়েছে, সেনাবাহিনীগুলিতে যোগদান নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যে গুজব রটাচ্ছে যাতে মানুষ ঘাবড়ে যায়। আমার দেশের নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যাতে দেশকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীগুলিতে যোগদান না করে তা সুনিশ্চিত করতে এই ষড়যন্ত্র চলছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি এই সভাগৃহের মাধ্যমে জানতে চাই কীসের জন্য কংগ্রেস আমাদের সেনাবাহিনীগুলিকে দুর্বল করতে চায়? কার লাভের জন্য কংগ্রেস সেনাবাহিনী নিয়ে এতো গুজব রটাচ্ছে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এক পদ এক পেনশন নিয়ে দেশের বীর জওয়ানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের দেশে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজি এই এক পদ এক পেনশনের ব্যবস্থাকে তুলে দিয়েছিলেন। অনেক দশক ধরে কংগ্রেস এই ‘এক পদ এক পেনশন’ -এর ব্যবস্থা চালু হতে দেয়নি। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল দেখিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের বোকা বানানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু তাঁদের ইচ্ছা ছিল সম্ভব হলে এই ‘এক পদ এক পেনশন’ ব্যবস্থাকে ঝুলিয়ে রাখা। এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এসে এই ‘এক পদ এক পেনশন’ ব্যবস্থা চালু করেছে। আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ভারত সরকারের কাছে সম্পদ যতই সীমিত থাক না কেন, করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই সত্বেও আমাদের সরকার ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা প্রাক্তন সৈনিকদের ‘এক পদ এক পেনশন’ বাবদ প্রদান করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া তাঁর অভিভাষণে পেপার লিক নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন। আমিও দেশের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী, প্রত্যেক তরুণ-তরুণীকে বলবো যে সরকার এ ধরণের ঘটনা থামাতে অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে আর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে দায়বদ্ধ। যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ছেলেখেলা করছে তাদেরকে কখনও ছাড়া হবে না। এই নিট মামলায় সারা দেশে একের পর এক অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার আগেই একটি কড়া আইন প্রণয়ন করেছে। পরীক্ষা নেওয়ার গোটা ব্যবস্থাকে সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এনডিএ সরকার বিগত ১০ বছরে উন্নয়নকে তার সবচেয়ে বড় সংকল্প করে তুলেছে। আজ আমাদের সামনে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ করে গড়ে তোলার সংকল্প রয়েছে। আজ আমাদের সামনে স্বাধীনতার এতো বছর পর পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য, প্রত্যেক বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রত্যেক গৃহহীন গরিবকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার সংকল্প আমাদের রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গোটা বিশ্বে যেভাবে ভারতের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের সেনাবাহিনীগুলিকেও আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প আমাদের রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বর্তমান যুগ হল সবুজ যুগ। এই যুগকে ‘গ্রীন এরা’ বা সবুজ যুগ করে গড়ে তোলার জন্য সারা পৃথিবী আজ বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই লড়াইয়ে ভারত একটি বড় শক্তি রূপে উঠে এসেছে। আমরা পুনর্নবীকরণযুক্ত শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘ভারত পাওয়ার হাউস’ গড়েছি। এই লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছি। আর আমাদের সংকল্প হল এই সবুজ যুগের বাস্তবায়ন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ ‘গ্রীন হাইড্রোজেন এবং ই ভেহিকেল’-এর সঙ্গে যুক্ত। ভারতকে গ্রীন হাইড্রোজেনের হাব করে গড়ে তুলতে আমরা সম্পূর্ণ সংকল্পবদ্ধ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী করে গড়ে তোলার জন্য যে সংকল্পগুলি নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, সেগুলি বাস্তবায়নে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নেরও অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের অনেক আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বিশ্বের সমস্ত বেঞ্চমার্কের সমতুল হতে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতে গত ১০ বছরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যত অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি। এর ফল দেশবাসী ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছে। দেশে অনেক বৃহৎ মাত্রায় রোজগার এবং স্বরোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগগুলিকে এখন আরও বিস্তারিত করতে হবে। নতুন নতুন রঙ-রূপে আধুনিক ভারতের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে দক্ষতা উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ অভিযানেও ভারত নেতৃত্ব দিচ্ছে। ফলে আমাদের নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎও উন্নত হবে, এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা সবাই কাজ করছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একটি গবেষণা অনুযায়ী গত ১৮ বছরে বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সর্বোচ্চ রেকর্ড এ বছর তৈরি হয়েছে, ১৮ বছরে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের রেকর্ড।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম গোটা বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আমি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যখনই বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি, তাঁরা ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মুভমেন্ট নিয়ে, ডিজিটাল পেমেন্টের সাফল্য নিয়ে তাঁদের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। অনেক সমৃদ্ধ দেশের নেতারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, ভারতের এই সাফল্যের পিছনে রহস্য কী?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতাও বাড়ছে এবং নানাবিধ সমস্যাও বাড়ছে। যাঁরা ভারতের অগ্রগতি দেখে খুশি নন, তাঁরা ভারতের অগ্রগতিকেই চ্যালেঞ্জ রূপে দেখেন এবং নানা রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। এই শক্তিগুলি ভারতের গণতন্ত্র, জনসংখ্যার ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ বৈশিষ্ট্যের ওপরও আক্রমণ শানাচ্ছে, এটি শুধু আমার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ নয়, এটি শুধু আমার সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ নয়, এটি শুধু ট্রেজারি বেঞ্চ বা সরকার পক্ষের জন্যও দুশ্চিন্তার বিষয় নয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের আপামর জনগণ থেকে শুরু করে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সবাই এই দুশ্চিন্তায় ভুগছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে কথা বলেছে, সেই উক্তি আজ আমি এই সভাকক্ষে সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই। সুপ্রিম কোর্টের এই উক্তি দেশের কোটি কোটি জনগণের জন্যও কী কী ধরণের সংকট নিয়ে আসতে পারে, সেসব সম্ভাবনার প্রতি ইশারা করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সুপ্রিম কোর্টে একটি বিচারের রায় দানের সময় গুরুতর চিন্তা ব্যক্ত করে বিচারক যা বলেছেন, আমি সেই উক্তিটি পড়ছি- ‘এমন মনে হচ্ছে, এই মহান দেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে, এমন মনে হচ্ছে এই মহান দেশের অগ্রগতিকে ছোটো করে দেখানো এবং যত বেশি সম্ভব ক্ষেত্রে তাকে দুর্বল করে দেওয়ার একটি সুচিন্তিত প্রচেষ্টা চলছে।’ আমি সুপ্রিম কোর্টের দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরছি। সেখানে আর বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের যে কোনও প্রচেষ্টাকে গোড়াতেই থামিয়ে দেওয়া উচিত।’ এই উক্তি দেশের সুপ্রিম কোর্টের।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সুপ্রিম কোর্ট যে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে তা নিয়ে আমরা এখানে সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে অথবা সংসদ ভবনের বাইরে তাদের ও আমাদের প্রত্যেকেরই গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারতেও কিছু মানুষ রয়েছে যারা এই ধরণের শক্তিগুলিকে সাহায্য করছে। প্রত্যেক দেশবাসীর উচিত এই ধরনের মানুষদের থেকে সতর্ক থাকা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
২০১৪ সালে সরকারে আসার পর আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কংগ্রেসের পাশাপাশি তাদের গড়ে তোলা বাস্তু-ব্যবস্থাও। কংগ্রেসের সাহায্যেই এই বাস্তু-ব্যবস্থা স্বাধীনতা পরবর্তী ৭০ বছরে লালিত-পালিত হয়েছে, পুষ্পিত পল্লবিত হয়েছে। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি আজ এই বাস্তু-ব্যবস্থাকে সতর্ক করে দিচ্ছি। আমি এই বাস্তু-ব্যবস্থাকে সাবধান করতে চাইছি, এই বাস্তু-ব্যবস্থার তৈরি করা কুকীর্তিগুলিতে তাঁরা যদি লাগাম না টানেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। যেভাবে বাস্তু-ব্যবস্থা দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া, দেশের অগ্রগতিকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করছে, আমি আজ তাদেরকে সাবধান করতে চাই, তাদের প্রত্যেক ষড়যন্ত্রের জবাব তাঁরা তাঁদেরই ভাষায় পাবেন। এই দেশ, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রগুলিকে কখনই স্বীকার করবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা এমন একটা সময় যখন বিশ্ববাসী ভারতের অগ্রগতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে, প্রতিটি সূক্ষাতিসূক্ষ অগ্রগতিকে তারা লক্ষ্য রাখছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখন তো সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেছে। ১৪০ কোটি দেশবাসী ৫ বছরের জন্য নিজেদের সিদ্ধান্ত জনাদেশ রূপে জানিয়ে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন উন্নত ভারত গড়ে তোলার জন্য, উন্নত ভারত গড়ার সংকল্পকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য এই সংসদের সকল মাননীয় সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আমি তাঁদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই। উন্নত ভারতের সংকল্প বাস্তবায়িত করতে আপনারাও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসুন। আসুন, দেশের কল্যাণের জন্য আমরা মিলে-মিশে কাজ করি, একসঙ্গে এগোই, আর সবাই মিলে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়িত করতে আমরা সবরকম চেষ্টা করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বর্তমান সময়ে ভারতে ইতিবাচক রাজনীতির অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। আমি আমার সঙ্গী, এনডিএ-র জোটের সমস্ত দলের জনপ্রতিনিধিদের বলতে চাই, ইন্ডি জোটের সমস্ত দলের সাংসদের বলতে চাই যে, আসুন, আমরা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার প্রতিযোগিতায় নামি। যেখানে যেখানে আপনাদের সরকার রয়েছে, তারা এনডিএ শাসনাধীন সরকারগুলির সঙ্গে সুশাসনের প্রতিযোগিতায় নামুন। জনগণকে উন্নত পরিষেবা প্রদানের প্রতিযোগিতায় নামুন। জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ করার প্রতিযোগিতায় নামুন। দেশের ভালো হলে আপনাদেরও ভালো হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনারা ভালো কাজের জন্য এনডিএ-র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামুন। আপনারাও সময়ানুসার সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নামুন। যেখানে যেখানে আপনাদের সরকার রয়েছে সেখানে যথোচিত সংস্কার এনে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করুন। নিজেদের শাসনাধীন রাজ্যগুলিতে যাতে বেশি করে বিদেশী বিনিয়োগ আসে, সে চেষ্টা করুন। আপনাদের এই সুযোগ রয়েছে। আপনাদের কাছে বেশ কিছু রাজ্যে সরকার রয়েছে। সেজন্য আপনারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতেই পারেন। এনডিএ শাসনাধীন সরকারগুলির সঙ্গে ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন। যারা যেখানে জনসেবা করার সুযোগ পাবেন, সেখানে তারা যত বেশি সম্ভব নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিযোগিতায় নামুন। কোন সরকার বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান করতে পারে সেই প্রতিযোগিতার ময়দানে একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা হোক।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘গহনা কর্মণোগতিঃ’- অর্থাৎ কর্মের গতি অত্যন্ত গহীন। সেজন্য আক্ষেপ, মিথ্যে, বিভ্রান্তিকর বিতর্ক ইত্যাদির বদলে কর্ম দিয়ে, দক্ষতা দিয়ে, সমর্পণ ভাব দিয়ে, সেবা ভাব দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করা উচিত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সময় এই আলোচনার মাঝেই আমি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার খবর পেলাম। উত্তরপ্রদেশের হাথরস-এ একটি ধর্মসভায় অপ্রত্যাশিত দৌড়ঝাঁপ ও ভীড়ের চাপে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে আহত। এই দুর্ঘটনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, আমি তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। পাশাপাশি আমি এই ঘটনায় আহত হওয়া সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। রাজ্য সরকারের তদারকিতে প্রশাসন সেখানে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ করে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বরিষ্ঠ আধিকারিকরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রেখে চলেছে। আমি এই সংসদের মাধ্যমে সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সাহায্য করা হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ একটি দীর্ঘ আলোচনার সাক্ষী আমরা হলাম। আপনারা দেখেছেন, আমি যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী রূপে লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে এসেছিলাম তখনও আমাকে এ রকমই মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ২০১৯ সালেও আমাকে এ রকমই মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাকে রাজ্যসভাতেও এ রকমই মোকাবিলা করতে হয়েছে। আর সেজন্য এখন মোকাবিলার ক্ষেত্রে এখন অত্যন্ত মজবুত হয়ে উঠেছি। আমার সাহস ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, আমার কণ্ঠস্বরও উদাত্ত হয়েছে, আর আমার সংকল্পও মজবুত হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁরা যতো সংখ্যার দাবিই করুন না কেন, ২০১৪ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি তখন রাজ্যসভায় আমাদের শক্তি খুব কম ছিল, আর সভাপতির চেয়ারও কিছুটা অন্যদিকে ঝুঁকে ছিল। কিন্তু আমরা বুক ফুলিয়ে দেশ সেবা করার সংকল্প থেকে চ্যূত হইনি। আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, আপনারা যে রায় দিয়েছেন, আপনারা আমাদের যে সেবা করার আদেশ দিয়েছেন, এ রকম কোনো প্রতিবন্ধকতার সামনে মোদী ভয় পাবে না, এই সরকারও ভয় পাবে না। যে সংকল্পগুলো নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি সেই সংকল্পগুলি বাস্তবায়িত করে ছাড়বো।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁরা নতুন সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাঁদেরকে আমি বিশেষভাবে শুভ কামনা জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি মনে করি অনেক কিছু শিখবো, বুঝবো এবং এই ষড়যন্ত্রকারীদের দেশকে নিচু দেখানো ও অবনমনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার চেষ্টাও করবো। সেজন্য আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে তিনি তাদেরকেও কিছুটা সৎবুদ্ধি দিন, বালকবুদ্ধিকেও কিছুটা সৎবুদ্ধি দিন। এই প্রত্যাশা নিয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়া যে অভিভাষণ রেখেছেন, তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাকেও কৃতজ্ঞতা জানাই। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আপনি আমাকে সময় দিয়েছেন। আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। বিস্তারিতভাবে বলার সুযোগ দিয়েছেন। আর কারও কোলাহল সত্যের আওয়াজকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। সত্য কোনো প্রচেষ্টার মাধ্যমেই চেপে রাখা যায় না, কারণ মিথ্যার কোনো শিকড়ই থাকে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁদেরকে সুযোগ দেননি, এটা তাঁদের দলের দায়িত্ব পরবর্তীকালে তাঁরা যেন নিজেদের সাংসদের কথা মাথায় রাখেন আমি এই প্রত্যাশা করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি এই সভাকক্ষে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আজ আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি, অনেক আনন্দ। সত্যের শক্তি কেমন হয় তা আমি নিজের যাপনে পেয়েছি, সত্যের সামর্থ কী হয় তার সঙ্গে আজ আমার সাক্ষাৎকার হয়েছে। আর সেজন্য অধ্যক্ষ মহোদয়, আমি আপনাকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিজ্ঞপ্তি- এটি লোকসভায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণের আনুমানিক প্রতিলিপির অনুবাদ। সংসদের অনুমোদিত নথির সঙ্গে যাচাই করে এই ভাষণটিকে ব্যবহার করতে হবে।