মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
রাষ্ট্রপতিজির অভিভাষণের জবাবী ভাষণে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমি উপস্থিত হয়েছি। মাননীয় রাষ্ট্রপতিজি তাঁর ভাষণে আত্মনির্ভর ভারতকে নিয়ে, আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতকে নিয়ে বিগত দিনে যত প্রচেষ্টা হয়েছে সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেছেন। আমি সমস্ত মাননীয় সদস্যদের অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যাঁরা এই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের ওপর নিজেদের মতামত দিয়েছেন, নিজেদের ভাবনাচিন্তার কথা তুলে ধরেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আমার কথা বলার আগে গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে দু-একটি শব্দ অবশ্যই বলতে চাইব। আমাদের দেশ সকলের প্রিয় মাননীয় লতা দিদিকে হারিয়েছে। এত দীর্ঘকাল ধরে যাঁর কন্ঠস্বর দেশকে মোহিত করে রেখেছে, দেশকে প্রেরণা যুগিয়েছে, দেশের আবেগকে প্রকাশ করেছে, আর একটি অহর্নিশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের ঐক্যকেও তুলে ধরেছে। প্রায় ৩৬টি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। তিনি নিজেই ভারতের একতা এবং অখণ্ডতার জন্য একজন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ী উদাহরণ ছিলেন। আমি আজ মাননীয় লতা দিদিকে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ইতিহাস এই সত্যের সাক্ষী যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একটি নতুন ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’এসেছে, যাতে আমরা সবাই বসবাস করছি, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, করোনাকালের পর বিশ্ব একটি নতুন ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’-এর দিকে, নতুন ব্যবস্থার দিকে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা একটা এমন ‘টার্নিং পয়েন্ট’ যখন আমাদের ‘এক ভারত’ রূপে এই সুযোগকে হারালে চলবে না। বিশ্বের প্রধান মঞ্চে ভারতের কন্ঠস্বর জোড়ালো থাকতে হবে। ভারত একটি নেতৃত্বপ্রদানকারী ভূমিকার জন্য নিজেকে যেন কখনও ছোট করে না ভাবে, আর এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি নিজেই একটি প্রেরণাদায়ী সুযোগ যে প্রেরণাদায়ী সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নতুন সঙ্কল্পগুলি নিয়ে দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পালন করবে, ততদিনের মধ্যে আমরা সকলে সম্পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে, সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে, সম্পূর্ণ সমর্পণ ভাব নিয়ে, সম্পূর্ণ সঙ্কল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সেই জায়গায় নিয়ে পৌঁছে দেব, এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের, সঙ্কল্প স্থির করার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এটাই উপযুক্ত সময়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
বিগত বছরগুলিতে দেশ অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক ব্যবস্থাকে অনেক শক্তিশালী করে তুলতে পেরেছে। এটা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আর অত্যন্ত শক্তি নিয়ে আজ আমরা এগিয়ে চলেছি। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ – গরীবদের জন্য মাথার ওপর ছাদ, বসবাসের জন্য নিজস্ব বাড়ি। এই কর্মসূচি দীর্ঘকাল ধরেই চলছিল, কিন্তু যে গতি, যে ব্যাপকতা, বিশালতা, বৈচিত্র্য নিয়ে গত সাত বছরে এই কাজ হয়েছে, তার ফলে আজ গরীবের বাড়িও লক্ষাধিক টাকার থেকে বেশি মূল্যের হয়ে উঠেছে। একদিক থেকে বলতে গেলে, পাকা বাড়ির মালিক হওয়ার ফলে সেই গরীবরাও আজ লক্ষপতির শ্রেণীতে পরিগণিত হয়েছেন। এমন কোন ভারতবাসী রয়েছেন, একথা শুনে যাঁর গর্বে বুক ফুলে উঠবে না যে, আমাদের দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের বাড়িতেও এখন শৌচালয় তৈরি হয়েছে। আজ দেশের গ্রামগুলিও উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে মুক্ত। একথা শুনলে কে খুশি হবে না? আমি বসার জন্য প্রস্তুত। আপনাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করি? অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোবাসা অজর-অমর হয়ে থাকুক।
স্বাধীনতার এত বছর পর, গরীবের বাড়িতে যখন বিদ্যুতের আলো জ্বলে, তখন তাঁর আনন্দ দেশের আনন্দকে শক্তি যোগায়। উনুনের ধোঁয়া থেকে জ্বালা ধরানো চোখ নিয়ে কাজ করতেন যে মা, সেই গরীব মায়ের রান্নাঘরে যখন রান্নার গ্যাস সংযোগ স্থাপিত হয়, যে রান্নার গ্যাস এতদিন দেশে একটা ‘স্টেটাস সিম্বল’ ছিল, সেই দেশে গরীবের ঘরে ঘরে যখন গ্যাস সংযোগ পৌঁছে যায়, আর সধূম উনুন থেকে গরীব পরিবারগুলির যখন মুক্তি হয়, এর আনন্দ একটু অন্যরকমই হয়।
আজ গরীবের ব্যাঙ্কে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আজ ব্যাঙ্কে না গিয়ে গরীব মানুষ নিজের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারছেন। সরকারের পাঠানো টাকা সরাসরি প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে তাঁদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে – এইসব পরিবর্তনের চিত্র আপনারা তখনই দেখতে পাবেন, যখন আপনারা মাটির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তৃণমূলস্তরের মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, জনগণের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রক্ষা করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল এটাই যে, আপনাদের মধ্যে অনেকেরই ঘড়ির কাঁটা এখনও সেই ২০১৪-তেই থেমে রয়েছে, আর সেখান থেকে বাইরে বেরোতে পারছেন না। ফলস্বরূপ, আপনাদের দুর্দশা ভুগতে হচ্ছে। আপনাদের মধ্যে যাঁরা নিজেদের একটি এরকম মানসিক অবস্থায় বেঁধে রেখেছেন, দেশের জনগণ তাঁদেরকে চিনে নিয়েছেন। অনেককে তো আগেই দেশের মানুষ চিনে নিয়েছিলেন, আর অন্যদেরকে অনেক দেরিতে চিনেছেন। কেউ কেউ রয়েছেন, যাঁদেরকে ভবিষ্যতে মানুষ চিনবেন। আপনারাই দেখুন, আপনারা এত সব দীর্ঘ উপদেশ যখন দেন, তখন ভুলে যান যে ৫০ বছর ধরে আপনাদেরও এখানে বসার সৌভাগ্য হয়েছে। তখন আপনারাও দেশ শাসন করেছেন। তাহলে এখন পারছেন না কেন? এর পেছনে কী কারণ?
এখন আপনারাই দেখুন! নাগাল্যান্ডের জনগণ কংগ্রেসকে শেষবার ভোট দিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। প্রায় ২৪ বছর আগে। ওড়িশার জনগণ আপনাদের শেষবার ভোট দিয়েছিলেন ১৯৫৫ সালে আর গত ২৭ বছর ধরে আপনারা সেখানে পা-ও রাখতে পারছেন না। গোয়াতে ১৯৯৪ সালে আপনারা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছিলেন। ২৮ বছর হয়ে গেছে, গোয়াবাসী আপনাদের আর মেনে নিচ্ছেন না। ত্রিপুরায় ১৯৮৮ সালে জনগণ শেষবার আপনাদের ভোট দিয়েছিলেন। প্রায় ৩৪ বছর আগে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং গুজরাটে জনগণ কংগ্রেসকে শেষবার ভোট দিয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে। প্রায় ৩৭ বছর আগে। পশ্চিমবঙ্গে জনগণ কংগ্রেসকে শেষবার ভোট দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে, অর্থাৎ, প্রায় ৫০ বছর আগে বাংলার মানুষ আপনাদের পছন্দ করেছিলেন। তামিলনাড়ুর জনগণ …। আমি এক্ষেত্রে সহমত। যদি আপনারা সেই মর্যাদা পালন করেন, আর সেই স্থানের সঠিক সদ্ব্যবহার না করেন, দেশের অত্যন্ত বড় দুর্ভাগ্য যে এই সংসদের মতো পবিত্র সভাকক্ষটি দেশের কাজে লাগা উচিৎ। দলের স্বার্থে এই সংসদকে ব্যবহার করার যে প্রচেষ্টা চলছিল, সেজন্যই জবাব দিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি যা বলছিলাম, তামিলনাড়ুতে শেষবার, প্রায় ৬০ বছর আগে, ১৯৬২ সালে আপনারা শাসন ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। আপনারা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের কৃতিত্ব নেন। কিন্তু তেলেঙ্গানা গড়ে ওঠার পরও সেখানকার জনগণ আপনাদের স্বীকার করেননি। ঝাড়খণ্ডের জন্ম হয়েছে ২০ বছর হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত সেখানকার জনগণ আপনাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে স্বীকার করেননি। আপনারা পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রশ্ন নির্বাচনের ফল নিয়ে নয়, প্রশ্ন সেই মানুষদের মনোভাবের, তাঁদের সৎ মনোভাবের। এত বড় গণতন্ত্রে, এত বছর ধরে শাসন ক্ষমতায় থাকার পর দেশের জনগণ চিরকালের জন্য তাদেরকে কেন নস্যাৎ করেছেন? আর যেখানেই জনগণ নিজস্ব পথ বেছে নিয়েছেন, সেখানে আপনাদেরকে দ্বিতীয়বার প্রবেশের সুযোগই দেননি। এত কিছু হওয়ার পরও … আমরা তো একবার নির্বাচনে হারলে পুনরুত্থানের জন্য কয়েক মাস ধরে কী কী না করি! কিন্তু আপনারা এতবার… , এত ধরনের পরাজয়ের পরেও আপনাদের অহঙ্কার যায় না। আপনারা এই অহঙ্কারের কারণেই নিজেদের পুনরুদ্ধার করতে পারেন না। এবার অভিনন্দনজি অনেক শের-শায়েরী শোনাচ্ছিলেন। চলুন, আমিও সেই সুযোগ নিই। আর যখন অহঙ্কারের প্রসঙ্গে নিয়ে আমি কথা বলছি, তখন তো তাঁদের বলতেই হবে –
ওহ জব দিন কো রাত কহেঁ তো তুরন্ত মান যাও,
নেহী মানোগে তো দিন মে নকাব ওর লেঙ্গে।
জরুরত হুই তো হকিকত কো থোরা বহুত মরোর লেঙ্গে।
ওহ মগরুর হ্যায় খুদ কি সমঝ পর বেইন্তিহা, উনহে আইনা মত দিখাও।
ওহ আইনে কো ভী তোর দেঙ্গে।
অর্থাৎ, তাঁরা যখন দিনকে রাত বলেন, তখন তা তৎক্ষণাৎ মেনে নাও, না মানলে দিনে ঘোমটায় মুখ ঢেকে নেবে। প্রয়োজন হলে বাস্তবকে সামান্য ঘুরিয়ে দেবে। তাঁরা নিজের বুদ্ধির ওপর পরীক্ষাহীনভাবে বুঁদ হয়ে আছে। তাঁদের আয়না দেখিয়ো না। তাঁরা আয়নাকেও ভেঙে ফেলবেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব, স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে আজ দেশ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে আর দেশ অমৃতকালে প্রবেশ করছে। স্বাধীনতার এই লড়াইয়ে যে মানুষেরা অবদান রেখেছিলেন, তাঁরা কোনও দলের হোন কিংবা না হোন, এসবের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা মানুষেরা, দেশের জন্য যৌবন উৎসর্গকারী মানুষেরা, তাঁদের সকলকে স্মরণ করার, তাঁদের সকলকে পুনঃস্মরণ করার এটা সবচাইতে উপযুক্ত সময়, আর তাঁদের স্বপ্নগুলিকে স্মরণ করে কিছু সঙ্কল্প গ্রহণেরও উপযুক্ত সময়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা সবাই শিষ্টাচারের মাধ্যমে, স্বভাবে, ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের জন্য দায়বদ্ধ, আর এটা আজ থেকে নয়, অনেক শতাব্দীকাল ধরেই। কিন্তু এটাও সত্যি যে আলোচনা-সমালোচনা জীবন্ত গণতন্ত্রের একটি আভূষণ। কিন্তু অন্ধ বিরোধিতা, এটা গণতন্ত্রের অনাদর। ভারত যা কিছু অর্জন করেছে, ভালো হত যে যদি খোলা মন নিয়ে তাকে স্বীকার করা হত, তাকে স্বাগত জানানো হত, তার গৌরব গান করা হত।
ক্ষমতায় আসার চেষ্টা – এই ভাবনার বশবর্তী হয়ে আপনারা এটা করতে পারছেন না।
গত দু’বছর ধরে গোটা বিশ্ব এবং মানবজাতি ১০০ বছরের সর্ববৃহৎ বিশ্বব্যাপী মহামারীর সঙ্কটে ভুগছে। যাঁরা ভারতের অতীতের ভিত্তিতেই ভারতকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের তো আশঙ্কা ছিল, এত বড় বিশাল দেশ, এত বিপুল জনসংখ্যা, এত বৈচিত্র্য, এত খাদ্যাভ্যাস, এত বিচিত্র স্বভাবের মানুষজন, এই ভারত সম্ভবত এত বড় লড়াই লড়তে পারবে না। ভারত নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। এটাই তাঁদের ভাবনা ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি কেমন? ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড - দু-দুটি নতুন টিকা বিশ্বে সবচাইতে বেশি কার্যকরী টিকা রূপে প্রমাণিত। আজ ভারত ১০০ শতাংশ প্রথম ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্যের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, আর ৮০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজের পর্যায়ও সম্পূর্ণ করে নিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
করোনা একটি বিশ্বব্যাপী মহামারী ছিল, কিন্তু তাকেও দলগত রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। এটা কি মানবতার সপক্ষে সঠিক আচরণ ছিল?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই করোনাকালে কংগ্রেস তো সমস্ত নিচতার সীমা পার করে দিয়েছে!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় দেশ যখন লকডাউন পালন করছিল, তখন হু – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সারা পৃথিবীর মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছিল, সমস্ত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন! সমস্ত বিশ্বে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল, কারণ মানুষ যেখানে যাবে, যদি সে করোনা সংক্রমিত হয়, তাহলে সে করোনাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। তখন কংগ্রেসের মহান ব্যক্তিরা কী করেছেন? তাঁরা মুম্বাইয়ের রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে মুম্বাই থেকে গ্রামে যাওয়ার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের উৎসাহিত করছিলেন। মুম্বাই থেকে শ্রমিকদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল, বিনামূল্যে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। এভাবে তাঁদের উৎসাহিত করা হয়েছিল যে, যাও, মহারাষ্ট্রে আমাদের ওপর থেকে একটু বোঝা কম হবে। যাও, তুমি উত্তরপ্রদেশের মানুষ, যাও তুমি বিহারের মানুষ। যাও, ওখানে গিয়ে করোনা ছড়াও। আপনারা এটা অনেক বড় পাপ করেছেন। আপনারা একটি হুড়োহুড়ির আবহ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। আপনারা আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের অনেক সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সেই সময় দিল্লিতে এমন সরকার ছিল, যা এখনও আছে। এই সরকার তো জিপে মাইক লাগিয়ে দিল্লির বস্তিতে বস্তিতে, জিপ গাড়ি নিয়ে মানুষকে বলতে থাকে, - অনেক বড় বিপদ, পালাও! গ্রামে যাও। নিজের বাড়িতে যাও। দিল্লির সরকার, দিল্লি থেকে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থাও করে দিল। মধ্যপথে নিয়ে গিয়ে তাঁদেরকে ছেড়ে দিল, আর সমস্ত মানুষের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করল। এর ফলে, উত্তরপ্রদেশে, উত্তরাখণ্ডে, পাঞ্জাবে - যেখানে যেখানে করোনার সংক্রমণ ততটা ছিল না, এতটা তীব্র ছিল না, কিন্তু আপনাদের এই পাপের কারণে করোনা সেখানেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এটা কেমন রাজনীতি ছিল? মানবজাতির সঙ্কটের সময়ে এটা কেমন রাজনীতি? এই ধরণের দলীয় রাজনীতি কতদিন চলবে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেসের এই আচরণ দেখে শুধু আমি নই, গোটা দেশবাসী হতভম্ব। দু’বছর ধরে দেশ ১০০ বছরের সবচাইতে বড় সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। কিন্তু কিছু মানুষ যে ধরনের ব্যবহার করেছেন, দেশবাসী তাঁদের নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন। এই দেশটা কি আপনাদের নয়? এদেশের মানুষ কি আপনাদের নয়? তাঁদের সুখ-দুঃখ কি আপনাদের প্রভাবিত করে না? এত বড় সঙ্কট এসেছে, অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা এর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আপনারা নিজেরাই সমীক্ষা করে দেখুন, কত রাজনৈতিক দলের নেতা, যাঁরা নিজেদেরকে জনগণের নেতা বলে মনে করেন, তাঁদের কাছে জনগণ অনুরোধ জানিয়েছেন, দরখাস্ত করেছেন … ভাই, করোনার এমন কঠিন সময়ে বিশ্বব্যাপী মহামারী চলছে। আপনারা মাস্ক পরুন, আপনারা ঘন ঘন হাত ধুতে থাকুন, দুই গজের দূরত্ব রক্ষা করুন। কিন্তু এই নেতারা ভাবলেন যে, দেশের জনগণকে বারবার মাস্ক পরার কথা বললে, হাত দুটো ধোয়ার কথা বললে বিজেপি সরকারের কী লাভ হবে? মোদীর কী লাভ হবে? এইসব ভেবে তাঁরা এত বড় সঙ্কটে নিজেদের যে দায়িত্বটা ছিল, সেই পবিত্র কাজ করে উঠতে পারলেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কিছু মানুষ রয়েছেন, তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন যে, করোনা ভাইরাস মোদীর ইমেজকে নষ্ট করে দেবে। অনেক অপেক্ষা করেছেন। আর করোনাও আপনাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিল। প্রায়ই আপনারা অন্যদের নিচু দেখাতে মহাত্মা গান্ধীর নাম স্মরণ করেন। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের কথা বারবার উচ্চারণ করতে আমাদের কে আটকায়? কিন্তু যখন মোদী ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বলে, মোদী বলেছে বলেই আপনারা এই শব্দগুলিকে উচ্চারণ করা ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আপনারা কি চান না যে দেশ আত্মনির্ভর হয়ে উঠুক? আপনারা যে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের কথা বলেন, তখন ভারতে এই অভিযানকে শক্তি যোগাতে, লড়াই করতে তিনি কি আত্মনির্ভরতাকে অস্ত্র করে তোলেননি? তাঁর নেতৃত্বের কথা আপনারা ভাবুন। মহাত্মা গান্ধীজি স্বদেশীর সিদ্ধান্তকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার জন্যই। তাহলে আজ আপনারা যে বিরোধিতা করছেন তার মানে কি এটা যে আপনারা মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত হতে দেখতে চান না?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ গোটা বিশ্বে যোগ-এর জন্য আকর্ষণ বাড়ছে। এই করোনাকালে সারা পৃথিবীতে যোগ একটি নতুন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী প্রত্যেক ভারতীয় আজ যোগ-এর জন্য গর্বিত। আপনারা তা নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছেন, সেটারও বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু ভেবে দেখুন তো! আপনারা যদি মানুষকে বলতেন, ভাই আমরা এই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি, সবাই যোগ করুন, এ থেকে উপকার হবে, তাহলে কি আপনাদের কোন লোকসান হত? আপনারা যদি ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’কে উৎসাহ যোগাতেন, দেশের নবীন প্রজন্মকে আরও শক্তিশালী, আরও সামর্থ্যবান করে তোলার বিরোধিতা না করতেন, তাহলে কি মানুষ উপকৃত হতেন না? আপনাদের মোদীর প্রতি রাগ থাকতে পারে, বিরোধিতা থাকতে পারে, কিন্তু ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’কে আপনাদের রাজনৈতিক দলের ছোট ছোট মঞ্চেও যদি চর্চা করেন, সবাই মিলেমিশে দেশকে সুস্থ রাখার জন্য, দেশের যুবশক্তির এই সামর্থ্য তৈরির অভিযানে, এগিয়ে যাওয়ার অভিযানে উৎসাহ যোগাতেন, তাহলে আপনাদের কী ক্ষতি হত? কিন্তু আপনারা এটা নিয়েও বিরোধিতা করলেন, উপহাস করলেন। আপনাদের কী হয়েছে? আমি বুঝতে পারছি না। এজন্যই আমি আজকাল বলছি, যাতে আপনারা অনুভব করেন যে আপনারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ইতিহাসও তুলে ধরলাম। ৬০ বছর থেকে শুরু করে ১৫ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে আপনাদের কেউ ঢুকতে দিচ্ছেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কখনও কখনও আমি … এ কথাটা আমি অত্যন্ত ভালোবাসা নিয়ে বলছি। মন খারাপ করবেন না। আমার কখনও কখনও মনে হয় …
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের বক্তব্য শুনে, তাঁদের বিভিন্ন কর্মসূচি দেখে, তাঁদের বিভিন্ন কুকীর্তি দেখে কখনও আমার মনে একটি ভাবনার উদয় হয়। যেভাবে তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হন, মনে হয় তাঁরা মনস্থির করে নিয়েছেন যে আগামী ১০০ বছর তাঁরা আর দেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে চান না। এমনটা কেন ভাবছেন? যদি তাঁদের সামান্য মনে আশা থাকত, চিন্তা থাকত যে হ্যাঁ দেশের জনগণের জন্য কিছু করব, আবার তাঁদের ভোটে ক্ষমতায় ফিরে আসব, তাহলে তাঁরা এমনটি করতেন না। সেজন্যই …। ঠিক আছে, আপনারা যখন ঠিকই করে নিয়েছেন ১০০ বছরের জন্য ক্ষমতা আসবেন না, তখন আমিও যা ঠিক করার ঠিক করে নিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সভাকক্ষ সাক্ষী আছে যে করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারী পরিস্থিতি যখন সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রতিরোধের জন্য ভারত যে রণনীতি রচনা করেছে তা নিয়ে প্রথম দিন থেকে কী কী বলা হয়নি! কে কী বলেছেন, আজ তাঁরা নিজেরাই যদি তার রেকর্ডিং দেখেন, তাহলে অবাক হয়ে যাবেন! এমন কথা কিভাবে বলে ফেলেছেন, কে তাঁদের দিয়ে বলিয়েছেন, না জানি কেন আমরা এরকম বলে দিয়েছি, বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের কনফারেন্সে এমন সব কথা বলা হয়েছে, যাতে গোটা বিশ্বে ভারতের বদনাম হয়। নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য ভারত কিভাবে অর্থনৈতিক সংস্কার করে চলেছে, আর ওদিকে মাই গড, কী কী তাঁরা বলেননি! বড় বড় পণ্ডিতরা দেখেছেন। গোটা ইকো-সিস্টেমকে আপনারা কাজে লাগিয়েছেন। আমরা যতটা বুঝেছি, ঈশ্বর যতটা বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন, ততটা বুদ্ধি নিয়ে কাজ করেছি আর নিজেদের বুদ্ধির থেকেও বেশ সমর্পণভাব নিয়ে কাজ করেছি। আর যেখানে বুদ্ধির থেকে সমর্পণভাব বেশি থাকে, সেখানে দেশ এবং বিশ্বকে অর্পণ করার জন্য শক্তিও থাকে। সেটাই আমরা করে দেখিয়েছি। আজ যে পথে আমরা চলেছি, আজ বিশ্বের আর্থিক জগতের সমস্ত বড় বিশেষজ্ঞরা একথা মানবেন যে, ভারত যে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে এই করোনা কালখণ্ডে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তা গোটা বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আর আমরাও অনুভব করি, আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরাও দেখেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
ভারত আজ বিশ্বের যত বড় বড় অর্থনীতির দেশ রয়েছে, তাঁদের সকলের তুলনায় বেশি দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই করোনা কালখণ্ডে আমাদের কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপাদন করেছেন। সরকার রেকর্ড পরিমাণ ফসল কিনেছে। বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে খাদ্যের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, আপনারা জানেন, ১০০ বছর আগে যে বিপর্যয় এসেছিল, তখনকার যে প্রতিবেদনগুলি আমরা পড়েছি, সেখানে একথা বলা হয়েছে যে সেই মহামারীতে রোগের আক্রমণে যতজনের মৃত্যু হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে মারা গেছেন। ১০০ বছর আগের প্রতিবদনগুলি পড়ে দেখবেন। কিন্তু ভারত এবার কাউকে অনাহারে মরতে দেয়নি। ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসীকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পৌঁছে দিয়েছে, আর আজও তা পৌঁছে দিচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ আমাদের মোট রপ্তানি ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, আর এটা করোনাকালেই সম্ভব হয়েছে। ফসল রপ্তানি এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে আমরা সর্বকালের রেকর্ড স্থাপন করেছি। সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রেও ভারত সর্বোচ্চ উচ্চতার দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি আত্মনির্ভর ভারতেরই কৃতিত্ব, আর আজ দেশ ডিফেন্স এক্সপোর্ট বা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির ক্ষেত্রেও নিজের পরিচয় তৈরি করছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশে আজ এফডিআই-এর পর এফডিআই আসছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সংসদে কিছুটা তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন হয়, তাহলে সংসদ গরম থাকে। কিন্তু যখন সীমার বাইরে চলে যায়, তখন মনে হয় এমন বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের দলের একজন এমপি আলোচনা শুরু করেন, আর সামান্য তর্ক-বিতর্ক চলছিল, আমি আমার কক্ষে বসে স্ক্রিনে দেখছিলাম যে, আমাদের এক মন্ত্রী পেছনে যান, সবাইকে থামাতে চেষ্ট করেন, আর সেখান থেকে চ্যালেঞ্জ আসে, যদি আমরা সবাই এক হয়ে যাই, তাহলে তোমাদের নেতারও এই অবস্থা করে ছাড়ব। এখন কি সেজন্যই এরকম করছেন আপনারা?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের প্রত্যেকেই আজ নিজের সিআর শুধরানোর চেষ্টা করছেন। প্রত্যেকেরই নিজের সিআর শুধরানোর চেষ্টা করা উচিৎ। কিন্তু আমি মনে করি, ইতিমধ্যেই যতটা করেছেন তাতে আপনাদের সিআর ঠিক হয়ে গেছে। নতুন যাঁরা নাম রেজিস্টার করতে চান যে, আপনারা এই পরাক্রম দেখিয়েছেন, তাঁদেরকে সুযোগ দিন। অন্যরা কেন করছেন? এই অধিবেশন থেকে আপনাদের কেউ বহিষ্কার করবে না। বিশ্বাস করুন! এই অধিবেশন থেকে আপনাদের বহিষ্কারের কোনও সম্ভাবনা নেই। এটা আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি। এই জায়গা থেকে … আরে ভাই এমনিতেই তো বেঁচে গেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের রেকর্ড আমরা গড়েছি। আজ ভারতে প্রভূত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। রিনিউয়েবলে এনার্জি বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রেও আজ ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ পাঁচটি দেশের অন্যতম হয়ে উঠেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সবকিছু এজন্যই সম্ভব হচ্ছে কারণ, করোনাকালে এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, নিজেদের কর্তব্য পালন করে এই সঙ্কটকালে দেশকে বাঁচাতে সংস্কার জরুরি ছিল, আর আমরা সেই সংস্কারের পথ বেছে নিয়েছি। তার পরিণামে আজ আমরা এভাবে, এই পরিস্থিতিতে দেশকে নিয়ে যেতে পেরেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সহ প্রতিটি শিল্পোদ্যোগকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করেছি। নিয়মগুলিকে, প্রক্রিয়াগুলিকে সরল করেছি। আত্মনির্ভর ভারতের যে মিশন, সেই অভিযানকে আমরা বাস্তবায়িত করার ভরপুর চেষ্টা করেছি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সাফল্য, এমন সঙ্কটের পরিস্থিতিতেও দেশ এই সমস্ত ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে, যখন আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আজ অনেক বড় উত্থান-পতন চলছে। আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লজিস্টিক্স সাপোর্টের ক্ষেত্রেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশৃঙ্খলার কারণে রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে আজ কত বড় সঙ্কট এসেছে তা সকলেই জানেন। অথচ ভারতে সার আমদানি করতে হয়। ফলে আজ কত বড় অর্থনৈতিক বোঝা দেশকে বহন করতে হচ্ছে। গোটা বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিন্তু ভারতের কৃষকদের আমরা এই সমস্যার পরিণাম ভুগতে বাধ্য করিনি। ভারত আজ এই সরবরাহ শৃঙ্খলের বোঝা দেশের কাঁধে উঠিয়েছে। কিন্তু সেই বোঝা কৃষকদের ঘাড়ে ফেলে দেয়নি। ভারত আজ দেশের মধ্যে সার সরবরাহ শৃঙ্খলকে নিরন্তর জারি রেখেছে। করোনার সঙ্কটকালে ভারত নিজের কৃষিকে এই সঙ্কট থেকে বের করে আনতে বিশেষ করে, ক্ষুদ্র কৃষকদের নানা সঙ্কট থেকে বের করে আনতে বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কখনও কখনও আমি ভাবি, যাঁদের মাটির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, যাঁরা জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন, দুই থেকে চার প্রজন্ম ধরে যাঁদের প্রাসাদে বসবাসের অভ্যাস হয়ে গেছে, তাঁরা দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের সমস্যা কেমন করে বুঝবেন? সেজন্যই তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তাঁরা নিজেদের দলের সদস্য কয়েকজন কৃষককে চিনতেন। তাঁদের বাইরে আর দেখতে পাননি, আর কখনও এমন মানুষদের আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রতি আপনাদের মনে এত ঘৃণা কেন? আপনারা কেন ক্ষুদ্র কৃষকদের কল্যাণের জন্য আমরা যত সিদ্ধান্ত নিই সেগুলির বিরোধিতা করতে থাকেন? আপনারা কেন ক্ষুদ্র কৃষকদের আজ এই সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যদি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে হয়, তাহলে আমাদের আজ ক্ষুদ্র কৃষকদের শক্তিশালী করে তুলতে হবে। গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদেরও শক্তিশালী করে তোলা যাবে। যদি আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকরা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, ছোট জমি থাকলেও, ২ হেক্টর জমি থাকলেও সেখানে তাঁরা যদি আধুনিক কৃষির চেষ্টা করেন, নতুন নতুন শেখার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁরা অবশ্যই শক্তিশালী হয়ে উঠবেন আর দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করবেন। সেজন্য ক্ষুদ্র কৃষকদের আধুনিক করে তুলতে আমরা আজ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রতি যাঁদের মনে ঘৃণা রয়েছে, যাঁরা ক্ষুদ্র কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট জানেন না, তাঁদের আজ কৃষকদের নামে রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের একথা বুঝতে হবে যে, ১০০ কোটি কৃষকের প্রতি দাসত্বের কালখণ্ডে তাঁদের যে মানসিকতা ছিল, তা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কিছু মানুষ বদলাতে পারেননি। এই দাসত্বের মানসিকতা যে কোনও রাষ্ট্রের প্রগতির জন্য অনেক বড় সঙ্কট সৃষ্টি করে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ দেশে আমি একটা চিত্র দেখতে পাচ্ছি। একটি এমন সম্প্রদায়, একটি এমন শ্রেণী রয়েছে, যাঁরা আজও দাসত্বের সেই মানসিকতা নিয়ে বাঁচেন। আজও তাঁরা ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই ভাবনায় আকীর্ণ। সেজন্যই বিংশ শতাব্দীর যেসব আইন, সেই আইনগুলিকেই তাঁদের সঠিক বলে মনে হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দাসত্বের এই মানসিকতা, এই ঊনবিংশ শতাব্দীর মানসিকতা, ঊনবিংশ শতাব্দীর সামন্ততান্ত্রিক আচার-আচরণ, বিংশ শতাব্দীর আইনগুলি কখনও একবিংশ শতাব্দীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে না। আমাদের একবিংশ শতাব্দীর অনুকূল পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে পরিবর্তনকে আমরা অস্বীকার করেছি, তার পরিণাম কী হয়েছে? ফ্রেট করিডর তৈরি করার জন্য এত আলাপ-আলোচনার পর, অনেক বছর চেষ্টা করার পর এসবের পরিকল্পনা রচনা করা হয়েছে। ২০০৬-এর পরিকল্পনা, ২০০৬-১৪ পর্যন্ত এগুলির অবস্থা দেখুন! ২০১৪-র পর এর বাস্তবায়নে গতি আসে। উত্তরপ্রদেশে সরযূ নহর পরিযোজনা ৭০-এর দশকে শুরু হয়েছিল। এতদিনেও শেষ হয়নি। এর পেছনে বিনিয়োগ ১০০ গুণ বেড়ে গেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ সম্পূর্ণ করেছি। এটা কেমন ভাবনা? উত্তরপ্রদেশের অর্জুন বাঁধ প্রকল্প ২০০৯-এ শুরু হয়েছে। ২০১৭ পর্যন্ত মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্থ খরচ হয়েছে। আমরা হাতে নিয়ে এত কম সময়ে এটিকে সম্পূর্ণ করেছি। কংগ্রেসের হাতে ক্ষমতা ছিল। এত বছর ধরে তাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা চাইলেই চারধাম সংযুক্তকারী অল ওয়েদার সড়কপথটি তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করেননি। জলপথ। গোটা বিশ্ব এই জলপথের গুরুত্ব বোঝে, শুধু আমাদের দেশেই আমরা জলপথের গুরুত্বকে নস্যাৎ করেছি। আজ আমাদের সরকার সারা দেশে জলপথ উন্নয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পুরনো দৃষ্টিকোণ থেকে গোরক্ষপুরের কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দৃষ্টিকোণে গোরক্ষপুরের সেই সার কারখানা আবার শুরু হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই মানুষেরা এমনই, যাঁরা তাঁদের মাটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। সেজন্য তাঁদের লালফিঁতের ফাঁস এত প্রবল। তাঁদের ফাইলগুলি নড়তেই চাইত না। একজন ফাইলে স্বাক্ষর করে দিলেন। তারপর তাঁর সাক্ষাতের জন্য কেউ আসতে চাইলে তাঁকে অপেক্ষায় থাকতে হত। আপনাদের জন্য ফাইলই সবকিছু। আমাদের জন্য ১৩০ কোটি দেশবাসীর উপকারসাধন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা ফাইলে ডুবে ছিলেন। আমরা মানুষের জীবন, মানুষের জীবনশৈলী বদলানোর জন্য প্রাণপণে কাজ করে চলেছি, আর আজ তারই পরিণাম হল প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান – একটি হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ, টুকরো টুকরো করে নয়, বিচ্ছিন্নভাবে নয়, দু-একটা কাজ এখানে হচ্ছে, দু-একটা কাজ ওখানে হচ্ছে, কেউ সড়ক তৈরি করছে, আবার বিদ্যুৎ দপ্তরের লোকেরা এসে রাস্তা খুঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে। সেটা ঠিক হতে না হতেই পানীয় জল সরবরাহের জন্য রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। এই সমস্ত সমস্যার বাইরে থেকে আমরা একটি জেলাস্তরে গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে সংহত উন্নয়ন করছি। তেমনই আমাদের দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মাল্টি-মডেল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে আমরা জোর দিচ্ছি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আমরা বুনিয়াদি স্তরে কাজ করছি। স্বাধীনতার পর সবচাইতে দ্রুতগতিতে গ্রামীণ সড়ক যদি কখনও তৈরি হয়ে থাকে তা হয়েছে গত পাঁচ বছরের কালখণ্ডে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সারা দেশে জাতীয় মহাসড়ক আরও প্রসারিত হচ্ছে। রেললাইনগুলির বৈদ্যুতিকীকরণ হচ্ছে। আজ দেশ নতুন নতুন বিমানবন্দর, হেলিপোর্ট এবং ওয়াটার ড্রোনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। আজ দেশের ৬ লক্ষেরও বেশি গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের কাজ চলছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সমস্ত কাজ এরকম যা বহু সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান এনে দেয়। অধিকাংশ কর্মসংস্থান এই কাজগুলি থেকে সৃষ্টি হয়। আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ আজ দেশের প্রয়োজনীয়তা আর এক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিনিয়োগও হচ্ছে, আর আজ তা থেকে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, যে উন্নয়ন হচ্ছে তা দেশের উন্নয়নের গতিকে বাড়িয়ে তুলছে। সেজন্য আজ দেশ সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যত বেশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নত হবে, বিকশিত হবে, ততই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে বিগত সাত বছর ধরে আমরা এই দিকগুলিকে গুরুত্ব দিয়েছি আর তার পরিণাম হল আমাদের আত্মনির্ভর ভারত অভিযান। উৎপাদন শিল্প হোক, কিংবা পরিষেবা ক্ষেত্র – প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন বাড়ছে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে আমরা আজ গ্লোবাল ভ্যালু চেন বা আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলের অংশ হয়ে উঠছি। এটা নিজেই ভারতের জন্য একটি ভালো লক্ষণ, ভালো সঙ্কেত। আমরা অধিকাংশ গুরুত্ব দিচ্ছি অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং বস্ত্রশিল্পের মতো শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলিকে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের বড় ব্যবস্থা সংস্কারসাধন, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের পরিভাষায় আমরা সংস্কার এনেছি আর এই সংস্কারের ফলে এই ক্ষেত্রে আরও নতুন নতুন সুযোগ গড়ে উঠেছে। নিজেদের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগকে সুরক্ষিত করার জন্য অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির জন্য সরকার এই করোনার বিকট কালখণ্ডে তিন লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্পও চালু করেছে, আর তার দ্বারা আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি লাভবান হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে অনেক বড় ক্ষেত্র সমীক্ষা নির্ভর গবেষণা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা এসবিআই করেছে। এসবিআই-এর এইক্ষেত্র সমীক্ষা নির্ভর গবেষণা অনুযায়ী, ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এই প্রকল্পের কারণে ইতিমধ্যেই সর্বনাশের পথ থেকে রক্ষা পেয়েছে, আর এসবিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের চাকরি বাঁচিয়েছে আর প্রায় ১৪ শতাংশ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ঋণের কারণে এনপিএ হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা থেকেও বেঁচে গেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যে মাননীয় সংসদ সদস্যরা মানুষের কাছে যান, যাঁদের মাটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তাঁরা আমাদের এই উদ্যোগগুলির প্রভাব নিজেরাই দেখেছেন। আমাদের বিপক্ষেরও বেশ কয়েকজন বন্ধু আমাকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন যে সাহেব, এই প্রকল্প অত্যন্ত লাভজনক হয়েছে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রটি এই সঙ্কটের সময়ে অনেক বড় সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
একইরকমভাবে আমাদের ‘মুদ্রা যোজনা’ কতটা সফল হয়েছে তা আজ আমাদের দেশের অগুণতি মা-বোনেরা জানেন। এই লক্ষ লক্ষ গরীব মা-বোনেরা কোনও গ্যারান্টি ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আজ নিজেদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। তাঁরা নিজেদের রোজগারের পাশাপাশি, প্রত্যেকেই আরও দু-একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। আমাদের ‘স্বনিধি যোজনা’ও তেমনই রাস্তার হকারদের খুব কাজে লেগেছে। তাঁদের কথা আগে কখনও দেশের সরকার ভাবেনি। স্বাধীনতার পর প্রথমবার রাস্তার হকাররা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন, আর আজ এই রাস্তার হকাররা ডিজিটাল লেনদেন করছেন। এর ফলে কোটি কোটি শ্রমিক লাভবান হচ্ছেন। আমরা গরীব শ্রমিকদের জন্য ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছি। ‘আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা’র মাধ্যমে হাজার হাজার সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আমরা প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পাঠিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
শিল্পোদ্যোগকে গতি প্রদানের জন্য উন্নতমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। পিএম গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান আমাদের লজিস্টিক্স কস্ট অনেক কমিয়ে দেবে, আর সেজন্য দেশের সর্বত্র সুলভ মূল্যে সমস্ত জিনিস পৌঁছতে পারবে আর রপ্তানিকারকরাও বহির্বিশ্বের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারবেন। সেজন্য পিএম গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান ভবিষ্যতে অনেক ক্ষেত্রে অনেক লাভজনক হয়ে উঠবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সরকার আরও একটি অনেক বড় কাজ করেছে। অনেক নতুন ক্ষেত্রকে নতুন শিল্পোদ্যোগীদের জন্য আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে মহাকাশ, প্রতিরক্ষা, ড্রোন এবং খনিকে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আজ বেসরকারি কোম্পানিগুলিও দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়ে উঠতে পারছে। তাঁদেরকে আমরা এই সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। দেশে নতুন শিল্পোদ্যোগীদের জন্য উন্নত আবহ গড়ে তুলতে সরল কর ব্যবস্থার সূত্রপাত করে হাজার হাজার কমপ্লায়েন্সেস-এর মাধ্যমে আমাদের দেশে আমূল পরিবর্তন আনছি। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত দপ্তরে এটা আনো, ওটা আনো, এই কাগজ জমা দাও, ওই কাগজ জমা দাও, এরকম প্রায় ২৫ হাজার কমপ্লায়েন্সেস বা বাধ্যবাধকতা আমরা সমাপ্ত করেছি। আজ আমি রাজ্যগুলিকেও অনুরোধ করব যে তাঁরা যেন খুঁজে খুঁজে এ ধরনের নিরর্থক কমপ্লায়েন্সেস সমাপ্ত করেন। দেশের নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে। আপনারা সেটা বুঝুন। আজ দেশে এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে সরানো হচ্ছে। দেশীয় শিল্পোদ্যোগগুলির মানোন্নয়নের জন্য একের পর এক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ দেশ তার পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে। আমাদের দেশে এই ধারণা তৈরি হয়েছিল যে সরকারই সবকিছুর ভাগ্যবিধাতা। তোমাকে সরকারের ওপরে নির্ভরশীল হতে হবে। আর কেউ তোমার আশা-আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারবে না। সরকারই মেটাবে। সবকিছু সরকারই দেবে। আমরা এই অহং নিয়ে চলছিলাম, আর সেজন্যই দেশের সামর্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেজন্য সাধারণ মানুষের স্বপ্ন, সাধারণ যুবক-যুবতীর স্বপ্ন, যুবক-যুবতীর দক্ষতা, তাঁদের চলার পথ নিয়ে আমরা নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছি। সবকিছু সরকার করবে, এমনটা ঠিক নয়। দেশবাসীর শক্তি অনেকগুণ বেশি হয়। সেই সামর্থ্য নিয়ে যদি আমরা সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করি, তাহলে উন্নত পরিণাম আসে। আপনারা দেখুন, ২০১৪ সালের আগে আমাদের দেশে মাত্র ৫০০ স্টার্ট-আপ ছিল। কিন্তু যখন সুযোগ দেওয়া হয়, তখন দেশের নবীনরা কী কী করতে পারেন, তার পরিণাম কী হতে পারে, এটা গত সাত বছরে আমরা দেখেছি। ২০১৪-র আগে মাত্র ৫০০টি স্টার্ট-আপ আর বিগত সাত বছরে ৬০ হাজার স্টার্ট-আপ এখন দেশে কাজ করছে। এটাই আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়ের শক্তি ও সামর্থ্য, আর এগুলির মধ্যেই অনেকগুলি ইউনিকর্ন হয়ে উঠছে। এক একটি ইউনিকর্ন হয়ে ওঠা মানে তাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
অত্যন্ত কম সময়ে ভারত ইউনিকর্ন-এর ক্ষেত্রে সেঞ্চুরি করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এটা অনেক বড় কথা। হাজার হাজার কোটি টাকার কোম্পানি তৈরি করতে আগে কয়েক দশক লেগে যেত। আজ আমাদের নবীন প্রজন্মের শক্তি দেখুন। সরকারের অনুকূল নীতিগুলির কারণে মাত্র একটি বছরের মধ্যেই তাঁদের ব্যবসাকে তাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে পারছেন।
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমরা স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন-এর এই ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ তিনটি দেশের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। পৃথিবীতে কোন ভারতবাসী এই সাফল্যে গর্বিত হবেন না? কিন্তু এমন সময়ে আমাদের দেশেই সরকারের বিরোধিতার অভ্যাস অনুযায়ী তাঁরা সচেষ্ট হয়ে উঠেছেন। সকাল হতেই তাঁরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এখানে আমরা দেখেছি, আমাদের মাননীয় ব্যক্তিটি যা বলছিলেন, তোমরা কেন মোদী, মোদী, মোদী, মোদী করতে থাক? এমনটাই বলছিলেন না? আর আজও সবাই মোদী, মোদী, মোদী, মোদী বলছেন। আপনিও বলছেন। আপনারা সকাল হতেই আমার নাম জপতে শুরু করে দেন। একটি মুহূর্তও আপনারা আমার নাম না নিয়ে বাঁচতে পারেন না। আরে মোদীই তো এখন আপনাদের প্রাণশক্তি!
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কিছু মানুষ দেশের নবীন প্রজন্মকে, দেশের নতুন শিল্পোদ্যোগীদের, দেশের ‘বেস্ট ক্রিয়েটার্স’দের ভয় দেখিয়ে আনন্দ পান। তাঁদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলতে পারলে তাঁরা আনন্দ পান। গুজব রটিয়ে তাঁদেরকে বিভ্রান্ত করে আনন্দ পান। সেজন্য দেশের নতুন প্রজন্ম আর তাঁদের কথা শুনছেন না আর সেজন্যই দেশ এগিয়ে চলেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ যেগুলি ইউনিকর্ন-এ পরিণত হয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকটি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু কংগ্রেসে এমন মানুষেরা বসে আছেন, যাঁরা বলেন যে আমাদের শিল্পোদ্যোগীদের জন্যও নাকি তাঁরা বলেন, আর আপনারাও জেনে অবাক হবেন, কী বলেন? তাঁরা বলেন যে এই শিল্পোদ্যোগীরা করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট। বলুন, কী হয়ে গেল! কোথায় আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের শিল্পোদ্যোগ, আর তাঁদেরকে বলা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট? শিল্পোদ্যোগ কি করোনার ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট হতে পারে? আপনারা কী বলছেন? কাদের জন্য বলছেন? আপনাদের মধ্যে কেউ যদি সুস্থ মস্তিষ্কের থাকেন, তাহলে বলুন যে প্রকৃত সত্যটা কী? আপনাদের দলের ক্ষতি হচ্ছে। কংগ্রেস দলেরই ক্ষতি হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
যাঁরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না, তাঁরা নিজেরাই ইতিহাসে হারিয়ে যান।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এসব আমি এজন্যই বলছি, যদি আপনারা একটু ৬০ থেকে ৮০-র দশকের কথা ভাবেন, তখন যে প্রধান নেতারা কংগ্রেসে ছিলেন, যাঁরা দেশের নেতৃত্ব করতেন, সেই কালখণ্ডের কথা আমি বলছি। ৬০ থেকে ৮০-র দশকে কংগ্রেসই প্রধান দল ছিল। কংগ্রেসেরই ক্ষমতা কংগ্রেসের বন্ধুদের সঙ্গে থেকে সুখ উপভোগ করতেন যাঁরা, তাঁরাই পণ্ডিত নেহরুজির সরকারকে আর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজির সরকারকে নিয়ে কী কী বলতেন? তাঁরা বলতেন, এটি তো টাটা-বিড়লার সরকার। এই সরকারকে তো টাটা-বিড়লা চালাচ্ছে। ৬০ থেকে ৮০-র দশক পর্যন্ত এসব কথাই ক্ষমতা অলিন্দে শোনা যেত। নেহরুজির জন্য বলা হত, ইন্দিরাজির জন্য বলা হত, আর আপনারা তাঁদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার অভ্যাস করে নিয়েছিলেন। আপনারাও আজ সেই ভাষায় কথা বলছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি, আপনারা এতটাই নিচে নেমে গেছেন। এতটাই নিচে নেমেছেন যে, আমার মনে হচ্ছে আজ ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’ বদলে গেছে, কিন্তু আপনাদের অভ্যাস বদলায়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই মানুষেরা আজ সংসদে বক্তব্য রাখার হিম্মত রাখেন। বাইরে তো বলেনই, যেখানে সুযোগ পান চুপ থাকেন না। তাঁরা বলতেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হতেই পারে না। কিন্তু এখন এতে তাঁরা মজা পাচ্ছেন। কেউ এমন ভারতের জন্য আগে ভেবেছে কী? কেউ কী আগে বলেছে যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হতেই পারে না? আরে ভাই, আপনাদের যেহেতু সমস্যা হত, সেজন্য আমরা এসে করছি। ঠিক আছে, এভাবেই বলুন, আমাদেরকে গালি দিন। দেশকে কেন গালি দিচ্ছেন? দেশের বিরুদ্ধে কেন বলছেন? ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হতে পারবে না! ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে আপনারা অনেক হাসি-ঠাট্টা করেছেন। কিন্তু আজ দেশের যুবশক্তি, দেশের নতুন শিল্পোদ্যোগীরা এটা করে দেখিয়েছেন, আর আপনারাই হাসির বিষয় হয়ে উঠেছেন, আপনারাই হাস্যকর হয়ে উঠেছেন। সেজন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সাফল্য দেখে আপনাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে, এটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের ফলে অনেকেই সমস্যায় রয়েছেন। কারণ, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মানে হল কমিশনের পথ বন্ধ, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মানে হল দুর্নীতির পথ বন্ধ, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মানে হল নিজেদের সিন্দুক ভরার পথ বন্ধ, আর সেজন্যই আপনারা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা করছেন। ভারতের জনগণের সামর্থ্যকে ছোট করে দেখার পাপ, দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সামর্থ্যকে অপমান, দেশের যুবশক্তির অপমান, দেশের উদ্ভাবক ক্ষমতার অপমান – এসব আপনারা করছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশে এরকম নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি করা, হতাশার পরিবেশ সৃষ্টি করা; নিজেরা হতাশ, নিজেরা সফল হতে পারছেন না সেজন্য দেশকে অসফল করার লক্ষ্যে যে খেলা খেলছেন তা দেশের মানুষ বুঝে গেছেন। এর বিরুদ্ধে দেশের নবীন প্রজন্ম জেগে উঠেছেন, জাগ্রত রয়েছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আগে যাঁরা সরকার চালাতেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যাঁরা দেশের ক্ষমতায় ছিলেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে তাঁদের কী ভাবনাচিন্তা ছিল? শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের যদি দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে সমস্ত বিষয়টা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাঁরা কী করতেন, কিভাবে করতেন, কেন করতেন, এবং কাদের জন্য করতেন? আগে বছরের পর বছর ধরে কী হত! নতুন যন্ত্রপাতি, নতুন সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রক্রিয়া চলত। বছরের পর বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলত, আর যখন সমস্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হত, তখন সেই জিনিসগুলি পুরনো হয়ে যেত। এখন বলুন, এতে দেশের কী ভালো হবে? আউটডেটেড বা কালবাহ্য সাজসরঞ্জাম যন্ত্রপাতি আসত, আর আমাদের টাকা যেত। আমরা এই সমস্ত প্রক্রিয়াকে সিমপ্লিফাই করেছি, সরল করেছি। অনেক বছর ধরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের যেসব ইস্যু পেন্ডিং ছিল, আমরা সেগুলি সমাধানের চেষ্টা করেছি। আগে কোনও আধুনিক প্ল্যাটফর্ম কিংবা ইকুইপমেন্টের জন্য আমাদের অন্যান্য দেশের দিকে তাকাতে হত। প্রয়োজনের সময় হুড়োহুড়ি করে কেনা হত। এটা আনো, ওটা আনো! তখন আর কেউ জিজ্ঞাসা করত না, কেন আনা হয়েছে? ব্যস চলে আসত। এরপর এমনকি, স্পেয়ার পার্টসের জন্যও আমরা অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। অনেক ক্ষেত্রে এখনও আছি। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থেকে আমাদের দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকতে পারে না। আমাদের কাছে নিজস্ব ইউনিক বা স্বতন্ত্র ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়া, এটা দেশসেবারই একটা অনেক বড় কাজ, আর আজ আমি দেশের নবীন প্রজন্মকেও আহ্বান জানাচ্ছি যে আপনারা নিজেদের কেরিয়ারে এই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে বেছে নিন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে, শক্তির সঙ্গে দেশের সুরক্ষা ক্ষেত্রে উঠে দাঁড়াব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই বাজেট অনুসরণ করে আমরা যত বেশি সম্ভব সুরক্ষা উপকরণ ভারতেই তৈরি করব। ভারতীয় কোম্পানিগুলি থেকেই কিনব। এই বাজেটে এই ব্যবস্থাই করেছি। বাইরে থেকে আনার পথ বন্ধ করার লক্ষ্যে আমরা যথাসাধ্য পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনীগুলির প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশ হয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে চলেছি, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই সঙ্কল্প বাস্তবায়িত হবে। আমি জানি যে প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম কেনা-বেচার সময় আগে বিশ্বের অনেক বড় বড় শক্তি, আমাদের অনেক বড় বড় রথী-মহারথীকেও কিনে নিত। এই ধরনের শক্তিকে মোদী চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, আর সেজন্য মোদীর ওপর তখন থেকেই তাঁদের অভিমান নয়, রাগ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাঁদের এই রাগই এখন নানাভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের বিপক্ষের কয়েকজন বন্ধু এখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গও তুলেছেন। ভালো লাগত, দেশেরও ভালো হত যদি আপনাদের এই চিন্তা তখনও থাকত, যখন দেশে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার ছিল। দেশের জন্য এই কষ্ট তখনও হওয়া উচিৎ ছিল। আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন, আমি একটু আপনাদের মনে করাতে চাই। কংগ্রেস সরকারের শেষ পাঁচ বছরের প্রায় সমগ্র শাসনকালে দেশ ডবল ডিজিট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যার জর্জরিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে এই পরিস্থিতি ছিল। কংগ্রেসের নীতিগুলি এমনই ছিল, সরকার নিজেই স্বীকার করতে শুরু করেছিল যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীজি নিজেই সকলের কাছে নির্লজ্জের মতো বলে দিয়েছিলেন যে, দ্রব্যমূল্য রোধ করার জন্য কেউ কোনও আলাদিনের যাদুর প্রত্যাশা যেন না করেন। এরকমই ছিল আপনাদের নেতাদের অসংবেদনশীলতা। আমাদের চিদম্বরমজি, যিনি সম্প্রতি অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন খবরের কাগজে বড় বড় লেখা লিখছেন, যখন তিনি সরকারে ছিলেন তখন কী করতেন? সেই সময় আপনাদের নেতারা কী করতেন? কী বলতেন? ২০১২ সালে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন যে, মানুষের ১৫ টাকা দামে জলের বোতল আর ২০ টাকা দামে আইসক্রিম কিনতে কষ্ট হয় না, কিন্তু গম আর চালে ১ টাকা বেড়ে গেলে তাঁরা সহ্য করতে পারেন না। এই ছিল আপনাদের নেতাদের বয়ান। অর্থাৎ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ওপর তাঁদের আচরণ কতটা অসংবেদনশীল ছিল। এটাই চিন্তার কারণ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দ্রব্যমূল্য দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত একটি বিষয়, আর আমাদের সরকার, এনডিএ সরকার প্রথমদিন থেকে সতর্ক এবং সংবেদনশীল থেকে এই বিষয়টিকে সুক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছে; আর সেজন্য আমাদের সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে আমাদের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের প্রাথমিক লক্ষ্য ধার্য করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১০০ বছরের সবচাইতে বড় মহামারী আমাদের এই কালখণ্ডে আসার পরও আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি যাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলির দাম আকাশছোঁয়া না হয়। সাধারণ মানুষের জন্য এই চেষ্টা করেছি। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরেও আজ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ করে, গরীবদের জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যেন সহ্যের সীমা পেরিয়ে না যায় তা সুনিশ্চিত করতে দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমরা কী করেছি, তা কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরলে নিজেরাই বুঝতে পারবেন। কংগ্রেস আমলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে ছিল, ১০ শতাংশেরও বেশি ছিল। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে ২০১৪ থেকে ২০২০-র মধ্যে এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছি যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে কম ছিল। করোনা থাকা সত্ত্বেও এ বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ, আর এর মধ্যেও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও কম। আপনারা নিজেদের সময়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে সাফাই গাইতেন। এমনিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসের রাজত্বে পণ্ডিত নেহরুজি লালকেল্লার প্রাকার থেকে কী বলেছিলেন তা আপনাদের একটু শোনাতে চাই। পণ্ডিত নেহরুজি, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলেন, দেখুন! আপনাদের ইচ্ছা ছিল না যে আমি পণ্ডিত নেহরুর নাম নিই? আপনাদের ক্ষোভ ছিল যে আমি পণ্ডিত নেহরু সম্পর্কে কিছু বলি না। আজ আমি বারবার বলতে চলেছি। আজ তো নেহরুজিই নেহরুজি। বারবার নাম নেব। আপনারা আজ মজা উপভোগ করুন। আজ আপনাদের নেতা অবশ্যই বলবেন – ‘মজা আ গয়া’!
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পণ্ডিত নেহরুজি লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলেন, চিন্তা করুন, সেই জমানায় তিনি কী বলেছিলেন। তখন এতটা গ্লোবালাইজেশনের ব্যাপার ছিল না। নামমাত্রও ছিল না। সেই সময় নেহরুজি লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশকে সম্বোধন করে কী বলেছিলেন? “কখনও কখনও কোরিয়ায় লড়াই হলেও আমাদের দেশে প্রভাব পড়ে। এসব কারণে বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যায়।” এটা ছিল পণ্ডিত নেহরুর বক্তব্য। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। কখনও কখনও কোরিয়ায় লড়াই হলেও তাঁর সময়ে ভারতে প্রভাব পড়ত, আর সেজন্য দেশে জিনিসের দাম বাড়ত, আর তা আমাদের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চলে যেত। দেশের সামনে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এভাবে হাত তুলে দিয়েছিলেন। তারপর কী বলেছিলেন? শুনুন! এটা আপনাদের কাজে লাগবে। তারপর বলেছিলেন, পণ্ডিত নেহরুজি তারপর বলেছিলেন, “যদি আমেরিকায় কিছু হয়, তাহলে তার প্রভাবে দেশে জিনিসের দাম বাড়ে।” ভাবুন! তখন মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা কতটা প্রবল ছিল যে, নেহরুজিকে লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশবাসীর সামনে হাত ওপরে তুলে দিতে হয়েছিল আর নেহরুজি তখন এই ধরনের সাফাই দিয়েছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আজ যদি কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকত তাহলে দেশের কী হত? দেশের ভাগ্য ভালো। দেশ বেঁচে উঠেছে। কিন্তু আজ যদি আপনারা ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে করোনার অ্যাকাউন্টে জমা করে নিজেদের কাপড় ঝেড়ে বেরিয়ে যেতেন আপনারা। কিন্তু আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে এই সমস্যাটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এর সমাধানের জন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করছি। আজ বিশ্বে আমেরিকা এবং ও ই সি ডি দেশগুলিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার হল ৭ শতাংশ, প্রায় ৭ শতাংশ। কিন্তু মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমরা কারোর দিকে আঙুল তুলে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে নই। আমরা সততার সঙ্গে চেষ্টা করা মানুষ, যাঁরা দায়িত্বের সঙ্গে দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে থেকে লড়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এই সভাকক্ষে দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য বড় বড় পরিসংখ্যান উচ্চারিত হয়েছে, কিন্তু তারপর ভুলে যাওয়াও হয়েছে। এই দেশের গরীব এতটা বিশ্বাসঘাতক নন। এই দেশের গরীব এতটা বিশ্বাসঘাতক নন যে কোনও সরকার যদি তাঁদের ভালোর জন্য কাজ করে থাকে, তাহলে তারপরও তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। এমনটি আমাদের দেশের গরীব মানুষের স্বভাব নয়। আপনাদের এই দুর্দশা এজন্য এসেছে, কারণ, আপনারা মনে করেছিলেন, শ্লোগান দিয়ে গরীবদের নিজেরদের জালে আটকে রাখবেন! কারণ, গরীবরা জেগে উঠেছেন, গরীবরা আপনাদের চিনে ফেলেছেন। এই দেশের গরীবরা এখন এতটাই জাগ্রত যে আপনাদের মাত্র ৪৪টি আসনে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন। ৪৪টি আসন দিয়ে আপনাদের থামিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেস ১৯৭১ সাল থেকেই ‘গরীবি হটাও’ এই শ্লোগান তুলে নির্বাচনে জিতে আসছে। কিন্তু ৪০ বছর চেষ্টা করেও তারা গরীবি হটাতে পারেনি। কিন্তু কংগ্রেস সরকার একটি নতুন পরিভাষা প্রদান করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের নবীন প্রজন্মের এসব কথা জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আপনি দেখুন, এঁরা তখনই ডিস্টার্ব করেন, যখন তাঁরা বুঝতে পারেন যে এবার আঘাত গভীর হতে চলেছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে, আজ সমস্যায় পড়ে গেছেন। কিছু মানুষ নিজেদের বক্তব্য শুনিয়ে পালিয়ে যান, আর এই বেচারাদের এসব শুনতে হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
৪০ বছর পর গরীবি তো হটেনি, কিন্তু গরীবরা কংগ্রেসকে হটিয়ে দিয়েছে আর কংগ্রেস কী করেছে … মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, কংগ্রেস দারিদ্র্যের পরিভাষা বদলে দিয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁরা এক ঝটকায় কাগজে চমৎকার দেখিয়েছেন, আর ১৭ কোটি গরীব মানুষকে ধনী বানিয়ে দিয়েছেন। এটা কিভাবে হল? এর প্রকৃত তথ্যও দেশের যুবকদের জানা উচিৎ। আমি আপনাদের উদাহরণ দিচ্ছি। আপনারা জানেন, আমাদের দেশে আগে রেলওয়েতে ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, থার্ড ক্লাস হত। ফার্স্ট ক্লাস কামরাগুলিতে দরজার পাশে একটি লাইন আঁকা থাকত। সেকেন্ড ক্লাস কামরায় দুটো লাইন আঁকা থাকত, আর থার্ড ক্লাস কামরায় তিনটি লাইন আঁকা থাকত। কংগ্রেসের মনে হয় যে থার্ড ক্লাসের মেসেজটা ঠিক নয়। তখন তাঁরা একটা লাইন সরিয়ে দেন। এটাই তাঁদের পদ্ধতি। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের মনে হয় দারিদ্র্য দূর হয়েছে, তাঁরা তাঁদের সমস্ত মৌলিক নিয়ম বদলে বলে দিলেন, ১৭ কোটি গরীবকে আর গোনা হবে না। এভাবে এই পরিসংখ্যান বদলানোর কাজ তাঁরা করে গেছেন। তাঁরা নিয়মিত করে গেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে কিছু তাত্ত্বিক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। আমি বোঝার অনেক চেষ্টা করেছি। কেউ কেউ হয়তো বুঝতেও পেরেছেন, কিন্তু আমি ভাই বুঝতে পারিনি। কিন্তু যাঁরা বুঝেছেন, আমি তাঁদের কাছ থেকেও বুঝতে প্রস্তুত। এমন এমন কিছু বিষয় তোলা হয়েছে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই সভাকক্ষে দেশ নিয়ে কথা বলা হয়েছে, আমি সে কথা শুনে অবাক হলাম, আমি নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য একটি কথা দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে চাই, আর আমি কোট করছি, “এই তথ্য অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে বাঙালি, মারাঠি, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া, অসমীয়া, কন্নড়, মালয়ালি, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পাঠান, কাশ্মীরি, রাজপুত এবং হিন্দুস্থানী ভাষাভাষি জনগণের বসতি দেশের বিশাল মধ্যভাগে কিভাবে হাজার হাজার বছর ধরে নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছে। তা সত্ত্বেও সবার গুণ-দোষ কম-বেশি একরকম। এই তথ্য পুরনো পরম্পরা এবং প্রস্তরলিপিগুলি থেকে পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এই সম্পূর্ণ সময়ে স্পষ্টভাবে এমন ভারতীয় হয়ে ওঠেন, যাঁদের ঐতিহ্য একই ছিল, আর তাঁদের নৈতিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যও একরকম ছিল।”
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমাদের ভারতীয়দের এই বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরার জন্য এই কোটেশনে দুটি শব্দ লক্ষ্য করার মতো। সেটা হল – ‘জাতীয় ঐতিহ্য’। এই উক্তিটি পণ্ডিত নেহরুজির। একথা পণ্ডিত নেহরুজি তাঁর লেখা বই – ‘ভারত কী খোঁজ’-এ লিখেছেন। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এক, আমাদের নৈতিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্য এক, এক রাষ্ট্র না হলে কী এটা সম্ভব? এই সভাকক্ষকে একথা বলে অপমান করা হয়েছে যে আমাদের সংবিধানে ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি নেই। সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি পড়া হয় না। এটা হতে পারে না। কংগ্রেস এই অপমান কেন করছে, তা নিয়ে আমি বিস্তারিতভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরব।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
‘রাষ্ট্র’ কোনও ক্ষমতা কিংবা সরকারের ব্যবস্থা নয়। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের জন্য ‘রাষ্ট্র’ একটি জীবিত আত্মা, আর সেজন্য হাজার হাজার বছর ধরে দেশবাসী পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, আর একসঙ্গে লড়াই করছেন। আমাদের দেশে বিষ্ণু পূরাণে বলা হয়েছে। এই কথাগুলি কোনও দলের কেউ লেখেননি। আমি বিষ্ণু পুরাণ থেকে বলছি। বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে –
“উত্তরম য়শ সমুদক্ষয় হিমাওয়রে চরূ দক্ষিণম
বর্ষতত ভারতম নাম ভারত য়ত্র সন্তিত।”
অর্থাৎ, সমুদ্রের উত্তরে আর হিমালয়ের দক্ষিণে যে দেশটি রয়েছে, তাকে ভারত বলা হয় আর তার সন্তানদের ভারতীয় বলা হয়। বিষ্ণু পুরাণের এই শ্লোক যদি কংগ্রেসের নেতারা স্বীকার না করেন, তাহলে আমি আরও একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করব, কারণ, কিছু ব্যাপারে তাঁদের এলার্জি থাকতে পারে। আমি উদ্ধৃত করতে চাই, নেহরুজিকেই উদ্ধৃত করছি। “একটা সময় আসে, কিন্তু ইতিহাসে খুব কমই আসে, যখন আমরা পুরাণ থেকে বেরিয়ে নতুন যুগে পা রাখি। যখন একটা যুগ সমাপ্ত হয়, যখন একটি দেশের দীর্ঘ সময়ের অবদমিত আত্মা মুক্ত হয়।” একথা যে নেহরুজি বললেন, এখানে তিনি কোন দেশের কথা, কোন জাতির কথা বলছিলেন? নেহরুজি একথা বলেছিলেন তো!
আর মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে তামিল সেন্টিমেন্টকে আগুন লাগানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনীতির জন্য কংগ্রেসের যে পরম্পরা, যেটা তাঁরা ইংরেজদের কাছ থেকে ঐতিহ্য হিসেবে নিয়েছেন, ‘ভাঙো আর রাজত্ব করো, বিভাজন করো আর রাজত্ব করো’। কিন্তু আমি আজ তামিল ভাষার মহাকবির উদ্ধৃতি দেব। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, তামিল ভাষার মহাকবি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী মাননীয় সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীজি লিখেছিলেন, আমি তাঁর কথাগুলি আবার উচ্চারণ করতে চাই। তামিলভাষী যাঁরা আমার কথা শুনছেন, তাঁরা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার উচ্চারণে যদি কোনও ভুল থেকে যায়, তাহলে ক্ষমা করবেন। কিন্তু আমার শ্রদ্ধা এবং সম্মানে কোনও ত্রুটি নেই। মহাকবি সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীজি বলেছিলেন –
“মনুম ইময়ে মলে এংগল মলে, পনরুম উপনিক নুলেংগল দুলে
পারমিসে এদোরু নুলইদহু পোলে, পনেরো ভারত নাদেংগন নাড়ে
পোডরু ওম ইতে ইম্মকিলেড়ে।”
এর অর্থ হল, যেটা আমি বুঝতে পেরেছি সেটা এরকম, মহাকবি সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীজি বলেছেন, যেটা তিনি তামিল ভাষায় বলেছেন, সেটা আমি যেভাবে বুঝেছি, তা নিজের মতো করে আমি অনুবাদ করে শোনাচ্ছি তা হল – “সম্মানিত যা কিছু, বিশ্বে মহিমা যার অনেক রয়েছে, অমর গ্রন্থ যা আমাদের সকলের, এই দেশটি হল উপনিষদের।” মহাকবি সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীজি বলছিলেন, “আমরা গাইব, আমরা সকলে এর যশগান করব, এটাই হল আমাদের সোনালী দেশ, আমাদের থেকে বিশ্বে সেরা কে আছে, এটাই আমাদের ভারত দেশ।” মহাকবি সুব্রহ্মনিয়ম ভারতীজির কবিতার বক্তব্য মোটামুটি এরকম। এটাই তার সারসংক্ষেপ। আমি আজ সমস্ত তামিলভাষী জনগণকে স্যালুট করতে চাই। যখন আমাদের সিডিএস রাওয়াত দক্ষিণ ভারতে হঠাৎ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন, আর যখন তাঁর পার্থিব শরীর তামিলনাড়ুতে বিমানবন্দরের দিকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আমার তামিল ভাইয়েরা, আমার তামিল বোনেরা, লক্ষ লক্ষ ভাই-বোনেরা ঘন্টার পর ঘন্টা পথের দু’পাশে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সামান্য খবর পাওয়ার অপেক্ষায় তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। যখন সিডিএস রাওয়াতের পার্থিব শরীর সেখান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন প্রত্যেক তামিল ভারতবাসী গর্বের সঙ্গে হাত ওপরে তুলে, চোখে জল নিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন – ‘বীর মনক্কম’। বীর মনক্কম’। এটা আমাদের দেশ। কিন্তু কংগ্রেস সর্বদাই এই বিষয়গুলি ঘৃণার চোখে দেখে। বিভাজনের মানসিকতা তাঁদের ডিএনএ-র মধ্যে থেকে গেছে। ইংরেজ চলে গেছে, কিন্তু তাঁদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি, তাঁদের ‘ভাগ করো আর রাজত্ব করো’ নীতিকে কংগ্রেস নিজেদের চরিত্রে রপ্ত করে নিয়েছে। সেজন্যই আজ কংগ্রেস ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর নেতৃত্ব দিচ্ছে, লিডার হয়ে উঠেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
গণতন্ত্রের যে প্রক্রিয়া, সেখানে আমাদের আটকাতে পারছে না। কিন্তু এখানে অনুশাসন ভেঙে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁরা নিশ্চিতই বিফল হবেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
কংগ্রেস পার্টির ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা এখন ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু যখন আর কিছু পাওয়ার নেই, তখন তাঁরা সব কিছু বিগড়ে দিতে চাইছেন। তাঁদের দর্শন আজ নিরাশাবাদী দর্শন। কিন্তু তাঁরা সেই লোভের বশবর্তী হয়ে অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলবেন। এই ভাবনা নিয়ে তাঁরা দেশে যে বীজ বপন করছেন তা নিঃসন্দেহে বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকড়গুলিকে আরও শক্তিশালী করবে। এই সভাকক্ষে তাঁরা এমন সব কথা বলছেন, যাতে দেশের কিছু মানুষকে উস্কানোর প্রবল চেষ্টা করা হয়েছে। যদি কংগ্রেসের গত সাত বছরের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ, সমস্ত গতিবিধি সুক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখেন, তাহলে প্রতিটি ক্রিয়াকলাপকে একটি সুতোর মালায় গাঁথেন, তাহলে দেখবেন, ‘গেমপ্ল্যান’ কী, সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন, আর আজ আমি সেটা খোলসা করছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
তাঁদের ‘গেমপ্ল্যান’ যাই থাকুক না কেন, এরকম অনেক মানুষ এসেছেন, আর চলে গেছেন। অনেক চেষ্টা করেছেন, নিজেদের স্বার্থে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই দেশ অজর-অমর। এই দেশের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। যাঁরা এ দেশের কোনও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে বা আক্রমণ করেছে, তাঁদেরকেই সব সময় কিছু না কিছু হারাতে হয়েছে। এই দেশ এক ছিল, এই দেশ এক থাকবে। এই দেশ শ্রেষ্ঠ ছিল, এই দেশ শ্রেষ্ঠ থাকবে। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
এখানে যে আমি কর্তব্য নিয়ে কথা বলি তা নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। আমার এই মানুষের মধ্যে কর্তব্যবোধ জাগানোর চেষ্টা দেখে তাঁদের অনেক কষ্ট হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তব্য নিয়ে কথা বলবেন কেন? অথচ, তিনি খালি কর্তব্যের কথা বলেন। কোনও বক্তব্যকে না বুঝে কিংবা অসৎ উদ্দেশ্যে একে বিকৃত করে দেওয়া, এটা নিয়ে বিবাদ তৈরি করা যাতে নিজেরা লাইমলাইটে থাকতে পারেন। আমি অবাক যে হঠাৎ করে কংগ্রেস এখন কর্তব্য নিয়ে কথা বললেও কষ্ট পায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আপনারা শুধু বলতেন যে, মোদীজি নেহরুর নাম নেন না। আজকে আমি আপনাদের সেই ইচ্ছা পূরণ করছি। আপনাদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছি। দেখুন, কর্তব্য নিয়ে আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুজি কী বলেছিলেন। আমি আপনাদেরকে তাঁর লেখা থেকে উদ্ধৃতি শোনাচ্ছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
পণ্ডিত নেহরুজি, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, তিনি বলেছিলেন – “আমি আপনাদেরকে আবার বলছি যে ভারত স্বাধীন দেশ। স্বাধীন ভারতের জন্মবার্ষিকী আমরা পালন করি, কিন্তু স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বও থাকে, আর কর্তব্যও থাকে। এই কর্তব্যেরই অপর নাম হল দায়িত্ব।” সেজন্য কেউ না বুঝলে আমি তাঁকে বুঝিয়ে দিতে পারব। কর্তব্যের অপর নামই দায়িত্ব। এখন দেখুন, এটা পণ্ডিত নেহরুজির উদ্ধৃতি। তিনি আরও বলেছেন – “আমি আপনাদেরকে আবার বলছি যে ভারত স্বাধীন দেশ। স্বাধীন ভারতের জন্মবার্ষিকী আমরা পালন করি, কিন্তু স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বও থাকে, আর কর্তব্যও থাকে। এই কর্তব্যেরই অপর নাম হল দায়িত্ব। দায়িত্ব, কর্তব্যই শুধু শাসন নয়। দায়িত্ব প্রত্যেক স্বাধীন মানুষের থাকে, আর যদি আপনারা সেই দায়িত্ব অনুভব না করেন, যদি আপনারা না বোঝেন, তাহলে সম্পূর্ণ রূপে আপনারা স্বাধীনতার মানে বুঝতে পারেননি, আর আপনারা স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ রূপে বাঁচাতেও পারবেন না।” এটাই ছিল কর্তব্য সম্পর্কে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুজির বক্তব্য। কিন্তু আপনারা সেটাও ভুলে গেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি এই সভাকক্ষের বেশি সময় নিতে চাই না, আর ওনারাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“ক্ষণশঃ কণশঃ শ্চৈব বিদ্যামর্থং চ সাধয়েত।
ক্ষণে নষ্টে কুতো বিদ্যা পণে নষ্টে কুতো ধনম।।”
অর্থাৎ, বিদ্যা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য এক একটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়। সম্পত্তি ও সম্পদের জন্য এক একটি কণা প্রয়োজনীয় হয়। এক একটি ক্ষণ নষ্ট করে জ্ঞান অর্জন করা যায় না, আর এক একটি কণা নষ্ট করলে, ছোট ছোট সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার না করলে সম্পদও ব্যর্থ হয়ে পড়ে। আমি কংগ্রেস এবং তার সহযোগীদের বলব, আপনারা আমার কথাগুলি নিয়ে একটু অবশ্যই ভাববেন। আপনারা ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণটিকে নষ্ট করছেন না তো? আমাকে শোনানোর জন্য, আমার সমালোচনা করার জন্য, আমার দলকে শাপশাপান্ত করার জন্য অনেক কিছু আছে। আপনারা তা বলতে পারেন। ভবিষ্যতেও বলবেন। সুযোগ অনেক আসবে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার অমৃতকালের এই সময়ে, ৭৫ বর্ষপূর্তির এই সময়ে ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় ইতিবাচক অবদান রাখার সময় নষ্ট করবেন না। আমি বিরোধী পক্ষকে এবং এখানে বসে থাকা সমস্ত বন্ধুদের আর এই সভাকক্ষের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে, এই শুভ উদযাপন নিয়ে অনুরোধ জানাই। নিবেদন করছি, প্রত্যাশা রাখছি যে, আপনারা সবাই এগিয়ে আসবেন স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে আমরা নতুন সঙ্কল্প নিয়ে, আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্প নিয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজে লেগে পড়ব। আমরা চেষ্টা করি, বিগত ৭৫ বছরে যে যে ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি রয়েছে, সেগুলি যেন পূরণ করা যায়, আর আগামী ২০৪৭-এর শতবর্ষ পালনের আগে দেশকে কিভাবে গড়ে তুলতে চাই, তার সঙ্কল্প নিয়ে আমরা যেন এগিয়ে যাই। দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের সবাইকে মিলে-মিশে কাজ করতে হবে। রাজনীতি নিজের জায়গায় থাকবে। আমরা দলগত ভাবনা থেকে ওপরে উঠে দেশের ভাবনা নিয়ে যেন বেঁচে থাকি। নির্বাচনের ময়দানে যা কিছু করতে হবে, সেটা করে যান। কিন্ত আমাদের প্রত্যেককে দেশের কল্যাণে এগিয়ে থাকতে হবে। এই প্রতীক্ষায় রয়েছি। স্বাধীনতার শতবর্ষ যখন হবে, সেই সময়ে এই সভায় যাঁরা বসে থাকবেন, তাঁরা অবশ্যই আলোচনা করবেন যে, এমন শক্তিশালী ভিত্তির ওপরই এমন প্রগতি সম্ভব হবে। দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির সেই উপলক্ষের দিকে যাত্রা করার পর দেশের শাসন ক্ষমতা যেন এমন লোকেদের হাতে ন্যস্ত থাকে, যাতে তাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকেন। আমাদের এটাই ভাবতে হবে, যে সময় আমরা পেয়েছি, তার যেন আমরা সদ্ব্যবহার করি, আমাদের সোনালী ভারতের নির্মাণে আমরা যেন কোনও ত্রুটি না থাকতে দিই। সম্পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে আমাদের সেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
আমি আরও একবার রাষ্ট্রপতিজিকে তাঁর উদ্বোধনী ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাবকে অনুমোদন করছি, আর আমি এই সভাকক্ষের চর্চায় অংশগ্রহণের জন্য, নিজেদের মতামত দিয়ে, নিজেদের ভাবনাচিন্তার কথা তুলে ধরার জন্য সমস্ত মাননীয় সাংসদদের আরও একবার ধন্যবাদ জানিয়ে, আপনি আমাকে যে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছেন, এত বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা সত্ত্বেও আমি যে সমস্ত বিষয় স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি, আমি যে বলতে পেরেছি, সেজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।