এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেট প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মন্তব্য করেন যে, ২০২৩ – এর কেন্দ্রীয় বাজেটটি এক কথায় ঐতিহাসিক। কারণ, এবারের বাজেট প্রস্তাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত স্তরের মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র, কৃষক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্বপ্নকে সফল করে তুলতে এই বাজেট যে বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে, এ সম্পর্কে তিনি আশাবাদী। ২০২৩ – এর বাজেট প্রস্তাবের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমনজীকে অভিনন্দিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, দেশের যে কোটি কোটি বিশ্বকর্মা কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দেশ গঠনের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষ করে তোলারও ব্যবস্থা রয়েছে এ বছরের বাজেটে। শুধু তাই নয়, ঋণ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং উৎপাদিত পণ্যের বিপণন ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব রয়েছে এই ঐতিহাসিক বাজেটে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা কৌশল সম্মান অর্থাৎ ‘পিএম বিকাশ’ কোটি কোটি বিশ্বকর্মার জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে চলেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, শহর তথা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মহিলা, যাঁরা বাণিজ্যিক কাজকর্ম, ঘর-গৃহস্থালীর কাজ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জল জীবন মিশন, উজ্জ্বলা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি উদ্যোগ ও কর্মসূচিকে আগামী দিনে আরও নতুন নতুন শক্তি ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি হ’ল দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা ভারতের সমাজ জীবনে বর্তমানে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। তাঁদের দিকেও যদি আমরা সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি, তা হলে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্পও চালু হতে চলেছে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরটিতে। জন ধন অ্যাকাউন্টের পর এটি হ’ল আরেকটি বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প, যা গৃহবধূ, জননী এবং বোনেদের জীবনকে বিশেষভাবে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট দেশের সমবায় সমিতিগুলিকে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অনুঘটক করে তুলবে বলে সরকার আশাবাদী। দেশের সমবায় ক্ষেত্রে খাদ্যের বৃহত্তম মজুত ভান্ডারও গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আরও নতুন নতুন সমবায় সমিতি গড়ে তোলারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। এর ফলে, কৃষি কাজের পাশাপাশি, দুধ উৎপাদন ও মৎস্য চাষের মতো জীবিকাগুলিকে তা নতুনভাবে শক্তি যোগাবে। উৎপাদিত পণ্যের জন্য আরও ভালো দাম পাবেন দেশের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীরা।
শ্রী মোদী তাঁর বক্তব্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের প্রসার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, কৃষি ক্ষেত্রেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনকে আরও বেশি মাত্রায় উৎসাহিত করা হবে। এই কারণে ডিজিটাল কৃষি পরিকাঠামো গড়ে তোলার এক বড় ধরনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি ঘোষিত কেন্দ্রীয় বাজেটে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ উদযাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে বিভিন্ন ধরনের বাজরা শস্য রয়েছে, যার ব্যাপক উৎপাদন সাধারণ মানুষের উন্নততর পুষ্টি বিধান ছাড়াও ক্ষুদ্র কৃষকদের বাজরার উৎপাদন ও বিপণন প্রচেষ্টায় বিশেষভাবে সাহায্য করবে। বিশেষ খাদ্যমান যুক্ত এই শস্যটি এই কারণেই ‘শ্রী অন্ন’ বলে সম্প্রতি সংজ্ঞায়িত হয়েছে। এর উৎপাদন প্রচেষ্টায় গ্রামাঞ্চলের আদিবাসী ভাই-বোনেরা যুক্ত থাকার ফলে তাঁদেরও আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে সরকার মনে করে।
পরিবেশ অনুকূল উন্নয়ন ও অগ্রগতি, সবুজ অর্থনীতি তথা পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানীর উৎপাদন তথা বিপণন প্রচেষ্টাকে বিশেষভাবে উৎসাহদানেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন যে, প্রযুক্তি ও নতুন অর্থনীতির উপর আমরা আরও জোর দিয়েছি। এর ফলে, রেল, সড়ক, বন্দর ও জলপথে আগামী প্রজন্মের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে উঠতে চলেছে পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে। ২০১৪’র তুলনায় পরিকাঠামো খাতে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০০ শতাংশের বেশি। ১০ লক্ষ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করে তুলবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্পগুলির জন্য অতিরিক্ত ঋণ গ্যারান্টি হিসাবে ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে, এই ধরনের শিল্প ক্ষেত্রেও বিশেষ উৎসাহ সঞ্চারিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে পরিবর্তনশীল বর্তমান ভারতের উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে তাঁরা ওতপ্রতোভাবে জড়িত। এবারের বাজেটে তাঁদেরও স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের যুবশক্তিও বর্তমানে কোনও দিক থেকে পিছিয়ে নেই। তাঁদেরও নতুনভাবে ক্ষমতায়নে গত কয়েক বছর ধরে সরকার বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এইভাবেই দেশবাসীর জীবনযাত্রাকে সহজতর করে তুলতে উদ্যোগী কেন্দ্রের বর্তমান সরকার।
নতুন কর প্রস্তাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কর কাঠামোকে আমরা এখন আরও সরল করে তুলেছি। করের হার যেমন অনেকটাই হ্রাস করা হয়েছে, একই সঙ্গে তাতে স্বচ্ছতাও নিয়ে আসা হয়েছে। সরকার বরাবরই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে। এই লক্ষ্যেই করের ক্ষেত্রেও বিপুল ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে এ বছরের বাজেটে। এজন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলাজী এবং তাঁর টিমকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী পরিশেষে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, নতুন বাজেট ঘোষণার পথ অনুসরণ করে এবং নতুন নতুন সংকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আপনারা সকলে এগিয়ে চলুন, যাতে আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে আমরা নিশ্চিতভাবেই এক উন্নত তথা সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার কাজে সফল হতে পারি।