এই বৈঠকে সমস্ত বন্ধুরা যে বক্তব্য রেখেছেন, যে অভিজ্ঞতাগুলির কথা বলেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনাদের মনেও সেই ভাবনা রয়েছে যে আপনার রাজ্য, আপনার জেলা, আপনার এলাকা যেন দ্রুত এই সঙ্কট থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এই দীপাবলির উৎসবে আমি মুখ্যমন্ত্রীদের ব্যস্ততা বুঝতে পারি। তারপরেও সমস্ত সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তাঁরা সময় বের করে আমাদের সঙ্গে বসেছেন। এটা সত্যি যে আমি জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম, আমি মুখ্যমন্ত্রীদের বিরক্ত করতে চাইছিলাম না, কিন্তু এটা একটা দায়বদ্ধতা। মুখ্যমন্ত্রীদের হৃদয়েও তাঁদের রাজ্যে ১০০ শতাংশ টিকাকরণের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেজন্য প্রত্যেক সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রী আজ আমাদের সঙ্গে বসেছেন আর তাঁদের উপস্থিতিতেই আমাদের জেলার আধিকারিকরা একটি নতুন বিশ্বাস, নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নতুন শক্তি যুগিয়েছেন। আমার জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সেজন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, তাঁরা এই বৈঠককে এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, আর উৎসবের দিনেও আমাদের সঙ্গে বসেছেন।
আমি অন্তর থেকে সমস্ত সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ যে আলোচনা হয়েছে, এখন মুখ্যমন্ত্রীদের আশীর্বাদ পেয়ে এই কর্মযজ্ঞ অনেক দ্রুতগতিতে ত্বরান্বিত হবে এবং আমরা পরিণাম দেখতে পাব। আমি বলতে চাই, আজ পর্যন্ত যতটা উন্নতি আমরা করেছি, তা সবই আপনাদের পরিশ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। আজ সমস্ত জেলা, সব গ্রাম, ছোট, বড় সমস্ত আধিকারিক, আমাদের আশা কর্মী – তাঁরা কতটা পরিশ্রম করেছেন, কত দূর দূর এলাকায় পায়ে হেঁটে তবেই গিয়ে মানুষকে টিকা দিয়েছেন। কিন্তু ১০০ কোটির পর আমরা যদি একটুও ঢিলে দিই, তাহলে নতুন সঙ্কট আসতে পারে। আর সেজন্য আমাদের দেশে বলে – রোগ এবং শত্রুকে কখনও ছোট করে দেখা উচিৎ নয়, তাদের শেষ দেখে ছাড়তে হয়। সেজন্য আমি চাই যে আমাদের সামান্যতম ঢিলেমি দিলে চলবে না।
বন্ধুগণ,
১০০ বছরের সবচাইতে বড় এই মহামারীর সময় দেশ অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে দেশের লড়াইয়ে একটি বিশেষত্ব হল যে আমরা নতুন নতুন সমাধান খুঁজেছি, উদ্ভাবক পদ্ধতিতে সমাধানের চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক এলাকার মানুষ নিজেদের মাথা থেকে নতুন নতুন বিষয় বের করেছেন। আপনাদেরকেও নিজেদের জেলায় টিকাকরণ বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবক পদ্ধতিতে আরও বেশি কাজ করতে হবে। নতুন পদ্ধতি, নতুন উৎসাহ, নতুন প্রযুক্তি এই অভিযানে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে থাকবে। আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে, যে রাজ্যগুলি ১০০ শতাংশ প্রথম ডোজের লক্ষ্য পূরণ করেছে, তাদেরকেও অনেক জায়গায় নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোথাও ভৌগোলিক প্রতিকূলতা, কোথাও সম্পদ ও সরঞ্জামের সমস্যা। কিন্তু সেই জেলাগুলি এই প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই এগিয়ে গেছে। টিকাকরণের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের রয়েছে। আমরা অনেক কিছু শিখেছি, এবং একটি অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করা যেতে পারে - এটা আমাদের ছোট ছোট আশা কর্মীরাও শিখে নিয়েছেন। এখন আপনাদের মাইক্রো-স্ট্র্যাটেজি বানিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমরা রাজ্যের হিসাব, জেলার হিসাব ভুলে যাব। আমাদের প্রত্যেক গ্রাম, প্রতিটি পাড়ায় খোঁজ নিতে হবে। যদি কোথাও চার ঘর বাকি থেকে থাকে, তাহলে আমাদের আলাদাভাবে ওই চারটি বাড়ির জন্য যেতে হবে, আর লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। যেখানে যত ধরনের ত্রুটি রয়েছে সেগুলি দ্রুত দূর করতে হবে। যেমন, একটু আগেই আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে স্পেশাল ক্যাম্প চালু করার প্রসঙ্গ উঠেছিল। এটা খুবই ভালো ভাবনা। আপনাদের জেলাগুলিতে এক একটি গ্রাম, এক একটি জনপদের জন্য যদি ভিন্ন ভিন্ন রণনীতি নিতে হয়, তাহলে তাই করুন! আপনাদের এলাকার হিসেবে ২০-২৫ জনের টিম বানিয়েও এরকম করতে পারেন। আপনারা ইতিমধ্যেই যে টিমগুলি বানিয়েছেন, সেগুলির মধ্যে যেন একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা থাকে। এর চেষ্টাও আমরা করতে পারি। আমাদের এনসিসি-এনএসএস-এর যে যুব বন্ধুরা রয়েছেন, আপনারা তাঁদের থেকে যত বেশি সংখ্যক সাহায্য নিতে পারেন। আপনারা নিজের নিজের জেলায় এলাকা-ভিত্তিক টাইম-টেবিল চালু করতে পারেন। আপনাদের স্থানীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আমি তৃণমূলস্তরে আমাদের সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, যে মহিলা আধিকারিকরা টিকাকরণ অভিযানে যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা আপ্রাণ পরিশ্রম করছেন এবং ভালো সাফল্য পেয়েছেন। আমাদের সরকারের মহিলা কর্মীরা, এমনকি মহিলা পুলিশকেও কখনও কখনও ৫-৭ দিনের জন্য এই কাজে নিয়ে যান। আপনারা দেখবেন দ্রুত পরিণাম পাবেন। আপনাদের জেলাগুলি যত দ্রুত জাতীয় গড়ের কাছাকাছি পৌঁছবে, ততই আপনাদের অভিযানের গতি যেন ত্বরান্বিত হতে থাকে, আর এক সময় আপনাদের এই জাতীয় গড়ের থেকেও দ্রুত এগোনোর লক্ষ্যে সমস্ত শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি জানি যে আপনাদের সামনে নানারকম গুজব এবং মানুষের মনে নানা ধরনের ভ্রম ছড়ানোর পরিস্থিতিও রয়েছে। আমরা যত এগিয়ে যাব, ততই আমাদের সামনে এই সমস্যাসম্পন্ন নির্দিষ্ট এলাকাগুলি স্পষ্ট হবে। আমাদের কথোপকথনের সময়েই আপনাদের মধ্যে কয়েকজন এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এর একটি বড় সমাধান হল জনগণকে বেশি করে সচেতন করতে হবে। আপনারা এই অভিযানে স্থানীয় ধর্মগুরুদেরকেও যুক্ত করুন, তাঁদের সাহায্য নিন। প্রত্যেক বাড়িতে সংশ্লিষ্ট ধর্মগুরুদেরকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করুন। ধর্মগুরুরা যাতে তাঁদের শিষ্যদের বোঝান, সেজন্য আপনারা চেষ্টা করুন। এলাকা বড় হলে, তাঁদের মুখ দিয়ে ২-৩ মিনিটের ভিডিও তৈরি করে সেই ভিডিওগুলিকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এলাকার ফোনে ফোনে ছড়িয়ে দিয়ে ভাইরাল করুন, জনপ্রিয় করুন। আমি তো প্রায়ই ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ও মতের গুরুদের সঙ্গে দেখা করি। আমি গোড়া থেকেই সমস্ত ধর্মগুরুদের সঙ্গে কথা বলে এ কাজে তাঁদের সাহায্যের আবেদন রেখেছি। সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, কেউ বিরোধিতা করেননি। এই তো দু’দিন আগেই ভ্যাটিক্যান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। টিকাকরণ নিয়ে ধর্মগুরুদের বার্তাকেও আমরা জনগণের কাছে গুরুত্ব দিয়ে পৌঁছে দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের জেলাগুলিতে বসবাসকারী মানুষের সাহায্যের জন্য, তাঁদেরকে প্রেরণা যোগানোর জন্য টিকাকরণ অভিযানকে এখন প্রত্যেক বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। প্রত্যেক বাড়িতে কড়া নেড়ে তাঁদেরকে খুঁজে বের করুন, যাঁরা এখনও সম্পূর্ণ সুরক্ষা কবচ পাননি। এতদিন পর্যন্ত আপনারা সবাইকে টিকাকরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া এবং তাঁদের নিরাপদ টিকাকরণের ব্যবস্থা করেছেন। এখন ‘প্রত্যেক বাড়িতে টিকা, বাড়িতে বাড়িতে টিকা’ – এই উদ্দীপনা আমাদের প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
এই অভিযানের সাফল্যের খাতিরে আমাদের যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তি থেকে শুরু করে আপনাদের সামাজিক পরিকাঠামোকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের কাছে দেশের অনেক রাজ্যে, অনেক জেলায় এমন মডেল রয়েছে, যেগুলিকে দূরদুরান্তের গ্রাম থেকে শুরু করে শহরগুলিতে ১০০ শতাংশ টিকাকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সামাজিক কিংবা ভৌগোলিক পরিস্থিতির হিসেবে যে মডেল আপনাদের জন্য কিংবা বিশেষ কোনও অঞ্চলের জন্য অনুকূল হবে, সেটাকেই আপনারা বেছে নিন। আরেকটি কাজ আপনারা করতে পারেন। আপনাদের সহযোগীরা ও বন্ধুরা অন্যান্য জেলায় যে দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণ অভিযান চালিয়েছেন, এমনও হতে পারে যে আপনারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাঁরাও এই ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আপনারা তাঁদের কাছ থেকেও জানুন যে কিভাবে তাঁরা টিকাকরণের গতি বাড়িয়েছিলেন, কিভাবে তাঁরা সমস্যাগুলির সমাধান করেছিলেন। কোন ধরনের নতুন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বললেও আপনাদের জেলায় অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। যদি তাঁরা নিজের জেলায় উদ্ভাবক কিছু করে থাকেন, কিছু ভালো উপায় বের করে থাকেন যেটা আপনার জেলার পরিস্থিতির অনুকূল, তাহলে আপনারাও সেটাকে আপন করে নিতে পারেন। আমাদের যত আদিবাসী-বনবাসী বন্ধুরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য টিকাকরণ অভিযানকে আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে স্থানীয় নেতৃত্ব এবং অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা একটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের কিছু দিনও ঠিক করতে হবে। যেমন সামনেই রয়েছে বিরসা মুন্ডাজির জন্মজয়ন্তী। বিরসা মুন্ডাজির জয়ন্তীর আগে গোটা আদিবাসী এলাকায় এমন আবহ সৃষ্টি করুন, মানুষকে বলুন যে আমরা বিরসা মুন্ডাজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি রূপে এবার টিকাকরণ অভিযান চালাব। এ ধরনের কিছু আবেগপ্রবণ বিষয়ের সঙ্গে যদি আমরা যুক্ত হই, তাহলে আমার মতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ টিকাকরণের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় সাফল্য পাব। টিকাকরণের সঙ্গে যুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমরা যতটা সরল করে তুলতে পারব, স্থানীয় ভাষায় যত বেশি কথা বলব, ততই সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। আমি দেখেছি যে অনেকেই এই বিষয় নিয়ে গান বানিয়েছেন। গ্রামীণ ভাষায় সেই গানগুলি গাইতে গাইতে টিকাকরণের কথাও বলছেন। এর মাধ্যমে উন্নত পরিণাম অবশ্যই আসবে।
বন্ধুগণ,
প্রত্যেক বাড়িতে কড়া নাড়ার সময় প্রথম ডোজের পাশাপাশি আপনাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ, যখনই সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে, তখন অনেক সময় ‘আর্জেন্সি’র ভাবনাটাও হ্রাস পায়। মানুষের মনে হয়, এত তাড়ার কী আছে? টিকা নিয়ে নেবখন! আমার মনে আছে, যেদিন আমরা ১০০ কোটি অতিক্রম করলাম, সেদিন আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে এরকম এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁকে আমি জিজ্ঞাসা করি যে এতদিন কেন টিকা নেননি? তিনি বলতে শুরু করেন যে আমি তো পালোয়ান, আমার মনে যখনই এই বিষয়টা এসেছে তখন ভেবেছি কিসের প্রয়োজন? কিন্তু এখন যখন ১০০ কোটি হয়ে গেছে, তখন আমার মনে হয় যে টিকা না নিলে আমাকে সবাই অচ্ছূৎ ভাববে, মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে!
আমি বলতে চাই যে আমাদের কোনও পরিস্থিতিতেই মানুষের ভাবনাচিন্তাকে শ্লথ হতে দিলে চলবে না। এই ভাবনার কারণেই বিশ্বের অনেক দেশে… আপনারা দেখুন, ভালো ভালো সমৃদ্ধ দেশেও আরেকবার করোনার কামড় চিন্তার সৃষ্টি করেছে। আমাদের মতো দেশের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি, আমরা একে স্বীকার করতে পারব না, আমরা সহ্যও করতে পারব না। সেজন্য টিকার উভয় ডোজ নির্ধারিত সময়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনাদের এলাকার যে নাগরিকদের এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় সম্পূর্ণ হওয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাঁদেরকেও আপনাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যোগাযোগ রাখতে হবে, নির্ধারিত দিনে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দিতেই হবে।
বন্ধুগণ,
‘সবাইকে টিকা, বিনামূল্যে টিকা’ অভিযানের মাধ্যমে আমরা একদিনে প্রায় ২.৫ কোটি টিকার ডোজ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা আমাদের শক্তি অনুভব করেছি। এ থেকে বোঝা যায় যে আমাদের সামর্থ্য কতটা। টিকাকে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে সরবরাহ শৃঙ্খল নেটওয়ার্কের প্রয়োজন, তা এখন প্রস্তুত। এ মাসে কত টিকা উৎপাদিত হবে তার বিস্তারিত তথ্যও প্রত্যেক রাজ্যকে অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। সেজন্য আপনারা নিজের নিজের সুবিধা অনুসারে এ মাসের জন্য নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। আমি আরেকবার বলছি, এ বছর ১০০ কোটি ডোজের পর দীপাবলি পালনের উদ্দীপনা এসেছে। আমাদের নতুন লক্ষ্য পার করে ক্রিস্টমাসও অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করতে হবে আর এই মেজাজ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
অবশেষে আমি আপনাদের মতো সকল বন্ধুকে একটি কথা মনে করাতে চাই। আপনারা সেদিনের কথা ভাবুন, যে দিনটি আপনাদের সরকারি চাকরিতে প্রথমদিন ছিল। আমি সমস্ত জেলা আধিকারিকদের প্রতি, তাঁদের সঙ্গে বসে থাকা টিমগুলির সকলকেও অন্তর থেকে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা কল্পনা করুন, যেদিন আপনাদের প্রথম ডিউটি ছিল বা যেদিন আপনারা মুসৌরি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তখন আপনাদের মনে কোন ভাবনা-চিন্তাগুলি ভরে ছিল। আপনাদের উদ্দীপনা কেমন ছিল? কোন স্বপ্ন দেখছিলেন! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের প্রত্যেকের মনেই এই ইচ্ছা ছিল যে আপনারা কিছু ভালো কাজ করবেন, আর কিছু করবেন না। সমাজের জন্য আপ্রাণ পরিশ্রম করবেন।
আপনারা আরেকবার সেই স্বপ্নগুলির কথা ভাবুন, সেই সঙ্কল্পগুলি মনে করুন। তারপর ঠিক করুন যে সমাজে যাঁরা পিছিয়ে রয়েছে, যাঁরা বঞ্চিত, তাঁদের জন্য জীবন সমর্পণ করার এর থেকে বড় সুযোগ আর হতে পারে না। এই ভাবনার কথা মনে করে আপনারা লেগে পড়ুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অত্যন্ত দ্রুত আপনাদের জেলাগুলিতে টিকাকরণের গতি বাড়বে। আসুন, প্রত্যেক বাড়িতে দরজার কড়া নাড়ি, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিকা অভিযানকে আমরা সাফল্যমণ্ডিত করি। আজ দেশের যত মানুষ আমাকে শুনছেন, আপনাদেরকেও আহ্বান জানাই, আপনারাও এগিয়ে আসুন। আপনারা নিজেরা যদি টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে খুব ভালো কথা, কিন্তু আপনারা অন্যদের টিকা প্রদানের জন্যও পরিশ্রম করুন। ঠিক করুন যে প্রত্যেকদিন পাঁচজন, দশজন কিংবা দু’জনকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করবেন। এটা মানবতার কাজ, এটা ভারতমাতার সেবার কাজ, ১৩০ কোটি দেশবাসীর কল্যাণের কাজ। আপনারাও এগিয়ে আসুন। আপনারা টিকা নিয়েছেন খুব ভালো কথা। আমরা যদি চেষ্টা করি, এবারে আমাদের দীপাবলি এই সঙ্কল্পগুলির দীপাবলি হয়ে উঠতে পারে।
আমরা সবাই স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি পালন করছি। এই স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি যেন আনন্দে ভরে ওঠে, আত্মবিশ্বাসে ভরে ওঠে, একটি নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ভরে ওঠে তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের আর খুব কম সময়ের মধ্যেই এই পরিশ্রম করতে হবে। আপনাদের সকলের ওপর আমার ভরসা আছে। আপনাদের মতো নবীন টিমের ওপর আমার ভরসা আছে, আর সেজন্য আমি জেনেশুনে বিদেশ থেকে ফিরেই দেশের এই টিকার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদেরও এই বৈঠকে উপস্থিত থাকা এটা প্রমাণ করে যে আমাদের এই বৈঠকটির গুরুত্ব কত বেশি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীরাও এটা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমি সমস্ত সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। নমস্কার!