এই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী নির্মলা সীতারমনজি, পীযূষ গোয়েলজি, ডঃ হর্ষ বর্ধনজি, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজার বিজয় রাঘবনজি, কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-এর ডায়রেক্টর জেনারেল শেখর মান্ডেজি, সমস্ত বৈজ্ঞানিক, শিল্পোদ্যোগ এবং শিক্ষা জগতের সম্মানিত প্রতিনিধি ও বন্ধুগণ!
সিএসআইআর-এর আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারী গোটা বিশ্বের সামনে এই শতাব্দীর সবচাইতে বড় সমস্যা হয়ে উঠে এসেছে। কিন্তু ইতিহাস একথার সাক্ষী, যখনই মানবতার ওপর কোনও সঙ্কট এসেছে, বিজ্ঞান আরও উন্নত ভবিষ্যতের পথ প্রস্তুত করেছে।
সঙ্কটের সমাধান এবং সম্ভাবনাকে খুঁজে বের করা, একটি নতুন সামর্থ্য সৃজন করা, এটাই তো বিজ্ঞানের ভিত্তি ও মৌলিক চরিত্র। এই কাজ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্ব এবং ভারতের বৈজ্ঞানিকরা করে আসছেন। এই কাজ তাঁরা আজ আরেকবার করছেন। কোনও ভাবনাকে তত্ত্বে পরিণত করা, গবেষণাগারে তা হাতে-কলমে পরীক্ষা করা, আর অবশেষে বাস্তবায়িত করে সমাজকে উপহার দেওয়া, এ কাজ বিগত দেড় বছর ধরে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা যে মাত্রা ও গতিতে সম্পন্ন করেছেন তা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে। মানবতাকে এতবড় বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করার জন্য এক বছরের মধ্যে টিকা আবিষ্কার করে মানুষকে টিকাকরণ করার এতবড় কাজ সম্ভবত ইতিহাসে প্রথমবার হয়েছে
বিগত শতাব্দীর অভিজ্ঞতা অনুসারে যখনই কোনও গবেষণা বিশ্বের অন্যান্য দেশে হয়েছে, তখন ভারতকে তার সুফল পেতে অনেক অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরা অন্যান্য দেশের বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানবজাতির সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। ততটাই দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা এক বছরের মধ্যেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনা টিকা উৎপাদন করেছেন আর দেশবাসীর কাছে পৌঁছেও দিয়েছেন। এক বছরের মধ্যেই আমাদের বৈজ্ঞানিকরা কোভিড টেস্টিং কিটস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলেছেন। এত কম সময়ের মধ্যেই আমাদের বৈজ্ঞানিকরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপযোগী অনেক নতুন নতুন কার্যকরি ওষুধের খোঁজ করেছেন। অক্সিজেন উৎপাদনের গতি বৃদ্ধির পথ খুঁজেছেন। আপনাদের এই অবদানের ফলে এই অসাধারণ প্রতিভার ফলে দেশ এতবড় লড়াই সাফল্যের সঙ্গে লড়ছে। সিএসআইআর-এর বৈজ্ঞানিকরাও এই সময়কালে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। আমি আপনাদের সবাইকে, সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে, আমাদের শিল্প জগতকে সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ,
যে কোনও দেশে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ততটাই উচ্চতা স্পর্শ করে যতটা উন্নতভাবে তাকে শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে, বাজারের মাধ্যমে পরিবেশন করা যায়। এর কো-অর্ডিনেশন যত ভালো হয়, এর ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থা যত ভালো হয়, তত দ্রুত এই কাজ সম্পন্ন হয়। আমাদের দেশে সিএসআইআর বিজ্ঞান, সমাজ এবং শিল্পোদ্যোগের মধ্যে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। আমাদের এই সংস্থা দেশকে অসংখ্য প্রতিভা উপহার দিয়েছে, অনেক বৈজ্ঞানিক উপহার দিয়েছে। শান্তিস্বরূপ ভাটনাগরের মতো মহান বৈজ্ঞানিক এই সংস্থাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি যখনই আপনাদের মাঝে এসেছি, প্রত্যেকবারই এ বিষয়ে জোর দিয়েছি যে, যখন কোনও সংস্থা এত মহান ঐতিহ্য ধারণ করে, এত মহান পরম্পরা বহন করে, তখন ভবিষ্যতের জন্য তাদের দায়িত্বও ততটাই বৃদ্ধি পায়। আজও আমার এবং দেশের, এমনকি মানবজাতির আপনাদের কাছ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা। বৈজ্ঞানিকদের কাছ থেকে এবং প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকেও অনেক প্রত্যাশা।
বন্ধুগণ,
সিএসআইআর-এর কাছে গবেষণা এবং পেটেন্টস-এর একটি শক্তিশালী বাস্তু-ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা দেশের অনেক সমস্যা সমাধানের কাজ করছেন, কিন্তু আজ দেশের লক্ষ্যগুলি আর দেশবাসীর স্বপ্নগুলি একবিংশ শতাব্দীর ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আর সেজন্য সিএসআইআর-এর মতো সংস্থার কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আজ ভারত কৃষি থেকে শুরু করে মহাকাশ-বিদ্যা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, টিকা থেকে শুরু করে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, বায়ো-টেকনলজি থেকে শুরু করে ব্যাটারি টেকনলজি পর্যন্ত প্রত্যেক দিশায় আত্মনির্ভর এবং শক্তিশালী হয়ে উঠতে চায়। আজ ভারত সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন আর পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে। আজ আমরা সফটওয়্যার থেকে শুরু করে কৃত্রিম উপগ্রহ পর্যন্ত অন্যান্য দেশের উন্নয়নকেও গতি প্রদান করছি। বিশ্বের উন্নয়নে প্রধান ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করছি। সেজন্য আমাদের লক্ষ্যও বর্তমান থেকে দু’কদম এগিয়ে থাকা প্রয়োজন। আমাদের এই দশকের প্রয়োজনের পাশাপাশি আগামী দশকের জন্য প্রস্তুতিও এখন থেকেই করতে হবে। বিপর্যয়ের সমাধানের লক্ষ্যেও, করোনার মতো মহামারী আজ আমাদের সামনে রয়েছে; কিন্তু এমন অনেক চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতের গর্ভেও লুকিয়ে থাকতে পারে! উদাহরণস্বরূপ, আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে একটি অত্যন্ত বড় আশঙ্কা সারা পৃথিবীর বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত ব্যক্ত করেছেন। আমাদের বৈজ্ঞানিকদের, আমাদের সকল সংস্থাকে ভবিষ্যতের এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। কার্বন ক্যাপচার থেকে শুরু করে এনার্জি স্টোরেজ এবং গ্রিন হাইড্রোজেন টেকনলজি পর্যন্ত প্রত্যেক দিশায় আমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
এখন এখানে আপনাদের সবার পক্ষ থেকে শিল্পোদ্যোগগুলির সঙ্গে কোলাবোরেশনকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেমনটি আমি বলেছি, সিএসআইআর-এর ভূমিকা এর থেকেও এক কদম এগিয়ে রয়েছে। আপনাদের শিল্পোদ্যোগের পাশাপাশি সমাজকেও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে গত বছর আমি আপনাদের যে পরামর্শ দিয়েছিলাম, সিএসআইআর তা বাস্তবায়িত করে সমাজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সমাজ থেকে উপদেশ নেওয়া, পরামর্শ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। দেশের প্রয়োজনগুলিকে কেন্দ্রে রেখে আপনাদের এই প্রচেষ্টা কোটি কোটি দেশবাসীর ভবিষ্যতকেও বদলে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে দেশে ‘অ্যারোমা মিশন’ চালু করা হয়েছিল। আর এক্ষেত্রে সিএসআইআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আজ দেশের হাজার হাজার কৃষক ফুল চাষের মাধ্যমে তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। হিং-এর মতো উপাদান, যা প্রত্যেক ভারতবাসীর রান্নাঘরে অনেক শতাব্দীকাল ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেই হিং ভারতকে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সিএসআইআর উদ্যোগ নিয়েছে আর আজ দেশের মধ্যেই হিং উৎপাদন শুরু হয়েছে। এরকম অনেক সম্ভাবনা আপনাদের গবেষণাগার বাস্তবে পরিবর্তিত করতে পারে, বিকশিত করতে পারে। অনেকবার তো আপনারা এতবড় কাজ করে ফেলেন যে সরকার এবং মন্ত্রকও সে সম্পর্কে জানতে পারে। আর যখন জানতে পারে তখন সবাই অবাক হয়ে যায়। সেজন্য আমার আরেকটি পরামর্শ হল, আপনাদের প্রতি আরেকটি পরামর্শ হল, আপনাদের সমস্ত আবিষ্কারের তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপায় ভাবুন। যে কোনও ব্যক্তি যেন সিএসআইআর-এর গবেষণা সম্পর্কে, আপনাদের কাজ সম্পর্কে খোঁজখবর করতে পারেন, আর কেউ যদি চান তিনি যাতে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, সেদিকটাও আপনাদের ক্রমাগত লক্ষ্য রাখতে হবে। এর ফলে আপনাদের কাজ এবং আপনাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারিকরণেও সহযোগিতা পাবেন আর সমাজে, শিল্পোদ্যোগগুলি আরও বেশি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ,
আজ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে, নিকট ভবিষ্যতেই আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পৌঁছে যাব, তখন আমাদের স্পষ্ট সঙ্কল্প নিয়ে, সময় নির্ধারিত কর্মপদ্ধতি নিয়ে, নিশ্চিত লক্ষ্যে রোডম্যাপ তৈরি করে এগিয়ে যেতে হবে। আর এই দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়া আমাদের কর্মসংস্কৃতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও খুব কাজে লাগবে। করোনার এই সঙ্কটকালে আমাদের উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে গেলেও, আজও আমাদের সঙ্কল্প – ‘আত্মনির্ভর ভারত, শক্তিশালী ভারত’ গড়ে তোলা। আজ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ থেকে শুরু করে নতুন নতুন স্টার্ট-আপ, কৃষি থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্র – প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেশের সামনে অসংখ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব আপনাদের সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে। দেশের জনগণের সঙ্গে মিলে এই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা, আমাদের শিল্পোদ্যোগগুলি যে ভূমিকা করোনার সঙ্কটকালে পালন করছে, আমাদের এই সাফল্যকে ভবিষ্যতে প্রত্যেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের প্রতিভা এবং আপনাদের প্রতিষ্ঠানের পরম্পরা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ এই গতিতে নিত্যনতুন লক্ষ্য পূরণ করবে আর ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতবাসীর স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করবে। আমি আপনাদের সকলের বক্তব্য শোনার সুযোগ পেয়েছি। অনেক ব্যবহারিক কথা, বাস্তবসম্মত কথা আপনারা বলছিলেন, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছিলেন। আমি চাইব যাঁদের হাতে এই কাজের দায়িত্ব রয়েছে, তাঁরা যেন আপনাদের পরামর্শ মেনে প্রত্যাশা পূরণে দেরি না করেন। প্রতিটি বিষয়কে একসঙ্গে মিশন মোডে মোমেন্টাম নিয়ে বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টা করতে হবে। আপনারা সবাই এতটা মূল্যবান সময় খরচ করে এখানে বসে আছেন। অনেক অভাবনীয় ভাবনা-চিন্তার মতবিনিময় অত্যন্ত স্বাভাবিক। আর এই মন্থন থেকে যে অমৃত বেরিয়ে আসবে, তা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাগাতার আপগ্রেড করে, উন্নতিসাধনের মাধ্যমে আমাদের বাস্তবায়িত করতে হবে। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আর এই শুভকামনার সঙ্গেই আপনাদের সকলের জন্য উত্তম স্বাস্থ্য প্রার্থনা করি।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
নমস্কার!