নমস্কার!
নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলে আমি আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। দেশের প্রগতির মূল ভিত্তি হল কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলির সমন্বয়। মিলেমিশে কাজ করা এবং নিশ্চিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে আরও বেশি সার্থক করে তুলতে আমাদের শুধু প্রতিযোগিতামূলক, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে শুধু রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের প্রতিযোগিতা নয়, সযত্নে জেলাস্তরে নিয়ে যেতে হবে যাতে উন্নয়নের প্রতিযোগিতা নিরন্তর চলতে থাকে। আমরা শুরু থেকেই উন্নয়নকে সবসময়ে অগ্রাধিকার দিয়েছি। দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আগে আমরা কয়েকবার চেষ্টা করেছি,আর আজও স্বাভাবিকভাবেই এই শীর্ষ সম্মেলনে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা করোনার সঙ্কটকালে দেখেছি কিভাবে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার মিলেমিশে কাজ করেছে আর সেজন্যই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশ সফল হয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে ভারতের একটি ভালো ছবি গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে পা রাখতে চলেছে তখন এই গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করব যাতে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষের জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে যুক্ত করে সমিতি গড়ে তোলা হয়, জেলাস্তরেও সমিতি গড়ে তোলা হয়। এখন থেকে একটু আগে এই বৈঠকে আমরা কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তার একটি স্পষ্ট উল্লেখ আপনাদের সামনে রাখা হয়েছে। এই এজেন্ডা পয়েন্টগুলির নির্বাচন দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারগুলি মাথায় রেখে করা হয়েছে। এই এজেন্ডা পয়েন্টগুলি নিয়ে রাজ্যগুলি থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলির প্রস্তুতিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্য একটি নতুন প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এবার নীতি আয়োগের সঙ্গে রাজ্যগুলির সমস্ত প্রধান আধিকারিকদের একটি ভালো কর্মশিবির হয়েছে। আর সেই শিবিরে আলোচনার সময় যেসব বিষয় উঠে এসেছে আজকের শীর্ষ সম্মেলনে আমরা সেগুলিকেও যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। আর সেজন্য এতে অনেক সংস্কার করা হয়েছে। একভাবে বলা যায়, রাজ্যগুলির প্রত্যাশাকে মাথায় রেখে এজেন্ডা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে এবার গভর্নিং কাউন্সিলের এজেন্ডা পয়েন্টগুলি অত্যন্ত সুনির্ধারিত এবং এগুলি আমাদের আলোচনাকে আরও সারগর্ভ করে তুলবে।
বন্ধুগণ,
বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের গরীবদের সশক্তিকরণের লক্ষ্যে ব্যাঙ্ক খোলা থেকে শুরু করে টিকাকরণ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধি, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ, বিনামূল্যে শৌচালয় নির্মাণের প্রকল্প তাঁদের জীবনে, বিশেষ করে গরীব মানুষের জীবনে একটি অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দেশে এখন প্রত্যেক গরীব যেন পাকা ছাদের নিচে থাকতে পারে তা সুনিশ্চিত করার অভিযানও দ্রুতগতিতে চলছে। কিছু রাজ্য খুব ভালো কাজ করছে। কিছু রাজ্যে গতি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে যদি দেখি, দেশে গ্রাম ও শহর মিলিয়ে ২ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি গৃহ নির্মাণ করে গরীবদের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, দেশের ছয়টি শহরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গৃহ নির্মাণের একটি অভিযান চলছে। দু-এক মাসের মধ্যেই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতিতে উন্নতমানের মজবুত বাড়ি তৈরির লক্ষ্যে দেশের ছয়টি শহরে নতুন নতুন মডেলে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই অভিযান সফল হলে প্রত্যেক রাজ্যের জন্য উপযোগী হয়ে উঠবে। তেমনই জলের অভাব এবং দূষিত জল থেকে বিভিন্ন রোগ যেন জনগণের উন্নয়নে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, অপুষ্টির সমস্যাগুলি বৃদ্ধি না পায়, এই লক্ষ্যেও মিশন মোডে কাজ চলছে। জল জীবন মিশন শুরু করার পর থেকে বিগত ১৮ মাসে ৩.৫ কোটিরও বেশি গ্রামীণ বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ চালু হয়ে গেছে। গ্রামে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য ‘ভারত নেট স্কিম’ একটি বড় পরিবর্তনের মাধ্যম হয়ে উঠছে। এমন অনেক প্রকল্পের মাধ্যমে যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলি মিলেমিশে কাজ করবে, তখন কাজের গতিও বাড়বে আর শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তার লাভ পৌঁছনো সুনিশ্চিত হবে।
বন্ধুগণ,
এ বছরের বাজেট নিয়ে যেভাবে একটি ইতিবাচক সাড়া জেগেছে, চারপাশে একটি নতুন আশার আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা বলে দিচ্ছে যে জাতির মেজাজ এখন কিরকম। দেশ উন্নয়নের পথে চলার জন্য প্রস্তুত। দেশ এখন আর সময় নষ্ট করতে চায় না, দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে চায়। এই মেজাজ পরিবর্তনে দেশের যুব সম্প্রদায় বড় ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য এই পরিবর্তনের প্রতি একটি নতুন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এটা দেখছি, কিভাবে দেশের বেসরকারি ক্ষেত্র দেশের এই উন্নয়ন যাত্রায় অধিক উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা এই উৎসাহকে, বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রাণশক্তিকে সম্মান জানাব আর তাকে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ততটাই সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করব। আত্মনির্ভর ভারত একটি এমন নতুন ভারতের দিকে পদক্ষেপ, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক সংস্থা, প্রত্যেক শিল্পোদ্যোগ তাদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারত অভিযান একটি এমন ভারত গড়ে তোলার পথ যা কেবল নিজেদের প্রয়োজন নয়, বিশ্ববাসীর প্রয়োজনের জন্যও উৎপাদন করবে আর এই উৎপাদন বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায়ও উত্তীর্ণ হবে। আর সেজন্য আমি সব সময় বলি, “জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট”। ভারতের মতো যুব দেশে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মাথায় রেখে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, উদ্ভাবনকে উৎসাহ জোগাতে হবে, যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, শিক্ষা ও দক্ষতাকে উন্নত সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের ব্যবসাকে, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগকে, স্টার্ট-আপগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের প্রত্যেক রাজ্যের একটি বৈশিষ্ট্য আছে। প্রত্যেক রাজ্যের প্রত্যেক জেলার একটি নিজস্ব দক্ষতা আছে, নিজস্ব বৈচিত্র্য আছে। আমরা যদি সুক্ষ্মভাবে দেখি তাহলে এ ধরনের অনেক সম্ভাবনা চোখে পড়ে। সরকার দেশের সমস্ত জেলায় উৎপাদিত পণ্যগুলিকে শর্টলিস্ট করে সেগুলির মূল্য সংযোজনের জন্য, মার্কেটিং এবং রপ্তানির জন্য সেগুলি ‘প্রোমোট’ করার চেষ্টা করছে। এর ফলে, রাজ্যগুলির মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কোন রাজ্য সব থেকে বেশি রপ্তানি করে, সব থেকে বেশি ধরনের পণ্য রপ্তানি করে, সব থেকে বেশি পরিমাণে রপ্তানি করে, সব থেকে বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে - এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলতে হবে। আর তারপর জেলাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক রাজ্য এভাবে রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দিয়ে জেলাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলবে। আমাদের রাজ্যগুলির সম্পদকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। রাজ্যগুলি থেকে সম্ভাব্য রপ্তানিযোগ্য পণ্যের হিসেব আমাদের প্রত্যেক মাসে নিতে হবে এবং এর উৎকর্ষ ও পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক এবং কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নত সংহতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন যেমন আমাদের দেশে সমুদ্র তীরবর্তী রাজ্যগুলির মৎস্যশিল্প, নীল অর্থনীতিকে এবং বিদেশে মাছ রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সমুদ্র তটবর্তী রাজ্যগুলিকে সেজন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। দেখুন, তাহলে অর্থনীতিকে অনেক বড় শক্তি জোগাতে পারবেন, পাশাপাশি আমাদের মৎস্যজীবীরা অর্থনৈতিকভাবে সম্পদশালী হয়ে উঠবেন। আমি চাইব যে আপনারা এ সম্পর্কে অবহিত হন যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য একটি পিএলআই স্কিম চালু করেছে। এই স্কিমের মাধ্যমে দেশের নির্মাণ ক্ষেত্রে উন্নত সুযোগ গড়ে উঠতে পারে। রাজ্যগুলির উচিৎ এই স্কিমকে ব্যবহার করে নিজের নিজের রাজ্যে যত বেশি সম্ভব বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। কর্পোরেট করের হার কম থাকার ফলে রাজ্যগুলি এর সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। আপনাদের এই ধরনের কোম্পানিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যারা আমাদের দেশে করের হার কমানোর সুযোগ নিয়ে আপনাদের রাজ্যগুলিতে বিনিয়োগ করবে এবং আপনাদের রাজ্যে অধিকাংশ কর্মসংস্থান হবে।
বন্ধুগণ,
এবারের বাজেটে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা তহবিল নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এই সম্ভাব্য খরচ দেশের অর্থনীতিকে অনেক স্তরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করবে। অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এর একটি বহুমুখী প্রভাব পড়বে। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইনে রাজ্যগুলির অংশীদারিত্ব ৪০ শতাংশ, আর সেজন্য রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্র মিলেমিশে নিজেদের বাজেটকে সুপরিকল্পিতভাবে সঠিক পথে ব্যবহার করতে পারবে এবং রাজ্যের নিরিখে অগ্রাধিকার স্থির করতে হবে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার তার বাজেট আগের তুলনায় এক মাস আগে ঘোষণা করছে। সেজন্য রাজ্যগুলির বাজেট এবং কেন্দ্রের বাজেটের মাঝে ৩-৪ সপ্তাহ সময় পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় বাজেটের সুবিধাগুলি মাথায় রেখে নিজেদের বাজেট তৈরি করতে পারছে, যাতে উভয় মিলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে যেতে পারে। আর আমি চাইব যে এই লক্ষ্যে রাজ্যগুলির বাজেট নিয়ে আলোচনা হোক। যে রাজ্যগুলির বাজেট এখন আসা বাকি, তারা এই কাজকে আরও অগ্রাধিকার দিয়ে করতে পারে। কেন্দ্রীয় বাজেটের পাশাপাশি রাজ্যগুলির বাজেট দেশের উন্নয়নকে গতি প্রদানের জন্য, রাজ্যগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ,
১৫তম অর্থ কমিশনে স্থানীয় প্রশাসনের আর্থিক সম্পদে বড় সংযোজন হতে চলেছে। স্থানীয় প্রশাসনে সংস্কার, জনগণের জীবনমানে উৎকর্ষ এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাসকে ভিত্তি করে তুলতে হবে। এই সংস্কারগুলির ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি গণ-অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি মনে করি দেশের পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা, নগর নিগমগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও এই ‘কনভার্জেন্স’ ও তার ফলের জন্য দায়বদ্ধ হয়ে ওঠার সময় এসেছে। স্থানীয় স্তরে পরিবর্তনের জন্যও জেলা, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। তাহলে পরিণাম কতটা ইতিবাচকভাবে উঠে আসতে পারে; আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে যে বিশেষ প্রয়াস চালানো হচ্ছে সেগুলি খুব ভালো পরিণাম আনছে। কিন্তু বিগত কয়েকমাসে করোনার ফলে যে গতিতে উন্নয়ন হওয়া উচিৎ ছিল ততটা হয়নি। কিন্তু এখন আবার আমরা সেদিকে জোর দিতে পারি।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে কৃষি অপার ক্ষমতার উৎস। কিন্তু তারপরও কিছু সত্যি আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে। আমাদের দেশকে কৃষি প্রধান দেশ বলা হয়। তা সত্ত্বেও আজ প্রায় ৬৫-৭০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভোজ্যতেল আমাদের আমদানি করতে হয়। এই আমদানি আমরা বন্ধ করতে পারি। এই টাকা আমাদের কৃষকরা পেতে পারেন। এই টাকার আসল অধিকার তো আমাদের কৃষকদেরই। কিন্তু সেজন্য আপনাদের প্রকল্পগুলিকে সেভাবে রচনা করতে হবে। আমরা বিগত দিনে ডালের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি, এখন বিদেশ থেকে খুব কমই ডাল আমদানি করতে হয়। এই ধরনের প্রচেষ্টা আমরা ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও করতে পারি। আমাদের কৃষকরা অনায়াসেই এগুলি উৎপাদন করতে পারেন। শুধু সামান্য পথ দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। আর এভাবে এরকম অনেক ফসল আমাদের কৃষকরা দেশের জন্য উৎপাদন করতে পারেন আর বিশ্বকে সরবরাহও করতে পারেন। সেজন্য সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে মিলেমিশে অ্যাগ্রো-ক্লাইমেটিক রিজিওনাল প্ল্যানিং-এর কৌশল রচনার প্রয়োজন। হিসেব করে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে কৃষি থেকে শুরু করে পশুপালন এবং মৎস্যপালনের ক্ষেত্রে একটি সংহত দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এর পরিণামস্বরূপ, করোনার কঠিন সময়েও দেশে কৃষিজ পণ্যের রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের সম্ভাবনা এর থেকে অনেকগুণ বেশি। আমাদের উৎপাদিত পণ্যগুলির যেন ন্যূনতম অপচয় হয় তা সুনিশ্চিত করতে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের দিকে লক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর সেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগে জন্য আমাদের দেশে যত সম্ভাবনা রয়েছে তাকেও আমাদের যুক্ত করতে হবে। আমরা এটা জানি যে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে কাঁচা মাছ রপ্তানি করে। যেটা আমি শুরুতেই বলেছি। সেসব দেশ এই মাছ প্রক্রিয়াকরণ করে তা রপ্তানি করে অধিক অর্থ উপার্জন করে এবং প্রক্রিয়াকরণজাত পণ্য অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা কি সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ করে এভাবে প্রক্রিয়াকরণজাত মৎস্যপণ্য রপ্তানি করতে পারি না? এক্ষেত্রে আমাদের সমস্ত সমুদ্র তটবর্তী রাজ্যগুলি উদ্যোগ নিলে সমগ্র আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রভাব অনেক বাড়াতে পারি। এমন পরিস্থিতিতে আরও বেশ কিছু ক্ষেত্র, আরও বেশ কিছু পণ্য আমাদের নজরে রয়েছে। আমাদের কৃষকদের যাতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেওয়া যায়, যাতে উন্নত পরিকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা দেওয়া যায়, সেই অনুরূপ সংস্কার হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বন্ধুগণ,
সম্প্রতি এ ধরনের কিছু সংস্কার করা হয়েছে যেগুলি এই সংক্রান্ত আইনগুলিতে সরকারের দখলকে ন্যূনতম করা হয়েছে। আমি বিগত দিনগুলিতে দেখেছি, সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের হাজার হাজার অভিযোগ থেকে আমরা সহজেই রেহাই পেতে পারি। যেমন বিগত দিনে আমরা ১,৫০০টি কালবাহ্য ও পরস্পর বিরোধী আইন বাতিল করেছি। আমি রাজ্যগুলিকেও অনুরোধ করব, আপনারা একটি ছোট টিম তৈরি করুন। এখন উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। জনগণের কাছ থেকে বারবার নানা তথ্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের অভিযোগগুলির বোঝা লাঘব করার চেষ্টা করুন। রাজ্যগুলি এগিয়ে আসুক। আমিও কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের বলেছি, আর আমাদের ক্যাবিনেট সচিব নিয়মিত তার তদারকি করছেন। অভিযোগের সংখ্যা এখন যথাসম্ভব কমাতে হবে। দেশের জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধির জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এভাবে দেশের যুব সম্প্রদায় যাতে তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি কাজ করতে পারে, আমাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। কয়েক মাস আগে আপনারা দেখেছেন যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতে শুনিনি, কিন্তু এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ওএসপি রেগুলেশনগুলিকে সংস্কার করা হয়েছে। ফলে, আমাদের যুব সম্প্রদায় যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করার নমনীয়তা পাবেন। এর ফলে আমাদের প্রযুক্তি ক্ষেত্র অনেক বেশি লাভবান হবে।
আমি সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বলেছেন যে তাঁদের ৯৫ শতাংশ কর্মচারী এখন বাড়িতে বসেই কাজ করছেন। আর এর পরেও তাঁদের ব্যবসা ভালোই চলছে। এখন দেখুন কতবড় পরিবর্তন আসছে। আমাদের এই বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে। আমাদের এসব ক্ষেত্রে যত জটিলতা আছে সেগুলি সমাপ্ত করতে হবে। বিগত দিনগুলিতে আমরা অনেক ক্ষেত্রে সংস্কার এনেছি। আপনারা দেখেছেন, কিছুদিন আগেও আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জিও-স্পেশিয়াল ডেটা সংক্রান্ত নিয়মগুলিকেও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন আমরা যা করেছি সেসব যদি আজ থেকে ১০ বছর আগে করতে পারতাম, তাহলে এই গুগল ইত্যাদি ভারতের বাইরে তৈরি হত না, আমাদের দেশেই তৈরি হত। আমাদের নবীন প্রজন্মের যে প্রতিভা সেই প্রতিভার যথাযথ সদ্ব্যবহার আমাদের দেশে হয়নি। এখন আমাদের স্টার্ট-আপগুলি এবং প্রযুক্তিক্ষেত্র এই প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারছে। আমি চাই যে এই সিদ্ধান্তগুলি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠুক।
আর বন্ধুদের আমি দুটি বিষয়ে অনুরোধ করব, আজ বিশ্বে আমরা একটি নতুন সুযোগ পেয়েছি, এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে হবে, ভারতের জনগণের ‘ইন অফ লিভিং’ বৃদ্ধির জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, ভারতের সুযোগগুলিকে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজেনেস’-এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য প্রয়োজনে আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে, ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে, দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য, তাঁদের জীবনকে সরল করার দিকে জোর দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমি এখন আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের পরামর্শের অপেক্ষায় থাকবো। আজ আমরা সারাদিন এখানে একসঙ্গে বসব। মাঝে সামান্য সময়ের জন্য একটু ব্রেক নেব। কিন্তু আমরা সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলব। বরাবরের মতো এবারও আপনাদের সকলের পক্ষ থেকে সৃষ্টিশীল এবং ইতিবাচক ভাবনা শুনতে পাব যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কাজে লাগবে। আর আমরা সবাই মিলে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার মিলেমিশে দেশকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে যতটা জোর দিতে পারব, ততটাই বিশ্বে ভারতের জন্য একটি অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করতে পারব। এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করলে চলবে না। এই প্রত্যাশা নিয়ে আরেকবার এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে আপনাদের উজ্জ্বল উপস্থিতিকে স্বাগত জানাই। আপনাদের মূল্যবান পরামর্শগুলির অপেক্ষায় রয়েছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।