পূজনীয় শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামী জি,
উপস্থিত সমস্ত সন্ন্যাসীগণ, দত্ত পীঠমের সকল শ্রদ্ধাবান অনুসারীগণ আর ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
এল্লারিগু …সবার জন্য…
জয় গুরু দত্ত!
আপ্পাজি অওরিগে,
এম্ভত্তনে ওয়র্ধন্ততিয় সন্দর্ভদল্লি, উপস্থিত সমস্ত গুরুজনদের প্রণাম,
হাগু শুভকামনে গলু! আন্তরিক শুভকামনা জানাই!
বন্ধুগণ,
কয়েক বছর আগে আমার একবার দত্ত পীঠম যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই সময় আপনারা আমাকে এই কর্মসূচিতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি তখনই মনস্থির করে নিয়েছিলাম যে আবার আপনাদের থেকে আশীর্বাদ নিতে যাব। কিন্তু যেতে পারছি না। আমাকে আজই জাপান সফরের জন্য রওনা হতে হবে। আমি যদিও ভৌতিক রূপে দত্ত পীঠমের এই সুন্দর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি, কিন্তু আমার আত্মিক উপস্থিতি আপনাদের মধ্যেই রয়েছে।
শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজিকে আমি এই শুভ মুহূর্তে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই, তাঁকে প্রণাম জানাই। কারও জীবনের ৮০ বছর পেরিয়ে আসা ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়। এই ৮০ বছর বয়সকে আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরায় সহস্র চন্দ্রদর্শনের সাক্ষী রূপেও মানা হয়। আমি পূজনীয় শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজির দীর্ঘ আয়ু কামনা করি। আমি তাঁর অনুসারীদেরকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
আজ পূজনীয় সন্নাসীগণ এবং বিশিষ্ট অতিথিদের হাতে আশ্রমের ‘হনুমত দ্বার’ বা এন্ট্রান্স আর্চ-এর শুভ উদ্বোধনও হয়েছে। আমি এজন্যও আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। গুরুদেব দত্ত মহোদয় যে সামাজিক ন্যায়ের প্রেরণা আমাদের দিয়ে গেছেন, তা থেকে প্রেরিত হয়ে পূজনীয় শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজি এবং আপনারা সবাই নিয়মিত যে কাজ করছেন, তাতে আরও একটি অধ্যায় যুক্ত হল। আজ এখানে আরও একটি মন্দিরের শুভ উদ্বোধনও হল।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – “পরোপকারায় শতাম বিভূতয়ঃ” অর্থাৎ, সন্ন্যাসীদের, সজ্জনদের বিভূতি পরোপকারের জন্যই হয়। সন্ন্যাসীরা পরোপকার এবং জীবসেবার জন্যই জন্মগ্রহণ করেন। সেজন্যই একজন সন্ন্যাসীর জন্ম হয়, তাঁর জীবন শুধুই তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন যাপনের জন্য নয়, বরং তার সঙ্গে সমাজের উত্থান এবং কল্যাণের যাত্রাও যুক্ত থাকে। শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজির জীবন এর একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ, একটি সুন্দর উদাহরণ। দেশ এবং বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে অনেক আশ্রম, এত বড় সংস্থা, ভিন্ন ভিন্ন স্বরূপ, কিন্তু সকলের দিশা এবং ধারা একটাই, তা হল – জীব মাত্রেরই সেবা, জীব জগতের বড় কল্যাণ সাধন।
ভাই ও বোনেরা,
দত্ত পীঠমের নানাবিধ প্রচেষ্টা দেখে ও শুনে আমার মনে সবচাইতে বেশি আনন্দ হয়েছে, কারণ এখানে আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি আধুনিকতারও লালন পালন হয়। এখানে একটি বিশাল হনুমান মন্দির রয়েছে। পাশাপাশি এখানে থ্রি-ডি ম্যাপিং, সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো-এরও ব্যবস্থা রয়েছে। আবার, এত বড় বার্ড পার্ক বা পাখিরালয় রয়েছে আর পাশাপাশি রয়েছে তাকে সঞ্চালন করার জন্য আধুনিক পরিকাঠামোও।
দত্ত পীঠম আজ আমাদের বেদগুলি অধ্যয়নের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, গীত, সঙ্গীত এবং স্বরের যে সামর্থ্য আমাদের পূর্বজরা আমাদের দিয়ে গেছেন, তাকে মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, তা নিয়ে স্বামীজির পথ প্রদর্শনের ফলে এখানে অনেক কার্যকর উদ্ভাবন সম্ভব হচ্ছে। প্রকৃতির জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহার, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে প্রযুক্তির এই সমাগম, এটাই তো গতিশীল ভারতের আত্মা। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্বামীজির মতো মহান সন্ন্যাসীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজ দেশের যুব সম্প্রদায় নিজেদের পরম্পরার সামর্থ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, তাঁরা নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা স্বামীজির ৮০তম জন্মদিন পালন একটি এমন সময়ে করছি যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি পালন করছে। আমাদের সন্ন্যাসীরা হামেশাই আমাদের ‘স্ব’ থেকে ওপরে উঠে ‘সর্বস্ব’-এর জন্য কাজ করার প্রেরণা দিয়েছেন। আজ দেশও আমাদের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’-এর মন্ত্রের পাশাপাশি সামগ্রিক সঙ্কল্পসমূহ গ্রহণ করে কাজ করার আহ্বান করছে। এর পাশাপাশি আজ দেশ তার প্রাচীনতাকে সংরক্ষিতও করছে। আজ ভারতের পরিচয় যেমন যোগ, তেমনই ভারতের পরিচয় তার নবীন প্রজন্মের মানুষদের সামর্থ্যও । আজ আমাদের স্টার্ট-আপগুলিকে বিশ্ববাসী তাঁদের ভবিষ্যৎ রূপে দেখছেন।
আমাদের শিল্প জগৎ, আমাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ গ্লোবাল গ্রোথ বা বিশ্ব উন্নয়নের ক্ষেত্রে আশার কিরণ হয়ে উঠছে। আমাদের নিজেদের এই সঙ্কল্পগুলিকে লক্ষ্যে প্রতিপন্ন করার কাজ করতে হবে, আর আমি চাইব যে আমাদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলি এই লক্ষ্যেও সকলের প্রেরণার কেন্দ্র হয়ে উঠুক।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমাদের সামনে আগামী ২৫ বছরের জন্য সঙ্কল্পগুলি রয়েছে, আর ২৫ বছরের লক্ষ্যগুলিও রয়েছে। আমি মনে করি যে আজ দত্ত পীঠমের সঙ্কল্পগুলিও স্বাধীনতার অমৃত সঙ্কল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। প্রকৃতির সংরক্ষণ, পাখিদের সেবার জন্য আপনারা অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছেন। আমি চাইব যে এই লক্ষ্যে আরও কিছু নতুন নতুন সঙ্কল্প নেওয়া হোক। আমার অনুরোধ যে জল সংরক্ষণের জন্য, আমাদের জলের উৎসগুলিকে সংরক্ষিত রাখার জন্য, নদীগুলিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আরও বেশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির স্বার্থে নতুন নতুন সঙ্কল্প নেওয়া হোক। আরও বেশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির স্বার্থে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে দেশের প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি করে ‘অমৃত সরোবর’ খনন করা হচ্ছে। এই সরোবরগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, এগুলির নিয়মিত সংস্কারের জন্যও আমাদের সমাজকে আমাদের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এভাবে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’কে সততঃ জন-আন্দোলন রূপে আমাদের নিরন্তর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই লক্ষ্যে পূজনীয় শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজি সাফাই কর্মীদের জন্য যেরকমভাবে কাজ করে অবদান রাখছেন আর অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর প্রচেষ্টাগুলিকে আমি বিশেষভাবে প্রশংসা করি। সবাইকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা – এটাই ধর্মের বাস্তব স্বরূপ যাকে পূজনীয় শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজি ক্রমে সাকার করে তুলছেন। আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে যে দত্ত পীঠম সমাজ গড়ে তোলা বা রাষ্ট্র নির্মাণের বিশেষ দায়িত্ব পালনে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তারা পালন করে যাচ্ছে, তারা এভাবেই পালন করতে থাকবে, আর আধুনিক সময়ে জীবসেবার এই যজ্ঞকে নতুনভাবে সম্প্রসারিত করবে, আর এটাই তো জীবসেবার মাধ্যমে শিবসেবার সঙ্কল্পে পরিণত হওয়ার পথ।
আমি আরও একবার ঈশ্বরের কাছে শ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামীজির দীর্ঘ আয়ু কামনা করি, তাঁর স্বাস্থ্য যেন খুব ভালো থাকে। এই দত্ত পীঠমের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজের আত্মিক শক্তিও যেন এভাবে ক্রমে বাড়তে থাকে। এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!