নমো বুদ্ধায়!
নমো গুরুভ্যো !
মাননীয় রাষ্ট্রপতিজি,
অন্যান্য অতিথিবৃন্দ,
ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ।
আপনাদের সকলকে ধম্মচক্র প্রবর্তন দিবস এবং আষাঢ় পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আজ আমরা গুরু পূর্ণিমাও উদযাপন করছি, আর আজকের এই দিনে ভগবান বুদ্ধ জ্ঞানলাভ করে তাঁর প্রথম বাণী প্রচার করেন। আমাদের দেশে বলা হয় , যেখানে জ্ঞান, সেখানেই পূর্ণতা পাওয়া যায়। আর যখন স্বয়ং বুদ্ধ উপদেশ দিচ্ছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই দর্শন মানবজাতির কল্যাণের সমার্থক হয়ে উঠে। ত্যাগ এবং তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে ভগবান বুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি যখন উপদেশ দিতেন তখন তাঁর মুখনিঃসৃত বাণীর মধ্য দিয়ে ধম্মচক্রের প্রবর্তন হয়। সেই সময় ভগবান বুদ্ধ কেবল পাঁচ শিষ্যকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন, আজ সারা পৃথিবীতে, যাঁরা ভগবান বুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী তাঁর সেই দর্শনকে তাঁরা অনুসরণ করেন ।
বন্ধুগণ,
সারনাথে ভগবান বুদ্ধ পুরো জীবনের, পরিপূর্ণ জ্ঞানের সূত্র আমাদের দিয়েছেন। তিনি দুঃখের বিষয়ে বলেছেন, দুঃখের কারণ সম্পর্কে বলেছেন, দুঃখ থেকে যে জয়লাভ করা যায় সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন আর কেমন করে জেতা যায় সেই পথও বলে দিয়েছেন। ভগবান বুদ্ধ আমাদের জীবনের জন্য অষ্টাঙ্গ সূত্র- ৮টি মন্ত্র দিয়েছিলেন। এই ৮টি মন্ত্র হল- সম্মা-দিট্ঠি ( সঠিকভাবে অনুভব করা), সম্মা- সংকপ্প (সঠিক সংকল্প), সম্মা- বচ (সঠিক কথা), সম্মা কম্মন্তো (সঠিক আচরণ), সম্মা আজিবা (সঠিক জীবিকা), সম্মা বায়ামো (সঠিক উদ্যোগ), সম্মা সতি (বিধিসম্মত), সম্মা সমাধি (সঠিকভাবে বিলীন হওয়া)। যদি আমাদের মন, কথা এবং সংকল্পের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে, আমাদের কাজ এবং উদ্যোগের মধ্যে ভারসাম্য থাকে তাহলে আমরা দুঃখ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি এবং সুখের মুখ দেখতে পারি। এই ভাবনাই আমাদের ভালো সময়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। আর সংকটের সময় ধৈর্য্য রাখার শক্তি যোগায়।
বন্ধুগণ,
আজ করোনা মহামারী যখন মানব জাতির সামনে সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সেই সময় ভগবান বুদ্ধ আমাদের কাছে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। ভগবান বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে কিভাবে আমরা কঠিন সংকটের মোকাবিলা করেছি ভারত তা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে। আজ ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা অনুসরণ করে সমস্ত দেশ একযোগে এগিয়ে চলেছে এবং একে অন্যকে শক্তি যোগাচ্ছে। এই লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিষ্ট কনফেডারেশন প্রার্থনার মাধ্যমে সেবা করার যে উদ্যোগ- ‘কেয়ার উইথ প্রেয়ার’ নিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য।
বন্ধুগণ,
ধম্মপদে বলা আছে-
ন হী বেরেন বেরানি,
সম্মন্তীধ কুদাচনম্।
অবেরেন চ সম্মন্তী,
এস ধম্মো সনন্ততো।।
অর্থাৎ বৈরিতা বৈরী মনোভাবকে শান্ত করতে পারে না বরং খোলা মনে ভালোবাসা দিয়ে বৈরী মনোভাবকে শান্ত করা যায়। সংকটের এই সময়ে সারা পৃথিবী ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির ক্ষমতা অনুভব করেছে। বুদ্ধের এই উপদেশ মানবতার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে, যার মাধ্যমে পৃথিবী সাফল্য এবং সমৃদ্ধির নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এই কামনা করে, আরও একবার আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আপনারা সুস্থ থাকুন আর মানবতার সেবা করে যান।
ধন্যবাদ!