প্রধানমন্ত্রী- বন্ধুগণ! আপনাদের সবাইকে স্বাগত। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা দেশকে উৎসাহে ভরিয়ে দিয়েছেন আর তা উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশবাসীর সমস্ত আশা-আকাঙ্খাকে আপনারা জয় করে এনেছেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সাধারণত আমি গভীর রাত পর্যন্ত দপ্তরে কাজ করতে থাকি। কিন্তু এইবার টিভি চলছিল আর ফাইলও চলছিল, কিন্তু ফাইলে মন দিতে পারছিলাম না। কিন্তু আপনারা যেমন অসাধারণ টিম স্পিরিট দেখিয়েছেন, নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরেছেন, আর পাশাপাশি ধৈর্য্যেরও পরিচয় দিয়েছেন। আপনাদের এই ধৈর্য্যকে আমি খুব ভালোভাবে অনুভব করছিলাম, কোনও তাড়া ছিল না। আপনারা সবাই অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর ছিলেন। সেজন্য বন্ধুগণ, আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
রাহুল দ্রাবিড়- সবার আগে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ আপনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিয়েছেন। গত বছর নভেম্বরে আমেদাবাদে আমরা যখন ফাইনালে হেরেছিলাম, সেখানেও আপনি এসেছিলেন। যখন আমাদের সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না, সান্ত্বণা দিয়েছেন। আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এই খুশির সময়ে আপনার সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছি। আমি শুধু এ কথা বলবো যে রোহিত এবং এই সমস্ত ছেলেরা অত্যন্ত ‘ফাইটিং স্পিরিট’ দেখিয়েছে। তারা অনেক খেলায় ‘নেভার সে ডাই অ্যাটিচুট’ বা হার না মানা প্রত্যয় দেখিয়েছে। ফাইনালে পৌঁছে গিয়েও তারা সেই হার না মানা মনোভাবকে বজায় রেখেছে - এটা তাদের কৃতিত্ব। এই ছেলেরা অনেক পরিশ্রম করেছে। অত্যন্ত খুশির বিষয় যে এই ছেলেরা যেভাবে লড়াই করেছে, তা নবীন প্রজন্মকে অনেক প্রেরণা যোগাবে। ২০১১ সালে যে জয় এসেছিল, তা দেখে অনেক নবীন খেলোয়াড়রা প্রেরণা পেয়েছিল, তাদের অনেকে এই দলেও রয়েছে। আর আমি দৃঢ় নিশ্চিত যে এই ছেলেদের ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা, প্রত্যেক খেলায় অংশগ্রহণকারী নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা উৎসাহিত হবে। আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আর আমি এই ছেলেদের অভিনন্দন জানাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী- শুভেচ্ছা তো আপনাদের সবাইকে জানাবো ভাই। আপনারা ভবিষ্যতেও দেশের নবীন প্রজন্মকে অনেক কিছু দিতে পারেন। জয় তো এনেই দিয়েছেন, কিন্তু আপনারা তাদেরকে অনেক প্রেরণা জোগাতে পারেন। অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে আপনারা তাদের গাইড করতে পারেন। এখন আপনাদের সেই অধিকার রয়েছে। চাহল এতো সিরিয়াস কেন? আমি ঠিক ধরেছি না? হরিয়ানার মানুষ তো যে কোনও পরিস্থিতিতে খুশি থাকে। তারা সব কিছু থেকে আনন্দ খুঁজে নেয়।
রোহিত ভাই আমি এই মুহুর্তে আপনার মনের কথা জানতে চাইছি। মাটি সে যে কোন দেশেরই হোক না কেন, ক্রিকেটের জীবন তো পিচে হয়। আপনারা এই ক্রিকেটের জীবনকেই বেছে নিয়েছেন। এটা যে কোন ভারতবাসীই করতে পারে।
রোহিত শর্মা- যেখানে যেখানে আমরা জয় পেয়েছি, সেই মুহুর্তগুলো আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আর সেগুলির কথা ভেবে তারিয়ে তারিয়ে আনন্দ পেতে হবে। এবারের টুর্নামেন্টে যে যে পিচে আমরা খেলেছি, প্রত্যেক পিচেই আমরা জিতেছি। কারণ আমরা সবাই এই অন্তিম জয়ের মুহুর্তের জন্য আকুল প্রতীক্ষায় ছিলাম, অনেক পরিশ্রম করেছি। অনেকবার আমাদের কাছে, অনেক কাছাকাছি এসেও হাতছাড়া হয়েছে এই ওয়ার্ল্ড কাপ। কিন্তু এবার সকলের আপ্রাণ চেষ্টায় আমরা সেটা অর্জন করতে পেরেছি। সেজন্য এবারের প্রতিটি পিচ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর আমরা যা করেছি, সেই ক্রিকেট পিচগুলিতেই করেছি। আমাদের দলের প্রত্যেক সদস্য এজন্য এতো পরিশ্রম করেছে! সেদিনের এই সাফল্য আমাদের এই পরিশ্রমেরই ফসল।
প্রধানমন্ত্রী- প্রত্যেক দেশবাসী হয়তো লক্ষ্য করেছেন, কিন্তু রোহিত আমি দুটো এক্সট্রিম জিনিস দেখেছি। এতে আমি দেখেছি প্রবল আবেগ। আর যখন আপনি ট্রফি নিতে যাচ্ছিলেন, তখনকার সেই নাচ।
রোহিত শর্মা- এটা আমাদের সকলের জন্য এত বড় মুহুর্ত, আমরা প্রত্যেকে এত বছর অপেক্ষা করেছি, তখন এই ছেলেরা আমাকে বলেছে, তুমি এমনি হেঁটে যেয়ো না, আলাদা কিছু করো।
প্রধানমন্ত্রী- তাহলে এটা কী চাহল-এর আইডিয়া ছিল?
রোহিত শর্মা- চহল আর কুলদীপ...
প্রধানমন্ত্রী- (ঋষভ পন্থ-এর দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা, আপনার এই রিকভারির, সুস্থ হয়ে ওঠার যাত্রা কতটা কঠিন ছিল? খেলোয়াড় হিসেবে আপনার যে সম্পদ, যে নৈপুণ্য তা আপনি আগেই করে দেখিয়েছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর এভাবে ফিরে আসা, রিকভারির সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা আপনার মন্তব্যগুলো আমি পড়ছিলাম। আজ আপনি এত নৈপুন্য দেখিয়েছেন,… আবার এতো নৈপুন্য দেখিয়েছ… আমার বন্ধুরাও আমাকে বলছিল।
ঋষভ পন্থ- সবার আগে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, আপনি আমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছেন। আসলে দেড় বছর আগের সেই দুর্ঘটনার পর খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মনে আছে স্যার, আপনি তখন আমার মা-কে ফোন করেছিলেন। এ থেকে অনেক প্রেরণা পেয়েছি। আমি অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু যখন আপনার ফোন আসে, মা আমাকে বলেন যে স্যার বলেছেন, কোনো সমস্যা হবে না। তখন কিছুটা মানসিকভাবে রিল্যাক্স হয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেই রিকভারির সময় চারপাশ থেকে অনেকের দুশ্চিন্তার কথা শুনতাম, ‘এ আবার কখনও ক্রিকেট খেলতে পারবে কী?’ অনেকে আবার আশা প্রকাশ করতেন, ও তো ভালো ব্যাটসম্যান, ব্যাটিংটা ঠিক করে নেবে। কিন্তু হয়তো আর উইকেট কিপিং করতে পারবে না। তাই গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে স্যার, আমি ভাবছিলাম যে আমাকে মাঠে ফিরে আসতে হবে এবং আমি যা করছি তার চেয়ে আরও ভাল করার চেষ্টা করতে হবে এবং অন্য কারও জন্য নয়, নিজেকে সেখানে উত্সর্গ করে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, আমি আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চাই এবং ভারতের জয় দেখতে চাই -এটাই ভেবেছি।
প্রধানমন্ত্রী: ঋষভ, যখন আপনার রিকভারি চলছিল, আমি যখন আপনার মায়ের সাথে কথা বলেছি, তখন আমি দুটি কথা বলেছি, প্রথমতঃ আমি ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ডাক্তারদের মতামত নিয়ে আমি বলেছিলাম, যদি ওকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে হয়, দয়া করে জানাবেন। তাঁরা বললেন, আমরা চিন্তা করব। কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি আপনার মায়ের আত্মবিশ্বাস দেখে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল, আমি তো তাঁকে চিনি না, কখনও তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন তিনিই আমাকে আশ্বাস দিচ্ছেন। আমি অবাক হ্যে ভাবি, যে এমন মা পেয়েছে সে কখনো ব্যর্থ হবে না! এই চিন্তাটা আমার মাথায় এসেছিল সেই মুহূর্তে। আর আপনি তা করে দেখিয়েছেন। আর আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছে যে, আপনি কাউকে দোষারোপ করেন নি! আপনি বলেছেন, আমার নিজের দোষ ছিল। এটা অনেক বড় কথা, প্রত্যেকেই অজুহাত খোঁজে, একটা গর্ত ছিল, অমুক ছিল, গর্ত ছিল; আপনি তা করেননি। আপনি বলেছেন, এটি আমার ভুল ছিল ! সম্ভবত, একথা জীবনের প্রতি আপনার উন্মুক্ত মনোভাব থেকেই বলা সম্ভব হয়েছে। আমি ছোট ছোট জিনিসগুলি পর্যবেক্ষণ করি বন্ধু এবং সবার কাছ থেকে শিখি। তাই আমি সত্যি বলছি, আপনার জীবন, অসীম ধৈর্য দেখে, বিশেষ করে, দেশের খেলোয়াড়রা হয়তো একটি শক্তিশালী ঐশ্বরিক যোগসূত্র অনুভব করছেন। আর আমি জানি, উইকেটরক্ষকদের যে অনুশীলন হয়, তা কতটা কঠিন ! ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কিন্তু আপনি সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন, একটি দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
ঋষভ পন্থ- ধন্যবাদ স্যার!
প্রধানমন্ত্রী- জীবনে উত্থান-পতন আছে, কিন্তু দীর্ঘ তপস্যা সময়মতো কাজে আসে। খেলায় আপনারা যে তপস্যা করেছেন তা প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে। বিরাট, আমাকে বলুন, এবার আপনার লড়াই উত্থান-পতনে পূর্ণ ছিল।
বিরাট কোহলি – প্রথমত, আমাদের সবাইকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আর এই দিনটি আমার জন্য বিশেষ, এই দিনের কথা সর্বদা আমার মনে থাকবে। কারণ পুরো টুর্নামেন্টে আমি যে অবদান রাখতে চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি এবং এক সময় আমি রাহুল ভাইকেও বলেছিলাম যে আমি এখন পর্যন্ত নিজের প্রতি এবং দলের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন যে পরিস্থিতি যখন আসবে, আমি নিশ্চিত যে তখন তুমি খেল দেখাবে! এরকম আমাদের এই কথা হয়েছিল, আর যখন আমরা খেলতে নামি, আমি প্রথমে রোহিতকে একথা বলেছিলাম; কারণ আমি যখন খেলতে যাচ্ছিলাম তখন আমি এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না যে, আমি যেভাবে খেলতে চাই - সেভাবেই খেলতে পারবো। তো যখন খেলতে গেলাম, প্রথম চার বলে তিনটা বাউন্ডারি পেলাম, তখন গিয়ে বলি, ভাই, এটা কী খেলা, একদিন মনে হয় একটা রানও হবে না, তারপর একদিন তুমি যাবে আর সব হতে শুরু করে। এটা সেদিনও আমি অনুভব করেছি যে এবং বিশেষ করে যখন আমাদের উইকেট পড়ছিল, তখন আমার নিজেকে সেই পরিস্থিতির কাছে সমর্পণ করতে হয়েছিল। এই সময়ে, আমি শুধুমাত্র দলের জেতার জন্য কী কী করতে হবে – সেদিকে মনোযোগ দিই। আর আমি অনুভব করি যে আমাকে সেই জোনে রাখা হয়েছে, এখন আমাকে কেন সেই জোনে রাখা হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি সেই মুহূর্তগুলির সঙ্গে পুরোপুরি সেঁটে গেছি। আর তারপরে আমি বুঝতে পারি যে, যা হওয়ার তা যে কোনওভাবেই হোক না কেন, তা হয়। সেটাই আমার সঙ্গে, দলের সঙ্গে হচ্ছিল। আপনি যদি ম্যাচটি দেখে থাকেন, শেষ পর্যন্ত আমরা যেভাবে ম্যাচ জিতেছি, যে পরিস্থিতি ছিল, আমরা শেষ পর্যন্ত যেভাবে খেলেছি, প্রতিটি বল উপভোগ করেছি, ম্যাচ যেভাবে মোড় নিয়েছে এবং আমাদের মনের মধ্যে কী হচ্ছিলো, তা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারবো না। প্রত্যেক বলে ম্যাচ কখনও এদিকে যাচ্ছে, আবার কখনও ওদিকে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে সব আশা শেষ হয়ে যায়, তারপর উইকেট নেয় হার্দিক। তারপর, প্রতিটি বলে আবার আশা ফিরে আসে, সেই শক্তি আবার ফিরে পাই। তাই দীর্ঘ কঠিন সময়ের পর এত বড় দিনে দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি খুশি। আর যেভাবে সারাটা দিন গেছে এবং আমরা যেভাবে জিতেছি, যেমন আমি বলছিলাম, আমি আমার জীবনে কখনও ভুলতে পারব না। তাই আমি খুশি ছিলাম যে আমি দলকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি যেখান থেকে আমরা খেলাটা জেতার চেষ্টা করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী – এটা সবাই অনুভব করছিল বিরাট, কারণ টুর্নামেন্টের সব খেলা মিলিয়ে আপনার মোট ছিল ৭৫ রান, আর তারপর ফাইনালে একদম ৭৬, তাই কখনও কখনও এরকম মুহূর্ত আসে। সবাই বলে, বন্ধু তুমিই এটা করবে। একভাবে, এটিও চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। কিন্তু পরিবারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী এসেছিল, যখন সব খেলা মিলিয়ে আপনি মোট ৭৫ রানে আটকে ছিলেন?
বিরাট কোহলি- ভাগ্যিস সেখানে ভারতের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য বেশি তাই পরিবারের সঙ্গে এ নিয়ে বেশি কথা বলিনি, মা বেশি টেনশন নিয়ে নেন। কিন্তু এর মানে শুধু এটাই ছিল যে আমি যা যা করার চেষ্টা করছিলাম, তা হচ্ছিলো না। তাই আমি অনুভব করি যে আপনি যখন আপনার দিক থেকে এত চেষ্টা করেন, যখন আপনি মনে করেন যে আমি এটি করেই ফেলবো, তখন কোথাও আপনার অহং জেগে ওঠে এবং তারপর খেলা আপনার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। তাই সেই অহংকারকেই ত্যাগ করার দরকার ছিল এবং আমি যেমন বলেছি, খেলার পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল যে আমার অহংকে উপরে রাখার কোনও জায়গাই ছিল না। দলের স্বার্থে তা ছাড়তে হয়েছে। এবং তারপর আবার খেলায়, যখন আমি খেলাকে সম্মান দেখাই, খেলাটিও সেদিন আমাকে সম্মান দেখিয়েছিল, এটাই আমার সেদিনের অভিজ্ঞতা ছিল স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে। (জসপ্রীত বুমরার দিকে তাকিয়ে) – পাজী –
জসপ্রীত বুমরা – না স্যার, আমি যখনই ভারতের জন্য বোলিং করি তখন অনেক বিশেষ মুহূর্তে বোলিং করি, তা সে নতুন বল হোক কিংবা –
প্রধানমন্ত্রী – মাঠে কি ইডলি খেয়ে যান?
জসপ্রীত বুমরা – না না, যখনই পরিস্থিতি কঠিন হয়, তখন আমাকে সেই পরিস্থিতিতে বোলিং করতে হয়। তাই আমার খুব ভালো লাগে যখন দলকে সাহায্য করতে পারি, বা যে কোনও পরিস্থিতি থেকে যদি ম্যাচ বের করে আনতে পারি । আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ভবিষ্যতের জন্যেও সেই আত্মবিশ্বাসকে বহন করি। আর বিশেষ করে এই টুর্নামেন্টে অনেক পরিস্থিতি এসেছে যখন আমাকে কঠিন ওভার বল করতে হয়েছে। আমি এভাবে নিজের দলকে সাহায্য করতে পেরেছি আর খেলায় জেতাতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী- আমি যতটা ক্রিকেট দেখেছি, সব সময়ই মনে হয় ব্যাটসম্যানের ৯০ রান হওয়ার পর যতই জয়ের মেজাজ থাকুক না কেন, তবুও ব্যাটসম্যান ৯০-এর পর একটু সিরিয়াস হয়ে যায়। তেমনি খেলার শেষ ওভার যদি এমন হয়, জয়-পরাজয় যদি এক বলের ওপর নির্ভর করে, তাহলে কত না উত্তেজনা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সেই সময় নিজেকে সামলান কীভাবে?
জসপ্রীত বুমরা – যদি আমি ভাবি যে আমরা হারবো, বা আমাকে ম্যাচে অতিরিক্ত কিছু করতে হবে, তাহলে আমি ভুল করতে পারি, ঘাবড়ে যেতে পারি, ভিড়ের দিকে তাকালে বা নার্ভাস হয়ে অন্য লোকেদের দিকে দেখলে আমি ভুল করতে পারি। তাই আমি সেই সময়ে মনসংযোগ করি, নিজের সম্পর্কে ভাবি যে আমি কী কী করতে পারি, অতীতে যখন ভালো করেছি, দলকে সাহায্য করতে পেরেছি তখন কী কী করেছি। আমি সেই সব কথা মনে করার চেষ্টা করি, কীভাবে দলকে ভালো দিনে সাহায্য করেছি। তাই আমি সেই সব কথা ভাবি এবং নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রধানমন্ত্রী - কিন্তু তাহলে তো অনেক টেনশন থাকে বন্ধু, পরোটা ছাড়া দিন কাটে না।
জসপ্রীত বুমরা – না স্যার, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ইডলি-পরোটা কিছুই পাওয়া যেত না। আমরা যা পেয়েছি তা দিয়েই কাজ সারছিলাম। তবে খুব ভাল প্রাকৃতিক দৃশ্য ছিল, খুব ভাল আমরা ব্যাক-টু-ব্যাক ভ্রমণও করছিলাম, তাই একটি দল হিসাবে টুর্নামেন্টটি খুব ভাল গেছে। প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছি, আমি এত আবেগ কখনও অনুভব করিনি, এখন খুব গর্ব অনুভব করছি। আর এর থেকে ভাল অভিজ্ঞতা আমার আগে হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী- আপনি খুব ভালো খেলেছেন, দেশ আপনাকে নিয়ে গর্বিত, সেজন্য আপনারও গর্ব হবে। (হার্দিক পান্ড্যার দিকে তাকিয়ে) হ্যাঁ, হার্দিক বলুন।
হার্দিক পান্ড্যা– প্রথমেই স্যার, আমাদের এভাবে ডাকার জন্য ধন্যবাদ, আর আমি সাক্ষাতকারের সময় যা বলেছিলাম, আমি এটা বলেছিলাম কারণ এই ছয় মাস আমার জন্য অনেক উত্থান-পতনের ছিল। আমি যেখানেই মাটিতে গিয়েছি, দর্শকরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে, এবং অনেক কিছু ঘটেছে। কিন্তু আমি সর্বদা বিশ্বাস করতাম যে আমি যদি উত্তর দিই, তবে আমি খেলার মাধ্যমেই দেব এবং কখনোই মুখে দেব না। আর তার মানে আমি তখনও বাকরুদ্ধ ছিলাম এবং এখনও বাকরুদ্ধ, কেউ কেউ যতই বলুক, আপনি সবসময় ঝগড়া করেন। আমি সর্বদা জীবনে বিশ্বাস করতাম যে আমাকে যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এবং কখনও মাঠ ছাড়বো না। কারণ, কঠিন সময়ও এটাই শেখায় এবং আপনি জানেন সাফল্যও একই জিনিস শেখায়। তাই স্যার, আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে টিকে থাকব, কঠোর পরিশ্রম করব এবং আপনি জানেন, গোটা দলের সমর্থন, খেলোয়াড়, অধিনায়ক ও কোচ খুব ভাল ছিল। আমরা শুধু প্রস্তুতি, প্রস্তুতি নিয়েছি, আর আপনি জানেন যে ঈশ্বরের কৃপায় আমি শেষ ওভারে বল করার সুযোগ পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী- না, ওই ওভারটা আপনার জন্য ঐতিহাসিক ছিল কিন্তু আপনি সূর্যকে কী বললেন?
হার্দিক পান্ড্যা – সূর্য যখন ক্যাচ নিলো, আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল আনন্দ, আমরা সবাই উদযাপন করেছি। তারপর আমার মনে হয়, আমার সূর্যকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে সূর্য ঠিকঠাক আছে কিনা ! তাই প্রথমে নিশ্চিত করে নিই যে ভাই, আমরা সেলিব্রেট করেছি, কিন্তু সে ঠিক আছে কিনা! যখন সে বলে, না-না, ঠিক আছি। আমি বলি, ভাই গেম চেঞ্জিং ক্যাচ নিয়েছ, এতক্ষণ আমরা টেনশনে ছিলাম, তারপর থেকে আমরা সবাই খুশিতে চনমনে।
প্রধানমন্ত্রী- হ্যা, সূর্যকুমার।
সূর্যকুমার যাদব - হারিয়ে গেলাম স্যার! স্যার, সেই মুহুর্তে একটাই চিন্তা ছিল যে আমি যাই করি না কেন, জিততে হবে। শুরুতে আমি বলটা ধরব কি না, তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন ভাবি যে আমি বল ভিতরে ধাক্কা দেবো. সেটা এক রান হোক, দুই রান হোক, সর্বোচ্চ কারণ বাতাসও সেরকমই বইছিল। কিন্তু একবার যখন হাতে পাই, আমি শুধু ধরে নিয়ে অন্যদিকে ফেলতে চেয়েছি। অন্য দিকে দিতে চেয়েছি, তখন দেখি, রোহিতও সেই সময় অনেক দূরে ছিল। আমি বলটা উড়িয়ে দিই এবং সেটি আমার হাতে আসে. তবে আমরা ইতিমধ্যে এটি অনেক অনুশীলন করেছি। একটা জিনিস নিয়ে ভাবতাম, আমি সবসময় ব্যাটিং করি, কিন্তু ওভার শেষ হয়ে গেলে দলে আর কী অবদান রাখতে পারি, সেটা ফিল্ডিং হোক বা অন্য কিছু।
প্রধানমন্ত্রী- তাই?
সূর্যকুমার যাদব – টোট্যাল মানে স্যার, টুর্নামেন্টের শুরু থেকে আর তার আগে থেকে, আইপিএলের সময় থেকে আমি এমন অনেক ক্যাচ নিয়েছি, কিন্তু আমি জানতাম না যে ঈশ্বর এমন সময়ে ক্যাচ করার সুযোগ দেবেন, তবে আমি আগে থেকেই অনুশীলন করেছিলাম। তাই সেই পরিস্থিতিতে আমি একটু শান্ত ছিলাম। জানতাম যে এই ধরনের পরিস্থিতি আগে ঘটেছে. কিন্তু আগে পেছনের স্ট্যান্ডে কেউ বসে ছিল না, কিন্তু সেই সময় আরও কয়েকজন বসেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে ক্যাচ নিয়ে খুব ভালো লেগেছে...
প্রধানমন্ত্রী- আপনাকে বলি যে আমি এর প্রশংসা না করে থাকতে পারব না… কারণ প্রথমত, পুরো দেশের মেজাজ… উত্থান-পতন ছিল খুব উত্তেজনাপূর্ণ এবং তার উপরে, এই ক্যাচ পুরো পরিস্থিতিকে উল্টে দেয়… এটি নিজেই একটি বড় ব্যাপার হয়ে উঠেছে আর যেহেতু এটি আপনার জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আপনি তো বন্ধু অত্যন্ত ভাগ্যবান ব্যক্তি…
সূর্যকুমার যাদব – আরেকটি স্টার লেগে গেল স্যার … এখন আমার খুব ভাল লাগছে…
প্রধানমন্ত্রী- আপনাকে অনেক অভিনন্দন!
সূর্যকুমার যাদব – ধন্যবাদ স্যার!
প্রধানমন্ত্রী: (অর্শদীপ সিংকে) আপনার বাবার একটি বক্তব্য সারা দেশে বারবার আলোচিত হচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী উত্তর দিয়েছেন… তিনি বলেছেন, দেখুন আগে দেশ, পরে ছেলে, এ তো অনেক বড় কথা! হ্যাঁ অর্শদীপ, বলুন...
অর্শদীপ সিং- স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ, প্রথমে আপনি আমাদের আপনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিয়েছেন আর তারপর, আপনার ক্রিকেট নিয়ে খুব ভাল অনুভূতি রয়েছে, স্যার… খুব ভালো লাগছে যে আমরা এই টুর্নামেন্ট জিতেছি, আর বোলিংয়ে যেমন আমি আগে বলেছি, খুব ভালো লাগে যখন জসসি ভাই পাশ থেকে বোলিং করেন। তিনি ব্যাটসম্যানদের উপর অনেক চাপ রাখেন। তখন ব্যাটসম্যানরা আমার বল মারার চেষ্টা করে, ফলে আমি অনেক উইকেট পাই। আর বাকি বোলাররা খুব ভালো বোলিং করেছে, তাই আমি বলব যে এর ফল আমি পেতে থাকি আর খুব মজা পাই। আমি উইকেট পেলেও এর কৃতিত্ব পুরো দলের।
প্রধানমন্ত্রী: (অক্ষর প্যাটেলকে) অক্ষর যখন স্কুলে খেলতেন, একবার হয়তো তাকে পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম।
অক্ষর প্যাটেল- ৮ম শ্রেণীতে…
প্রধানমন্ত্রী: ক্রীড়া জগতের সঙ্গে আমার নিজের কোনো সম্পর্ক নেই... কিন্তু যখনই খেলাধুলার জগতে কোনও সাফল্য আসে, আমার মন তাতে যুক্ত হয়।
অক্ষর প্যাটেল - এই ক্যাচে তাদের জুটি ছিল প্রথম ওভারে, কিন্তু তার পরে পড়েনি এবং কুলদীপ যখন বল করছিলেন, আমি যে দিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই দিকেই বাতাস বইছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম এবং যখন সে শটটি মারল, আমি ভেবেছিলাম এটি একটি সহজ ক্যাচ হতে চলেছে কিন্তু বলটি বাতাসের সঙ্গে এত দ্রুত আসতে শুরু করে যে প্রথমে ভাবছিলাম এটি বাম হাতে ধরব। কিন্তু যখন দেখি বলটি ডান হাতের দিকে আসছে তখন লাফিয়ে উঠি, আর যখন আমার হাতে লেগে জোরে আওয়াজ হল, তখন বুঝতে পারি যে আমি ধরেছি। এ ধরণের ক্যাচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা যায় না, ১০বারের মধ্যে ৯ বার বড়ো বড়ো ফিল্ডাররা এই ধরনের ক্যাচ মিস করেছে, কিন্তু আমি ভাগ্যবান যে এই বিশ্বকাপে, যখন দলের প্রয়োজন ছিল, এমন সময়ে আমি সেই ক্যাচটি ধরেছি।
প্রধানমন্ত্রী: ( হেসে কুলদীপ যাদবকে) তাহলে আমূলের দুধ তার শক্তি দেখাচ্ছে?
কুলদীপ যাদব - অনেক ধন্যবাদ মহোদয়
প্রধানমন্ত্রী: - কুলদীপ বলবো, নাকি দেশদীপ বলে ডাকবো?
কুলদীপ যাদব- স্যার, সবার আগে আমি দেশের সন্তান, তাই অবশ্যই স্যার… আমি ভারতের হয়ে সব ম্যাচ খেলা উপভোগ করি, এটা অনেক মজার এবং আমি খুব গর্বিতও। আর দলে আমার ভূমিকাও তেমনিই, যেমন একজন অ্যাটাকিং স্পিনারের হয়া উচিত। তাই আমি সবসময় মাঝামাঝি ওভারে বোলিং করি, তাই অধিনায়ক এবং কোচের পরিকল্পনাও সবসময় এটাই থাকে। আর আমার ভূমিকাও মাঝামাঝি ওভারে উইকেট নেওয়া, তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি মাঝের ওভারে উইকেট নেওয়ার। যদি ফাস্ট বোলাররা ভালো সূত্রপাত করে, দু- একটি উইকেট নিয়ে নেয়, তাহলে মাঝের ওভারগুলিতে বোলিং করা একটু সহজ হয়ে যায়। তাই খুব ভালো লাগছে, খুব ভালো লাগছে। আমি তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি আর এবার ভাল সুযোগ ছিল, আমি ট্রফি হাতে নিতে পেরে খুব খুশি হয়েছি স্যার…
প্রধানমন্ত্রী:- তাহলে কুলদীপ, ক্যাপ্টেনকে নাচানোর সাহস কীভাবে হল?
কুলদীপ যাদব- আমি ক্যাপ্টেনকে নাচ করাইনি!
প্রধানমন্ত্রী: আরে, এই বিজয়ে খুশি হয়ে এটা ওটা করতে বলেন নি?
কুলদীপ যাদব- আমি তাঁকে অন্য কিছু করতে বলেছিলাম.. কিন্তু তিনি যখন বললেন যে তা করতে পারবেন না, তখন তাঁকে বলি যে তিনি এটা করতে পারেন। কিন্তু আমি যা বলেছিলাম সেভাবে তিনি করেননি...
প্রধানমন্ত্রী:- তার মানে অভিযোগ রয়েছে? (রোহিত শর্মার দিকে তাকিয়ে) ২০০৭-এ সর্বকনিস্ট খেলোয়াড় আর ২০২৪-এ বিজয়ী দলের ক্যাপ্টেন – কেমন লাগছে?
রোহিত শর্মা- স্যার, সত্যি কথা বলতে, আমি যখন প্রথমবার ২০০৭ সালে দলে আসি, তখন আমরা আয়ারল্যান্ডে একটা ট্যুর করেছিলাম যেখানে রাহুল ভাই অধিনায়ক ছিলেন। এরপর আমরা বিশ্বকাপের জন্য সরাসরি দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যাই। আর আমরা সেখানে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। বিশ্বকাপ জেতার পর আমরা যখন ভারতে আসি, তখন যেন গোটা মুম্বই পথে নেমে এসেছিল! বিমানবন্দর থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম যেতে আমাদের পাঁচ ঘণ্টা লেগেছিল। এর ২-৩ দিন পর থেকে আমার মনে হতে থাকে যে, বিশ্বকাপ জেতা বেশ সহজ। কিন্তু এরপর বিশ্বকাপ আসতে থাকে, অনেকবার কাছে এসেছি কিন্তু জিততে পারিনি। এই বিশ্বকাপ নিয়ে একটা কথা আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে আমরা যখন এখান থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলাম তখন খেলোয়াড়দের মনে অনেক মরিয়া ভাব এবং প্রচুর ক্ষুধা ছিল… আমরা যখন নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম তখন সেখানে অনেক অসুবিধা ছিল। নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছে, আগে কখনও এভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি, অনুশীলনের জন্য পিচ ভালো ছিল না। কিন্তু ছেলেরা কেউই সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছিল না, তাদের একটাই ফোকাস ছিল, আমরা কিভাবে বার্বাডোসে ফাইনাল খেলতে যাবো ! তাই এমন একটি দলের অধিনায়ক হতে পেরে ভাল লেগেছে যে দলের প্রত্যেক সদস্যের লক্ষ্য একই - কীভাবে জেতা যায়? আর যখন আমরা দেখি যে মানুষের মুখে অনেক হাসি এবং সাধারণ মানুষ খেলা দেখে একে অপরের সঙ্গে রাতের পর রাত উপভোগ করছে, ভারতের পতাকা নিয়ে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমরা এখানে একটি দল, আমাদের উদ্দেশ্যও পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা। যেমন রাহুল ভাই এবং শচীন তেন্দুলকর এবং সৌরভ গাঙ্গুলী, লক্ষ্মণের মতো মহান খেলোয়াড়রা খেলতেন… আমরা নবীনরা সবাই তাঁদের দেখতাম, তাঁরা তখন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করেছেন। কিন্তু আজ আমাদেরও একটি দায়িত্ব আছে, আমরা আগামী প্রজন্মকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারি– এটা দেখা! আর সম্ভবত এই বিশ্বকাপ জেতার ফলে আমি নিশ্চিত যে সেই উত্সাহ অবশ্যই থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী:- রোহিত আপনি কি সবসময়ই এতটা সিরিয়াস থাকেন?
রোহিত শর্মা – স্যার, এটা তো আসলে ছেলেরাই বলতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী:- সব ম্যাচ জেতা, আর এবার আপনাদের প্রতিযোগী দেশও বেশি ছিল। অনেক নতুন দেশও এখন যোগ দিচ্ছে এবং ক্রিকেটে এটা সত্যি যে, যে ব্যক্তি অনেক পরিশ্রম করে ফিরে আসেন, তিনি বোধহয় বুঝতেই পারেন না যে তিনি এত বড় কাজ করে ফেলেছেন। কারণ, তিনি এটা একটানা করে যাচ্ছেন। দেশে প্রভাব আছে, কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে একটা বিশেষত্ব আছে। ভারতের ক্রিকেট সফর খুবই সফল হয়েছে। এই সাফল্য এখন অন্যান্য খেলাকেও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। আর ক্রীড়াবিদরাও মনে করেন যে ক্রিকেটাররা যদি এই সাফল্য পেতে পারে তাহলে আমরা কেন করতে পারবো না? তার মানে আপনাদের সাফল্য এই বড় অনুপ্রেরণার কাজ করছে। নিজেকে ও দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সকল খেলাধুলায় একই চেতনা তৈরি করতে হবে যে আমরা বিশ্বমঞ্চে দেশের পতাকা উত্তোলন করব। আর আমি আজ দেখছি যে, দেশের ছোট ছোট গ্রাম থেকে প্রতিভা উঠে আসছে টায়ার-থ্রি শহর থেকে… আগে বড় বড় শহর ও বড় ক্লাবগুলো থেকে আসত। এখন তা নয়, দেখবেন, আপনার দলের অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড় ছোট ছোট জায়গা থেকে আসা মানুষ। এটি আসলে জয়ের প্রভাব এবং যার ফলাফল আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাই। আফগানিস্তানের মন্ত্রীর বক্তব্যটি ছিল খুবই মজার। আফগানিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে শেষ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, এবারের সফর তাঁদের জন্য খুব সফল ক্রিকেট সফর ছিল, তবে তিনি ভারতকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন যে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের উন্নতির পেছনে রয়েছে ভারতের জনগণ, যাঁরা আমাদের ছেলেদের তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী :- আপনারা তো রাহুলের বয়স ২০ বছর কমিয়ে দিয়েছেন।
রাহুল দ্রাবিড় – এর কৃতিত্ব এই ছেলেদেরই... আমি সবসময় বলি... আমি খেলোয়াড় ছিলাম আর এখন কোচও ছিলাম। আমরা শুধু এই ছেলেদের সাপোর্ট করতে পারি। এই গোটা টুর্নামেন্টে আমি তো এক রানও করিনি, একটি উইকেটও নিইনি, একটি ক্যাচও ধরিনি। আমরা শুধু সাহায্য করতে পারি। আর শুধু আমি নই, আমাদের গোটা সাপোর্ট টিম, আমাদের অন্য যত কোচ রয়েছেন; তাছাড়াও অনেক সাপোর্ট স্টাফ রয়েছেন। আমার মতে তাঁরা সবাই অনেক পরিশ্রম করেন, অনেক কাজ করেন। কিন্তু তবু আমরা শুধু এই ছেলেদের সাপোর্টই করতে পারি। মাঠে যে খেলার চাপ তৈরি হয়, যখন দ্রুত রান করতে হয়, কিংবা প্রতিপক্ষের রান আটকাতে হয় তখন তা বিরাট, রোহিত কিংবা বুমরাহ বা হার্দিক বা এখানে যত খেলোয়াড়রা রয়েছেন তারাই করে। আমরা শুধু বাইরে থেকে সাপোর্ট করতে পারি। তাদের যা যা চাই তা দিতে পারি। কাজেই এই জয়ের পুরো কৃতিত্ব ওদেরই। তারাই আমাকে এ রকম একটা আনন্দের মুহুর্ত দিয়েছে, এমন আনন্দের মুহুর্ত আমাকে দিয়েছে যার জন্য আমি সারা জীবন এই ছেলেদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। এই ছেলেদের সঙ্গে আমার এতো ভালো সময় কেটেছে, তাঁরা আমাকে এতো সুন্দর মুহুর্ত উপহার দিয়েছে, এতো ভালো অভিজ্ঞতা দিয়েছে- সেজন্য আমি শুধু এ কথাই বলতে চাইবো, যখন এই টুর্নামেন্টে দলের টিম স্পিরিট এতো ভালো ছিল, মাঠে যে ১১ জন খেলছিলো তাদের থেকে বাইরে যে চারজন বসেছিল; তারা কোনো অংশে কম ছিল না। এদের মধ্যে মহম্মদ সিরাজ প্রথম তিনটি ম্যাচ খেলেছিল। ইউএসএ-তে আমরা একজন অতিরিক্ত ফাস্ট বোলার নিয়ে খেলছিলাম। সেজন্য মহম্মদ সিরাজ এই টুর্নামেন্টে শুধু তিনটি ম্যাচ খেলেছে আর বাকি ৩ জন শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় একটিও ম্যাচ খেলেনি। সঞ্জু স্যামসন একটিও ম্যাচ খেলেনি। যুজভেন্দ্র চাহল একটি ম্যাচেও খেলার সুযোগ পায়নি। যশস্বী জয়সওয়ালও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তাদের যে টিম স্পিরিট ছিল, তাদের যে উৎসাহ ছিল, তারা কখনও বাইরে দেখে মাথা নিচু করে বসে থাকেনি। এটাই আমাদের জন্য, আমাদের দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তা হল খেলা চলার সময় বাইরে বসে থাকা খেলোয়াড়দের আচার-আচরণ। এক্ষেত্রেও আমাদের ছেলেদের শরীরী ভাষা ছিল অতুলনীয়। সেজন্য তাদেরকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী- আমার ভালো লেগেছে একজন কোচ হিসেবে দলের সমস্ত সদস্যদের দিকে যেভাবে আপনি নজর রেখেছেন, আর আমি মনে করি কেউ যদি আপনার এই ৩-৪টে বাক্যও শোনে তাহলে তাঁর মনে হবে যে ভাই, হয়তো তাদের আমরা মাঠে খেলতে দেখিনি, কিন্তু তারাও সমানভাবে দলকে উজ্জীবিত রেখেছে। তারাও দলকে একসঙ্গে জুড়ে রেখেছে। আর ক্রিকেটে আমি দেখেছি মাঠে থাকুক কিংবা মাঠের বাইরে দলের সাফল্যের প্রত্যেক সদস্যের কোনও না কোনও অবদান থাকেই। অনেক বেশি টিম স্পিরিটের প্রয়োজন হয়, তবেই সাফল্য আসে। কিন্তু রাহুল, আমি অবশ্যই জানতে চাইবো যে ২০২৮ সালে ইউএসএ-তে যখন অলিম্পিক হবে তখন সেখানে ক্রিকেটও খেলা হবে। এবার অলিম্পিকে ক্রিকেট স্থান করে নিয়েছে। আর আমার মনে হয় বিশ্বকাপ থেকেও বেশি করে মানুষের নজর অলিম্পিকের দিকে থাকবে। যদি ভারত সরকার আমাদের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড এবং আপনাদের মতো মহান খেলোয়াড়রা অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতির কথা ভাবেন, কেমনভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হবে তা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন। তাহলে এক্ষেত্রে আপনার কী প্রতিক্রিয়া থাকবে।
রাহুল দ্রাবিড়- অলিম্পিকে খেলা প্রকৃত পক্ষে একজন ক্রিকেটারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যেহেতু ২০২৮ সালে প্রথমবার অলিম্পিকে ক্রিকেট খেলা হবে... আমার মতে এটি দেশের জন্য এবং ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় ব্যাপার হতে চলেছে। ওই টুর্নামেন্টে আমাদের খুব ভালো ক্রীড়া নৈপুন্য দেখাতে হবে। আর যেমন আপনি আগেও বলেছেন অন্যান্য খেলার সঙ্গে পাশাপাশি থাকা, কারণ সেসব খেলাতেও কত না অসাধারণ খেলোয়াড় রয়েছেন, তাদের ক্রীড়া নৈপু্ণ্য আমাদের দেশবাসীকে গর্বিত করে। অলিম্পিক একটি অনেক বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এতে ক্রিকেট চালু হওয়া ক্রিকেটের জন্য একটি গর্বের কথা। আর আমি দৃঢ় নিশ্চিত যে সেই সময় আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে যারা থাকবেন, আমাদের বিসিসিআই-এর দায়িত্ব যাঁরা সামলাবেন, তাঁরা সেই টুর্নামেন্টের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সেই দলে এবারের বিজয়ী দল থেকেও অনেকেই খেলবেন। আমি আশাবাদী রোহিত এবং বিরাটও খেলবে।
প্রধানমন্ত্রী- হ্যাঁ ২০২৮ পর্যন্ত তো অনেকেই থাকবে! ২০২৮ পর্যন্ত তো অনেকেই থাকবে!
রাহুল দ্রাবিড়- আমি দৃঢ় নিশ্চিত এই ছেলেরা সাফল্য পাবে আর সেখান থেকে সোনা জিতে আসবে। আর সেজন্য গোটা দলকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী- আমি দেখতে পাচ্ছি, এই জয়ের আনন্দে আপনাদের অনেকের চোখ অশ্রুসজল। কিন্তু যখন আপনাদের দেখছি তখন বুঝতে পারছি যে পরাজয়ের মুহুর্তগুলি কতো কঠিন হয়। পরাজয়ের মুহুর্তগুলি, সেই পরিস্থিতিতে মানুষ অনুভব করতে পারে না, প্রত্যেক খেলোয়াড় কতটা যন্ত্রনা সহ্য করে। কারণ, তারা অনেকে এতোদূর তপস্যা করে এগোন, আর মাত্র এক পায়ের জন্য আটকে যান। আর যখন তারা জয়লাভ করেন, তাঁদের আনন্দ থেকে বোঝা যায় যে তাঁদের সেই পরাজয়ের মুহুর্তগুলি কত না সমস্যা সঙ্কুল ছিল। আর আমি গতবার তাঁদের সবাইকে দেখেছি এবং নিজেও অনুভব করেছি! আর আমার বিশ্বাস ছিল যে আপনারা হাল ছাড়বেন না। আর আজ আমি বুঝতে পারছি যে আপনারা তা করে দেখিয়েছেন। আপনাদের প্রত্যেকেই অনেক অনেক অভিনন্দনের অধিকারী। আপনাদের প্রত্যেককে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।