আপনাদের সকলকে অসংখ্য অভিনন্দন! আপনারা মানবতার জন্য এক বিশাল কাজ করে ফিরেছেন। ‘অপারেশন দোস্ত’ – এর সঙ্গে যুক্ত সম্পূর্ণ দলটি এনডিআরএফ, সেনা, বায়ু সেনা সহ অন্য পরিষেবা ক্ষেত্রের কর্মীরাও অভূতপূর্ব কাজ করেছেন। এমনকি, আমাদের কন্ঠহীন সদস্য, ডগ স্কোয়াড – এর সদস্যরাও তাদের অসামান্য ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। দেশ আপনাদের সকলের জন্যই অত্যন্ত গর্বিত।
বন্ধুগণ,
আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শিখিয়েছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই এক পরিবার। এই মন্ত্র আমাদের সর্বদাই অনুপ্রাণিত করে। আমরা সর্বদাই এই ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হই যে, “উদার মানসিকতার জনগণ কখনই নিজের বা অন্যকে নিয়ে চিন্তা করেন না। তাঁদের জন্য সমগ্র বিশ্বই একটি পরিবার”।
বন্ধুগণ,
তুরস্ক বা সিরিয়া সর্বত্রই সমগ্র দলটি ভারতীয় এই মূল্যবোধকে সামনে রেখে কাজ করেছে। আমরা সমগ্র বিশ্বকে আমাদের পরিবার মনে করি। তাই যখন পরিবারের কোনও সদস্য বিপদের সম্মুখীন হন, তখন ভারতের দায়িত্ব তাঁদের দ্রুত সাহায্য করা। যে দেশই হোক না কেন, মানবতার প্রসঙ্গে ভারত সর্বদাই জনস্বার্থকে গুরুত্ব দেয়।
বন্ধুগণ,
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় কত দ্রুত সাহায্য পৌঁছনো হচ্ছে, এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। যেমন – দুর্ঘটনার সময় ‘গোল্ডেন আওয়ার’ – এর কথা উল্লেখ করা হয়। তেমনই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও একটি ‘গোল্ডেন টাইম’ রয়েছে। কত দ্রুত সাহায্যকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালো – তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যে দ্রুততার সঙ্গে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কে আপনারা পৌঁছেছেন, তা সমগ্র বিশ্বের নজর কেড়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আপনাদের দক্ষতা ও প্রস্তুতি কতটা সঠিক রয়েছে। যেভাবে আপনারা ১০ দিন সেখানে কাজ করেছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণার যোগ্য। আমরা সকলেই সেই ছবিগুলি দেখেছি, যেখানে একজন মা আপনাদের কপালে চুম্বন করে আশীর্বাদ দিচ্ছেন, কিংবা ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা এক অসহায় প্রাণ আপনাদের সহায়তার পুনরায় হাসতে পেরেছেন। আমি জোর দিয়ে এটা বলতে পারি যে, সেখান থেকে আসা প্রতিটি ছবিই সমগ্র দেশকে গর্বিত করেছে। ভারতীয় দলের পেশাদারিত্বের পাশাপাশি, কাজে যে মানবিক স্পর্শ ছিল, তা অতুলনীয়। কোনও মানুষ যখন ভীত থাকেন, কিংবা কেউ যখন সর্বহারা অবস্থা থেকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন এই মানবিক স্পর্শ তাঁদের জীবনে আলাদা মাত্রা যোগ করে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যতটা সহমর্মিতার সঙ্গে সেনা হাসপাতাল ও তার কর্মীরা কাজ করেছে – তা বিশেষ প্রশংসার যোগ্য।
বন্ধুগণ,
২০০১ সালে গুজরাটে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তারচেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভয়াবহ ছিল তুরস্ক ও সিরিয়ার এই ভূমিকম্প। গুজরাটের ভূমিকম্পের সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ধ্বংসস্তুপ থেকে জনগণকে খুঁজে বের করাতে নানা সমস্যা ছিল। এছাড়াও, খাবার, ওষুধ ও হাসপাতালের সমস্যাও এই সময় বিশেষভাবে দেখা দিয়েছিল। গুজরাট ভূমিকম্পের সময় ভুজের একটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে, সমগ্র ব্যবস্থাটি ভেঙ্গে পড়েছিল। সেটি ছিল আমার এ ধরনের প্রথম অভিজ্ঞতা। একইভাবে, মোরবিতে যখন মাচ্ছু বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে, তখন একটি গ্রাম ভেসে যায়। মোরবি শহরটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। শত শত মানুষ প্রাণ হারান। সেখানেও আমি অনেক মাস স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার সেইসব অভিজ্ঞতা স্মরণ করে আমি আপনাদের কাজ করার পরিস্থিতি অনুভব করতে পারছি। ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালানোর সময় আপনাদের কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে এবং কী কী অভিজ্ঞতা আপনারা অর্জন করেছেন, তা কল্পনা করতে পারছি। আর তাই জন্য আজ আমি আপনাদের অভিবাদন জানাই।
বন্ধুগণ,
যে ব্যক্তি নিজেকে সাহায্য করতে পারেন, তিনি স্বনির্ভর। কিন্তু, তাঁর যখন অন্যকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকে, তখন তিনি নিঃস্বার্থ। এই চিন্তাভাবনা কেবলমাত্র ব্যক্তির জন্য নয়, দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিগত কয়েক বছরে ভারত স্বনির্ভর হয়ে ওঠার পাশাপাশি, নিজের পরিচিতি সুদৃঢ় করে তুলেছে। যেখানেই ভারতীয় দল পৌঁছক না কেন, সেখানকার জনগণ নিশ্চিত থাকেন যে তাঁরা এবার যথাযথ সাহায্য পাবেন। সিরিয়ায় এই উদাহরণ আপনারা দেখেছেন যে, ভারতের একটি পতাকা উল্টো করে লাগানো ছিল, সেখানকার একজন নাগরিক তা ঠিক করে দেন এবং গর্বের সঙ্গে তা জানিয়ে বলেন, অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতার জন্য ভারতকে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে ধন্যবাদ দেন। ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার একই ভূমিকা আমরা দেখেছি কয়েকদিন আগে ইউক্রেনেও। সেখানে ‘অপারেশন গঙ্গা’র আওতায় ভারতীয় নাগরিকদের পাশাপাশি, অন্য দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করার কাজ অনেকের মনেই নতুন করে আশার আলো সৃষ্টি করেছে। আমরা ‘অপারেশন দেবী শক্তি’র আওতায় অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান থেকে আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে এনেছি। করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতেও আমরা এই একই প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা দেখেছি। ভারত বিভিন্ন দেশ থেকে প্রত্যেক নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। অন্যান্য অনেক দেশের জনগণকেও আমরা সেই সময় সাহায্য করেছি। ভারত বিশ্বের শতাধিক দেশকে জরুরি ওষুধ ও প্রতিষেধক দিয়ে সাহায্য করেছে। এর ফলশ্রুতিতে ভারতের সুনাম এখন বিশ্বের সর্বত্র।
বন্ধুগণ,
‘অপারেশন দোস্ত’ মানবতার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং বিপদের সময় দ্রুত অন্য দেশকে সাহায্য করার মানসিকতার পরিচয় দেয়। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বিপর্যয়ের সময় ভারত সর্বপ্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে। নেপাল ভূমিকম্প, মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কা সঙ্কটকালেও ভারতই প্রথম সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। বর্তমানে বিশ্বের অন্য দেশগুলিরও ভারতীয় সেনাবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উপর আস্থা বাড়ছে। আপনাদের সাহায্যে তাঁরা যে কোনও সঙ্কট মোকাবিলায় আশ্বস্ত বোধ করেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিধ্বস্ত কোনও অঞ্চলে যখন আপনারা পৌঁছান, তখন সেখানকার মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার আলো সঞ্চারিত হয়। এ এক বিশাল সাফল্য। কোনও বাহিনীর কর্মদক্ষতার সঙ্গে যখন সহমর্মিতা ও মানবিক দিকটি ফুটে ওঠে, তখন তার কাজে বিশেষ সাফল্য আসে। আমি এই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের জন্য জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করি।
বন্ধুগণ,
আপনাদের প্রস্তুতির বিষয়ে দেশের আস্থা রয়েছে। কিন্তু, আমরা এখানে থেমে থাকবো না। বিপদের সময় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। সমগ্র বিশ্বে সেরা ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল হিসাবে আমাদের পরিচিতি আরও ব্যাপক করতে হবে। তাই, আমি অবিরাম আপনাদের কাজের পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাই। আমরা মানবতার জন্য দায়িত্ব সহকারে কাজ করি। কিন্তু এ ধরনের বিপর্যয় থেকে নানা শিক্ষাও লাভ করি। এই বিশাল বিপর্যয়ের সময় কাজ করতে গিয়ে ১০টি নতুন জিনিস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা উপলব্ধি করেছি যে, আরও ভালোভাবে আমরা কাজটি করতে পারতাম। আমাদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা ১০ দিন তুরস্কের জনগণকে উদ্ধারের কাজে ব্যয় করেছি। সেখানকার অভিজ্ঞতার যথাযথ লিপিকরণ প্রয়োজন। আমরা এই বিপর্যয় থেকে নতুন কী শিখলাম? এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের ক্ষমতা কী করে বাড়াবো? এবার প্রথম আমাদের মেয়েরাও সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের উপস্থিতি সেখানকার মহিলাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করে। তাঁরা তাঁদের যন্ত্রণা ও অভিযোগের কথা ভাগ করে নিতে পেরেছেন। এর আগে কখনও ভাবা হয়নি যে, এ ধরনের বিপদ মোকাবিলায় আমাদের মেয়েরা কাজ করতে পারেন। কিন্তু, এবার তাঁদের পাঠানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও খুব কম সংখ্যায় মেয়েরা সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁদের উপস্থিতি সেখানে বিশেষ গুরুত্ব পায়। আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা নিজেরা নিজেদের আরও যত প্রস্তুত করবো, তত ভালোভাবে বিশ্বকে পরিষেবা দিতে পারব।
বন্ধুগণ,
আমি বিশ্বাস করি যে, আপনারা অনেক কাজ করেছেন এবং অনেক কিছু শিখেছেন। আপনাদের কাজ দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। আপনারা যে শিক্ষা সেখান থেকে লাভ করেছেন, তা আগামী দিনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। আমি নিশ্চিত যে, আপনাদের সকলের কাছেই ভাগ করে নেবার মতো অভিজ্ঞতা ও গল্প রয়েছে। সেখানকার আবহাওয়ায় আপনাদের সুস্থতা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কাজ করে আপনারা দেশকে গর্বিত করেছেন। আমি আরও একবার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমি জানি যে, আপনারা আজই ফিরেছেন এবং ক্লান্ত রয়েছেন। গত ১০ দিন ধরে আমি অবিরাম আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। মানসিকভাবে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আপনাদের এই অসামান্য কাজের জন্য অভিনন্দন জানাতেই আমি আজ আপনাদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আরও একবার আপনাদের সকলকে আমার অভিবাদন। আপনাদের ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে