ঘোষক : শ্রী রোহিত ভাকর, ব্যাডমিন্টন ।
প্রধানমন্ত্রীজি : রোহিতজি, এই খেলায় আপনি তো বিশ্বের মধ্যে সিনিয়র মোস্ট বা সবচাইতে বয়ঃজ্যেষ্ঠ প্রতিযোগী। কত বছর ধরে আপনি অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করছেন রোহিতজি?
রোহিতজি : মহাশয়, আমি ১৯৯৭ সাল থেকে ক্রমাগত অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : যখন আপনার সামনের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলেন, তখন তাঁদের সঙ্গে কোচ বা প্রশিক্ষক হিসেবে অনেক পুরনো খেলোয়াড়ও হয়তো আসেন। তখন আপনার কেমন মনে হয়?
রোহিতজি : স্যার, যখন আমি শুরুতে খেলতাম, ১৯৯৭ সাল থেকেই আমার মতো বধির ব্যক্তিদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, আর তখন থেকেই আমার চেষ্টা ছিল যে এমন পরিশ্রম করব যাতে অলিম্পিকে খেলতে পারি। আমি যাঁরা কানে শুনতে পান, সেরকম বড়ো বড়ো খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতাম। তাঁদের থেকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম, আর এখন পর্যন্ত আমি বিশ্বের প্রায় সমস্ত শ্রেষ্ঠ বধির প্রতিযোগীদের সঙ্গে খেলেছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা রোহিত, নিজের সম্পর্কে একটু বলুন। এই খেলায় কিভাবে এসেছেন? শুরুতে কে কে আপনাকে প্রেরণা যুগিয়েছেন, আর এত দীর্ঘ সময় ধরে অবিরাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চ মান বজায় রেখে প্রাণপণে খেলে যাওয়া, কখনও ক্লান্ত না হওয়া – এসব কিভাবে সম্ভব হয়েছে?
রোহিতজি : স্যার, যখন আমি অনেক ছোট ছিলাম, আর হয়তো আমার মনেও নেই যে ঠিক কবে থেকে, যখন আমি সবাইকে খেলতে দেখতাম, মনে করুন মা-বাবার সঙ্গে এমনি কোথাও যাচ্ছি, তখন সবাইকে খেলতে দেখতাম, সবাইকে খেলতে দেখে খুব ভালো লাগত কিন্তু, এটা ভাবতাম যে বধিররা কিভাবে খেলে। আমিও খেলতে চাইতাম, আর তখন থেকেই আমি নিজের মনে ঠিক করেছি যে আমাকে খেলতে হবেই, আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে গিয়েছি। যখন আমি ১৯৯৭ সালে খেলতে শুরু করি, তার আগে বধিররা খেলতেন না। আমি কোনওভাবে সাপোর্ট পাচ্ছিলাম না। শুধু আমাকে সান্ত্বণা দেওয়া হত। আমি এক্ষেত্রে আমার বাবার সাহায্য পেয়েছি। তিনি আমাকে উপযুক্ত খাবার-দাবার, ফলের রস ইত্যাদি যত ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য খেলোয়াড়দের চাই, সেগুলির কখনও অভাব হতে দেননি। তিনি সব সময় লক্ষ্য রাখতেন। ঈশ্বরের অসীম কৃপায় এমন বাবা পেয়েছি, আর ব্যাডমিন্টন তো আমার ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত প্রিয় খেলা।
প্রধানমন্ত্রীজি : রোহিত, আপনি যখন ডাবলস খেলেন, তখন আমি শুনেছি আপনার যে পার্টনার মহেশ, সে আপনার থেকে বয়সে অনেক ছোট। আপনি তাঁর থেকে এত সিনিয়র, এতটা বয়সের পার্থক্য, মহেশ আপনার থেকে এত ছোট, আপনি তাঁকে কিভাবে সামলান, কিভাবে গাইড করেন, তাঁর সঙ্গে কিভাবে নিজেকে খাপ খাওয়ান?
রোহিতজি : মহেশ আমার থেকে অনেক ছোট। ২০১৪ সাল থেকে সে আমার সঙ্গে খেলছে। সে আমার বাড়ির কাছেই থাকত। আমি তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছি। কিভাবে কোর্টে মুভমেন্ট করতে হবে, কিভাবে হার্ডওয়ার্ক করতে হবে, কিভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অনুশীলনের মাধ্যমে, পরিশ্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য, ডেফলিম্পিক্সের জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে! শুরুর দিকে সে অনেকটাই ডিসব্যালান্স থাকত। মাঝেমধ্যেই ভারসাম্য রাখতে পারত না। কিন্তু আমি তাকে যেভাবে যেভাবে শিখিয়েছি, সে সেভাবেই খেলে, আমাকে খুব সাপোর্ট করে।
প্রধানমন্ত্রীজি : রোহিতজি, আমরাও আপনার পাশে থাকব। রোহিতজি, আপনার জীবন একজন খেলোয়াড় রূপে, আর একজন ব্যক্তি রূপে কতটা আলাদা? আমি মনে করি আপনার মধ্যে একটা লিডারশিপ কোয়ালিটি বা নেতৃত্বদানের স্বভাবসিদ্ধ ক্ষমতা আছে। আপনার মধ্যে কনফিডেন্স লেভেল বা আত্মপ্রত্যয় অত্যন্ত উঁচু, আর আপনি কোনও কিছু থেকে হতাশ হন না, ক্রমাগত নিজের ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে চেতনা যুক্ত করতে থাকেন। আমি মনে করি যে দেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য আপনি প্রকৃতই একজন অত্যন্ত প্রেরণার প্রতীক। আপনার নিজের জীবনে আসা বাধা- বিপত্তিগুলির কাছে আপনি কখনও হার মানেননি। ঠিক আছে, ঈশ্বর শরীরে কিছু ত্রুটি রেখেছেন, কিন্তু আপনি নিজে কখনও হার মানেননি। আপনি বিগত ২৭ বছর ধরে ক্রমাগত দেশের জন্য পদক জিতছেন, আর আমি ভালোভাবে লক্ষ্য করছি যে আপনি এখনও নিজের সাফল্যে ঠিক সন্তুষ্ট নন। কিছু না কিছু নতুন করার উদ্দীপনা আপনাকে সর্বদাই তাড়িত করে। আমি দেখতে পাচ্ছি যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ক্রীড়া প্রদর্শন ও সার্বিকভাবে আপনার খেলা আরও উন্নত মানের হচ্ছে। আপনি প্রত্যেকবারই নিজের জন্য নতুন নতুন টার্গেট বা লক্ষ্য স্থির করেন, নতুন নতুন লক্ষ্যপূরণেরও চেষ্টা করেন। আমি মনে করি যে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবনে এই একটি গুণ সারাজীবন অনেক বড় শক্তি সঞ্চার করে যেতে থাকে। তাঁরা কখনও নিজেদের সাফল্যে সন্তুষ্ট হন না। তাঁরা নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করেন, আর সেই লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে দেন, আর তারই পরিণাম হল তাঁরা আরও নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। আমার পক্ষ থেকে, আপামর দেশবাসীর পক্ষ থেকে রোহিত ভাকরকে অনেক অনেক শুভকামনা এবং অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
রোহিতজি : অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার! আমিও আপনাকে অভিনন্দন জানাই স্যার!
ঘোষক : শ্রী বীরেন্দর সিং, কুস্তি ।
প্রধানমন্ত্রীজি : হ্যাঁ ভাই বীরেন্দর জি, কেমন আছেন?
বীরেন্দর সিং : জি স্যার! আমি একদম ঠিক আছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনি ঠিক আছেন তো?
বীরেন্দর সিং : জি স্যার! হ্যাঁ স্যার ঠিক আছি!
প্রধানমন্ত্রীজি : নিজের সম্পর্কে একটু বলুন! বলুন ভাই, দেশবাসী দেখতে চায় আপনাকে!
বীরেন্দর সিং : আমার বাবা এবং আমার কাকা পালোয়ান ছিলেন। আমি তাঁদেরকে দেখেই পালোয়ানি শিখেছি, আর সেই গুণ আমার মধ্যে এসেছে, আর আমি ক্রমাগত চেষ্টা করে গিয়েছি যাতে এগিয়ে যেতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা-মা আমাকে খুব সাহায্য করতেন। কুস্তি শেখার ক্ষেত্রে বিশেষ করে আমার বাবা খুব সাহায্য করেছেন, আর আমি পালোয়ানি শিখে গিয়েছি, আর আজ এই স্তরে পৌঁছেছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : কিন্তু আপনার বাবা আর আপনার কাকা কি আজ আপনার সাফল্যে সন্তুষ্ট?
বীরেন্দর সিং : না স্যার! তাঁরা খুশি, কিন্তু তাঁরা চান যে আমি আরও খেলি, আরও সাফল্য পাই, আরও এগিয়ে যাই, আরও উন্নতি করি। যেভাবে যেভাবে দেখছি যে কানে শুনতে পাওয়া পালোয়ান সমাজের মানুষেরা ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছেন, যেভাবে তাঁরা জয়লাভ করছেন, আমিও এই কানে শুনতে পাওয়া পালোয়ানদের সঙ্গেই খেলি। আমি শ্রবণশক্তি সম্পন্ন খেলোয়াড়দেরকেও অনেকবার হারিয়েছি, আর আমি সিলেকশনে এসেছি, রাজ্য স্তরে খেলার জন্যে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু সেখানে যেহেতু আমি কানে শুনতে পাই না, সেজন্য আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, আর আমি শ্রবণশক্তি সম্পন্ন খেলোয়াড়দেরদের সঙ্গে সমানতালে এগোতে পারিনি। সেজন্য খুব কষ্ট হয়েছে। আমি অনেক কেঁদেছি। তারপর আমি যখন বধির সমাজের মধ্যে খেলতে এসেছি, তাঁদের রোমহর্ষক চেষ্টা দেখে আমি অবাক হয়েছি, আর তাঁদের সঙ্গে খেলে যখন একের পর এক জয়লাভ করেছি, তখন আমার বুক গর্বে ফুলে উঠেছে। যখন আমি প্রথমবার মেডেল পেয়েছি, তখন এমনই মনে হত যে এখন আর দরকার নেই। আমি কেন শুধু শুধু শ্রবণশক্তি সম্পন্ন সমাজের পেছন পেছন ঘুরব? এখন আমি বধির সমাজেই সুনাম অর্জন করব, আর আমি তাঁদেরকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমি অনেক মেডেল পেয়েছি। ২০০৫ সালে, তারপর ২০০৭ সালে, তারপর আমি তুরস্কে প্রথম অলিম্পিকের মেডেল জিতি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা বীরেন্দর জি, এটা বলুন যে আপনি ২০০৫ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রত্যেকবার ডেফালিম্পিক্সে দেশের জন্য পদক জিতে আনছেন। এই ক্রমাগত জয়ের শক্তি আপনি কোথা থেকে পান? এর পেছনে আপনার প্রেরণা কী?
বীরেন্দর সিং : আমি ডায়েটকে এতটা গুরুত্ব দিই না, যতটা আমি প্র্যাক্টিস বা কঠোর অনুশীলনকে গুরুত্ব দিই। আমি সুযোগ পেলেই ক্রমাগত শ্রবণশক্তি সম্পন্ন খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করি। অনেক পরিশ্রম করি। সেই পরিশ্রম বিফলে যায় না। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি কিভাবে তাঁরা খেলেন, আর তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকি। সকাল ও সন্ধ্যায় ক্রমাগত অনুশীলনে জোর দিই। আমার এই লক্ষ্য থাকে যে জিততেই হবে। যদি আমি বাইরে কোথাও খেলতে যাই, তখন আমি মা-বাবার পা ছুঁয়ে যাই, আর দেশ ছেড়ে যখন বাইরে যাই তখন মা-বাবার কথা মনে করেই খেলি। আমি খুব খুশি মনে খেলি, আর বিজয়ী হয়ে ফিরি। এই ভাবনাই আমার মনে সবচাইতে বেশি প্রেরণা যোগায়।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা বীরেন্দর জি, বিশ্বে এমন কোন কোন খেলোয়াড় রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে খেলার সময় আপনি কিছু না কিছু শেখেন, যাঁদের খেলা আপনার দেখতে ইচ্ছা করে। তাঁরা কারা?
বীরেন্দর সিং : স্যার, দেশে ও বিশ্বে যত বড় বড় কুস্তিগির আছেন, আমি সবার খেলাই দেখি, তাঁদের রণকৌশল কী তা মনোযোগ দিয়ে দেখি, এভাবেই তাঁদেরকে দেখতে দেখতে শিখি, কিভাবে তাঁরা তাঁদের মারপ্যাঁচ প্রয়োগ করেন সেটা দেখি, আমি তাঁদেরকে দেখে খেলি, আর ভাবি যে আমার তাঁদের ওপর নজর রাখতে হবে। আমিও বাড়িতে তাঁদের প্রত্যেক রণকৌশল নিয়ে ভাবতে থাকি যে অমুক খেলোয়াড় কিভাবে খেলেছেন, আর আমাকেও তাঁর থেকে ভালো এবং তাঁর সমকক্ষ টক্কর দিয়ে খেলতে হবে। আমাকে তাঁর থেকে একদমই ঘাবড়ালে চলবে না। একদম সামনে থেকে কড়া টক্কর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিই, আর নিজের মতো রণকৌশল তৈরি করে সব সময় জেতার কথা ভাবি।
প্রধানমন্ত্রীজি : বীরেন্দর জি খুব ভালো কথা। আপনি ক্রীড়া জগতে এখন একজন উস্তাদ হয়ে উঠেছেন, কিন্তু পাশাপাশি নিজের মনের শিক্ষার্থীকেও সঞ্জীবিত রেখেছেন। এটাই আপনার মধ্যে একটি অনেক বড় গুণ। আপনার যে ইচ্ছাশক্তি তা প্রকৃতই প্রত্যেককে প্রেরণা যোগায়। এর পাশাপাশি আমি মনে করি যে আপনার কাছ থেকে দেশের খেলোয়াড়রা এবং যুব সম্প্রদায় - উভয়েই অনেক কিছু শিখতে পারেন, আর যেটা বিশেষ করে শিখতে পারেন সেটা হল আপনার নিরন্তরতা, ক্রমাগত এগিয়ে থাকার প্রবণতা, ক্রমাগত যুঝতে থাকার মানসিক শক্তি! একবার শিখরে পৌঁছনো অনেক কঠিন, কিন্তু তার থেকেও বেশি কঠিন যেখানে পৌঁছেছি, সেখানে টিকে থাকা আর সেখান থেকে আরও ওপরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকা। আপনি শিখরে পৌঁছনোর জন্য অনেক তপস্যা করেছেন। আপনার শ্রদ্ধেয় বাবা, আপনার শ্রদ্ধেয় কাকা, ক্রমাগত আপনাকে পথ দেখিয়েছেন, আপনাকে সাহায্য করেছেন। পৌঁছনো একটা কথা, আর পৌঁছনোর পর টিকে থাকা – এটা আমি মনে করি আপনার একটি অসাধারণ শক্তি, আর সেজন্য খেলোয়াড় জগৎ আপনার এই উদ্দীপনাকে অনুভব করবে, বুঝবে, আপনার কাছ থেকে শিখবে। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঘোষক : শ্রী ধনুষ শ্রীকান্ত, শ্যুটিং!
প্রধানমন্ত্রীজি : ধনুষ! নাম তো ধনুষ কিন্তু আপনি করেন শ্যুটিং!
ধনুষ : জি স্যার! হ্যাঁ স্যার। আমি শ্যুটিং করি।
প্রধানমন্ত্রীজি : বলুন ধনুষ, নিজের সম্পর্কে বলুন।
ধনুষ : জি! আমি নিয়মিত প্র্যাক্টিস করি, নিয়মিত শ্যুটিং-এর অনুশীলন করতে থাকি। আমার পরিবার আমাকে সব সময়েই সমর্থন দিয়ে গেছে যে আমি যেন স্টেজ ওয়াইজ বা ধাপে ধাপে এগোই। তাঁরা আমাকে বলতেন যে আমাকে জিততে হবে। ফার্স্টই হতে হবে। আমি চারবার বিদেশে খেলতে গিয়েছি জেতার জন্যই, আর আমার বা বলতে পারেন আমাদের সকলেরই মনে এই দৃঢ় প্রত্যয় থাকে। আমরা সকলেই দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকি যে আমাদের ফার্স্টই হতে হবে। আমাদের গোল্ড মেডেলই জিততে হবে।
প্রধানমন্ত্রীজি : ধনুষজি, আপনি এবং অন্যান্য খেলোয়াড়রা যা চান, এই খেলায় এগিয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে আপনারা দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কেমনভাবে সাহায্য করতে পারেন?
ধনুষ : আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়মিত স্পোর্টর্সে অংশগ্রহণের জন্য বলব, খেলতে বলব। আমি বলব যে হ্যাঁ, এই ক্ষেত্রেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি। আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। ক্রমাগত অনুশীলনই আপনাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাদের নিয়মিত রানিং প্র্যাক্টিস করতে হবে, দৌড়তে হবে, ফিট থাকতে হবে, সুস্থ-সবল থাকতে হবে! ব্যস স্যার! আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনি কি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করেন?
ধনুষ : জি স্যার! আমি দীর্ঘদিন ধরেই যোগ ব্যায়াম করে আসছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আর আপনি কি মেডিটেশনও করেন?
ধনুষ : হ্যাঁ স্যার করি, কিন্তু খুব বেশি নয়, কিন্তু কখনও কখনও করি, নিজের একাগ্রতা বজায় রাখার জন্য।
প্রধানমন্ত্রীজি : আপনি জানেন যে শ্যুটিং-এর ক্ষেত্রে মেডিটেশন, ধ্যান এগুলি খুবই কাজে লাগে?
ধনুষ : জি স্যার! অনেক একাগ্রতার প্রয়োজন হয় স্যার। একদমই হোল লক্ষ্য করে, একদমই টার্গেটের কেন্দ্রে তাক করে, একদমই নিশানায় তাক করে, একদমই একাগ্র হয়ে ট্রিগার টিপতে হয় স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা ধনুষ বলুন, ছোট বয়স থেকেই আপনি এত এত সাফল্য পেয়েছেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ মঞ্চ থেকে সাফল্য নিয়ে এসেছেন, আপনার সবচাইতে বড় প্রেরণা কী? আপনাকে কে কে প্রেরণা যোগান?
ধনুষ : আমাকে সবচাইতে বেশি আমার মা প্রেরণা যোগান। মায়ের সঙ্গে আমার খুব ভাব। তাঁর সঙ্গে থাকলে আমি খুব আনন্দ পাই। আমার বাবাও আমাকে খুব সাহায্য করেন এবং খুবই ভালোবাসেন। কিন্তু আগে ২০১৭-য় আমি যখন কিছুটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, খুব উদাস হয়ে থাকতাম, তখন মা-ই সবচাইতে বেশি প্রেরণা যুগিয়েছেন, সাহায্য করেছেন, আর সেই প্রেরণা থেকেই নিয়মিত চেষ্টার মাধ্যমে যখন আবার আমি জিততে শুরু করি, তখন অনেক আনন্দ পেতে থাকি, আর সেই আনন্দই ক্রমে আমার প্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীজি : ধনুষ সবার আগে আপনার মা এবং আপনার পরিবারকে প্রণাম জানাই, আর বিশেষ করে আপনার মা-কে। যেভাবে আপনি বর্ণনা করেছেন যে তিনি কিভাবে আপনাকে সামলাতেন, কিভাবে আপনাকে উৎসাহ যোগাতেন, কিভাবে আপনাকে লড়াই জেতার ক্ষেত্রে সাহায্য করতেন, আর প্রত্যেক চ্যালেঞ্জের সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে প্রস্তুত করতেন; আপনি সত্যিই অনেক বড় ভাগ্যবান। আপনি বলেছেন যে আপনি ‘খেলো ইন্ডিয়া’তেও কিছু নতুন নতুন অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করেছেন, নতুন নতুন অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছেন। এটা তো ঠিক কথা যে, আমাদের ‘খেলো ইন্ডিয়া’অভিযান আজ দেশকে খুব ভালো ভালো খেলোয়াড় দিয়েছে, অনেক ক্রীড়া প্রতিভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেও সাহায্য করেছে। আপনি নিজের সামর্থ্যকে চিনতে পেরেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস যে আপনার আরও সামর্থ্য রয়েছে, ধনুষ, আপনি এখন পর্যন্ত যতটা সাফল্য পেয়েছেন তার থেকেও অনেক বেশি সাফল্য পাওয়ার ক্ষমতা আপনার রয়েছে, আর আপনি এর থেকেও বেশি পরাক্রম করে দেখাতে পারেন। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আপনাকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ধনুষ : অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার!
ঘোষক : শ্রীমতী প্রিয়েসা দেশমুখ, শ্যুটিং!
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা প্রিয়েসা, আপনি তো পুণে থেকে এসেছেন।
প্রিয়েসা : আসলে আমি মহারাষ্ট্র থেকে এসেছি। আমার নাম প্রিয়েসা দেশমুখ। আমি আট বছর বয়স থেকে শ্যুটিং প্র্যাক্টিস করছি। তার আগে আমি ব্যাডমিন্টন এবং আরও কিছু খেলা খেলেছি। কিন্তু সেগুলিতে জেতার চাইতে বেশি হেরেছি, আর আমি ভেবেছি শ্যুটিং সহজ হবে। সেজন্য আমি ২০১৪ সালে শ্যুটিং-এ যোগ দিই, আর খুব অনুশীলন করি। এতে সাফল্য পাই। তারপর ২০১৪-১৫ সালে ন্যাশনাল ক্যাম্প ছিল। সেখানে আমি আমার ক্যাটাগরিতে সাতটি স্বর্ণ পদক এবং ওপেন ক্যাটাগরিতে রৌপ্য পদক পাই, আর প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যখন রাশিয়ায় যাই, তখন আমি প্রথমবার আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় খেলি। তখন আমার কিছু ভয় লাগছিল, আর আমার কিছু সমস্যাও হয়। কিন্তু ঠাকুমার আশীর্বাদে সফল হয়েছি। আমার বাবা আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে “তুই প্রথমবার যাচ্ছিস, ভয় না পেয়ে খেলবি। কিছু পেলে পাবি, না পেলে না পাবি।” কিন্তু আমি নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে থাকি।এখন তো সমস্ত ক্রীড়াক্ষেত্রেই পারফরম্যান্স করে দেখাতে হয়, বরং আমি জানি না কিভাবে হয়েছে, কিন্তু যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যখন রাশিয়ায় শেষ সুযোগে আমি প্রতিযোগিতায় নামি, তখন ভালো সাফল্য আসে, আর ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছোই। তারপর থেকে তো প্রতিবারই ফাইনালে পৌঁছেছি আর আমি অনেক অনেক মেডেল জিতেছি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা প্রিয়েসা,২০০৭-এ আপনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, সেবার সোনা নিয়ে এসেছেন। এটা কোনও ছোট সাফল্য নয়, আর আপনার এখনও সন্তুষ্টি নেই, এখনও আপনি নিজেই নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থাকেন।
প্রিয়েসা : আমি আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম না। আমি এখনও ভয় পাই। আমার ঠাকুমা এবং বাবার আশীর্বাদ আর আমার গুরু হলেন অঞ্জলি ভাগবৎ। সেই কোচ আমাকে শিখিয়েছেন, যা করতে হয় করো, কিন্তু ইতিবাচক ভাবো, সবসময় ভাবো যে এটা করে ফেলব, আর তারপর আমার দ্বিতীয় অলিম্পিক ব্রাজিলে হয়েছে। সেখানে ধনুষের সঙ্গে টিমে আমি স্বর্ণ পদক পেয়েছি। আমার ঠাকুমা অলিম্পিকে যাওয়ার আগে আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন যে আমি যেন অবশ্যই পদক নিয়ে আসি। আমার ঠাকুমা এখন আর বেঁচে নেই। কিন্তু তিনি আমার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে মেডেল আমি অবশ্যই আনব। কিন্তু তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যুর পর হলেও আমি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছি। এটা আমার খুব ভালো লাগছে।
প্রধানমন্ত্রীজি : দেখুন প্রিয়সা, সবার আগে তো আমি অঞ্জলি ভাগবৎজিকেও শুভেচ্ছা জানাই। তিনি আপনার জন্য এত পরিশ্রম করেছেন। আপনিও আপ্রাণ পরিশ্রম করেছেন, অনুশীলন করেছেন।
প্রিয়েসা : থ্যাঙ্ক ইউ! ধন্যবাদ স্যার!
প্রধানমন্ত্রীজি : আমি সত্যি সত্যিই বলছি যে একদিকে আপনার মা-বাবার আশীর্বাদ, আর অন্যদিকে আপনার কোচও এত পরিশ্রম করেছেন। এসবের কারণেই আপনি নিজের মধ্যে এত বড় পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। আচ্ছা এটা বলুন, আপনি পুণের মানুষ আর পুণের মানুষ তো অত্যন্ত শুদ্ধ মারাঠি ভাষায় কথা বলে।
প্রিয়েসা : হ্যাঁ জানি স্যার! আমি তো মারাঠি।
প্রধানমন্ত্রীজি : তাহলে আপনি এত ভালো হিন্দি কিভাবে বলতে পারেন?
প্রিয়েসা : আমি মারাঠি, হিন্দি সব বলতে পারি। কিন্তু সমস্যা হল, মারাঠি তো আমার নিজস্ব মাতৃভাষা, আমার একান্ত নিজস্ব। কিন্তু বিশ্বে সবাই তো এক ভাষায় কথা বলে না, অনেক ভাষায় কথা বলে। আমিও আজকাল মারাঠিতে কমই কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রীজি : আমাকে তো একথাও বলা হয়েছে যে আপনার ঠাকুমা আপনাকে সব সময় উৎসাহ দিতেন, কখনও হতাশ হতে দেননি, কখনও আপনাকে উদাস হতেও দেননি। আপনি অনেক চ্যালেঞ্জ, অনেক সমস্যা অতিক্রম করে এসেছেন। যেমনটি আমাকে বলা হয়েছে যে আপনি নতুন নতুন পদ্ধতিতে এই খেলায় পারদর্শীতা অর্জন করার চেষ্টা করেছেন। আমি আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আশা করি, আপনি সবাইকে এভাবেই প্রেরণা যুগিয়ে যাবেন।
প্রিয়েসা : থ্যাঙ্ক ইউ! ধন্যবাদ স্যার!
ঘোষক : জাফরিন শেখ, টেনিস!
প্রধানমন্ত্রীজি : হ্যাঁ জাফরিন নমস্তে!
জাফরিন : আমি জাফরিন শেখ, টেনিস খেলোয়াড়। আমি ডেফলিম্পিক্স, ২০২১-এ ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছি। আমাকে আমার বাবা অনেক সাপোর্ট করতেন। তিনি অনেক পরিশ্রমী মানুষ। আমিও তাঁর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক পরিশ্রম করেছি। ভারতের খেলোয়াড়রা অনেক পদক পেয়েছেন। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় নরেন্দ্র মোদীজি, প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া।
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা জাফরিন, আপনি এবং পৃথ্বী শেখর, আপনাদের জুটি অনেক ভালো ফল করেছে। আপনারা দু’জনে টেনিস কোর্টের মধ্যে পরস্পরকে কিভাবে সাহায্য করতেন? পরস্পরকে কিভাবে সাহায্য করেন?
জাফরিন : আমরা দু’জনেই পরস্পরকে সাপোর্ট করি। (অস্পষ্ট)
প্রধানমন্ত্রীজি : দেখুন, আমি তো টেনিস খেলোয়াড় নই, এসব আমার ভাগ্যে ছিল না। কিন্তু বলা হয় যে টেনিস একটা এমন খেলা যেখানে টেকনিক অনেক গুরুত্ব রাখে, আর টেকনিকের দিকেই অনেকটা জোর দিতে হয়। আপনি এই খেলাটিকে কেন আপন করে নিয়েছেন? যদিও আপনি অনেকবার দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এই পর্যায়ে এমন সাফল্য গেলে প্রত্যেককেই অনেক পরিশ্রম করতে হয়।
জাফরিন : স্যার, আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সব সময়েই অনেক পরিশ্রম করেছি। (অস্পষ্ট)
প্রধানমন্ত্রীজি : আচ্ছা জাফরিন, আপনি একভাবে দেশের মেয়েদের সামর্থ্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁদের সামর্থ্যের এক ধরনের পর্যায় তো আছেই, পাশাপাশি আপনি ছোট ছোট মেয়েদের জন্যও একটি মূর্তিমতী প্রেরণা। আপনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ভারতের মেয়েরা যদি কোনও কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, যদি দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কোনও বাধা তাঁদেরকে আটকাতে পারে না। আমার পক্ষ থেকে জাফরিনকে অনেক অনেক শুভকামনা। আপনার বাবাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। কারণ, তিনি আপনার পেছনে এত পরিশ্রম করেছেন, আর আপনাকে এতদূর পৌঁছে দিয়েছেন।
জাফরিন : স্যার, আপনি সবাইকে এত সমর্থন করেন, এত সাপোর্ট করেন (অস্পষ্ট) এত সাপোর্ট করেন!
প্রধানমন্ত্রীজি : আমি তো করতেই থাকব।
জাফরিন : থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ! ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রীজি : আমি করতেই থাকব। আপনার এই প্রাণশক্তি দেখে আমি বলতে পারি যে আপনি আজ যে সব সাফল্য অর্জন করেছেন, আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনা এ থেকে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার প্রাণশক্তি আপনার আছে। এই উদ্দীপনা বজায় রাখবেন। এই উৎসাহ বজায় রাখবেন। এই উৎসাহের মাধ্যমে দেশে জয়ের নতুন নতুন পথ খুলবে। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নির্মাণ হবে, আর আমি মনে করি আমাদের সাধারণ ক্রীড়া জগতে কোনও ব্যক্তি যদি সুনাম অর্জন করেন, সাফল্য পান, তাহলে সেই অঞ্চলের স্পোর্টর্স কালচার বা ক্রীড়া সংস্কৃতির, স্পোর্টর্স এবিলিটি বা ক্রীড়া সামর্থ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু কোনও দিব্যাঙ্গজন, শারীরিক রূপে কোনও অসহায়তা সম্পন্ন মানুষ, শারীরিক অসহায়তা নিয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য থাকা কেউ যখন বিশ্বের দরবারে সুনাম অর্জন করেন, সাফল্য আনেন, তখন কেবল সেই ব্যক্তি খেলোয়াড় জিতে আসেন না, কেবল তাঁরা খেলার জন্য খেলেন না, তিনি দেশের ছবিকেও উজ্জ্বল করেন। আর হ্যাঁ, সবাই বলাবলি করেন যে, ভারত দেশটি এমন যেখানে দিব্যাঙ্গজনদের প্রতিও এত সংবেদনা রয়েছে, এই মনোভাব রয়েছে, আর এই সামর্থ্যের পূজাই ওই দেশ করে!
বিশ্ববাসীর এই মনোভাব দেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি, অনেক বেশি শক্তি জোগায়, আর এর ফলে বিশ্বে আজ আপনারা যেখানেই যাবেন, যখনই যাবেন, আপনাদের এই সাফল্যকে যাঁরাই দেখেছেন, তাঁরাই আপনাদের দেখতে থাকবেন। আপনাদের ক্রীড়া নৈপূণ্যকে দেখতে থাকবেন। আপনাদের মেডেল অর্জনের সাফল্যকে দেখতে থাকবেন। তাঁরা ‘ব্যাক অফ দ্য মাইন্ড’ বা মনের গভীরে হয়তো ভাবতে থাকবেন, আচ্ছা ভারতে আজ এমনই ক্রীড়া আবহ রয়েছে যে প্রত্যেককে সমান সুযোগ দেওয়া হয়, প্রত্যেকেই সুযোগ পান, আর তা থেকে দেশের ছবি উজ্জ্বল হয়। অর্থাৎ, সাধারণ খেলোয়াড়রা দেশের মুখ যতটা উজ্জ্বল করেন, তা থেকে অনেকগুণ বেশি দেশের মুখ উজ্জ্বল হয় আপনাদের পরিশ্রম, আপনাদের কৃতিত্বের মাধ্যমে। আপনাদের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল হয়। অর্থাৎ, আপনাদের এই পরিশ্রম, আপনাদের এই সাফল্য দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাদের সবাইকে আরও একবার এই অসাধারণ জয়ের জন্য আর দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য, দেশের নাম উঁচুতে তুলে ধরার জন্য, ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা ডেফালিম্পিক্সে তুলে ধরার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এখন আমরা দেশে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশ্বের অন্যত্র আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের জন্য আপনারা সবাই অনেক অনেক শুভেচ্ছার পাওয়ার যোগ্য।
আপনাদের এই সাফল্যে আপনাদের পরিবারের সকলের, আপনাদের মা-বাবার, আপনাদের কোচদের, আপনাদের চারপাশে যত ইতিবাচক আবহ রয়েছে তাদের সকলের অনেক বড় অবদান রয়েছে, আর সেজন্য আমি আপনাদের পরিজনদের সকলকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
যে খেলোয়াড়রা এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা গোটা দেশের সামনে একটি অভূতপূর্ব সাহসী উদাহরণ প্রস্তুত করেছেন। কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন যাঁরা হয়তো মেডেল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি, কিন্তু তাঁদেরকেও আমি শুভেচ্ছা জানাব কারণ তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, আর মেডেল আপনাদের দেখে নিয়েছে। এখন তো সেই মেডেলগুলি আপনাদের জয় করার অপেক্ষা করছে। সেই মেডেলগুলি আপনাদের সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করছে। আপনারা এটা ভাববেন না যে আপনারা এখন পিছিয়ে পড়েছেন। বিশ্ব মঞ্চে আপনাদের প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আপনারাও একদিন অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবেন। আপনারাও নিশ্চিতভাবেই একদিন বিজয়ী হয়ে আসবেন। আর আজ যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন তাঁরাও এখন আপনাদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন, আর এই ডেফলিম্পিক্স প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত আপনারা ভারতীয় দলের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এসেছেন। ভারতের সাফল্যের সমস্ত রেকর্ড আপনারা ভেঙে দিয়ে এসেছেন।
সেজন্য এই ডেফলিম্পিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আমি অভিনন্দন জানাই। এই দলের প্রত্যেকের জন্য আমি আন্তরিকভাবে গর্বিত। আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই, আর ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আপনারা যে আজ থেকে প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে সুউচ্চে ওড়ানোর মাধ্যমে আপনারা নবীন প্রজন্মের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমি সবার আগে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ভবিষ্যতে অনেক অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!