নমস্কার!
আজকের এই কর্মসূচিতে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রীগণ, লেফটেন্যান্ট গভর্নরগণ, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীগণ, বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবগণ আর কয়েকশ’ জেলার জেলাশাসক, কালেক্টর, কমিশনার, অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
জীবনে প্রায়ই আমরা দেখি যে মানুষ তাঁর আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে, আর কিছু মাত্রায় সেসব আকাঙ্ক্ষা পূরণও করতে পারে। কিন্তু যখন অন্যদের আকাঙ্ক্ষাগুলি নিজেদের আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত হয়, যখন অন্যদের স্বপ্নগুলির বাস্তবায়ন নিজের সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে ওঠে, তখন সেই কর্তব্যপথ ইতিহাস রচনা করে। আজ আমরা দেশের ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্টস’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিকে এই ইতিহাস রচনা করতে দেখছি। আমার মনে আছে, ২০১৮ সালে যখন এই অভিযান শুরু হয়েছিল, তখন আমি বলেছিলাম যে এই এলাকাগুলি অনেক দশক ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এই জেলাগুলিতে জনগণের সেবা করার সুযোগ, আপনাদের জন্য এটা এক প্রকার অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ যখন দেশ তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন আপনারা এই অভিযানের অনেক সাফল্যের খতিয়ান নিয়ে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আমি আপনাদের সবাইকে আপনাদের এই সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের নতুন নতুন লক্ষ্যের জন্য শুভকামনা জানাই। আমি সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীদেরকে, আর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকেও বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই যে তারা, আমি দেখেছি, অনেক জেলায় তারা অত্যন্ত কর্মঠ এবং সক্ষম নবীন আধিকারিকদের কাজে লাগিয়েছে। এটা একদিক থেকে একটি সঠিক রণনীতি। তেমনই দ্বিতীয়তঃ, যেখানে ভ্যাকেন্সি ছিল তা পূরণ করার দিকেও আপনারা অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৃতীয়তঃ, আমি দেখেছি, তাঁদের টেনিওরকেও স্টেবল রেখেছেন। অর্থাৎ, এক প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে দক্ষ নেতৃত্ব, দক্ষ টিম গড়ে তোলার কাজ মুখ্যমন্ত্রীরা করেছেন। আজ শনিবার। সবাই ছুটির মেজাজে থাকেন। তা সত্ত্বেও সমস্ত সম্মানিত মুখ্যমন্ত্রী সময় বের করে আজ এই আলোচনাসভায় আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আপনারা সকলেও ছুটি না কাটিয়ে আজ এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এটা দেখায় যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি সম্পর্কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কতটা চিন্তিত, তাঁদের হৃদয়ে এই জেলাগুলির গুরুত্ব কতটা। তাঁরাও নিজেদের রাজ্যে এই ধরনের পেছনে পড়ে থাকা জেলাগুলিকে অন্যান্য এগিয়ে থাকা জেলার সমকক্ষ করে তোলার জন্য কতটা দৃঢ় নিশ্চয়, এটাই তার প্রমাণ।
বন্ধুগণ,
আপনারা দেখেছেন যে একদিকে বাজেট ক্রমবর্ধমান ছিল, প্রকল্পগুলি রচিত হচ্ছিল, পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হতে দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তবুও স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এত বড় দীর্ঘ যাত্রার পরও দেশের অনেকক’টি জেলা পেছনে রয়ে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে এই জেলাগুলিকে পিছিয়ে পড়া বা পশ্চাদপদ জেলার ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একদিকে দেশের কয়েকশ’ জেলা প্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে এই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলি আরও পিছিয়ে পড়ছিল। গোটা দেশের উন্নয়নের পরিসংখ্যানের গ্রাফকেও এই জেলাগুলি নিচে নামিয়ে দিত। সমগ্র রূপে যখন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না, তখন যে জেলাগুলি ভালো ফল করছিল, সেগুলিও নিরাশার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিল, আর সেজন্য দেশ এই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির ‘হ্যান্ড হোল্ডিং’ বা হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে আসার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। আজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি, দেশকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আর বাধা সৃষ্টি করছে না। আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায় আজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি দেশের উন্নয়নে গতিরোধক হয়ে ওঠার পরিবর্তে গতিবর্ধক হয়ে উঠছে। যে জেলাগুলি আগে কখনও দ্রুতগতিতে উন্নয়নের জন্য পরিচিত ছিল, আজ অনেক প্যারামিটার্স-এ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিকে সেই এগিয়ে থাকা জেলাগুলি থেকেও ভালো কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। আজ এখানে এতজন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যুক্ত রয়েছেন, তাঁরাও স্বীকার করবেন যে তাঁদের প্রত্যেকের রাজ্যেই আজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি অসাধারণ কাজ করছে।
বন্ধুগণ,
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির উন্নয়নের এই অভিযান আমাদের দায়িত্বকে কয়েকদিক থেকে সম্প্রসারিত এবং রি-ডিজাইন করেছে। আমাদের সংবিধানের যে ভাবনা এবং সংবিধানের যে প্রাণশক্তি রয়েছে, তাকে আজ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি মূর্ত স্বরূপ দিয়েছে। এর ভিত্তি হল, কেন্দ্র-রাজ্য এবং স্থানীয় প্রশাসনের টিমওয়ার্ক। এর পরিচয় হল – ফেডারাল স্ট্রাকচারে সহযোগিতার ক্রমবর্ধমান সংস্কৃতি। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যত বেশি গণ-অংশীদারিত্ব, যত বেশি দক্ষ তদারকি, তত বেশি উন্নত পরিণাম।
বন্ধুগণ,
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির উন্নয়নের জন্য প্রশাসন এবং জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, একটি আবেগপূর্ণ সংযোগ অত্যন্ত জরুরি। একদিক থেকে গভর্ন্যান্সের ‘টপ-টু-বটম’ আর অন্যদিকে ‘বটম-টু-টপ’ ফ্লো। আর এই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবন। যেমনটি আমরা কিছুক্ষণ আগে বিভিন্ন জনের প্রেজেন্টেশনেও দেখেছি, যে জেলাগুলি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি করছে, গভর্ন্যান্স এবং ডেলিভারির যত নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে, তারাই তত বেশি উন্নত ও সুফলদায়ক পরিণাম আনতে পেরেছে। আজ দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য থেকে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির কতো না ‘সাক্সেস স্টোরি’ আমাদের সামনে। আমি দেখছিলাম, আজ আমার মাত্র পাঁচটি জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এখানে অন্য যতজন বসে আছেন, আমার সামনে কয়েকশ’ আধিকারিক বসে আছেন, প্রত্যেকের কাছেই কোনও না কোন ‘সাক্সেস স্টোরি’ রয়েছে। এখন দেখুন, আমাদের সামনে আসামের দরাংগ জেলার, বিহারের শেখপুরা জেলার, তেলেঙ্গানার ভদ্রাদী ও কোঠাগুডামের উদাহরণ রয়েছে। এই জেলাগুলি অল্প সময়ের মধ্যেই শিশুদের অপুষ্টির হার অনেকটাই কমাতে পেরেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে আসামের গোয়ালপারা আর মণিপুরের চান্ডেল জেলায় আধিকারিক ও কর্মীরা পশুদের টিকাকরণকে চার বছরে ২০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে পৌঁছে দিয়েছে। বিহারের জমুই এবং বেগুসরাই জেলায় যেখানে ৩০ শতাংশ জনসংখ্যাও সারাদিনে এক বালতি পানীয় জল পেত না, সেখানে এখন ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা পরিশ্রুত পানীয় জল পাচ্ছে। আমরা কল্পনা করতে পারি যে, কত দরিদ্র মানুষ, কত মহিলা, কত শিশু ও বয়স্কদের জীবনে সুখময় পরিবর্তন এসেছে। আর আমি এটাও বলব যে এটা শুধুই পরিসংখ্যান নয়, প্রত্যেক পরিসংখ্যানের সঙ্গে কতো না জীবন জড়িয়ে আছে। এই পরিসংখ্যানগুলিতে আপনাদের মতো দক্ষ বন্ধুদের কতো না পরিশ্রম, কতো দিন-রাত এক করে কাজের পরিণাম রয়েছে! কত কত মানুষকে একসঙ্গে কাজে লাগিয়েছেন, এর পেছনে আপনাদের সকলের তপস্যা এবং ঘামের অবদান রয়েছে। আমি মনে করি, এই পরিবর্তন, এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সমগ্র জীবনের পুঁজি।
বন্ধুগণ,
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে দেশ যে সাফল্য পাচ্ছে, তার একটা বড় কারণ আমি মনে করি, ‘কনভারজেন্স’। একটু আগেই আমাদের কর্নাটকের একটি জেলার আধিকারিক বলেছেন, কিভাবে ঢিমেতালে কাজ করার কর্মসংস্কৃতিকে পরিবর্তন করেছেন। সমস্ত সম্পদ আগের মতোই রয়েছে। সরকারি মেশিনারি আগের মতোই রয়েছে। আধিকারিকরাও আগের মতোই রয়েছেন। কিন্তু পরিণাম ভিন্ন আসছে। যে কোনও জেলা যতক্ষণ একটি ইউনিট হিসেবে কাজ না করবে, একটি একক হিসেবে কাজ না করবে, সমগ্র জেলার ভবিষ্যতকে সামনে রেখে কাজ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক ফল পাবে না। একটি একক হিসেবে কাজ করলে তবেই আধিকারিকরা নিজেদের কাজের বিশালতা সম্পর্কে অনুভব করবেন। আধিকারিকদেরও নিজেদের ভূমিকার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি হয়, জীবনের একটা উদ্দেশ্য তাঁরা উপলব্ধি করেন। তাঁদের চোখের সামনে যে পরিবর্তনগুলি হয় আর যে পরিণাম দেখতে পান, সেগুলি জেলার জনগণের জীবনে যে পরিবর্তন আনে, তা দেখে আধিকারিকরা এবং প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সকলেই একটা অন্য ধরনের আনন্দ পান, একটা পরিতৃপ্তি পান। এই পরিতৃপ্তি কল্পনারও অতীত, শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এটা আমি নিজে দেখেছি, যখন করোনা ছিল না, তখন আমি নিয়ম বানিয়ে রেখেছিলাম, যে কোনও রাজ্য সফরে গেলে আমি সেই রাজ্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির আধিকারিকদের ডেকে পাঠাতাম। সেই আধিকারিকদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতাম, আলাপ-আলোচনা করতাম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরই আমার এই অভিজ্ঞতা হয় যে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি যে কাজ করছে, তাতে কাজ করার সন্তুষ্টি এবং সফল হলে তার পরিতৃপ্তি একটি ভিন্ন ভাবনার জন্ম দেয়। যখন কোনও একটি সরকারি কাজ একটি জীবন্ত লক্ষ্যে পরিণত হয়, যখন সরকারি মেশিনারি একটি জীবন্ত এককে পরিণত হয়, যখন সেই একক টিম স্পিরিটে পরিপূর্ণ হয়, একটি টিম হিসেবে টিমের কালচার নিয়ে এগিয়ে যায়, তখন তাঁদের কাজ তেমনই সুফলদায়ক হয়। যেমনটি আমরা আজ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির ক্ষেত্রে দেখছি। পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে, পরস্পরের বেস্ট প্র্যাক্টিসগুলি শেয়ার করে, পরস্পর থেকে শেখার মাধ্যমে এবং পরস্পরকে শেখানোর মাধ্যমে যে কর্মশৈলী বিকশিত হয়, সেই কর্মশৈলী গুড গভর্ন্যান্সের বা সুশাসনের একটি অনেক বড় পুঁজি।
বন্ধুগণ,
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে যে কাজ হয়েছে, তা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্যও এখন গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিগত চার বছরে দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলায় জন ধন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রায় প্রত্যেক পরিবারে শৌচালয় নির্মিত হয়েছে, প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, আর বিদ্যুৎ শুধু যে গরীবের ঘরে ঘরে পৌঁছেছে তা নয়, এই বিদ্যুৎ মানুষের জীবনেও প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছে। দেশের প্রশাসনের ওপর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির জনগণের ভরসা ক্রমে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
এই সকল প্রচেষ্টা থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। একটি জেলাকে অন্য জেলাগুলির সাফল্য থেকে শিখতে হবে। অন্যান্য জেলার সমস্যা দেখে পরিমাপ করতে হবে। কিভাবে মধ্যপ্রদেশের ছতরপুর জেলায় গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম তিন মাসেই রেজিস্ট্রেশন ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭ শতাংশ হয়ে গেছে? কিভাবে অরুণাচল প্রদেশের নামসাই জেলায়, হরিয়ানার মেবাথ জেলায় আর ত্রিপুরার ধলাই জেলায় ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি ৪০-৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেছে? কিভাবে কর্নাটকের রায়পুর জেলায় নিয়মিত অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণকারী গর্ভবতী মহিলাদের সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ শতাংশ হয়েছে? কিভাবে হিমাচল প্রদেশের চম্বা জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কমন সার্ভিস সেন্টারগুলির কভারেজ ৬৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে? অথবা ছত্তিশগড় রাজ্যের সুকমা জেলায় আগে যেখানে ৫০ শতাংশেরও বেশি শিশুদের টিকাকরণ হত, সেখানে এখন ৯০ শতাংশ টিকাকরণ হচ্ছে। এই সমস্ত ‘সাক্সেস স্টোরি’তে গোটা দেশের প্রশাসনের জন্য অনেক নতুন নতুন কথা শেখার মতো করে উঠে এসেছে, অনেক নতুন নতুন শিক্ষাও আমরা পেয়েছি।
বন্ধুগণ,
আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার ছটফটানি কত বেশি হয়। তাঁরা কত বেশি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাঁচেন। এই জেলাগুলির জনগণ তাঁদের জীবনের দীর্ঘ সময় অভাবের মধ্যে, অনেক সমস্যাকীর্ণ হয়ে কাটিয়েছেন। প্রতিটি ছোট ছোট জিনিসের জন্য তাঁদের লড়াই করতে হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁদের সেই লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তাঁরা এত অন্ধকার দেখেছেন যে সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার প্রবল আকুলতা থাকে। সেজন্য তাঁরা সাহস দেখানোর জন্য প্রস্তুত হন, ঝুঁকি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন, আর যখনই সুযোগ পান তার পুরো লাভ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে যাঁরা থাকেন, যে সমাজে মানুষেরা থাকেন, তাঁদের শক্তিকে আমাদের বুঝতে হবে, চিনতে হবে। আমি মনে করি, তাঁদের এই শক্তিকে চিনতে পারার অনেক বড় প্রভাব উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতেই বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং কাজেও দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চলগুলির জনগণ তো আপনাদের সঙ্গেই এসে কাজ করেন। উন্নয়নের স্পৃহা থেকেই পাশাপাশি চলার পথ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যখন জনতা জনার্দন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠে, যখন প্রশাসন দৃঢ় নিশ্চয় হয়, তখন কোনও জেলা কিভাবে পিছিয়ে থাকতে পারে? তাঁদের তো এগিয়ে যেতেই হবে, এগোতেই হবে, আর আজ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে বসবাসকারী জনগণ এটাই করে দেখাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
গত বছর অক্টোবরে আমি মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের জনগণকে সেবা করার ২০ বছর অতিক্রম করেছি। তার আগে থেকেও আমি কয়েক দশক ধরে দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের কাজ করার নানা রকম পদ্ধতি খুব কাছে থেকে দেখেছি, যাচাই করেছি। আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে, সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় যে সিলোস বা ঢিলেমি থাকে, তা থেকেই সবচাইতে বেশি লোকসান হয়। বাস্তবায়নের যে ঢিলেমি দেখা যায়, তার লোকসান আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে বাস্তবায়নে ঢিলেমি সমাপ্ত হওয়ার ফলে সম্পদের অপটিমাম ইউটিলাইজেশন বা সবচাইতে বেশি ব্যবহার হয়। ঢিলেমি যখন শেষ হয়, তখন একের সঙ্গে এক যোগ হলে ফল দুই হয় না, ঢিলেমি সমাপ্ত হলে একের সঙ্গে এক যোগ হলে ফল এগারোতে পরিণত হয়। এই সামর্থ্য, এই সামগ্রিক শক্তি আমরা আজ এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির উন্নয়নে কাজে লাগতে দেখেছি। এই সামর্থ্য, এই সামগ্রিক শক্তি আজ আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি এটা করে দেখিয়েছে যে, যদি আমরা সুশাসনের মৌলিক সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করি, তাহলে কম সম্পদ থেকেও বড় পরিণাম পেতে পারি। আর এই অভিযান যে অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করেছে, তা নিজেই অভূতপূর্ব। উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে দেশের প্রথম অ্যাপ্রোচ ছিল যে, এই জেলাগুলির মৌলিক সমস্যাগুলিকে চেনার কাজ করা হয়েছে। এই অভিযানে যে দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করা হয়েছে, তা নিজেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য জনগণের সমস্যা সম্পর্কে সরাসরি জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তাঁদেরকে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় অ্যাপ্রোচ ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের কর্মশৈলীতে ক্রমাগত সংস্কার আনা। আমরা কাজের পদ্ধতি এমনই ঠিক করেছিলাম যাতে পরিমাপযোগ্য ইন্ডিকেটর্সের নির্বাচন সম্ভব হয়। যার ফলে জেলাগুলির বর্তমান পরিস্থিতি পরিমাপের পাশাপাশি রাজ্য এবং দেশের সবচাইতে উন্নত জেলাগুলির পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যায়। যেখানে উন্নয়নের প্রকৃত সময়ের তদারকি হয়, যেখানে অন্যান্য জেলার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হয়, আর বেস্ট প্র্যাক্টিসেসকে রেপ্লিকেট করার উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, উৎসাহ থাকে, প্রচেষ্টা থাকে। এই অভিযানের সময় তৃতীয় অ্যাপ্রোচ এমন ছিল যে, আমরা এমন গভর্ন্যান্স রিফর্ম করেছি যা থেকে জেলাগুলিতে একটি কার্যকরী টিম গড়ে তোলার সুবিধা হয়েছে। যেমন নীতি আয়োগের প্রেজেন্টেশনে একটু আগেই একথা বলা হয়েছে যে আধিকারিকদের স্টেবল টেনিওর-এর নীতিগুলিকে উন্নত পদ্ধতিতে প্রয়োগ করায় সেগুলি অনেক সহায়ক হয়ে উঠেছে। আর সেজন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাই, তাঁদের অভিনন্দনও করি। আপনারা সবাই তো এই অভিজ্ঞতাগুলির মধ্য দিয়ে নিজেরা এগিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি একথা বারবার বলি, যাতে জনগণ এটা বুঝতে পারে যে, গুড গভর্ন্যান্সের প্রভাব কেমন হয়। যখন আমরা ‘এমফেসিস অন বেসিক্স’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাই, তখন তার ফলাফলও খুব ভালো হয়। আজ আমি এক্ষেত্রে আরও একটি জিনিস যোগ করতে চাইব। আপনাদের সকলের চেষ্টা থাকা উচিৎ ফিল্ড ভিজিটের জন্য, ইন্সপেকশন এবং নাইট হল্টের জন্য বিস্তারিত দিক-নির্দেশ বা ‘ডিটেইলড গাইডলাইন্স’ও রচনা করা হোক। একটি মডেল বিকশিত হোক। আপনারা দেখবেন, আপনাদের সকলের এর থেকে কত লাভ হবে!
বন্ধুগণ,
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির সাফল্যগুলি দেখে দেশ এখন নিজের লক্ষ্যগুলিকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশের লক্ষ্য হল বিভিন্ন পরিষেবা এবং সুবিধাগুলির ১০০ শতাংশ স্যাচুরেশন বা সম্পৃক্ত করা। অর্থাৎ, আমরা এখন পর্যন্ত যত সাফল্য অর্জন করেছি তার থেকে এগিয়ে আমাদের একটি দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে, আরও বড় স্তরে কাজ করতে হবে। আমরা কিভাবে জেলাগুলির প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে সড়কপথ পৌঁছে দেব, প্রত্যেক ব্যক্তির হাতে কিভাবে আয়ুষ্মান ভারত কার্ড পৌঁছে দেব, প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কিভাবে খোলাব, কোনও গরীব পরিবার যাতে উজ্জ্বলা প্রকল্পের রান্নার গ্যাস সংযোগ থেকে বঞ্চিত না থাকে তা কিভাবে সুনিশ্চিত করব, প্রত্যেক যোগ্য ব্যক্তি যাতে সরকারের বিমা প্রকল্পের সুবিধা পান কিংবা পেনশন এবং প্রত্যেক গৃহহীনের মাথার ওপর পাকা ছাদ কিভাবে সুনিশ্চিত করব, সে সম্পর্কে প্রত্যেক জেলার জন্য একটি সময় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রাখতে হবে। এভাবেই প্রত্যেক জেলাকে আগামী দু’বছরের জন্য নিজেদের একটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। আপনারা এমন কোনও ১০টি কাজ ঠিক করতে পারেন যেগুলি আগামী তিন মাসে সম্পূর্ণ করা যাবে, আর এগুলির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ‘ইজ অফ লিভিং’ বাড়বে। এভাবেই আরও পাঁচটি কাজ এমন ঠিক করবেন, যেগুলি আপনারা আগামী ১৫ আগস্টে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাস্তবায়িত করবেন। এই কাজ এমন ঐতিহাসিক কালখণ্ডে আপনাদের, আপনাদের জেলার, জেলার জনগণের ঐতিহাসিক সাফল্যে পরিণত হবে। যেভাবে দেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে কাজ করে চলেছে, সেভাবেই জেলাতে আপনারা ব্লক লেভেলে নির্দিষ্ট অগ্রাধিকার এবং লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। আপনাদের মধ্যে যিনি যে জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি সেই জেলার বিশেষত্বগুলি সম্পর্কে অবশ্যই জানেন। যদি না জানেন, তাহলে চেনা ও জানার চেষ্টা করুন, সেগুলির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যেই জেলার উন্নয়নের সম্ভাবনা লুক্কায়িত রয়েছে। আপনারা দেখেছেন, সরকারের ‘এক জেলা, এক পণ্য’ নীতি অনুসারে এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই কাজ করে সাফল্য আসছে। আপনাদের জন্য এটা একটা মিশন হওয়া উচিৎ, কিভাবে নিজের জেলার পরিচয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন। ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর মন্ত্র আপনারা নিজের নিজের জেলাতেও প্রয়োগ করুন। এর জন্য আপনাদের জেলার ঐতিহ্যসম্পন্ন পণ্যগুলিকে চিহ্নিত করে, দক্ষতাগুলিকে চিহ্নিত করে এবং ‘ভ্যালু চেনস’ বা মূল্য শৃঙ্খলগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া রূপে দেশ একটি নীরব বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে উঠছে। আমাদের কোনও জেলা যেন এক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে। ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যেন আমাদের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছয়। ডিজিটাল পরিষেবা এবং সমস্ত সুবিধা যেন ‘ডোর স্টেপ ডেলিভারি’র মাধ্যম হয়ে ওঠে। এটা অত্যন্ত জরুরি। নীতি আয়োগের রিপোর্টে যে জেলাগুলির প্রগতি অপেক্ষাকৃত শ্লথ দেখা গেছে, সেই জেলাগুলির জেলাশাসকদের, কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদেরও বিশেষ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমি নীতি আয়োগকেও অনুরোধ করব, আপনারা এমন একটি মেকানিজম তৈরি করুন যার মাধ্যমে সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের মধ্যে একটি নিয়মিত বার্তালাপ হতে পারে। প্রত্যেক জেলা পরস্পরের বেস্ট প্র্যাক্টিসেসগুলিকে নিজের জেলায় প্রয়োগ করতে পারে। কেন্দ্রের সকল মন্ত্রককেও সেই সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলির ডকুমেন্টেশন করতে হবে যেগুলি ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে সামনে আসছে। এটাও দেখতে হবে যাতে ‘পিএম গতি শক্তি – ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’-এর মাধ্যমে এই শ্লথ হয়ে যাওয়া জেলাগুলি কিভাবে উপকৃত হতে পারে।
বন্ধুগণ,
আজকের এই কর্মসূচিতে আমি আপনাদের সামনে আরও একটি চ্যালেঞ্জ রাখতে চাই। একটি নতুন লক্ষ্যও আপনাদের দিতে চাই। এই চ্যালেঞ্জ দেশের ২২টি রাজ্যের ১৪২টি জেলার জন্য। এই জেলাগুলি উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। এই জেলাগুলি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলার ক্যাটাগরিতে পড়ে না। এগুলি অনেক অগ্রগামী জেলা। কিন্তু অনেক প্যারামিটারে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও দু-একটি প্যারামিটার এমন রয়েছে যেগুলিতে তারা পিছিয়ে রয়েছে। আমি সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিকে বলেছিলাম যে, তারা যেন নিজের নিজের মন্ত্রকের সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এ ধরনের জেলাগুলিকে চিহ্নিত করে। তাদের মধ্যে কেউ ১০টি জেলা চিহ্নিত করেছে তো কেউ ৪টি, কেউ ৬টি। যেমন মনে করুন, কেউ পেয়েছে এমন একটি জেলা যেখানে সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু পুষ্টির সমস্যা আছে। এরকম আর কেউ পেয়েছে কোনও এক জেলা যেখানে সমস্ত ইন্ডিকেটর ঠিক আছে, কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রকগুলি ভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে এরকম ১৪২টি জেলার একটি তালিকা তৈরি করেছে, যেগুলি একটি বা দুটি প্যারামিটারে অন্যান্য জেলা থেকে পিছিয়ে আছে। এই ১৪২টি জেলায় আমাদেরকে একইরকম কালেক্টিভ অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করতে হবে, যেমনটি আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির জন্য করি। এটা সমস্ত সরকারের জন্য, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন, সমস্ত সরকারি মেশিনারি – প্রত্যেকের জন্য একটি নতুন সুযোগ, আবার নতুন চ্যালেঞ্জও। এই চ্যালেঞ্জকে এখন আমাদের মিলেমিশে বাস্তবায়িত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সব সময় সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী বন্ধুদের সাহায্য পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও তাঁরা এভাবেই সাহায্য করে যাবেন।
বন্ধুগণ,
এখন করোনার সঙ্কট সময় চলছে। করোনা নিয়ে প্রস্তুতি, তার ব্যবস্থাপনা আর করোনার মধ্যেই উন্নয়নের গতিকে বজায় রাখা, এক্ষেত্রে সমস্ত জেলাগুলিকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। এই জেলাগুলির সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রতিকূলতার দিকে তাকিয়ে আমাদের এখন থেকেই এ কাজ করে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের ঋষি-মুনিরা বলে গেছেন – “জলবিন্দু নিপাতেন ক্রমশঃ পূর্বতে ঘটঃ” অর্থাৎ, বিন্দু বিন্দু জলের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ ঘট ভরতে হবে। সেজন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে আপনাদের প্রতিটি প্রচেষ্টা আপনাদের জেলার উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে থাকবে। এখানে সিভিল সার্ভিসেস-এর সঙ্গে যুক্ত যত বন্ধুরা রয়েছেন, তাঁদের আমি আরও একটি কথা মনে করাতে চাইব। আপনারা সেই দিনটির কথাও অবশ্যই স্মরণ করবেন, যেদিন আপনাদের এই সার্ভিসের প্রথম দিন ছিল। সেদিন আপনারা দেশের জন্য কতকিছু করতে চাইছিলেন, কতো উৎসাহ ও উদ্দীপনায় আপনারা টইটম্বুর ছিলেন, কতো না সেবাভাব আপনাদের মধ্যে ছিল, আজ সেই উদ্দীপনা নিয়ে আপনাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আপনাদের করার জন্য, আপনাদের পাওয়ার জন্য অনেক কিছু আছে। এক একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাতে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের স্বপ্নগুলিকে বেশি করে বাস্তবায়িত করুন। স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উৎসব যখন হবে, নতুন ভারতের এই স্বপ্নগুলি আমরা দেখব, আর সেগুলি বাস্তবায়নের পথ আমাদের এই জেলাগুলি এবং গ্রামগুলিতে হয়েই যাবে। আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে যে আপনারা সবাই নিজস্ব প্রচেষ্টায় কোনওরকম ত্রুটি রাখবেন না।
দেশ এখন নিজের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করবে। এর স্বর্ণিম অধ্যায়ে একটি বড় ভূমিকা আপনাদের মতো সকল বন্ধুকেই নিতে হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি উপস্থিত সকল মুখ্যমন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানাই, আপনারা সবাই নবীন বন্ধুগণ, এখন থেকে নিজের নিজের জীবনে পরিশ্রমকে পুঁজি করুন, যে পরিণাম আমরা এনেছি এবং এর জন্য কিছু অভিনন্দন ও অনেক ধন্যবাদ জানাই। আজ সামনে ২৬ জানুয়ারি রয়েছে। আমাদের সকলের সামনে তার চাপ রয়েছে। জেলাশাসকদের ওপর বেশি চাপ থাকে। গত দু’বছরের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে যদি দেখি, তবে আপনারা সকলেই সেই লড়াইয়ের অগ্রণী সৈনিক। আজ এক্ষেত্রে শনিবার দিনটি আপনাদের সঙ্গে সামান্য সময় কাটানোর মাধ্যমে যে সামান্য কষ্ট আপনাদের দিচ্ছি, তা সত্ত্বেও যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে আজ আপনারা সকলে যুক্ত হয়েছেন, এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।