বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সুধীবৃন্দ, আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মীবৃন্দ এবং ভারতের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রের প্রতিনিধিবৃন্দকে জানাই নমস্কার।
বন্ধুগণ,
প্রাচীন একটি ভারতীয় লিপি বলছে:
सर्वे भवन्तु सुखिनः । सर्वे सन्तु निरामयाः ।
सर्वे भद्राणि पश्यन्तु । मा कश्चित् दुःख भाग्भवेत् ॥
অর্থাৎ, সকলে রোগমুক্ত এবং সুখী হন। এই হ’ল অন্তর্ভুক্তির আদর্শ। হাজার বছর আগেও, যখন বিশ্ব জুড়ে কোনও অতিমারী কালো ছায়া ফেলেনি, তখনও স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল আন্তর্জাতিক। এই ধারণারই প্রতিফলন আমাদের ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’ মন্ত্রে। এই ধারণা শুরু মানবজাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তার ব্যাপ্তি আমাদের বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি একক জুড়ে।
বন্ধুগণ,
রোগ না থাকার অর্থ যে সুস্বাস্থ্য – একথা সকলেই জানেন। কিন্তু, স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী আরও প্রসারিত। আমাদের লক্ষ্য শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক প্রশ্নে সকলের কল্যাণে।
বন্ধুগণ,
জি-২০ সভাপতিত্বে ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছে ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ – এর আদর্শকে সামনে রেখে। আমরা উপলব্ধি করেছি, বিশ্ব জুড়ে একটি সুস্থিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা। স্বাস্থ্য পর্যটন এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সচলতা স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ বাসগ্রহের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। সেদিক থেকে এই আলোচনা ও কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সভায় সরকারি – বেসরকারি, পেশাদার এবং শিক্ষা জগতের প্রতিনিধিত্ব এক পরিবার এক বিশ্বের ধারণাকে প্রতিফলিত করে।
বন্ধুগণ,
সার্বিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রটিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। আমাদের রয়েছে প্রতিভা, প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্য। ভারতীয় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা কতটা দক্ষ, তা সারা বিশ্বের মানুষ জানেন। ভারত সংস্কৃতি, জলবায়ু এবং সমাজের প্রশ্নে বহুমাতৃক হওয়ায় এখানে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীরা বিভিন্ন পরিমণ্ডলে কাজ করতে সক্ষম। এজন্যই স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রে ভারতীয়দের দক্ষতা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
বন্ধুগণ,
১০০ বছর পরে আসা অতিমারী বিশ্বের সামনে একাধিক বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। বোঝা গেছে যে, নিবিড়ভাবে সংযুক্ত এই বিশ্বে স্বাস্থ্যের প্রশ্নে বিপদ কোনও সীমানা মানে না। চরম সঙ্কটের সময় দক্ষিণ বিশ্ব যেভাবে চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। প্রকৃত উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তই হ’ল – জনকেন্দ্রিকতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যতই উন্নতি হোক না কেন, প্রান্তিকতম মানুষটির কাছেও তা পৌঁছে দেওয়াটা একান্ত জরুরি। অতিমারীর সময় বহু দেশই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য অংশীদারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। প্রতিষেধক ও ওষুধ সরবরাহ করে বিশ্বের নানা দেশে মানুষের প্রাণ রক্ষার কাজে শরিক হতে পেরে ভারত গর্বিত। আমাদের সমৃদ্ধ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্র তৈরি করেছে স্বদেশী প্রতিষেধক। এই দেশে সংঘটিত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুততম কোভিড প্রতিষেধক কর্মসূচি। ১০০টিরও বেশি দেশে ৩০ কোটি ডোজ প্রতিষেধক পাঠিয়েছে ভারত। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে থাকবো আমরা।
বন্ধুগণ,
রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যোন্নয়নের প্রশ্নে ভারতের চিরাচরিত ঐতিহ্য রয়েছে। যোগ এবং প্রাণায়ম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে। এইসব হ’ল আধুনিক বিশ্বকে সনাতন ভারতের উপহার। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আয়ুর্বেদ – যেখানে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য সমান অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। জীবনশৈলী সংক্রান্ত রোগব্যাধির সমাধান চায় সারা বিশ্ব। এইসবেরই উত্তর আছে ভারতের চিরাচরিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের কাছে। মিলেট এবং আমাদের চিরাচরিত খাদ্যাভাস খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির প্রশ্নে অত্যন্ত সহায়ক।
বন্ধুগণ,
প্রতিভা, প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে রয়েছে এমন একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্র, যা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং সুলভ। এদেশে হাতে নেওয়া হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সরকার পোষিত স্বাস্থ্য বিমা কর্মসূচি। এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি মানুষ নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। নগদ ও কাগজবিহীন পন্থায় ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা পেয়েছেন ৪০ কোটি মানুষ। এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই আমাদের নাগরিকদের ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় সাশ্রয় করেছে।
বন্ধুগণ,
স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রে বিশ্বের কর্মসূচি বিচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। চাই সমন্বিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। জি-২০’র সভাপতিত্বে ভারতের কর্মসূচিতে এই বিষয়টি অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। শুধু নিজের দেশই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সুলভে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। সমস্ত রকম বৈষম্য দূর করা ভারতের লক্ষ্য। ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’ কর্মসূচিতে আপনাদের সহযোগিতা চাই আমরা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।