নমস্কার!
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীগণ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা, প্রতিমন্ত্রীরা, সাংসদগণ, বিধায়ক, অন্যান্য প্রতিনিধি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা,
দেশের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ একটি নজিরবিহীন উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪০ কোটি ভারতীয়ের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে গতি আনা হচ্ছে। এটাই আজকের ভারতের প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা তরুণ, শিল্পোদ্যোগী, মহিলা, পেশাদার, ব্যবসায়ী এবং চাকরির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের। এর উদাহরণ হল, আজকে একসঙ্গে ৯টি বন্দে ভারতের সূচনা। আজ রাজস্থান, গুজরাত, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক এবং কেরালার মানুষ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সুবিধা পেলেন। আজ চালু হওয়া ট্রেনগুলি আগেরগুলির তুলনায় আরও আধুনিক এবং আরামদায়ক। এই বন্দে ভারত ট্রেনগুলি নতুন ভারতের নতুন শক্তি, উদ্দীপনা এবং আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। আমি আরও আনন্দিত যে, বন্দে ভারতের প্রতি মানুষের উন্মাদনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত ১ কোটি ১১ লক্ষের বেশি যাত্রী এই ট্রেনগুলিতে সফর করেছেন এবং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বন্ধুগণ,
এ পর্যন্ত চালু হওয়া ২৫টি বন্দে ভারত ট্রেনের পরিষেবার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এবার এই পরিষেবার সঙ্গে আরও ৯টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস যুক্ত হল। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন বন্দে ভারত দেশের প্রতিটি অংশকে যুক্ত করবে। আমি খুশি যে, বন্দে ভারত প্রশংসনীয়ভাবে তার লক্ষ্যপূরণ করতে পারছে। যাঁরা কম সময়ে সফর করতে চান, তাঁদের কাছে এই ট্রেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে অন্য শহরে কাজ সেরে একই দিনে ফিরে আসতে চান, তাঁদের পক্ষে এই ট্রেন অত্যন্ত উপযোগী। বন্দে ভারত ট্রেনগুলি পর্যটন এবং আর্থিক কার্যকলাপে গতি এনেছে। যেখানেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস পৌঁছতে পেরেছে, সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ সেখানকার ব্যবসায়ী এবং দোকানদারদের আয় বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে সেই এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
ভারতে আজ উদ্দীপনা এবং আত্মবিশ্বাসের যে পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক দশকে তা দেখা যায়নি। নতুন ভারতের সাফল্যে আজ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক গর্বিত। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য মানুষের প্রত্যাশাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আদিত্য-এল ১ এই আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেছে যে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগোলে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধেও সাফল্য পাওয়া সম্ভব। জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের সাফল্য ভারতের গণতন্ত্র, সাধারণ দেশবাসী এবং এর বৈচিত্র্যের মধ্যে এক অবিশ্বাস্য শক্তি এনে দিয়েছে। ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতা নিয়ে আজ গোটা বিশ্বে চর্চা চলছে। আমাদের মহিলা পরিচালিত উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গী আজ গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়োচ্ছে। সেই ভাবনার ওপর ভিত্তি করেই সংসদে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’-এর সূচনা করেছে সরকার। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়মের সূচনার পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের অবদান ও ক্রমবর্ধমান ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ বেশ কয়েকটি রেলস্টেশন পুরোপুরি মহিলারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই ধরনের উদ্যোগের আমি প্রশংসা করছি এবং নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়মের জন্য দেশের সব মহিলাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আত্মবিশ্বাসের এই বাতাবরণের মধ্যেই বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে ‘অমৃতকাল’ (সোনালী অধ্যায়)-এর ভারত গড়ে তোলার কাজ চলছে। পরিকাঠামো থেকে রূপায়ণ, সমস্ত ক্ষেত্রে অংশীদাররা সহযোগিতা করছেন এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। দেশে পরিবহন খরচ এবং রপ্তানি বাণিজ্যের খরচ কমাতে নতুন পণ্য সরবরাহ নীতি রূপায়ণ করা হয়েছে। বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই সব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল, ভারতের নাগরিকদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করা এবং তাঁদের মূল্যবান সময় বাঁচানো।
বন্ধুগণ,
ভারতীয় রেল হল, দেশের গরিব মানুষ ও মধ্যবিত্তদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। আমাদের দেশে একদিনে যে সংখ্যক মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন, তা বিশ্বের অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অতীতে ভারতীয় রেলের আধুনিকীকরণের ওপর খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন আমাদের সরকার ভারতীয় রেলে পরিবর্তন আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কেন্দ্রীয় সরকার রেলের বাজেট বরাদ্দ নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে রেলের বাজেট বরাদ্দ ২০১৪ সালের তুলনায় আটগুণ বেড়েছে। এর ফলে, ডবল রেললাইন তৈরি, বৈদ্যুতিকীকরণ, নতুন ট্রেন চালু এবং নতুন রুটে ট্রেন চলাচলে গতি এসেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতীয় রেলে ট্রেনগুলি যদি যাত্রীদের চলমান বাসস্থান হয়ে থাকে, তবে আমাদের রেলস্টেশনগুলিও অস্থায়ী বাড়ির মত। আপনি এবং আমি, আমরা সবাই জানি, আমাদের হাজার হাজার রেলস্টেশন রয়েছে, স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে যেগুলির তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। উন্নত ভারতের প্রয়োজন, রেলস্টেশনগুলির আধুনিকীকরণ। সেই দৃষ্টিভঙ্গীকে সামনে রেখেই এই প্রথম ভারতে রেলস্টেশনগুলির উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে দেশে ৫০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের খোলনলচে বদলানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই নতুন চেহারার স্টেশনগুলি অমৃতকালে ‘অমৃত ভারত স্টেশন’ হিসেবে পরিচিত হবে। আগামী দিনগুলিতে এই স্টেশনগুলি নতুন ভারতের প্রতীক হয়ে উঠবে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
প্রতিটি রেলস্টেশনের একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠা দিবস রয়েছে। আমি খুশি যে, ভারতীয় রেল এখন প্রতিটি স্টেশনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন শুরু করেছে। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস এবং পুণে সহ বেশ কয়েকটি রেলস্টেশনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত হয়েছে। কোয়েম্বাটুর রেলস্টেশনের ১৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের সাফল্যের জন্য মানুষ গর্ব অনুভব করেন। রেলস্টেশনগুলির প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের ঐতিহ্যকে সম্প্রসারিত করা হবে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ এই মন্ত্রকে সামনে রেখে দেশ অমৃতকালের পথে এগিয়ে চলেছে। ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে, তখন প্রতিটি রাজ্যের উন্নয়ন, প্রতিটি রাজ্যের মানুষের বিকাশ, এই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। আগের সরকারগুলিতে কে রেলমন্ত্রী হবেন, কোন রাজ্য থেকে রেলমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হত। লোকের বিশ্বাস ছিল, রেলমন্ত্রী যে রাজ্যের হবেন, সেখানে আরও বেশি ট্রেন চালু হবে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন ট্রেন ঘোষণা করা হত, তার মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক ট্রেন চালু করা হত। এই আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা শুধুমাত্র রেলের ক্ষতি করেনি, সেই সঙ্গে দেশের মানুষেরও ক্ষতি করেছে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ এই ভাবনা নিয়ে আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
আমি আজ আমাদের কঠোর পরিশ্রমী রেলকর্মীদের সম্পর্কেও কিছু বলতে চাই। যখন কেউ ট্রেন সফর করেন, তখন যাত্রা কেমন হল, তা নিয়ে আলোচনা হয়। রেলস্টেশনগুলির কী পরিবর্তন হয়েছে, ট্রেনে পরিষেবা কেমন ছিল, টিকিট পরীক্ষকের ব্যবহার সহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়। তাই যাত্রীদের সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে হলে, প্রত্যেক রেলকর্মীর সহমর্মিতা এবং নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করা উচিত। এটা অত্যন্ত আনন্দের যে, এখন রেলকর্মীদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ এখন তাঁদের প্রশংসা করছেন।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
ভারতীয় রেল স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে নতুন মানে উন্নীত হয়েছে, যা প্রত্যেক নাগরিকের নজরে এসেছে। আমাদের রেলস্টেশন এবং ট্রেনগুলি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। আপনারা জানেন, গান্ধী জয়ন্তী এগিয়ে আসছে। স্বচ্ছতার প্রতি গান্ধীজির অঙ্গীকারের সঙ্গে সবাই পরিচিত। স্বচ্ছতার প্রতি প্রতিটি পদক্ষেপের অর্থ হল, গান্ধীজির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। এই চেতনাকে সঙ্গী করেই ১ অক্টোবর সকাল ১০টায় স্বচ্ছতা অভিযানের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গোটা দেশে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আমি আপনাদের সবাইকে এতে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী এবং ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জয়ন্তী। আসুন গোটা মাসজুড়ে আমরা খাদি, হস্তশিল্প এবং স্থানীয় পণ্য বেশি করে কেনাকাটা করি।
বন্ধুগণ,
আমি বিশ্বাস করি, ভারতীয় রেলের সমস্ত স্তরে পরিবর্তন উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। নতুন বন্দে ভারত ট্রেনের জন্য আমি সমস্ত দেশবাসীকে আবার শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক ধন্যবাদ!