স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ। কেবল ভারতের প্রতি কোণায় নয়, বরং বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তে আজ কোনও না কোনওভাবে ভারতীয়দের দ্বারা বা ভারতকে ভালবাসেন এমন মানুষদের দ্বারা আমাদের ত্রিবর্ণরঞ্জিত স্বমহিমায় উত্তোলিত হয়ে পতপত করে উড়ছে। আমি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ভারতপ্রেমী মানুষদের, ভারতীয়দের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আজকের এই দিনটি ঐতিহাসিক দিন। এক পবিত্র ধাপ, এক নতুন রাস্তা, এক নতুন সঙ্কল্প এবং নতুন যোগ্যতায় পদক্ষেপের এই শুভ অবকাশ। স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই দাসত্বের সময়কাল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে কেটে গেছে। ভারতের এমন কোনও প্রান্ত ছিল না, এমন কোনও সময় ছিল না, যখন দেশের মানুষ শত শত বছরের দাসত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি, জীবন বলিদান দেননি, যন্ত্রণা সহ্য করেননি, জীবন উৎসর্গ করেননি। আজ আমাদের সকল দেশবাসীর জন্য এমন সব মহান ব্যক্তিত্বকে, প্রত্যেক ত্যাগীকে, প্রত্যেক শহিদকে, প্রণাম জানানোর অবকাশ। তাঁদের প্রতি ঋণস্বীকার করার অবকাশ এবং তাঁদের স্মরণ করে তাঁদের স্বপ্ন দ্রুত পূরণের জন্য শপথ গ্রহণের অবকাশও।

আমরা সকল দেশবাসী কৃতজ্ঞ পূজনীয় বাপুজীর কাছে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কাছে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাছে, বীর সাভারকারের কাছে - যারা কর্তব্যের পথে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কর্তব্য পালনই তাঁদের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল।

এই দেশ কৃতজ্ঞ মঙ্গল পাণ্ডে, তাঁতিয়া টোপি, ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু, চন্দ্রশেখর আজাদ, আসফাক উল্লা খাঁ, রামপ্রসাদ বিসমিলের মতো অসংখ্য কৃতি বীরদের প্রতি, যারা ইংরেজ শাসনের ভিত্তি নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন। এই দেশ সেই বীরাঙ্গনাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। রাণী লক্ষ্মীবাঈ, ঝলকারি বাঈ, দুর্গা ভাবী, রানি গাইদিংলু, রানি চেন্নাম্মা, বেগম হজরত মহল, ভেলু নাচিয়াররা প্রমাণ দিয়েছেন ভারতের নারী শক্তি কী হতে পারে!

ভারতের নারী শক্তির সংকল্প কী হতে পারে, ভারতের নারী ত্যাগ ও বলিদানের কী নজির রাখতে পারেন! এমন অসংখ্য বীরাঙ্গনাদের স্মরণ করার সময় প্রত্যেক ভারতীয় পর্বিত হয়।

আজ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং স্বাধীনতার পর দেশ গঠনকারী ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ থেকে শুরু করে পণ্ডিত নেহরুজি, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, দীনদয়াল উপাধ্যায়, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, আচার্য বিনোবা ভাবে, নানাজি দেশমুখ, সুব্রহ্মণ্যম ভারতীর মতো এমন অসংখ্য মহাপুরুষকে প্রণাম জানানোর সময়।

আমরা যখন স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা আলোচনা করি, তখন আমাদের দেশের বিভিন্ন অরণ্যপ্রদেশে বসবাসকারী আদিবাসী সমাজের জন্য গর্ব করার কথাও ভুলতে পারি না। ভগবান বিরসা মুণ্ডা, সিধো-কানহো, আল্লুরি সীতারাম রাজু, গোবিন্দ গুরু --- এরকম অসংখ্য নাম আছে, যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামের কন্ঠস্বর হয়ে দূরদূরান্তের অরণ্যাঞ্চলেও আমাদের আদিবাসী ভাই বোন, আমার মায়েদের, আমাদের যুবকদের মনে মাতৃভূমির প্রতি বাঁচা মরার প্রেরণা জাগিয়েছেন।

এটা দেশের সৌভাগ্য  যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক রূপ ছিল। এর মধ্যে একটি রূপ এমনও ছিল, যাতে নারায়ণ গুরু হোক, স্বামী বিবেকানন্দ হোক, ঋষি অরবিন্দ হোক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হোক, এমন অনেক মহাপুরুষ ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে প্রত্যেক গ্রামের মানুষের মনে ভারতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। ভারতকে সচেতন করেছেন।

অমৃত মহোৎসবের সময় গোটা বছর জুড়ে আমরা দেশে দেখেছি, ২০২১-এ ডাণ্ডি যাত্রা দিয়ে শুরু হওয়া স্মৃতিদিবস পালনের মধ্য দিয়ে ভারতের প্রতিটি জেলায় প্রত্যেক প্রান্তে দেশবাসী স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের লক্ষ্য বাড়িয়ে চলেছেন। সম্ভবতঃ ইতিহাসে এত বিশাল, এত ব্যাপক ও দীর্ঘকাল ধরে একই উদ্দেশ্যে উৎসব পালনের এটাই প্রথম নিদর্শন। আর, দেশের প্রতিটি প্রান্তে এই সব মহাপুরুষদের স্মরণের চেষ্টা হয়েছে, যারা কোনও না কোনও কারণে ইতিহাসে স্থান পাননি অথবা তাদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ দেশ সন্ধান করে প্রত্যেক প্রান্তে এমন বীরদের, মহাপুরুষদের, ত্যাগীদের, শহিদদের, সত্যাগ্রহীদের স্মরণ করছে। প্রণাম জানিয়েছে। অমৃত মহোৎসবের সময়ে এই মহাপুরুষদের স্মরণের অবকাশ পাওয়া গিয়েছে।

গতকাল ১৪ আগস্ট গোটা দেশ ‘দেশভাগের বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’-এও অত্যন্ত বেদনার্ত মনে হৃদয়ের দগদগে ক্ষতকে স্মরণ করেছে। সেই কোটি কোটি মানুষ অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন, তেরঙ্গার মর্যাদার জন্য সহ্য করেছিলেন, মাতৃভূমির প্রতি, মাটির প্রতি ভালবাসায় তা সহ্য করেছিলেন, আর ধৈর্য হারাননি। ভারতের প্রতি ভালবাসায় নতুন জীবন শুরু করার সংকল্প প্রণামের যোগ্য, প্রেরণার যোগ্য।

আজ যখন আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি, তখন বিগত পঁচাত্তর বছরে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা, দেশকে সুরক্ষা প্রদানকারী, দেশের সংকল্প রূপায়ণকারী, সেনা জওয়ান থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মীরা, প্রশাসনে নিযুক্ত আমলারা, জনপ্রতিনিধিরা, স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার শাসক প্রশাসকরা, রাজ্য প্রশাসকরা, কেন্দ্রের প্রশাসকরা — ৭৫ বছরে তাঁদের সবার অবদানকে স্মরণ করার সময়। আর, দেশের কোটি কোটি মানুষের অবদানকে স্মরণ করার সময়, যাঁরা ৭৫ বছরে অনেক রকমের সমস্যার মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদের দ্বারা যা সম্ভব, তা করার চেষ্টা করে গেছেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

৭৫ বছর ধরে আমাদের এই যাত্রা অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। সুখ দুঃখের ছায়া ঘনিয়েছে, আর তার মধ্যেও আমাদের দেশবাসী সাফল্য অর্জন করেছে, পৌরুষ দেখিয়েছে, হার মানেনি,  নিজেদের শপথকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। আর সেজন্য, এটাও সত্য যে, শত শত বছরের পরাধীনতার সময়কালের বোঝা ভারতের মনকে, ভারতের মানবিক ভাবনাকে গভীর আঘাত করেছে। কিন্তু তাঁদের মনে জেদ ছিল, জিজীবিষা ছিল, তীব্র আকাঙ্খা ছিল, উৎসাহ ছিল। আর তাই অভাবের মধ্যে, উপবাসের মধ্যে, আর যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে ছিল, তখন দেশবাসীকে ভয় পাওয়াতে, নিরাশ করতে, হতাশ করতে, সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদি স্বাধীনতা আসে আর ইংরেজ চলে যায়, তাহলে দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, খণ্ডিত হবে, মানুষ নিজেরাই পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে মরে যাবে, কিছুই বাঁচবে না, ভারত অন্ধকার যুগে চলে যাবে! এমন   না জানি কত ধরণের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা জানতেন না যে, এটা ভারতের মাটি। এই মাটির সেই ক্ষমতা আছে যা শাসকের ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী এক অভ্যন্তরীণ প্রভাব নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, শত শত বছর বেঁচে থেকেছে! আর তাঁর ফলেই, আমরা কত কিছুই না সহ্য করেছি, কখনও খাদ্যের সংকট, কখনও যুদ্ধের শিকার হয়েছি।

সন্ত্রাসবাদ নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এনেছে, নির্দোষ নাগরিকদের মৃত্যুর দরজা পার করেছে। ছদ্ম যুদ্ধ চলেছে, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসেছে, সাফল্য বিফলতা, আশা নিরাশা, কতই না উত্থান-পতনও ঘটেছে। কিন্তু সেই উত্থান-পতন সত্বেও ভারত সামনে এগিয়েছে। ভারতের বৈচিত্র্য, অনেকের কাছে ভারতের জন্য বোঝা বলে মনে হয়। আসলে ভারতের এই বৈচিত্র্যই ভারতের অনন্য শক্তি, এই শক্তির এক অটুট অনন্য উপাদান। বিশ্ব জানতো না যে, ভারতের কাছে এক অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে, শিষ্টাচারের প্রবাহ আছে, একটি ভাবধারা আছে, দর্শনের বন্ধন আছে। আর, তা হল, ভারত হল গণতন্ত্রের জননী, মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি, আর যার হৃদয়ে গণতন্ত্র থাকে, সে যখন শপথ নিয়ে চলতে থাকে, সেই শক্তি বিশ্বের বড় বড় ক্ষমতাধর দেশের বিরুদ্ধে লড়ে তাদেরকে সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি, অর্থাৎ গণতন্ত্রের জননী, ভারত প্রমাণ করে দিয়েছে যে, আমাদের কাছে এক অনন্য ক্ষমতা আছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

মহাত্মা গান্ধীর মনে হিমালয়ের গুহা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেক কোণায় বসবাসকারী শেষ মানুষটির বিষয়ে চিন্তা করার যে স্বপ্ন ছিল, শেষতম প্রান্তে বসে থাকা ব্যক্তির যোগ্যতা বাড়ানোর যে আকাঙ্খা ছিল, আমি নিজেকে তাঁর জন্য সমর্পন করেছি। আর, এই ৮ বছরের ফলাফল আর স্বাধীনতার এতগুলি দশকের অভিজ্ঞতা, আজ ৭৫ বছর পর যখন অমৃতকালের দিকে পা বাড়াচ্ছি, অমৃত কালের এটাই প্রথম সকাল, তখন আমি এক এমন সামর্থ্য দেখছি। আর তাঁর জন্য গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছে।

দেশবাসী,

আমি আজ দেশের সব থেকে বড় সৌভাগ্য এটাই দেখতে পাচ্ছি। এখন ভারতের জনমন আকাঙ্খিত জনমন। একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ কোনও দেশের জন্য খুব বড় সম্পদ। আর খুব গর্ব হয়, কারণ আজ ভারতের প্রতিটি কোণায়, প্রত্যেক সমাজের প্রত্যেক বর্গে, প্রত্যেক গোষ্ঠীতে আকাঙ্খার ঝড় উঠেছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিক সবকিছু বদলাতে চায়, বদলাচ্ছে দেখতে চায়, এবং তাঁরা আর অপেক্ষার জন্য প্রস্তুত নয়, নিজের চোখে দেখে যেতে চায়, কর্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দেখতে চায়। তাঁরা গতি চায়, প্রগতি চায়। ৭৫ বছর ধরে সাজানো সমস্ত স্বপ্নকে সফল করার জন্য তাঁরা লালায়িত, উৎসাহিত, উতলা হয়ে আছে।

কিছু মানুষের তাঁর জন্য সঙ্কট হতে পারে। কারণ যখন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ গড়ে ওঠে, তখন সরকারকেও তলোয়ারের ধারালো অংশের উপর দিয়ে চলতে হয়। সরকারকেও সময়ের সঙ্গে দৌড়তে হয়। আর আমার বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সরকার হোক, রাজ্য সরকার হোক, স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন হোক, যে কোনও রকমের শাসন ব্যবস্থাই হতে পারে, সবাইকেই এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজকে পরিষেবা দিতে হবে, তাঁদের আকাঙ্খা পূরণের জন্য আমরা বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারবো না। আমাদের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছে। এখন তাঁরা তাঁদের আগামী প্রজন্মকে প্রতীক্ষার মধ্যে বাঁচার জন্য বাধ্য করতে তৈরি নয়। আর সেইজন্য অমৃতকালের প্রথম সকাল সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজের আকাঙ্খাগুলি পূর্ণ করার জন্য খুব বড় সোনালি সুযোগ নিয়ে এসেছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা অতীতে দেখেছি যে, আরও এক শক্তিকে আমরা অনুভব করেছি। সেটি হল, ভারতের গণ চেতনার পুনর্জাগরণ হয়েছে। এই গণ চেতনার পুনর্জাগরণ স্বাধীনতার এত লড়াইয়ের সেই অমৃত, যা সংরক্ষিত হয়েছে, সঙ্কলিত হয়েছে, ক্রমে সংকল্পে পরিবর্তিত হচ্ছে, চূড়ান্ত পৌরুষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, আর সাফল্যের পথ দেখা যাচ্ছে। এই চেতনা, আমি মনে করি, চেতনার জাগরণ বা পুনর্জাগরণ আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ। আর এই পুনর্জাগরণ দেখুন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত মানুষ সম্ভবত জানতো না দেশের ভিতর এমন কোন শক্তি আছে। কিন্তু গত তিন দিনে যেভাবে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দেশবাসী তেরঙ্গা যাত্রায় পথে নেমেছে। বড় বড় সমাজ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরাও বোধহয় কল্পনাও করতে পারে না যে, আমাদের প্রত্যেকের অন্তরের গভীরে আমার দেশের কত বড় শক্তি নিহিত রয়েছে, তা এক তেরঙ্গা ঝান্ডা দেখিয়ে দিয়েছে। এটা যে দেশে পুনর্চেতনা, পুনর্জাগরণের সময় - তা এসব মানুষ বুঝতে পারেনি।

এর আগে যেদিন মানুষ জনতা কারফিউর জন্য দেশের প্রতি কোণায় পথে বেরিয়ে পড়েন, তখন প্রথম সেই চেতনা অনুভূত হয়। যখন দেশ তালি, থালা, বাজিয়ে করোনা যোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, তখন এই চেতনা অনুভূত হয়। যখন দেশবাসী প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনা যোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানাতে বারান্দায়, ব্যালকনিতে, পথে বেরিয়ে পড়ে, তখন সেই চেতনা অনুভূত হয়। করোনার সময়কালে বিশ্ববাসী টিকা নেবে কি নেবে না, আমাদের ভ্যাক্সিন কাজ করবে কি করবে না, এই দ্বিধার মধ্যে ছিল। সেই সময়ে আমার দেশের গ্রামের গরিবরা টিকা নিয়েছেন, ইতিমধ্যেই দুশো কোটিরও বেশি ডোজ... বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো কাজ করে দেখিয়েছে। এটাই চেতনা, এটাই সামর্থ্য, এই সামর্থ্য আজ দেশকে নতুন শক্তি জোগাচ্ছে।

আমার প্রিয় ভাই বোনেরা,

এই এক গুরুত্বপূর্ণ সামর্থ্যকে আমি দেখছি, যেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজ, পুনর্জাগরণের মতোই স্বাধীনতার এতগুলি দশকের পর গোটা বিশ্বকে ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিয়েছে। বিশ্ব ভারতের দিকে গর্বের দৃষ্টিতে দেখছে, প্রত্যাশা নিয়ে দেখছে। বিশ্ববাসী তাঁদের নানা সমস্যার সমাধান ভারতের মাটিতে খুঁজছে বন্ধুরা। বিশ্বের এই পরিবর্তন, বিশ্বের এই ভাবনায় পরিবর্তন, ৭৫ বছর ধরে আমাদের অনুভব যাত্রার ফল। আজ আমরা যেভাবে সঙ্কল্প নিয়ে চলতে শুরু করেছি, বিশ্ববাসী সেদিকে নজর রাখছে, আর শেষ পর্যন্ত বিশ্বও আশা নিয়ে দেখছে। বিশ্ববাসীর এই আকাঙ্খা পূরণ করার ক্ষমতা ভারতের কতটা আছে, তাঁরা সেদিকে নজর রাখছেন। আমি এটাকে ত্রিশক্তি হিসেবে দেখছি, তিন সামর্থ্য হিসেবে দেখছি, আর এই ত্রিশক্তি হল প্রত্যাশার, পুনর্জাগরণের। আর বিশ্বের আশাগুলিকে, আর সেগুলিকে পূরণ করার জন্য আমরা জানি, বন্ধুরা, আজ পৃথিবীতে একটি বিশ্বাস জাগাতে আমাদের দেশবাসীর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর কয়েক দশকের অভিজ্ঞতার পর স্থায়ী সরকারের গুরুত্ব কী, রাজনৈতিক স্থিরতার গুরুত্ব কী, ভারতে রাজনৈতিক স্থিরতা কী ধরণের শক্তি দেখাতে পারে,নীতিগুলির ক্ষমতা কেমন, সেই নীতিগুলির প্রতি বিশ্বের ভরসা কিভাবে হবে, এটা আজ ভারত দেখিয়ে দিয়েছে এবং বিশ্ববাসী সেটা বুঝতে পারছে। আর যখনই রাজনৈতিক স্থিরতা আসে, সমাজে সব ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা আসে, তখন বিকাশের ক্ষেত্রে সকলেই অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠেন। আমরা ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ এর মন্ত্র নিয়ে চলা শুরু করেছিলাম, কিন্তু দেখতে দেখতে দেশবাসীর ‘সব কা বিকাশ’ আর ‘সব কা প্রয়াস’-এর প্রচেষ্টা তাকে আরও রঙিন করে দিয়েছেন। আর তাই, আমরা দেখেছি আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তিকে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ ক্ষমতাকেও আমরা দেখেছি। আজাদির অমৃত মহোৎসব যেভাবে পালিত হয়েছে, যেভাবে আজ দেশের প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানোর অভিযান চলছে, গ্রামে গ্রামে মানুষ এই অভিযানে যুক্ত হচ্ছেন, সেবার কাজ করছেন, নিজেদের উদ্যোগে নিজের গ্রামে জল সংরক্ষণের জন্য বড় অভিযান চালাচ্ছেন, আর সেজন্য, ভাই ও বোনেরা, পরিচ্ছন্নতার অভিযান থেকে শুরু করে গরিবের কল্যাণের কাজ, দেশ আজ সমস্ত শক্তি দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

कितना ही शानदार रहा हो, कितने ही संकटों वाला रहा हो, कितने ही चुनौतियों वाला रहा हो, कितने ही सपने अधूरे दिखते हो उसके बावजूद भी आज जब हम अमृतकाल में प्रवेश कर रहे हैं

কিন্তু ভাই ও বোনেরা, আমরা স্বাধীনতার অমৃতকালে যদি শুধু আমাদের ৭৫ বছরের যাত্রার গৌরব গানই করতে থাকি, নিজেদেরই পিঠ চাপড়াতে থাকি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন দূরে কোথাও চলে যাবে। তাই, ৭৫ বছরের সময়কাল যতই উজ্জ্বল হোক, যতই সঙ্কটের মুহূর্ত আসুক, যতই সমস্যাসংকুল হোক, যতই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাক, তা সত্ত্বেও আজ যখন আমরা অমৃতকালে প্রবেশ করছি, তখন আগামী ২৫ বছর আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই, আজ যখন লালকেল্লার প্রাকার থেকে ১৩০ কোটি দেশবাসীকে সামর্থ্যের কথা স্মরণ করাচ্ছি, তখন আমার সামনে তাঁদের স্বপ্নগুলিকে দেখছি, তাঁদের শপথ অনুভব করছি, তখন বন্ধুরা, আমার মনে হয়, আগামী ২৫ বছরের জন্য আমাদের সেই পঞ্চ শপথের প্রতি নিজেদের শক্তি কেন্দ্রীভূত করতে হবে। নিজেদের সংকল্পকে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। আমাদের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। আর, আমাদের সেই পঞ্চ শপথ নিয়ে, ২০৪৭-এ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর হবে, স্বাধীনতার প্রেমিকদের সব স্বপ্ন পূরণ করার দায়িত্ব নিয়ে চলতে হবে।

আমি যখন পঞ্চ শপথের কথা বলছি, তখন প্রথম শপথ হল, দেশ এখন বড় সংকল্প নিয়েই চলবে। খুব বড় সংকল্প নিয়ে চলতে হবে। আর সেই সংকল্প হল, বিকশিত ভারত। তাঁর থেকে একটুও কম হওয়া চলবে না। বড় সংকল্প – দ্বিতীয় শপথ হল, আমাদের মনের ভিতরে কোনও কোণায় যদি পরাধীনতার কোনও অংশ এখনও থেকে থাকে, যে কোনও উপায়ে তাকে বাঁচতে দেওয়া যাবে না। এখন একশো ভাগ, শত ভাগ, শত শত বছরের দাসত্ব যেখানে আমাদের আঁকড়ে ধরে আছে, আমাদের নিজেদের মনোভাবকে বেঁধে রেখেছে, আমাদের ভাবনায় বিকৃতির জন্ম দিয়েছে। দাসত্বের ছোট ছোট বিষয়ও যদি কোথাও নজরে আসে, আমাদের ভিতরে দেখা দেয়, আমাদের আশপাশে নজরে আসে, তার থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। এটা আমাদের দ্বিতীয় শপথের শক্তি। তৃতীয় শপথের শক্তি, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি, কেন না এই ঐতিহ্যই কখনও ভারতকে স্বর্ণিম সময় দিয়েছে। আর এই ঐতিহ্যই সময়ানুসারে পরিবর্তন করার ইচ্ছা রাখে। এই ঐতিহ্য, যা বাতিল সময়কে ছেড়ে এসেছে, নিত্য নতুনকে স্বীকার করেছে। আর তাই, এই ঐতিহ্যের প্রতি আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। চতুর্থ শপথও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হল একতা এবং ঐক্যশক্তি। ১৩০ কোটি দেশবাসীর একতা; কেউ নিজের নয়, কেউ পর নয়, একতাই শক্তি, ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্নের জন্য আমাদের চতুর্থ শপথ। আর, পঞ্চম শপথ, পঞ্চম শপথ হল, নাগরিকের কর্তব্য, নাগরিকদের কর্তব্য, প্রধানমন্ত্রীও যার বাইরে থাকবেন না, মুখ্যমন্ত্রীরাও যার বাইরে থাকবেন না। তাঁরাও নাগরিক। নাগরিকের কর্তব্যগুলি পালনই আমাদের আগামী ২৫ বছরের স্বপ্নগুলি পূরণ করার জন্য খুব বড় শপথের শক্তি।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

স্বপ্ন যখন বড় হয়, সংকল্প যখন বড় হয়, প্রচেষ্টাও বড় হয়। শক্তিও অনেক বড় মাত্রায় যুক্ত হয়। এখন কেউ কল্পনা করতে পারবেন যে, দেশের সেই ১৯৪০-৪২ এর সময়কালকে স্মরণ করুন, তখন দেশ উঠে দাঁড়িয়েছিল। কেউ হাতে ঝাড়ু তুলে নিয়েছে, কেউ তকলি নিয়েছেন, কেউ সত্যাগ্রহের পথ বেছে নিয়েছেন, কেউ সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছেন, কেউ বিপ্লবকালের বীরত্বের রাস্তা বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সংকল্পটা বড় ছিল – স্বাধীনতা। আর তার শক্তি দেখুন, বড় সংকল্প ছিল আর স্বাধীনতা অর্জন করেই থেমেছে। আমরা স্বাধীন হয়ে গেলাম। যদি সংকল্পটা ছোট হতো, সীমিত হতো, তাহলে হয়তো আজও সংগ্রামের দিনই বজায় থাকতো। কিন্তু সংকল্প বড় ছিল, আমরা সেটা অর্জন করেছি।

আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যখন অমৃত কালের প্রথম সকাল, তখন আমাদের আগামী পঁচিশ বছরে বিকশিত ভারত গড়ে তুলতেই হবে। চোখের সামনে ২০, ২২, ২৫ বছরের যুবক, আমাদের দেশের সামনে, আমার সামনে যারা আছেন, আমার দেশের যুবকরা, দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পালন করবে, তখন আপনারা ৫০, ৫৫ বছরের হবেন। অর্থাৎ, এটা আপনাদের জীবনের সুবর্ণ সময়, যখন এই ২৫-৩০ বছর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করার সময়। আপনারা সংকল্প নিয়ে আমার সঙ্গে চলতে থাকুন, ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার শপথ নিয়ে চলতে থাকুন। চলুন, আমরা সবাই সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে লেগে যাই। মহাসংকল্প, আমার দেশ হবে বিকশিত দেশ, উন্নত দেশে পরিণত হবে, উন্নয়ণের প্রত্যেক মাপকাঠিতে আমরা মানবকেন্দ্রিক ব্যবস্থাকে বিকশিত করবো, আমাদের কেন্দ্রে থাকবে মানুষ, আমাদের কেন্দ্রে থাকবে মানুষের আশা-আকাঙ্খা। আমরা জানি, ভারত যখন কোনও বড় সংকল্প নেয়, তা করে দেখায়। আমি যখন এখান থেকে আমার প্রথম ভাষণে পরিচ্ছন্নতার কথা বলেছিলাম, দেশ চলতে শুরু করেছিল। যার পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছে, পরিচ্ছন্নতার দিকে এগিয়েছেন আর আবর্জনার প্রতি সর্বব্যাপী ঘৃণার এক স্বভাব তৈরি হয়েছে। এটাই তো দেশ, যার নাগরিকেরা এটা করে দেখিয়েছে, এখনও করে যাচ্ছে, আগামী দিনেও করবে । এটাই তো দেশ, যার নাগরিকেরা টিকাকরণ নিয়ে দ্বিধায় ছিল, কিন্তু ইতিমধ্যেই ২০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা পার করেছে, সময়ের মধ্যে করেছে, আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, এই দেশ করতে পারে! আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে আমদানী করা জ্বালানী তেল দিইয়ে যেহেতু আমাদের দিন চালাতে হয়, আমরা যথাসম্ভব গাছপালার থেকে উৎপন্ন তেলের দিকে এগুবো। তখন  ১০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিং এর স্বপ্ন খুব বড় লাগছিল। পুরনো ইতিহাস বলছিল, সম্ভব নয়। কিন্তু সম্ভবতঃ নির্দিস্ট সময়সীমার আগেই ১০ শতাংশ ইথানল ব্লেন্ডিং বাস্তবায়িত করে দেশ এই স্বপ্নকে পূর্ণ করেছে।

ভাই ও বোনেরা, আড়াই কোটি মানুষের কাছে এত কম সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া ছোট কাজ ছিল না। দেশ তা-ও করে দেখিয়েছে। লক্ষ লক্ষ পরিবারের বাড়িতে ‘নলের মাধ্যমে পানীয় জল’ পৌঁছানোর কাজ আজ দেশে তীব্রগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকাশ্যে শৌচকর্ম থেকে রেহাই, ভারতে আজ তা-ও সম্ভব হয়েছে!

আমার প্রিয় দেশবাসী, অনুভব করতে হবে যে আমরা সবাই একবার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে চলতে শুরু করলে লক্ষ্যকে পার করতে পারবো। তা সে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যপূরণ হোক, দেশে নতুন মেডিকেল কলেজ বানানোর লক্ষ্যপূরণ হোক, ডাক্তার তৈরি করার অভিযান হোক, প্রত্যেক ক্ষেত্রে আগের থেকে গতি বেড়েছে। আর তাই আমি বলছি, আগামী ২৫ বছর বড় সংকল্পের হোক, এটাই আমাদের শপথ, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত।

দ্বিতীয় কথা আমি বলেছি, সেই শপথের কথা আমি আলোচনা করেছি, যা দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে। দেশের কথা ভাবুন ভাইসব, কত দিন বিশ্ব আমাদের সার্টিফিকেট দিতে থাকবে? কত দিন বিশ্বের দেওয়া সার্টিফিকেট দিয়ে আমরা চালাবো? আমরা কি আমাদের নিজস্ব মানদণ্ড বানাবো না? ১৩০ কোটির দেশ কি নিজের মানদণ্ড নির্ধারণের প্রচেষ্টা করতে পারে না? আমাদের কোনও অবস্থাতেই অপরের মতো দেখার চেষ্টা করার দরকার নেই। আমরা যেমন আছি, তেমনই থাকবো, কিন্তু শক্তির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকবো, - এটাই আমাদের মেজাজ হওয়া উচিত। আমরা দাসত্বের থেকে মুক্তি চাই। আমাদের মনের ভিতর থেকে শুরু করে দূরদূরান্তে সাত সমুদ্রের নিচেও দাসত্বের তত্ত্ব বেচে থাকা উচিত নয়, সাথীরা। আমার আশার সঙ্গে দেখতে চাই, যে ভাবে নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি তৈরি হয়েছে, যেমন মন্থনের সঙ্গে তৈরি হয়েছে, কোটি কোটি মানুষের বিচারধারাকে সঙ্কলিত করে তৈরি হয়েছে, আর ভারতের মাটির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা নীতি তৈরি হয়েছে, তাঁর রস কষ সব মাটির থেকে আসছে। আমরা যে কুশলতার উপর জোর দিয়েছি, সেটা এমন এক সামর্থ্য, যা আমাদের দাসত্বের থেকে মুক্তি দেওয়ার শক্তি রাখে। আমরা দেখেছি, কখনও কখনও তো আমাদের ট্যালেন্ট ভাষার বাধায় আটকে যায়। এটা দাসত্বের মানসিকতার পরিণাম। আমাদের দেশের সব ভাষা নিয়েও আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। সেই ভাষা আমাদের জানা থাকুক বা না-থাকুক, কিন্তু সেটা আমাদের দেশেরই ভাষা, আমাদের পূর্বজরা বিশ্বকে এই ভাষা দিয়ে গিয়েছেন, আমাদের গর্ব হওয়া উচিত।

আমার সাথীরা,

আজ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার চেহারা আমরা দেখছি। স্টার্ট আপ দেখছি। এরা কোন লোকজন? এরা সেই মেধার , দেশের টায়ার-২, টায়ার-৩ আসনে বসা গ্রামের গরিব পরিবারের সদস্য। এরা আমাদেরই নওজোয়ান, যারা আজ নতুন নতুন অনুসন্ধানের জন্যে বিশ্বের সামনে আসছেন। তাঁদের কাছে আমাদের দাসত্বের মানসিকতা তিলাঞ্জলী দিতে হবে। নিজেদের ক্ষমতার উপর ভরসা রাখতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ আরেকটি কথা আমি বলেছি, তৃতীয় শপথের কথা, সেটি আমাদের ঐতিহ্যের বিষয়ে। আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। আমরা যখন আমাদের মাটির সঙ্গে যুক্ত হবো, মাটির সঙ্গে আমরা যখন যুক্ত হবো, তখনই তো উপরে উড়তে পারব, আর উঁচুতে উড়তে পারলেই তো আমরা বিশ্বকে সমাধান দিতে পারব। এখন আমরা নিজেদের তৈরি জিনিসের জন্য গর্ব করতে পারি। আজ বিশ্ব হলিস্টিক কেয়ার-এর আলোচনা করছে। কিন্তু যখন হলিস্টিক হেলথ কেয়ার-এর চর্চা করে, তখন তাঁদের নজর ভারতের যোগের উপর পড়ে, ভারতের আয়ুর্বেদের উপর যায়। ভারতের হলিস্টিক জীবনশৈলীর এর উপর যায়। এটা আমাদের ঐতিহ্য, যা আমরা বিশ্বকে দিচ্ছি। বিশ্ব আজ তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। আর আমাদের শক্তি দেখুন। আমরা সেই মানুষ, যারা প্রকৃতির সঙ্গে থেকে বাঁচতে জানি। প্রকৃতির সঙ্গে প্রেম করতে জানি। আজ বিশ্ব পরিবেশের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। আমাদের কাছে ঐতিহ্য আছে, বিশ্ব উষ্ণায়ণের সমস্যা সমাধান করার রাস্তা আমাদের কাছে আছে; আমাদের পূর্বজরা তা আমাদের দিয়ে গেছেন।

আমরা যখন জীবন শৈলীর কথা বলি, পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলীর কথা বলি, আমরা লাইফ মিশনের  কথা বলি, তখন আমরা নিশ্চিতভাবেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আমাদের কাছে সেই শক্তি আছে। আমাদের বড় ধান, মোটা ধান, মিলেট – এ তো আমাদের প্রত্যেক ঘরের সামগ্রী। এটাই আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের ছোট কৃষকদের পরিশ্রমে ছোট ছোট জমির টুকরোয় জন্ম নেওয়া আমাদের ধান। আজ বিশ্ব আন্তর্জাতিক স্তরে ‘মিলেট ইয়ার’ পালনের জন্য এগোচ্ছে। অর্থাৎ, আমাদের ঐতিহ্য আজ বিশ্বে সেই বিষয়ে আমাদের গর্ব করতে শেখায়। আমাদের কাছে বিশ্বকে দেওয়ার অনেক কিছু আছে। আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ; বিশ্বে যখনই সামাজিক অশান্তির আলোচনা হয়, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের চর্চা হয়, তখন যোগ মানুষের নজরে আসে। সামগ্রিক স্তরে অশান্তির কথা হলে ভারতের পারিবারিক ব্যবস্থার দিকে তাকায়। যৌথ পরিবার নামক একটি মূলধন বা পুঁজি, শত শত বছর ধরে আমাদের মা-বোনেদের ত্যাগ ও বলিদানের কারণে পরিবার নামের যে ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছে, সেটাই আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের উপর আমরা কিভাবে গর্ব করি?  আমরা তো তেমন মানুষ, যারা জীবের মধ্যে শিবকে দেখি। আমরা তেমন মানুষ যারা নরের মধ্যে নারায়ণকে দেখি। আমরা তেমন মানুষ, যারা নারীকে নারায়ণী বলি। আমরা তেমন মানুষ যারা চারাগাছে পরমাত্মাকে দেখতে পাই। আমরা তেমন মানুষ, যারা নদীকে মা মনে করি। পরিবেশের এমন ব্যাপক বিশালতাই আমাদের গৌরব। বিশ্বের সামনে যখন নিজেরা গর্ব করবো, তো বিশ্বও গৌরবগান করবে।

ভাই ও বোনেরা,

আমরা সেই দেশের মানুষ, যারা বিশ্বকে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর মন্ত্র দিয়েছে। আমরা সেই দেশের মানুষ, যারা বিশ্বকে বলেছেন  ‘একং সদবিপ্রা বহুধা বদন্তি’। আজ যে ‘হোলিয়ার দ্যান দোউ’-এর সঙ্কট চলছে, ‘তোর থেকে আমি বড়’বলে যে অশান্তির কারণ তৈরি হচ্ছে, সেই বিশ্বকে ‘একং সদবিপ্রা বহুধা বদন্তি’র জ্ঞান দেওয়ার পরম্পরা আমাদের কাছে আছে। যা বলে, সত্য এক, জ্ঞানী লোকেরা তাকে আলাদা আলাদা ভাবে বলেন। এটাই আমাদের গৌরব। আমরা তেমন মানুষ, যারা বলেন, ‘য়ৎ পিণ্ডে তৎ ব্রহ্মাণ্ডে’। কত বড় ভাবনা, যা কিছু ব্রহ্মাণ্ডে আছে, তা সব জীব মাত্রেই আছে। ‘য়ৎ পিণ্ডে তৎ ব্রহ্মাণ্ডে’ একথা বলা মানুষের উত্তরপুরুষ তো আমরাই। আমরা তেমন মানুষ, যারা বিশ্বের কল্যাণকে নিয়ে ভাবি, আমরা জগতের কল্যাণ থেকে জনকল্যাণের পথের পথিক। জন কল্যাণ থেকে জগৎ কল্যাণের রাস্তায় চলার পথিক আমরা যখন বিশ্বের কামনা করি, তখন বলি, ‘সর্ব ভবন্তু সুখীনঃ। সর্ব সন্তু নিরাময়াঃ।’ সবার সুখের কথা, সবার আরোগ্যের কথা বলাই আমাদের ঐতিহ্য। আর সেই জন্যই আমরা বড় ঔজ্জ্বল্যের সঙ্গে আমাদের পরম্পরার গর্ব করতে শিখি, এই শপথের শক্তি আছে আমাদের, যা আমাদের ২৫ বছরের স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্য জরুরি।

সেই ভাবেই আমার প্রিয় দেশবাসী,

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একতা, সঙ্ঘশক্তি। এত বড় দেশ ও তার বৈচিত্র্যকে আমাদের উদযাপন করা উচিত। এই পথ আর পরম্পরাই হল আমাদের গৌরব ও মর্যাদার। কেউ ছোট নয়, কেউ বড় নয়, সবাই সমান। কেউ নিজের নয়, কেউ পর নয়, সবাই আপন। এই ভাবনা একতার জন্য খুব জরুরি। ঘরেই একতার ভিৎ তখনই প্রোথিত হয়, যখন ছেলে ও মেয়ে এক সমান গণ্য হয়। যদি ছেলে আর মেয়ে এক সমান না হয়, তাহলে একতার মন্ত্র গ্রন্থিত হতে পারে না। লিঙ্গ সাম্য আমাদের একতার প্রথম শর্ত। যখন আমরা একতার কথা বলি, যদি আমাদের এখানে একটাই প্যারামিটার থাকে, একটাই মাণদণ্ড থাকে, যেই মাণদণ্ডে আমরা বলি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট‘-এ যা কিছু আমরা করছি, যা কিছু ভাবছি, যা কিছু বলছি, তা ইন্ডিয়া ফার্স্ট–এর অনুকূল। তবেই একতার পথ খুলে যাবে বন্ধুরা। আমাদের সংঘবদ্ধ করার সেই মন্ত্র আছে, যা আমাদের ধরে নিতে হবে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, আমাদের সমাজের ভিতরে উঁচু-নিচুর ভেদভাব থেকে আমার-তোমার ভেদভাবের থেকে আমরা সবার পূজারী হই। ‘শ্রমেব জয়তে’ বলে, শ্রমিকদের সম্মান করা আমাদের স্বভাব হওয়া উচিত।

কিন্তু ভাই ও বোনেরা,

আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার একটি কষ্টের কথাও বলতে চাই। এই ব্যথা আমি প্রকাশ না করে থাকতে পারছি না। আমি জানি যে, এটা সম্ভবত লাল কেল্লা থেকে বলার বিষয় হতে পারে না। কিন্তু আমার মনের ব্যথার কথা আমি বলবো। দেশবাসীর সামনে বলবো না তো কোথায় বলবো? আর, কোনও না কোনও কারণে আমাদের ভিতরে এমন একটি বিকৃতি এসেছে, আমাদের কথাবার্তায়, আমাদের আচার ব্যবহারে, আমাদের কিছু শব্দে আমরা নারীর অপমান করি। আমরা কি স্বভাবে, প্রচলিত প্রথায়, দৈনন্দিন জীবনে, নারীর অপমান করার মতো প্রতিটি উচ্চারণ থেকে মুক্তির সংকল্প নিতে পারি? নারীর গৌরব রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ করার বড় পুঁজি হতে চলেছে। এই সম্ভাবনা আমি দেখছি, আর তাই আমি একথা বলতে আগ্রহী।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

পঞ্চম প্রতিজ্ঞার কথা বলি। আর এই পঞ্চম শপথ হল – নাগরিকের কর্তব্য। বিশ্বের যে যে দেশ প্রগতি করেছে, যে যে দেশ কিছু অর্জন করেছে, ব্যক্তিগত জীবনেও যাঁরা কিছু অর্জন করেছেন, তাঁদের জীবনের কিছু কথা সামনে উঠে এসেছে। প্রথমতঃ তাঁদের অনুশাসন মেনে চলা জীবন, দ্বিতীয়তঃ কর্তব্যের প্রতি সমর্পণ। ব্যক্তির জীবনের সাফল্য হোক, সমাজের হোক, পরিবারের হোক, রাষ্ট্রের হোক - এটাই মৌলিক পথ, এটাই মৌলিক প্রতিজ্ঞার শক্তি, আর সেজন্যে আমাদের কর্তব্য পালনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে, কর্তব্যের প্রতি জোর দিতে হবে। প্রশাসনের কর্তব্য হল, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, কিন্তু নাগরিকের কর্তব্য হল যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ খরচ বাঁচানো। প্রত্যেক ক্ষেতে জল পৌঁছানো সরকারের দায়িত্ব। সরকার সেই চেষ্টা করবে। কিন্তু ‘প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল’ জল বাঁচিয়ে ফসল ফলাতে হবে। আমাদের প্রত্যেক ক্ষেত থেকে আওয়াজ ওঠা উচিত যে, রাসায়নিক-মুক্ত চাষ, জৈব চাষ, প্রাকৃতিক কৃষি সুনিশ্চিত করা  আমাদের কর্তব্য!

বন্ধুরা, পুলিশ হোক বা জনগণ, শাসক হোক বা প্রশাসক, এই নাগরিক কর্তব্য থেকে কেউ অস্পৃশ্য থাকতে পারেন না। প্রত্যেকেই নিজেদের নাগরিক কর্তব্য পালন করলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা ইপ্সিত লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সফল হতে পারি।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আজ মহর্ষি অরবিন্দেরও জন্মজয়ন্তী। আমি সেই মহাপুরুষের পায়ে প্রণাম জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের সেই মহাপুরুষদের স্মরণ করতে হবে, যাঁরা বলেছিলেন, স্বদেশী থেকে স্বরাজ, স্বরাজ থেকে সুশাসন। এটা তাঁদের মন্ত্র, যা আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে যে, আমরা কতদিন আর অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকবো। আমরা কি আমাদের দেশের খাদ্যের প্রয়োজন বাইরের দেশ থেকে মেটাতে পারি? দেশ যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের পেট আমরাই ভরবো, দেশ সেটা করে দেখিয়েছে। একবার প্রতিজ্ঞা নিলে তা সফল করা যায়। আর, সেজন্য ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রত্যেক নাগরিকের, প্রত্যেক সরকারের, সমাজের প্রত্যেক অংশের মানুষের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। এই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নিছকই একটি সরকারি এজেন্ডা, সরকারি কর্মসূচী নয়। এটি সমাজের একটি গণ আন্দোলন, যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আমার বন্ধুগণ, আজ যখন আমরা এসব কথা শুনছি, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর যে আওয়াজ শোনার জন্য আমাদের কান অপেক্ষায় ছিল, ৭৫ বছর পর সেই আওয়াজ শোনা গেছে। ৭৫ বছর পর লালকেল্লার প্রাকার থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তোপধ্বনি করেছে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কামান। এমন কোন ভারতবাসী রয়েছেন, যিনি এই ঘটনা, এই তোপধ্বনি শুনে নতুন প্রেরণা, প্রাণশক্তি অর্জন করবেন না। আর সেজন্য, আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি আজ আমার দেশের সেনা জওয়ানদের  হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমার আত্মনির্ভরতার ভাবনাকে, সংগঠিতভাবে, সাহসরূপে আমাদের সেনা জওয়ানরা, সেনানায়কেরা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে বাস্তবায়িত করছেন। আমি তাঁদেরকে যতই স্যালুট করি, তা কম হবে বন্ধুগণ। তাঁদেরকে আমি আজ শ্রদ্ধা জানাই। কারন সেনা জওয়ানরা মৃত্যুকে মুঠিতে নিয়ে চলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন-মৃত্যুর মাঝে কোনও ব্যবধানই থাকে না, আর তখন মাঝখানে তাঁরা দৃঢ়ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর আমার সেই সেনা জওয়ানরা ঠিক করবেন যে আমরা তিনশোটি এমন সরঞ্জামের এমন তালিকা তৈরি করবো, যা আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করবো না। আমাদের দেশের এই সংকল্প ছোট নয়। আমি এই সংকল্পে ভারতের, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ -এর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বীজ দেখতে পাচ্ছি, যা এই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবে পরিবর্তিত করতে চলেছে। স্যালুট! স্যালুট! আমার সেনা আধিকারিকদের স্যালুট! আমি আমার দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের, ৫-৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদেরকেও স্যালুট করতে চাই, তাদেরকেও সেলাম জানাতে চাই। যখন দেশের মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছেন, আমি শত শত পরিবারের কাছে শুনেছি, ৫-৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা বাড়িতে বলছে বিদেশী খেলনা দিয়ে খেলবে না = এই সংকল্প যখন নেয়, তখন বুঝি যে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ তাদের শিরা-ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে। আপনারা দেখুন, পিএলআই স্কিম, বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা ভারতে তাঁদের ভাগ্য যাচাই করতে আসছেন, টেকনোলজি নিয়ে আসছেন, এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করছেন। ভারত ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত হয়ে চলেছে। আত্মনির্ভর ভারতের ভিত্তি স্থাপন করছেন। ইলেক্ট্রনিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং হোক, মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং হোক- আজ দেশ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে। আজ আমাদের ব্রাহমোস বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। এক্তহা শুনে এমন কোন ভারতবাসী রয়েছেন, যাঁর মন আকাশ স্পর্শ করবে না বন্ধুগণ। আজ আমাদের মেট্রো কোচেস, আমাদের বন্দে ভারত ট্রেন বিশ্বে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আমাদের আত্মনির্ভর হতে হবে আমাদের এনার্জি সেক্টরে। আমরা আর কতদিন এনার্জি সেক্টরে অন্য দেশের উপর নির্ভর থাকবো আর আমাদের সৌরশক্তি থেকে শুরু করে বায়ুশক্তি উৎপাদন, পুনর্নবীকরণের আরও যত পথ রয়েছে, মিশন ইাইড্রোজেন হোক, জৈব জ্বালানী হোক, ইলেক্ট্রিক ভেহিকেল পরিবহণ চালু করার মাধ্যমে আমাদের আত্মনির্ভর হয়ে উঠে এই ব্যবস্থাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আজ প্রাকৃতিক কৃষিও আত্মনির্ভরতার একটি পথে। রাসায়নিক সার থেকে যত বেশি মুক্তি, আজ দেশে ন্যানো ফার্টিলাইজারের কারখানাগুলি একটি নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক কৃষি, রাসায়নিক মুক্ত কৃষি আত্মনির্ভরতাকে শক্তি জোগাতে পারে। আজ দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ‘গ্রিন জব’এর নতুন নতুন ক্ষেত্র অত্যন্ত দ্রুত উন্মোচিত হচ্ছে। ভারত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ‘স্পেস’কে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ড্রোনের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের সর্বাধিক প্রগতিশীল নীতি নিয়ে এসেছে। আমরা দেশের তরুণদের জন্য নতুন নতুন দরজা খুলে দিয়েছি।

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আমি প্রাইভেট সেক্টরকেও আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন.... আমাদের বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে হবে। আত্মনির্ভর ভারতের এই স্বপ্নও রয়েছে যে বিশ্বে যত কিছুর চাহিদা রয়েছে তা মেটানোর ক্ষেত্রেও ভারত পিছিয়ে থাকবে না। আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগ থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যকে ‘জিরো ডিফেক্ট জিরো এফেক্ট’ করে বিশ্বে রপ্তানী করতে হবে। আমাদের স্বদেশী পণ্য নিয়ে গর্ব করতে হবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আমরা বারবার লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজিকে স্মরণ করি, তাঁর সেই ‘জয় জওয়ান- জয় কিসান’এর মন্ত্র আজও দেশের জন্য প্রেরণা। পরবর্তীকালে অটল বিহারী বাজপেয়ীজি ‘জয় বিজ্ঞান’ বলে সেই মন্ত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেন, আর দেশে বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু এখন অমৃতকালের জন্য আরেকটি অনিবার্যতা অনুভূত হচ্ছে, আর তা হল- জয় অনুসন্ধান। জয় জওয়ান- জয় কিসান- জয় বিজ্ঞান- জয় অনুসন্ধান- ইনোভেশন।

দেশের নতুন প্রজন্মের উপর আমার ভরসা আছে। ইনোভেশনের শক্তি দেখুন, আজ আমাদের ইউপিআই- ভীম, আমাদের ডিজিটাল পেমেন্ট, ফিনটেকের বিশ্বে আমাদের স্থান, আজ বিশ্বে রিয়েল টাইম চল্লিশ শতাংশ ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন আমাদের দেশে হচ্ছে, ভারত এটা করে দেখিয়েছে।

আমার প্রিয়, দেশবাসী,

আজ আমরা ফাইভজি-পর্বে পা রাখছি। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না, আমরা পায়ে পা মেলাতে চলেছি। আমরা গ্রামে গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিচ্ছি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন গ্রাম থেকে বাস্তবায়িত হবে, একথা আমি জানি। আজ আমি খুশি যে ভারতের চার লক্ষ কমন সার্ভিস সেন্টার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠছে। গ্রামের নবীন যুবক-যুবতীরা কমন সার্ভিস সেন্টার চালাচ্ছেন। দেশ গর্ব করতে পারে যে গ্রামীণ ক্ষেত্রে চার লক্ষ ‘ডিজিটাল এন্টারপ্রেনিউর’ তৈরি হয়েছে, আর আজ আমাদের গ্রামের মানুষ সমস্ত পরিষেবা তাঁদের কাছেই পেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন, এটা ভারতে ‘টেকনোলজি হাব’ গড়ে ওঠার শক্তির পরিচায়ক।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

এই যে ডিজিটাল ইন্ডিয়া মুভমেন্ট, এই যে সেমিকন্ডাকটারের দিকে আমরা পা বাড়াচ্ছি, ফাইভজি-র দিকে পা বাড়াচ্ছি, অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে চলেছি, এটা যে শুধুই আধুনিকতার পরিচয়, তা নয়। তিনটি বড় শক্তি আমাদের মধ্যে সমাহিত রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বাত্মক বিপ্লব ডিজিটালের মাধ্যমে আসতে চলেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় সর্বাত্মক বিপ্লব ডিজিটালের মাধ্যমে আসতে চলেছে। কৃষিজীবনেও অনেক বড় পরিবর্তন ডিজিটালের মাধ্যমে আসতে চলেছে। একটি নতুন বিশ্ব গড়ে উঠছে। এই নতুন বিশ্বে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বন্ধুগণ, এই ‘ডিকেড’ মানবজাতির জন্য টেকহেড-এর দশক, টেকনোলজি বা প্রযুক্তির দশক। ভারতের জন্য তো এই টেকহেড, যার মন টেকনোলজির সঙ্গে যুক্ত। তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে ভারত নিজস্ব একটি স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে, এই টেকহেড-এর সামর্থ্য ভারতের রয়েছে।

আমাদের অটল ইনোভেশন মিশন, আমাদের ইনকিউবেশন সেন্টার, আমাদের স্টার্টআপগুলি একটি নতুন, সম্পূর্ণ সেক্টরকে বিকশিত করছে, তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন সুযোগ নিয়ে আসছে। তা সে মহাকাশ অভিযানের বিষয় হোক, আমাদের গভীর মহাসাগর মিশনের বিষয়ে হোক, আমাদের সমুদ্রের গভীরে যেতে হবে বা আমাদের আকাশ ছুঁতে হবে, এইগুলি নতুন ক্ষেত্র, যেগুলি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

আমরা যেন এই কথাগুলি ভুলে না যাই এবং ভারত শতাব্দী ধরে দেখেছে, দেশে যেমন কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের প্রয়োজন, কিছু বড় বড় উচ্চতা স্পর্শ করা  দরকার, পাশাপাশি তৃণমূল স্তরে শক্তি বাড়ানো খুব প্রয়োজন। ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা মাটির শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। আর তাই আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকদের শক্তি, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগীদের সামর্থ্য, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র শিল্প, রাস্তার দুপাশের বিক্রেতা, ঠেলাওয়ালা, রেলপথের দুপাশে পসরা নিয়ে বসা ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী, অটোরিকশা চালক, বাস সার্ভিসের মানুষ - এরাই সমাজের সবচেয়ে বড় অংশ, এঁদের শক্তিই ভারতের সম্ভাবনার গ্যারান্টি, এবং তাই আমাদের প্রচেষ্টা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই মৌলিক দিকগুলির শক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

আমার প্রিয় দেশবাসী

আমাদের ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে, আমরা ৭৫ বছরে অনেক সাফল্যও অর্জনও করেছি। ৭৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা নতুন স্বপ্ন লালন করেছি এবং নতুন সংকল্প নিয়েছি। কিন্তু অমৃতকালের জন্য আমাদের মানব সম্পদের সর্বোত্তম ফলাফল কীভাবে পাবো? কিভাবে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ফলাফল পাবো? আমাদের এই লক্ষ্যগুলি নিয়েই চলতে হবে। আর এক্ষেত্রে আমি গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, আজ দেশের আদালতগুলিতে আমাদের আইনজীবী পেশায় মেয়েরা কতটা শক্তি নিয়ে কাজ করছে। গ্রামীণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়েরা কত সফলভাবে কাজ করছেন! কী মেজাজ নিয়ে আমাদের নারীশক্তি নিষ্ঠার সঙ্গে, আমাদের গ্রামের সমস্যাগুলির সমাধানে নিয়োজিত। আজ জ্ঞানের ক্ষেত্র দেখুন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্র দেখুন, আমাদের দেশের নারীশক্তি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

আজ আমরা পুলিশে দেখছি, আমাদের নারীশক্তি জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে। আমরা জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রের দিকে যদি তাকাই, খেলার মাঠ বা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে যদি তাকাই, ভারতের নারী শক্তি এক নতুন শক্তি, নতুন বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমরা ভারতের ৭৫ বছরের যাত্রায় এই অবদান দেখতে পাচ্ছি, আগামী ২৫ বছরে আমরা আমাদের নারী শক্তি, আমাদের মা-বোন, আমাদের কন্যাদের অবদানকে এই সমস্ত হিসেবের উপরে দেখছি। তাঁরা আমাদের সব প্যারামিটারে ছাপিয়ে যাবেন। আমরা তাঁদের উন্নয়নের দিকে যত বেশি মনোযোগ দেব, আমরা আমাদের মেয়েদের যত বেশি সুযোগ দেব, আমাদের মেয়েদের জন্য যত বেশি সুবিধা দেব, আপনি দেখতে পাবেন যে তাঁরা তার অনেকগুণ আমাদের সমাজকে ফিরিয়ে দেবেন। তাঁরা দেশকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। এই অমৃতকালে যাঁরা স্বপ্নপূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে যাচ্ছেন, তাঁদের শ্রমের সঙ্গে যদি আমাদের নারীশক্তির পরিশ্রম যুক্ত হয়, ব্যাপকভাবে যোগ হয়, তাহলে আমাদের পরিশ্রম কমবে, আমাদের সময়সীমাও হ্রাস পাবে। আমাদের স্বপ্নগুলি আরও তেজোদিপ্ত হবে, আরও প্রাণবন্ত হবে, আরও দেদীপ্যমান হবে।

আর তাই আসুন বন্ধুরা,

আসুন আমরা আমাদের দায়িত্বগুলি নিয়ে এগিয়ে যাই। আজ আমি ভারতের সংবিধান প্রণেতাদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তারা আমাদের যুক্তরাস্ট্রীয় কাঠামো দিয়েছেন, তার চেতনাকে জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে তাঁদের এর অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে, আমরা যদি এই অমৃত সময়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবেই। আমাদের কর্মশৈলী ভিন্ন হতে পারে, কাজের ধরন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সংকল্প ভিন্ন হতে পারে না, একটি জাতির স্বপ্ন ভিন্ন হতে পারে না।

আসুন আমরা এমন একটি যুগের মধ্যে পা বাড়াই। আমার মনে আছে আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। কেন্দ্রে আমাদের ভাবধারার সরকার ছিল না, কিন্তু আমার গুজরাটের সব জায়গায় আমি একই মন্ত্র অনুসরণ করতাম যে ভারতের উন্নয়নের জন্যই গুজরাটের উন্নয়ন। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, ভারতের উন্নয়ন আমাদের সবার মনে থাকা উচিত। আমাদের দেশের অনেক রাজ্য আছে, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় কাজ করেছে। তারা আমাদের ফেডারালিজমকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু আজ সময়ের চাহিদা হল আমাদের ‘কোঅপারেটিভ ফেডারালিজম’ বা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ‘কোঅপারেটিভ কমপিটিটিভ ফেডারালিজম’ বা সহযোগিতামূলক প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে, আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের মনে হওয়া উচিত যে অমুক রাজ্য এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, আমরা এমন পরিশ্রম করবো যে আমরা তাঁদের থেকে এগিয়ে যাব। অমুক রাজ্য এই ১০টি ভাল কাজ করেছে, আমরা ১৫টি ভাল কাজ করে দেখাবো। ওরা তিন বছরে লক্ষ্যপূরণ করেছে, আমরা তা দু’বছরে করে দেখাবো। আমাদের রাজ্যগুলির মধ্যে আমাদের পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সমস্ত বিভাগের মধ্যে এই প্রতিযোগিতার আবহ চাই, যা আমাদের উন্নয়নের নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

এই ২৫ বছরের অমৃতকালের জন্য যখন আমরা আলোচনা করবো, তার আগে আমি জানি যে চ্যালেঞ্জ অনেক রয়েছে, মর্যাদা অনেক রয়েছে, সমস্যাও রয়েছে, অনেক কিছু আছে, আমি এগুলিকে খাটো করে দেখিনা। পথ খুঁজতে থাকি, নিয়মিত চেষ্টা করে যাই, কিন্তু দুটি বিষয় নিয়ে আমি এখানে আলোচনা করতে চাই। আলোচনা অনেক বিষয় নিয়ে হতে পারে। কিন্তু আমি এখন সময়ের সীমার কথা ভেবে শুধু দুটো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আর আমি মনে করি, আমাদের এসব চ্যালেঞ্জের কারণে, বিকৃতির কারণে, অসুস্থতার কারণে এই ২৫ বছরের অমৃতকালে যদি সময় থাকতে এগুলি নিয়ে সচেতন না হই, সময় থাকতে সমাধান না করি, তাহলে এগুলি বিকট রূপ নিতে পারে। সেজন্য আমি সব চ্যালেঞ্জের কথা না বলে এই দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলছি। একটি হল দূর্নীতি, আর দ্বিতীয়টি স্বজনপোষণ, পরিবারবাদ। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যখন দেখি, একদিকে এমন মানুষরা রয়েছেন, যাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। অন্যদিকে তাঁরা রয়েছেন যাঁদের চুরি করা ধনসম্পত্তি রাখার জায়গা নেই। এই পরিস্থিতি ভাল নয় বন্ধুগণ। আর সেজন্য আমাদের দূর্নীতির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়তে হবে। গত আট বছরে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার বা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে আধার, মোবাইল সংযোগে গড়ে তোলা আধুনিক ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা ভুল হাতে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছি। এই টাকা বাঁচিয়ে আমরা দেশের উন্নয়নে খরচ করতে সফল হয়েছি। যাঁরা বিগত সরকারের শাসনকালে ব্যাঙ্কগুলি থেকে অর্থ তছরুপ করে পালিয়েছে, তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করছি। অনেককে কারান্তরালে গিয়ে বাঁচতে বাধ্য করেছি। আমাদের চেষ্টা রয়েছে যাতে, যারা দেশকে লুন্ঠন করেছে তাঁদেরকে দেশে ফিরতে বাধ্য করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়।

ভাই ও বোনেরা,

এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সময়ে পা রাখতে চলেছি, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। রাঘববোয়ালরাও বাঁচতে পারবে না। এই মেজাজ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সময়খন্ডে এখন ভারত প্রবেশ করতে চলেছে। আর আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আর সেজন্য, ভাই ও বোনেরা, দুর্নীতি ঘূণপোকার মতো দেশকে কুড়ে কুড়ে ফাঁপা করে দিচ্ছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে, লড়াইকে ত্বরান্বিত করতে হবে, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী মোড়ে একে নিয়ে যেতে হবে। তখন আমরা ১৩০ কোটি দেশবাসী সফল হবো। আজ আমাকে আর্শীবাদ দিন, আপনারা আমাকে সঙ্গ দিন, আমি আজ আপনাদের সঙ্গ চাইতে এসেছি, আপনাদের সহযোগিতা চাইতে এসেছি, যাতে আমি এই লড়াইটা লড়তে পারি। এই লড়াইয়ে দেশ যাতে জিততে পারে। দুর্নীতি আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকের জীবন বরবাদ করে রেখেছে। আমরা এই সাধারণ নাগরিকদের জীবনে আরেকবার স্বচ্ছলতা ও মর্যাদাপূর্ণভাবে চলার পথ তৈরি করতে চাই। আর সেজন্য, আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা চিন্তার বিষয় যে আজ দেশে দুর্নীতির প্রতি ঘৃণা তো দেখা যায়, প্রকাশও হয় কিন্তু কখনও কখনও দুর্নীতিবাজদের প্রতি উদারতাও প্রকাশ পায়, কোন দেশেই এই মনোভাব শোভা পায় না!

এই উদারতার ফলেই এমন অনেকে নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে চলে যায় যে আদালতে সাজা হওয়ার পরেও, দুর্নীতিবাজ প্রমাণ হওয়ার পরেও, জেলে যাওয়া ঠিক হওয়ার পরেও, তাঁদের মহিমাকীর্তন চলতে থাকে, তাদের মর্যাদা প্রদর্শন চলতে থাকে, তাঁদের মর্যাদাবৃদ্ধিতে লেগে থাকে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজে আবর্জনার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয় না, ততক্ষণ পরিচ্ছন্নতার জন্য সচেতনতা জাগে না। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণাভাব জাগবে না, সামাজিক রূপে তাঁদেরকে নীচু দেখাতে বাধ্য করবো না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মানসিকতা শেষ হবে না। আর সেজন্য দুর্নীতির প্রতি আর দুর্নীতিবাজদের প্রতিও আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আরেকটি বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই, স্বজনপোষণ। আর যখন আমি স্বজনপোষণ ও পরিবারবাদ নিয়ে কথা বলি, তখন অনেকের মনে হয় যে আমি শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রের কথা বলছি। তা নয়। দুর্ভাগ্যের হল, রাজনীতির ক্ষেত্রের এই খারাপ ঝোঁক ভারতের সব সংস্থায় পরিবারবাদ ঘোষণা করে দিয়েছে। পরিবারবাদ আমাদের অনেক সংস্থাকে নিজের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছে। আর এই কারণে আমাদের দেশের মেধার ক্ষতি হয়। আমার দেশের ক্ষমতার লোকসান হয়। যাদের সুযোগ পাওয়ার মতো মেধা আছে, সুযোগের সম্ভাবনা আছে, তাঁরা পরিবারতন্ত্র, স্বজনপোষণের কারণে বাইরে থেকে যান। দুর্নীতি সৃষ্টিরও এটা একটা কারণ। এটা হয় যে, যাঁর কোনও ভাই, ভাইপো হিসেবে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাঁদেরই মনে হয়, ভাই চলো, কোনও জায়গা থেকে টাকা দিয়ে কিনে জায়গা তৈরি করে নিই। আমাদের প্রত্যেক সংস্থার মধ্যে এই পরিবারতন্ত্রের প্রতি, স্বজনপোষণের প্রতি একটা ঘৃণা জাগাতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে, তখনই আমাদের সংস্থাগুলি বাঁচতে পারবে। সংস্থাগুলির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এটা খুব জরুরি। এই ভাবেই রাজনীতিতেও পরিবারবাদ দেশের সামর্থ্যের সঙ্গে সব থেকে বেশি অন্যায় করেছে। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি পরিবারের উপকারের জন্য হয়, দেশের ভালর সঙ্গে তাঁর কোনও লেনদেন নেই। আর তাই, লালকেল্লার প্রাকার থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার মর্যাদা ও গৌরবের নিচে দাঁড়িয়ে ভারতের সংবিধান স্মরণ করার সময়ে দেশবাসীকে খোলা মনে বলতে চাই, আসুন, ভারতের রাজনীতির শুদ্ধিকরণের জন্য ভারতের সব সংস্থার শুদ্ধিকরণের জন্য, আমাদের দেশকে পরিবারতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে মুক্তি দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে দেশকে আগে নিয়ে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হই। এটা অনিবার্য। নাহলে প্রত্যেকের মন কুণ্ঠিত থাকে যে, আমি ওটার জন্য যোগ্য ছিলাম, কিন্তু পাইনি। কারণ, আমার কোনও কাকা, মামা, বাবা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমা, দাদু-দিদিমা কেউ সেখানে ছিল না। এই মানসিক স্থিতি কোনও দেশের জন্য ভাল নয়।

আমাদের দেশের যুবকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, নিজেদের স্বপ্নের জন্য, স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে লড়াইতে আপনাদের সঙ্গ চাইবো। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইতে আপনাদের সঙ্গ চাইবো। এই সাংবিধানিক দায়িত্ব আমি মানি। গণতন্ত্রের এই দায়িত্ব আমি মানি। এই লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলা কথার শক্তি আমি মানি। আর তাই, আজ আমি আপনাদের কাছে এই সুযোগ চাইছি। আমরা দেখেছি, বিগত দিনে ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের খেলয়াড়দের অভূতপূর্ব সাফল্য, এমন তো নয় যে দেশের কাছে আগে প্রতিভা ছিল না, এমন তো নয় যে, ক্রীড়াজগতে ভারতে আমাদের যুবক ছেলেমেয়েরা কিছু করছে না। কিন্তু নির্বাচন স্বজনপোষণের চ্যানেল দিয়ে যেতে হতো। আর সেই কারণে যে খেলোয়াড়রা খেলার মাঠে, সেই দেশে পৌঁছে যেতেন, হার জিতের সঙ্গে যাঁদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু যখনি এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এল, যোগ্যতার ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের বাছাই করা শুরু হল, পূর্ণ পারদর্শিতার সঙ্গে খেলার মাঠে শক্তির সম্মান হওয়া শুরু হল, সাফল্যও আস্তে শুরু করলো। আজ দেখুন, বিশ্বের খেলাধুলার ময়দানে ভারতের তেরঙ্গা উড়ছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হচ্ছে।

গর্ব হয় যে, পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি হলে, স্বজনপোষণ থেকে মুক্তি হলে, এমন ফলাফল আসে। আমার প্রিয় দেশবাসী, এটাই ঠিক। চ্যালেঞ্জ অনেক আছে, যদি দেশের সামনে কোটি কোটি সঙ্কট আসে, তো কোটি কোটি সমাধানও আছে। আর, আমার ১৩০ কোটি দেশবাসীর উপর ভরসা আছে। ১৩০ কোটি দেশবাসী এক পা এগিয়ে রাখে তো ভারত ১৩০ কদম এগিয়ে যায়। এই শক্তি নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। এই অমৃতকালে, এ তো অমৃতকালের প্রথম দিন, প্রথম সকাল, আমাদের আগামী ২৫ বছরে এক মুহূর্তও ভোলা চলবে না। এক একটি দিন, সময়, প্রত্যেক মুহূর্ত, মাতৃভূমির জন্য বাঁচতে হবে, আর তবেই স্বাধীনতাপ্রেমী শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হবে। তাহলেই ৭৫ বছরে দেশের এই জায়গায় পৌঁছাতে যে যে মানুষ যোগদান দিয়েছেন, তাঁদের পূণ্য স্মরণ আমাদের কাজে আসবে।

আমি দেশবাসীর কাছে এই অনুরোধ রেখেই নতুন সম্ভাবনাগুলিকে সাজানোর সময়, নতুন সংকল্পকে পার করে সামনে এগুনোর বিশ্বাস নিয়ে অমৃতকালের সূত্রপাত করছি। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব এখন অমৃতকালের দিশায় পাল্টে গিয়েছে, সামনে এগিয়ে গিয়েছে, তাই এই অমৃতকালে সকলের প্রয়াস অনিবার্য। এবার ‘সব কা প্রয়াস’-এর পরিণাম আসতে চলেছে। টিম ইন্ডিয়ার ভাবনাই দেশকে আগে বাড়াতে পারবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর এই টিম ইন্ডিয়া একটি টিম হিসেবে আগে এগিয়ে সমস্ত স্বপ্নকে পূর্ণ করবে। এই পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে আমার সাথে গলা মিলিয়ে বলুন ---

জয় হিন্দ

জয় হিন্দ

জয় হিন্দ

ভারত মাতা কি জয়

ভারত মাতা কি জয়

ভারত মাতা কি জয়

বন্দে মাতরম

বন্দে মাতরম

বন্দে মাতরম

অনেক অনেক ধন্যবাদ

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report

Media Coverage

India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM to participate in ‘Odisha Parba 2024’ on 24 November
November 24, 2024

Prime Minister Shri Narendra Modi will participate in the ‘Odisha Parba 2024’ programme on 24 November at around 5:30 PM at Jawaharlal Nehru Stadium, New Delhi. He will also address the gathering on the occasion.

Odisha Parba is a flagship event conducted by Odia Samaj, a trust in New Delhi. Through it, they have been engaged in providing valuable support towards preservation and promotion of Odia heritage. Continuing with the tradition, this year Odisha Parba is being organised from 22nd to 24th November. It will showcase the rich heritage of Odisha displaying colourful cultural forms and will exhibit the vibrant social, cultural and political ethos of the State. A National Seminar or Conclave led by prominent experts and distinguished professionals across various domains will also be conducted.