নমস্কার!
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহানজি, মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের সকল মন্ত্রীগণ, উপস্থিত সাংসদগণ, এই রাজ্যের বিধায়কগণ, স্টার্ট-আপ-এর সঙ্গে যুক্ত আমার সকল বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
আপনারা সবাই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, মধ্যপ্রদেশের যুব প্রতিভাদের সঙ্গে আলোচনা করার সময়, স্টার্ট-আপ-এর সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নব যুবক-যুবতীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় আমি যেমন অনুভব করেছি, আপনারাও হয়তো তেমনই তাঁদের মধ্যে একটি নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা অনুভব করেছেন। একথা সত্যি যে যখন মনে উৎসাহ থাকে, নতুন উদ্দীপনা থাকে, নতুন নতুন উদ্ভাবনের সাহসও তখন স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়, আর এই উদ্দীপনা থেকেই তাঁরা আজ এই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের সবার সঙ্গে আমার আজ কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যাঁরা আজ তাঁদের কথা শুনছিলেন তাঁরা জানেন, এই নব যুবক-যুবতীরা কতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলছিলেন! এ থেকে বোঝা যায় আজ দেশে যত ‘প্রো-অ্যাক্টিভ স্টার্ট-আপ নীতি’ রয়েছে ততটাই পরিশ্রমী স্টার্ট-আপ নেতৃত্বও রয়েছে। সেজন্য দেশ একটি নতুন যুব প্রাণশক্তি নিয়ে উন্নয়নকে গতি প্রদান করছে। আজ মধ্যপ্রদেশে স্টার্ট-আপ পোর্টাল এবং ‘i-Hub ইন্দোর’ বা ইন্দোরে আই-হাব-এর শুভ সূচনা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের স্টার্ট-আপ নীতির মাধ্যমে স্টার্ট-আপস এবং ইনকিউবেটর্সগুলিকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আমি এই সকল প্রচেষ্টার জন্য আর আজকের এই সুন্দর আয়োজনের জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকারকে, দেশের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমকে এবং আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আপনাদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন আমরা প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব পেলাম, তখন দেশে সব মিলিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০টির কাছাকাছি স্টার্ট-আপ ছিল, আর অনেক জায়গা এমন ছিল যেখাঙ্কারর মানুষ স্টার্ট-আপ শব্দটিই শোনেননি, কারণ তখন স্টার্ট-আপ নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনাও দেশে হত না। কিন্তু বিগত আট বছরের ছোট্ট সময়ে আজ ভারতে স্টার্ট-আপ-এর বিশ্ব সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আজ আমাদের দেশে প্রায় ৭০ হাজার স্বীকৃত স্টার্ট-আপ রয়েছে। আজ ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম গড়ে উঠেছে। আমরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের বৃহত্তম ইউনিকর্ন হাবগুলির মধ্যে অন্যতম শক্তি রূপে উঠে এসেছি। আজ গড়ে ৮ কিংবা ১০ দিনের মধ্যেই ভারতে এক একটি স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন-এ পরিণত হচ্ছে। সেই ইউনিকর্নগুলি ক্রমে আকারে বাড়ছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে শূণ্য থেকে শুরু করে কোনও একটি স্টার্ট-আপ-এর ইউনিকর্ন হয়ে ওঠার মানে হল যে এত কম সময়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার পুঁজিতে পৌঁছনো। ন্যূনতম ৭ হাজার কোটি টাকা পুঁজি হলে তবেই কোনও স্টার্ট-আপকে ইউনিকর্ন বলা হয়, আর আজ ভারতে গড়ে প্রত্যেক ৮ থেকে ১০ দিনে আমাদের নব যুবক-যুবতীরা একটি করে নতুন ইউনিকর্ন গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
এটাই হল ভারতের নবীন প্রজন্মের সামর্থ্য। এটা হল সাফল্যের নতুন উচ্চতা অর্জনের জন্য প্রবল ইচ্ছাশক্তির উদাহরণ, আর আমি অর্থনীতির জগতে বিভিন্ন নীতি নিয়ে যাঁরা অধ্যয়ন করেন, সেই বিশেষজ্ঞদের একটি বিষয় নোট করতে বলব। ভারতে যত বড় আমাদের স্টার্ট-আপ-এর এক একটি ভলিউম বা সংখ্যা রয়েছে, ততটাই তাদের ‘ডাইভার্সিটি’ বা বিবিধতা রয়েছে। এই স্টার্ট-আপগুলি নির্দিষ্ট কোনও রাজ্য কিংবা দু-চারটে মেট্রো শহরে সীমাবদ্ধ নয়। এই স্টার্ট-আপগুলি ভারতের অনেক রাজ্যে, ভারতের অনেক ছোট ছোট শহরে গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন আরও অনেক নতুন শহরে অঙ্কুরিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, একটি আনুমানিক হিসাব করলেও ৫০টির বেশি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমাদের দেশের স্টার্ট-আপগুলি যুক্ত রয়েছে। এই স্টার্ট-আপগুলি দেশের প্রত্যেক রাজ্য এবং ৬৫০-এরও বেশি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ স্টার্ট-আপ তো এমন গড়ে উঠেছে যাঁদের নবীন শিল্পোদ্যোগীরা টু-টিয়ার এবং থ্রি-টিয়ার শহরের বাসিন্দা। অনেকের মনে একটা ভ্রম রয়েছে, আমি প্রায়ই অনুভব করি যে তাঁরা ভাবেন, স্টার্ট-আপ মানেই কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত কিছু যা নবীন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা যেগুলি নিয়ে খেলা করে, কিছু ব্যবসা করে। আমি আবারও বলছি আপনাদের এই ধারণা ভুল। আপনাদের মন থেকে এই ভ্রম দূর করুন। বাস্তবে স্টার্ট-আপ-এর পরিধি এবং বিস্তার অনেক বড়। এই স্টার্ট-আপগুলি আমাদের দেশের অনেক কঠিন সমস্যার সরল সমাধান এনে দিচ্ছে, আর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গতকালকে গড়ে ওঠা এক একটি স্টার্ট-আপ আজ মাল্টি-ন্যাশনাল বা বাহুজাতিক সংস্থা হয়ে উঠছে। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত যে কৃষিক্ষেত্রে, রিটেল বিজনেস বা খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে, আর স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও অবদান রাখার জন্য নতুন নতুন স্টার্ট-আপ উঠে আসছে।
বন্ধুগণ,
আজ যখন আমরা বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের নেতাদের ভারতের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম নিয়ে প্রশংসা করতে শুনি, তখন প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্ব হয়। কিন্তু বন্ধুগণ, এর সঙ্গে জড়িত একটি প্রশ্নও আছে। আট বছর আগে পর্যন্ত যে স্টার্ট-আপ শব্দটি দেশের কিছু গলিতে, দেশের কিছু ‘টেকনিক্যাল ওয়ার্ল্ড’ বা প্রযুক্তি ক্ষেত্রের গলিতে আলোচনায় সীমাবদ্ধ ছিল, তা আজ সাধারণ ভারতীয় যুবক-যুবতীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে আর এটি এখন তাঁদের দৈনন্দিন আলাপ-আলোচনার অংশ হয়ে উঠেছে। এই ‘প্যারাডিগম শিফট’ বা বড় পরিবর্তন কিভাবে এসেছে? হঠাৎ করে তো আসেনি! একটি চিন্তা-ভাবনা প্রসূত সুপরিকল্পিত রণনীতির মাধ্যমে, স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে, নির্ধারিত দিশায় এগিয়ে যাওয়ার পরিণাম হিসেবেই এটা এসেছে। আমি চাই, আজ যখন আমি স্টার্ট-আপ বিশ্বের নবীন প্রজন্মের মানুষদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি আর ইন্দোরের মতো প্রিয় শহরের মাটিতে আমার সামনে আপনারা রয়েছেন, তখন আমার মনে আপনাদেরকে কিছু কথা বলার ইচ্ছা জাগছে। আজ যাকে স্টার্ট-আপ বিপ্লব বলে মনে করা হচ্ছে তা কিভাবে এই আকারে পৌঁছেছে, আমি মনে করি আজকের নবীন প্রজন্মের এই বিবর্তনের কথা জানা ও বোঝার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। এই সাফল্যগাথা নিজেই একটি প্রেরণাদায়ক বিবর্তনের পরিণাম। স্বাধীনতার অমৃতকালের জন্য এই প্রেরণা অনেক বড় উৎসাহও যোগাবে।
বন্ধুগণ,
ভারতে নতুন কিছু করার, নতুন ভাবনা থেকে সমস্যাগুলির সমাধান করার তীব্র ইচ্ছা সব সময়েই লক্ষ্য করা গেছে। এটা আমরা আমাদের ‘আইটি রেভোলিউশন’ বা তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের সময় খুব ভালোভাবে অনুভব করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ, যতটা উৎসাহ প্রদান প্রয়োজন ছিল, যতটা সমর্থন সেই সময় আমাদের যুবক-যুবতীদের জন্য প্রত্যাশিত ছিল, ততটা পাওয়া যায়নি। এই তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের মাধ্যমে গড়ে ওঠা আবহকে যথাযথভাবে ‘চ্যানেলাইজ’ বা সঠিক পথে পরিচালনা করার কিংবা একটি নির্দিষ্ট দিক-নির্দেশের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি। আমরা দেখেছি যে একটি সম্পূর্ণ দশক বড় বড় দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি আমাদের দেশকে ‘পলিসি প্যারালিসিস’ বা নীতির পক্ষাঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ‘নেপোটিজম’ বা স্বজনপোষণ এই দেশের একটি প্রজন্মের স্বপ্নগুলিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। আমাদের যুবক-যুবতীদের কাছে নানা রকম ইতিবাচক ভাবনা ছিল, উদ্ভাবনের জন্য প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিল, কিন্তু এ সবকিছুই পূর্ববর্তী সরকারগুলির নীতির কারণে বা অন্যভাবে বলা যেতে পারে, নীতিহীনতার কারণে পথ হারিয়ে দিকভ্রান্ত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালের পর আমরা ভারতের যুবক-যুবতীদের এই ভাবনার শক্তিকে, উদ্ভাবনের এই প্রাণশক্তিকে আরও একবার পুনর্জাগরিত করেছি। আমরা ভারতের যুবশক্তির সামর্থ্যে বিশ্বাস রেখেছি। আমরা ‘আইডিয়া টু ইনোভেশন টু ইন্ডাস্ট্রি’ বা শিল্প স্থাপনের জন্য ভাবনা-চিন্তা ও উদ্ভাবনের একটি সম্পূর্ণ রোডম্যাপ রচনা করেছি, আর মূলত তিনটি বিষয়ের জোর দিয়েছি। প্রথমটি হল, ‘আইডিয়া’ বা নতুন চিন্তা-ভাবনা, ‘ইনোভেট’ বা উদ্ভাবন এবং ‘ইনকিউবেট’ বা লালন-পালন। এর পাশাপাশি ছিল ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির পরিকাঠামো নির্মাণ।
দ্বিতীয়টি, সরকারি প্রক্রিয়াগুলির সরলীকরণ এবং
তৃতীয়টি, উদ্ভাবনের জন্য ‘মাইন্ডসেট’ বা মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন। নতুন ইকো-সিস্টেম বা শিল্প বাস্তু ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বন্ধুগণ,
এই সকল বিষয়গুলি মাথায় রেখে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করা শুরু করেছি। সেগুলির মধ্যে একটি হল ‘হ্যাকাথন’। ৭-৮ বছর আগে যখন দেশে ‘হ্যাকাথন’-এর আয়োজন শুরু হয়েছিল, তখন কেউই ভাবতে পারেননি যে এই আয়োজন স্টার্ট-আপগুলির জন্য শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনের কাজ করবে। একটি ‘স্ট্রং ফাউন্ডেশন’ বা শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করার মাধ্যমে আমরা দেশের যুবশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি। আমাদের যুবক-যুবতীরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন আর তাঁরা এতে অংশগ্রহণ করে সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী এই ‘হ্যাকাথন’-এর মাধ্যমে ‘পারপাস অফ লাইফ’ বা জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের মনে ‘সেন্স অফ রেসপন্সিবিলিটি’ বা কর্তব্য ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, তাঁদের মনে এই বিশ্বাস জেগে উঠেছে যে দৈনন্দিন যেসব সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে দেশবাসী প্রতিদিন লড়াই করছেন, সেগুলিকে দূর করার ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের অবদান রাখতে পারবেন। এই ভাবনাই আমাদের দেশের নব-অঙ্কুরিত স্টার্ট-আপগুলির জন্য এক ধরনের ‘লঞ্চপ্যাড’-এর কাজ করেছে। শুধু সরকারের ‘স্মার্ট-ইন্ডিয়া হ্যাকাথন’-এই বিগত আট বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রতিভাবান যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করেছেন। আপনাদের মধ্যে সম্ভবত অনেকেই, যাঁরা আমার সামনে বসে আছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই ওই ‘স্মার্ট-ইন্ডিয়া হ্যাকাথন’গুলিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আমার মনে পড়ে, এরকই ‘হ্যাকাথন’ আয়োজনের সময় আমি আপনাদের চোখে এক নতুন দীপ্তি দেখেছিলাম। আমার খুব ভালো লাগত, আপনাদের কাছে নতুন নতুন জিনিস বোঝার সুযোগ হত, জানার সুযোগ হত। আমি দু’দিন ধরে আপনাদের সঙ্গে থেকে এই ‘হ্যাকাথন’-এর গতি-প্রকৃতিকে খতিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি আপনাদের সঙ্গে রাত ১২টা, ১টা এমনকি ২টো পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করেছি, আড্ডা মেরেছি আর তখনই আপনাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। আপনারা কী করেন, কিভাবে মোকাবিলা করেন, আপনাদের সাফল্য আপনাদেরকে কতটা আনন্দ দেয় – এই সবকিছু আমি দেখতাম আর অনুভব করতাম। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজও দেশের কোনও না কোনও অংশে প্রতিদিন কোনও না কোনও ‘হ্যাকাথন’ আয়োজিত হচ্ছে। অর্থাৎ, স্টার্ট-আপ গড়ে তোলার প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে নিরন্তর কাজ হয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
সাত বছর আগে ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ অভিযান ‘আইডিয়া টু ইন্ডাস্ট্রি’কে ‘ইনস্টিটিউশনালাইজ’ বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। আজ এই ভাবনার ‘হ্যান্ড-হোল্ডিং’ বা হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সরকারি প্রচেষ্টা প্রতিটি স্টার্ট-আপকে শিল্পোদ্যোগে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় সহায় হয়ে উঠেছে। এর পরের বছর আমরা দেশে ‘ইনোভেশন’-এর ‘মাইন্ডসেট বা উদ্ভাবনের মানসিকতা বিকশিত করার জন্য ‘অটল ইনোভেশন মিশন’ চালু করি। এর মাধ্যমে দেশের অনেক বিদ্যালয়ে ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব’ চালু করা থেকে শুরু করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনকিউবেশন সেন্টার’ গড়ে তোলা আর ‘হ্যাকাথন’-এর মতো একটি বড় ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ সারা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি স্কুলে এই ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব’গুলি চালু রয়েছে। এগুলিতে ৭৫ লক্ষেরও বেশি শিশু আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হচ্ছে, প্রযুক্তির ‘এ বি সি ডি’ শিখছে। সারা দেশে নির্মীয়মান এই ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব’গুলি গোড়া থেকেই এক প্রকার স্টার্ট-আপ-এর নার্সারি রূপে কাজ করছে। যখন ছেলে-মেয়েরা স্কুলের সীমা ছাড়িয়ে কলেজে পৌঁছয়, তখন তাঁদের কাছে অনেক নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা থাকে, এই ভাবনা-চিন্তাগুলিকে ‘ইনকিউবেট’ বা লালন-পালন করার জন্য দেশে ৭০০-রও বেশি ‘অটল ইনকিউবেশন সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে। দেশে যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকরী হয়েছে, সেটিও আমাদের ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবক মনকে আরও ক্ষুরধার করতে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
‘ইনকিউবেশন’-এর পাশাপাশি স্টার্ট-আপ-এর জন্য ‘ফান্ডিং’ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফান্ডিং-এর বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে সরকারের স্পষ্ট নীতি স্টার্ট-আপগুলিকে সাহায্য করেছে। সরকার নিজের দিক থেকে একটি ‘ফান্ড অফ ফান্ডস’ তো গড়ে তুলেছেই, স্টার্ট-আপগুলিকে বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে ‘এনগেজ’ বা যুক্ত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছে। এরকমই কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে আজ হাজার হাজার কোটি টাকার বেসরকারি বিনিয়োগও স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমে ইনজেক্ট হচ্ছে আর প্রতিদিন এর পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে।
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে কর ছাড় দেওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য ‘ইনসেন্টিভ’ বা উৎসাহ ভাতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ নিয়মিত একের পর এক আর্থিক সংস্কার এনেছে। ‘স্পেস সেক্টর’ বা মহাকাশ ক্ষেত্রে ম্যাপিং, ড্রোনস অর্থাৎ, প্রযুক্তিকে উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এরকম অনেক ক্ষেত্রে যে ধরনের সংস্কার আনা হয়েছে তার ফলে স্টার্ট-আপগুলির জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্রের দরজা খুলে গেছে।
বন্ধুগণ,
আমরা আমাদের স্টার্ট-আপগুলির আরও একটি প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সেটি কী? মনে করুন, একটি স্টার্ট-আপ তৈরি হয়ে গেছে। তার পরিষেবা, তার পণ্য বাজারে চলে এসেছে। সহজেই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তেমন বিক্রি হচ্ছে না, এক্ষেত্রেও সরকার যাতে তাঁদের সামনে একটি খরিদ্দার হয়ে ওঠে, তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ‘গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস’ বা জিইএম পোর্টালের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। আজ জিইএম পোর্টালে ১৩ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ নিবন্ধীকৃত হয়েছে, আর আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে এই পোর্টালের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই স্টার্ট-আপগুলি ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য করেছে।
বন্ধুগণ,
আরও একটি বড় কাজ হয়েছে, তা হল আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ। ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমের বিস্তারে অনেক শক্তি যুগিয়েছে। সুলভে স্মার্ট ফোন এবং সস্তায় ডেটা গ্রামের গরীব এবং মধ্যবিত্তকেও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর ফলে, স্টার্ট-আপগুলির জন্য একটি নতুন ‘অ্যাভিনিউ’ বা নতুন বাজার খুলেছে। ‘আইডিয়া টু ইন্ডাস্ট্রি’র এ ধরনের প্রচেষ্টার কারণে আজ স্টার্ট-আপগুলি এবং ইউনিকর্নগুলি দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
আজ দেশে স্টার্ট-আপগুলি নিজেরাই নিজেদেরকে প্রতিদিন নতুন করে গড়ে তুলছে। তারা আর গতকালকের কথা বলে না। এটাই স্টার্ট-আপগুলির মৌলিক চরিত্র হয়ে উঠেছে যে তারা সব সময়েই ভবিষ্যতের কথা বলে। আজ ‘ক্লিন এনার্জি’ বা নির্মল শক্তি উৎপাদন এবং ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা আবহাওয়া পরিবর্তন থেকে শুরু করে ‘হেলথ কেয়ার’ বা স্বাস্থ্য – এরকম সকল ক্ষেত্রে স্টার্ট-আপ-এর জন্য উদ্ভাবনের অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে পর্যটনেরও যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বৃদ্ধির জন্যও স্টার্ট-আপগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এভাবে ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর জন্য গণ-আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলতেও স্টার্ট-আপগুলি অনেক কিছু করতে পারে। আমাদের দেশে যত কুটীর শিল্প আছে, হস্ততাঁত শিল্পী এবং বুনকরেরা যে অসাধারণ কাজ করেন, তাঁদের ব্র্যান্ডিং-এর ক্ষেত্রে, তাঁদের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের স্টার্ট-আপগুলির একটি অনেক বড় নেটওয়ার্ক যেখানে অনেক বড় বড় প্ল্যাটফর্ম বিশ্বের সামনে নিয়ে আসতে পারে। আমাদের ভারতের জনজাতি ভাই ও বোনেরা, বনবাসী ভাই এবং বোনেরা এত এত সুন্দর পণ্য তৈরি করেন যেগুলির চাহিদা সারা পৃথিবীতে হতে পারে। তাঁদের এই পণ্য উৎপাদনও স্টার্ট-আপগুলির জন্য কাজ করার একটি অনেক বড় বিকল্প ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। একইভাবে, আপনারা জানেন যে ভারত ‘মোবাইল গেমিং’-এর ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্যতম। ভারতের ‘গেমিং ইন্ডাস্ট্রি’র গ্রোথ রেট ৪০ শতাংশ থেকেও বেশি। এবারের বাজেটে আমরা ‘এ ভি জি সি’ অর্থাৎ, অ্যানিমেশন, ভিস্যুয়াল এফেক্ট, গেমিং এবং কমিক্স – এই ক্ষেত্রে সাপোর্টের জন্যও জোর দিয়েছি। ভারতের স্টার্ট-আপগুলির জন্যও এটি অত্যন্ত বড় ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে তারা নিজেরাই নেতৃত্ব দিতে পারে। এরকমই একটি ক্ষেত্র হল ‘টয় ইন্ডাস্ট্রি’ বা পুতুল শিল্পোদ্যোগ। পুতুল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের অনেক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের স্টার্ট-আপগুলি সেই পুতুল শিল্প নিয়ে কাজ করলে তা বিশ্বে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এখন পুতুলগুলির ‘গ্লোবাল মার্কেট শেয়ার’-এ ভারতের অবদান মাত্র ১ শতাংশেরও কম। এই অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য আমার দেশের নবীন প্রজন্ম, দেশে নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে যে নব যুবক-যুবতীরা স্টার্ট-আপ চালাচ্ছেন, তাঁরা অনেক বড় অবদান রাখতে পারেন। এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগে যে ভারতের ৮০০-রও বেশি স্টার্ট-আপ ক্রীড়াক্ষেত্রে কাজ করে নানা খেলার সরঞ্জাম তৈরি করছে। একথা শুনে আপনাদের হয়তো আনন্দ হচ্ছে। ভারতে আজ ৮০০-রও বেশি স্টার্ট-আপ ক্রীড়াক্ষেত্রে কাজ করে নানা খেলার সরঞ্জাম তৈরি করছে। আগে কেউ হয়তো ভাবেইনি যে এরকমও একটি ক্ষেত্র রয়েছে। এক্ষেত্রেও ভারতে একটি ‘স্পোর্টর্সম্যান কালচার’ তৈরি হয়ে উঠছে। খেলাধূলার জন্য নতুন প্রাণশক্তির সৃষ্টি হয়েছে। স্টার্ট-আপ-এর জন্য এই ক্ষেত্রটিও অনেক সম্ভাবনাময়।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের সাফল্যকে নতুন গতি দিতে হবে, নতুন উচ্চতা প্রদান করতে হবে। আজ ভারত জি-২০ দেশগুলির মধ্যে সবচাইতে দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন ভারতে রয়েছে। আজ ভারত ‘স্মার্ট ফোন ডেটা কনজিউমার’-এর ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আজ ভারত ‘গ্লোবাল রিটেল ইন্ডেক্স’ বা আন্তর্জাতিক খুচরো সূচকে দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ‘এনার্জি কনজিউমার’ বা শক্তি ব্যবহারকারী দেশ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কনজিউমার মার্কেটও ভারতে রয়েছে। ভারত বিগত অর্থবর্ষে ৪১৭ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ, ৩০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মার্কেন্ডাইস এক্সপোর্ট করে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ভারত আজ তার পরিকাঠামোকে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক করে তোলার জন্য যত টাকা বিনিয়োগ করছে তা আগে কখনও হয়নি। ভারতের অভূতপূর্ব জোর আজ ‘ইজ অফ লিভিং’-এর ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, আর তা দেশে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’কেও শক্তিশালী করছে। এই সমস্ত বিষয় যে কোনও ভারতবাসীকে গর্বে ভরিয়ে দেবে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা সকলের মনে একটি নতুন বিশ্বাস জাগাবে। ভারতের গ্রোথ স্টোরি, ভারতের সাক্সেস স্টোরি এখন এই দশকে দেশকে একটি নতুন প্রাণশক্তি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই সময়টি স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সময়। আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি পালন করছি। আজ আমরা যা করব, তা থেকে নতুন ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে, দেশের জন্য নতুন দিশা নির্ধারিত হবে। আমাদের এই সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলিকে বাস্তবায়িত করব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতের স্টার্ট-আপ বিপ্লব এই অমৃতকালের অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়ে পরিণত হবে। সকল নব যুবক-যুবতীকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা।
মধ্যপ্রদেশ সরকারকেও আমি এই সুন্দর আয়োজনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই!
অনেক অনেক ধন্যবাদ।