প্রতিটি দেশ, সমাজ এবং প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা করি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’ ব্যবস্থা অর্জনের জন্য এম- যোগ অ্যাপের কথা ঘোষণা করেছেন
বিশ্বজুড়ে এই মহামারীর সময়ে যোগ মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে এবং শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করেছে: প্রধানমন্ত্রী
সামনের সারির করোনা যোদ্ধারা যোগকে তাঁদের রক্ষা কবচ হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং রোগীদের সাহায্য করেছেন: প্রধানমন্ত্রী
যোগ বিচ্ছিন্নভাবে থাকার পরিবর্তে সংঘবদ্ধভাবে থাকতে সাহায্য করে। আমরা সবাই যে এক, যোগের মাধ্যমে সেই উপলব্ধি গড়ে ওঠে: প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বজুড়ে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর মন্ত্র আজ সমাদৃত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ক্লাসের সময় করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ শিশুদের শক্তিশালী করে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী

নমস্কার,

আপনাদের সবাইকে সপ্তম আন্তর্জাতিক যোগা দিবস উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই।

আজ যখন গোটা বিশ্ব করোনা মহামারীর মোকাবিলা করছে, তখন যোগ একটি আশার আলোরূপে প্রতিভাত হচ্ছে।

দু’বছর ধরে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশে ও ভারতে কোনো সরকারী অনুষ্ঠানের আয়োজন না হলেও যোগ দিবসের প্রতি উৎসাহ বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি।

করোনা সংক্রমণ সত্ত্বেও এবারের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মূল ভাবনা “সুস্থতার জন্য যোগ” কোটি কোটি মানুষের মনে যোগের প্রতি উৎসাহ আরো বাড়িয়েছে।

আমি আজ যোগ দিবস উপলক্ষ্যে কামনা করি প্রত্যেক দেশ, প্রতিটি সমাজের, প্রত্যেক ব্যক্তি সুস্থ থাকুন, আসুন সবাই মিলে মিশে পরস্পরের শক্তি হয়ে উঠি।

বন্ধুগণ,

আমাদের ঋষি মুনিরা যোগকে “সমত্বম্ ইয়োগো উচ্চতে” এই পরিভাষা দিয়েছে। তাঁরা সুখে  দুঃখে সমানভাবে থাকতে সংযমকে এক প্রকার যোগের মাপদন্ড করে রেখেছেন। আজ এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর ত্রস্ত সময়ে যোগ এই মাপদন্ডকে প্রমাণিত করে দিয়েছে। করোনার এই দেড় বছরে ভারত সহ প্রায় সমস্ত দেশ বড় সঙ্কটের মোকাবিলা করে চলেছে।

বন্ধুগণ,

বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জন্য যোগ দিবস আমাদের মতো শতাব্দী প্রাচীন সাংস্কৃতিক উৎসব নয়। এই কঠিন সময়ে, এতো সমস্যার মধ্যে এই বিষয়টা তাঁরা ভুলে থাকতে পারতেন, এটি উপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু এর বিপরীতে বিশ্বব্যাপী মানুষের মনে যোগের প্রতি উৎসাহ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, যোগের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়েছে। বিগত দেড় বছরে বিশ্বের নানা প্রান্তে লক্ষ লক্ষ নতুন মানুষ যোগ সাধকে পরিণত হয়েছেন। যোগের প্রথম পর্যায় হল – সংযম এবং অনুশাসন। এই নতুন যোগ সাধকরা সংযম এবং অনুশাসনকে তাদের জীবনে রপ্ত করার চেষ্টা করেছেন।

বন্ধুগণ,

করোনার অদৃশ্য ভাইরাস যখন বিশ্বময় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তখন কোনো দেশ তার সম্পদ, সামর্থ এবং মানসিকভাবে এর বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমরা সবাই দেখেছি, এরকম কঠিন সময়ে যোগ, আত্মবলের একটা বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যোগ, জনগণের মনে ভরসা বাড়িয়েছে যে, আমরা এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি।

আমি যখন অগ্রণী যোদ্ধাদের সঙ্গে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন তাঁরা আমাকে বলেছেন যে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরাও যোগের মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষা কবচ গড়ে তুলেছেন।

ডাক্তাররা যোগের মাধ্যমে নিজেদেরকে যেমন শক্তিশালী করেছেন, তেমনি রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রেও একে ব্যবহার করেছেন। আজ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এরকম কত ছবি ও ভিডিও আসে, যেখানে চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের যোগ শিক্ষা দিচ্ছেন। আবার অনেক জায়গায় রোগীরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা অন্যদের বলছেন। প্রাণায়াম, অনুলোম – বিলোম –এর মতো ব্রিদিং এক্সারসাইজ আমাদের শ্বসনতন্ত্রকে কতটা শক্তিশালী করতে তুলতে পারে, এটাও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষজ্ঞরা নিজেরাই বলছেন।

বন্ধুগণ,

মহান তামিল সন্ন্যাসী শ্রী থিরুভল্লভর বলেছেন,

 “নোড় নাড়ি, নোড় মুদল নাড়ি, হদুো তনিক্কুম, ভায় নাড়ি ভায় পচ্চয়ল”

 অর্থাৎ, কেউ অসুস্থ হলে আগে রোগ নির্ণয় করো, তার শিকড় পর্যন্ত যাও, রোগের কারণ কী - সেটা জানো, তারপর তার চিকিৎসা সুনিশ্চিত করো - যোগ এই পথই দেখায়। আজকাল চিকিৎসা স্বাস্থ্যেও উপাচারের পাশাপাশি “হিলিং” –এর উপর ততটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই হিলিং প্রক্রিয়ায় যোগ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ যোগের এই দিকটা নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিশেষজ্ঞরা অনেক ধরণের বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছেন।

করোনার সঙ্কটকালে যোগের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যত উপকার হয়, তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। আজকাল আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের শুরুর দিকে ছাত্রছাত্রীদের ১০ – ১৫ মিনিট ধরে প্রাণায়াম করানো হয়। এই প্রক্রিয়া করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও শিশুদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে তুলছে।

বন্ধুগণ,

ভারতের ঋষিরা আমাদের শিখিয়েছেন,

ব্যায়ামাৎ লহতে স্বাস্থ্যম্,

 দীর্ঘ আয়ুষ্যম্ বলম্ সুখম

 আরোগ্যম্ পরমম্ ভাগ্যম,

 স্বাস্থ্যম্ সর্বার্থ স্বাধনম্।।”

অর্থাৎ যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা পাই সুস্বাস্থ্য, সামর্থ এবং দীর্ঘ সুখী জীবন। আমাদের জন্য সুস্বাস্থ্যই সবচাইতে বড় ভাগ্যের বিষয়। আর সুস্বাস্থ্যই সকল সাফল্যের মাধ্যম। ভারতের ঋষিরা যখনই স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছেন, তখন তাঁরা শুধুই শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা বলেন নি। সেজন্য যোগের ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এতটাই জোর দেওয়া হয়।

আমরা যখন প্রাণায়াম করি, ধ্যান করি, অন্যান্য যোগাসন করি, তখন আমরা নিজেদের অন্তর্চেতনাকে অনুভব করি। যোগের মাধ্যমে আমাদের অনুভব হয়, যে আমাদের বিচারশক্তি ও আমাদের আন্তরিক সামর্থ কেমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে! বিশ্বের কোনো সমস্যা, কোনো নেতিবাচক বিষয় আমাদের ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না!  যোগ আমাদের “স্ট্রেস থেকে স্ট্রেন্থ” দিকে,  চাপ থেকে শক্তির দিকে, নেতিবাচকতা থেকে সৃষ্টিশীলতার পথে চালিত করে। যোগ আমাদের অবসাদ থেকে উৎসাহ উদ্দীপনার পথে, আর প্রমাদ থেকে প্রসাদের দিকে নিয়ে যায়।

বন্ধুগণ,

যোগ আমাদের প্রায় সমস্ত সমস্যার সমাধানের কথা বলে, যে সমাধানগুলি সমাধানের অসীম আন্তরিক ক্ষমতা আমাদের মধ্যেই রয়েছে। আমরা নিজেরাই মহাব্রহ্মান্ডের বৃহত্তম শক্তির উৎস। আমাদের মধ্যে এই শক্তির অসংখ্য প্রকোষ্ঠ থাকায় এর সার্বিক ক্ষমতাকে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি না।

একটা সময় আসে যখন মানুষের জীবন ঢিমেতালে চলতে থাকে, এই প্রকোষ্ঠগুলি আমাদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বকে বিভাজিত করে রাখে। এই বিভাজন থেকে ঐক্যের পথে রূপান্তরণের নামই যোগ। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একটি প্রমাণিত পথ। একটি ঐক্য চেতনার নামই যোগ। এই সময় আমার গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু কথা মনে পড়েছে। যিনি বলেছিলেন,

ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে আমাদের নিজস্বতার মানে খুঁজে পাওয়া যাবে না, খুঁজে পাওয়া যাবে যোগ ও মিলনের অসীম ঐক্যে

 প্রাচীনকাল থেকে ভারত, যে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ এর মন্ত্র অনুসরণ করে আসছে, এখন সেটির সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। আমরা এখন প্রত্যেকে পরস্পরের সুস্থতা কামনা করছি। এভাবে মানবতা একটি ঐক্যসূত্রে গ্রথিত হচ্ছে। যোগ আমাদের একটি সার্বিক সুস্থতা উপহার দেয়। যোগ আমাদের জীবনে আরো সুখী করে। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতেও যোগ রোগ প্রতিরোধক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে জনমানসে তার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাবে।

বন্ধুগণ,

যখন ভারত রাষ্ট্রসংঘে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রস্তাব রেখেছিল, তখন এর পেছনে এই ভাবনাই ছিল, এই যোগ বিজ্ঞানকে গোটা বিশ্বের জন্য সুলভ করে তোলা। আজ এই লক্ষ্যে ভারত, রাষ্ট্রসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন বিশ্ববাসী এম-ইয়োগা অ্যাপ –এর শক্তিতে ঋদ্ধ হতে চলেছে। এই অ্যাপে “কমন ইয়োগা প্রোটোকল” –এর ভিত্তিতে যোগ প্রশিক্ষণের অসংখ্য ভিডিও বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় দেখতে পাওয়া যাবে। এটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রাচীন বিজ্ঞানের মিলনের একটি অসাধারণ উদাহরণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই এম-ইয়োগা অ্যাপ সারা পৃথিবীতে যোগকে আরো ছড়িয়ে দিতে, ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’ এর প্রচেষ্টাকে সফল করে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ,

গীতায় বলা হয়েছে,

তং বিদ্যাদ্ দুঃখ সংযোগ

 বিয়োগং যোগ সংগ্গিতম্”

অর্থাৎ দুঃখ থেকে বিয়োগ ও মুক্তিকেই যোগ বলা হয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা মানবতার এই যোগ যাত্রা। যোগ যাত্রাকে আমাদের এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যে কোনো স্থানে, যে কোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো বয়সী প্রত্যেক মানুষের জন্য কোনো না কোনো সমাধান যোগ থেকে পাওয়া যাবে। আজ বিশ্বে যোগের প্রতি জিজ্ঞাসা ও আগ্রহ থাকা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আরো বাড়ছে। দেশ – বিদেশে যোগ প্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে যোগের যে মৌলিক তত্ত্বজ্ঞান,মৌলিক সিদ্ধান্তগুলিকে বজায় রেখে, যোগ কিভাবে প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছোবে, নিরন্তর পৌঁছতে থাকবে - এটা সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই কাজ যোগের সংঙ্গে যুক্ত মানুষদের, যোগাচার্যদের ও যোগ প্রচারকদের একসঙ্গে মিলে মিশে করতে হবে। আমাদের নিজেদেরও যোগের সংকল্প নিতে হবে। আর প্রিয়জনদেরও এই সংকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। “যোগ থেকে সহযোগ পর্যন্ত” এই মন্ত্র আমাদের একটি নতুন ভবিষ্যতের পথ দেখাবে, মানবতাকে শক্তিশালী করবে।

এই শুভকামনা জানিয়ে আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে সমগ্র মানব জাতিকে, আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Indian Toy Sector Sees 239% Rise In Exports In FY23 Over FY15: Study

Media Coverage

Indian Toy Sector Sees 239% Rise In Exports In FY23 Over FY15: Study
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 4 জানুয়ারি 2025
January 04, 2025

Empowering by Transforming Lives: PM Modi’s Commitment to Delivery on Promises