নমস্কার!
এবার ন্যাসকমের টেকনলজি এবং লিডারশিপ ফোরাম আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত বিশেষ। এটা এমন একটা সময় যখন বিশ্ব ভারতের দিকে আগের থেকে বেশি প্রত্যাশা ও ভরসা নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – “না দৈন্যম না পলায়নম!” অর্থাৎ, সমস্যা যত কঠিন হোক আমাদের নিজেদের দুর্বল ভাবা উচিৎ নয়, আর সমস্যাকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়াও উচিৎ নয়। করোনার সময় ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞান, আমাদের প্রযুক্তি শুধু নিজেকে প্রমাণিত করেনি, নিজেকে বিবর্তিতও করেছে। একটা সময় ছিল যখন আমরা গুটি বসন্তের টিকার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন এমন সময় এসেছে যখন আমরা বিশ্বের অনেক দেশকে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনা টিকা দিচ্ছি। করোনার সময় ভারত যে সমাধান দিয়েছে তা আজ গোটা বিশ্বের জন্য প্রেরণা। আজ যেভাবে এখন আপনাদের সকলের বক্তব্যে আমি শুনছিলাম, কয়েকজন সিইও যেভাবে বললেন, এতেও স্পষ্ট হয় যে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। যখন অন্যদের প্রযুক্তি কাজ করেনি, তখনও আপনারা সবকিছু সচল রেখেছেন। যখন গোটা দেশ চার দেওয়ালের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল, তখন আপনারা বাড়ি থেকেই শিল্পগুলিকে নির্বিঘ্নে পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিগত বছরের পরিসংখ্যান বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। আপনাদের ক্ষমতা দেখে সকলে অবাক হয়েছে। ভারতীয়দের কাছে হয়তো এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার।
বন্ধুগণ,
এমন পরিস্থিতিতে যখন প্রতিটি ক্ষেত্র করোনা দ্বারা প্রভাবিত ছিল, তখনও আপনারা প্রায় ২ শতাংশ ‘গ্রোথ’ অর্জন করেছেন। যখন সারা পৃথিবীতে ‘ডি-গ্রোথ’-এর আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল, তখনও ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তাদের আয়ের ক্ষেত্রে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার জুড়েছে যা সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সেজন্য আপনাদের সকলের নেতৃত্বাধীন টিমগুলি অভিনন্দনের অধিকারী। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রমাণ করেছে যে তারা ভারতের উন্নয়নের শক্তিশালী স্তম্ভ কেন। আজ সমস্ত তথ্য, সমস্ত সূচক এটা দেখাচ্ছে যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এই ‘গ্রোথ মোমেন্টাম’ নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
নতুন ভারত। নতুন ভারতের জন্য প্রত্যেক ভারতবাসী অপেক্ষায় রয়েছে। উন্নয়নের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের সরকার নতুন ভারতের যুব সম্প্রদায়ের এই ভাবনাকে বোঝে। ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতবাসীর আকাঙ্ক্ষা আমাদের দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা যোগায়। নতুন ভারতের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যাশাগুলি যতটা সরকারের থেকে রয়েছে ততটাই আপনাদের থেকেও রয়েছে, দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রের থেকেও রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তাদের নিজস্ব পায়ের ছাপ বিশ্ব মঞ্চে পোক্ত করেছে। গোটা বিশ্ব আমাদের ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের পরিষেবা এবং সমাধান প্রদানের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, নিজেদের অবদান রাখছিলেন। কিন্তু কিছু বিশেষ কারণে এই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ভারতের বিশাল দেশীয় বাজার থেকে খুব একটা লাভবান হচ্ছিল না। সেজন্য ভারতে ডিজিটাল বিভাজন ক্রমবর্ধমান ছিল। একভাবে আমি বলতে পারি, প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো অবস্থা আমাদের সামনে ছিল। আমাদের সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তগুলি সাক্ষী কিভাবে বিগত বছরগুলিতে আমাদের সরকার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকারও এটা খুব ভালোভাবে জানে যে বেঁধে রাখলে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব বিকশিত হতে পারবে না। সেজন্য সরকার টেক-ইন্ডাস্ট্রিকে অনাবশ্যক নিয়মকানুনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। ন্যাশনাল ডিজিটাল কমিউনিকেশন পলিসি এমনই একটি বড় প্রচেষ্টা। ভারতকে গ্লোবাল সফটওয়্যার প্রোডাক্ট হাব করার জন্যও জাতীয় নীতি রচনা করা হয়েছে। সংস্কারের এই প্রক্রিয়া করোনার সঙ্কটকালেও অবিরাম কাজ করেছে। করোনার সঙ্কটকালেও ‘আদার সার্ভিস প্রোভাইডার’ (ওএসপি) গাউডলাইন্স জারি করা হয়েছে। আপনাদের আলোচনায় কিছুক্ষণ আগেই যে বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। এর ফলে নতুন পরিস্থিতিতে আপনাদের কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। আপনাদের ন্যূনতম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আজও আপনারা, যেভাবে আপনাদের মধ্যে কয়েকজন বন্ধু বললেন যে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখন বাড়ি থেকেই কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, কিছু মানুষ তো তাঁদের নিজের গ্রামে বসে কাজ করছেন। দেখুন, এই বিষয়টি নিজেই অত্যন্ত শক্তি অর্জনকারী বিষয়। ১২টি চ্যাম্পিয়ন পরিষেবা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিকেও সামিল করার ফলে আপনারা লাভবান হতে শুরু করেছেন।
বন্ধুগণ,
দু’দিন আগেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংস্কার করা হয়েছে যাকে আপনারা সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। ম্যাপ এবং জিও-স্পেশিয়াল ডেটাকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে তাকে শিল্প জগতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটা এমন একটা পদক্ষেপ যা এই ফোরামের এবারের মূল ভাবনা ‘শেপিং দ্য ফিউচার টুওয়ার্ডস আ বেটার নর্মাল’-এর অনুকূল। আমি মনে করি, আপনাদের এই শীর্ষ সম্মেলনের যে কাজ তা অনেকটাই আমাদের সরকার করে দিয়েছে। এটা এমন একটি পদক্ষেপ যা আমাদের টেক স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমকে সশক্তিকরণ করবে। এটা এমন একটি পদক্ষেপ যা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প নয়, আত্মনির্ভর ভারতের ব্যাপক অভিযানকে শক্তিশালী করে তোলে। আমার মনে আছে, আপনাদের মধ্যে অনেক শিল্পোদ্যোগী ম্যাপস এবং জিও-স্পেশিয়াল ডেটা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ এবং লাল ফিতের ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগ ভিন্ন ভিন্ন ফোরামে কিভাবে তুলে ধরেছেন।
এখন একটি কথা বলি, এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে সবথেকে বড় যেটি রেডলাইট দেখাত তা হল নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ। অমুক জিনিসটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে নিরাপত্তা সঙ্কটগ্রস্ত হবে, এই আশঙ্কা বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্য আত্মবিশ্বাস একটি বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। আর আজ ভারত আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। এর প্রতিফলন আমরা সীমান্তেও দেখতে পাচ্ছি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভব হয়। এই সিদ্ধান্ত শুধুই প্রযুক্তির আওতাধীন নয়, এই সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়, এই সিদ্ধান্ত শুধুই সরকারের একটি নীতি-নিয়ম থেকে সরে যাওয়া নয়, এই সিদ্ধান্ত ভারতের সামর্থ্যের পরিচায়ক। ভারত বিশ্বাস করে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আমরা দেশকে নিরাপদ রাখতে পারব এবং দেশের নবীন প্রজন্মকে বিশ্বে সমস্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সুযোগও দেব। আমি যখনই আপনাদের মতো বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতাম তখন আপনাদের এই সমস্যা অনুভব করতাম। আমাদের নবীন শিল্পোদ্যোগীদের, আমাদের স্টার্ট-আপগুলি যাতে বিশ্বে গড়ে ওঠা নতুন নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যেন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পায়, এই দৃষ্টিকোণ থেকেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার দেশের নাগরিকদের, আমাদের স্টার্ট-আপগুলিকে এবং আমাদের অধ্যাপকদের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করে। এই ভরসা নিয়েই স্বপ্রত্যয়নকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিগত ছয় বছরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প যত প্রোডাক্ট, যত সমাধান তৈরি করেছে সেগুলিকে আমরা গভর্ন্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছি, বিশেষ করে ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পে ডিজিটাল প্রযুক্তি দেশের সাধারণ মানুষের সশক্তিকরণ করেছে, সরকারের সঙ্গে যুক্ত করেছে। আজ তথ্যকেও গণতন্ত্রীকরণ করা হচ্ছে। আর ‘লাস্ট মাইল সার্ভিস ডেলিভারি’ও প্রভাবিত হয়েছে। আজ কয়েকশ’ সরকারি পরিষেবা অনলাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কার্যকরি ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব এবং মধ্যবিত্তরা অনেক বেশি উপকৃত হচ্ছেন। পাশাপাশি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক সাফল্য পাওয়া গেছে। আমাদের ‘ফিনটেক প্রোডাক্টস’ এবং ইউপিআই-এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়েও এখন গোটা বিশ্বে আলোচনা চলছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর সামর্থ্য নিয়ে আলোচনা করছে কিভাবে ৩-৪ বছরের মধ্যে একটি হেভিলি ক্যাশ ডিপেন্ডেন্ট সোসাইটি থেকে আমরা লেস ক্যাশ সোসাইটির দিকে এগিয়ে চলেছি এটা আপনাদের সকলের সামনে রয়েছে। ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়ছে, কালো টাকার লেনদেনও তত কমছে। জন ধন-আধার-মোবাইল – ত্রয়ী আর ডিবিটি-র ফলে আজ গরীবরা তাঁদের অধিকারের এক একটি পয়সা কোনও ‘লিকেজ’ ছাড়াই পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
সুপ্রশাসনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল স্বচ্ছতা। এই পরিবর্তন এখন দেশের শাসন ব্যবস্থায় আসছে। সেজন্যই প্রত্যেক সার্ভেতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর জনগণের ভরসা নিয়মিত মজবুত থেকে আরও মজবুত হচ্ছে। এখন সরকারি কাজকে সরকারি রেজিস্টারের বাইরে বের করে ড্যাশবোর্ডে রাখা হচ্ছে। সরকার এবং সরকারি বিভাগের প্রতিটি কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে দেশের সাধারণ নাগরিক যেন যে কোনও মুহূর্তেই জানতে পারেন, তাঁদের মোবাইল ফোনে দেখতে পারেন সেই প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার যতটাই কাজ করবে তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।
বন্ধুগণ,
সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আগে কত অভিযোগ শোনা যেত তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার ই-মার্কেটপ্লেস বা জিইএম-এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনছে। আজ অধিকাংশ সরকারি টেন্ডার অনলাইন জমা পড়ছে। আমাদের প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলি থেকে শুরু করে গৃহহীনদের বাড়ি তৈরি করা, প্রতিটি প্রকল্পকে জিও-ট্যাগিং করা হচ্ছে যাতে তা নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়। এমনকি, আজ গ্রামের বাড়িগুলিকেও ড্রোনের মাধ্যমে মানচিত্রায়ন করা হচ্ছে। কর সংক্রান্ত মামলাগুলিতেও হিউম্যান ইন্টারফেস ন্যূনতম করা হচ্ছে, ফেসলেস ব্যবস্থা বিকশিত করা হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দ্রুত, সঠিক এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থা প্রদানই ‘ন্যূনতম সরকার অধিকতম প্রশাসন’-এর অপর নাম।
বন্ধুগণ,
আজ বিশ্বে ভারতীয় প্রযুক্তির যে চিত্র, যে পরিচিতি তা দেখে দেশবাসী আপনাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা করে। আপনারা এটা সুনিশ্চিত করেছেন যে আমাদের প্রযুক্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রযুক্তি। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ যে আপনাদের সমাধানের ক্ষেত্রেও এখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ছাপ রাখুন। আমরা যদি মাল্টিপল ডোমেইন-এ ইন্ডিয়ান টেকনলজি লিডারশিপকে আরও বাড়াতে পারি, এই গতি আরও বাড়াতে পারি, সেজন্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের নতুন মাপদণ্ড তৈরি করতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশ্ব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উদ্ভাবন এবং বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে ‘কালচার অফ এক্সেলেন্স’ এবং ‘ইনস্টিটিউশন বিল্ডিং’-এর দিকে ততটাই জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমার দেশীয় স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য একটি বিশেষ বার্তা রয়েছে। নিজেদের শুধুই ‘ভ্যালুয়েশন্স’ এবং ‘একজিট স্ট্র্যাটেজি’ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবেন না। আপনারা ভাবুন, কিভাবে নতুন নতুন এমন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন যা শতাব্দীকাল ধরে চলবে। আপনারা ভাবুন, কিভাবে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন যা উৎকর্ষের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা সৃষ্টি করবে। এই দুটি লক্ষ্যের ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা করলে চলবে না। তা না হলে আমাদের সব সময়েই অনুসরণ করে যেতে হবে, কখনই আমরা নেতৃত্ব দিতে পারব না।
বন্ধুগণ,
এ বছর আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে পদার্পণ করতে চলেছি। এটা নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত সঠিক সময়। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করার সময়। এখন থেকে ২৫-২৬ বছর পর যখন ভারত স্বাধীনতার শততম বছর পালন করবে, ততদিনে আমরা কতগুলি বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করব তার ওপর নির্ভর করছে আমরা বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে কত বিশ্ব নেতা তৈরি করব। একথা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। আপনারা লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। ভারতের এতবড় জনসংখ্যা আপনাদের বিরাট বড় শক্তি। বিগত মাসগুলিতে আমরা দেখেছি কিভাবে ভারতের জনগণের মনে প্রযুক্তিগত সমাধানের জন্য অস্থিরতা বেড়েছে। মানুষ নতুন নতুন প্রযুক্তিগত সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছেন। মানুষ নতুন নতুন পণ্য ব্যবহার করে দেখতে চান বিশেষ করে ভারতীয় প্রয়োগের ওপর তাদের প্রবল উৎসাহ। এই দেশ আত্মনির্ভর হওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছে। আপনারাও সেই সঙ্কল্প নিন।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর ভারতের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য প্রো-অ্যাক্টিভ টেকনলজিক্যাল সলিউশন্স প্রদান করা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, টেক ইন্ডাস্ট্রি, উদ্ভাবক, গবেষক, নবীন মনের মানুষদের অনেক বড় দায়িত্ব। এখন যেমন আমাদের চাষের ক্ষেত্রে জল এবং সারের প্রয়োজন থেকে বেশি ব্যবহার হলে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, আমাদের কি এমন স্মার্ট প্রযুক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারে না যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রত্যেক ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় জল ও সার সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে পারে? শুধু প্রযুক্তি নির্মাণ করলে কাজ চলবে না, তাকে ভারতে গণ-ভিত্তিতে অভিযোজন করাতে হবে। এই ধরনের সমাধানের জন্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, অন্বেষণ করতে হবে। একইরকমভাবে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার তথ্যের শক্তি দিয়ে গরীব থেকে গরীব মানুষ কিভাবে লাভবান হবেন, সেজন্যও আজ ভারত আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। টেলি-মেডিসিনকে কার্যকর তোলার ক্ষেত্রেও আপনাদের উন্নত সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।
বন্ধুগণ,
শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়েও টেক ইন্ডাস্ট্রিকে দেশের জন্য এমন সব সমাধান তৈরি করতে হবে যা দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সুলভে ব্যবহার করতে পারে। আজ দেশে ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাব’ থেকে শুরু করে ‘অটল ইনকিউবেশন সেন্টার’-এ প্রযুক্তির ইন্ধন যোগাতে স্কুল-কলেজেই আবহ গড়ে তোলা হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নের ওপরও সমানভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। এই প্রচেষ্টা শিল্প জগতের সহযোগিতা ছাড়া সফল হবে না। আমি আরেকটি কথা বলব যে আপনারা নিজেদের সিএসআর অ্যাক্টিভিটিজ-এর আউটকামের দিকে আরেকবার জোর দিন। আপনারা যদি নিজেদের সিএসআর অ্যাক্টিভিটিজ-এর লক্ষ্য দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার দেন, তাহলে আপনারা তাদের অধিকাংশকেই ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে যুক্ত করতে পারবেন, তাদের মনে বিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনার ক্ষমতা এবং ল্যাটারাল থিঙ্কিং বিকশিত করতে পারবেন। এই সাফল্য দেশে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। সরকার নিজের দিক থেকে চেষ্টা করছে কিন্তু এতে আপনাদের সহযোগিতা যুক্ত হলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। ভারত ভাবনা-চিন্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই কিন্তু ভারতের চাই সঠিক পরামর্শদাতা ও নেতৃত্ব যাঁরা এই ভাবনাগুলিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারতের বড় কেন্দ্রগুলি আজ দেশের টিয়ার-২ টিয়ার-৩ শহরগুলি ঘিরে গড়ে উঠছে। এই ছোট শহরগুলি আজ তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রযুক্তির চাহিদা এবং বিকাশের ক্ষেত্রেও বড় বড় কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। দেশের এই ছোট শহরগুলির নবীন প্রজন্ম অদ্ভূত উদ্ভাবক হিসেবে সাফল্য পাচ্ছেন। সরকারের অগ্রাধিকারও এই ছোট শহরগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো নির্মাণ করা যাতে সেখানে বসবাসকারী জনগণের পাশাপাশি আপনাদের মতো শিল্পোদ্যোগীদেরও অসুবিধা না হয়। আপনারা যত বেশি এই ছোট ছোট শহরগুলি ও মফঃস্বলে যাবেন দেশ তত বেশি উন্নত হবে।
বন্ধুগণ,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামী তিনদিনে আপনারা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের এ ধরনের সমাধানগুলি নিয়ে অনেক গভীর আলোচনা করবেন। সরকার আগের মতোই আপনাদের পরামর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করবে। আমি একটি কথা অবশ্যই বলতে চাইব, গত ১৫ আগস্টে যখন লালকেল্লার প্রাকার থেকে কথা বলছিলাম, আপনারা শুনেছিলেন আমি দেশের সামনে একটা লক্ষ্য রেখেছিলাম যে ১ হাজার দিনের মধ্যে ভারতের ৬ লক্ষ গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের কাজ বাস্তবায়িত করতে হবে। তার মানে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের একটি পরিকাঠামো দেশে দ্রুতগতিতে গড়ে উঠছে। আর আমি যেভাবে পেছনে পড়ে আছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই এই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়ে যেতে পারে। রাজ্যগুলিও আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু তারপর যে কাজ সেটা আপনাদের মস্তিষ্কপ্রসূত হবে। এই অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের পরিকাঠামোকে ভারতের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষ কিভাবে ব্যবহার করবেন, কিভাবে ইউজার ফ্রেন্ডলি নতুন নতুন প্রোডাক্ট আনবেন, কিভাবে গ্রামের মানুষও সরকার, বাজার, শিক্ষা ও আরোগ্যের সঙ্গে যুক্ত হবেন, এই পরিকাঠামো তাঁদের জীবন পরিবর্তনের একটি বড় পথ কিভাবে খুলে দেবে, সেই কাজ এখন থেকে আপনাদের ছোট ছোট স্টার্ট-আপগুলির মাধ্যমে এমন সব পণ্য নিয়ে আসুন যাতে গ্রামের মানুষ অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা নিয়ে গ্রামের কমপক্ষে ১০টি প্রয়োজন মেটাতে পারে। গ্রামের শিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।
আপনারা দেখুন কত বড় সুযোগ, কত বড় সুযোগ। আর সেজন্য আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সরকার এই কাজ করছে। আপনারা ঠিক করুন, আমাদের নেতৃত্বকে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিতে হবে, পূর্ণ সামর্থ্য নিয়ে নিতে হবে। আর এই নেতৃত্বের ভাবনা-চিন্তার মন্থন থেকে যে অমৃত উঠে আসবে তা গোটা দেশের কাজে লাগবে।
এই প্রত্যাশা নিয়ে আরেকবার আপনাদের সবাইকে শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা!