ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
রাজস্থানের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অশোক গেহলটজি, মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল তথা আদিবাসী সমাজের এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিংজি চৌহান, মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী ফগগন সিং কুলস্তেজি ও শ্রী অর্জুন মেঘওয়ালজি, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ, সাংসদ, বিধায়ক এবং আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু ভ্রাতৃপ্রতিম মহেশজি যিনি আদিবাসী সমাজের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেন তথা মানগড় ধামে দূরদুরান্ত থেকে আগত বিরাট সংখ্যায় সমবেত আমার আদিবাসী ভাই ও বোনেরা!
মানগড়ের এই পূণ্যভুমিতে প্রণাম জানানোর আরও একটি সুযোগ আজ আমার সামনে উপস্থিত। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অশোকজি এবং আমি একত্রে কাজ করেছি বেশ কয়েক বছর ধরে। মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে অশোকজিই ছিলেন প্রবীণতম। আজও তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রবীণ। আজ এখানে এই মঞ্চে উপবিষ্ট সকলের মধ্যেও তিনি হলেন একজন প্রবীণ মুখ্যমন্ত্রী। এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.10626500_1667294961_1.jpeg)
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবকালে এই মানগড় ধামে একত্রিত হওয়ার এই সুযোগ শুধু একটি মনোরম অভিজ্ঞতা মাত্র নয়, আমাদের সকলের কাছে বিশেষ প্রেরণাদায়কও বটে। আদিবাসী নায়কদের শৌর্য-বীর্যের জন্য বিখ্যাত এই মানগড় ধাম। রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র – এই চারটি রাজ্যের এটি হল এক সাধারণ ঐতিহ্যবাহী স্থান। গত পরশু অর্থাৎ, ৩০ অক্টোবর দিনটি ছিল গোবিন্দ গুরুজির প্রয়াণ বার্ষিকী। সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি আরও একবার প্রণাম জানাই গোবিন্দ গুরুজিকে। তাঁর সংগ্রাম ও চিন্তাদর্শের জন্য আমি প্রণতি জানাই তাঁর কাছে।
ভাই ও বোনেরা,
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মানগড় অঞ্চলকে সেবা করে যাওয়ার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। এই অঞ্চলটি গুজরাটের মধ্যেই অবস্থিত। গোবিন্দ গুরুজিও তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর এখানে অতিবাহিত করেছিলেন। এখানকার মাটিতে তাঁর শিক্ষাদর্শ ও শক্তির স্পর্শ আজও অনুভূত হয়। আমি বিশেষভাবে নতমস্তকে প্রণাম জানাই আমাদের কাতারা কঙ্কমলজি এবং সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়কে। আমি যখন এর আগে এখানে এসেছিলাম তখন এই অঞ্চলটি ছিল পতিত ও পরিত্যক্ত। আমি তাই এখানে ‘বন মহোৎসব’ আয়োজনের আবেদন জানাই। এখানে চারদিকে সবুজের সমারোহ দেখে আমার মন আজ খুশিতে ভরে গেছে। সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে এই বনাঞ্চল যাঁরা গড়ে তুলেছেন এবং এই অঞ্চলকে আবার সবুজ করে তুলতে সাহায্য করেছেন তাঁদের আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।
বন্ধুগণ,
এই অঞ্চলটি যখন উন্নত হয়ে ওঠে এবং এখানে সড়কপথ নির্মিত হয়, তখন এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাপনই শুধু উন্নত হয়ে ওঠেনি, গোবিন্দ গুরুজির শিক্ষাদর্শেরও এখানে প্রসার ঘটেছিল।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.84112300_1667294977_2.jpeg)
বন্ধুগণ,
অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মতোই গোবিন্দ গুরুজিও ছিলেন ভারতীয় ঐতিহ্য ও আদর্শের এক বিশেষ প্রতিনিধি। রাজন্য শাসিত কোনো রাজ্যের তিনি রাজা ছিলেন না। তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ আদিবাসী মানুষের মনে আজও তিনি রাজা হয়ে রয়েছেন। পরিবারকে তিনি হারিয়েছিলেন, কিন্তু সাহসকে কখনও হারাননি। প্রতিটি আদিবাসী, দরিদ্র, দুর্বল ভারতীয় নাগরিককে তিনি তাঁর পরিবারের অংশ করে নিয়েছিলেন। আদিবাসী সমাজের শোষণের প্রতিবাদ জানাতে তিনি সংগ্রাম চালিয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে। একইসঙ্গে তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন সমাজের কুপ্রথা ও কুফলের বিরুদ্ধে।
একইসঙ্গে, তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক গুরু। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল এক সাধু-সন্তের মতোই। সাধারণ মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। শৌর্য ও সাহসিকতা ছাড়াও তাঁর দার্শনিক তথা বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাদর্শ ছিল সমানভাবেই অনুসরণ করার মতো। ‘ধুনি’-র আকারে গোবিন্দ গুরুজির অস্তিত্ব আজও প্রতিফলিত ও উপলব্ধ হয় এই মানগড় ধামে। সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রেম, ঐক্য ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ তিনি প্রচার করে গেছেন। তাঁর অনুগামীরা আজও বহন করে চলেছেন তাঁর আধ্যাত্মিকতার বার্তা।
বন্ধুগণ,
মানগড় ধামে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে তা ছিল ব্রিটিশ বর্বরতার এক জঘন্যতম ঘটনা। একদিকে ছিলেন দেশের নিরীহ ও নির্দোষ আদিবাসী ভাই-বোনেরা যাঁদের স্বপ্ন ছিল দেশের স্বাধীনতা, অন্যদিকে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যাদের লক্ষ্যই ছিল সমগ্র বিশ্বকে পদদলিত করা। ব্রিটিশ সরকার ১,৫০০-রও বেশি তরুণ, যুবা, বয়স্ক ও মহিলাদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায় মানগড় পাহাড়ে। দুর্ভাগ্যবশত, আদিবাসী সমাজের সেই সংগ্রাম ও ইতিহাসের কাহিনী ইতিহাসের পাতায় স্বাধীনতার পরেও সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। তাই স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবকালে অতীতের সেই ভ্রান্তি সংশোধনে দেশ এখন সঙ্কল্পবদ্ধ। বহু দশক ধরে যে ভুলভ্রান্তি হয়ে এসেছে, এখন হল তার সংশোধন পর্ব।
বন্ধুগণ,
ভারতের সুপ্রাচীন অতীতকাল, দেশের ইতিহাস, ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং দেশের ভবিষ্যৎ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আদিবাসী সমাজের অবদান ছাড়া। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় লিখিত থাকবে আদিবাসী সমাজের সংগ্রাম ও স্বাধীনতা লাভের আকুতির কথা। এমনকি, ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের আগেও আদিবাসী সমাজ বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম শুরু করেছিল। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে তিলকা মাঝির নেতৃত্বে সাঁওতালদের সশস্ত্র বিদ্রোহ। ১৮৩০-৩২ সালে বুধু ভগতের নেতৃত্বে দেশ সাক্ষী থেকেছিল ‘লড়কা আন্দোলন’-এর। ‘সিধু কানহু বিদ্রোহ’-এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। ভগবান বিরসা মুন্ডা লক্ষ লক্ষ আদিবাসী মানুষের মনে প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন বিদ্রোহের আগুন। অপরিণত বয়সে তাঁর মৃত্যু হলেও, তাঁর সাহস, তাঁর শক্তি ও তাঁর দেশপ্রেম পরবর্তীকালে ‘টানা ভগৎ আন্দোলন’-এর ভিত প্রস্তুত করে দিয়েছিল।
বন্ধুগণ,
পরাধীনতার দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার সময় থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এমন কোনো সময়কাল আপনারা খুঁজে পাবেন না যখন আদিবাসী সমাজের দ্বারা মুক্তি সংগ্রামের শিখা প্রজ্জ্বলিত হয়নি। অন্ধ্রপ্রদেশে আল্লুরি সীতারাম রাজুর নেতৃত্বে আদিবাসী সমাজ ‘রাম্পা বিপ্লব’-এর ডাক দিয়েছিল। রাজস্থানের ভূমিতে আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনেরা মহারানা প্রতাপের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.99558300_1667294997_3.jpeg)
বন্ধুগণ,
আদিবাসী সমাজের আত্মোৎসর্গের কাছে আমরা সর্বদাই ঋণী। আমরা ঋণী তাঁদের অবদানের কাছেও। প্রকৃতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং দেশের জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য এই সমাজ সর্বদাই চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। তাই, আদিবাসী সমাজের এই ঋণ শোধের সময় আমাদের সামনে উপস্থিত। আজ থেকে মাত্র কয়েকদিন পরেই আগামী ১৫ নভেম্বর দেশে উদযাপিত হবে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’। ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্ম দিবস পালিত হবে জনজাতীয় গৌরব দিবস হিসেবে। সারা দেশে এখন আদিবাসী স্বাধীনতা যোদ্ধাদের স্মরণে দেশে বিশেষ বিশেষ সংগ্রহশালাও গড়ে তোলা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
দেশে আদিবাসী সমাজের প্রসার ও ভূমিকা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তা উপলব্ধি করতে আমাদের একনিষ্ঠভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। রাজস্থান ও গুজরাট থেকে শুরু করে ওড়িশার উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিভিন্ন আদিবাসী সমাজের সেবায় নীতি রূপায়ণের কাজ চলছে। ‘বনবন্ধু কল্যাণ যোজনা’র মাধ্যমে আদিবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশের বনাঞ্চলেরও একদিকে যেমন প্রসার ঘটছে, অন্যদিকে তেমনই বনজ সম্পদকেও সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আদিবাসী অঞ্চলগুলি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এক বিশেষ অংশ হয়ে উঠেছে। আদিবাসী তরুণদের জন্য স্থাপিত হচ্ছে ‘একলব্য আবাসিক বিদ্যালয়’। এখানকার এই অনুষ্ঠানের পরে আমি যাত্রা করব জম্বুঘোড়ার উদ্দেশ্যে। সেখানে গোবিন্দ গুরুজির নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্যাম্পাসের আমি উদ্বোধন করব।
![](https://cdn.narendramodi.in/cmsuploads/0.11727500_1667295018_4.jpeg)
বন্ধুগণ,
এই প্রসঙ্গে আমি আপনাদের কাছে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করব। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে গতকাল সন্ধ্যায় আমেদাবাদ-উদয়পুর রুটের ব্রডগেজ লাইনে একটি ট্রেন চালুর আমি সূচনা করেছিলাম। ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঐ রেল লাইনটি ব্রডগেজে রূপান্তরিত করার প্রকল্পটি ছিল রাজস্থানের ভাই-বোনেদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্থানের বেশ কয়েকটি আদিবাসী অঞ্চলের সঙ্গে এখন থেকে যোগাযোগ স্থাপিত হবে গুজরাটের আদিবাসী অঞ্চলগুলির। এই নতুন রেলপথ চালু হওয়ার ফলে বিশেষভাবে লাভবান হবে রাজস্থানের পর্যটন কর্মসূচিও। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে উপকৃত হবে এখানকার শিল্পোন্নয়ন প্রচেষ্টা। কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে তরুণ ও যুবকদের জন্য।
বন্ধুগণ,
মানগড় ধামের সম্পূর্ণ উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি আলোচনাও এখানে শুরু হয়েছে। এই স্থান তথা অঞ্চলটির সার্বিক প্রসারের এক বিশেষ আগ্রহ রয়েছে আমাদের মধ্যে। এই লক্ষ্যের বাস্তবায়নে রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রকে কাজ করে যেতে হবে একযোগে। এই চারটি রাজ্যের সরকারগুলির কাছে আমার আবেদন, এ বিষয়ে সবিস্তার আলোচনার মাধ্যমে একটি রোডম্যাপ তৈরি করুন যাতে গোবিন্দ গুরুজির স্মৃতিধন্য এই অঞ্চলটি বিশ্বের মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করতে পারে। মানগড় ধামের উন্নয়ন যে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এবং সেইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ ও প্রেরণার বীজ রোপণ করবে, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় এই স্থান তথা অঞ্চলটির আরও ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। এটিকে একটি জাতীয় স্মারক হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে, ভারত সরকারের সঙ্গে এই চারটি রাজ্যের আদিবাসী সমাজের এক প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে উঠবে এই উন্নয়ন প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। আমরা মিলিতভাবে উন্নয়নকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে পারি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণভাবে সঙ্কল্পবদ্ধ। আমি আরও একবার আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। প্রণাম জানাই গোবিন্দ গুরুজির পদতলে। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তাঁর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসুন আমরা সকলে সঙ্কল্পবদ্ধ হই আদিবাসী সমাজের সার্বিক কল্যাণে।
অসংখ্য ধন্যবাদ!