মহামান্য প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জনগন্নাথজি, মরিশাস মন্ত্রিসভার উপস্থিত সদস্যগণ, ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডঃ জয়শঙ্কর আজ এই সমারোহের সঙ্গে যুক্ত আগলেগার জনগণ ও সমস্ত বন্ধুগণ,
নমস্কার !
বিগত ৬ মাসে, প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথ এবং আমার এটি পঞ্চম সাক্ষাৎ। এটি ভারত এবং মরিশাসের মধ্যে স্পন্দিত, শক্তিশালী এবং অনন্য অংশীদারিত্বের প্রমাণ। মরিশাস আমাদের ‘প্রতিবেশী সবার আগে’ নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের ‘ভিশন সাগর’ প্রকল্পের অন্তর্গত মরিশাস আমাদের বিশিষ্ট সহযোগী। গ্লোবাল সাউথের সদস্য হওয়ার ফলে আমাদের দু-দেশের অগ্রাধিকার একই রকম। বিগত ১০ বছরে আমাদের সম্পর্কে অভূতপূর্ব গতি এসেছে। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে যা আমাদের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন স্বরূপ প্রদান করেছে। আমাদের জনগণ আগে থেকেই ভাষা এবং সংস্কৃতির সোনালী সুতোয় পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। কিছুদিন আগেই আমরা ইউপিআই এবং রূপে কার্ড-এর মতো মাধ্যমে মরিশাসকে আধুনিক ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রদান করেছি।
ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ বা ‘উন্নয়ন অংশীদারিত্ব’ আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আমাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব মরিশাসের বিভিন্ন অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তিক করে গড়ে উঠেছে। তা সে মরিশাসের ই.ই.জেড নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনগুলিই হোক কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ভারত সর্বদাই মরিশাসের প্রয়োজনগুলিকে সম্মান জানিয়েছে। তা সে কোভিড মহামারীর সংকট হোক কিংবা ‘অয়েল স্পিল’ : ভারত সর্বদাই তার মিত্রদেশ মরিশাসের জন্য ‘ফাস্ট রেসপনডার’-এর ভূমিকা পালন করেছে। মরিশাসের সাধারণ মানুষের জীবনে যাতে সার্থক পরিবর্তন আসে এটাই আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য। বিগত ১০ বছরে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন আর ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য মরিশাসের জনগণের জন্য পাঠানো হয়েছে। মরিশাসে মেট্রো লাইন উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে, বিভিন্ন গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ইএনটি হাসপাতাল, সিভিল সার্ভিস কলেজ এবং স্পোর্টস কমপ্লেক্স-এর মতো পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে অংশীদারিত্বের সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজকের এই দিনটি আমাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আন্তরিকভাবে আনন্দিত যে ২০১৫ সালে আগলেগার জনগণের উন্নয়নের জন্য আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আজ আমরা সেগুলি বাস্তবায়িত হতে দেখছি। ভারতে আজকাল এই প্রক্রিয়াকে ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ বা মোদির গ্যারান্টি বলা হচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা আজ একসঙ্গে যে পরিষেবাগুলির উদ্বোধন করলাম সেগুলির মাধ্যমে আপনাদের ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধি পাবে। মরিশাসের উত্তর এবং দক্ষিণ এলাকাগুলির মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে প্রশাসনিক সহযোগিতা সহজ হবে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। স্বাস্থ্য উপাচারের জন্য ও ইমার্জেন্সি এভাকুয়েশন এবং শিক্ষার জন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত সহজ হবে।
বন্ধুগণ,
ভারত মহাসাগর ক্ষেত্রে অনেক পরম্পরাগত এবং অপরম্পরাগত সমস্যার উদ্রেগ হচ্ছে। এই সমস্ত সমস্যা আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ভারত এবং মরিশাস মেরিটাইম সিকিউরিটি বা সামুদ্রিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অংশীদার। ভারত মহাসাগর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং স্থিরতা নিশ্চিত করতে আমরা সক্রিয়রূপে কাজ করছি। ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন’-এর তদারকি, যৌথ পেট্রোলিং, হাইড্রোগ্রাফি আর মানবিক সহায়তা ও বিপর্যয়ে ত্রাণ ও সুরক্ষা সকল ক্ষেত্রে আমরা মিলেমিশে সহযোগিতা করছি। আজ আগলেগা-তে এয়ারস্টিপ এবং জেটি উদ্বোধনের মাধ্যমে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে মরিশাসের ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
বন্ধুগণ,
আমি মহামান্য প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথজির প্রশংসা করছি যে তিনি মরিশাসে ভারতের মতো ‘জন ঔষধি কেন্দ্র’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এভাবে মরিশাস-ই প্রথম দেশ যারা আমাদের এই জন ঔষধি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে মরিশাসের জনগণ ভারতে নির্মিত উন্নতমানের জেনেরিক ঔষধের দ্বারা উপকৃত হবেন। মহামান্য প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ জগন্নাথজি, আপনার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং ডায়নামিক নেতৃত্বের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আগামীদিনেও আমরা সবাই মিলে ভারত ও মরিশাসের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে থাকবো। আমি আর একবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।