“যখন আমরা দেখি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের বোন ও মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার কাজে যুক্ত হয়েছেন, তখন মনে হয় আমরা সঠিক পথেই শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজির মতো মহান ব্যক্তিত্বদের যথাযথভাবে সম্মান জানাচ্ছি”
“যখন সরকার সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের ভাবনার উপর সরকারী প্রকল্পগুলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, যখন সব কা প্রয়াস রাষ্ট্রের উন্নয়নের শক্তিতে পরিণত হয়, তখন আমরা একটি সর্বজনীন সমাজ গড়ার কাজে এগিয়ে যাই।”
“আমাদের সংবিধান আমাদের অনেক অধিকার দিয়েছে। যখন আমরা সৎ ভাবে আমাদের কর্তব্য পালন করি, তখনই এই অধিকারগুলি রক্ষিত হয়”
“কেউ যদি কোথাও হেনস্থার শিকার হন, তাহলে অবশ্যই আপনি তার প্রতিবাদ করুন। এটি সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের কর্তব্য”
“ যদি কেউ রাজনৈতিক বিরোধের কারণে কাউকে হিংসার মাধ্যমে ভয় দেখায় ও হুমকি দেয়, তাহলে তা অন্যের অধিকার হননের সামিল। তাই সমাজের কোথাও হিংসা, অরাজক মানসিকতা নজরে আসলে তার বিরোধিতা করা আমাদের কর্তব্য”

জয় হরিবোল! জয় হরিবোল! শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে সকল পূণ্যার্থী, সাধু, গোসাই, পাগল, দলপতি ও মতুয়া মায়েদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও নমস্কার!

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শ্রী শান্তনু ঠাকুরজি, শ্রী মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুরজি, শ্রীমতী ছবি রানি ঠাকুরজি, শ্রী সুব্রত ঠাকুরজি, শ্রী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসজি, অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

এটা আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য যে গত বছর ওরাকান্দিতে স্বয়ং উপস্থিত হয়ে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরজি এবং মহান মতুয়া পরম্পরাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। আজ ঠাকুরবাড়ির মতো মহাতীর্থে আপনাদের মতো সমস্ত বন্ধুদের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আপনাদের সকলকে প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখার, আপনাদের দর্শনের সুযোগ পেয়েছি। যখন আমি সশরীরে ওরাকান্দি গিয়েছিলাম, তখন আপনাদের কাছ থেকে অনেক আন্তরিক ভালবাসা পেয়েছিলাম, অনেক আশীর্বাদ পেয়েছিলাম, আর ঠাকুরবাড়ি সর্বদাই আমাকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে, অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।

বন্ধুগণ,

এই মতুয়া ধর্মীয় মহামেলা আমার জন্যে মতুয়া পরম্পরাকে প্রণাম জানানোর একটি বড় সুযোগ। এই মহামেলা সেই মূল্যবোধগুলির প্রতি আস্থা ব্যক্ত করার বড় সুযোগ, যেগুলির ভিত্তি শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি স্থাপন করে গিয়েছিলেন। একে গুরুচাঁদ ঠাকুরজি এবং বড় মা আরও মজবুত করে তুলেছেন, আর আজ শান্তনুজির সহযোগিতায় এই পরম্পরা এই সময় ক্রমে আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। ঐক্যবদ্ধতা, ভারতীয়ত্ব, নিজের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতি সমর্পণ ভাব নিয়ে আধুনিকতাকে আপন করে নেওয়া – এই শিক্ষা আমরা মহান মতুয়া পরম্পরা থেকে পেয়েছি। আজ যখন আমরা স্বার্থের জন্য খুন-জখম হতে দেখি, যখন সমাজকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার চেষ্টা হয়, যখন ভাষা এবং আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বৈষম্য আনার প্রবৃত্তি দেখা যায়, তখন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজির জীবন, তাঁর দর্শন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেজন্য এই মেলা, এই মহামেলা, ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর মূল্যবোধকেও শক্তিশালী করে তোলে।

ভাই ও বোনেরা,

আমরা প্রায়ই বলি যে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সভ্যতা অনেক মহান। আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি এজন্যই মহান কারণ, এতে নিরন্তরতা রয়েছে, প্রবাহমানতা রয়েছে। এতে নিজেকে ক্ষমতায়িত করার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি রয়েছে। এটি একটি নদীর মতো, যা নিজের পথ তৈরি করে যেতে থাকে, আর পথে যতই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, সেই অনুসারে নিজেকে পরিবর্তিত করে নেয়। এই মহানতার কৃতিত্ব শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজির মতো সমাজ সংস্কারকদের, যাঁরা সমাজ সংস্কারের প্রবাহকে কখনও থামতে দেননি। শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের বার্তাগুলিকে আমি যতটা বুঝি, যা ‘হরি লীলা অমৃত’ পাঠ করলে বোঝা যায়, যা প্রতিনিয়ত এই সমন্বয়ের কথা বলে । শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি আজ থেকে দুই শতাব্দী আগেই কতটা দূরদর্শীতার সঙ্গে এই পথনির্দেশ করে গেছেন! আজ আমরা পৃথিবীতে যে ‘জেন্ডার সিস্টেম’-এর কথা বলি, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার কথা বলি, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি অষ্টাদশ শতাব্দীতেই সেই লিঙ্গ বৈষম্য দূর করাকে নিজের জীবনের ‘মিশন’ করে তুলেছিলেন। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের জন্য তিনি অনেক ভেবেছেন, অনেক কথা বলেছেন। মেয়েদের শিক্ষা থেকে শুরু করে মেয়েদের নানা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চকন্ঠ হয়েছেন। মা, বোন ও মেয়েদের গরিমাকে সামাজিক ভাবনা-চিন্তার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই দুই শতাব্দী আগেই তিনি মহিলা আদালত এবং মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের মতো উদ্যোগ নিয়েছেন। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে তাঁর চিন্তাভাবনা কেমন ছিল, তিনি কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, তাঁর ‘মিশন’ কী ছিল!

ভাই ও বোনেরা,

আজ যখন ভারত ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর অভিযানকে সফল করে তুলছে, যখন নানা উদ্যোগের মাধ্যমে মা, বোন ও মেয়েদের পরিচ্ছন্নতা, সুস্বাস্থ্য এবং আত্মাভিমান বা অস্মিতাকে প্রতিনিয়ত সম্মান জানাচ্ছে, যখন স্কুল-কলেজে মেয়েরা নিজেদের সামর্থ্য প্রদর্শন করার অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, যখন সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদের বোন ও মেয়েদের ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ নির্মাণের কাজে অবদান রাখতে দেখা যাচ্ছে, তখন মনে হয় যে আমরা প্রকৃত অর্থে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজির মতো মহান মহাপুরুষদের সম্মান জানাচ্ছি। যখন সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর ভিত্তিতে সরকারি প্রকল্পগুলিকে প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, যখন ‘সবকা প্রয়াস’ রাষ্ট্রের উন্নয়নের শক্তি হয়ে উঠছে, তখন আমরা সার্বিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত সমাজ নির্মাণের দিকে এগিয়ে চলেছি।

বন্ধুগণ,

ভারতের উন্নয়নে মতুয়া সমাজের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার যথাসম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে সমাজের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রত্যেক পরিবারের জীবন সহজ হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প দ্রুতগতিতে যাতে মতুয়া পরিবারগুলির কাছেও পৌঁছয়, তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। পাকা বাড়ি তৈরি, নলের মাধ্যমে জল, বিনামূল্যে রেশন, ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন, লক্ষ লক্ষ টাকার বিমা – এ ধরনের প্রত্যেক প্রকল্পের আওতায় ১০০ শতাংশ মতুয়া পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা জারি রয়েছে।

বন্ধুগণ,

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরজি সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছিলেন, যেটাকে আমরা স্বাধীনতার অমৃতকালে ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রেরণার উৎস করে তুলেছি। তিনি ঈশ্বরীয় প্রেমের পাশাপাশি আমাদের মনে কর্তব্যবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। পরিবারের প্রতি কর্তব্য, সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্বগুলিকে কিভাবে পালন করা হবে, তার ওপর তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। এই কর্তব্য সুসম্পন্ন করার ভাবনাকে আমরা জাতির বিকাশেরও ভিত্তি করে তুলতে চাই। আমাদের সংবিধান আমাদের অনেক অধিকার দিয়েছে। সেই অধিকারগুলিকে আমরা তখনই সুরক্ষিত রাখতে পারব, যখন আমরা নিজেদের কর্তব্যগুলিকে সততার সঙ্গে পালন করব। সেজন্য আজ আমি মতুয়া সমাজের সমস্ত বন্ধুদের কাছে কিছু অনুরোধ রাখতে চাই। আমাদের শাসন ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি হটানোর জন্য, আমাদের শাসন ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি মেটানোর জন্য, সমাজের প্রতিটি স্তরে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতাকে আরও বেশি করে বাড়াতে হবে। যদি কোথাও কোনও উৎপীড়নের ঘটনা ঘটে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সেখানে প্রত্যেককেই আওয়াজ তুলতে হবে। এটি আমাদের সমাজের প্রতি কর্তব্য আর রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যও। রাজনৈতিক গতিবিধিতে অংশ নেওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধের কারণে যদি কেউ কাউকে হিংসার মাধ্যমে থামিয়ে দেয়, ভয় দেখিয়ে, ধমকে, চমকে অন্য কাউকে থামিয়ে দেয়, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে অপরের অধিকার হনন। সেজন্য আমাদের কর্তব্য হল যে, হিংসা, অরাজকতার মানসিকতা যদি সমাজের কোনও স্তরে থাকে, তাহলে তার স্পষ্ট বিরোধিতা করতে হবে। স্বচ্ছতা ও সুস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে নিজের কর্তব্যগুলির প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। নোংরা আবর্জনাকে আমাদের বাড়ি ও গলি থেকে দূরে রাখতে হবে। এই অভ্যাসকে আমাদের শিষ্টাচারের অঙ্গ করে তুলতে হবে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর মন্ত্রকেও আমাদের জীবনের অঙ্গ করে তুলতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের তথা ভারতের শ্রমিকদের, কৃষকদের, মজুরদের ঘাম যে পণ্যে মিশে রয়েছে, আপনারা অবশ্যই সেই পণ্যই কিনবেন, আর সবচাইতে বড় কর্তব্য হল, ‘দেশ সবার আগে’ – এই নীতি। দেশের থেকে বড় কিছু হতে পারে না। আমাদের প্রতিটি কাজে দেশকে সর্বোপরি রেখেই চলতে হবে। কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমাদের এটা অবশ্যই ভাবতে হবে যে, এর মাধ্যমে দেশের মঙ্গল, দেশের কল্যাণ যেন অবশ্যই হয়।

বন্ধুগণ,

মতুয়া সমাজ নিজের কর্তব্যগুলির প্রতি সর্বদা সচেতন ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, স্বাধীনতার অমৃতকালে একটি নতুন ভারতের নির্মাণে আপনাদের সহযোগিতা এভাবেই পেতে থাকব। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM Modi congratulates hockey team for winning Women's Asian Champions Trophy
November 21, 2024

The Prime Minister Shri Narendra Modi today congratulated the Indian Hockey team on winning the Women's Asian Champions Trophy.

Shri Modi said that their win will motivate upcoming athletes.

The Prime Minister posted on X:

"A phenomenal accomplishment!

Congratulations to our hockey team on winning the Women's Asian Champions Trophy. They played exceptionally well through the tournament. Their success will motivate many upcoming athletes."