আমার মন্ত্রিসভার মাননীয় সদস্য ডঃ জিতেন্দ্র সিং-জি, শ্রী পি কে মিশ্রাজি, শ্রী রাজীব গৌবাজি, শ্রী ভি শ্রীনিবাসনজি এবং এখানে উপস্থিত সিভিল সার্ভিসেস-এর সকল সদস্য আর ভার্চ্যুয়ালি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়া সকল বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, সিভিল সার্ভিসেস বা অসামরিক পরিষেবা দিবস উপলক্ষে আপনাদের মতো সমস্ত কর্মযোগীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ যে বন্ধুরা এই পুরস্কার পাচ্ছেন, তাঁদের গোটা টিম এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেও আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। কিন্তু আমার এই অভ্যাস পুরোটা ঠিক নয়। সেজন্য আমি বিনামূল্যে শুভেচ্ছা জানাতে চাই না। আমরা কি এর সঙ্গে কিছু জিনিসকে যুক্ত করতে পারি? এটা এমনি আমার মনে হয়েছে, একটা ভাবনা এসেছে, কিন্তু আপনারা তাকে নিজেদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সিস্টেমের দাড়িপাল্লায় এমনি মাপতে শুরু করে দেবেন না। যেমন আমরা এটা বলতে পারি যে, যেখানে আমাদের সিভিস সার্ভিসেস-এর সঙ্গে যুক্ত যতগুলি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, তা সে বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে হোক কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে, পুলিশ বিভাগের অধীনে হোক অথবা মুসৌরিতে হোক, কিংবা রেভেনিউ হোক, যেখানে যেখানে আপনাদের প্রশিক্ষণ হয়, প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা বলছি। কারণ অনেকটাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই বিপুল কর্মকাণ্ড চলছে। প্রত্যেক সপ্তাহে এক-দেড় ঘন্টা ভার্চ্যুয়ালি এই যত পুরস্কার বিজেতা রয়েছেন, তাঁরা শুধু নিজের রাজ্য থেকেই এই সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটি কেমন করে, কিভাবে শুরু করেছিলেন, কী কী সমস্যা এসেছিল, তার সম্পূর্ণ প্রেজেন্টেশন ভার্চ্যুয়ালি এই সমস্ত ট্রেনিদের সামনে তুলে ধরবেন। তাঁরাও প্রশ্ন করবেন, আপনারা উত্তর দেবেন, আর এভাবে প্রত্যেক সপ্তাহে পুরস্কার বিজেতাদের সঙ্গে যদি তাঁদের বিশেষ আলাপ-আলোচনা হয় তাহলে আমি মনে করব যে নতুন প্রজন্ম উঠে আসছে। তাঁরা এই কথাবার্তার মাধ্যমে একটি প্র্যাক্টিকাল অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। আর সেজন্য যাঁরা এই পুরস্কারগুলি অর্জন করেছেন, তাঁদের মনে কাজের প্রতি যুক্ত থাকার একটি পুলক জাগবে। ধীরে ধীরে তাঁদের কাজে আরও ইনোভেশন বা উদ্ভাবন দেখা যাবে, অ্যাডিশন বা সংযুক্তি দেখা যাবে।
আরও একটি কাজ। এই যে আজ ১৬ জন বন্ধু এই পুরস্কার পেলেন, আমরা সবাই দেশের বৈদিক জেলাগুলির সিভিল সার্ভেন্টদের এখানে আমন্ত্রণ জানাতে পারি। এই ১৬টির মধ্য থেকে আপনারা যে কোনও একটি স্কিমকে বেছে নিন। যে কোনও একজন ব্যক্তিকে ইনচার্জ করে দিন, আর আপনারা পরিকল্পনা করুন যে তিন মাস, ছয় মাসের প্রোগ্রামের অন্তর্গত এগুলিকে কিভাবে বাস্তবায়িত করবেন? নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কী কী করবেন? আর মনে করুন, গোটা দেশের মধ্যে ২০টি জেলা এমন বেরিয়ে এল, যারা একটি নির্দিষ্ট স্কিমকে নিয়েছে। তাহলে তখন সেই ২০টি জেলার ভার্চ্যুয়াল সামিট করে, যে ব্যক্তির নেতৃত্বে যে টিম সাফল্যের সঙ্গে এই কাজ করেছে, তাঁদের সঙ্গে সকলের কথাবার্তা হোক। আর রাজ্যগুলির মধ্য থেকে এগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কারা সবচাইতে ভালো করছে, কারা টপ করছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিমাপ করে সেই জেলাটি কিভাবে কাজ করেছে, তার মতো করে অন্যদের পরিবর্তিত করার জন্য আমরা কী কী করতে পারি? এভাবে গোটা দেশে ‘ওয়ান স্কিম ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট’ হিসেবে এই প্রতিযোগিতাকে আরও ওপরে নিয়ে আসতে পারি কিনা? এভাবে যখন এক বছর পরে পরস্পরের সঙ্গে দেখা হবে, তখন সে বিষয়ে সাফল্য বা সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধানগুলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলুন। এখন তাঁদেরকে আর পুরস্কার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কথা তো চলতে পারে যে ভাই, এই যে স্কিমটি, ২০২২-এ এই স্কিমে যাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে, তাঁরা তাঁদের কাজকে এতদূর পৌঁছে দিয়েছে। যদি আমি মনে করি যে আমরা একে নিছকই প্রাতিষ্ঠানিক করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক করছি, তাহলে আমি দেখেছি যে সরকারের স্বভাব, যতক্ষণ পর্যন্ত তা কোনও কাগজের চৌকাঠ পার হয়ে কিছু বেরিয়ে না আসে, ততদিন সেই জিনিসটা এগিয়ে যেতে পারে না। সেজন্য কোনও জিনিসকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে হলে, এর জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়, আর প্রয়োজন হলে এমন একটা ব্যবস্থাও দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। তাহলে এমনও হতে পারে যে আদারওয়াইজ বা ভিন্নভাবে কী হবে, সেটা বোঝা যাবে! কেউ একজন ভাবতেই পারেন যে, ভাই চলুন, কিছু মানুষ তো এরকমও হয় যাঁরা মনে যেটা ভাবেন, সেটাই করে ছাড়েন। তাঁরা যদি ভাবেন, আমাকে অ্যাচিভ করতে হবে, অর্জন করতে হবে তাহলে ৩৬৫ দিন তাঁদের মস্তিষ্কে ওই রোখটাই চেপে থাকে। সবকিছুকে তাঁরা এটার সঙ্গে জুড়ে দেন, আর এক-আধটি বিষয় অর্জন করে নেন, আর পুরস্কারও পেয়ে যান। কিন্তু বাকি দিকগুলির দিকে যদি তাকান, সেখানে তাঁরা হয়তো অনেকটা পিছিয়ে পড়ে থাকেন। তাহলে এ ধরনের ত্রুটিগুলিও আর টের পাওয়া যায় না। একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কিছু নতুন ভাবতে হবে। তাহলে হয়তো আমরা যেটা চাইছি যে একটা পরিবর্তন আসুক, হয়তো আমরা তখন সেই পরিবর্তন দেখতে পাব।
বন্ধুগণ,
আপনাদের মতো কর্মযোগী বন্ধুদের সঙ্গে এ ধরনের বার্তালাপ করতে আমার খুব ভালো লাগে। সম্ভবত, ২০-২২ বছর ধরে ঠিক সময়মতো আমি এই কাজটি করে আসছি। আগে আমি মুখ্যমন্ত্রী রূপে করতাম, একটা ছোট পরিধির মধ্যে করতাম। প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার পর একটি বড় পরিধির মধ্যে করি, আর অনেক বড় বড় মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। সেজন্য একভাবে আমি আপনাদের কাছ থেকে প্রতি বছরই অনেক কিছু নতুন নতুন শিখি, আবার অনেক কথা আপনাদের কাছে পৌঁছেও দিতে পারি। এভাবে এই বার্তালাপ আমার সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগের একটি খুব ভালো মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একটা পরম্পরা তৈরি হয়েছে। আর আমি অত্যন্ত আনন্দিত, আমি খুব খশি যে আমাদের মধ্যে করোনার কালখণ্ড কিছুটা সমস্যাসঙ্কুল হলেও, নিয়মিত দেখা করতে না পারলেও, সব সময়ই আমার চেষ্টা ছিল যে আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে থাকি, আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে থাকি, অনেক কিছু বোঝার চেষ্টা করি, আর যদি সম্ভব হয় তাহলে যদি আপনাদের কাছ থেকে শেখা উন্নত জীবনধারণের দিশা আমার ব্যক্তিগত জীবনে রপ্ত করতে পারি তাহলে তা করি। আর কোথাও ব্যবস্থার মধ্যে যদি পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। এটাই একটি প্রক্রিয়া যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রত্যেকের কাছ থেকে শেখার সুযোগ থাকেই। প্রত্যেকের কাছেই কিছু না কিছু দেওয়ার সামর্থ্য থাকে, আর যদি আমরা সেই ভাবকে বিকশিত করতে পারি, তাহলে স্বাভাবিক রূপেই সেগুলিকে স্বীকার করার, মেনে নেওয়ার, নিজের জীবনে প্রয়োগ করার ইচ্ছাও জাগে।
বন্ধুগণ,
এবারের এই আয়োজন সেই রুটিন প্রক্রিয়ার অন্তর্গত নয়। এবারের এই আয়োজনকে আমি অত্যন্ত বিশেষ বলে মনে করি। এটিকে এজন্যই বিশেষ বলে মনে করছি কারণ, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে যখন দেশ ৭৫ বর্ষ পূর্তি পালন করছে, তখন আমরা এই সমারোহে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছি। আমরা কি একটি কাজ করতে পারি? আমি মনে করি যে এটা আমরা করতেই পারব কারণ, কিছু জিনিস হয় যা সহজ রূপে নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় আমাদের মাতিয়ে তোলে। মনে করুন, আপনি যে জেলায় কাজ করেন, বিগত ৭৫ বছর ধরে সেই জেলার প্রধান রূপে যাঁরা যাঁরা কাজ করেছেন –তাঁদেরকে কোনও উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ করলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে অনেকেই হয়তো এখনও বেঁচে আছেন আবার অনেকে নেই। যারা বেঁচে আছেন, তাঁরাই আপনার সম্পদ। এই স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবকে উপলক্ষ্য করে একবার আপনার জেলায় তাঁদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। তাঁদেরও ভালো লাগবে, প্রায় ৩০-৪০ বছর পর আমন্ত্রণ পেয়ে তাঁরা সেখানে যাবেন। আপনাদেরও ভালো লাগবে, তাঁদের সঙ্গে পুরনো মানুষদের দেখা-সাক্ষাৎ, পুরনো ঘটনার স্মৃতি, পুরনো সাফল্যের বর্ণনা – এগুলি আপনাকে উজ্জীবিত করবে। অর্থাৎ, সেই জেলা ইউনিটে কেউ ৩০ বছর আগে হয়তো কাজ করেছেন, কেউ হয়তো ৪০ বছর আগে কাজ করেছেন। তাঁরা যখন এবার বাইরে থেকে নিজেদের জীবনের কিছু কিছু ব্যর্থতা আর সম্পূর্ণ সাফল্যের খতিয়ান নিয়ে সেখানে আসবেন, তখন তাঁরা আপনার টিমের জন্য একটি নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে আসবেন, আর যাঁরা সেখানে রয়েছেন, তাঁদেরও ভালো লাগবে যে ইনি দেশের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি! এক সময় এখানে ছিলেন, এখন ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন! তাঁদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হয়ে উঠবে, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা এই লক্ষ্যে সেই ক্ষমতাবান মানুষের সাহায্যে অতি সহজে অনেক সমস্যারও সমাধান করে ফেলতে পারব। কাজেই এ ধরনের চেষ্টা করা উচিৎ। আমার মাথায় এরকম ভাবনা এজন্য এসেছে, আপনাদের বলছি, হয়তো আমি নাম ভুলে গিয়েছি, গোডবোলেজি ছিলেন নাকি দেশমুখজি! ক্ষমা করবেন আমাকে, আমি নামটা ভুলে গিয়েছি। তিনি আমাদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি এমনকি অবসর গ্রহণের পরও নিজের সম্পূর্ণ সময় তাঁর পুরনো জেলাগুলিতে ঘুরে ঘুরে নবীন প্রশাসকদের নানা রকম পরামর্শ দিয়ে তাঁদেরকে সাহায্য করে গেছেন। তিনি একবার গুজরাটে জন্ডিস নিবারণ বিষয়ক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য এসেছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন তো সংযুক্ত মুম্বাই রাজ্য ছিল। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট আলাদা রাজ্য ছিল না। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তিনি এক সময় বনাসকাঁঠায় ছিলেন সেখানকার ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর হিসেবে, আর তারপর মহারাষ্ট্র গঠিত হলে তিনি মহারাষ্ট্র ক্যাডারে চলে যান, আর তারপর দীর্ঘকাল মহারাষ্ট্রে সেবা করার পর তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদে চলে যান। কিন্তু এইটুকু শুনেই আমার মন তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আমি তাঁর ভক্ত হয়ে পড়ি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, সে সময় বনাসকাঁঠা ক্যাডারে কেমন কাজ হত? আপনারা কিভাবে কাজ করতেন? অর্থাৎ, অনেক ছোট ছোট বিষয় থাকে, কিন্তু তার সামর্থ্য অনেক বড় হয়। আর একটি মনোটোনাস জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য ব্যবস্থায় প্রাণশক্তি সঞ্চারের খুব প্রয়োজন হয়। ব্যবস্থাকে এগোতে হলে তাকে জীবন্ত করে তুলতে হয়। ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলতে হয়। আর যখন পুরনো মানুষদের সঙ্গে দেখা হয় তখন তাঁদের সময়ে ব্যবস্থা কিভাবে বিকশিত হয়েছিল, সেই ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফরমেশন, সেই প্রেক্ষিত সংগ্রহ করুন, ভালোভাবে জানুন।আমাদের সেই পরম্পরাকে চালানোর জন্য নয়, তেমনভাবে বদলানোর জন্যও নয়। কোনটা চালাব আর কোনটা বদলাব সেটা বোঝার জন্য আগের অভিজ্ঞতা অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়। আমি চাইব যে স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আপনারা নিজেদের জেলায় যাঁরা আগে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর রূপে কাজ করে গেছেন, সম্ভব হলে তাঁদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের কর্মসূচি তৈরি করুন। আপনাদের সেই সাক্ষাৎ আপনাদের গোটা জেলার জন্য এক একটি নতুন অভিজ্ঞতার ডালি নিয়ে আসবে। তেমনই রাজ্যে যাঁরা চিফ সেক্রেটারি রূপে কাজ করে গেছেন, একবার যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে ডেকে নেন, দেশে যাঁরা ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রূপে কাজ করেছেন তাঁদেরকে যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী একবার ডেকে নেন, তাহলে এমনও হতে পারে যে স্বাধীনতার অমৃতকালে বিগত ৭৫ বছরের এই যাত্রাপথে যাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউ হয়তো সর্দার প্যাটেলের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন, এই আজকে যেমন সিভিল সার্ভিসেস পুরস্কার অনেকে পাচ্ছেন সেরকম পুরস্কার হয়তো কেউ সর্দার প্যাটেলের হাত থেকে পেয়েছেন। এরকম সফল নেতৃত্ব প্রদানকারী মানুষের মধ্যে আজ যাঁরা জীবিত আছেন, দেশের অগ্রগতির জন্য যাঁরা কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন, আজ দেশ যেখানে পৌঁছেছে সেখানে পৌঁছে দিতে তাঁদের নেতৃত্ব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তাঁদের সবাইকে স্মরণ করা, তাঁদেরকে মান-সম্মান করা – এটাও স্বাধীনতার অমৃতকালে এই গোটা সিভিল সার্ভিসেসকে অনার করার মতো, সম্মানিত করার মতো বিষয় হয়ে উঠবে। আমি চাইব, এই ৭৫তম বর্ষ পূর্তির যাত্রার সাফল্যকে আমরা তাঁদের প্রতি সমর্পিত করি, তাঁদের গৌরব গান করি আর একটি নতুন চেতনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই, আর এই লক্ষ্যে আমরা অবশ্যই নতুন নতুন চেষ্টা করতে পারি।
বন্ধুগণ,
আমাদের যে অমৃতকাল, এই অমৃতকালে আমাদের যে শুধুই বিগত সাত দশকের জয় জয়কার করতে হবে এমনটা নয়। আমি মনে করি আমরা ৭০ বছর থেকে ৭৫-এ হয়তো এসে পৌঁছেছি, স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই, রুটিনের মধ্যেই পৌঁছেছি। ৬০ থেকে ৭০-এ পৌঁছেছি, ৭০ থেকে ৭৫-এ পৌঁছেছি, রুটিনের মধ্যেই পৌঁছেছি। কিন্তু ৭৫ থেকে ১০০, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত পৌঁছতে এই রুটিন হলে চলবে না। এই রুটিনের মাধ্যমে আমরা ‘india@100’-এ পৌঁছতে পারি না। আমাদের আজকের অমৃত মহোৎসবে এটাই একটা ‘ওয়াটার শেড’ হতে পারে, যাতে এখন আগামী ২৫ বছরকে আমাদের একটি একক রূপেই দেখা উচিৎ। বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিৎ নয়। আর আমাদের ‘india@100’ তে সুপরিকল্পিত ভাবে পৌঁছাতে, এখন থেকেই তার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুতে হবে, আর এই লক্ষ্য যে গোটা দেশের জন্য একরকম হতে হবে তা নয়, আপনি যে জেলায় কাজ করেন, আগামী ২৫ বছরে আপনার জেলা কোথায় পৌঁছবে? আমরা এই জেলাকে ২৫ বছর পর কিরকম দেখতে চাই - সেটা আপনার সামনে টেবিলে কাগজের ওপর লিখিতভাবে পরিকল্পনা ছকে নিতে হবে আর তা আপনার জেলার অফিসগুলিতে টাঙিয়ে দিতে হবে। আমাদের এই এই ক্ষেত্রে এতটা অর্জন করতেই হবে। তাহলে আপনারা দেখবেন, এর সঙ্গে একটি নতুন প্রেরণা, নতুন উৎসাহ, নতুন উদ্দীপনা যুক্ত হবে, আর মাল্টিপ্লায়ার অ্যাক্টিভিটি বা গুণিতক সক্রিয়তা নিয়ে আমরা জেলাকে ওপরে নিয়ে যাচ্ছি। আর এখন কেন্দ্র আমাদের। ভারত কোথায় পৌঁছবে, রাজ্য কোথায় পৌঁছবে, আমরা ৭৫ বছর এই সমস্ত লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছি। এখন আমাদের সামনে রয়েছে ‘india@100’। এখন আর দেশ, রাজ্যের কথা ভেবে লাভ নেই। আমাদের জেলাকে আমরা আগামী ২৫ বছরে কোথায় নিয়ে যাব? গোটা দেশের নিরিখে আমার জেলাকে এক নম্বরে পৌঁছে দিয়ে ছাড়ব। এমন কোনও ক্ষেত্র বাকি থাকবে না, যেখানে আমার জেলা পিছিয়ে থাকবে। যতই প্রাকৃতিক সমস্যাসঙ্কুল জেলা হোক না কেন, আমরা যা ভেবেছি তা করে ছাড়ব। এই প্রেরণা, এই উদ্দীপনা, এই স্বপ্ন, এই সঙ্কল্প আর সেগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য ক্রমাগত পৌরুষ, পরিশ্রম আর সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের জন্য, আমাদের সিভিল সার্ভিসেস-এর জন্য নতুন প্রেরণার কারণ হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
প্রত্যেক ভারতবাসী আজ আপনাদের দিকে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাকিয়ে আছেন, তা পূরণ করার জন্য আপনাদের প্রচেষ্টায় যেন কোনও ত্রুটি না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে আজ আপনাদেরও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে হবে। তিনি তাঁর একটি বার্তার মাধ্যমে আমাদেরকে যেমন প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন, তাঁর সেই বার্তায় তিনি যে সঙ্কল্পের জন্য আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন, আমাদের সেই সঙ্কল্পগুলিকে আরও একবার উচ্চারণ করতে হবে। আমাদের আরও একবার নিজেদেরকে তার জন্য বচনবদ্ধ করতে হবে, শপথ নিতে হবে। এখান থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি, আর আমাদের সামনে তিনটি লক্ষ্য স্পষ্ট থাকা চাই। আমি মনে করি, এই তিনটি লক্ষ্যে কোনও কম্প্রোমাইজ হওয়া উচিৎ নয়। কারণ, এই তিনটি লক্ষ্যই এমন নয় যে এখানে অন্য কিছু হতে পারে। এই তিনটি লক্ষ্য ছাড়া আরও অন্য লক্ষ্য থাকতে পারে। কিন্তু আজ আমি এখানে কেবল এই তিনটি লক্ষ্য নিয়েই কথা বলতে চাই। প্রথম লক্ষ্য হল যে অবশিষ্টে আমাদের এই দেশে যে ব্যবস্থাই চালাই না কেন, যতটা বাজেটই খরচ করি না কেন, যে পদ, প্রতিষ্ঠা আমরা অর্জন করি না কেন, সেগুলি সব কাদের জন্য মশাই! এগুলি সব কেন মশাই! এই পরিশ্রম কিসের জন্য মশাই? এই আড়ম্বর কিসের জন্য মশাই! এই কথাগুলি ভাবুন। সেজন্যই আমি বলতে চাইব যে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হল দেশের সাধারণ গরীব মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা। তাঁদের জীবনকে সুগম করে তোলা। এই অনুভব আপনাদের প্রত্যেকের মনে থাকতে হবে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য তাঁদের যেন সরকারি দপ্তরগুলিতে বেশি দৌড়-ঝাঁপ না করতে হয়, সবকিছু যেন তাঁরা সহজভাবে পেতে পারেন। এই লক্ষ্যটাই সদা-সর্বদা আমাদের সামনে থাকা উচিৎ। আমাদের প্রচেষ্টা এই লক্ষ্যে হওয়া উচিৎ যে দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্নগুলিকে যেন সঙ্কল্পে পরিবর্তিত করতে পারি। তাঁদের স্বপ্নগুলিকে কিভাবে সঙ্কল্পে পরিবর্তিত করতে পারব, সেই স্বপ্নগুলিকে সঙ্কল্পে পরিবর্তনের যাত্রাপথে একটি পজিটিভ অ্যাটমসফিয়ার, একটি ইতিবাচক এবং স্বাভাবিক আবহ কিভাবে সৃষ্টি করব, এটা আপনাদের দায়িত্ব, এটা সরকারি ব্যবস্থার দায়িত্ব। আমাদের সকলের হাতে সেই কর্তৃত্ব রয়েছে, সেই ক্ষমতা রয়েছে। আপনাদের শুধু এটা দেখতে হবে যে দেশের নাগরিকদের সঙ্কল্পগুলিকে বাস্তবায়নের যাত্রাপথে কোন বাধা আসছে কিনা। যদি আসে তাহলে তাহলে নিজের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই বাধাকে দূর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সঙ্কল্প বাস্তবায়িত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। সেজন্য স্বপ্নগুলিকে সঙ্কল্পে পরিণত হতে হবে, আর সঙ্কল্পগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ যাত্রাপথে আমাদের নেতৃত্বাধীন সম্পূর্ণ টিমের প্রত্যেকের সঙ্গে সহযোদ্ধার মতো হাতে হাত ধরে কাজ করে এগোতে হবে। আপনার এলাকার সাধারণ মানুষের ‘ইজ অফ লিভিং’-কে বাড়ানোর জন্য আপনারা যা যা করতে পারেন, যেভাবে করতে পারেন, সেটাই আপনাদের করা উচিৎ।
আমি যদি দ্বিতীয় লক্ষ্যের কথা বলি, তাহলে আজ আমরা যে গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের কথা শুনি, বিগত কয়েক দশক ধরেই আমরা শুনে আসছি, সম্ভবত তখন ভারত দূর থেকে এই বিষয়গুলিকে দেখছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। আজ ভারতের ‘পজিশনিং’ বা অবস্থানগত নীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমরা দেশের মধ্যে যাই করি না কেন, তাকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে করা এখন আমাদের জন্য সময়ের চাহিদা। ভারত বিশ্বে কিভাবে শীর্ষ স্থানে পৌঁছবে, যদি বিশ্বের গতিবিধিকে না বুঝতে পারি, না মাপতে পারি, না জানতে পারি যে আমাদের কোথায় যেতে হবে, তাহলে কেমন করে চলবে! আমাদের শীর্ষ স্থানে যেতেই হবে,আর তার জন্য আমাদের কোন পথ ধরে চলতে হবে, কোন কোন এলাকা দিয়ে যেতে হবে, এটা আমাদের চিহ্নিত করে আর তার তুলনামূলক গবেষণা করে তবেই এগোতে হবে। আর এভাবেই এগোতে হবে। আমাদের যত প্রকল্প, আমাদের গভর্ন্যান্সের যে মডেল রয়েছে, তাকে আমরা এই সঙ্কল্পের সঙ্গে বিকশিত করব। আমাদের এমনটি করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমাদের এমন চেষ্টা করতে হবে যাতে এতে নবীনতার ছোঁয়া লাগে, আমাদের আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আমরা বিগত শতাব্দীর ভাবনা, বিগত শতাব্দীর নিয়ম-নীতি নিয়ে আগামী শতাব্দীতে নিজেদের মজবুত করার সঙ্কল্পগুলিকে নিতে পারি না, আর সেজন্য আমাদের ব্যবস্থায়, আমাদের নিয়মে, আমাদের পরম্পরায় আগে কোনও পরিবর্তন আনতে ৩০-৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও চলত। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্বে, আর দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তের হিসেবে চলতে হবে বলে আমার মনে হয়। যদি আমি আজ তৃতীয় লক্ষ্যের কথা বলি যা এক প্রকার আমি পুনরুচ্চারণ করছি, কারণ এই কথাটি আমি বারবার বলে আসছি, সিভিল সার্ভিসেস-এর সবচাইতে বড় কাজ হল, কখনও আমাদের লক্ষ্য যেন আমাদের চোখের সামনে থেকে না সরে যায়। ব্যবস্থায় আমরা যখন যে পদেই থাকি না কেন, কিন্তু আমরা যে ব্যবস্থা থেকে উঠে এসেছি, সেই ব্যবস্থায় আমাদের এটা প্রাইম রেসপনসিবিলিটি বা প্রধান দায়িত্ব হল দেশের ঐক্য এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করা। এক্ষেত্রে আমরা কোনও কম্প্রোমাইজ করতে পারি না। এক্ষেত্রে কোনরকম সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। স্থানীয় স্তরেও আমরা যখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিই, তখন সেই সিদ্ধান্ত যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, প্রশংসা কুড়াক না কেন, আকর্ষণীয় লাগুক না কেন, কিন্তু অন্তিম পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমাদের ওই দেশের একতা ও অখণ্ডতার দাড়িপাল্লাতেও একবার মেপে নিয়ে দেখতে হবে। এটা ভাবতে হবে যে একটি ছোট্ট গ্রামে আমি যে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি, সেটি সেখানে যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, তা কি দেশের একতা ও অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে? আমি কোনও বৈষম্যের বীজ বপন করছি না তো? আজ তো এটিকে দেখতে ও শুনতে খুবই ভালো লাগছে, প্রিয় লাগছে, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে মহাত্মা গান্ধী প্রায়ই ‘শ্রেয়’ এবং ‘প্রেয়’-র মধ্যে তুলনামূলক দৃষ্টান্ত দিতেন। আমাদের সেই পরামর্শগুলি পড়ে নেওয়া উচিৎ। আমাদের নেতিবাচকতা ছেড়ে এটাও দেখা উচিৎ যে, আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত দেশের একতাকে শক্তিশালী করার স্পিরিটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কিনা। শুধু তা দেশের একতা ও অখণ্ডতাকে ভাঙছে না - এটাই যথেষ্ট নয়, আমাদের সিদ্ধান্ত দেশের একতা ও অখণ্ডতাকে আরও মজবুত করে তুলছে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। বৈচিত্র্যময় ভারতের মধ্যে আমাদের ক্রমাগত একতার মন্ত্রকে সম্বল করে সমস্ত সমস্যার সমাধান করে যেতে হবে, আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এটাই করে যেতে হবে। কিভাবে তা করব তা পথও আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য আমি আগেও বলেছি, আজ আরও একবার বলছি এবং ভবিষ্যতেও বলতে থাকব। আমাদের প্রত্যেক কাজের মূলমন্ত্র একটাই হওয়া উচিৎ - ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট, নেশন ফার্স্ট’। আমার দেশ সবার ওপরে, আমার দেশকে সর্বোপরি রেখেই আমাদের যেখানে পৌঁছতে হয় সেখানে পৌঁছব। গণতান্ত্রিক দেশে শাসন ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের দ্বারা সঞ্চালিত হতে পারে, আর এটাও গণতন্ত্রে প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রশাসনের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার কেন্দ্রে থাকে দেশের একতা ও অখণ্ডতা, আর নিরন্তর ভারতের একতাকে মজবুত করার মন্ত্রকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
এখন যেমন আমরা কখনও জেলাস্তরে কাজ করি, বা রাজ্যস্তরে কাজ করছি, আবার কখনও কেন্দ্রীয় স্তরে কাজ করি। প্রত্যেক স্তরের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সার্কুলার জারি করা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন, নতুন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি মেনে আমাদের নিজের জেলার জন্য কী কী করতে হবে! এর মধ্যে কোনগুলি যথারীতি আমাদের জেলায় রয়েছে, আর কোনটা নতুন করে বাস্তবায়িত করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত তো আপনাদেরই নিতে হবে! এবারের অলিম্পিকের পর দেশের মধ্যে খেলাধূলার প্রতি যে সচেতনতা বেড়েছে সেটা আমরা সবাই অনুভব করছি। সেই সচেতনতাকে আমাদের জেলাস্তরে একভাবে ইনস্টিটিউশনালাইজ করে বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে প্রত্যেকের জেলাতেও কিভাবে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলি কে নেবে? এক্ষেত্রে নেতৃত্ব কে দেবে? এর জন্য কি ক্রীড়া বিভাগ দায়িত্ব নেবে, নাকি সম্পূর্ণ টিমের দায়িত্ব থাকবে? এখন যদি আমি ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা বলি, তাহলে কি আমার জেলায় ডিজিটাল ইন্ডিয়ার জন্য কিছু করার কথা আমি একটি টিম তৈরি করে ভাবতে পারি না? আজ পথ দেখানোর জন্য নতুন কিছু করতে হলে এমন প্রয়োজন সব সময় পড়ে না। এখন যেমন, আজ এখানে দুটি কফি টেবিল বুক-এর লঞ্চিং রয়েছে, কিন্তু একথা ভুললে চলবে না যে এই কফি টেবিল বুক-এর কোনও হার্ডকপি নেই। ই-কপি আছে। আমরা কি আমাদের জেলায় এর হার্ডকপি তৈরি করে বিতরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি? না হলে আমরা শয়ে শয়ে কপি ছেপে দেব, আর তারপর সেটা নেওয়ারই কেউ থাকল না। আমরা অবশ্যই বানাব যদি আজ আমরা দেখতে পাই যে এখানে ই-কফি টেবিল বুক তৈরি হয়েছে, তার মানে আমাদেরও অভ্যাস তৈরি করতে হবে যে প্রয়োজন পড়লে আমরাও ই-কফি টেবিল বুকই বানাব। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলি, জিনিসগুলিকে পার্কোলেট করা বা পরিশ্রুত করার ক্ষেত্রে আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা যেন আলাদা করে বলতে না হয়। আমার বলার তাৎপর্য এটাই যে আজ জেলাগুলিকে গাইড করার জন্য যে আলাদা কোনও ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, তার কোনও প্রয়োজন নেই। সবকিছু অ্যাভেইলেবল রয়েছে, পর্যাপ্ত রয়েছে। জেলায় কোনও জিনিসকে বাস্তবায়িত করতে জেলার পুরো টিমকে দায়িত্ব নিতে হবে, তাঁদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে, তাঁদেরকেই অর্জন করতে হবে। তাহলে অন্যান্য কাজের ওপরও এর পজিটিভ ইম্প্যাক্ট বা ইতিবাচক প্রভাব নিজে থেকেই পড়তে শুরু করবে।
বন্ধুগণ,
ভারতের মহান সংস্কৃতির এটাই বিশেষত্ব যে আমরা দেশের কথা ভাবব, আর একথা আমি অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে আমাদের দেশ রাজ্য ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশ রাজ সিংহাসনগুলির উত্তরাধিকার বহন করে না। রাজ সিংহাসনগুলির সাহায্যেও এই দেশ গড়ে ওঠেনি। এই দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে, হাজার হাজার বছর ধরে, দীর্ঘ কালখণ্ড ধরে, নিজস্ব পরম্পরা অনুসরণ করেই গড়ে উঠেছে। এই পরম্পরা হল – জনসাধারণের সামর্থ্যকে সঙ্গে নিয়ে চলার পরম্পরা। আজ আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, যা কিছু পেয়েছি তা গণ-অংশীদারিত্বের তপস্যার পরিণাম, গণশক্তির তপস্যার পরিণাম। গণ-অংশীদারিত্ব ও গণশক্তির তপস্যাই কোনও দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অবদান রেখে, সময়ের চাহিদা অনুসারে সমস্ত প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে সেই পরিবর্তনগুলিকে স্বীকার করে, আর যা কিছু কালবাহ্য তাকে বর্জন করে ভারত এগিয়েছে। আমরা সেই সমাজ, আমরা সেই জীবন্ত সমাজ, যেখানে সমাজ নিজেই সময়ের অনুপযোগী পরম্পরাগুলিকে ভেঙেচুড়ে উঠিয়ে ফেলে দিতে পারে। আমরা চোখ বন্ধ করে কোনও কিছুকে ধরে বেঁচে থাকার মতো মানুষ নই। আমরা সময়ের সঙ্গে সময়ানুকূল পরিবর্তনের মাধ্যমেই এগিয়ে যাওয়া জনগণ। বিশ্বে …, আমি একদিন …, অনেক আগের কথা, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তখন তো রাজনীতিতে আমার তেমন কোনও পরিচয় গড়ে ওঠেনি। আমি আমার দলের একজন ছোট কর্মকর্তা ছিলাম। কোনও কারণে আমার কিছু বিষয় সমাধানের জন্য আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছিল। সেখানে আমার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল আমি বলেছিলাম, বিশ্বের কোথাও যদি কোনও সমাজ আস্তিক হয় বা নাস্তিক হয়, কেউ এই ধর্মকে মানে, কেউ ওই ধর্মকে মানে, কিন্তু মৃত্যুর পর কী হবে - এই বিষয় নিয়ে কেউ বেশি কথা বলার চেষ্টা করেনা, বা পূর্ব ধারণাগুলি অনুসারে যা যা আমরা জানি তাকে পরিবর্তন করার সাহস কেউ করে না। কেউ বৈজ্ঞানিক হতে পারেন, কেউ অন্য কিছু। কিন্তু সময় থাকতে পৃথিবী ছেড়ে কেউ চলে যেতে পারে কিনা, এ নিয়ে কথা বলার সাহস কেউ করেন না। যিনি যে রকম ধর্মীয় পরিবেশে বা পরম্পরা অনুসারে বড় হয়েছেন, মৃত্যুর পর কী হবে সেই প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন প্রত্যেকেই সেই পরম্পরার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস রাখেন না। আমি আরও বলেছিলাম, হিন্দু একটা এমন সমাজ, ভারতে হিন্দুদের একটি এমন সমাজ রয়েছে, যাঁদের অনেককে মৃত্যুর পর গঙ্গার তীরে চন্দন কাঠের চিতায় শরীর জ্বালিয়ে দিলে তাঁদের মনে হয় যে আমার অন্তিম সংস্কার পূর্ণ হয়েছে। সেই ব্যক্তি ঘুরতে ঘুরতে যখন ইলেক্ট্রিক শ্মশান ভূমিতে চলে যান, তখনও তাঁর কোনও লজ্জা করে না। এই সমাজ পরিবর্তনশীলতায় কতটা নমনীয়, এই নমনীয়তা আমাদের একটি কতো বড় শক্তি, তার সপক্ষে এর থেকে বড় উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না। বিশ্বে যতই আধুনিক সমাজ থাক না কেন, মৃত্যুর পর তাঁদের যে ধারণা, তাকে পরিবর্তনের সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু আমরা সেই সমাজের মানুষ, এই মাটিতে সেই শক্তি রয়েছে যে আমরা মৃত্যুর পরও বিভিন্ন ব্যবস্থায় যত বিভিন্ন রকম প্রথা অনুসরণ করে থাকি, যদি আধুনিকতার প্রয়োজনে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়, তাঁকে স্বীকার করতে তৈরি থাকি, আর সেজন্য আমি মনে করি, এর পরিণাম হল যে, এই দেশ নিত্যনতুন, নিত্য পরিবর্তনশীল, নবীনকে স্বীকার করার সামর্থ্যসম্পন্ন একটি সমাজ ব্যবস্থা। আজ সেই মহান পরম্পরাকে গতি প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা কি সেই গতি প্রদানের কাজ করছি? ফাইলের গতি বাড়ালেই জীবনের গতি বদলায় না বন্ধুগণ! আমরা সেই একটি সামাজিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার সামর্থ্য গড়ে তোলার কথা ভাববো, আর যখন ভাববো যে আমার সমগ্র সমাজ জীবনকে নেতৃত্ব দিতে হবে! তখন আমাদের এই দায়িত্ব বর্তায়, শুধুই রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে তাঁদের জন্য কাজ নয়, প্রত্যেক ক্ষেত্রে বসে থাকা আমার সিভিল সার্ভিসে-এর বন্ধুগণকে সমাজের উন্নয়নের কথা ভেবেই লিডারশিপ দিতে হবে, আর সমাজে পরিবর্তনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের নিজস্ব ধারা তৈরি করতে হবে। তবেই গিয়ে আমরা পরিবর্তন আনতে পারব বন্ধুগণ! আমি মনে করি, এই পরিবর্তন আনার সামর্থ্য আজ দেশের রয়েছে। শুধু আমরাই বিশ্বাস করে বেঁচে আছি এমনটা নয়, বিশ্ববাসী অনেক বড় আশা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন আমাদের কর্তব্য বর্তায় যে সেই কর্তব্য পূরণের জন্য আমরা নিজেদেরকে সজ্জিত করে তুলি। এখন যেমন আমরা প্রায়ই নিয়ম এবং আইনের বন্ধনে এমনভাবে জড়িয়ে যাই যে বুঝে উঠতে পারি না! কোথাও এমনটা করে সামনে যে একটি নতুন শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যে নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, আমরা তাঁদের সাহসকে, তাঁদের সামর্থ্যকে আমাদের এই নিয়মের আবর্জনায় ওদেরকেও জর্জরিত করে তুলছি কিনা, তাঁদের সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করে তুলছি কিনা, যদি এমনটি করে থাকি, তাহলে হয়তো আমরা সময়ের চাহিদা মেনে তার সঙ্গে চলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছি। তাহলে সমাজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের প্রতিটি পদক্ষেপকে সঠিক লক্ষ্যে, সঠিক সামর্থ্য নিয়ে বাড়াতে হবে। এই সামর্থ্যকে হারালে চলবে না। আমরা যদি এ থেকে বেরিয়ে আসি, তাহলে এই পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করতে পারবো না, আর আমাদের দেশও আজ হয়তো দেখছে, এখন আইটি সেক্টর বা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র, এতে বিশ্বে ভারতের যে অগ্রণী ভূমিকা, এতে যাঁরা শুরুর দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়েছেন, তাঁরা হলেন আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের ২০, ২২, ২৫ বছর বয়সী নব যুবক-যুবতীরা। কিন্তু যদি মনে করেন আমরা এদের অগ্রগতির পথে বাঁধা দিতাম, আইনকানুনের মাধ্যমে তাঁদের অগ্রগতিকে প্রতিহত করতাম, তাহলে আমাদের এই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র আজ এতটা পুষ্পিত ও পল্লবিত হত না আর তাঁরা বিশ্বে নিজেদের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারতেন না।
বন্ধুগণ,
আমরা যখন ছিলাম না, তখনও তাঁরা এগিয়েছেন, সেজন্য আমাদের কখনও কখনও ভাবা উচিৎ যে দূরে থেকে তালি বাজিয়ে, উৎসাহ দিয়েও বিশ্বকে বদলানো যেতে পারে। আজ আমরা স্টার্ট-আপ নিয়ে গর্ব করতে পারি। ২০২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিক এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ২০২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকের ছোট্ট সময়ের মধ্যেই আমার দেশের নবীন প্রজন্মের মানুষেরা স্টার্ট-আপ-এর দুনিয়ায় ১৪টি ইউনিকর্ন-এর স্থান অর্জন করেছে। বন্ধুরা, এটা অত্যন্ত বড় সাফল্য। যদি ১৪টি ইউনিকর্ন মাত্র তিন মাসের মধ্যে আমার দেশের নবীন প্রজন্মের মানুষরা গড়ে তুলতে পারেন, মাত্র তিন মাসে যদি এমন উচ্চতা অর্জন করতে পারেন, এক্ষেত্রে আমাদের কী ভূমিকা? কখনও কখনও তো আমরা জানতেই পারি না যে আমাদের জেলায় কোন কোন নবীন মানুষ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, আর তাঁরা হয়তো কোনও টু-টিয়ার, থ্রি-টিয়ার সিটির কোণায় বসে কাজ করে যাচ্ছেন। যখন খবরের কাগজে তাঁদের সাফল্যের কথা ছাপা হয়, তখনই জানতে পারি যে অমুক জিনিসটা অর্জন করেছে। এর মানে এটাই যে শাসন ব্যবস্থার বাইরে সমাজের সামর্থ্যশক্তি অনেক বড় হয়। আমরা কি তার পোষক হতে পারি? সেজন্যে দেখতে হবে যে, আমরা এই ক্রিয়াকে উৎসাহিত করছি কি করছি না? আমরা তাকে রেকগনাইজ করছি কি করছি না? কখনও এমন তো নয় যে ভাই তুমি তো যা করার করে নিয়েছ, কিন্তু আগে কেন আমার সঙ্গে দেখা করোনি? এই বলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি যে, সরকারের কাছে আগে কেন আসেনি? আরে, তাঁর প্রয়োজন হয়নি বলে আসেনি! সে নিজের সময় নষ্ট করতে চায়নি। কিন্তু আপনাদের যে সে অনেক কিছু দিয়েছে, আপনি যে তাঁকে নিয়ে গর্ব করতে পারছেন, এটাই তো অনেক! আপনারা তাঁদের গৌরব গান করুন।
বন্ধুগণ,
আমি দুটি জিনিসের উল্লেখ করেছি। কিন্তু এরকম অনেক জিনিস আছে, এমনকি কৃষির ক্ষেত্রেও আছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের দেশের কৃষকরা আধুনিকতার দিকে এগিয়ে চলেছে। হয়তো এমন কৃষকের সংখ্যা কম হবে, কিন্তু যদি আমরা খতিয়ে দেখি, আমার নজরে তাঁরা কী পড়ছেন? তাঁদের কী দেখতে পাচ্ছি?
কিন্তু বন্ধুগণ,
আমরা যদি এই জিনিসগুলি করি, তাহলে আমি মনে করি যে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। আরও একটি কথা আমি বলতে চাই। কখনও কখনও আমি দেখেছি যে শুধুই সময় নিয়ে খেলা অধিকাংশ মানুষের স্বভাবের অংশ হয়ে ওঠে। আরে ছাড়ো ভাই! চলো ভাই! আমি এখানে আর কতদিন থাকব। একটি জেলায় দু’বছর বা তিন বছর তো অনেক হয়ে গেছে। ক’দিন পরে চলে যাব - এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে চলবে না। তাহলে কী হয় … আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু যখন একটি অ্যাশিওর্ড ব্যবস্থা আমরা পেয়ে যাই, জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়ে যায়, তখন কখনও কখনও আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার ভাবটা আর থাকে না। তখন মনে হয়, এখন তো সবকিছুই আমার আছে। নতুন সঙ্কটের মুখোমুখি কেন হব? জীবন তো এমনই চলে যাবে। এভাবেই ছেলে-মেয়েরাও বড় হয়ে যাবে। কোথাও না কোথাও সুযোগ পেয়ে যাবে। আমি কেন আর দৌড়-ঝাঁপ করব। আর এভাবেই আমরা নিজের প্রতিও উদাসীন হয়ে পড়ি।
ব্যবস্থার কথা ছাড়ুন! নিজের সাফল্যের ক্ষেত্রেও আমরা পরিশ্রম করতে উদাসীন হয়ে পড়ি। এটা ইতিবাচকভাবে বাঁচার পদ্ধতি নয় বন্ধুগণ! নিজের প্রতি কখনও উদাসীন হওয়া উচিৎ নয়। প্রাণভরে বাঁচার আনন্দ নেওয়া উচিৎ আর সব সময়েই কিছু করে দেখানোর উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবেই গিয়ে জীবনকে উপভোগ করার, ভালোভাবে বাঁচার মজা আসে। পেরিয়ে যাওয়া মুহূর্তে আমি কী পেয়েছি, বিগত দিনে আমি কী করেছি, এর হিসাব-নিকাশ করার স্বভাব রাখলে চলবে না। তাহলে জীবন ধীরে ধীরে নিজেকেই নিজের কাছে উদাস করে দেবে, আর তারপর বেঁচে থাকার সেই উদ্দীপনাই আর থাকবে না বন্ধুগণ! আমি তো কখনও কখনও ঘনিস্টজনদের জিজ্ঞেস করি যে, সেতার বাদক আর একজন টাইপিস্ট – দু’জনের মধ্যে পার্থক্য কী? একজন কম্পিউটার অপারেটর আঙুল দিয়ে খেলা করেন, কিন্তু ৪০-৪৫ বছর বয়সে পৌঁছেই কেমন ঝিমিয়ে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে অনেক সময় ওপর দিকে চোখ তুলেই তাকাতে চান না। কখনও কখনও তো এক-দু’বার বললে আপনার কথাই শুনতে পাবেন না। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে জবাব পাবেন, হ্যাঁ সাহেব, জীবনে কী আছে! অর্ধমৃতের মতো জীবনধারণ করছি। জীবন বোঝা হয়ে উঠেছে। ভেবে দেখুন! তিনি করেন তো আঙুলেরই কাজ। টাইপরাইটারে আঙুল দিয়ে কাজ করেন। এতে তিনি নিজের জীবনকে বোঝা ভাবছেন। আর অন্যদিকে একজন সেতার বাদক তিনিও আঙুল দিয়ে খেলা করেন, আর ৮০ বছর বয়সেও যদি তাঁর দিকে তাকান দেখবেন যে তাঁর চেহারায় কতো ঔজ্জ্বল্য। তাঁর জীবন যেন পরিপূর্ণ। স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকা একজন মানুষকে দেখতে পাবেন বন্ধুগণ! এই দু’জনেই কিন্তু আঙুল দিয়ে কাজ করে জীবন কাটিয়েছেন, কিন্তু একজন ধুঁকতে ধুঁকতে অর্ধমৃত হয়ে বাঁচেন, আর অন্যজন দৃপ্ত পদক্ষেপে জীবনকে উপভোগ করেন। এই পরিবর্তনটি আমাদের জীবনকে ভেতর থেকে বাঁচার সঙ্কল্পকে জাগিয়ে তুলতে পারে। এই সেই পরিবর্তন যা আমাদের জীবনকেও বদলে দিতে পারে বন্ধুগণ! সেজন্য আমি বলি বন্ধুগণ, আমার স্ট্রিমে দেশের প্রত্যেক কোণায় আমার লক্ষ লক্ষ বন্ধু রয়েছেন, যাঁদের জীবনে চেতনা নিয়ে তাঁরা বাঁচেন, সামর্থ্য নিয়ে বাঁচেন, কিছু করে দেখানোর সঙ্কল্প নিয়ে বাঁচেন। সেজন্যই তাঁরা জীবনে ভালোভাবে বাঁচার আনন্দ উপভোগ করেন বন্ধুগণ! কখনও কখনও আমাকে মানুষ জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনি ক্লান্ত হন না? হয়তো এটাই কারণ যা আমাকে ক্লান্ত হতে দেয় না। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে বাঁচতে চাই, উপভোগ করতে চাই। প্রতিটি মুহূর্তকে বেঁচে অন্যদের জীবনকে সুন্দর করে তোলার জন্য বাঁচতে চাই।
বন্ধুগণ,
এই নিজের জীবনকে বোঝা ভেবে চলার পরিণাম কী এসেছে? পরিণাম এটা এসেছে, যে চৌকাঠ তৈরি হয়েছে, আমরা যেখানেই যাই আমরা নিজেদের সেই চৌকাঠের চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকিয়ে নিই, আর এক্ষেত্রে নিজেকে ওই চৌকাঠের আয়তন অনুযায়ী নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার পারদর্শীতাও আমরা অর্জন করি। এভাবে একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে অনেকেরই হয়তো খুব ভালো লাগে, কিন্তু আমার মনে হয় যে হয়তো এটা কোনও জীবনই হতে পারে না বন্ধুগণ! যেখানে প্রয়োজন সেখানে এরকম করুন। যেখানে প্রয়োজন সেখানে প্রয়োজনে ঢাল হয়ে আগলান। কিন্তু, ঢাল হয়েই সেই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কিভাবে পা বাড়াবেন, সেই উদ্ভাবনও, সেই পথ খুঁজে নেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা কি সহজ রূপে আমাদের প্রশাসনে প্রতিনিয়ত সংস্কারকে আমাদের সহজ স্বভাবে পরিবর্তিত করতে পারি? ছোট ছোট বিষয়ের জন্য প্রয়োজনে যদি কমিশন বসাতে হয়, তাহলে বসাবেন। খরচ কম করতে হবে? কমিশন বসান। প্রশাসনে পরিবর্তন আনতে হবে? কমিশন বসান। ছয় মাস কিংবা ১২ মাস পরে রিপোর্ট আসবে, তারপর সেই রিপোর্ট দেখার জন্য আরও একটি কমিটি গঠন করুন। সেই কমিটির ইমপ্লিমেন্টেশন বা বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করুন। এখন এভাবেই আমরা কাজ করি। এর মূল উদ্দেশ্য হল, প্রশাসনের সংস্কার। সময় অনুসারে পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোনও সময় যুদ্ধ হলে হাতি আসে। তারপর হাতিওয়ালারা হাতি ছেড়ে ঘোড়া চালাতে শুরু করেন। ফলস্বরূপ আজ তাঁরা হাতিও চালাতে পারেন না, ঘোড়াও চালাতে পারেন না। অন্যকিছুর দরকার হয়। এই সংস্কার খুব সহজ নয়। কিন্তু যুদ্ধের চাপ আমাদের সংস্কার করতে বাধ্য করে। আমাদের দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদের বাধ্য করছে কি করছে না? যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আমরা বুঝতে না পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজের মতো করে প্রশাসনে সংস্কারও আনতে পারি না। প্রশাসনে সংস্কার একটি দৈনন্দিন প্রক্রিয়া হওয়া উচিৎ। সহজ প্রক্রিয়া হওয়া উচিৎ আর প্রয়োগসম্পন্ন ব্যবস্থা হওয়া উচিৎ। যদি প্রয়োগ সফল না হয় তাহলে ছেড়ে চলে যাওয়ার সাহস থাকা উচিৎ। আমি যে ভুল করেছি সেটা স্বীকার করে আমার নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সামর্থ্য থাকা উচিৎ। তবেই গিয়ে পরিবর্তন আসে বন্ধুগণ!
এখন আপনারা দেখুন, শত শত আইন এমন ছিল যেগুলি আমার মনে হয় বর্তমান সময়ের নিরিখে দেশের নাগরিকদের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছিল। আমাকে যখন প্রথমবার ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী রূপে আমার দল ঘোষণা করে, তখন আমি ভাষণ দিচ্ছিলাম। দিল্লিতে একটি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আমাকে ডেকেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের ৪-৬ মাস আগের কথা। তখন সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে আপনি কী করবেন? আমি বলি যে রোজ একটি করে সময়ের অনুপযোগী আইনকে বাতিল করব। নতুন আইনও প্রণয়ন করব। তখন আমার এ কথা শুনে তাঁরা খুব আশ্চর্য হন। আর আমি দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম পাঁচ বছরে ১,৫০০টি আইন বাতিল করাই। বন্ধুগণ আমাকে বলুন, এই আইনগুলি নিয়ে আমরা কেন বেঁচে থাকব? আজও আমার মনে দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে, হয়তো এরকম আরও আইন রয়েছে যেগুলি অকারণ রয়েছে। কেউ যদি এর অসাড়তার কথা ব্যাখ্যা করতে পারেন, তাহলে করুন। উদ্যোগ নিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসুন আর সেই আইনকে বাতিল করান। দেশকে এ ধরনের আবর্জনা থেকে বের করে আনুন।
তেমনই কমপ্লায়েন্স বা সম্মতি নিয়ে পরিচালনা এবং অনুসরণ নিয়েও আমার কিছু কথা বলার আছে। একই ধরনের কমপ্লায়েন্স … আমরা না জানি নাগরিকদের কাছ থেকে কী কী চাইতে থাকি বন্ধুগণ! আমাকে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি বললেন, বিশ্বের যাবতীয় কাজ বাকি থাকুক, আপনি সম্ভব হলে এই বিষয়টা দেখুন সাহেব। এই কমপ্লায়েন্স থেকে দেশকে মুক্ত করুন, নাগরিকদের মুক্ত করুন। এখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব চলছে। এত বছর পরেও কেন নাগরিকরা এই ধরনের জঞ্জালে আকীর্ণ হয়ে থাকবেন। মনে করুন একটা দপ্তরে ছয়জন মানুষ বসে আছেন। প্রত্যেক টেবিলওয়ালার কাছে তথ্য রয়েছে। কিন্তু তবুও আলাদা করে চাওয়া হবে। পাশের টেবিল থেকে তথ্যটা নিতে বাবুদের বাধে। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের একই অফিসে এসে ছয়টা টেবিলে একই তথ্য ও দস্তাবেজ বারবার জমা দিতে হয়। আজ প্রযুক্তির যুগ। আমরা এমন ব্যবস্থা কেন বিকশিত করব না যে তাঁদেরকে একবারের বেশি আর তথ্য দিতে হবে না। আমরা কেন দেশকে কমপ্লায়েন্সের বোঝা থেকে মুক্ত করতে পারব না? আমি তো অবাক! এখন আমাদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রত্যেক অপরাধের জন্য নাগরিকদের ক্ষেত্রে নানা রকম শাস্তি রয়েছে। আমি এমন একটা আইন দেখেছি যে কারখানায় যে টয়লেট রয়েছে, সেখানে যদি প্রত্যেক ছয় মাসে চুনকাম না করা হয় তাহলে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির জেল হবে। এখন বলুন, আমরা কেমন দেশ চাইছি, কোথায় পৌঁছে দিতে চাইছি? এখন সময় এসেছে যে এই সমস্ত আবর্জনা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আর এই মুক্তি দেওয়ার একটা সহজ প্রক্রিয়া থাকা উচিৎ। এর জন্য কোনও সার্কুলার পাঠানোর প্রয়োজন থাকা উচিৎ নয়। আপনারা যদি মনে করেন যে এটা রাজ্য সরকারের বিষয়, তাহলে রাজ্য সরকারকে বলুন! আপনারা যদি মনে করেন যে এটা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলুন! লজ্জা করবেন না বন্ধুগণ! আমার বলার উদ্দেশ্য হল আমরা নাগরিকদের যতটা চাপমুক্ত করব, তাঁরা অনেক বেশি প্রস্ফুটিত হবে, অনেক বেশি শক্তি নিয়ে প্রস্ফুটিত হবে। আমার অল্প বুদ্ধিতে যা বুঝি, বড় গাছের নিচে যতই ভালো ফুলের গাছ লাগাতে চাই না কেন, বড় গাছের ছায়ার চাপ এতটা থাকে যে সেখানে ফুল জন্ম নিতে পারে না। সেই ফুলের গাছগুলিকেই যদি খোলা আকাশের নিচে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলে তারাও শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে উঠবে। তাঁদের সেই বোঝা থেকে মুক্ত করে দিন।
বন্ধুগণ,
সাধারণত দেখা গেছে, যেমনটি চলছে, সেই ব্যবস্থার মধ্যেই আমরা নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে থাকি। যেমন করেই হোক দিন কাটাতে থাকি। সময় কাটানোর চেষ্টা করতে থাকি। বিগত সাত দশক ধরে যদি আমরা এগুলির সমীক্ষা করতাম, তাহলে একটি বিষয় অবশ্যই সকলের সামনে স্পষ্ট হত। যখনই কোনও সঙ্কট এসেছে, কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসেছে, কোনও বিশেষ ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তখনই গিয়ে আমরা পরিবর্তন এনেছি। যেমন সম্প্রতি করোনা আসায় আমরা নিজেদের হিতে, নিজেদের স্বার্থে অনেক পরিবর্তন এনেছি। কিন্তু এটা কি সুস্থ ব্যবস্থা? বাইরে থেকে চাপ পড়লে তবেই গিয়ে আমরা বদলাব, এটা কোনও পদ্ধতি হল? আমরা আগে থেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্কার কেন করব না? কেন করব না বন্ধুগণ! যাতে আমাদের সঙ্কটের সময় নতুন করে রাস্তা খুঁজতে না হয়। একটা সময় ছিল যখন আমরা, দেশবাসীরা অভাবের মধ্যে দিন কাটাতাম। আর সেজন্যই আমাদের এত নিয়ম গড়ে উঠেছিল। অভাবের মধ্যে কিভাবে বাঁচতে হবে তা ঠিক করার জন্য এত নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু যখন আমরা অভাব থেকে বেরিয়ে এসেছি তখন আইনগুলিকেও তো অভাব থেকে বের করে আনতে হবে ভাই! বোইভবের মধ্যে, বিপুলতার লক্ষ্যে কেমন ভাবা উচিৎ তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বৈভবের জন্য, বিপুলতার জন্য যদি আমরা না ভাবি, কৃষিতে যেহেতু আমরা এগিয়ে গিয়েছি, যদি আমরা তার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে না ভাবি, তাহলে কেমন করে চলবে? আমাদের দেশে যদি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা আগে থেকেই গড়ে উঠত, তাহলে আজ কৃষকদের জন্য কৃষি কখনই বোঝা হয়ে উঠত না। আর সেজন্য আমি বলি যে সঙ্কটের সময় পথ খোঁজার পদ্ধতি তো সরকার শিখে নিয়েছে, কিন্তু স্থায়ীভাবে ব্যবস্থাগুলিকে বিকশিত করার পথ আমাদেরকে খুঁজতে হবে। আর আমাদেরকে এটাও ভিস্যুয়ালাইজ করতে হবে যে যখন আমাদের এই এই সমস্যা আসে তার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, বা অমুক সমস্যাকে কিভাবে শেষ করতে হবে, তার সমাধান কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে কাজ করা উচিৎ। তেমনই আমাদের নানা চ্যালেঞ্জের পেছনে বাধ্য হয়ে যে ছুটতে হয়, এটাও ঠিক পদ্ধতি নয়। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, আমাদের পূর্ব্জদের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলির, আমাদের সমস্যাগুলির পূর্বানুমান করা উচিৎ। আজ আধুনিক প্রযুক্তি যেহেতু পুরো বিশ্বকে বদলে দিয়েছে, সেসব প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের প্রশাসনের ক্ষেত্রেও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিৎ। আমরা নিজেদেরকেই সেজন্য প্রস্তুত করব। সেজন্যই আমি চাইব যে গভর্ন্যান্স রিফর্মকে আমাদের দৈনন্দিন কর্মে পরিণত করতে হবে। ক্রমাগত চেষ্টা থাকতে হবে, আর আমি তো বলব যে তবেই আমরা যখন অবসর গ্রহণ করবো, তখন মন থেকে একটা আওয়াজ বেরিয়ে আসবে যে, আমার কর্মকালে আমি প্রশাসনে এই এত এত রিফর্ম করেছি, এত এত সংস্কার এনেছি, আর তার ব্যবস্থাগুলিকে বিকশিত করতে আমার প্রশাসনিক দক্ষতাকাজে লেগেছে, আর আগামী ২৫-৩০ বছর সেগুলি দেশের কাজে লাগবে। এই ধরনের পরিবর্তন আনতে পারলে সবকিছুই পরিবর্তিত হতে পারে।
বন্ধুগণ,
বিগত ৮ বছরে দেশে অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক অভিযান এমন ছিল, যেগুলির মূলে ছিল ‘বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ’ বা প্রকৃতিগত পরিবর্তন। এটা খুব কঠিন কাজ আর রাজনৈতিক নেতারা তো একে কখনও হাত দেওয়ারই সাহস করেন না। কিন্তু আমি রাজনীতি থেকে নিজেকে ঊর্ধ্ব তোলার চেষ্টা করেছি। গণতন্ত্রে একটা ব্যবস্থা আছে। আমাকে শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই কাজ করে এগিয়ে আসতে হয়েছে, এটা ভিন্ন কথা। আমি মূলত রাজনীতির মাধ্যমে উঠে আসিনি। তাই আমার স্বভাবও রাজনীতিবিদদের মতো হয়নি। আমি গণনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ। সারা জীবন সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ।
বন্ধুগণ,
এই যে ‘বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ’ বা প্রকৃতিগত পরিবর্তন এটার পেছনে আমার অনেক চেষ্টা ছিল। সমাজের মৌলিক জিনিসগুলিতে পরিবর্তন আনার যে প্রচেষ্টা হয়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা তারই একটি অঙ্গ। আমি যখন সমাজের কথা বলি, তখন প্রশাসনে যাঁরা বসে আছেন তাঁদেরকে আমি আলাদা চোখে দেখি না। আমি মনে করি তাঁরা কোনও ভিন্ন গ্রহ থেকে আসেননি। তাঁরা তো এই প্রশাসনেরই অঙ্গ। আমরা কি যে পরিবর্তনগুলির কথা সবসময় বলি, যেগুলি হতে দেখি, সেগুলি সম্পর্কে ভাবি? কখনও কোনও আধিকারিক আমাকে বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করতে এলে আমার যে স্বভাব সেটা আমি ছাড়তে পারি না। সেজন্যই হয়তো যাঁরা আমার কাছে বিয়ের কার্ড নিয়ে আসেন, তাঁরা কোনও দামি কার্ড নিয়ে আসেন না। অনেক সস্তা কার্ড নিয়ে আসেন। কিন্তু তার ওপরে প্লাস্টিকের কভার থাকে ট্রান্সপারেন্ট। এটা দেখলেই সহজভাবে আমি জিজ্ঞাসা করে ফেলি যে আপনি এখনও ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার করছেন? তখন বেচারা লজ্জায় পড়ে যান।
আমার বক্তব্য হল, আমরা দেশের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করি কিন্তু নিজেরাই ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার করে ফেলি। আমরা কি খতিয়ে দেখেছি যে নিজেরা ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’-এর ব্যবহার বন্ধ করেছি কিনা? আমার দপ্তরে আমি যেখানে বসে আছি, যে কাজ করছি, সেখানে এ ধরনের কোনও প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে না তো? আমি তো এত বড় পদে কাজ করি। আমি কি আমার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারছি? আমার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারছি? আমরা বিষয়গুলিকে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে হাত লাগাই, কারণ, আমরা এত বেশি বড় বিষয়গুলির মধ্যে ডুবে থাকি যে আমরা প্রায়ই ছোট ছোট বিষয়গুলি থেকে দূরে চলে যেতে থাকি। আর যখন ছোট বিষয়গুলি থেকে আমরা দূরে চলে যাই, তখন গরীব মানুষদের দিক থেকেও অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়ে যায় বন্ধুগণ! আমাদের এই দেওয়ালগুলিকেই ভাঙতে হবে। এখন ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর জন্য আমাদেরকে আবার চেষ্টা করতে হয়। প্রত্যেক ১৫ দিনে দপ্তরে কী চলছে। দেখুন, পরিচ্ছন্নতার জন্য কোনও কাজ হচ্ছে কিনা! আমরা কী প্রত্যেক ২ বছর, ৩ বছর কিংবা ৫ বছরের মধ্যে আমাদের দপ্তরে কোনও পরিবর্তন এনেছি? বন্ধুগণ, আমরা আমাদের দপ্তরের এমন স্বভাব পরিবর্তন করতে পেরেছি? যদি এমন কোনও স্বভাবের পরিবর্তন না করে থাকি, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের থেকে বেশি প্রত্যাশা করা উচিৎ নয়। তাঁদের যেমন স্বভাব গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেশি প্রত্যাশা করা উচিৎ নয়, আর একথা আমি এজন্য বলছি বন্ধুগণ, আমরা এতদিন ধরে এই ব্যবস্থাকেই মেনে এসেছি, স্বীকার করেছি। এখন আমরা ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র কথা বলি, ফিনটেক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। আজ কেন্দ্রীয় সরকার ফিনটেক-এ যে গতি এনেছে, ডিজিটাল লেনদেনের বিশ্বে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অভূতপূর্ব। আজ যখন কাশীর কোনও যুবক-যুবতী পুরস্কার পান, আমাদের আধিকারিকদের তালি বাজানোর ইচ্ছা হয়, কারণ তাঁরা ঠেলাগাড়ি ও ফুটপাথের পাশে বসা ব্যবসায়ীদের অনেকের ডিজিটাল পেমেন্টেরও কাজ করছেন আর এই সাফল্যের চিত্রও পড়ে ও দেখে তাঁদের ভালো লাগে। কিন্তু মনে করুন আমাদের কারও বাবা, যিনি ডিজিটাল লেনদেন করেন না তাঁকে যদি আমরা উদ্বুদ্ধ না করতে পারি, তেমনই আমার ব্যবস্থায় বসে থাকা অনেক মানুষ যারা ডিজিটাল লেনদেন করেন না, তাঁদেরকে যদি আমরা উদ্বুদ্ধ না করতে পারি, তার মানে আমি এই গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি। সিভিল সার্ভিস ডে-তে এ ধরনের কথা বলা উচিৎ কি উচিৎ নয় তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। আপনারা তো এখানে দু’দিন ধরে বসবেন। তখন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় আমার ছাল ছাড়িয়ে নেবেন জানি। কিন্তু তবুও বন্ধুগণ আমি বলতে চাই, যে বিষয়গুলি ভালো লাগে বা আমরা সমাজে প্রত্যাশা করি, নিজের ক্ষমতার জায়গায় কোথাও না কোথাও সেগুলি শুরু করা উচিৎ, আমাদের এই চেষ্টা করা উচিৎ। যদি আমরা যদি এই জিনিসগুলিকে চেষ্টা করি তাহলে আমরা অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে। এখন জিইএম পোর্টালের কথা যদি ধরি, আমাদের কি বারবার সার্কুলার বের করে বলতে হবে যে, আপনার দপ্তরের ১০০ শতাংশ কেনাকাটাকে কিভাবে জিইএম পোর্টালে নিয়ে আসতে হবে? কিভাবে জিইএম পোর্টালকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে? বন্ধুগণ, আমাদের ইউপিআই ব্যবস্থা এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রশংসা কুড়োচ্ছে। আমাদের সকলের মোবাইলে কি ইউপিআই ব্যবস্থা রয়েছে? আমরা কি সকলে ইউপিআই-কে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করেছি? আমাদের পরিবারের সকলেকি ইউপিআই-কে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করেছে? আমাদের হাতে অনেক বড় সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু আমি যদি আমার ইউপিআই-কে স্বীকার না করি আর আমি বলি যে গুগল তো বাইরের দেশ থেকে এসেছে, তাহলে বন্ধুগণ, যদি ইউপিআই-এর মধ্যে এই ভাব থাকে তখন আমাদের ইউপিআই-ও গুগল থেকে এগিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে, এতটা শক্তি রাখতে পারে। ফিনটেক-এর বিশ্বে নাম করতে পারে। প্রযুক্তির জন্য ফুলপ্রুফ সিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কে এর প্রশংসা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থা ছিল কিন্তু আমরা তার অংশ কেন হয়ে উঠিনি? আমি দেখেছি, আমরা কেউ পেছনে পড়লেই তবে করি। আমি দেখেছি যে আমাদের যত ইউনিফর্মড ফোর্সেস আছে, তারা নিজেদের ক্যান্টিনের মধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। তারা ডিজিটাল পেমেন্টই গ্রহণ করে। কিন্তু আজও আমাদের সেক্রেটারিয়েটের মধ্যে যে ক্যান্টিন রয়েছে সেখানে এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এই পরিবর্তন কি আমরা আনতে পারি না? আমার বক্তব্যকে ছোট বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যদি আমরা চেষ্টা করি বন্ধুগণ, তাহলে আমরা অনেক বড় কাজ করতে পারি, আর আমাদের সমাজের অন্তিম মানুষটি পর্যন্ত যথাযথ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের ক্রমাগত একটি পারফেক্ট সিমলেস মেকানিজম বা চালু করার চেষ্টা করে যেতে হবে, আর যতটা বেশি আমরা এই মেকানিজম দাঁড় করাতে পারব, আমি মনে করি সমাজের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তিম ব্যক্তিটির ক্ষমতায়নের যে মিশন নিয়ে আমাদের সরকার এগিয়ে চলেছে, সেই মিশনকে আজ আমরা খুব ভালোভাবে বাস্তবায়িত করতে পারি।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের অনেকটা সময় নিয়ে নিলাম। অনেক বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বললাম। কিন্তু আমি চাইব যে আমরা এই জিনিসগুলিকে করি, এই জিনিসগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই সিভিল সার্ভিসেস ডে যেন আমাদের মনে একটি নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার করার অবসর হয়ে ওঠে। এখানে নতুন সঙ্কল্প গ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে যে নতুন মানুষেরা আমাদের মধ্যে আসবেন, আমরা যেন তাঁদের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাই। সেজন্য এই ব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠার জন্য নিজেদেরকে উদ্দীপনায় ভরিয়ে তুলতে হবে। আমরা নিজেরাই সক্রিয়ভাবে, আনন্দে জীবন কাটিয়ে যাতে নিজেদের বন্ধুবান্ধবদের ও সহনাগরিকদেরকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি! এই একটি প্রত্যাশার সঙ্গে, একে ব্যবস্থার অঙ্গ করে তোলার জন্য উদ্দীপনায় ভরিয়ে তুলি। নিজেদের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলে সম্পূর্ণভাবে বাঁচার মাধ্যমে নিজের বন্ধুদেরও এগিয়ে নিয়ে যাই, এই প্রত্যাশা রেখে আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।