কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগীগণ, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গবেষণার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
আমাদের সরকার বাজেটের আগে এবং বাজেটের পরে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছে, বার্তালাপের একটি বিশেষ পরম্পরা গড়ে তুলেছে। আজকের এই কর্মসূচি তারই একটি পর্যায়। এই প্রক্রিয়ায় আজ শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে বাজেটে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নিয়ে আপনাদের মতো সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের নবীন প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাঁরাই ভবিষ্যতের ‘নেশন বিল্ডার’ বা জাতির নির্মাতাও। সেজন্য আজকের নবীন প্রজন্মকে ‘এমপাওয়ারিং’ বা ক্ষমতায়নের অর্থ হল ভারতের ভবিষ্যতকে ক্ষমতায়িত করা। এই ভাবনা নিয়ে ২০২২-এর বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি বিষয়ের ওপর অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত –
‘ইউনিভার্সালাইজেশন অফ কোয়ালিটি এডুকেশন’ বা উৎকৃষ্ট মানের শিক্ষাকে বিশ্বজনীন করে তোলা : আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করা, তার উৎকর্ষকে সংস্কার করা আর শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ত – ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ বা দক্ষতা উন্নয়ন : দেশে ‘ডিজিটাল স্কিলিং ইকো-সিস্টেম’ যাতে তৈরি হয়, ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’কে নিয়ে যখন আলাপ-আলোচনা চলছে, তখন ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন যাতে হয়, ‘ইন্ডাস্ট্রি লিঙ্কেজ’ যেন উন্নত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল – ‘আরবান প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন’ বা নগরোন্নয়ন পরিকল্পনা ও নকশা : এতে ভারতের যে পুরনো অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান রয়েছে, তাকে আমাদের আজকের শিক্ষায় সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – ‘ইন্টারন্যাশনালাইজেশন’ বা বিশ্বজনীন করে তোলা : ভারতে যাতে বিশ্বমানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আসে, আমাদের যে শিল্পক্ষেত্র, যেমন ‘গিফট সিটি’, সেখানে ‘ফিনটেক’-এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে আসে, সেই প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল – এভিজিসি বা ‘অ্যানিমেশন ভিস্যুয়াল এফেক্টস গেমিং কমিক’ : এইসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলির অনেক বড় আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। সেই বাজারের প্রতিযোগী হয়ে ওঠার জন্য আমাদের ভারতীয় মেধার ব্যবহার কিভাবে বাড়ানো যায়, তার ওপরও ততটাই জোর দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
করোনা আসার অনেক আগে থেকেই দেশে ‘ডিজিটাল ফিউচার’ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা চলছিল। যখন আমরা আমাদের গ্রামগুলিকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করছিলাম, যখন আমরা ডেটার দাম ন্যূনতম রাখার চেষ্টা করছিলাম, কানেক্টিভিটি বা সংযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলছিলেন যে এসবের কী প্রয়োজন? কিন্তু মহামারীর সময়ে আমাদের এই প্রচেষ্টাগুলির গুরুত্ব সবাই দেখে নিয়েছেন। এই ডিজিটাল কানেক্টিভিটিই এই কঠিন সময়ে আমাদের খুব কাজে লেগেছে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে ভারতে দ্রুতগতিতে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বা ডিজিটাল বিভাজন হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের দেশে অন্তর্ভুক্তিকরণকে সুনিশ্চিত করছে উদ্ভাবন, আর এখন তো দেশ অন্তর্ভুক্তিকরণ থেকেও এগিয়ে গিয়ে দেশ ‘ইন্টিগ্রেশন’ বা সংহতির দিকে এগিয়ে চলেছে।
এই দশকে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থায় যে রকম আধুনিকতা আনতে চাই, তার ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য এ বছরের বাজেটে বেশ কিছু ঘোষণা করা হয়েছে। ‘ডিজিটাল এডুকেশন’ বা ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা হল, ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে ক্রম-অগ্রসরমান ভারতের ব্যাপক সুদূরদর্শীতার অংশ। সেজন্য ‘ই-বিদ্যা’থেকে শুরু করে ‘ওয়ান প্লাস ওয়ান চ্যানেল’, ডিজিটাল ল্যাবস, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি – এ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন স্বতন্ত্র শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামো নির্মাণ দেশের যুব সম্প্রদায়কে অনেক সাহায্য করতে চলেছে। এটা ভারতের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় গ্রাম থেকে শুরু করে দেশের গরীব, দলিত, পিছিয়ে পড়া, আদিবাসী – সকলের শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে উন্নত সমাধানের একটি প্রচেষ্টা।
বন্ধুগণ,
‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজের মতো একটি স্বতন্ত্র এবং অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। আমি এই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে সেই শক্তি দেখতে পাচ্ছি যে এই ইউনিভার্সিটি আমাদের দেশে ছাত্র ভর্তির সময় যে আসনের সমস্যা থাকে সে সমস্যার সম্পূর্ণভাবে সমাধান করতে পারবে। তখন প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ‘আনলিমিটেড’ বা অগুণতি আসন থাকবে। তখন আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে আমাদের দেশের শিক্ষার জগতে কত বড় পরিবর্তন আসবে? এই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ‘লার্নিং’ আর ‘রি-লার্নিং’-এর বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজনগুলির জন্য নবীন প্রজন্মকে প্রস্তুত করে তুলবে। শিক্ষা মন্ত্রক, ইউজিসি, এআইসিটিই আর সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার অনুরোধ যে এই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি যাতে দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করতে পারে, এটা সুনিশ্চিত করুন। শুরু থেকেই এই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি যাতে আন্তর্জাতিক মান নিয়ে কাজ করতে শুরু করে, এটা দেখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বন্ধুগণ,
দেশেই আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের যে দৃঢ় ইচ্ছা আর সেজন্য আমাদের প্রণীত ‘পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক’ও আপনাদের সামনে রয়েছে। এখন আপনাদের নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে হবে। আজ ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস’। মাতৃভাষায় শিক্ষা শিশুদের মানসিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত। অনেক রাজ্যে স্থানীয় ভাষায় মেডিকেল এবং টেকনিক্যাল এডুকেশনের পড়াশোনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
এখন সমস্ত শিক্ষাবিদদের একটা বিশেষ দায়িত্ব বর্তায় যে স্থানীয় ভারতীয় ভাষাগুলিতে ‘বেস্ট কন্টেন্ট’ তৈরি করা এবং সেগুলির ডিজিটাল ভার্শন তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। ভারতীয় ভাষাগুলিতে এই ‘ই-কন্টেন্ট’, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, টিভি এবং রেডিও-র মাধ্যমে সকলের জন্য যেন ‘অ্যাক্সেস’ থাকে তা নিয়ে কাজ করতে হবে।
ভারতীয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজগুলিতেও আমরা এই ধরনের পাঠ্যক্রম বিকশিত করছি যেগুলি দিব্যাঙ্গ যুবক-যুবতীদের আরও শক্তিশালী করে তুলছে। অনেক বেশি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। এক্ষেত্রেও নিরন্তর সংস্কার করে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডিজিটাল টুলস, ডিজিটাল কন্টেন্টকে কিভাবে উন্নত পদ্ধতিতে ডেলিভার বা বিতরণ করা যায়, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের শিক্ষকদেরও অনলাইন প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
‘ডায়নামিক স্কিল’ আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আর ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট ডিমান্ড’-এর পূর্তি অনুসারেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো ‘জব রোলস’ বা কাজগুলির ভূমিকা যেভাবে দ্রুতগতিতে বদলাচ্ছে, সেই অনুসারে আমাদের নিজস্ব ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’কে দ্রুতগতিতে প্রস্তুত করতে হবে। সেজন্য ‘অ্যাকাডেমিয়া’ এবং ‘ইন্ডাস্ট্রি’কে মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে। ‘ডিজিটাল ইকো-সিস্টেম ফর স্কিলিং অ্যান্ড লাইভলিহুড’ বা ‘দেশ স্ট্যাক ই-পোর্টাল’ এবং ‘ই-স্কিলিং ল্যাব’-এর যে ঘোষণা বাজেটে করা হয়েছে, তার পেছনেও এই ভাবনার রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ পর্যটন শিল্প, ড্রোন নির্মাণ শিল্প, অ্যানিমেশন এবং কার্টুন শিল্পোদ্যোগ, প্রতিরক্ষা শিল্পোদ্যোগ – এ ধরনের শিল্পোদ্যোগগুলির প্রতি আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রে বর্তমান শিল্পোদ্যোগগুলি এবং স্টার্ট-আপগুলির জন্য আমাদের প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অ্যানিমেশন, ভিস্যুয়াল এফেক্ট, গেমিং এবং কমিক ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করলে এক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে। এভাবেই নগরোন্নয়ন পরিকল্পনা এবং নকশায় দেশের প্রয়োজনও মেটানো যাবে আর যুব সম্প্রদায়ের জন্যও সুযোগ গড়ে উঠবে। স্বাধীনতার অমৃতকালে ভারত তার নিজস্ব ‘আরবান ল্যান্ডস্কেপ’কে ট্রান্সফর্ম করার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেজন্য এআইসিটিই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে দেশের একটি বিশেষ প্রত্যাশা রয়েছে যে এগুলির মাধ্যমে যে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ হয়, সেক্ষেত্রে নিরন্তর সংস্কার হোক।
বন্ধুগণ,
শিক্ষাক্ষেত্রের মাধ্যমে আমরা আত্মনির্ভর ভারতের অভিযানকে কিভাবে শক্তিশালী করে তুলব তা নিয়ে আপনাদের সকলের ‘ইনপুটস’ দেশের কাজে লাগবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা সবাই মিলিত প্রচেষ্টায় বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলিকে দ্রুতগতিতে পালন করতে পারব। আমি এটাও বলতে চাই যে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে গ্রাম পর্যন্ত। এখন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে উঠছে যে স্মার্ট-ক্লাসের মাধ্যমে, অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দূরদুরান্তের ‘লং ডিস্ট্যান্স এডুকেশন’-এর মাধ্যমে অথবা আমাদের যে নতুন কল্পনা রয়েছে – ‘ওয়ান প্লাস ওয়ান চ্যানেল’-এর মাধ্যমে গ্রাম পর্যন্ত আমরা উন্নত মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারব। বাজেটে এর ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এটাকে কিভাবে বাস্তবায়িত করব, তার ব্যবস্থা রয়েছে।
আজ যখন আমরা বাজেট নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আজ এই প্রত্যাশা করছি না যে বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে আপনারা কিছু বলবেন। তার কারণ সেটা তো হয়ে গেছে। এখন আপনাদের থেকে প্রত্যাশা হল যে বাজেটে যা কিছু আছে তা যত দ্রুত সম্ভব ‘সিমলেসলি’ তৃণমূলস্তরে কিভাবে বাস্তবায়িত করবেন। আপনারা হয়তো বাজেটকে ভালোভাবে পড়েছেন। আপনারা তো ফিল্ডে বা তৃণমূলস্তরে কাজ করেন। বাজেট আর আপনাদের কাজ শিক্ষা দপ্তর এবং দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। এই তিনটি দপ্তর মিলেমিশে যদি একটি ভালো রোড-ম্যাপ তৈরি করে দেয় তাহলে সময় নির্ধারিত করে কাজের পরিকল্পনা রচনা করে দিতে পারি। আমাদের এখানে আপনারা হয়তো দেখেছেন যে বাজেট আমরা প্রায় এক মাস ‘প্রিপোন’ করেছি বা এগিয়ে এনেছি।
আগে বাজেট ২৮ ফেব্রুয়ারিতে হত। এখন সেটা ১ ফেব্রুয়ারিতে হয়। কারণ কী? কারণ হল, ১ এপ্রিলে বাজেট যখন কার্যকর হবে, তার আগে বাজেট নিয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যেন বিস্তারিত ব্যবস্থা করে নেওয়া যায়, যাতে ১ এপ্রিল থেকেই বাজেটকে আমরা কার্যকর করতে শুরু করতে পারি। আমাদের সময় যেন নষ্ট না হয় আর আমি চাইব যে আপনারা এক্ষেত্রে যথাসম্ভব উদ্যোগ নেন। এখন আপনারা হয়ত দেখেছেন … এটা ঠিক যে কিছু বিষয় এমন রয়েছে যা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত নয়। এখন দেশ ভেবেছে যে অনেক বড় মাত্রায় সৈনিক স্কুলগুলিতে আমরা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের দিকে নিয়ে যাব। এখন সৈনিক স্কুলগুলি কিরকম হবে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মডেল কেমন হবে, তা নির্ধারণের পরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তার ওপর বাজেট দেবে। তারপর যে সৈনিক স্কুলগুলি গড়ে উঠবে, সেখানকার শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কিভাবে হবে? আজ আমাদের যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে সৈনিক স্কুলগুলির শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে কারণ সেগুলিতে অনেক ফিজিক্যাল পার্টও থাকবে – সেগুলি আমরা কিভাবে করতে পারি!
তেমনই খেলাধূলার ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে এগোব? আমাদের দেশে এবারের অলিম্পিকের পর খেলাধূলার প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় যতগুলি বিষয় ছিল সেগুলি তো আছেই, ক্রীড়া জগতের জন্যও বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। কারণ, টেকনিক, টেকনলজি – এসব ক্ষেত্রেও এখন খেলাধূলা অনেক বড় জায়গা করে নিয়েছে। তখন আমরা যখন চিন্তা করব যে তাতে আমাদের কী অবদান রাখতে পারি?
আমরা কী কখনও ভেবেছি, যে দেশে নালন্দা, তক্ষশীলা, বল্লভির মতো এত বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, আজ আমাদের দেশের শিশুরা বিদেশে পড়তে যেতে বাধ্য হয়, এটা কী আমাদের জন্য ঠিক? আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের যে ছেলে-মেয়েরা বাইরে যায়, তার পেছনে অনেক উল্টো-পাল্টা অর্থ খরচ হয়। তারা পরিবারের ঋণ বাড়িয়ে দেয়। আমরা কী আমাদের দেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আনতে পারি যাতে আমাদের ছেলে-মেয়দের আমাদের দেশের পরিবেশেই, আরও কম খরচে পড়াতে পারি, তার জন্য চিন্তা করতে পারি? অর্থাৎ, প্রি-প্রাইমারি থেকে শুরু করে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত আমাদের যে পরিকাঠামো তা একবিংশ শতাব্দীর অনুকূল কিভাবে হবে?
আমাদের বাজেটে যা কিছু ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেগুলি ঠিকই আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি কারোর মনে হয় যে এমনটি হলে ভালো হত, আগামী বছর এর জন্য ভাবব। আগামী বাজেটে এগুলি নিয়ে ভাবব। এখন তো আমাদের কাছে যে বাজেট রয়েছে সেই বাজেটকে কিভাবে আমরা কার্যকর করব, কিভাবে খুব ভালো করে কার্যকর করব, অপটিমাম আউটকাম কিভাবে পাব, আউটপুট নয়, অপটিমাম আউটকাম কিভাবে পাব, এখন যেমন অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস, অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস-এর কাজ যাঁরা দেখেন, তাঁরা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকেরই কোনও না কোন এডুকেশ সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। আমাদের আবিষ্কারের কথা বলতে হলে তো অটল টিঙ্কারিং ল্যাবকে আমরা কিভাবে আধুনিক করে তুলব। অর্থাৎ, সমস্ত বিষয় এরকম রয়েছে যে বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে আর ন্যাশনাল এডুকেশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথম বাজেট এমনভাবে আসবে যা আমাদের দ্রুত বাস্তবায়নের স্বাধীনতাকে এই অমৃত মহোৎসবে অমৃতকালের ভিত্তি রচনা করতে চায়।
দেশে একটি পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন আর আমি এটা চাই! আপনাদের মতো সংশ্লিষ্ট সমস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে যখন বাজেট প্রস্তুত করার সময় আসে, তারপর একটি ‘ব্রেক পিরিয়ড’ থাকে আর সমস্ত সাংসদরা মিলেমিশে, ছোট ছোট গ্রুপে বাজেট নিয়ে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম আলোচনা করেন। খুব ভালো আলোচনা হয়। ভালো জিনিসগুলি তা থেকে উঠে আসে, কিন্তু আমরা তার পরিধিকে আরও বাড়িয়েছি। সাংসদরা তো এখনই করছেন, কিন্তু এবার আমরা সরাসরি বিভাগের কর্মচারী বা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলছি।
অর্থাৎ, আমরা এক প্রকার ‘সবকা প্রয়াস’কে অনুসরণ করার জন্য যা কিছু করছি, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস’ এই বাজেটেও ‘সবকা প্রয়াস’ এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাজেট, এটা শুধুই পরিসংখ্যানের লেখাজোখা নয়। আমরা যদি সঠিক প্রক্রিয়ায়, সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে বাজেটকে কাজে লাগাই, তাহলে আমাদের সীমিত সম্পদ থেকেও আমরা অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারি। আর এটা তখনই সম্ভব হয় যখন বাজেট থেকে কী করতে হবে – এই ‘ক্ল্যারিটি’ বা স্বচ্ছতা সবার মনে স্পষ্টভাবে থাকে।
আজকের আলোচনা থেকে শিক্ষা মন্ত্রক, দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকও অনেক বেশি লাভবান হবে। কারণ, আপনাদের কথা থেকে বোঝা যাবে যে এই বাজেট কতটা ভালো, খুব ভালো কিনা। কিন্তু এতে অমুকটা করলে সমস্যা হবে, তমুকটা করলে ভালো হবে, - এরকম অনেক প্র্যাকটিক্যাল বিষয় উঠে আসবে। মন খুলে আপনারা নিজেদের মতামত জানান। মূল কথা হল, তত্ত্বজ্ঞান নিয়ে আলোচনা নয়, ব্যবহারিক জীবনে এগুলিকে কিভাবে কার্যকর করা যাবে, ভালোভাবে কার্যকর করা যাবে, সরলতার সঙ্গে কিভাবে কার্যকর করার যাবে, সরকার ও সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে যাতে কোনও দূরত্ব না থাকে, তা কিভাবে সুনিশ্চিত করা যাবে, কিভাবে মিলেমিশে কাজ করা যাবে – এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
আমি আপনাদের সবাইকে আরও একবার এই আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। সারা দিন ধরে আপনারা যে আলাপ-আলোচনা করবেন, তা থেকে অনেক ভালো বিষয় উঠে আসবে, যার ফলে শিক্ষা বিভাগ দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, আর আমরা আমাদের সম্পদের ন্যূনতম ব্যবহারের মাধ্যমে উৎকৃষ্টতম ফল নিয়ে পরবর্তী বাজেট তৈরি করতে পারব। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!