এই মন্ত্রকে সম্বল করে জি২০ সম্মেলনের ঘটনাবলীতে সকল দেশবাসীকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইটের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ স্থান অধিকার করে রয়েছে এই দেশগুলি। বিশ্ব জনসংখ্যার নিরিখে শীর্ষ সম্মেলনের সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস করেন। তাই এ হল এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।
যে দেশগুলি এই সম্মেলনে যোগদান করবে বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের মিলিত অবদান হল প্রায় ৮৫ শতাংশ।
কারণ এটি হল আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারের এক বিশেষ মঞ্চ।
‘জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্বের যে সুযোগ ভারতের সামনে এসেছে তা এক কথায় ঐতিহাসিক।
জি২০-র লোগো ও থিমের মধ্য দিয়ে তাঁদের সেই বাণী ও চিন্তাদর্শকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছে ভারত।
সার্বজনীন তথা বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে এই জি২০ লোগোটিতে।

নমস্কার,

আমার প্রিয় দেশবাসী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমস্ত পরিবারের সদস্য, কয়েকদিন পরে, পয়লা ডিসেম্বর থেকে, ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করবে। ভারতের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। আজ এই প্রেক্ষাপটে এই শীর্ষ সম্মেলনের ওয়েবসাইট, থিম এবং লোগো চালু করা হল। এই উপলক্ষে আমি সমস্ত দেশবাসীকে অনেক অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

জি-২০ হল বিশ্বের এমন দেশগুলির একটি গোষ্ঠী যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ বিশ্বের জিডিপির ৮৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। জি-২০ হল বিশ্বের এমন কুড়িটি দেশের একটি গোষ্ঠী, যারা বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। জি-২০ হল বিশ্বের এমন কুড়িটি দেশের একটি গোষ্ঠী যেগুলিতে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা বসবাস করেন এবং ভারত, এখন এই জি-২০ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে, এটির সভাপতিত্ব করতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশের সামনে কত বড় সুযোগ এসেছে তা আপনারা কল্পনা করতে পারেন। এটা প্রত্যেক ভারতীয়র জন্য গর্বের বিষয়, এটা প্রত্যেকের মনে গর্ব বাড়ানোর বিষয়। আমি খুশি যে, এবার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতে যে অনুষ্ঠানগুলি হতে চলেছে, তা নিয়ে কৌতূহল এবং সক্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। আজ চালু হওয়া এই লোগো তৈরিতে দেশবাসীর বড় ভূমিকা রয়েছে। লোগোটির জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে তাদের মূল্যবান পরামর্শ চেয়েছিলাম এবং হাজার হাজার মানুষ তাঁদের সৃজনশীল ধারণা সরকারের কাছে পাঠিয়েছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। আজ সেই ভাবনা, সেই পরামর্শগুলিই হয়ে উঠছে এত বড় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের মুখ। আমি এই প্রচেষ্টার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

জি-২০ গোষ্ঠীর এই লোগোটিও নিছকই একটি লোগো নয়। এটি একটি বার্তা। এটি একটি অনুভূতি যা আমাদের শিরায় রয়েছে। এটি একটি সংকল্প, যা আমাদের চিন্তাধারায় আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত ছিল।  'বসুধৈব কুটুম্বকম' মন্ত্রের মাধ্যমে, বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের যে চেতনা আমরা পারম্পরিকভাবে ধারণ করে এসেছি, সেই ভাবনা এই লোগো এবং মূল্ভাবনায় প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। এই লোগোতে পদ্ম ফুল ভারতের পৌরাণিক ঐতিহ্য, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে চিত্রিত করছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশে অদ্বৈত দর্শন জীবের একত্বের দর্শনরূপে পরিচিত। আজকের বিশ্বে নানা সংঘাত ও দ্বিধা নিরসনের মাধ্যম হয়ে উঠুক এই দর্শন, এই লোগো ও মূলভাবনার মাধ্যমে আমরা এই বার্তা দিয়েছি। যুদ্ধ থেকে মুক্তির জন্য বুদ্ধের বার্তা, হিংস্রতার প্রতিরোধে মহাত্মা গান্ধীর সমাধান, ভারত এভাবে জি-২০গোষ্ঠির মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক খ্যাতিতে নতুন শক্তি সঞ্চার করছে।

বন্ধুগণ,

ভারত এমন একটা সময়ে জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্ব পাচ্ছে, যখন বিশ্ব নানা সঙ্কট ও বিশৃঙ্খলার মোকাবেলা করছে। বিশ্ব এক শতাব্দীর সবচাইতে ভয়ানক মহামারীর কুপ্রভাব, যুদ্ধ, নানা দ্বন্দ্ব, বিবাদ এবং অনেক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জি-২০ লোগোতে পদ্মের প্রতীক এই সময়ে আশা সঞ্চারের প্রতিফলন তুলে ধরে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন পদ্ম যেন ফোটে। বিশ্ব যত গভীর সঙ্কটের মধ্যেই থাকুক না কেন, তবু যেন আমরা উন্নতি করতে পারি এবং বিশ্বকে একটি উন্নত স্থানে পরিণত করতে পারি!

ভারতীয় সংস্কৃতিতে, জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির দেবী - দুজনেই পদ্মের উপর উপবিষ্টা। এদেরকেই আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন : পরস্পরের অর্জিত জ্ঞানকে ভাগ করে নিতে পারলে তা আমাদের প্রতিকূল  পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং পরস্পরের সমৃদ্ধি ভাগ করে নিতে পারলে তা বিশ্বের সমস্ত প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

সেজন্যেই, জি-২০ লোগোতে, পৃথিবীকে একটি পদ্মের উপরেও রাখা হয়েছে। লোগোতে পদ্মের সাতটি পাপড়িও তাৎপর্যপূর্ণ। তারা সাতটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সঙ্গীতের সার্বজনীন ভাষায় সরগমের স্বরের সংখ্যাও সাত। সঙ্গীতে, যখন সাতটি স্বর একত্রিত হয়, তারা নিখুঁত সরগম তৈরি করে। তবে প্রতিটি স্বরের নিজস্ব স্বাতন্ত্র রয়েছে। একইভাবে, জি-২০ গোষ্ঠীর লক্ষ্য বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিশ্বকে একত্রিত করা।

বন্ধুগণ,

এটা সত্যি যে বিশ্বে যখনই জি-২০ গোষ্ঠীর মতো বড় মঞ্চের কোনও সম্মেলন হয়, তখন তা নিজস্ব কূটনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অর্থ থাকেই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, ভারতের জন্য এই শীর্ষ সম্মেলন নিছকই একটি কূটনৈতিক সম্মেলন নয়, ভারত এই শীর্ষ সম্মেলনকে নিজের জন্য একটি নতুন দায়িত্ব রূপে দেখছে। ভারত এতে তার প্রতি বিশ্বের ভারসা রূপে দেখছে। আজ বিশ্বে ভারতকে জানার, বোঝার একটি অভূতপূর্ব কৌতুহল জেগে উঠেছে। আজ ভারতকে নতুন আলোয় অধ্যয়ন করা হচ্ছে। আমাদের বর্তমানের সাফল্যগুলিকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা অভূতপূর্ব আশা জেগে উঠছে।

এই প্রেক্ষিতে এটা আমাদের দেশবাসীর দায়িত্ব যে আমরা এই আশা ও প্রত্যাশার তুলনায় অধিক মাত্রায় উন্নত কাজ করে দেখাই। এটা আমাদের দায়িত্ব যে, আমরা ভারতের দর্শন ও সামর্থ দিয়ে ভারতের সংস্কৃতি এবং সমাজের শক্তির সঙ্গে বিশ্বকে পরিচিত করাই। এটা আমাদের দায়িত্ব যে, আমরা নিজেদের কয়েক হাজার বছর পুরনো সংস্কৃতির বৌদ্ধিক স্তর এবং এতে সমাহিত আধুনিকতা দিয়ে বিশ্বের জ্ঞান বাড়াই।

যেভাবে আমরা অনেক শতাব্দী এবং সহস্রাব্দী ধরে ‘জয় জগৎ’ – এর দর্শনকে পালন করে এসেছি, আজ আমাদের আবার তাকে প্রাণবন্ত করে তুলে আধুনিক বিশ্বের সামনে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের সকলকে একসূত্রে বাঁধতে হবে। সকলকে আন্তর্জাতিক কর্তব্যগুলি সম্পর্কে অবহিত করে তুলতে হবে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ গড়তে তাদেরকে নিজেদের অংশীদারিত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে ও প্রেরণা যোগাতে হবে।

বন্ধুগণ,

আজ যখন ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে, তখন এই আয়োজন আমাদের জন্য ১৩০ কোটি ভারতবাসীর শক্তি এবং সামর্থের প্রতিনিধিত্ব করবে। আজ ভারত এই গন্তব্যে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু, এর পেছনে আমাদের কয়েক হাজার বছরের অনেক বড় যাত্রাপথ জুড়ে আছে, অনন্ত অভিজ্ঞতা জুড়ে আছে। আমরা কয়েক হাজার বছরের উৎকর্ষ এবং বৈভবকেও দেখেছি। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে অন্ধকারময় সময়কালকেও দেখেছি। আমরা কয়েক শতাব্দীর দাসত্ব এবং অন্ধকারে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্যতাময় দিনগুলিও দেখেছি। কত না হানাদার এবং অত্যাচারীদের মোকাবিলা করে ভারত এক জীবন্ত ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে আজ এখান পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সেই অভিজ্ঞতা আজ ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় তার সবচেয়ে বড় শক্তি। স্বাধীনতার পর আমরা শূন্য থেকে শুরু করে শীর্ষকে লক্ষ্য নির্ধারিত করে একটি দীর্ঘ যাত্রাপথের সূচনা করেছিলাম। এক্ষেত্রে বিগত ৭৫ বছর ধরে যত সরকার এসেছে, তাদের সকলের প্রচেষ্টা যুক্ত রয়েছে। সমস্ত সরকার এবং নাগরিকরা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে তাঁদের নিজস্ব পদ্ধতিতে মিলেমিশে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের এই উদ্যোগকে আজ একটি নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে গোটা দুনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বন্ধুগণ,

ভারতের কয়েক হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি আমাদের আরেকটি জিনিস শিখিয়েছে। যখন আমরা নিজেদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করি, তখন আমরা বিশ্বের উন্নতির পরিকল্পনাও করি। আজ ভারত বিশ্বের একটি সমৃদ্ধ এবং সজীব গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের কাছে গণতন্ত্রের শিষ্টাচারও আছে আর গণতন্ত্রের জননী রূপে একটি গৌরবময় পরম্পরাও রয়েছে। ভারতের যত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তত বৈচিত্র্যও রয়েছে। এই গণতন্ত্র, এই বৈচিত্র্য, এই একান্ত নিজস্ব কর্মপদ্ধতি দর্শন এই অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবনাচিন্তা, এই স্থানীয় জীবনশৈলী, এই আন্তর্জাতিক ভাবনার সম্ভার আজ বিশ্ব এইসব ভাবনাকে তাদের সকল প্রতিকূলতার সমাধান রূপে দেখছে।

সেজন্য জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। আমরা বিশ্বকে এটা দেখিয়ে দিতে পারি যে, কিভাবে গণতন্ত্র একটি স্বয়মসম্পূর্ণ ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি শিষ্টাচার এবং সংস্কৃতিও হয়ে উঠতে পারে, যা সমস্ত দ্বন্দ্ব ও বিবাদের কারণগুলিকে সমাপ্ত করে দিতে পারে।

আমরা বিশ্বের প্রত্যেক মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, প্রগতি ও প্রকৃতি উভয়ই পাশাপাশি চলতে পারে। আমরা সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী উন্নয়নকে নিছকই সরকারি ব্যবস্থার জায়গায় ব্যক্তিগত জীবনের অঙ্গ করে তুলতে চাই। একে বিস্তারিত করতে চাই। পরিবেশ সুরক্ষা আমাদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রয়োজনের পাশাপাশি যাতে ব্যক্তিগত দায়িত্বে পর্যবসিত হয়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

বন্ধুগণ,

আজ বিশ্ব চিকিৎসার জায়গায় আরোগ্যের অন্বেষণ করছে। আমাদের আয়ুর্বেদ, আমাদের যোগ – এগুলি নিয়ে বিশ্বে একটি নতুন বিশ্বাস এবং উৎসাহ জেগে উঠেছে। আমরা এগুলি সম্প্রসারণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। আগামী বছর বিশ্বে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস্‌’ বা মোটাদানা শস্যের জন্য আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসাবে পালন করা হবে। কিন্তু, আমরা তো কয়েক শতাব্দী ধরে অনেক মোটা দানার শস্যকে আমাদের রান্নাঘরে স্থান দিয়েছি।

বন্ধুগণ,

অনেক ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য এতই উৎসাহজনক যে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও কাজে লাগতে পারে। উদাহরণ-স্বরূপ, ভারত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে করেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য যেভাবে করেছে, দুর্নীতি রোধের জন্য আমাদের দেশে যেভাবে কাজ চলছে ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস এবং ইজ অফ লিভিং-কে উৎসাহ যোগানোর জন্য যা যা করেছে, তার সবকিছুই উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য একেকটি মডেল আর অসংখ্য টেমপ্লেট তৈরি করা হয়েছে।

এভাবেই আজ ভারত নারী ক্ষমতায়ন থেকে এগিয়ে গিয়ে মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রগতি আনছে। আমাদের জন ধন অ্যাকাউন্ট এবং মুদ্রা যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা বিশ্বকে অনেক সাহায্য করতে পারে। আর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ভারতের সভাপতিত্বে এইসব সফল অভিযানকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

বন্ধুগণ,

আজকের বিশ্ব ভারতের এই সামগ্রিক নেতৃত্বের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তা সে জি-৭ গোষ্ঠী হোক, জি-৭৭ গোষ্ঠী হোক কিংবা ইউএনজিএ হোক প্রতিটি ক্ষেত্রে এই আশা ভারতকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের উৎসাহ যোগাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসাবে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভারত একদিকে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। আর অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলির দৃষ্টিকোণকেও খুব ভালোভাবে বোঝে, তাদের অভিব্যক্তির প্রকাশ মাধ্যম হয়ে ওঠে। এই ভিত্তিতে আমরা নিজেদের জি-২০ সভাপতিত্বের রূপরেখা ‘গ্লোবাল সাউথ’ – এর সেইসব বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে মিলেমিশে পালন করবো, যারা উন্নয়নের পথে অনেক দশক ধরে ভারতের সহযাত্রী হয়ে উঠেছে।

আমরা চেষ্টা করব, যাতে বিশ্বে কোনও প্রথম বিশ্ব বা তৃতীয় বিশ্ব বলে কিছু না থাকে। যেখানে শুধুই একটি বিশ্ব থাকবে। ভারত গোটা বিশ্বকে একটি সাধারণ উদ্দেশ্যে, একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সঙ্গে নিয়ে চলার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করছে। ভারত ‘এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’ মন্ত্র নিয়ে বিশ্বে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিপ্লবকে আহ্বান জানিয়েছে। ভারত ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’ – এর মন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলার অভিযান শুরু করেছে। আর এখন এই জি-২০ গোষ্ঠীতে আমাদের মন্ত্র হ’ল – ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ভারতের এই ভাবনা, এই শিষ্টাচার বিশ্ব কল্যাণের পথকে প্রশস্ত করছে।

বন্ধুগণ,

আজ আমার দেশের সমস্ত রাজ্য সরকার, সমস্ত রাজনৈতিক দল – প্রত্যেকের কাছে আমার একটি অনুরোধ, আজকের এই আয়োজন শুধুই কেন্দ্রীয় সরকারের নয়, এই আয়োজন আমাদের মতো সমস্ত ভারতবাসীর আয়োজন। জি-২০ গোষ্ঠী আমাদের জন্য, আমাদের ‘অতিথি দেবো ভবঃ’র নিজস্ব পরম্পরাকে তুলে ধরার এটা অনেক বড় সুযোগ। এই জি-২০ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত আয়োজন শুধুই দিল্লি কিংবা কিছু স্থানে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না, এর মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য কর্মসূচি পালিত হবে। আমাদের প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব অনেক বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব সৌন্দর্য্য স্বতন্ত্র আভা এবং নিজস্ব আতিথেয়তা রয়েছে।

রাজস্থানের আতিথেয়তাপূর্ণ আমন্ত্রণ উচ্চারিত হয় ‘পধারো ম্‌হারে দেশ’! তেমনই গুজরাটের ভালোবাসাপূর্ণ অভিনন্দন উচ্চারিত হয় ‘তমারু স্বাগত ছে’! এভাবেই কেরলের ভালোবাসা দিয়ে মালায়লম ভাষায় বলা হয়, ‘এল্লাওয়ার্ক্কুম স্বাগতম্‌’! মধ্যপ্রদেশ স্বাগত জানায় ‘অতুল্য ভারত কা দিলমে আপ কা স্বাগত’! পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টি বাংলায় আপনাকে স্বাগত জানানো হয় ‘আপনাকে স্বাগত জানাই একথা বলে’! তামিলনাডু’তে বলে ‘পদএগল মুডি – ওয়দিলএ’ তাঁরা আরও বলেন ‘ফংগল ওয়রওয় নল – ওয়র – বাহুহয়’! উত্তর প্রদেশে উচ্চারিত হয় ‘ইউপি নেহি দেখা তো ভারত নেহি দেখা’! হিমাচল প্রদেশ বলে ‘এ ডেস্টিনেশন ফর অল সিজনস্‌ অ্যান্ড অল রিজনস্‌’ অর্থাৎ, প্রত্যেক ঋতু ও প্রত্যেক কারণে আমরা গন্তব্য হয়ে উঠতে পারি! উত্তরাখন্ড বলে, ‘সিম্পলি হেভেন’ বা ‘প্রকৃত স্বর্গ’ – এটাই আতিথেয়তা। এই বৈচিত্র্য বিশ্বকে বিস্মিত করে। জি-২০ গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমাদের এই ভালোবাসাকে বিশ্বের সর্বোত্র পৌঁছে দিতে হবে।

বন্ধুগণ,

আগামী সপ্তাহে আমাকে ইন্দোনেশিয়া যেতে হবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব প্রদানের ঘোষণা করা হবে। আমি দেশের সমস্ত রাজ্য ও রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, তারা যেন নিজেদের রাজ্যের ভূমিকাকে যথাসম্ভব সম্প্রসারিত করেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজ্যকে লাভবান করে তুলুন। দেশের সমস্ত নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা এই আয়োজনের অংশ হয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে আসুন। এখন যে ওয়েবসাইট-টির উদ্বোধন হ’ল, সেখানে আপনারা নিজেদের পরামর্শ পাঠাতে পারেন। নিজেদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরতে পারেন।

বিশ্ব কল্যাণের জন্য ভারত কিভাবে নিজের ভূমিকাকে সম্প্রসারিত করবে, সেই লক্ষ্যে আপনাদের পরামর্শ এবং অংশীদারিত্ব জি-২০ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনের মতো আয়োজনকে সাফল্যের নতুন উচ্চতা প্রদান করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই আয়োজন শুধু ভারতের জন্য স্মরণীয় হয়ে উঠবে না, ভবিষ্যতে বিশ্ব ইতিহাসে এই সম্মেলনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হিসাবে মনে রাখবে।

এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদের সকলকে আরেকবার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PM Modi hails diaspora in Kuwait, says India has potential to become skill capital of world

Media Coverage

PM Modi hails diaspora in Kuwait, says India has potential to become skill capital of world
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 21 ডিসেম্বর 2024
December 21, 2024

Inclusive Progress: Bridging Development, Infrastructure, and Opportunity under the leadership of PM Modi