নমস্কার। উৎসবের মরশুমে সকলকে শুভেচ্ছা।
আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আপনাদের আগ্রহ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা আশা করি আপনাদের সঙ্গে আমাদের আরও ভালো বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা এবং আমাদের চিন্তাধারা ভালোভাবে বাস্তবায়িত হবে।
বন্ধুগণ,
এ বছর ভারত আন্তর্জাতিক মহামারীর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছে। সারা বিশ্ব দেখেছে ভারতের জাতীয় চরিত্র। সারা বিশ্ব ভারতের প্রকৃত শক্তিও দেখেছে। ভারত সফলভাবে তার যে চরিত্র সেটি প্রকাশ করেছে : দায়িত্ববোধ। সহানুভূতিশীল, জাতীয় ঐক্যের ভাবনা। উদ্ভাবনের বহিঃপ্রকাশ। ভারত এই মহামারীর মধ্যেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই কিংবা আর্থিক স্থিরতাকে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা দেখিয়েছে । এই দৃঢ়তার মাধ্যমে আমাদের ব্যবস্থার শক্তি, আমাদের জনসাধারণের সমর্থন ও আমাদের নীতির স্থায়িত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। এর কারণ, আমরা আমাদের ব্যবস্থার শক্তির মাধ্যমে ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে পেরেছি, ৪২ কোটি মানুষের কাছে টাকা পাঠিয়েছি এবং ৮ কোটি পরিবারে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করেছি। জনসাধারণের সমর্থনের মধ্য দিয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া, এসব নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভারত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই চালিয়েছে। আমাদের নীতির স্থিরতার কারণে ভারত বিশ্বে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
আমরা নতুন এক ভারত গড়ে তুলছি যেখানে পুরনো ব্যবস্থাগুলিকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আজ ভারত আরও উন্নত হওয়ার জন্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আর্থিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা থেকে আর্থিক প্রজ্ঞায় রূপান্তরিত হচ্ছে। চূড়ান্ত মূল্য বৃদ্ধি থেকে মূল্য বৃদ্ধি হ্রাস করা হচ্ছে। যত্রতত্র ঋণ দেওয়ার ফলে অনুৎপাদক সম্পদ তৈরি করার পরিবর্তে সম্ভাবনা বুঝে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে ঘাটতির পরিবর্তে বাড়তি পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অব্যবস্থা ছিল সেটিকে সরিয়ে সর্বাঙ্গীণ এবং সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। কায়িকের বদলে ডিজিটাল পরিকাঠামোর দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের আত্মনির্ভর হওয়ার যে চাহিদা ౼ তার মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক কৌশলই গ্রহণ করা হচ্ছে না, এই কৌশলের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষমতা, আমাদের কর্মীদের দক্ষতা ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে উৎপাদন ক্ষেত্রের চালিকাশক্তিতে পরিণত করছে। এই কৌশলের মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছি। বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য আমরা আমাদের মানবসম্পদ এবং তাদের মেধাকে ব্যবহার করছি।
বন্ধুগণ,
আজ বিনিয়োগকারীরা সেইসব প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন যেগুলি পরিবেশগত, সামাজিক এবং পরিচালন ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ। ভারতে ইতিমধ্যেই সেই ব্যবস্থা রয়েছে এবং এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলি এ ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রণী। ভারত বিশ্বাস করে, পরিবেশগত, সামাজিক ও পরিচালনগত উন্নতির পথ অনুসরণ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
ভারত আপনাদের কাছে গণতান্ত্রিক, জনবিন্যাসগত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ চাহিদার সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে, আমাদের বৈচিত্র্যের সুযোগ আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন যার মাধ্যমে আপনারা একটি বাজারের মধ্যে অনেকগুলি বাজার পাবেন। বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পাওয়া যাবে। এ দেশে নানা ধরনের আবহাওয়া পাবেন এবং বিভিন্ন স্তরের উন্নয়ন পাবেন। এই বৈচিত্র্যের মাধ্যমে আপনারা মুক্তমনা, মুক্ত বাজার পাবেন যেখানে সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক এবং আইনানুগ একটি ব্যবস্থা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমি জানি যে এখানে শ্রেষ্ঠ কিছু আর্থিক চিন্তাবিদ রয়েছেন। তাঁরা নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের মাধ্যমে স্থিতিশীল ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে এগিয়ে যান। একইসঙ্গে আমি জানি আপনাদের চাহিদা কি। সেটি হল আপনাদের বিশ্বাস অর্জন, যার মাধ্যমে সবথেকে ভালো এবং নিরাপদ দীর্ঘস্থায়ী লাভ আপনারা তুলতে পারেন।
আর তাই বন্ধুগণ,
এই প্রসঙ্গে আমি জোর দিয়ে জানাতে চাই, আমাদের লক্ষ্য হল বিভিন্ন সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থিতিশীল সমাধান। এই লক্ষ্যের মধ্যে আপনাদের চাহিদাগুলিও কিন্তু রয়েছে। আমি এ বিষয়ে কয়েকটা উদাহরণ আপনাদের কাছে তুলে ধরব।
বন্ধুগণ,
আমরা আমাদের উৎপাদন ক্ষেত্রের সম্ভাবনার উন্নতির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা পণ্য ও পরিষেবা করের মাধ্যেম 'এক দেশ এক কর ব্যবস্থা' চালু করেছি। আমাদের দেশে কর্পোরেট করের হার যথেষ্ট কম। নতুন নতুন উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা উৎসাহের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আয়কর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করেছি। শ্রমিকদের কল্যাণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারীদের সহজে ব্যবসা করার জন্য সুষম কিছু নতুন শ্রম আইন চালু করা হয়েছে। উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্প বেশ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আনা হয়েছে। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কিছু সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমরা জাতীয় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১.৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থ বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছি। পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বহুস্তরীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতে মহাসড়ক, রেলপথ, মেট্রো রেল, জলপথ এবং বিমানবন্দর গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যাপক পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। আমরা আমাদের নব্য-মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প মূল্যে লক্ষ লক্ষ বাড়ি তৈরি করছি। আমরা চাই, শুধুমাত্র বড় বড় শহরগুলিতেই নয়, ছোট ছোট শহর এবং জনপদেও বিনিয়োগ হোক। গুজরাটের গিফট সিটি এক্ষেত্রে একটি আদর্শ উদাহরণ। আমরা এ ধরনের শহরগুলির উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করছি।
বন্ধুগণ,
উৎপাদন ক্ষেত্রে ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলছি এবং আর্থিক ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ কৌশল গ্রহণ করেছি। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সর্বাঙ্গীণ সংস্কারের মতো এরকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর্থিক বাজারকে মজবুত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্রে অভিন্ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত খোলামেলা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় কর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পরিকাঠামো বিনিয়োগ ট্রাস্ট এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ ট্রাস্টের মতো স্থিতিশীল নীতির মাধ্যমে বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। ঋণ খেলাপি আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। রুপে কার্ড এবং ভীম -ইউপিআই-এর মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-ভিত্তিক লেনদেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
উদ্ভাবনের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতি এবং সংস্কারের কেন্দ্রে রয়েছে ডিজিটাল ব্যবস্থা। আমাদের এখানে নতুন উদ্যোগ সবথেকে বেশি পরিমাণে গড়ে উঠছে। আমরা দ্রুতগতিতে উন্নয়ন করে চলেছি। ২০১৯ সালে বিকাশের হারের ভিত্তিতে বলা যায়, প্রত্যেকদিন দুই থেকে তিনটি নতুন উদ্যোগ, অর্থাৎ স্টার্ট-আপ গড়ে তোলা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বেসরকারি উদ্যোগকে সাহায্য করার জন্য আমাদের সরকার একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৌশলগত বিলগ্নিকরণ এবং সম্পদের মূল্য নির্ধারণ এর আগে কখনও এত ব্যাপক হারে হয়নি। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে আমাদের শেয়ার পরিমাণ ৫১ শতাংশের কমে নিয়ে আসা হয়েছে। কয়লা, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি, রেল, বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্রে নতুন নীতির মাধ্যমে সেগুলিকে আরও যুক্তিযুক্ত করে তোলা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আজ ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রে – উৎপাদন, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, কৃষি, আর্থিক ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে আমরা সম্প্রতি যেসব সংস্কার এনেছি তার ফলে আমাদের দেশের কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভারত খুব শীঘ্রই কৃষিক্ষেত্রে রপ্তানিকারক কেন্দ্রে পরিণত হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব হবে। জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
বন্ধুগণ,
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সম্প্রদায় তাঁদের আস্থা প্রকাশ করেছেন। বিগত পাঁচ মাসে গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে এই গোলটেবিল বৈঠকে আস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা যদি আস্থার সঙ্গে আপনাদের লভ্যাংশ ফেরত পেতে চান তাহলে বলব ভারতই হচ্ছে সেই জায়গা। আপনারা যদি চান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, তাহলে বলব ভারতই হল সেই জায়গা। আপনারা যদি চান স্থিতাবস্থা এবং স্থিতিশীলতা, ভারতই হল সেই জায়গা। আপনারা যদি চান উন্নয়ন এবং পরিবেশ-বান্ধব উদ্যোগ, ভারতই সেই জায়গা।
বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক পুনরুজ্জীবনে ভারতের বিকাশ অনুঘটকের কাজ করবে। ভারতের যে কোনও সাফল্য আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে। শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত এক ভারত বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাকে নিশ্চিত করবে। আন্তর্জাতিক উন্নয়নের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য ভারতের যা যা করণীয় আমরা সেগুলিই করব। প্রগতির উৎসাহব্যাঞ্জক সময়সীমা শুরু হয়ে গেছে। আমি আপনাদেরকে এর শরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ!