জয় জগন্নাথ!
এই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যিনি উপস্থিত, তিনি শুধু লোকসভার সাংসদই নন, সংসদীয় জীবনে একজন সেরা সাংসদ কীভাবে কাজ করে যেতে পারেন, তার জীবন্ত উদাহরণ, ভাই ভর্তৃহরি মাহতাবজি, ধর্মেন্দ্র প্রধানজি, অন্যান্য প্রবীণ অভিজ্ঞ ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়রা! 'উৎকল কেশরী' হরেকৃষ্ণ মাহতাবজির সঙ্গে যুক্ত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রায় দেড় বছর আগে আমরা সকলে 'উৎকল কেশরী' হরেকৃষ্ণ মাহতাবজির ১২০তম জয়ন্তী একটি প্রেরণার উৎসব হিসেবে পালন করেছিলাম। আজ আমরা তাঁর জনপ্রিয় বই 'ওডিশা ইতিহাসে'র হিন্দি সংস্করণ প্রকাশ করেছি। ওডিশার বিশাল এবং বৈচিত্রময় ইতিহাস দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ওড়িয়া, ইংরেজির পর হিন্দি ভাষায় এই বই প্রকাশ করে সেই প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ভাই ভর্তৃহরি মাহতাবজি, হরেকৃষ্ণ মাহতাব ফাউন্ডেশন এবং বিশেষত শঙ্করলাল পুরোহিতজিকে এই প্রয়াসের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুরা,
এই বই প্রকাশের অনুরোধ জানাতে এসে ভর্তৃহরিজি আমাকে এই বইয়ের একটি অনুলিপি দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি বইটি পড়ে শেষ করতে পারিনি, তবে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এর হিন্দি সংস্করণ অনেক সুখস্মৃতির সঙ্গে যুক্ত! এই বইটি এমন একটি বছরে প্রকাশিত হয়েছে যখন দেশ স্বাধীনতার অমৃত উৎসব উদযাপন করছে। এই বছর হরেকৃষ্ণ মাহতাবজির কলেজ ছেড়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার একশো বছর পুর্ণ হচ্ছে। গান্ধীজী যখন লবণ সত্যাগ্রহের জন্য দান্ডীযাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন হরকৃষ্ণজি ওডিশায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটাও কাকতালীয় যে ২০২৩ সালে, 'ওডিশা ইতিহাস' বইটির প্রকাশনার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। আমি মনে করি যখন কোনও ভাবনার কেন্দ্রে দেশসেবার, সমাজসেবার বীজ থাকে, তখন এধরনের সংযোগ হয়েই যায়।
বন্ধুরা,
এই বইয়ের ভূমিকায়, ভর্তৃহরিজি লিখেছেন- "ডক্টর হরেকৃষ্ণ মাহাতবজি সেই ব্যক্তিত্ব যিনি ইতিহাস রচনা করেছিলেন, দেখেছিলেন এবং তা লিখেওছিলেন"। আসলে, এধরনের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব খুব বিরল। এরকম মহাপুরুষরা নিজেরাই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাহতাবজি স্বাধীনতার লড়াইয়ে তাঁর জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বাধীনতার লড়াইয়ের পাশাপাশি তিনি সমাজের জন্যেও লড়াই করেছিলেন! বর্ণবিদ্বেষ, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে, তিনি তাঁর পৈতৃক মন্দিরটি সকলের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এবং আজও, নিজের আচরণের দ্বারা এইধরনের উদাহরণ স্থাপনের জন্যে যে শক্তির প্রয়োজন, আজ হয়তো আমরা তা অনুমান করতে পারব না। সেই যুগের পরিস্থিতি জানলে বোঝা যাবে এরজন্য কতটা সাহসের প্রয়োজন ছিল। পরিবারের কোন ধরণের পরিবেশের জন্য এই সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ওডিশার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। শহরগুলির আধুনিকীকরণ, বন্দরের আধুনিকীকরণ, স্টিল প্লান্ট ইত্যাদিতে তাঁর বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
বন্ধুরা,
এমনকি ক্ষমতায় আসার পরেও তিনি নিজেকে সর্বদা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই দেখতেন এবং তিনি সারাজীবন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই জীবন কাটিয়েছেন। একটা ঘটনা আজকের জনপ্রতিনিধিদের অবাক করে দিতে পারে যে, যে দলের হয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, জরুরি অবস্থায় তিনি সেই দলেরই বিরোধিতা করে কারাগারেও গিয়েছিলেন। অর্থাৎ, তিনি এমন এক বিরল নেতা ছিলেন যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্যেও জেল গিয়েছিলেন এবং দেশের গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্যেও জেলে গিয়েছিলেন। এবং আমার সৌভাগ্য যে জরুরী অবস্থা শেষ হওয়ার পরে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে ওডিশায় গিয়েছিলাম। আমার তখন কোনও পরিচিতি ছিল না। তবুও তিনি আমাকে সময় দিয়েছেন এবং আমার মনে আছে, দুপুরের খাবারের আগে সময় দিয়েছিলেন। সুতরাং এটাই প্রত্যাশিত যে, দুপুরের খাবার সময়ের আগেই আলোচনা শেষ হয়ে যাবে, তবে আমার মনে আছে আজ, তিনি আড়াই ঘণ্টা খেতে যাননি এবং দীর্ঘ সময় ধরে অনেক কথা বলেন। কারণ আমিও কারো জন্য গবেষণা করতে গেছিলাম। কিছু উপাদান সংগ্রহ করছিলাম বলে আমি তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। এবংআর তাই অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে বিশাল পরিবারে পুত্র সন্তান জন্ম নেন। এবং সেক্ষেত্রেও, বিশেষত রাজনৈতিক পরিবারগুলিতে এবং পরে তাঁদের সন্তানদের দেখে কখনও কখনও প্রশ্ন আসে তাঁরা কী করছেন? কিন্তু ভর্তৃহরিজিকে দেখার পর তা কেউ কখনও বলতে পারবে না। এবং এর কারণ হলো হরেকৃষ্ণজি নিজের পরিবারকে যে শিষ্টাচার, অনুশাসন ও সংস্কারের শক্তি দিয়েছিলেন, তারফলেই আমরা ভর্তৃহরিজির মতো সঙ্গী পেয়েছি।
বন্ধুরা,
এটি সবাই জানেন যে একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওডিশার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার পাশাপাশি ওডিশার ইতিহাসের প্রতিও তাঁর আকর্ষণ ছিল। তিনি ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ওডিশার ইতিহাসকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওডিশায় মিউজিয়াম হোক, সংরক্ষণাগার হোক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগই হোক না কেন, এই সমস্ত কিছুই মাহতাবজির দূরদৃষ্টি এবং অবদানের ফলেই সম্ভব হয়েছিল।
বন্ধুরা,
আমি অনেক পণ্ডিতদের কাছ থেকে শুনেছি যে আপনি যদি মাহতাবজির 'ওডিশা ইতিহাস' পড়ে ফেলেছেন, তাহলে আপনি ওডিশাকে জেনে গিয়েছেন এবং ওডিশাকে বুঝে গিয়েছেন। এবং তা সত্যিই। ইতিহাস শুধুই অতীতের একটি অধ্যায় নয়, ভবিষ্যতের আয়নাও। এই ভাবনাকে সামনে রেখে আজ দেশ অমৃত মহোৎসবের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করছে। আজ আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগ ও বলিদানের কাহিনীগুলি পুনরুজ্জীবীত করছি , যাতে আমাদের যুবসমাজ এগুলি জানার পাশাপাশি তা অনুভব করতে পারে। নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। এবং কিছু করার উদ্দেশ্যে নতুন সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক গল্প রয়েছে, যা দেশের সামনে, সেইভাবে উঠে আসেনি। ঠিক যেমন ভর্তৃহরিজি বলছিলেন ভারতের ইতিহাস রাজপ্রাসাদের ইতিহাস নয়। ভারতের ইতিহাস শুধু রাজপথের ইতিহাস নয়। জনসাধারণের জীবনের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস নিজেই গড়ে উঠেছে এবং সে কারণেই আমরা হাজার বছরের এই মহান পরম্পরা নিয়ে বেঁচে আছি। বাইরের মানুষ রাজপথ এবং রাজবাড়ির চারপাশের ঘটনাবলিকেই ইতিহাসকে বলে মনে করে। এটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। পুরো রামায়ণ এবং মহাভারত দেখুন। ৮০ শতাংশ জিনিস সাধারণ মানুষের কথা। এবং তাই সাধারণ মানুষ আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। আজ আমাদের যুবকরা ইতিহাসের সেই অধ্যায়গুলি নিয়ে গবেষণা করছে, এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে। এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে অনেক অনুপ্রেরণা বেরিয়ে আসবে, দেশের বৈচিত্র্যের কত রঙের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হবে।
বন্ধুরা,
হরেকৃষ্ণজি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এমন অনেক অধ্যায়গুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন, যা ওডিশার ব্যাপারে উপলব্ধি এবং গবেষণার নতুন মাত্রা খুলে দিয়েছে। পাইক সংগ্রাম, গঞ্জাম আন্দোলন এবং লার্জা কোলহ আন্দোলন থেকে শুরু করে সম্বলপুর সংগ্রাম পর্যন্ত ওডিশার ভূমি সবসময়ই বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের শিখাকে নতুন শক্তি দিয়েছে। ব্রিটিশরা প্রচুর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারাগারে বন্দী করেছিল, নির্যাতন করেছিল, হত্যা করেছিল! কিন্তু স্বাধীনতার উদ্যম দুর্বল হয়নি। সম্বলপুর সংগ্রামের বীর বিপ্লবী সুরেন্দ্র সাঁই আজও আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। গান্ধীজীর নেতৃত্বে যখন দেশ দাসত্বের বিরুদ্ধে শেষ লড়াই শুরু করেছিল, তখন ওডিশা এবং এর বাসিন্দারা এতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন এবং সবিনয় অবাধ্যতা আন্দোলনে ওডিশা থেকে পন্ডিত গোপবন্ধু, আচার্য হরিহর এবং হরেকৃষ্ণ মাহতাবের মতো নায়করা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। রমা দেবী, মালতী দেবী, কোকিলা দেবী, রানী ভাগ্যবতী, এমন অনেক মা-বোন ছিলেন যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামকে এক নতুন দিকনির্দেশ দিয়েছিলেন। তেমনিই আমাদের ওডিশার আদিবাসী সমাজের অবদান কে ভুলতে পারে? আমাদের আদিবাসীরা তাদের বীরত্ব ও দেশপ্রেম নিয়ে বিদেশী শাসনকে কখনই শান্তিতে বসতে দেয়নি। এবং আপনারা সম্ভবত জানেন যে আমার প্রয়াস হলো ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী সমাজ যে ভূমিকা পালন করেছে, সেই সমস্ত জায়গায় আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা। অসংখ্য কাহিনী রয়েছে, অগণিত ত্যাগ, তপস্যা ও বলিদানের কাহিনী রয়েছে। তাঁরা কীভাবে যুদ্ধ করতেন, কীভাবে তাঁরা যুদ্ধে জিতেছিলেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের পা রাখতে দেয়নি তারা। আমাদের নিজেদের, আমাদের আদিবাসী সমাজের ত্যাগ, তপস্যা এবং গৌরবের কাহিনী পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। আমাদের প্রয়াস গোটা দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী সমাজের নেতৃত্বকে আলাদাভাবে তুলে ধরে জনগণের সামনে আনা। এবং এমন অনেকগুলি গল্প রয়েছে যার দিকে সম্ভবত ইতিহাসও অন্যায় করেছে। আমাদের স্বভাব রয়েছে, চোখ ধাঁধানো যেকোনো জিনিস দেখে আমরা সেই দিকেই ঘুরে যাই। এবং এই কারণে, এই ধরনের অনেক ত্যাগ, বলিদানের গল্প রয়েছে যা সামনে উঠে আসে না। এর জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমাদের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মহান আদিবাসী নায়ক লক্ষ্মণ নায়কজিকেও স্মরণ করা উচিত। ব্রিটিশরা তাকে ফাঁসি দিয়েছিল। তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়েই ভারত মায়ের কোলে চিরনিদ্রায় শুয়েছিলেন!
বন্ধুরা,
স্বাধীনতার ইতিহাসের পাশাপাশি, অমৃত উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক পুঁজি। ওডিশায় তো আমাদের এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের একটি সম্পূর্ণ চিত্র দেখা যায়। এখানকার শিল্প, এখানকার আধ্যাত্মিকতা, এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতি পুরো দেশের ঐতিহ্য। এর সঙ্গে সারা দেশের পরিচয় হওয়া উচিত, যুক্ত হওয়া উচিত। এবং নতুন প্রজন্মের জানা উচিত। ওডিশার ইতিহাসকে আমরা যত গভীরভাবে বুঝব, যত বেশি বিশ্বের সামনে নিয়ে আসব, মানবজাতিকে বোঝার ততই বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। হরেকৃষ্ণজি তাঁর বইয়ে ওড়িশার বিশ্বাস, শিল্প ও স্থাপত্যের বিষয়ে যে আলোকপাত করেছেন তা আমাদের যুব সমাজকে এই বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে।
বন্ধুরা,
ওডিশার অতীত খুঁজে দেখলে, এতে ওডিশার পাশাপাশি পুরো ভারতের ঐতিহাসিক সম্ভাবনাও দেখা যাবে। ইতিহাসে লেখা এই সামর্থ্য বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যতের পথে আমাদের পথ প্রদর্শন করে। আপনি দেখবেন যে, ওডিশার বিশাল সমুদ্র সীমান্ত একসময় ভারতের বৃহৎ বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলির সঙ্গে যে বাণিজ্য হতো তা ওডিশার এবং ভারতের সমৃদ্ধির একটি বড় কারণ ছিল। কিছু ঐতিহাসিকদের গবেষণা তো এও বলে যে ওডিশার কোনার্ক মন্দিরে জিরাফের যে ছবি রয়েছে, তা প্রমাণ করে ওডিশার ব্যবসায়ীরা আফ্রিকা পর্যন্ত বাণিজ্য করত। এজন্য জিরাফ আঁকা হয়েছিল। সেসময় তো হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। ওডিশার বিপুল সংখ্যক মানুষ ব্যবসার জন্য অন্যান্য দেশে বাস করত, তাঁদের সাগরপারের মানুষ ওডিয়া বলত। ওডিয়ার অনুরূপ লিপি অনেক দেশে পাওয়া যায়। ইতিহাসের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এই সমুদ্র বাণিজ্যে দখল করতেই সম্রাট অশোক কলিঙ্গে আক্রমণ করেছিলেন। এই আক্রমণ সম্রাট অশোককে ধার্মিক অশোক করে তুলেছিল। এবং এভাবে ওডিশা ভারতে বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিস্তারের পাশাপাশি বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যম হয়ে ওঠে।
বন্ধুরা,
সেই সময়গুলিতে আমাদের কাছে যে প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল, প্রকৃতি আজও আমাদের তা দিয়েছে। আমাদের এখনও বিশাল সমুদ্রসীমা, মানবসম্পদ, ব্যবসায়ের সম্ভাবনা রয়েছে! এছাড়াও আজ আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের শক্তি রয়েছে। আমাদের যদি এই প্রাচীন অভিজ্ঞতা এবং আধুনিক সম্ভাবনাগুলিকে একসঙ্গে জুড়ে দিতে পারি, তাহলে ওডিশা উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারে। আজ দেশ এই দিকে জোরকদমে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা আরও বেশি প্রয়াসের দিকে সতর্ক রয়েছি। আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হইনি, তখন নির্বাচনের সিদ্ধান্তও হয়নি। সম্ভবত ২০১৩ সালে আমার একটি বক্তৃতা আছে। এটি আমার দলীয় কর্মসূচি ছিল। এবং তাতে আমি বলেছিলাম যে ভারতের ভবিষ্যত আমি কীভাবে দেখি। তাতে আমি বলেছিলাম যে ভারতে উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় না থাকলে হয়তো আমরা আমাদের সামর্থ্যের সম্পুর্ন ব্যবহার করতে সক্ষম হব না। এবং আমি সেই সময় থেকেই মনে করি যে, আমরা যদি ভারতের মাঝখানে একটি লাইন তৈরি করি, পশ্চিমে আপনারা এই সময় সমৃদ্ধি, অগ্রগতি সব দেখতে পাবেন। অর্থনৈতিক লেনদেন দেখা যাবে। নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত। তবে পূর্বে যেখানে এত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যেখানে অনেক সৃজনশীল মন রয়েছে। বিহার হোক, পশ্চিমবঙ্গ হোক, ওডিশা হোক, অসম হোক, উত্তরপূর্ব ভারত হোক, আমাদের কাছে অভূতপূর্ব মানবসম্পদ রয়েছে। এই সমস্ত একটি দুর্দান্ত সামর্থ্যের পুঁজি। শুধু এই অঞ্চলের উন্নয়ন হলে, ভারত কখনই পিছিয়ে থাকবে না। এত শক্তি রয়েছে এই অঞ্চলের। এবং তাই আপনারা অবশ্যই গত ৬ বছরের বিশ্লেষণ দেখবেন। পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হচ্ছে পরিকাঠামো। পূর্ব ভারতে এর ওপর সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। যাতে দেশের পূর্ব এবং পশ্চিমে উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় থাকে, ১৯-২০ এর পার্থক্য থাকতে পারে। এবং আমাদের জানি যে ভারতের স্বর্ণযুগ তখন ছিল, যখন পূর্ব ভারত দেশের পরিচালনা করত। ওডিশা হোক, বিহার হোক বা কলকাতাও। এগুলিই ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এবং সেই সময়, ভারতের সোনার সময় ছিল মানে এখানে আশ্চর্য শক্তি আছে। আমরা যদি সেই সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে যাই তবে আমরা ভারতকে আবার সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।
বন্ধুরা,
ব্যবসা এবং শিল্পের জন্য প্রথম প্রয়োজনীয়তা হলো- পরিকাঠামো! আজ ওডিশায় হাজার হাজার কিলোমিটারের জাতীয় মহাসড়ক তৈরি হচ্ছে, উপকূলীয় মহাসড়ক তৈরি হচ্ছে যা বন্দরগুলিকে সংযুক্ত করবে। গত ৬-৭ বছরে কয়েকশো কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করা হয়েছে। সাগরমালা প্রকল্পেও হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পরিকাঠামোর পরেই ব্যবসার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো- শিল্প! এই দিকে শিল্প সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করার কাজ চলছে। ওডিশায় যে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তারজন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তেল শোধনাগার হোক, ইথানল বায়ু শোধনাগার হোক, আজ ওডিশায় নতুন নতুন ইস্পাত কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। একইভাবে, ইস্পাত শিল্পের বিস্তৃত সম্ভাবনাকেও আকার দেওয়া হচ্ছে। ওডিশায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ওডিশার সামুদ্রিক সম্পদ থেকেও সমৃদ্ধির অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। দেশের চায় যে নীল বিপ্লবের মাধ্যমে এই সম্পদগুলি ওডিশার অগ্রগতির উপাদানে পরিণত হোক, মৎস্যজীবী এবং কৃষকদের জীবনের মান উন্নত হোক।
বন্ধুরা,
আগামী সময়ে এই বিস্তৃত সম্ভাবনার জন্য দক্ষতারও খুব প্রয়োজন। ওডিশার যুব সম্প্রদায়কে এই উন্নয়নের সর্বাধিক সুবিধা দিতে আইআইটি ভুবনেশ্বর, আইআইএসইআর বেহরামপুর এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্কিলের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই বছরের জানুয়ারিতেই আমি ওডিশায় আইআইএম সম্বলপুরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করার সুযোগ পেয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলি আগামী বছরগুলিতে ওডিশার ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন গতি দেবে।
বন্ধুরা,
উৎকলমণি গোপবন্ধু দাসজি লিখেছেন-
"জগত সরসে ভারত কনল। তা মধে পুণ্য নীলাচল।" আজ, যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রস্তুত হচ্ছে, তখন আমাদের এই অনুভূতি বুঝতে হবে, এই সংকল্প আবারও সফল করতে হবে। এবং আমি দেখেছি, হয়তো আমার কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে কখনও কখনও মনে হয় কলকাতার পরে সম্ভবত সুরাটে সবথেকে বেশি ওডিয়া বসবাস করেন। আর এ কারণেই তাঁদের সঙ্গে আমার বেশ যোগাযোগ থাকে। এমন সরল জীবন, ন্যূনতম উপায় এবং ব্যবস্থা নিয়ে আনন্দের জীবনযাপন আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এঁরা নিজের মতো থাকেন এবং তাঁদের নামে কোথাও কোনও গোলমাল দেখতে পাবেন না, এতটাই শান্তিপ্রিয় তাঁরা। এখন যদি আমি পূর্ব ভারতের কথা বলি, আজ, সারা দেশে মুম্বাই নিয়ে আলোচনা হয়। স্বাধীনতার আগে করাচি লাহোর নিয়ে আলোচনা হত। আস্তে আস্তে, বেঙ্গালুরু এবং হায়দ্রাবাদ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। চেন্নাই নিয়ে শুরু হলো౼ এদিকে কলকাতার মতো শহরের কথা অগ্রগতি, উন্নয়ন এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক কষ্টে কেউ মনে আনে। যেখানে প্রাণবন্ত কলকাতা, ভবিষ্যতের ভাবনাচিন্তা করা কলকাতা, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পুরো পূর্ব ভারতের অগ্রগতির জন্য বড় নেতৃত্ব দিতে পারে। এবং আমরা কলকাতাকে আবার প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করছি। একরকমভাবে, কলকাতা পূর্ব ভারতের উন্নয়নের একটি কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এবং আমরা এই পুরো খসড়া নিয়ে কাজ করছি। এবং আমি বিশ্বাস করি যে শুধু এবং শুধুমাত্র দেশের মঙ্গলই এই সমস্ত সিদ্ধান্তকে শক্তি দিতে পারে। আমি আজ শ্রী হরেকৃষ্ণ মাহতাব ফাউন্ডেশনের বিদ্বানদের অনুরোধ করব যে মাহতাবজির কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটি এক দুর্দান্ত সুযোগ। আমাদের ওডিশার ইতিহাস, এখানকার সংস্কৃতি, দেশের স্থাপত্য, বৈভব দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিতে হবে। আসুন, অমৃত মহোৎসবে দেশের আহ্বানে যোগ দিন, এই অভিযানকে জনগণের অভিযান করে তুলি। আমি নিশ্চিত যে এই অভিযানের ফলে একই বিচারধারার শক্তির প্রবাহ তৈরি হবে যার ইচ্ছা শ্রী হরেকৃষ্ণ মাহতাবজি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় করেছিলেন। এই শুভ সংকল্প নিয়ে, আমি আবারও এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলাম। আমি মাহতাব ফাউন্ডেশনের কাছে কৃতজ্ঞ। ভাই ভর্তৃহরিজির কাছে কৃতজ্ঞ। আমি এখানে এসে আপনাদের সবার মাঝে আমার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। এবং ইতিহাসের যে ঘটনাগুলির প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান রয়েছে, সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!