নমস্কার!
আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সমস্ত সহযোগীবৃন্দ, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীগণ, দেশে ও বিদেশে রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়ার প্রশংসক ও পরিবারের সদস্যগণ, তাঁর প্রিয় মানুষেরা এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আজ এখানে এই অনুষ্ঠানে আসার আগে আমি বিজয়া রাজেজির জীবনের বিভিন্ন ঘটনা পড়ছিলাম। কয়েকটি পাতায় আমার নজর আটকে যায়। সেখানে একটা প্রসঙ্গ ছিল 'একতা যাত্রা'র, যাতে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল গুজরাটের একজন যুব নেতা নরেন্দ্র মোদী হিসেবে।
আজ এত বছর পর তাঁর সেই নরেন্দ্র দেশের প্রধান সেবক হয়ে, তাঁর অনেক স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আপনাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা হয়তো জানেন, যখন কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয়েছিল ডঃ মুরলী মনোহর যোশীর নেতৃত্বে, আমি সেই যাত্রার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছিলাম।
রাজমাতাজি সেই কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কন্যাকুমারী এসেছিলেন। আর তারপর যখন আমরা শ্রীনগর যাচ্ছিলাম, তখন জম্মুতে তিনি আমাদের বিদায় জানাতে এসেছিলেন আর তিনি লাগাতার আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমাদের স্বপ্ন ছিল শ্রীনগরের লালচকে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। আমাদের লক্ষ্য ছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা থেকে মুক্তি। রাজমাতাজি সেই যাত্রা শুরু করিয়েছিলেন, যে স্বপ্ন তিনি সেদিন দেখেছিলেন, তা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ যখন বইয়ের পাতায় তাঁর জীবনের কথা পড়ছিলাম, আমার দু- চোখ জলে ভরে আসছিল।
বইয়ের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “একদিন এই শরীর এখানেই থেকে যাবে, আত্মা যেখান থেকে এসেছে সেখানে চলে যাবে … শূণ্য থেকে শূণ্যে। স্মৃতিগুলি শুধু থেকে যাবে। নিজের এই স্মৃতিগুলিকে আমি তাঁদের জন্য রেখে যাব, যাঁরা আমার কথার মূল্য দিয়েছেন, যাঁদেরকে আমি মূল্য দিয়েছি!”
আজ রাজমাতাজি যেখানেই থাকুন, আমাদের দেখছেন, আমাদের আশীর্বাদ করছেন। আমরা সবাই যত শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তিনি শ্রদ্ধা পাচ্ছেন, তিনি এখানেও এই বিশেষ কর্মসূচিতে কিছু মানুষের মাধ্যমে পৌঁছে গেছেন এবং উপস্থিতও আছেন। আর দেশের অনেক অংশে কোণায় কোণায় এই অনুষ্ঠানটি ভার্চ্যুয়ালি পালন করা হচ্ছে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হওয়ার, তাঁর সেবা–ধর্ম, তাঁর বাৎসল্য অনুভব করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আজ তাঁর পরিবারে, তাঁর ঘনিষ্ঠজনেদের অনেকেই এই অনুষ্ঠানে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর জন্য আমরা সবাই, প্রত্যেক দেশবাসীই তাঁর পরিবারের মানুষই ছিলাম। রাজমাতাজি বলতেন, "আমি এক পুত্রের নয়। আমি তো সহস্র পুত্রের মা। তাঁদের ভালোবাসায় আমি আকন্ঠ ডুবে থাকি।" আমরা সবাই তাঁর পুত্র–কন্যাদের অন্যতম, তাঁর পরিবারের অংশ।
এটা আমার অত্যন্ত বড় সৌভাগ্য যে রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়াজির স্মৃতিতে ১০০ টাকার বিশেষ স্মারক মুদ্রা উন্মোচনের সৌভাগ্য আমার হচ্ছে। যদিও আমি নিজেকে আজ অত্যন্ত বাধিত অনুভব করছি, অনেক বাধিত অনুভব করছি, কারণ আমি জানি যদি করোনা মহামারী না থাকত, আজ এই কর্মসূচির স্বরূপ কত বড় হত, কত জাঁকজমকপূর্ণ হত। কিন্তু একথা অবশ্যই মানি, আমার সঙ্গে রাজমাতার যেরকম সম্পর্ক ছিল, অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ না হতে পারলেও, এটি পবিত্র হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
বিগত শতাব্দীতে ভারতকে যাঁরা পথ দেখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া। রাজমাতাজি শুধুই বাৎসল্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন না, তিনি একজন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেত্রী ছিলেন এবং কুশল প্রশাসকও ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পর অনেক দশক ধরে, ভারতীয় রাজনীতির প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের তিনি সাক্ষী ছিলেন। স্বাধীনতার আগে বিদেশি বস্ত্রের হোলি বা বহ্ন্যুৎসব থেকে শুরু করে জরুরি অবস্থা এবং রাম মন্দির আন্দোলন পর্যন্ত, রাজমাতার অভিজ্ঞতার ব্যাপক বিস্তার আমাদেরকে ঋদ্ধ করেছে।
আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে এসে যুক্ত হচ্ছিলাম, যাঁরা তাঁর ঘনিষ্ঠ। তিনি সেটা খুব ভালোভাবেই জানতেন, তার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলিও খুব ভালোভাবেই জানতেন। কিন্তু এটাও অত্যন্ত জরুরি যে রাজমাতার জীবনযাত্রাকে, তাঁর জীবনের বার্তাগুলিকে দেশের বর্তমান প্রজন্মও জানুক, তার থেকে প্রেরণা নিক, তার থেকে শিখুক। সেজন্য তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বারবার কথা বলা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছুদিন আগে 'মন কি বাত' কর্মসূচিতে আমি অনেকটাই বিস্তারিতভাবে তাঁর ভালোবাসা নিয়ে চর্চা করেছিলাম।
বিয়ের আগে রাজামাতাজি কোনও রাজপরিবারের মেয়ে ছিলেন না। একটি সামান্য পরিবারের মেয়ে ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর তিনি সবাইকে নিজের করে নিয়েছেন এবং এই শিক্ষা দিয়েছেন যে জনসেবার জন্য, রাজকীয় দায়িত্বের জন্যও কোনও বিশেষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা জরুরি নয়।
যে কোনও সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি যোগ্যতা থাকে, প্রতিভা থাকে, দেশসেবার ভাবনা থাকে – তিনিই এই গণতন্ত্রের শাসন প্রণালীকে নিজের জীবনের সেবার মাধ্যম করে তুলতে পারেন। আপনারা কল্পনা করুন, তাঁর হাতে শাসন ক্ষমতা ছিল, সম্পত্তি ছিল, সামর্থ্য ছিল, কিন্তু সেই সবকিছু থেকে এগিয়ে রাজমাতার যে মূল সম্পদ ছিল তা হল তাঁর শিষ্টাচার, সেবা এবং ভালোবাসার ঝর্ণাধারা।
এই ভাবনা, এই আদর্শ তাঁর জীবনের প্রত্যেক পদক্ষেপে আমরা দেখতে পাই। এতবড় রাজ ঘরাণার হর্তা–কর্তা রূপে তাঁর ৫ হাজারেরও বেশি কর্মচারী ছিল। বিশাল মহল ছিল, সমস্ত সুযোগ–সুবিধা ছিল। কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে, গ্রাম–গরীবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের জন্য নিজের জীবন সমর্পণ করে দিয়েছেন।
রাজমাতা এটা প্রমাণ করেছেন যে, জনপ্রতিনিধির জন্য রাজসত্ত্বা নয়, জনসেবা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একটি রাজ পরিবারের মহারাণী ছিলেন। রাজশাহী পরম্পরার অঙ্গ ছিলেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংঘর্ষকেই জীবনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি জেলে কাটিয়েছেন।
জরুরি অবস্থার সময় তিনি যে অত্যাচার সহ্য করেছেন তার সাক্ষী আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছি। জরুরি অবস্থার সময়েই তিহার জেল থেকে তিনি নিজের মেয়েদেরকে চিঠি লিখতেন, সম্ভবত, ঊষা রাজেজি, বসুন্ধরা রাজে কিংবা যশোধরা রাজেজির সেই চিঠিগুলির কথা মনে আছে। রাজমাতাজি সেই চিঠিগুলিতে যা লিখেছিলেন, তাতে আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় শিক্ষা ছিল। তিনি লিখেছিলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বুক চিতিয়ে বাঁচার প্রেরণা জোগাতে আমাদের আজকের বিপদকে ধৈর্য্যের সঙ্গে সহ্য করা উচিৎ।”
রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য রাজামাতা নিজের বর্তমান সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তিনি নিজের সমস্ত সুখ ত্যাগ করেছিলেন। রাজমাতা কোনও পদ এবং প্রতিষ্ঠার জন্য বেঁচে থাকেননি, রাজনীতিকে পথ হিসেবে বেছে নেননি। এরকম অনেক সুযোগ এসেছে যখন অনেক বড় পদ তাঁর সামনে এসে চলে গেছে। কিন্তু তিনি বিনম্রতার সঙ্গে সেই পদকে গ্রহণ করেননি। একবার স্বয়ং অটলবিহারী বাজপেয়ীজি এবং লালকৃষ্ণ আদবানিজি তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে তিনি জনসঙ্ঘের অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করেন। কিন্তু একজন কর্মী হিসেবে জনসঙ্ঘের সেবা করার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
রাজমাতাজি চাইলে এদেশে একটার থেকে একটা বড় পদে পৌঁছনো তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল না। কিন্তু তিনি মানুষের মাঝে থেকে গ্রাম এবং গরীবের সঙ্গে যুক্ত থেকে তাঁদের সেবা করা পছন্দ করতেন।
বন্ধুগণ,
আমরা রাজমাতার জীবনের প্রতিটি অংশ থেকে প্রতি মুহূর্তে অনেক কিছু শিখতে পারি। তাঁর এমন অনেক গল্প আছে, জীবনের অসংখ্য ঘটনা আছে যা তাঁর ঘনিষ্ঠ মানুষেরা সবাইকে বলে যান।
‘একতা যাত্রা'রই আরেকটি গল্প। যখন তিনি জম্মুতে ছিলেন, তখন দু'জন নতুন কর্মকর্তাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাজমাতা এই দু'জনের মধ্যে একজনের নাম মাঝেমধ্যে ভুলে যেতেন, আর বারবার অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করতেন, তুমি গোলু না? আর তোমার অন্য বন্ধুটির নাম কি? সেই বন্ধুটি 'গোলু' ডাকনামে ডাকা পছন্দ করতেন না। সে সঙ্গে সঙ্গে বলে দিত যে আমার নাম অমুক, ওর নাম তমুক। আপনি নাম দিয়ে কী করবেন, আপনি শুধু আওয়াজ দিয়ে দিন। কিন্তু রাজমাতা তাঁকে জবাব দেন, আমার কর্মকর্তারা আমাকে সাহায্য করছেন আর আমি তাঁদের ঠিকমতো চিনব না, এটা তো ঠিক নয়।
আমার মনে হয়, কেউ যদি সামাজিক জীবনযাপন করেন, তাহলে তিনি যে দলেরই সদস্য হোন না কেন, ছোট–বড় সমস্ত কর্মকর্তাদের প্রতি এই ভাবনা আমাদের সকলের মনে থাকা উচিৎ। অভিমান নয়, সম্মান – এটাই রাজনীতির মূলমন্ত্র। তিনি সেটাই নিজের জীবনে পালন করে দেখিয়ে গেছেন।
বন্ধুগণ,
রাজমাতার জীবনে আধ্যাত্মবাদের অধিষ্ঠান ছিল। সাধনা, উপাসনা, ভক্তি তাঁর অন্তর্মনে বাস করত। কিন্তু যখন তিনি ভগবানের উপাসনা করতেন, তখন তাঁর পূজা মন্দিরে কেবলমাত্র একটি ভারতমাতার চিত্র থাকত। ভারতমাতার উপাসনা তাঁর জন্য এমনই আস্থার বিষয় ছিল।
আমি একবার তাঁর সঙ্গে জড়িত একটি কথা এক বন্ধুকে বলেছিলাম। আর, আমি যখন তাঁর কথা মনে করি, বলি, আমার মনে হয়, আপনাদেরকেও সেটা শোনাই। একবার তিনি পার্টির কোনও কর্মসূচিতে মথুরা গিয়েছিলেন। মথুরা গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই তিনি বাঁকেবিহারীর দর্শন করতে গিয়েছিলেন। বাঁকেবিহারীর মন্দিরে তিনি যে প্রার্থনা করেন তার মর্ম বোঝা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাজমাতা সেদিন ভগবান কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন … রাজমাতার জীবনকে ভালোভাবে বুঝতে হলে তিনি সেদিন ভগবান কৃষ্ণের সামনে দাঁড়িয়ে ভক্তিভরে কী চেয়েছিলেন সেটা বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মনে আধ্যাত্মিক চেতনা জেগে উঠেছিল, আর তিনি ভগবান কৃষ্ণের সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, "হে কৃষ্ণ এমন বাঁশরি বাজাও যে গোটা ভারতের সমস্ত নর–নারী আরেকবার জেগে উঠবে।" আপনারা ভাবুন, নিজের কোনও কামনা নয়, যা চেয়েছেন দেশের জন্য চেয়েছেন, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য চেয়েছেন, আর প্রতিটি মানুষকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। আর তিনি সারা জীবন ধরে যা কিছু করেছেন সব দেশের জন্য করেছেন। এক জাগ্রত দেশের নাগরিক কতকিছু করতে পারে সেটা তিনি জানতেন, বুঝতেন। আজ যখন আমরা রাজমাতাজির জন্ম শতাব্দী পালন করছি, এই শতাব্দী সমারোহ আজ যখন পূর্ণতায় পৌঁছেছে, তখন আমাদের মনে সন্তুষ্টি রয়েছে যে ভারতের নাগরিকদের তিনি যেভাবে জাগ্রত দেখতে চেয়েছিলেন, বাঁকেবিহারীর কাছে তিনি যে প্রার্থনা করেছিলেন, তা আজ এই ধরাতলে চেতনা রূপে অনুভূত হচ্ছে।
বিগত বছরগুলিতে দেশে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক অভিযান এবং প্রকল্প সফল হয়েছে। এইসব কিছুর ভিত্তি হল এই জনচেতনা, জনজাগৃতি এবং জন–আন্দোলন। রাজমাতাজির আশীর্বাদে দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। গ্রাম, গরীব, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, মহিলারা আজ দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
নারীশক্তি সম্পর্কে তাঁর যে বিশেষ ভাবনা ছিল, তিনি বলতেন, “যে হার কৃষ্ণকে ঝোলায় ঝোলাতে পারে, সে হাত বিশ্বে রাজত্বও করতে পারে।” আজ ভারতের এই নারীশক্তি প্রত্যেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ ভারতের মেয়েরা আকাশে ফাইটার জেট ওড়াচ্ছেন। নৌ–বাহিনীতে যোদ্ধার ভূমিকায় নিজেদের পরিষেবা দিচ্ছেন। আজ তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন তৈরি হওয়ার ফলে দেশে রাজমাতার সেই ভাবনা, নারী ক্ষমতায়নকে তিনি যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য, ভারতের একতার জন্য তিনি যে সংঘর্ষ করেছেন, যে চেষ্টা করেছেন, তার পরিণাম আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেশ রাজমাতাজির অনেক বড় স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছে। আর এটাও একটা অদ্ভূত সংযোগ যে রাম জন্মভূমি মন্দির নির্মাণের জন্য তিনি যে সংঘর্ষ করেছিলেন, রাজমাতাজির জন্ম শতাব্দীর বছরেই সেই রাম জন্মভূমির স্বপ্নও বাস্তবায়িত হয়েছে।
আজ যখন রাম জন্মভূমির কথা উঠলোই তখন আমি অবশ্যই বলতে চাইব যখন আদবানিজি সোমনাথ থেকে অযোধ্যার রথযাত্রা শুরু করেছিলেন, আর রাজমাতাজি সেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আমাদের সকলের ইচ্ছা ছিল, আর রাজমাতাজিও চাইছিলেন যে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাঁর থাকা উচিৎ। কিন্তু সমস্যা এসে দাঁড়িয়েছিল যে সেই সময় নবরাত্রির অনুষ্ঠান চলছিল আর আমাদের রাজমাতা নবরাত্রির অনুষ্ঠান করতেন। আর তিনি যে স্থানে অনুষ্ঠান করতেন পুরো দশদিন সেই অনুষ্ঠানের এলাকা ছেড়ে যেতেন না।
সেজন্য রাজমাতা সাহেবের সঙ্গে যখন আমি কথা বলছিলাম তখন তিনি বলেন, “দেখো ভাই আমি তো যেতে পারব না, কিন্তু আমার যাওয়া খুব প্রয়োজন।" আমি বললাম, পথ বলুন। তিনি বলেন, গোটা নবরাত্রির সময়টা আমি গোয়ালিয়র থেকে বেরিয়ে সোমনাথে গিয়ে থাকতে চাই। আর সেখানেই আমি সম্পূর্ণ নবরাত্রি পালন করব, আর সেই নবরাত্রির সময়েই সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু হলে আমি সেই অনুষ্ঠানেও হাজির হতে পারব।
রাজমাতাজির উপবাস ব্রত ছিল খুব কঠিন ব্রত। আমি সেই সময় নতুন নতুন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। একজন কর্মকর্তা রূপে ব্যবস্থাপনা দেখতাম। আমি সোমনাথে রাজমাতার সমস্ত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপণা সামলাই। আর সেই সময় আমার রাজমাতাজির অত্যন্ত কাছে থাকার সুযোগ হয়। আর আমি দেখি, সেই সময় তাঁর এই সম্পূর্ণ পূজার প্রক্রিয়া, গোটা নবরাত্রির অনুষ্ঠান এক প্রকার যেন অযোধ্যার রথযাত্রা এবং রাম মন্দিরকে সমর্পণ করে তিনি সে বছর আয়োজন করেছিলেন। সমস্ত প্রক্রিয়াটাই আমি নিজের চোখে দেখেছি।
বন্ধুগণ,
রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়াজির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে এই গতিতেই কাজ করে যেতে হবে। শক্তিশালী, সুরক্ষিত, সমৃদ্ধ ভারত তাঁর স্বপ্ন ছিল। তাঁর এই স্বপ্নকে আমরা আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্য দিয়ে বাস্তবায়িত করব। রাজমাতার প্রেরণা আমাদের সঙ্গে রয়েছে, তাঁর আশীর্বাদ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
এই শুভকামনা জানিয়ে আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আর রাজমাতাজি যেভাবে তাঁর জীবন কাটিয়েছেন, কল্পনা করুন আজ একজন কেউ যদি তহসিলের অধ্যক্ষ হয়, তাঁর মেজাজ কিরকম হয়? কিন্তু আমাদের রাজমাতা এতবড় ঘরানার রানি, এতবড় ক্ষমতা, সম্পত্তি – এত সবকিছু থাকার পরেও, এত সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে কেমন নম্রতা ছিল, তাঁর বিবেক কতটা জাগ্রত ছিল, তাঁর শিষ্টাচার কিভাবে প্রতিটি মানুষকে প্রেরণা জোগাত।
আসুন, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর এই কথাগুলি নিয়ে যাই, তাঁকে নিয়ে আলোচনা করি। শুধু রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর শিষ্টাচারকে নিয়ে যাই। আজ ভারত সরকারের এটা সৌভাগ্য যে আমরা রাজমাতাজির সম্মানে এই মুদ্রা দেশের সামনে উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি।
আমি আরেকবার রাজমাতাজিকে শ্রদ্ধাসহ প্রণাম জানিয়ে আমার বাণীকে বিরাম দিচ্ছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।