উপস্থিত সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ। সবার আগে আমি মা বৈষ্ণোদেবী পরিসরে হওয়া দুঃখজনক দুর্ঘটনার জন্য শোক জানাচ্ছি। অকারণ ছোটাছুটির ফলে যে মানুষরা প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, আমাদের সমবেদনা তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে। আমার লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাজির সঙ্গেও কথা হয়েছে। ত্রাণের কাজ, আহতদের চিকিৎসার দিকে সম্পূর্ণ নজর রাখা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
এই কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার যে সহযোগীগণ যুক্ত হয়েছেন, ভিন্ন রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীরা হয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রীরা যুক্ত হয়েছেন, অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কোটি কোটি কৃষক ভাই ও বোনেরা। যাঁরা ভারতে রয়েছেন, যাঁরা ভারতের বাইরে থেকে এই অনুষ্ঠান দেখছেন, এমন প্রত্যেক ভারতবাসীকে, ভারতের প্রত্যেক শুভচিন্তককে এবং বিশ্ব সমুদায়কে ২০২২ সালের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। বছরের শুরুতেই দেশের কোটি কোটি অন্নদাতাদের সঙ্গে থাকা, বছরের শুরুতেই আমার দেশের নানা প্রান্ত থেকে কৃষক ভাই-বোনেদের দর্শনের সৌভাগ্য পাওয়া, এই ঘটনাই আমার জন্য অত্যন্ত বড় প্রেরণার বিষয়। আজ দেশের কোটি কোটি কৃষক পরিবারকে, বিশেষ করে, ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের দশম কিস্তির অর্থ প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর করা হয়েছে। কৃষকদের ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ আমাদের ‘কিষাণ উৎপাদ সংগঠন’ বা ফার্মার্স প্রোডিউস অর্গানাইজেশনসগুলির (এফপিও) সঙ্গে যুক্ত কৃষকদেরকেও আর্থিক সাহায্য হস্তান্তর করা হয়েছে। শত শত এফপিও আজ নতুন সূচনা করছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয় –
“আমুখায়াতি কল্যাণং কারিয়সিদ্ধিং হি শংসতি”
অর্থাৎ, সফল সূত্রপাত কার্যসিদ্ধির, সঙ্কল্পের সিদ্ধির ঘোষণা আগেই করে দেয়। একটি দেশ রূপে আমরা ২০২১-কে, আমাদের বিগত বছরটিকে এমনভাবেই দেখতে পারি। ২০২১সালটি ১০০ বছরে আসা সবচাইতে বড় মহামারীর বিরুদ্ধে মোকাবিলার বছর। এই মোকাবিলায় কোটি কোটি ভারতবাসীর সামগ্রিক সামর্থ্য, দেশ কী করে দেখিয়েছে ;আমরা সবাই তার সাক্ষী। আজ যখন আমরা নতুন বছরে প্রবেশ করছি, তখন বিগত বছরে আমাদের প্রচেষ্টাগুলি থেকে প্রেরণা নিয়ে আমাদের নতুন সঙ্কল্পগুলির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
এ বছর আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ করব। এই সময়টি হল দেশের সঙ্কল্পগুলির একটি নতুন জীবন্ত যাত্রা শুরু করার, নতুন সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। ২০২১-এ আমরা ভারতীয়রা গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠি, তখন অনেক বড় লক্ষ্যও আমাদের জন্য ছোট হয়ে যেতে পারে! কে ভাবতে পেরেছিল যে এত কম সময়ে ভারতের মতো এত বিশাল দেশ, বৈচিত্র্যে ভরা দেশ, ১৪৫ কোটি টিকার ডোজ দিতে পারবে? কে ভেবেছিল যে ভারত একদিনে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টিকার ডোজের রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারবে? কে ভেবেছিল যে ভারত এক বছরে ২ কোটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জলের সুবিধা পৌঁছে দিতে পারবে?
ভারত এই করোনার সঙ্কটকালে অনেক মাস ধরে তার ৮০ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করছে। ভারত শুধু এই বিনামূল্যে রেশন প্রদানের প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। বিনামূল্যে শস্য বিতরণের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সবচাইতে বড় লাভ হয়েছে দেশের গ্রামগুলির, দরিদ্রদের, গ্রামে বসবাসকারী আমাদের কৃষক বন্ধুদের, তাঁদের পরিবারের আর খেত মজুরদের।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“সঙ্ঘে শক্তি কলৌ য়ুগে”
অর্থাৎ, এই যুগে সংগঠনের মধ্যেই সবচাইতে বেশি শক্তি থাকে। সংগঠিত শক্তি অর্থাৎ, ‘সবকা প্রয়াস’। ‘সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধি’র পথে যাওয়ার রাস্তা। যখন ১৩০ কোটি ভারতবাসী মিলিতভাবে এক কদম এগিয়ে যান, তখন সেটা এক কদম হয় না, ১৩০ কোটি কদম হয়। আমাদের ভারতীয়দের স্বভাব হল, কিছু না কিছু ভালো করে আমরা একটা আলাদা শান্তি পাই। কিন্তু যখন এই ভালো করার উদ্দেশ্য নিয়ে এধরণের মানুষরা মিলিত হন, ছড়িয়ে থাকা মুক্তোর মালা তৈরি হয়, তখন সেখানে ভারতমাতা দেদীপ্যমান হয়ে ওঠেন। কতো না মানুষ দেশের জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করছেন, দেশ নির্মাণ করছেন। এই কাজ আগেও মানুষ করেছেন, কিন্তু তাঁদের পরিচয় দেওয়ার কাজ এখন হচ্ছে, আমরা সেই দায়িত্ব পালন করছি। প্রত্যেক ভারতবাসীর শক্তি আজ সামগ্রিক রূপে পরিবর্তিত হয়ে দেশের বিকাশকে নতুন গতি এবং নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করছে। যেমন, সম্প্রতি যখন আমরা পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত মানুষদের নামগুলি শুনেছি, তাঁদের চেহারা ও কাজের কথা জেনেছি, তখন আনন্দে মন ভরে উঠেছে। এঁদের সকলের প্রচেষ্টাতেই আজ ভারত করোনার মতো এত বড় মহামারীর মোকাবিলা করতে পারছে।
ভাই ও বোনেরা,
করোনার এই কঠিন সময়ে দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করতে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও সম্প্রসারিত করতে, ক্রমাগত কাজ চলছে। ২০২১-এ দেশে শত শত নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়েছে, হাজার হাজার নতুন ভেন্টিলেটর হাসপাতালের বিশেষ শয্যাগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ২০২১-এ দেশে অনেক নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়েছে। কয়েক ডজন মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২১-এ দেশে হাজার হাজার ‘ওয়েলনেস সেন্টার’ও গড়ে তোলা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অভিযান দেশের জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে, ভালো হাসপাতাল, ভালো টেস্টিং ল্যাব-এর নেটওয়ার্ককে মজবুত করে তুলবে। ডিজিটাল ইন্ডিয়াকে নতুন শক্তি প্রদানের মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও সুলভ, আরও কার্যকরী করে তুলবে।
ভাই ও বোনেরা,
আজ অনেক অর্থনৈতিক সূচক আগের থেকে ভালো ফল দিচ্ছে। যখন করোনা আমাদের মধ্যে ছিল না, তার আগের থেকে দ্রুত গতিতে আমরা এগুচ্ছি। আজ আমাদের অর্থনীতির বিকাশের হার ৮ শতাংশেরও বেশি। ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আমাদের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। জিএসটি আদায়ের ক্ষেত্রেও আমরা পুরনো সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছি। রপ্তানির ক্ষেত্রে, আর বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে আমরা নতুন নতুন কীর্তি স্থাপন করেছি।
বন্ধুগণ,
আজ আমাদের দেশ তার বৈচিত্র্য এবং বিশালতার অনুরূপ প্রত্যেক ক্ষেত্রে উন্নয়নেও বিশাল সাফল্য অর্জন করছে, রেকর্ড তৈরি করছে। ২০২১-এ ভারত প্রায় ৭০ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন শুধু ইউপিআই-এর মাধ্যমে করেছে। ডিজিটাল লেনদেন করেছে। আজ ভারতে ৫০ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ কাজ করছে। এগুলির মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ এই গত ছয় মাসে গড়ে উঠেছে। ২০২১-এ ভারতের নবীন প্রজন্ম করোনার এই কালখণ্ডেও ৪২টি ইউনিকর্ন তৈরি করে একটি নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। আমি আমার কৃষক ভাই-বোনেদের জানাতে চাই যে এক একটি ইউনিকর্ন মানে হল প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার থেকেও বেশি মূল্যের স্টার্ট-আপ। এত কম সময়ে এত প্রগতি, আজ ভারতের নবীন প্রজন্ম সাফল্যের নতুন গাথা লিখছেন।
আর বন্ধুগণ,
আজ যেখানে ভারত একদিকে নিজের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম মজবুত করছে, তেমনই অন্যদিকে নিজের সংস্কৃতিকেও ততটাই গর্বের সঙ্গে মজবুত করে তুলছে। কাশী বিশ্বনাথধাম সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে কেদারনাথ ধামের উন্নয়ন প্রকল্প পর্যন্ত, আদি শঙ্করচার্যের সমাধি পুনর্নিমান থেকে শুরু করে মা অন্নপূর্ণার মূর্তি সহ ভারত থেকে চুরি হওয়া কয়েকশ’ মূর্তি ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে ধৌলাভিরা এবং দুর্গাপূজা উৎসব ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর মর্যাদা পাওয়া পর্যন্ত – এ বছরে ভারতের গর্ব করার মতো এত কিছু! আমাদের দেশের প্রতি গোটা বিশ্বের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এখন যখন আমরা নিজেদের এই ঐতিহ্যগুলিকে শক্তিশালী করে তুলছি, তখন নিশ্চিতভাবেই পর্যটনও বৃদ্ধি পাবে আর তীর্থযাত্রাও বাড়বে।
বন্ধুগণ,
ভারত তার যুব সম্প্রদায়ের জন্য, নিজের দেশের মহিলাদের জন্য আজ অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০২১-এ ভারত তার সৈনিক স্কুলগুলিকে মেয়েদের জন্য খুলে দিয়েছে। ২০২১-এ ভারত ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির দরজাও মহিলাদের জন্য খুলে দিয়েছে। ২০২১-এ ভারতের মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর অর্থাৎ, ছেলেদের সমকক্ষ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আজ ভারতে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কারণে প্রায় ২ কোটি মহিলা বাড়ির মালিকানার অধিকারও পেয়েছেন। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা, আমাদের গ্রামের বন্ধুরা বুঝতে পারবেন যে এটা কত বড় কাজ হয়েছে।
বন্ধুগণ,
২০২১-এ আমরা ভারতের খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা নতুন আত্মবিশ্বাস দেখেছি। গোটা ভারতে খেলাধূলার প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। একটি নতুন যুগের সূত্রপাত হয়েছে। যখন ভারতীয় খেলোয়াড়রা টোকিও অলিম্পিক্সে এতগুলি মেডেল জিতে এসেছেন, তখন আমরা সবাই আনন্দিত হয়েছি। আমরা প্রত্যেকেই গর্বিত হয়েছি যখন আমাদের দিব্যাঙ্গ খেলোয়াড়রা প্যারালিম্পিকে ইতিহাস রচনা করেছেন। প্যারালিম্পিকের ইতিহাসে ভারত এখন পর্যন্ত যত মেডেল জিতেছে, তার থেকে বেশি মেডেল আমাদের দিব্যাঙ্গ খেলোয়াড়রা এবারের প্যারালিম্পিকে জিতেছেন। ভারত আজ তার স্পোর্টস পার্সনস এবং স্পোর্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে যতটা বিনিয়োগ করছে ততটা আগে কখনও করা হয়নি। আগামীকালই আমি মীরাটে আরও একটি ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে শুরু করে দেশের অসংখ্য গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভার স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত তার নীতি ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্য সিদ্ধ করেছে। ভারত ২০১৬ সালে এই লক্ষ্য রেখেছিল যে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ‘ইনস্টল্ড ইলেক্ট্রিসিটি ক্যাপাসিটি’র ৪০ শতাংশ ‘নন-ফসিল এনার্জি সোর্সেস’ থেকে মেটাবে। ভারত তার এই লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে করা স্থির করলেও, ২০২১-এর নভেম্বরেই সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলতে পেরেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বের সামনে ‘জিরো কার্বন এমিশন’-এর লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। আজ ভারত হাইড্রোজেন মিশন নিয়ে কাজ করছে, ইলেক্ট্রিক ভেহিকেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশে কোটি কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করার ফলে প্রত্যেক বছর গরীবদের, মধ্যবিত্তদের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের বিল সাশ্রয় হচ্ছে। সারা দেশের শহরগুলিতে স্থানীয় প্রশাসন স্ট্রিট লাইটকেও এলইডি-তে পরিবর্তনের অভিযান চালিয়েছে আর আমার কৃষক ভাই-বোনেরা, আমাদের অন্নদাতারাও যেন জ্বালানি উৎপাদক হয়ে ওঠেন, সেই লক্ষ্যেও ভারত অনেক বড় অভিযান শুরু করেছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কুসুম যোজনা’র মাধ্যমে কৃষকরা চাষের খেতের আলে সোলার প্যানেল লাগিয়ে সৌরশক্তি উৎপাদন করতে পারছেন। এর জন্যও তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ কৃষকদের সরকার সোলার পাম্পও দিয়েছে। এর ফলে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে আর পরিবেশও সুরক্ষিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
২০২১ বছরটি করোনার বিরুদ্ধে দেশের কঠিন লড়াইয়ের ফলে মনে রাখা হবে। তেমনই এই সময়ে ভারতে যে সংস্কারগুলি হয়েছে সেগুলির চর্চাও দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকবে। গত বছর ভারত আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ এবং সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রে সরকারের দখলদারি কমানো থেকে শুরু করে প্রত্যেক ভারতবাসীর সামর্থ্যকে তুলে ধরতে আর সকলের প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যপ্রাপ্তি যেন হয়; এই দায়বদ্ধতা থেকেই একে মজবুত করে তোলা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করে তুলতে বিগত বছরে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ দেশে পরিকাঠামো নির্মাণের গতিতে নতুন প্রাণসঞ্চার করেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে নতুন মাত্রা যুক্ত করার মাধ্যমে দেশের মধ্যেই চিপ উৎপাদন, সেমি-কেন্ডাক্টরের মতো নতুন ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প চালু করা হয়েছে। গত বছরই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার জন্য দেশ সাতটি নতুন প্রতিরক্ষা কোম্পানি পেয়েছে। আমরা প্রথম ‘প্রোগ্রেসিভ ড্রোন পলিসি’ও চালু করেছি। মহাকাশে দেশের আকাঙ্ক্ষাগুলির নতুন উড়ানের জন্য ইন্ডিয়ান স্পেস অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান’ ভারতের উন্নয়ন যাত্রাকে গ্রামে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। ২০২১-এ হাজার হাজার নতুন গ্রামকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা আমাদের কৃষক বন্ধুরা, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা, তাঁদের ছেলেমেয়েরা লাভবান হয়েছে। ২০২১-এই ‘ই-রুপি’র মতো নতুন ডিজিটাল পেমেন্ট সমাধানও শুরু করা হয়েছে। ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পও সারা দেশে চালু করা হয়েছে। আজ দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ভাই-বোনেদের ‘ই-শ্রম কার্ড’ দেওয়া হচ্ছে যাতে সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা তাঁরা সহজেই পেতে পারেন।
ভাই ও বোনেরা,
২০২২ সালে আমাদের নিজেদের গতিকে আরও দ্রুত করতে হবে। করোনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিন্তু, করোনা আর ভারতের গতিকে থামাতে পারবে না। ভারত সম্পূর্ণ সতর্কতা বজায় রেখে, সাবধানতা বজায় রেখে, করোনার বিরুদ্ধেও লড়বে, আর রাষ্ট্রীয় হিতের জন্যও কাজ করবে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“জহীহি ভীতিম ভজ ভজ শক্তিম।
ভিধেহি রাষ্ট্রে তথা অনুরক্তিম।।
কুরু কুরু সততম ধ্যেয় – স্মরণম।
সদৈব পুরতো নিধেহি চরণম।।”
অর্থাৎ, ভয় ও আশঙ্কাকে ঝেড়ে আমাদের শক্তি এবং সামর্থ্যকে স্মরণ করতে হবে। দেশপ্রেমের ভাবনা সর্বোপরি রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের লক্ষ্যগুলিকে মাথায় রেখে ক্রমাগত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ‘রাষ্ট্র সর্বাগ্রে’ – এর ভাবনা নিয়ে দেশের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা, আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনোভাবে পরিণত হচ্ছে। এজন্যই আজ আমাদের প্রচেষ্টাগুলিতে ঐক্যবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের ‘সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধি’র অধীরতা রয়েছে। আজ আমাদের নীতিগুলির মধ্যে নিরন্তরতা রয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে দূরদর্শিতা রয়েছে। দেশের অন্নদাতাদের প্রতি সমর্পিত আজকের এই কর্মসূচিও এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। পিএম কিষাণ সম্মান নিধি ভারতের কৃষকদের অনেক বড় সম্বল হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকবার, প্রত্যেক কিস্তি যথাসময়ে তাঁরা পাচ্ছেন। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর হচ্ছে। কোনও দালাল ছাড়া, কোনও কমিশন ছাড়া। আগে কি কেউ কল্পনাও করতে পারতেন যে ভারতে এরকমও হতে পারে? আজকে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের অর্থ নিয়ে ভারতে কিষাণ সম্মান নিধি বাবদ এখন পর্যন্ত কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ হস্তান্তর হয়েছে। আজ কৃষক ভাই-বোনেরা তাঁদের ছোটখাটো খরচের জন্যও কিষাণ সম্মান নিধি থেকে পাওয়া টাকা খরচ করতে পারছেন। ক্ষুদ্র কৃষকরা এই অর্থ দিয়ে ভালো মানের বীজ কিনছেন, ভালো সার এবং অন্যান্য কৃষিজ উপকরণ কিনছেন।
বন্ধুগণ,
দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্রমবর্ধমান সামর্থ্যকে সংগঠিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ‘কিষাণ উৎপাদ সংগঠন’ বা এফপিও-গুলির অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। যে ক্ষুদ্র কৃষকরা আগে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতেন, তাঁদের হাতে এখন এফপিও রূপে পাঁচটি বড় শক্তি এসেছে। প্রথম শক্তিটি হল, উন্নত দরদামের ক্ষমতা। আপনারা সবাই জানেন, যখন আপনারা বিচ্ছিন্নভাবে চাষ করতেন তখন কী হত? আপনাদের বীজ থেকে শুরু করে সার পর্যন্ত সবকিছু আলাদাভাবে বাজারে দরে কিনতে হত কিন্তু, বিক্রি করতে হত পাইকারি দরে। এতে বিনিয়োগের খরচ বাড়ত আর লাভ কম হত। কিন্তু এফপিও-গুলির মাধ্যমে এখন চিত্র বদলে যাচ্ছে। এফপিও-গুলির মাধ্যমে এখন কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি কৃষকরা পাইকারি দরেই কেনেন আর খুচরো দরে বেচেন।
এফপিও থেকে যে দ্বিতীয় শক্তি কৃষকরা পেয়েছেন তা হল, বৃহৎ স্তরে বাণিজ্য শক্তি। এটি এফপিও রূপে কৃষকরা সংগঠিত হয়ে কাজ করেন। ফলে, তাঁদের জন্য সম্ভাবনাও অনেক বাড়ে। তৃতীয় শক্তি হল, উদ্ভাবনের শক্তি।একসঙ্গে অনেক কৃষক মিলেমিশে কাজ করেন। তখন তাঁদের অভিজ্ঞতাও সম্মিলিত হয়। জ্ঞানও বাড়ে। নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য পথ খোলে। এফপিও-গুলির সঙ্গে যুক্ত থাকায় কৃষকরা যে চতুর্থ শক্তিতে বলিয়ান হন, সেটি হল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তি। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করলে আপনারা বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলাও একসঙ্গে করতে পারেন। যে কোনও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সমাধানও সকলে মিলে খুঁজে বের করতে পারেন আর পঞ্চম শক্তি হল, বাজারের হিসেবে নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা। বাজার আর বাজারের চাহিদা নিয়মিত পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছে এ সম্পর্কে তথ্য সব সময় থাকে না। আবার অনেক সময় তাঁরা এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদই যোগাতে পারেন না। কখনও অনেকে একটাই ফসল বপন করে দেন, আর পরে জানতে পারেন যে এখন তার চাহিদাই কমে গেছে। কিন্তু এফপিও-তে আপনারা শুধু যে বাজারের হিসেবে প্রস্তুতি নেন তাই নয়, নিজেরা বাজারে নতুন পণ্যের জন্য চাহিদা সৃষ্টি করার শক্তি রাখেন।
বন্ধুগণ,
এফপিও-র এই শক্তিকে অনুধাবন করে আজ আমাদের সরকার তাদেরকে প্রত্যেক স্তরে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এই এফপিও-গুলিকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। এর ফল হল, আজ দেশে অর্গ্যানিক এফপিও ক্লাস্টার্স, অয়েল সিড ক্লাস্টার্স, ব্যাম্বু ক্লাস্টার্স এবং হানি এফপিও-দের মতো বেশ কিছু ক্লাস্টার দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের কৃষকরা আজ ‘এক জেলা এক পণ্য’-এর মতো প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করছেন। দেশ-বিদেশের বড় বড় বাজার তাঁদের জন্য খুলে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে আজও এরকম অনেক জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি হয় যেগুলির প্রয়োজন দেশের কৃষকরাই অত্যন্ত সহজে মেটাতে পারেন। এর সবচাইতে বড় উদাহরণ হল ভোজ্য তেল। আমরা বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল কিনি। দেশের অনেক টাকা অন্য দেশে চলে যায়। এই টাকা যাতে এখন দেশের কৃষকরা পান, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের সরকার ১১ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করে ‘ন্যাশনাল পাম অয়েল মিশন’ চালু করেছে।
বন্ধুগণ,
গত বছর দেশ একের পর এক অনেক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। করোনার প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও আপনারা সবাই নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশে অন্ন উৎপাদনকে রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। গত বছর দেশে শস্য উৎপাদন ৩০০ মিলিয়ন টন ছাপিয়ে গেছে। হর্টিকালচার, ফ্লোরিকালচার, বাগিচা চাষ ও ফুল-ফলের চাষের ক্ষেত্রেও এখন উৎপাদন ৩৩০ মিলিয়ন টন ছাপিয়ে গেছে। ৬-৭ বছর আগের তুলনায় দেশে দুধের উৎপাদনও প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষকরা যেমন রেকর্ড পরিমাণ ফসল উৎপাদন করছেন, তেমনই সরকারও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে রেকর্ড পরিমাণ ফসল ক্রয় করছে। সেচের ক্ষেত্রেও আমরা ‘প্রতি বিন্দু জলে অধিক ফসল’ পদ্ধতিকে উৎসাহ যোগাচ্ছি। বিগত বছরগুলিতে ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাঁই যোজনা’র মাধ্যমে প্রায় ৬০ লক্ষ হেক্টর জমিকে মাইক্রো-ইরিগেশন বা ক্ষুদ্র সেচের মাধ্যমে ‘প্রতি বিন্দু জলে অধিক ফসল’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় কৃষকদের যে লোকসান হত, তাঁরা যে সমস্যায় পড়তেন আমরা তা লাঘবের চেষ্টা করেছি। ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’র মাধ্যমে কৃষকরা যে ভর্তুকি পান তার পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকারও ওপরে পৌঁছে গেছে। এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশে কৃষকরা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকাই প্রিমিয়াম হিসেবে দিয়েছেন, কিন্তু তাঁদের পাওয়া অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গেছে। ভাই ও বোনেরা, ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকেও যেন কৃষকরা অর্থ রোজগার করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার চেষ্টাকে আমরা ত্বরান্বিত করেছি। ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে বায়ো-ফুয়েল বা জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য সারা দেশে কয়েকশ’ নতুন ইউনিট চালু করা হচ্ছে। সাত বছর আগে যেখানে দেশে প্রতি বছর ৪০ কোটি লিটারেরও কম ইথানল উৎপাদন হত, এখন তা বেড়ে ৩৪০ কোটি লিটারেরও বেশি হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ সারা দেশে ‘গোবর্ধন যোজনা’ চলছে। এর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গোবর থেকে বায়ো-গ্যাস উৎপাদনের জন্য উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। বায়ো-গ্যাসের উপযোগীতা বৃদ্ধির জন্য সারা দেশে প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। এই প্ল্যান্টগুলি থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন উন্নতমানের জৈব সারও উৎপাদিত হবে, যা কৃষকরা কম দামে পাবেন। যখন গোবর থেকেও তাঁরা টাকা পাবেন, তখন সেই পশুগুলিকে আর বোঝা বলে মনে হবে না যেগুলি দুধ দেয় না বা দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সমস্ত পশু যদি দেশের কাজে লাগে তাহলে কেউ অসহায় থাকবেন না, এটাও এক ধরনের আত্মনির্ভরতা।
বন্ধুগণ,
পশুদের চিকিৎসা যেন বাড়িতেই হতে পারে, বাড়িতেই যেন কৃত্রিম গর্ভ সঞ্চারের ব্যবস্থা হয়, তা সুনিশ্চিত করার অভিযানও আজ শুরু করা হয়েছে। পশুদের ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ’ বা ক্ষুর পাকা মুখ পাকা-র রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও টিকাকরণ অভিযান চলছে। সরকার ‘কামধেনু আয়োগ’ গঠন করেছে। ডেয়ারি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের সরকারই লক্ষ লক্ষ পশুপালকদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করেছে।
বন্ধুগণ,
পৃথিবীই আমাদের মা। অথচ আমরা দেখেছি যে এখানে পৃথিবী মা-কে বাঁচানোর কোনও চেষ্টা হয়নি। মানুষের লোভের শিকার হয়ে মাটি নিষ্ফলা হয়ে গেছে। আমাদের মাটিকে নিষ্ফলা হওয়া থেকে বাঁচানোর একটা বড় পদ্ধতি হল রাসায়নিক-মুক্ত কৃষি। সেজন্য গত বছর দেশে একটি দূরদর্শী প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টা হল ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ। এই বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র একটু আগেই আপনারা দেখলেন। আমি চাইব যে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই তথ্যচিত্রটি পৌঁছে দেওয়া হোক।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত কত কিছু আমরা আমাদের পুরনো প্রজন্মের কাছ থেকে শিখেছি। এটাই প্রকৃত সময় যখন আমাদের এই পারম্পরিক জ্ঞানকে সুব্যবস্থিতভাবে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করে কাজে লাগাতে হবে। আজ বিশ্বে কেমিক্যাল-ফ্রি বা রাসায়নিক-মুক্ত শস্যের ভীষণ চাহিদা, আর অত্যন্ত বেশি দামে এগুলি কেনার জন্য অনেকেই তৈরি হয়ে বসে আছেন। এতে বিনিয়োগ কম আর উৎপাদনও বেশি হয়। এতে অধিক লাভ সুনিশ্চিত হয়। রাসায়নিক-মুক্ত হওয়ায় আমাদের মাটির স্বাস্থ্য, ঊর্বরতার শক্তি এবং এই খাদ্যশস্য গ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আমি আজ আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব যে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজকেও আপনারা সবাই আপন করে নিন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজে জোর দিন।
ভাই ও বোনেরা,
নতুন বছরের এই প্রথম দিনটি নতুন সঙ্কল্পের দিন। এই সঙ্কল্প স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশকে আরও সমর্থ ও সক্ষম করে তুলবে। এখান থেকে আমাদের উদ্ভাবনের নতুন কিছু করার সঙ্কল্প নিতে হবে। কৃষির ক্ষেত্রে এই নতুনত্বই আজ সময়ের চাহিদা। নতুন নতুন ফসল, নতুন কৃষি পদ্ধতি আপন করে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিধাগ্রস্ত হলে চলবে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্কল্পকেও আমাদের ভুললে চলবে না। গ্রামে গ্রামে, খেতে-খামারে – প্রত্যেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতার প্রদীপ যেন জ্বলতে থাকে, এটা আমাদের সুনিশ্চিত করতে হবে। তবে সব থেকে বড় সঙ্কল্প হল আত্মনির্ভরতার সঙ্কল্প। ‘লোকালের জন্য ভোকাল’ হওয়ার সঙ্কল্প। আমাদের ভারতে প্রস্তুত প্রতিটি জিনিসকে আন্তর্জাতিক পরিচয় দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় হল ভারতে উৎপন্ন, ভারতে নির্মিত প্রতিটি পণ্য, প্রত্যেক পরিষেবাকে আমরা যেন অগ্রাধিকার দিই।
আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে আমাদের আজকের কাজ আগামী ২৫ বছর ধরে আমাদের উন্নয়ন যাত্রার লক্ষ্য স্থির করবে। এই যাত্রাপথে আমাদের সকলের ঘাম, প্রত্যেক দেশবাসীর পরিশ্রম যুক্ত হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা সকলে মিলে দেশের গৌরবময় পরিচয় ফিরিয়ে আনব আর দেশকে একটি নতুন উচ্চতা দেব। আজ নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের কোটি কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা ট্রান্সফার হওয়া এমনই একটি প্রচেষ্টা।
আপনাদের সবাইকে আরও একবার ২০২২ সালের এই নববর্ষের জন্য মঙ্গলকামনা, অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!