সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়।
সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়।
মঞ্চে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ, সমস্ত সাধু-সন্ন্যাসী এবং ঋষিগণ, এখানে যাঁরা উপস্থিত এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আমাদের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, সমস্ত রামভক্তরা, আপনাদের সবাইকে প্রণাম, সবাইকে রাম-রাম।
আজ আমাদের রাম এসে গেছেন! অনেক শতাব্দীর প্রতীক্ষার পর আমাদের রাম এসে গেছেন। অনেক শতাব্দীর অভূতপূর্ব ধৈর্য, অগুণতি আত্মবলিদান, ত্যাগ এবং তপস্যার পর আমাদের প্রভু রাম এসে গেছেন। এই শুভ মুহূর্ত উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে, সমস্ত দেশবাসীকে, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমি একটু আগেই গর্ভ গৃহে ঈশ্বরীয় চেতনার সাক্ষী হয়ে আপনাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছি। কতকিছু বলার আছে ... কিন্তু কন্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে আসছে। আমার শরীর এখনও স্পন্দিত হচ্ছে। চিত্ত এখনও সেই মুহূর্তে লীন হয়ে আছে। আমাদের রাম লালা এখন আর তাঁবুতে থাকবেন না। আমাদের রাম লালা এখন এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরে থাকবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অপার শ্রদ্ধা থেকে আমি অনুভব করছি যা হয়েছে তার অনুভূতি, দেশের, বিশ্বের, কোণায় কোণায় যত রামভক্ত রয়েছেন, তাঁরাও অনুভব করছেন। এই মুহূর্তটি অলৌকিক। এই মুহূর্তটি পবিত্রতম। এই আবহ, এই পরিবেশ, এই প্রাণশক্তি, এই মুহূর্ত ... এসব কিছুই আমাদের ওপর প্রভু শ্রীরামের আশীর্বাদস্বরূপ। ২২ জানুয়ারি, ২০২৪-এর এই সূর্য একটি অদ্ভুত আভা নিয়ে এসেছে। ২২ জানুয়ারি ২০২৪, এটি নিছকই ক্যালেন্ডারে লেখা একটি তারিখ নয়। এটি একটি নতুন কালচক্রের উদ্গম দিবস। রাম মন্দিরের ভূমি পূজনের পর থেকে প্রতিদিন গোটা দেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ক্রমেই বাড়ছিল। এই মন্দিরের নির্মাণকার্য দেখে দেশবাসীর মনে প্রতিদিন একটি নতুন বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছিল। আজ আমাদের অনেক শতাব্দীর সেই ধৈর্য্যের ফল পেয়েছি। আজ আমরা শ্রীরামের জন্য মন্দির পেয়েছি। দাসত্বের মানসিকতাকে ঘিরে যে দেশ উঠে দাঁড়িয়েছে, অতীতের প্রতিটি দংশনের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যে দেশ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে, সে দেশই এরকম নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে। আজ থেকে হাজার বছর পরেও মানুষ আজকের এই দিনটি নিয়ে, আজকের এই মুহূর্তটি নিয়ে আলোচনা করবেন। আর, এটা প্রভু রামচন্দ্রের কত বড় কৃপা যে আমরা সবাই এই মুহূর্তে জীবিত রয়েছি এই ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটতে দেখছি। আজকের দিনে সমস্ত দিশা, সমস্ত দিক-দিগন্ত দিব্যতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সময় সামান্য সময় নয়। এই সময় কালচক্রের সর্বকালীন কালি দিয়ে কখনও না মেটাতে পারা স্মৃতিরেখাগুলি অঙ্কন করে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আমরা সবাই জানি, যেখানে রামের কোনো কাজ হয়, সেখানে পবনপুত্র হনুমান অবশ্যই বিরাজমান থাকেন। সেজন্য আমি রামভক্ত হনুমান এবং হনুমানগঢ়িকেও প্রণাম জানাচ্ছি। আমি মাতা জানকী, লক্ষ্মণজি, ভরত, শত্রুঘ্ন সবাইকে প্রণাম জানাই। আমি পবিত্র অযোধ্যাপুরী এবং পবিত্র সরযু নদীকেও প্রণাম জানাই। আমি এই মুহূর্তে যে দৈব প্রভাব অনুভব করছি, যাঁদের আশীর্বাদে এই মহান কার্য সম্পন্ন হচ্ছে ... যে দিব্য আত্মারা, যে দৈবী বিভূতিরাও এই সময় আমাদের চারপাশে উপস্থিত রয়েছেন। আমি সমস্ত দিব্য চেতনার অস্তিত্বকেও কৃতজ্ঞতা সহকারে প্রণাম জানাই। আমি আজ প্রভু শ্রীরামের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদের পৌরুষ, আমাদের ত্যাগ, তপস্যায় যদি কিছু ত্রুটি থেকে গিয়ে থাকে, আমরা যেহেতু এত শতাব্দী ধরে এই কাজ করে উঠতে পারিনি, আজ সেই ত্রুটি দূর হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, প্রভু রাম আজ অবশ্যই আমাদের ক্ষমা করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
ত্রেতা যুগে রামের আগমন নিয়ে তুলসীদাসজি লিখেছিলেন -
“প্রভু বিলোকি হরষে পুরবাসী।
জনিত বিয়োগ বিপতি সব নাসী।”
অর্থাৎ, প্রভুর আগমন দেখেই সমস্ত অযোধ্যাবাসী, সমগ্র দেশবাসী আনন্দ-উল্লাসে মত্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ বিয়োগের ফলে যে বিরহ তৈরি হয়েছিল, তারও অন্ত হল। সেই কালখণ্ডে সেই বিয়োগ-বিরহ মাত্র ১৪ বছরের ছিল। তখন সেই ১৪ বছর এত অসহ্য ছিল। বর্তমান যুগে অযোধ্যা এবং দেশবাসীকে কয়েকশ’ বছর এই বিয়োগ-বিরহ সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের অনেক প্রজন্ম এই বিরহ সহ্য করেছে। ভারতের সংবিধানে, তার প্রথম সংস্করণে, ভগবান রাম বিরাজমান। সংবিধান বাস্তবায়িত হওয়ার পরও কয়েক দশক ধরে প্রভু শ্রীরামের অস্তিত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলে। আমি ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চাই যাঁরা বিচারের সম্মান রক্ষা করেছেন। প্রভু রামের মন্দিরও আজ সমস্তরকম আইন মেনেই গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
আজ দেশের প্রতিটি গ্রামে একসঙ্গে কীর্তন, রাম সংকীর্তন গাওয়া হচ্ছে। আজ প্রতিটি মন্দিরে উৎসব পালিত হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে। গোটা দেশ আজ দীপাবলি পালন করছে। আজ সন্ধ্যায় দেশের প্রতিটি বাড়িতে রাম জ্যোতি প্রজ্জ্বলিত করার প্রস্তুতি চলছে। গতকালই শ্রীরামের আশীর্বাদে আমি ধনুষকোড়িতে রামসেতুর সূচনা বিন্দু অরিচল মুনাই-এ ছিলাম। যে মুহূর্তে প্রভু রাম সমুদ্র পাড় করতে বেরিয়েছিলেন, তখন একটা মুহূর্ত ছিল যা কালচক্রকে বদলে দিয়েছিল। আমি সেই ভাবময় মুহূর্তকে অনুভব করার বিনম্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম। সেখানে আমি পুষ্পবন্দনা করেছি। সেখানে আমার মনে একটা বিশ্বাস জেগে ওঠে যে সেই সময় কেবল কালচক্র গতি বদলেছিল, একইরকমভাবে আজ কালচক্রের গতি আবার বদলাবে, আর শুভ দিশায় এগিয়ে যাবে। আমার ব্যক্তিগত ১১ দিনের কঠোর ব্রত অনুষ্ঠানের সময় আমি সেই অঞ্চলগুলির চরণ স্পর্শ করার চেষ্টা করেছি, যেখানে যেখানে প্রভু রামের পদচিহ্ন পড়েছে। তা সে নাসিকের পঞ্চবটী ধাম হোক কিংবা কেরালার পবিত্র ত্রিপ্রায়র মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশের লেপাক্ষী মন্দির হোক, শ্রীরঙ্গমের রঙ্গনাথস্বামী মন্দির হোক, রামেশ্বরমে শ্রী রামনাথস্বামী মন্দির হোক, কিংবা ধনুষকোড়ি ... আমার সৌভাগ্য যে এই পবিত্র মন নিয়ে সাগর থেকে সরযু পর্যন্ত যাত্রার সুযোগ পেয়েছি। সাগর থেকে সরযু পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় রাম নামের সেই উৎসবের আবহ গড়ে উঠেছে। প্রভু রাম তো ভারতের আত্মার প্রতিটি কণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। প্রভু রাম ভারতবাসীর অন্তর্মনে বিরাজ করেন। আমরা ভারতের যেকোনো জায়গায় যেকোনো মানুষের অন্তরাত্মাকে যদি স্পর্শ করি, তাহলে এই একতাকে অনুভব করব। আর এই ভাব সর্বত্র দেখতে পাব। এর থেকে উৎকৃষ্ট, এর থেকে বেশি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার সূত্র আর কী হতে পারে?
আমার প্রিয় দেশবাসী,
দেশের প্রতিটি কোণা থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় রামায়ণ শোনার সুযোগ আমি পেয়েছি, কিন্তু বিশেষ করে গত ১১ দিনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে বিশেষ রূপে রামায়ণ শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। রামকে পরিভাষিত করে ঋষিরা বলেছেন -
“রমন্তে য়স্মিন্ ইতি রামঃ।।”
অর্থাৎ, যার মধ্যে আমরা লীন হয়ে যাই, তাই-ই রাম। রাম জনগণের স্মৃতিতে পরব থেকে শুরু করে পরম্পরা পর্যন্ত সর্বত্র লীন হয়ে আছেন। প্রত্যেক যুগের মানুষ রামকে নিয়ে বেঁচেছেন। প্রত্যেক যুগের মানুষ নিজস্ব ভাষায়, শব্দে, নিজের মতো করে রামের অভিব্যক্তিকে অনুভব করেছেন। আর এই রামরস জীবন প্রবাহের মতোই নিরন্তর প্রবাহিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে ভারতের প্রত্যেক প্রান্তের মানুষ রামরসে আচমন করে গেছেন। এই রামকথা অসীম, এই রামায়ণও অনন্ত। রামের আদর্শ, রামের মূল্যবোধ, রাম থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলি দেশের সর্বত্র একরকম।
প্রিয় দেশবাসী,
আজ এই ঐতিহাসিক সময়ে দেশ সেই ব্যক্তিত্বদেরও স্মরণ করছে, যাঁদের কার্য এবং সমর্পণের ফলেই আজ আমরা এই শুভদিন দেখতে পাচ্ছি। রাম মন্দির নির্মাণের এই কর্মযজ্ঞে কত মানুষের ত্যাগ এবং তপস্যা সুফলদায়ক হয়েছে, সেই অগুণতি রামভক্তদের, সেই অগুণতি কর সেবকদের আর সেই অগুণতি সাধু মহাত্মাদের কাছে আমরা সবাই ঋণী।
বন্ধুগণ,
আজকের এই শুভ মুহূর্ত, এই উৎসবের মুহূর্ত অবশ্যই। কিন্তু এর পাশাপাশি এই মুহূর্ত ভারতীয় সমাজের পরিপক্কতা বোধের মুহূর্তও। আমাদের জন্য এই সুযোগ শুধু বিজয়ের মুহূর্ত এনে দেয়নি, বিনয়ের মুহূর্তও এনে দিয়েছে। বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী যে অনেক দেশ নিজেরই ইতিহাসে জড়িয়ে আটকে পড়ে। সেই দেশগুলি যখনই তাদের ইতিহাসের জড়িয়ে পড়া গিঁটগুলি খোলার চেষ্টা করেছে, তখন অনেক কষ্টে সাফল্য এসেছে। অনেকবার তো এরকম হয়েছে যে আগের থেকে বেশি কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ইতিহাসের এই গিঁটকে যে নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে, যে আবেগ নিয়ে বলা হয়েছে, তা বলে যে আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের অতীত থেকে বেশি সুন্দর হতে চলেছে। একদিন এমন সময়ও ছিল যখন কিছু মানুষ বলতেন যে রাম মন্দির নির্মাণ করলে দেশে আগুন লেগে যাবে। এরকম মানুষেরা ভারতের সামাজিক মনোভাবের পবিত্রতাকে অনুভব করতে পারেননি। রাম লালার এই মন্দির নির্মাণ ভারতীয় সমাজের শান্তি, ধৈর্য্য, পারস্পরিক সদ্ভাব এবং সমন্বয়েরও প্রতীক। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই নির্মাণ কোনো আগুনকে জন্ম দিচ্ছে না, বরং শক্তির জন্ম দিচ্ছে। এই রাম মন্দির নির্মাণ সমাজের প্রত্যেক বর্গকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে এসেছে। আমি আজ সেই মানুষদের আহ্বান জানাব ... আসুন, আপনারা অনুভব করুন, আপনাদের ভাবনাকে পুনর্বিচার করুন। রাম আগুন নয়, রাম শক্তি। রাম বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম শুধু আমাদের নয়, রাম তো সবার। রাম শুধু বর্তমান নয়, রাম অনন্তকালের।
বন্ধুগণ,
আজ যেভাবে রাম মন্দির প্রাণ-প্রতিষ্ঠার এই আয়োজনের সঙ্গে গোটা বিশ্ব যুক্ত হয়েছে, এতে রামের সর্বব্যাপকতার দর্শন আমরা করতে পারছি। ভারতের সর্বত্র যেভাবে উৎসব পালিত হচ্ছে, ঠিক একইভাবে আরও অনেক দেশে এই উপলক্ষে উৎসব পালিত হচ্ছে। আজ অযোধ্যার এই উৎসব রামায়ণের সেই আন্তর্জাতিক পরম্পরারও উৎসবে পরিণত হয়েছে। রাম লালার এই প্রতিষ্ঠা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ভাবনাকেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বন্ধুগণ,
আজ অযোধ্যায় নিছকই শ্রীরামের বিগ্রহ রূপে প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হয়নি। এটি শ্রীরামের রূপে সাক্ষাৎ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অটুট বিশ্বাসেরও প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই সাক্ষাৎ নানা মানবিক মূল্যবোধ এবং নানা মহান আদর্শেরও প্রাণ-প্রতিষ্ঠা। এই মূল্যবোধগুলির, এই আদর্শগুলির প্রয়োজনীয়তা আজ গোটা বিশ্বের। “সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ” - এই সঙ্কল্প আমরা কয়েক শতাব্দীর ধরে উচ্চারণ করে আসছি। আজ সেই সঙ্কল্প রাম মন্দির রূপে সাক্ষাৎ আকার পেয়েছে। এই মন্দির, মাত্র নিছকই একটি দেব মন্দির নয়, এটি ভারতের দৃষ্টির, ভারতের দর্শনের, ভারতের দিকদর্শনেরও মন্দির। এটি রামরূপে রাষ্ট্রীয় চেতনার মন্দির। রাম ভারতের আস্থা, রাম ভারতের আধার। রাম ভারতের বিচার, রাম ভারতের বিধান। রাম ভারতের চেতনা, রাম ভারতের চিন্তন। রাম ভারতের প্রতিষ্ঠা, রাম ভারতের প্রতাপ। রাম একটি প্রবাহের নাম। রাম, একটি প্রভাবের নাম। রাম যেমন নেতি, রাম তেমনই নীতিও। রাম যেমন নিত্যতা, রাম তেমনই নিরন্তরতাও। রাম বিভু, রাম বিশদ। রাম ব্যাপক, রাম বিশ্ব। রাম বিশ্বাত্মা। আর সেজন্য যখন রামের প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তার প্রভাব অনেক বছর বা শতাব্দী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। তার প্রভাব হাজার হাজার বছর ধরে থাকে। মহর্ষি বাল্মিকী বলেছিলেন – “রাজ্যম্ দশ সহস্রাণি প্রাপ্য বর্ষাণি রাঘবঃ” অর্থাৎ, রাম দশ হাজার বছরের জন্য রাজ্যে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অর্থাৎ, হাজার হাজার বছরের জন্য রাম রাজ্য স্থাপিত হল। যখন ত্রেতায় রাম এসেছিলেন, তখন কয়েক হাজার বছরের জন্য রাম রাজ্য স্থাপন হয়েছিল। হাজার হাজার বছর ধরে রাম গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়ে গেছেন। আর সেজন্য আমার প্রিয় দেশবাসী,
আজ অযোধ্যাভূমি আমাদের সকলের উদ্দেশে, প্রত্যেক রামভক্তের উদ্দেশে, প্রত্যেক ভারতবাসীর উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন করছে। শ্রীরামের অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির তো গড়ে উঠল ... এখন কী হবে? অনেক শতাব্দীর অপেক্ষা তো শেষ হল ... এখন কী হবে? আজকের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে যত দেবতা এবং যত দৈবিক আত্মা আমাদের আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তাঁরা কী আমাদের কাছ থেকে এমনই বিদায় নেবেন? না, কখনই না। আজ আমি সমস্ত পবিত্র মন নিয়ে অনুভব করছি যে কালচক্র পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি অত্যন্ত সুখকর সংযোগ যে আমাদের প্রজন্মকে একটি কালজয়ী পথের শিল্পী রূপে বেছে নেওয়া হয়েছে। হাজার বছর পর যে প্রজন্ম আসবে, তারাও আমাদের এই রাষ্ট্র নির্মাণের কাজগুলিকে স্মরণ রাখবে। সেজন্য আমি বলতে চাই যে এটাই সময়, প্রকৃত সময়। আমাদের আজ থেকে, এই পবিত্র সময় থেকে, আগামী এক হাজার বছরের জন্য ভারত নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে। মন্দির নির্মাণ থেকে এগিয়ে এখন আমাদের সমস্ত দেশবাসীকে এই একটি মুহূর্ত থেকে সক্ষম ও সমর্থ অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারত গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। শ্রীরামচন্দ্রের ভাবনা - “মানুষের পাশাপাশি জনমানস”-ও যেন থাকে। এটাই রাষ্ট্র নির্মাণের সিঁড়ি।
বন্ধুগণ,
আজকের যুগের চাহিদা হল, আমাদের নিজেদের অন্তঃকরণকে প্রসারিত করতে হবে। আমাদের চেতনার বিস্তার ... দেবতা থেকে দেশ পর্যন্ত, রাম থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত হওয়া উচিত। হনুমানজির ভক্তি, হনুমানজির সেবা, হনুমানজির সমর্পণ – এই ধরনের গুণগুলিকে যাঁদের বাইরে থেকে খুঁজে আনতে হয় না, প্রত্যেক ভারতবাসীর মনের ভক্তি, সেবা এবং সমর্পণের এই ভাব, সমর্থ-সক্ষম, অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারতের আধার হয়ে উঠবে। আর এটাই তো দেবতা থেকে দেশ, রাম থেকে রাষ্ট্র চেতনার সঠিক বিস্তার! দূরদুরান্ত অরণ্যে কুটীরে জীবনধারণকারী আমার আদিবাসী মা, শহরী তপস্যার কথা মনে পড়তেই, অপ্রতিম বিশ্বাস জেগে ওঠে। মা শবরী তো কবে থেকে বলে আসছিলেন – রাম আসবে! প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে জেগে ওঠা এই বিশ্বাস সমর্থ ও সক্ষম অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারতের আধার হয়ে উঠবে। আর এটাই তো দেশ থেকে দেশ এবং গ্রাম থেকে রাষ্ট্র চেতনার বিস্তার! আমরা সবাই জানি, নিষাদরাজের জন্য আপনত্ব কতটা মৌলিক! সবাই আপন, সবাই সমান। প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে আপনত্বের ও বন্ধুত্বের এই ভাবনা অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারতের আধার হয়ে উঠবে। আর এটাই তো দেবতা থেকে দেশ, রাম থেকে রাষ্ট্র চেতনার সঠিক বিস্তার!
আজ দেশে নিরাশার একবিন্দুও স্থান নেই। আমি তো অত্যন্ত সামান্য, আমি তো অত্যন্ত ক্ষুদ্র। যদি কারোর মনে এরকম কথা উদয় হয়, তাহলে তাঁর সেই কাঠবিড়ালির অবদানের কথা স্মরণ করা উচিত। কাঠবিড়ালির স্মরণই আমাদের এই দ্বিধা থেকে মুক্ত করবে, আমাদের শেখাবে যে ছোট-বড় প্রত্যেকের প্রতিটি প্রচেষ্টার নিজস্ব শক্তি থাকে, নিজস্ব অবদান থাকে। আর সকলের প্রচেষ্টার এই ভাবনা, সমর্থ-সক্ষম অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারতের আধার হয়ে উঠবে। আর এটাই তো দেবতা থেকে দেশ, রাম থেকে রাষ্ট্র চেতনার সঠিক বিস্তার!
বন্ধুগণ,
লঙ্কাপতি রাবণ অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন, ভীষণ শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু জটায়ুজির মূল্যবোধ ও নিষ্ঠাকে দেখুন, তিনি সেই মহাবলী রাবণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনিও জানতেন যে রাবণকে পরাস্ত করতে পারবেন না। কিন্তু তবুও তিনি রাবণকে বাধা দিয়েছিলেন। কর্তব্যবোধের এই পরাকাষ্ঠাই সমর্থ-সক্ষম অনিন্দ্যসুন্দর দিব্য ভারতের আধার হয়ে উঠবে। আর এটাই তো দেবতা থেকে দেশ, রাম থেকে রাষ্ট্র চেতনার সঠিক বিস্তার! আসুন, আমরা এই সঙ্কল্প গ্রহণ করি যে রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য আমরা নিজেদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নিয়োজিত করব। রাম কর্ম থেকে রাষ্ট্র কর্ম – সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত, শরীরের প্রতিটি কণা রাম সমর্পণকে রাষ্ট্র সমর্পণের ধ্যেয়র সঙ্গে যুক্ত করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আমাদের এই প্রভু শ্রীরামের পুজো যেন বিশেষ হয়ে ওঠে। এই পুজো ‘স্ব’ থেকে ওপরে উঠে সমষ্টির জন্য হওয়া উচিত। এই পুজো অহম থেকে ওপরে উঠে বয়ম-এর জন্য হওয়া উচিত। প্রভু শ্রীরামের জন্য আমরা যে ভোগ দেব, তা যেন আমাদের ‘বিকশিত ভারত’-এর জন্য পরিশ্রমের পরাকাষ্ঠার প্রসাদও হয়ে ওঠে। আমাদের নিত্য পরাক্রম, পৌরুষ, সমর্পণের প্রসাদ প্রভু রামকে নিবেদন করতে হবে। এর মাধ্যমেই নিত্য প্রভু রামের পুজো করতে হবে। তবেই আমরা ভারতকে বৈভবশালী এবং বিকশিত করে তুলতে পারব।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
এটি ভারতের উন্নয়নের অমৃতকাল। আজ ভারত যুবশক্তির পুঁজিতে পরিপূর্ণ, শক্তিতে পরিপূর্ণ। এরকম ইতিবাচক পরিস্থিতি না জানি আবার কত বছর পর আসবে। আমাদের এখন লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না। আমাদের এখন বসে থাকলে চলবে না। আমি আমার দেশের যুব সমাজকে বলব, আপনাদের সামনে এখন হাজার হাজার বছরের পরম্পরার প্রেরণা রয়েছে। আপনারা ভারতের সেই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন যাঁরা চাঁদে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেছে, যাঁরা ১৫ লক্ষ কিলোমিটার যাত্রা সম্পূর্ণ করে সূর্যের কাছে গিয়ে ‘মিশন আদিত্য’কে সফল করে তুলছেন, যাঁরা আকাশে ‘তেজস’ ... সাগরে ‘বিক্রান্ত’ ... এর মাধ্যমে দেশের জাতীয় পতাকার শৌর্য বাড়াচ্ছেন। আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে আপনাদের ভারতের নতুন প্রভাতকে আনতে হবে। পরম্পরার পবিত্রতা আর আধুনিকতার অনন্ততা - উভয় পথেই এগিয়ে গিয়েই ভারত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছবে।
আমার বন্ধুগণ,
আগামী সময় এখন সাফল্যের সময়। আগামী সময় এখন সিদ্ধির সময়। এই অনিন্দ্যসুন্দর রাম মন্দির সাক্ষী হয়ে উঠবে ভারতের উৎকর্ষের, ভারতের উদয়ের। এই অনিন্দ্যসুন্দর রাম মন্দির সাক্ষী হয়ে উঠবে অনিন্দ্যসুন্দর ভারতের অভ্যুদয়ের, ‘বিকশিত ভারত’-এর! এই মন্দির আমাদের শেখাচ্ছে যেদি লক্ষ্য স্থির থাকে, সত্য প্রমাণিত হয়, যদি লক্ষ্য সমূহের সংগঠন শক্তি থেকে জন্ম নেয়, তখন সেই লক্ষ্য পূরণ করা অসম্ভব নয়। এটা ভারতের সময়, আর ভারত এখন এগিয়ে যাবে। অনেক শতাব্দীর প্রতীক্ষার পর আমরা এখানে পৌঁছেছি। আমরা সবাই নতুন যুগের, এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন আমরা আর থামব না। আমরা উন্নয়নের উচ্চতায় পৌঁছবই। এই মনোভাব নিয়ে রাম লালার চরণে প্রণাম জানিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। সমস্ত সন্ন্যাসীদের চরণে আমার প্রণাম।
সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়।
সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়।
সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়।