অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ডা জি, মনসুখ মাণ্ডভিয়া জি, প্রতাপরাও যাদব জি, শ্রীমতী অনুপ্রিয়া প্যাটেল জি, শোভা করণ্ডলাজে জি, এখানকার সাংসদ শ্রী রামবীর সিং বিধুরি জি, ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত বিভিন্ন রাজ্যের মাননীয় রাজ্যপালগণ, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীগণ, মাননীয় সাংসদ ও বিধায়কগণ, অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি, চিকিৎসক, আয়ুর্বেদ ও আয়ুষের অনুশীলনকারীরা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য পেশাদাররা... স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ভাই ও বোনেরা, অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ আয়ুর্বেদের চিকিৎসক ও কর্মীরা, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ !
সারা দেশ আজ ধনতেরাস এবং ভগবান ধন্বন্তরির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছে। এই উপলক্ষে আমি আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই দিনটিতে দেশজুড়ে বহু মানুষ তাঁদের বাড়ির জন্য নতুন কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যান। আমি বিশেষ করে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য সৌভাগ্য কামনা করছি। সেই সঙ্গে আপনাদের সবাইকে দীপাবলির আগাম শুভেচ্ছা। আমরা সবাই অনেক দীপাবলি দেখেছি, কিন্তু এবারের দীপাবলি ঐতিহাসিক। আপনারা হয়তো ভাবছেন, দীপাবলি দেখে দেখে আমাদের চুল পেকে গেল। আর মোদী জি এখন কোথা থেকে ঐতিহাসিক দীপাবলি আমদানি করছেন। এমন সুযোগ ৫০০ বছর পর এসেছে, যখন অযোধ্যায় রামলালার জন্মস্থানে মন্দিরে হাজার হাজার দীপ জ্বলে উঠবে, এক অসাধারণ উৎসবের সূচনা হবে। এই দীপাবলিতে আমাদের রাম আরও একবার ঘরে ফিরলেন। এবার কিন্তু ১৪ বছর নয়, অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫০০ বছর ধরে।
বন্ধুরা,
ধনতেরাসে সৌভাগ্য ও স্বাস্থ্যের উদযাপন কিন্তু নিছক কাকতালীয় নয়, এটা আসলে ভারতীয় সংস্কৃতির জীবনদর্শনের প্রতীক। আমাদের মনীষিরা বলেছেন- আরোগ্যম পরমম ভাগ্যম ! অর্থাৎ স্বাস্থ্যই হল সব থেকে বড় সৌভাগ্য, স্বাস্থ্যই সম্পদ। এই সুপ্রাচীন ভাবনা আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হল, আজ আয়ুর্বেদ দিবস বিশ্বের দেড়শোটিরও বেশি দেশে উদযাপিত হচ্ছে। আয়ুর্বেদের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ যে ক্রমশ বাড়ছে, এ তারই প্রমাণ। নতুন ভারত তার সুপ্রাচীন অভিজ্ঞতা দিয়ে কীভাবে বিশ্ব কল্যাণে অবদান রাখতে পারে, এ তারও এক প্রতিচ্ছবি।
বন্ধুরা,
আয়ুর্বেদের জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের মেলবন্ধন ঘটিয়ে গত ১০ বছরে ভারত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর এক প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে অন ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ আয়ুর্বেদ। ৭ বছর আগে আজকের দিনেই আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পর্যায় জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছিলাম। আজ ভগবান ধন্বন্তরি জয়ন্তীতে আমার সৌভাগ্য হয়েছে, এর দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করার। এখানে পঞ্চকর্ম-র মতো প্রাচীন অনুশীলনের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটানো হবে। আয়ুর্বেদ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আধুনিক গবেষণা হবে এখানে। এজন্য আমি দেশের সব নাগরিককে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা,
কোন দেশের নাগরিকরা যত স্বাস্থ্যবান হবেন, সেই দেশের বিকাশের গতিও তত বৃদ্ধি পাবে। একথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকদের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যনীতি ৫টি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথমটি হল, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, অর্থাৎ, রোগ হওয়ার আগেই তা আটকানো, দ্বিতীয় হল সময়মতো রোগ নির্ণয়... তৃতীয় হল বিনামূল্যে এবং সুলভে চিকিৎসার ব্যবস্থা... চতুর্থ হল ছোট ছোট শহরেও ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা এবং পঞ্চম হল, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ। ভারত এখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আপনারা ৫টি ভিত্তির সবকটিকেই দেখতে পাচ্ছেন। এখানে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাস করা হয়েছে। আয়ুর্স্বাস্থ্য যোজনার আওতায় ৪টি উৎকর্ষ কেন্দ্র... ড্রোনের মাধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিস্তার... এইমস ঋষিকেশে হেলিকপ্টার পরিষেবা... এইমস দিল্লি ও এইমস বিলাসপুরে নতুন পরিকাঠামো... আরও ৫টি এইমস-এ পরিষেবার বিস্তার... একগুচ্ছ মেডিকেল কলেজ স্থাপন... বিভিন্ন নার্সিং কলেজের শিলান্যাস... এবং দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার রূপান্তর সাধনের লক্ষ্যে একগুচ্ছ উদ্যোগের সূচনা করা হল। আমার ভালো লাগছে যে এই হাসপাতালগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আমাদের শ্রমজীবী ভাই-বোনদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছে। যেসব ফার্মা ইউনিটের সূচনা আজ হল, সেগুলি উন্নতমানের ওষুধ, উচ্চগুণমানসম্পন্ন স্টেন্ট ও ইমপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা করবে। এরফলে ভারতে ফার্মা ক্ষেত্রের বিকাশে গতি আসবে।
বন্ধুরা,
আমাদের মধ্যে অধিকাংশজনই এমন প্রেক্ষাপট থেকে এসেছেন, যেখানে কারুর অসুস্থতার অর্থ হল পরিবারের মাথায় বাজ পড়ার মতো। কোনো গরিব পরিবারের কেউ মারাত্মক অসুস্থ হলে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এক সময় পরিবারগুলিকে এজন্য তাদের বাড়ি, জমি, গয়না চিকিৎসার জন্য বেচে দিতে হত। চিকিৎসার খরচের কথা শুনেই গরিব মানুষের হৃৎকম্প হত। প্রবীণ নাগরিকরা ভেবেই পেতেন না তাঁরা তাঁদের চিকিৎসার জন্য খরচ করবেন, নাকি নাতি-নাতনিদের লেখাপড়ার খরচ যোগাবেন, সংসারের খরচ চালাবেন। সেইজন্য গরিব পরিবারগুলির প্রবীণ সদস্যদের সামনে একটাই রাস্তা খোলা থাকতো, নীরবে যন্ত্রণা সহ্য করা এবং মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা। টাকা-পয়সা না থাকায় তাঁরা নিজেদের চিকিৎসা করাতে পারতেন না।
আমি আমার গরিব ভাই-বোনদের এই অসহায়তা আর দেখতে পারছিলাম না। সেই দুঃখ-যন্ত্রণা থেকেই আমার সহনাগরিকদের জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছিল। সরকার গরিব মানুষের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার ব্যবস্থা করেছে। আমার দেখে ভালো লাগে যে আজ দেশের প্রায় ৪ কোটি গরিব মানুষ আয়ুষ্মান প্রকল্প থেকে উপকার পেয়েছেন। এঁরা বিভিন্ন রোগের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, অনেকে একাধিকবার ভর্তি করতে হয়েছে, কিন্তু তাঁদের চিকিৎসার জন্য একটি টাকাও লাগেনি। যদি আয়ুষ্মান প্রকল্প না থাকতো তাহলে এই গরিব মানুষজনদের নিজেদের পকেট থেকে ১ লক্ষ ২৫০০০ কোটি টাকা খরচ করতে হত। আমার সঙ্গে প্রায়শই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের দেখা হয়। আমি তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা শুনি, তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে চাই, তাঁদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া আনন্দাশ্রু দেখি। এই আনন্দাশ্রু আয়ুষ্মান প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহায়ক কর্মীর কাছে আশীর্বাদের মতো। এর থেকে বড় আশীর্বাদ আর কিছু হতে পারে না।
আপনারা ভাবুন, এমন একটা প্রকল্প, যা মানুষকে বিপদের থেকে বাঁচায়, তা আগে ছিলোই না। আজ যখন আমি দেখি আয়ুষ্মান প্রকল্প ক্রমশ আরও বিস্তার লাভ করছে, তখন আমার খুব তৃপ্তি হয়। নির্বাচনের সময় আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমার তৃতীয় মেয়াদে সত্তরোর্ধ সব ব্যক্তিকে আয়ুষ্মান প্রকল্পের আওতায় আনবো। আজ ধন্বন্তরি জয়ন্তীতে সেই প্রতিশ্রুতি আমি পূরণ করছি। এখন থেকে দেশের প্রতিটি সত্তরোর্ধ প্রবীন নাগরিক হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। তাঁদের কাছে যত শীঘ্র সম্ভব আয়ুষ্মান বয়ো বন্দনা কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে আয়ের কোনো বিধিনিষেধ নেই। গরিব, মধ্যবিত্ত, ধনী সকলেই এই সুবিধা ভোগ করবেন।
প্রবীন নাগরিকরা এবার থেকে চিন্তামুক্ত হয়ে মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করবেন। আয়ুষ্মান বয়ো বন্দনা কার্ডের ফলে সাংসারিক খরচও কমবে। আমি এই প্রকল্পের জন্য দেশের সব নাগরিককে অভিনন্দন জানাই এবং সত্তরোর্ধ প্রবীন নাগরিকদের আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির সত্তরোর্ধ প্রবীন নাগরিকদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আপনাদের সেবা করতে পারবো না। আমি আপনাদের দুঃখ-যন্ত্রনার কথা জানি। কিন্তু তবুও আপনাদের সাহায্য করতে অপারগ। কারণ, দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আয়ুষ্মান প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে না। অসুস্থ মানুষকে এইভাবে কষ্ট দেওয়া মানবতার দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। আমার কাছে কিন্তু এটা রাজনীতির বিষয় নয়। তাই আমার দুঃখ আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
বন্ধুরা,
গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চিকিৎসার খরচ কমানোকে আমাদের সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। বর্তমানে দেশজুড়ে ১৪,০০০-এরও বেশি পিএম জনৌষধি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এইসব কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলি না থাকলে ওষুধের জন্য গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের ৩০,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হত।
আপনারা জানেন, স্টেন্ট বসানো এবং হাঁটু প্রতিস্থাপনের খরচ এখন কমে গেছে। আমরা যদি এইসব পদক্ষেপ না নিতাম তাহলে রোগীদের অতিরিক্ত ৮০,০০০ কোটি টাকা খরচ করতে হত। আমাদের কাজের জন্য তাঁদের ৮০,০০০ কোটি টাকা বেঁচেছে। আমরা যে বিনামূল্যে ডায়ালিসিস প্রকল্প চালু করেছি, তাতেও লক্ষ লক্ষ মানুষের কোটি কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে। আমাদের সরকার গুরুতর রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে মিশন ইন্দ্রধনুষ অভিযান চালাচ্ছে। এতে গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যজাত শিশুদের জীবন বাঁচছে, তাঁরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ যাতে খরচ সাপেক্ষ চিকিৎসার হাত থেকে রেহাই পান এবং দেশ যাতে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলে, আমি তা সুনিশ্চিত করবো।
বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে পারলে সমস্যা ও ঝুঁকি কমে। তাই কেউ অসুস্থ হলে অবিলম্বে তার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। সেইজন্য দেশ জুড়ে ২ লক্ষেরও বেশি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির খোলা হয়েছে। বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ এইসব আরোগ্য মন্দিরে ক্যান্সার, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস-এর মতো বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করাচ্ছেন। এরফলে একদিকে যেমন সময়মতো তাঁদের চিকিৎসা শুরু হতে পারছে, তেমনি তাঁদের অর্থেরও সাশ্রয় হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোত্তম করার মাধ্যমেও আমাদের সরকার নাগরিকদের অর্থ সাশ্রয় করছে। ই-সঞ্জীবনি প্রকল্পে ৩০ কোটি মানুষ বিখ্যাত চিকিৎসকদের অনলাইনে দেখাতে পারছেন। বিনামূল্যের এই পরিষেবার ফলে তাঁদের বিপুল অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। বর্তমানে আমরা ইউ-উইন প্ল্যাটফর্মেরও সূচনা করেছি। এই প্ল্যাটফর্মে ভারতের নিজস্ব অত্যাধুনিক ইন্টারফেস রয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারির সময় আমাদের কো-উইন প্ল্যাটফর্মের সাফল্যের সাক্ষী থেকেছে সারা বিশ্ব। আমাদের ইউপিআই অর্থপ্রদান ব্যবস্থাও বিশ্বের নজর কেড়েছে। ভারত এখন সেই সাফল্যকে ডিজিটাল গণ-পরিকাঠামোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে।
বন্ধুরা,
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গত ১০ বছরে যা কাজ হয়েছে, স্বাধীনতার পরে ৬-৭ দশক ধরে সেই কাজ হয়নি। গত এক দশকে দেশে রেকর্ড সংখ্যক নতুন এইমস ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানেই কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও অন্যান্য রাজ্যে বেশ কিছু হাসপাতালের উদ্বোধন করা হল। মিরাটে একটি নতুন ইএসআই হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ইন্দোরেও চালু হয়েছে একটি হাসপাতাল। হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ার অর্থ, মেডিকেল শিক্ষার আসনের সংখ্যাও বাড়ার। আমি চাই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এমন কোনো শিশুর বাসনা যেন অপূর্ণ না থাকে। সরকারের কাজই হল, যুব সমাজের স্বপ্ন যাতে পূর্ণতা পায় তার ব্যবস্থা করা। স্বপ্নের একটা নিজস্ব শক্তি আছে এবং অনেক সময় তা প্রেরণার উৎস হয়ে উঠে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোনো শিশুকে যাতে মেডিকেল শিক্ষার জন্য বিদেশে না যেতে হয়, আমি তা সুনিশ্চিত করতে চাই। সেইজন্যই গত ১০ বছর ধরে ভারতে মেডিকেলার আসন সংখ্যা বাড়াবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত এক দশকে প্রায় ১ লক্ষ নতুন এমবিবিএস ও এমডি আসন বেড়েছে। এই বছরে আমি লালকেল্লা থেকে ঘোষণা করেছি যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা মেডিকেল শিক্ষায় আরও ৭৫০০০ আসন বাড়াবো। এতে গ্রামে যাওয়া চিকিৎসকের সংখ্যাও বাড়বে।
বন্ধুরা,
বর্তমানে আমাদের দেশে ৭,৫০,০০০-এরও বেশি নথিভুক্ত আয়ুষ চিকিৎসক রয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সারা বিশ্ব ও ভারতকে আজ মেডিকেল ও সুস্থতা পর্যটনের বৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে। যোগাভ্যাস, পঞ্চকর্ম ও ধ্যান শিক্ষার জন্য সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ভারতে আসছেন। আগামীদিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আমাদের যুব সমাজ ও আয়ুষ চিকিৎসকদের এরজন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে হবে। প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি, আয়ুর্বেদিক অর্থপেডিক্স, আয়ুর্বেদিক স্পোর্টস মেডিসিন, আর্য়ুবেদেক পুনর্বাসন কেন্দ্র- আয়ুষ চিকিৎসকদের জন্য এমন অসংখ্য ক্ষেত্রে অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ভারতে নয়, বিভিন্ন দেশে। আমাদের যুব সমাজ এইসব সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে শুধু নিজেরা অগ্রসর হবে না, মানবতার সেবাও করবে।
বন্ধুরা,
একবিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এক সময় যেগুলিকে দূরারোগ্য ব্যাধি মনে করা হত, আজ তার চিকিৎসা সম্ভব। সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভারতের হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সময় এসেছে আমাদের সেই সুপ্রাচীন জ্ঞানকে আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা। সেইজন্যই আমি ক্রমাগত লক্ষণভিত্তিক আয়ুর্বেদের ওপর জোর দিয়ে এসেছি। আয়ুর্বেদে ব্যক্তি নির্দিষ্ট চিকিৎসার গভীর প্রজ্ঞা রয়েছে। তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে এ নিয়ে কাজ এখনও করা হয়নি। এজন্য আমি প্রকৃতি পরীক্ষণ অভিযান নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করার পরিকল্পনা করেছি। আমরা দেখি, আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একজন রোগী যখন ভালো হয়ে যায় তখন তার ভালো হওয়াটা দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু প্রমাণগুলো দেখা যায় না। আমাদের ফলাফল এবং প্রমাণ দুই দরকার। এই প্রচারাভিযানে আমরা আয়ুর্বেদের নীতি অনুসারে প্রতিটি মানুষকে এক আদর্শ জীবনযাপন পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলবো। সেক্ষেত্রে রোগ হওয়ার আগেই আমরা প্রত্যেকের ঝুঁকির সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করতে পারবো। এই বিষয়টি নিয়ে এগোতে পারলে আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের চালচিত্র সম্পূর্ণ বদলে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। সারা বিশ্বকে আমরা স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গী উপহার দিতে পারবো।
বন্ধুরা,
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্যের আর একটি বড় কারণ হল, যে সেখানে প্রতিটি নীতিই গবেষণাগারে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। আমাদের প্রথাগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থাকেও এই মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করতে হবে। দেখুন, অশ্বগন্ধা, হলুদ, মরিচ- এইসব ভেষজ তো আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চিকিৎসার কাজে লাগিয়ে আসছি। এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তাদের সুফল প্রমাণিত হচ্ছে। সেইজন্যই আজ বিশ্বজুয়ে অশ্বগন্ধার মতো ভেষজের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এই দশকের শেষে অশ্বগন্ধার বাজারের পরিমাণ প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার হতে চলেছে। একবার ভাবুন, আমরা যদি গবেষণাগারে এই ভেষজগুলির গুণাগন প্রমাণ করতে পারি, তাহলে এর মূল্য আরও কতো বেড়ে যাবে। আমরা একটা বিশাল বাজারের সৃষ্টি করতে পারি।
বন্ধুরা,
আয়ুষের সাফল্যের প্রভাব শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এর ফলে ভারতে নতুন নতুন সুযোগের সৃষ্টি হবে। বিশ্বের কল্যাণ প্রয়াসেও এটি সহায়ক হবে। ১০ বছরের মধ্যে আয়ুষ দেশের দ্রুততম বিকাশশীল ক্ষেত্রগুলির একটি হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে আয়ুষের উৎপাদনের মূল্য ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। আর আজ তা ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তার মানে ১০ বছরে ৮ গুণ বেড়েছে। সেইজন্য তো আজ দেশের যুব সমাজ আয়ুষ স্টার্টআপ স্থাপন করছে। বর্তমানে দেশে ৯০০টি আয়ুষ স্টার্টআপ আছে। তারা প্রথাগত পণ্য, প্রযুক্তিচালিত নতুন পণ্য ও পরিষেবা দিচ্ছে। ভারত আজ দেড়শোটি দেশে আয়ুষ পণ্য রপ্তানি করে। আমাদের কৃষকরা এর ফলে সরাসরি উপকৃত হন। যেসব ভেষজ ও সুপার ফুড এক সময় স্থানীয় বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেগুলি আজ বিশ্ব বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে।
বন্ধুরা,
বদলে যাওয়া এই চালচিত্রের সর্বাধিক সুফল যাতে কৃষকরা পেতে পারেন সেজন্য সরকার ভেষজ উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে। নমামি গঙ্গে প্রকল্পে গঙ্গার ধারে প্রাকৃতিক কৃষি ও ভেষজ উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা,
আমাদের জাতীয় চরিত্র ও সামাজিক বুনন যে কটি শব্দে বিধৃত রয়েছে তা হল, সর্বে ভবন্তু সুখিন, সর্বে সন্তু নিরাময়। অর্থাৎ সবাই সুখি হন, সবাই রোগমুক্ত থাকুন। গত ১০ বছরে এই মন্ত্রকেই আমরা রাষ্ট্রনীতির অন্তর্ভুক্ত করেছি- ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। আগামী ২৫ বছরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়াস বিকশিত ভারতের মজবুত ভিত্তি গড়ে দেবে। ভগবান ধন্বন্তরির আশীর্বাদে আমরা বিকশিত ভারত ও নিরাময় ভারতের স্বপ্ন নিশ্চয় পূরণ করতে পারবো।
বন্ধুরা,
আমি যখন ফলাফল ও প্রমাণের কথা বলি, তখন আয়ুর্বেদের যেসব পুঁথি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে রয়েছে তার সংরক্ষণের কথাও বলি। এইসব পুঁথি দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমাদের এখন এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য উঠেপড়ে লাগতে হবে। এটা কোথাও পাথরে খোদিত আছে, কোথাও তামার পাতের ওপর লেখা আছে আবার কোথাও বা পুঁথিতে হাতে লেখা রয়েছে। এই সব কিছু আমাদের সংগ্রহ করতে হবে। কৃত্রিম মেধার এই যুগে প্রযুক্তি সংযোগে আমরা এই জ্ঞান থেকে নতুন অন্তর্দৃষ্টি খুঁজে পাবো। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে।
বন্ধুরা,
আমি আবারও দেশের সত্তরোর্ধ ব্যক্তিদের আমার শ্রদ্ধা জানাই। আপনাদের সবাইকে আমার অভিনন্দন।
ধন্যবাদ !