নমস্কার,
কেমন আছেন, গুজরাটে শীত পড়েছে, গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রত জী, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রূপানী জী, বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী রাজেন্দ্র ত্রিবেদী জী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন জী, উপ মুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল জী, আমার মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী অশ্বীনী চৌবে জী, মনসুখ ভাই মাণ্ডভিয়া জী, পুরুষত্তম রূপালা জী, গুজরাট সরকারের মন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র সিং চুড়াসমা জী, শ্রী কিশোর কনানী জী, অন্যান্য সাংসদ গণ, ‘ধারা’ সভ্য গণ এবং উপস্থিত অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ।
ভাই ও বোনেরা,
নতুন বছর কড়া নাড়ছে। আজ দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করে তোলার প্রক্রিয়ায় আরেকটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। রাজকোটে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন গুজরাটের পাশাপাশি গোটা দেশে স্বাস্থ্য এবং এর ফলে চিকিৎসা শিক্ষার নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে।
ভাই ও বোনেরা,
২০২০ সালকে একটি নতুন জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা উদ্বোধনের মাধ্যমে বিদায় দেওয়া এবছরের সমস্যাগুলি এবং নতুন বছরের অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করে। এবছর গোটা বিশ্বের জন্য অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য সমস্যা ছিলো। এবছরটি আমাদেরকে নতুন করে অনুভব করিয়েছে যে স্বাস্থ্যই সম্পদ। আমাদের পূর্বজরা এই প্রবাদটি আগে থেকেই রেখে গেছেন, বাড়ির বড়রা বার বার বলতেন, কিন্তু ২০২০ আমাদেরকে এই প্রবাদের শব্দ দুটিকে খুব ভালোভাবে শিখিয়ে গিয়ে গেছে। স্বাস্থ্যের ওপর যখন আঘাত আসে, তখন জীবনের সবকটি দিক খারাপভাবে প্রভাবিত হয়। আর শুধু পরিবারই নয়, সম্পূর্ণ সামাজিক বৃত্ত এর প্রভাবে চলে আসে। আর সেজন্য বছরের শেষ দিনটি ভারতের সেই লক্ষ লক্ষ ডাক্তার, স্বাস্থ্য যোদ্ধা, সাফাই কর্মী, ওষুধের দোকানে কর্মরত মানুষএবং অন্যান্য অগ্রণী করোনা যোদ্ধাদের কথা মনে করার দিন, যাঁরা মানবতাকে সুরক্ষিত রাখতে লাগাতার নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন। যে বন্ধুরা কর্তব্য পথে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন – আমি আজ তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধা সহকারে প্রণাম জানাই। আজ দেশের সেই বন্ধুদের, সেই বৈজ্ঞানিক ও কর্মচারীদের কথা বার বার মনে পড়ছে। যাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জরুরি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে দিনরাত লেগে আছেন, লড়াই করছেন। আজকের দিনটি সেই সমস্ত বন্ধুদের প্রশংসা করার দিন, যাঁরা এই কঠিন সময়ে গরীবদের মুখে অন্ন এবং অন্যান্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ সমর্পণভাব নিয়ে করে গেছেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে, এত বড় বিপর্যয়, কিন্তু এই সমাজের সংগঠিত সামগ্রিক শক্তি, সমাজের সেবাভাব সমাজের সংবেদনশীলতা তারই ফল স্বরূপ দেশবাসী কোনো গরীবকে এই কঠিন সময়েও রাতে খালি পেটে ঘুমাতে দেয়নি। তাঁরা সকলেই আমার শ্রদ্ধার পাত্র।
বন্ধুগণ,
এই সমস্যাসঙ্কুল বছরটিতে আমরা দেখেছি যে ভারত যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কঠিন থেকে কঠিনতর সঙ্কটও কত দক্ষভাবে মোকাবিলা করতে পারে। ভারত ঐকবদ্ধ হয়ে যেভাবে ঠিক সময়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে তারই পরিণাম হলো যে আমরা আজ করোনা পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। যে দেশে ১৩০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা, এত ঘন জনবসতি, সেখানে প্রায় ১ কোটি মানুষ রোগের সঙ্গে লড়াই করে জয়যুক্ত হয়েছে। ভারতে করোনাপীড়িত বন্ধুদের বাঁচানোর রেকর্ড বিশ্বের গড় রেকর্ড থেকে অনেক ভালো। তেমনি সংক্রমণের ক্ষেত্রেও ভারত ক্রমাগত নীচের দিকে আসছে।
ভাই ও বোনেরা,
২০২০-তে সংক্রমণের নিরাশা ছিল, দুশ্চিন্তা ছিল, চারি দিকে এত প্রশ্ন ছিল যে সেগুলিই তার পরিচয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ২০২১ চিকিৎসার আশা নিয়ে আসছে। ভারতে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। ভারতে তৈরি ভ্যাকসিন যাতে দ্রুত গতিতে অগ্রণী যোদ্ধাদের কাছে, প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে পৌঁছয় সেজন্য সমস্ত প্রয়াস এখন অন্তিম চরণে রয়েছে। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ টীকাকরণ অভিযান চালানোর জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যেভাবে বিগত বছরটি আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ঐকবদ্ধভাবে চেষ্টা করেছি, তেমনি টীকাকরণকে সফল করে তুলতেও গোটা ভারত ঐকবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।
বন্ধুগণ,
গুজরাটেও সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এখন টীকাকরণের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে। বিগত দু’দশকে গুজরাটে যেভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে সেটাই করোনা মোকাবিলায় গুজরাটকে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এআইআইএমএস রাজকোট তথা গুজরাটের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। এখন কঠিন থেকে কঠিনতর রোগের চিকিৎসাও রাজকোটেই সম্ভব হবে। চিকিৎসা এবং শিক্ষার পাশাপাশি এই হাসপাতালে অনেক কর্ম সংস্থানের সুযোগও গড়ে উঠবে। নতুন হাসপাতালে কাজ করার জন্য প্রায় ৫ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান, খাদ্য, পানীয়, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা সংশ্লিষ্ট অনেক অপ্রত্যক্ষ কর্ম সংস্থানের সুযোগও এখানে হবে। আর আমরা দেখেছি, যেখানে বড় হাসপাতাল থাকে তার বাইরে একটি ছোট শহর গড়ে ওঠে।
ভাই ও বোনেরা,
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গুজরাটের এই সাফল্যের পেছনে আমাদের দু-দশকের প্রচেষ্টা, সমর্পণ এবং সংকল্প রয়েছে। বিগত ৬ বছরে গোটা দেশে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে যে মাত্রায় কাজ শুরু হয়েছে তা দ্বারাও নিশ্চিতভাবে গুজরাট লাভবান হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বড় হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি সেগুলির ওপর কত চাপ থাকে সে সম্পর্কে আপনারা খুব ভালোভাবে জানেন। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে স্বাধীনতার এত দশক পরেও দেশে মাত্র ৬টি এআইআইএমএস গড়ে উঠেছিল। ২০০৩ সালে অটলজীর নেতৃত্বাধীন সরকার আরও ৬টি এআইআইএমএস গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তৈরি হতে ২০১২, অর্থাৎ ৯ বছর লেগে গিয়েছিল। কিন্তু বিগত ৬ বছরে আমরা ১০টি নতুন এআইআইএমএস গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি। সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটা আজ সম্পূর্ণরূপে কাজ করতে শুরু করেছে। এআইআইএমএস-এর পাশাপাশি দেশে ২০টি এআইআইএমএস-রই মতো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালের আগে আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করে চলেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার নিজস্ব ব্যবস্থা ছিল। গ্রামে পরিষেবা একরকম ছিলই না। আমরা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সংহত পদ্ধতিতে কাজ শুরু করেছি। আমরা যেখানে একদিকে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকে নজর দিয়েছি, তেমনি চিকিৎসার আধুনিক পরিষেবাকেও অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমরা যেখানে গরীবের চিকিৎসা খাতে হওয়া খরচ হ্রাস করেছি, তেমনি এদিকেও জোর দিয়েছি যাতে ডাক্তারদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়।
বন্ধুগণ,
আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে দূর প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় দেড় লক্ষ ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ কাজ করা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত এগুলির মধ্যে ৫০ হাজার সেন্টার পরিষেবা দ্বিগুণ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার গুজরাটের কেন্দ্র রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গরীব ভাই বোনেরা কতটা উপকৃত হয়েছেন সেটা জানাতে দেশবাসীর স্বার্থে আমি একটি পরিসংখ্যান দিতে চাই।
বন্ধুগণ,
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে গরীবদের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় হয়েছে। ৩০ হাজার কোটি অনেক বড় টাকা। আপনারা ভাবুন, এই প্রকল্প গরীবদের কত বড় আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেছে! ক্যান্সার থেকে শুরু করে হৃদ যন্ত্রের সমস্যা, বৃক্কের সমস্যা, এরকম অনেক কঠিন রোগের চিকিৎসা – আমার দেশের গরীবদের জন্য চিকিৎসার খরচ বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়েছে। আর তা-ও বড় হাসপাতালগুলির মাধ্যমে।
বন্ধুগণ,
অসুখের সময় গরীবদের আরেকটি বন্ধু আছে, তা হলো জন ঔষধি কেন্দ্র। দেশে প্রায় ৭ হাজার জন ঔষধি কেন্দ্র, গরীবদের অত্যন্ত কম দামে ওষুধ বিক্রি করছে। এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে প্রায় ৯০ শতাংশ সস্তা দরে ওষুধ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১০০ টাকা দামের ওষুধ মাত্র ১০ টাকায় পাওয়া যায়। সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি গরীব রোগী রোজ এই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলির দ্বারা লাভবান হচ্ছেন। আর এই সস্তা ওষুধের ফলে প্রতি বছর গড়ে গরীবদের ৩,৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আপনারা আন্দাজ করতে পারেন যে কত বড় সাশ্রয় হচ্ছে। এমনিতে কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ কম করতে এত জোর কেন দিয়েছে?
বন্ধুগণ,
এর মাধ্যমে অধিকাংশ গরীব এবং মধ্যবিত্তদের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। যখন কোনো গরীবের বাড়িতে কঠিন অসুখ হয় তখন এই সম্ভাবনাও তৈরি হয় যে তিনি আর চিকিৎসাই করালেন না! চিকিৎসার জন্য টাকা না থাকা, বাড়ির অন্যান্য খরচ, নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা, ব্যক্তির ব্যবহারে এই ধরণের পরিবর্তন আনে। তাই আর আমরা দেখেছি যখন কোনো গরীব অসুস্থ হন, চিকিৎসার টাকা থাকে না তখন তাঁরা জীবন কিম্বা মৃত্যু এই সুই সুতোর দুনিয়ায় চলে যান, অনেকে পুজো পাঠের দুনিয়াতেও চলে যান। তাঁদের মনে হয় হয়তো সেখান থেকেই বেঁচে যাবেন, কিন্তু তাঁরা সেজন্যই যান, কারণ তাঁদের কাছে সঠিক স্থানে যাওয়ার মতো অর্থ নেই। দারিদ্র তাঁকে সমস্যা সঙ্কুল করে তুলেছে।
বন্ধুগণ,
আমরা এটা দেখেছি যে মানুষের ব্যবহার অর্থের কারণেই পরিবর্তিত হয়। আবার যখন গরীবদের কাছে একটি সুরক্ষা কবচের মতো থাকে তখন সেই ব্যবহার একটি আত্মবিশ্বাসে পরিবর্তিত হয়। আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে গরীবদের চিকিৎসা, মানুষের এই চিন্তা এই ব্যবাহার পরিবর্তনে সফল হয়। সেজন্যই অর্থের অভাবে তাঁরা নিজেদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতেনই না। আর কখনো কখনো আমি দেখেছি যে বাড়ির কোনো প্রৌঢ় কিংবা বয়স্ক মানুষ এমনকি ৪৫-৫০ বছর বয়সী মানুষেরাও খরচের ভয়ে চিকিৎসা করাতেন না। তাঁরা বলতেন অনেক ধার হয়ে যাবে, এই সমস্ত ধার ছেলে-মেয়েদের পরিশোধ করতে হবে আর তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। সন্তান-সন্ততিদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে না আনার কথা ভেবে অনেক বাবা-মা সারা জীবন কষ্ট সহ্য করেন আর এই কষ্টের মধ্যেই মারা যান। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা তো আগে কেউ ভাবতেই পারতেন না। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প শুরু হওয়ার পর এখন এই চিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভাবনা, চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগানোর চিন্তা, এই ভাবনাই সমাজের ভাবনাকে বদলে দিয়েছে। আর আমরা এর ফলও দেখতে পাচ্ছি। আজ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলি নিয়ে একটি সচেতনতা এসেছে, দায়বদ্ধতা এসেছে। আর এটা শুধুই শহরে নয়, দূর দূরান্তের গ্রামগুলিতেও এই সচতনতা আমরা দেখতে পারছি। ব্যবহার পরিবর্তনের এরকম উদাহরণ অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন শৌচালয় নির্মাণের সাফল্য, জনগণকে পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আরও সচেতন করেছে, প্রত্যেক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আপামর জনগণের জন্য পরিশ্রুত পানীয় জল সুনিশ্চিত করা হয়েছে। জল থেকে হওয়া রোগগুলিকেও অনেক প্রতিহত করা গেছে। প্রত্যেক রান্না ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার পর শুধু যে আমাদের বা বোন মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হয়েছে তাই নয়, গোটা পরিবারের একটি ইতিবাচক ভাবনা এসেছে। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত চেক আপের জন্য উৎসাহিত করেছে। আর চেক আপের ফলে তাঁদের আগে থেকেই সুষম খাদ্য ও পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে ইঙ্গিত করে দেওয়া হতো। এর ফলে এই লাভও হয়েছে যে গর্ভাবস্থার সময়ে যে জটিল কেসগুলি থাকে সেগুলি দ্রুত চিহ্নিত করা যায় আর যথা সময়ে চিকিৎসা করা যায়। তেমনি প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনার মাধ্যমে এটা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে যে গর্ভবতী মহিলারা যেন পর্যাপ্ত পুষ্টি পান। পুষ্টি অভিযানের মাধ্যমেও তাঁদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সকল প্রয়াসের একটা বড় লাভ হয়েছে যে দেশের প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কম হয়েছে।
বন্ধুগণ,
শুধু ফল – কিম্বা পরিণামকে অগ্রাধিকার দিলেই যথেষ্ট হয়না। এর প্রভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবায়িত করাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই জন্য ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে আমরা সবার আগে কাজের প্রক্রিয়ায় সংস্কার করেছি। বিগত বছরগুলিতে দেশে এক্ষেত্রে অনেক জোর দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ আমরা দেখছি, দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তৃণমূল স্তরে আমূল পরিবর্তন এসেছে আর জনগণ এই স্বাস্থ্য পরিষেবা উপভোগ করতে পারছেন। আর আমি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের প্রতি আজ এই অনুরোধ রাখবো যে তাঁরা যেন সরকারের এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে নারী শিক্ষায় যে প্রভাব পড়েছে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গবেষণা করেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস,এই প্রকল্পগুলি, এই সচেতনতাই দেশে ছাত্রীদের স্কুল ছুটের হার কমাতে সাহায্য করেছে।
বন্ধুগণ,
দেশে মেডিকেল এডুকেশনকে উৎসাহ জোগানোর জন্যও মিশন মোডে কাজ চলছে। মেডিকেল এডুকেশনের ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে সংস্কার আনা হয়েছে। পারম্পরিক ভারতীয় চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রেও জরুরি সংস্কার আনা হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন গড়ে তোলার পর স্বাস্থ্য শিক্ষার উৎকর্ষ বাড়বে এবং সংখ্যাগত দিক থেকেও উন্নতি হবে। গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ‘ন্যাশনাল এগজিট টেস্ট’-এর পাশাপাশি দু বছরের পোস্ট এমবিবিএস ডিপ্লোমা কিংবা স্নাতকোত্তর চিকিৎসকদের জন্য ‘ডিস্ট্রিক্স রেসিডেন্সি স্কিম’ চালু করার মতো অনেক নতুন পদক্ষেপের প্রয়োজন এবং গুণবত্তা – উভয় স্তরে কাজ করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের লক্ষ্য হলো প্রত্যেক রাজ্যে এআইআইএমএস চালু করা। আর প্রত্যেক তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের মাঝে একটি মেডিকেল কলেজ যেন অবশ্যই থাকে, এটা সুনিশ্চিত করা। এসব প্রচেষ্টার ফল হলো বিগত ৬ বছরে এমবিবিএস-এ ৩১ হাজার নতুন আসন আর ২৪ হাজার নতুন স্নাতকোত্তর আসন বাড়ানো হয়েছে। বন্ধুগণ, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ভারত তৃণমূল স্তরে অনেক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ২০২০ যেমন স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলার বছর ছিল, তেমনি ২০২১ স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের বছর হতে চলেছে। ২০২১-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে সমাধানগুলির দিকে এগিয়ে যাবে। ভারত যেভাবে ২০২০-তে স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে নিজেদের অবদান রেখেছে তা বিশ্ববাসী দেখেছে। আমি শুরুতেই এই বিষয়টি উল্লেখ করেছি।
বন্ধুগণ,
ভারতের এই অবদান ২০২১-এ স্বাস্থ্য সমাধানগুলির পরিমাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভারতে স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে। এখানে বিশ্বের দক্ষ চিকিৎসা পেশাদারদেরও পাওয়া যাবে। তাঁদের সেবা ভাবও পাওয়া যাবে। এখানে বিশ্বের গণ টীকাকরণের অভিজ্ঞদেরও পাওয়া যাবে এবং বিশেষজ্ঞদেরকেও পাওয়া যাবে। এখানে বিশ্বের স্বাস্থ্য সমাধানগুলি এবং প্রযুক্তিকে সংহত করা ‘স্টার্ট আপস ইকো সিস্টেম’ও পাওয়া যাবে। এই স্টার্ট আপসগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলছে এবং ‘হেলথ আউটকামস’কে উন্নত করছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা সবাই দেখছি, অসুখগুলিরও কেমন ভূমন্ডলীকরণ হচ্ছে। সেজন্য এখন সময় এসেছে স্বাস্থ্য সমাধানগুলিরও ভূমন্ডলীকরণ করা। গোটা বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই প্রচেষ্টা চালাবে, প্রতিক্রিয়া জানাবে। আজ বিচ্ছিন্নভাবে কোনও প্রচেষ্টা করলে এবং নিজেদের গতিতে কাজ করলে চলবে না। এখন সকলকে সঙ্গে নিয়ে সবার কথা ভেবে চলতে হবে। ভারত আজ এমনই একটি গ্লোবাল প্লেয়ার হয়ে উঠেছে আর তা করে দেখাচ্ছে। ভারত চাহিদা অনুসারে অভিযোজন, বিবর্ধন ও সম্প্রসারণের নিজস্ব ক্ষমতাকে প্রমাণিত করেছে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে পা মিলিয়ে এগিয়ে যেতে মিলিত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করেছি। আর প্রত্যেক বিষয় থেকে উপরে উঠে আমরা শুধুই মানবতাকে কেন্দ্রে রেখেছি, মানবতার সেবা করেছি। আজ ভারতের ক্ষমতাও আছে, আর সেবা করার ভাবনাও আছে। সেজন্য ভারত ক্রমে বিশ্ব স্বাস্থ্যের চেতনা কেন্দ্র রূপে প্রকাশিত হচ্ছে। ২০২১ সালে আমাদের ভারতের এই ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের এখানে বলা হয়, ‘সর্বম্ অন্য পরিত্যজ্য শরীরম্ পালয়েদতঃ’ ।। অর্থাৎ সব থেকে বড় অগ্রাধিকার শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষাই। সব কিছু ছেড়ে আগে স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। এই মন্ত্রটিকে নতুন বছরে আমাদের নিজেদের জীবনে অগ্রাধিকার সহ প্রয়োগ করতে হবে। আমরা সুস্থ থাকলে দেশ সুস্থ থাকবে। আর আমরা এটাও জানি যে ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট চলছে তা শুধুই নবীন প্রজন্মের জন্য নয়, প্রত্যেক বয়সের মানুষেরই এই ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। আর এই ঋতুতে ফিট ইন্ডিয়ার অভিযানকে গতি প্রদান করা খুব ভালো। দেশে এমন কোনো পরিবার যেন না থাকে যাঁরা যোগ সম্পর্কে কিংবা ফিট ইন্ডিয়া সম্পর্কে জানেন না। আমাদেরকে সুস্থ থাকতেই হবে, সবাইকে সুস্থ রাখতেই হবে। অসুস্থ হলে যে সমস্যাগুলি হয়, সুস্থ থাকার জন্য তত যত্ন নিতে হয় না। আর সেজন্য ফিট ইন্ডিয়া সব সময় একথা মনে করাচ্ছে যে আপনারা নিজেকে সুস্থ রাখুন, নিজের দেশকে সুস্থ রাখুন। এটাই আমাদের সকলের কর্তব্য।
আমার রাজকোটের ভাই ও বোনেরা, আমার গুজরাটের ভাই ও বোনেরা, একথা কখনো ভুলবেন না যে করোনা সংক্রমণ অবশ্যই কমছে। কিন্তু এটি এমন ভাইরাস যা যে কোনও দিন আবার দ্রুতগতিতে সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে। সেজন্য দু গজের দূরত্ব,নিয়মিত মাস্ক পরিধান ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে কোনোরকম গাফিলতি করলে চলবে না। নতুন বছর যেন আমাদের সকলের জন্য অনেক খুশি নিয়ে আসে। আপনাদের জন্য এবং দেশের সবার জন্য নতুন বছর যেন খুব ভালো বছর হয়ে আসে। কিন্তু আমি এটাও বলবো, আগে যেমন বলতাম, ‘ যতক্ষণ ওষুধ নয়, ততক্ষণ কোনো ঢিলেমি নয়!’ অথবা বলতাম, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ওষুধ নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত অসতর্কতা নয়’ – বার বার বলতাম। এখন আমরা ওষুধ সামনে দেখতে পাচ্ছি। আর মাত্র কিছু দিনের ব্যাপার, তার পর আমি বলবো – ‘ওষুধও এবং সতর্কতায় কড়াকড়িও!’ সতর্কও থাকতে হবে, ওষুধও খেতে হবে। ওষুধ এসে গেলেই যে সবাই ছাড়া পেয়ে গেলেন এই ভ্রম পোষণ করবেন না। বিশ্বের তাবড় তাবড় বৈজ্ঞানিকেরা এটাই বলছেন, আর সেজন্য আমাদের ২০২১-এর মন্ত্র হবে ‘ওষুধও এবং কড়া সতর্কতাও!’
আরেকটি কথা – আমাদের দেশে গুজবের বাজার খুব গরম থাকে। নানা ধরণের মানুষ তাঁদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য কখনো কখনো দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার থেকে নানা ধরণের গুজব রটায়। এমনও হতে পারে যখন ভ্যাকসিনের কাজ শুরু হবে তখনও গুজবের বাজার ততটাই গরম থাকবে। কাউকে ছোট দেখানোর জন্য সাধারণ মানুষের কত লোকসান হতে পারে তার পরোয়া না করে অগুণতি কাল্পনিক মিথ্যেকথা রটানো হবে। অনেক ক্ষেত্রে তো এখনই শুরু হয়ে গেছে। আর সহজ সরল গরীব মানুষেরা কিছু বদ উদ্দেশ্য নিয়ে চলা মানুষদের দ্বারা দ্রুত প্রভাবিত হয়ে যান। আমার দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ একটি অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। গুজবের বাজারকে গরম হতে দেবেন না। সোশ্যাল মিডিয়াতে যাই দেখবেন তা যাচাই না করে ফরোয়ার্ড করবেন না। আপনারা প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল নাগরিকের মতো আগামী দিনগুলিকে দেশে স্বাস্থ্য রক্ষার যে অভিযান চলবে, প্রত্যেকেই নিজের মতো করে সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করুন, অবদান রাখুন। সবাই নিজেদের পক্ষ থেকে কর্তব্য পালন করুন। আর যে মানুষদের জন্য আগে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে, গরীব মানুষদের দিকে এগিয়ে গিয়ে আমরা যেন তাঁদেরকে যথাযথ ঠিক তথ্য জানিয়ে সাহায্য করি, যাতে ভ্যাকসিনের বিষয়টি এগিয়ে যায়। দেশবাসী যথা সময়ে এর খবর পাবেন। আমি আরেকবার ২০২১-এর জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ধন্যবাদ!