এখানে উপস্থিত মুম্বই এবং মুম্বই মেট্রোপলিটন অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
‘বিকশিত ভারত’-এর অঙ্গীকার এবং মুম্বই ও মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দিন। মুম্বইয়ে এই অনুষ্ঠান হলেও গোটা দেশে এর প্রভাব পড়বে। আজ বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র ব্রিজ ‘অটল সেতু’ পেল দেশ। আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের সাফল্য ও অঙ্গীকারের সাক্ষ্য বহন করছে।
২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে আমি ভুলতে পারি না, যেদিন এই অটল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে আমি এখানে এসেছিলাম। সেই সময় ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি বলেছিলাম – “এটা লিখে রাখুন, দেশে পরিবর্তন হবে এবং দেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে।” যে ব্যবস্থায় প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বছরের পর বছর সময় নষ্ট হত, সেখানে মানুষ সব রকমের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা মনে করতেন, তাঁদের জীবদ্দশায় কোনো বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। আজ আমি আবার ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই অটল সেতু মুম্বই এবং দেশবাসীকে উৎসর্গ করছি। কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যেই এই সংযোগ সেতুর কাজ শেষ করা এক বড় সাফল্য। আমাদের কাছে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন শুধুমাত্র একটি দিনের কর্মসূচি নয়, আমাদের কাছে প্রতিটি প্রকল্পের অর্থ হল, ভারতের ‘নব নির্মাণ’। একটি বড় বাড়ি যেমন এক একটি করে ইঁট গেঁথে তৈরি করা হয়, তেমনই প্রতিটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের সমৃদ্ধির কাঠামো।
বন্ধুগণ,
আজ ৩১ হাজার কোটি টাকার যেসব প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করা হচ্ছে, সেগুলির সঙ্গে দেশ, মুম্বই এবং মহারাষ্ট্রের উন্নয়ন জড়িত। সড়ক, রেল, মেট্রো এবং জলের সঙ্গে এই প্রকল্পগুলি যুক্ত। আজ মুম্বই আধুনিক ‘ভারত রত্নম’ পেল। এই প্রকল্পগুলির অধিকাংশই সেই সময়কার, যখন মহারাষ্ট্রে প্রথম ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠিত হয়েছিল।
আজ আমি মহারাষ্ট্রের বোনেদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিপুল সংখ্যায় মহিলাদের উপস্থিতির চেয়ে বড় সৌভাগ্য কিছু হতে পারে না। এই মা-বোনেদের আশীর্বাদ আমরা পাচ্ছি। দেশের মা, বোন এবং কন্যাদের ক্ষমতায়নের যে গ্যারান্টি মোদী দিয়েছে, তা মহারাষ্ট্র সরকার আরও এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সশক্তিকরণ অভিযান, নারীশক্তি দূত অ্যাপ এবং লেক লেড়কি যোজনা এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
মা, বোন এবং কন্যাদের জীবনযাত্রা সহজ করতে আমার সরকার ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা, বিনা খরচে চিকিৎসার জন্য আয়ুষ্মান যোজনা, জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি, মহিলাদের নামে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি, গর্ভবতী মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা করে জমা, কর্মরত মহিলাদের জন্য সবেতন ২৬ সপ্তাহের ছুটি, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেশি সুদ প্রদান – আমাদের সরকারের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ মহিলাদের জন্য নেওয়া।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে এই অটল সেতু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যে কেউ এই সেতুর দিকে তাকালে, তাঁর বুক গর্বে ভরে উঠবে। এই সেতু নির্মাণে যে পরিমাণ লোহা ও ইস্পাত ব্যবহৃত হয়েছে, তা দিয়ে ৪টি হাওড়া সেতু এবং ৬টি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি তৈরি করা যেত। এই সেতুর ফলে মুম্বই ও রায়গড়ের দূরত্ব কমেছে। যে পথ পেরোতে ঘন্টার বেশি সময় লেগে যেত, তা এখন কয়েক মিনিটেই অতিক্রম করা যাবে। এর ফলে পুণে এবং গোয়ার সঙ্গে মুম্বইয়ের দূরত্বও অনেক কমে যাবে। এই সেতু নির্মাণের কাজে সহায়তার জন্য জাপান সরকারের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
বন্ধুগণ, শুধুমাত্র অটল সেতুর মধ্যেই আমরা আটকে থাকব না। অটল সেতু হল, ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যখন আমার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হল, তখন ভোটের কিছু সময় আগে আমি রায়গড় দুর্গ পরিদর্শন করেছিলাম এবং ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের সৌধের সামনে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছিলাম। তার ১০ বছর পর আজ এই সাফল্য। এই ১০ বছরে দেশ অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখেছে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
গত ১০ বছরে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১০ বছর আগে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার বড় বড় কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা হত। আজ লক্ষ কোটি টাকার বড় বড় প্রকল্পের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
উত্তর-পূর্বের ভূপেন হাজারিকা সেতু এবং বগিবিল ব্রিজের মতো বড় বড় প্রকল্প দেখেছে দেশ। আজ অটল টানেল, চেনাব ব্রিজ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আধুনিক বড় বড় রেল স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। বন্দে ভারত, নমো ভারত এবং অমৃত ভারত-এর মতো ট্রেন মানুষের ভ্রমণকে সহজ করেছে। আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি সপ্তাহে নতুন বিমানবন্দরের সূচনা করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আগামী বছরগুলিতে দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন পেতে চলেছে মুম্বই। দিল্লি-মুম্বই আর্থিক করিডর খুব শীঘ্রই মধ্য ও উত্তর ভারতের সঙ্গে মহারাষ্ট্রকে জুড়বে।
আজ গোটা দেশ দেখতে পাচ্ছে, করদাতাদের টাকা কীভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। যদিও দশকের পর দশক ধরে যাঁরা দেশ শাসন করেছেন, তাঁরা সময় এবং করদাতাদের অর্থের বিষয়টি গ্রাহ্যই করেনি। এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হয় বিলম্বিত হয়েছে, কিংবা কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। পাঁচ দশক আগে নীলভান্দে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছিল এবং তা শেষ হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে। নবি মুম্বই মেট্রো প্রকল্পের কাজও বিলম্বিত হয়েছে। আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার গঠনের পর এই প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয় এবং প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে।
বন্ধুগণ,
অটল সেতুর মতো পরিকাঠামো প্রকল্প শুধুমাত্র যাতায়াতের সুবিধাই প্রদান করবে না, সেইসঙ্গে এই প্রকল্প উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে। এর নির্মাণকালে প্রায় ১৭,০০০ শ্রমিক এবং ১,৫০০ ইঞ্জিনিয়ারকে প্রত্যক্ষভাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া, ব্যবসায়িক পরিবহণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
আজ একইসঙ্গে দুটি পথে ভারতের উন্নয়ন হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হল, গরিবদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ব্যাপক প্রচার এবং অন্যটি হল, দেশের প্রতিটি প্রান্তে বড় বড় প্রকল্প। আমরা অটল পেনশন যোজনার মতো কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি অটল সেতুর মতো প্রকল্পও হাতে নিচ্ছি। আমি আপনাদের সামনে ১০ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরছি। ২০১৪ সালের আগের ১০ বছরে পরিকাঠামো প্রকল্পে মাত্র ১২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। গত ১০ বছরে আমাদের সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ৪৪ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। শুধু মহারাষ্ট্রেই কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ হয় শেষ করেছে, অথবা সেগুলির কাজ চলছে। এই প্রকল্পগুলিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের মিশন হল, দেশের প্রতিটি পরিবারের কাছে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’র মাধ্যমে মোদীর গ্যারান্টি যান দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের বোন ও কন্যারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন। পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি প্রকল্পে আমাদের গ্রাম ও শহরের বোন ও কন্যারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন।
পিএম স্বনিধি যোজনায় লক্ষ লক্ষ পথ-বিক্রেতা ভাই-বোন উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের সরকার মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সহায়তা করে চলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা অসংখ্য বোনকে ‘লাখপতি দিদি’ করে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হল, আগামী বছরগুলিতে ২ কোটি ‘লাখপতি দিদি’ তৈরি করা।
মহারাষ্ট্রে এনডিএ সরকার এক নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা মহিলাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সশক্তিকরণ অভিযান এবং নারীশক্তি দূত অভিযান মহিলাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার একই নিষ্ঠা নিয়ে মহারাষ্ট্রের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমি আবার আপনাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি, বিশেষত সেইসব মা-বোনেদের, যাঁরা বিপুল সংখ্যায় এখানে হাজির হয়ে আমাদের আশীর্বাদ করেছেন।
আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে