নমস্কার, ভাইরা!
গুজরাটের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে আজকের দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভূপেন্দ্র ভাইকে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের সব সাংসদ ও বিধায়কদের এবং মঞ্চে উপবিষ্ট সকলকে দ্রুতগতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানাই। বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি পরিষেবা ও পরিকাঠামো এখন আমাদের গুজরাটের আমেদাবাদে পাওয়া যাবে। যারা বেসরকারী হাসপাতালে যেতে পারেন না সমাজের সেইসব সাধারণ মানুষ এখন উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা পাবেন। তাঁদের জন্য সরকারি হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দিতে প্রস্তুত। ভাই ও বোনেরা, সাড়ে তিন বছর আগে আমার ১২০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিসরটি উদ্বোধন করার ও ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। আজ এই স্বল্প সময়েরর মধ্যেই এই পরিসর বৃহৎ আঙ্গিকে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এখানে কিডনি রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে। ইউএন মেহেতা ইন্সটিটিউট অফ কার্ডিওলজির পরিষেবা সম্প্রসারণ হয়েছে। গুজরাট ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের কাজও হচ্ছে। এটি হবে দেশের মধ্যে প্রথম সরকারি হাসপাতাল যেখানে সাইবার নাইফের মতো আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। যখন উন্নয়নের গতির প্রশ্ন আসে তখন গুজরাটে এতো বেশি কাজ হয়েছে ও সাফল্য এসেছে যেটা একেবারে গণনা করা সম্ভব হয় না। সব সময়ের মতোই গুজরাট এখনও দেশের মধ্যে প্রথম অনেক কাজই করছে। আমি আপনাদের সকলকে ও গুজরাটবাসীকে এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই। বিশেষভাবে আমি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র ভাই প্যাটেল ও তাঁর সরকারকে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প সফল করার জন্য প্রশংসা করি।
বন্ধুগণ,
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গুজরাটের এক গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার কথা ভাগ করে নিতে চাই। এ’হল নানান রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার যাত্রা। আপনারা হয়তো আশ্চর্য হচ্ছেন মোদী কেন বিভিন্ন রকম রোগের কথা বলছে। আমি যেসব সমস্যা এখানে বর্তমান তার কথা উল্লেখ করবো। আমি চিকিৎসক নই কিন্তু আমাকে এই সমস্যাগুলির সমধান করতে হবে। গুজরাট ২০-২৫ বছর আগে বিভিন্ন রোগে জর্জরিত ছিল। তারমধ্যে একটি হল স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা, দ্বিতীয়টি হল শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা, তৃতীয়টি হল বিদ্যুতের অভাব, চতুর্থটি হল জলের অভাব, পঞ্চমটি হল সুশাসনের অভাব এবং ষষ্ঠটি হল আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। এইসব রোগগুলির মূল ছিল ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি। এই অনুষ্ঠানে যেসব বয়োজেষ্ঠ্য মানুষ উপস্থিত রয়েছেন তাঁরা পুরনো দিনের কথা মনে করতে পারবেন। জনগণকে তখন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সংগ্রাম করতে হতো, বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে হত। প্রতিদিন দুর্নীতি, অনুন্নত আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির সঙ্গে জীবনযাপন করতে হত। কিন্তু বর্তমানে গুজরাট এইসব সমস্যাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। এই রাজ্যের জনগণ সুস্থ জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে যখন উন্নতমানের হাসপাতালের প্রসঙ্গ আসে তখন গুজরাট শীর্ষস্থানে রয়েছে। আমি যখন এখানে মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, বহুবার সিভিল হাসপাতাল ঘুরে দেখেছি। তখন দেখেছি মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বহু মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতেন।
বন্ধুগণ,
আজ বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরিখেও দেশের মধ্যে গুজরাটের স্থান অন্যতম। জল, বিদ্যুৎ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও গুজরাটের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে সরকার গুজরাটের উন্নয়নের জন্য সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস এর লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আমেদাবাদে বর্তমানে উন্নতমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা গুজরাটকে নতুন পরিচয় দিয়েছে। এটি কেবলমাত্র একটি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান নয়, গুজরাটের জনগণের ক্ষমতারও প্রতীক। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা পরিষেবাগুলি অবিরাম গুজরাটে পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার জনগণ রাজ্য বসেই পাচ্ছেন বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা। চিকিৎসা পর্যটনের ক্ষেত্রে গুজরাটের উন্নতি হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আমরা শুনে থাকি যে নীরোগ দেহের জন্য সুস্থ মন জরুরি। সরকারের ক্ষেত্রেও এটি সমান প্রযোজ্য। সরকার যদি জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয় তবে কোনো রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি হতে পারে না। ২০-২৫ বছর আগে গুজরাটের জনগণ অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন। তবে বর্তমানে ক্রমশ তা থেকে মুক্তি ঘটছে।
বন্ধুগণ,
গুজরাটের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চিকিৎসকরা যেমন রোগ মুক্তির জন্য শল্য চিকিৎসার পরামর্শ দেন তেমনই পুরনো সরকারি ব্যবস্থাপনা ছেঁটে ফেলা আমার কাছে পরিবর্তন। দুর্নীতি ও কাজ না করার মানসিকতার ওপর ছুরি-কাঁচি চালিয়েছি আমি। পাশাপাশি চিকিৎসকরা যেমন ওষুধ দিয়ে রোগ সারান তেমনই নতুন ব্যবস্থাপনা চালু করার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছি আমি। এ ছাড়াও গুজরাটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নের সঙ্গে উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। আমরা জনগণের মধ্যে দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা জানতে পেরেছি। আজ আমি বলতে চাই গুজরাটে প্রথম পশুদের জন্য স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। এই রাজ্যের বাইরে যারা বসবাস করেন তারা আশ্চর্য হয়েছেন যখন আমি তাদের বলেছি যে পশুদেরও দাঁত ও চোখের চিকিৎসা হয়।
ভাই ও বোনেরা,
জন-অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়েছি আমরা। জি২০ শিখর সম্মেলনে করোনা অতিমারীর সময় ভাষণ দিচ্ছিলাম আমি। তখন তাদের এক পৃথিবী ও এক স্বাস্থ্য মিশনের লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানাই। দরিদ্রদের সাহায্য করার আবেদনও জানিয়েছিলাম। আমরা দেখেছি বিশ্বের এমন কয়েকটি দেশ অতিমারীর সময় হয়তো নিজের দেশের জনগণকে প্রতিষেধকের চারটি থেকে পাঁচটি ডোজ দিয়েছে। কিন্তু অন্য বেশ কিছু দেশের দরিদ্র জনগণ প্রতিষেধকের একটি ডোজও পাননি। আমি তখন অত্যন্ত কষ্টে ছিলাম। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই বিশ্বে কেউ যেন প্রতিষেধক থেকে বঞ্চিত না হন তারজন্য আমরা বিশ্ববাসীকে প্রতিষেধক দেবো।
বন্ধুগণ,
সততার সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে কোনো চেষ্টা চালানো হলে তার দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আর এটিই হল গুজরাটের সাফল্যের মন্ত্র। বর্তমানে গুজরাটের হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং চিকিৎসক হওয়ার জন্য তরুণদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ রয়েছে। ২০-২২ বছর আগে এতোবড় একটা রাজ্যে মাত্র ৯টি মেডিকেল কলেজ ছিল। মাত্র ৯টি মেডিকেল কলেজ! কিন্তু বর্তমানে ৩৬টি মেডিকেল কলেজ পরিষেবা দিচ্ছে। ২০ বছর আগে গুজরাটের সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার। বর্তমানে গুজরাটে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ুয়াদের জন্য আসন সংখ্যা বেড়েছে। এই হাসপাতালগুলি থেকে পাশ করা চিকিৎসকরা গুজরাটের বিভিন্ন অংশে চিকিৎসা পরিষেবা মজবুত করার কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
এবং বন্ধুগণ,
গুজরাট থেকে আমি যা শিখেছি তা আমি যখন দিল্লি যাই আমার জন্য বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। একই দৃষ্টি নিয়ে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রে কাজ করতে শুরু করি আমরা। মাত্র ৮ বছরে দেশের বিভিন্ন অংশে আমরা ২২টি এইমস হাসপাতাল গড়ে তুলেছি। এ থেকে উপকৃত হয়েছে গুজরাটও। গুজরাটের রাজকোটে প্রথম এইমস হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। গুজরাটের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে কাজ হচ্ছে তা বিশ্বের দরবারে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুজরাটকে বিশেষ স্থান করে দেবে আর কিছু দিনের মধ্যেই। ডবল ইঞ্জিন সরকার এই ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিচ্ছে।
বন্ধুগণ,
সহানুভুতিশীল মানসিকতা ও সম্পদ পরিষেবা উন্নত করার অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে সমগ্র ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হয়েছে। আমেদাবাদ ক্যান্সার ইন্সটিটিউটেরও আধুনিকীকরণ হয়েছে। গুজরাটের প্রতিটি জেলায় ডে-কেয়ার কেমো থেরাপি সুবিধা চালু হয়েছে। ভূপেন্দ্র ভাই সরকারের নিরলস চেষ্টার ফলে প্রতিটি তালুকাতেই ডায়ালিসিস সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আজ এখানে যে ৮ তলা আশ্রয় গৃহ উদ্বোধন হয়েছে তা ডায়ালিসিস রোগীদের ও তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে। আমি বিশ্বের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের আমি বলেছি যে ভারতের প্রতি জেলায় আমি ডায়ালিসিস কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
বন্ধুগণ,
গুজরাট সরকার এটি নিশ্চিত করেছে যে রোগীদের পরিবার-পরিজন যেন কোনোভাবেই সমস্যার সম্মুখীন না হন। গোটা দেশেও সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বন্ধুগণ,
সরকার যখন সহানুভুতিশীল হয় তখন সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, মধ্যবিত্ত পরিবার এবং মা ও বোনেরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন। গুজরাটে মা ও শিশুদের মৃত্যুর হার অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল। মা ও শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য আমার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ফলস্বরূপ গুজরাটে বর্তমানে এই ক্ষেত্রে মৃত্যুহার অনেক কম। মায়েদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। নবজাতকরাও বিশ্বের উন্নয়নে শরিক হওয়ার জন্য তাদের যাত্রা শুরু করছেন। “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” সফলভাবে রূপায়ণের ফলে দেশে এই প্রথমবারের মতো ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে। গুজরাট সরকারের চিরঞ্জিবী, খিলখিলাহট প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। মিশন ইন্দ্রধনুষ এবং মাতৃ বন্দনার মতো প্রকল্পের ক্ষেত্রেও গুজরাট সমগ্র দেশকে পথ দেখাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প দেশের দরিদ্র শ্রেণীর জনগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে। গুজরাটে আয়ুষ্মান ভারত এবং মুখ্যমন্ত্রী অমৃতম প্রকল্প দরিদ্র শ্রেণীর জনগণের বোঝা কম করছে।
বন্ধুগণ,
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য হচ্ছে এমন দুটি ক্ষেত্র যা কেবলমাত্র বর্তমান নয় ভবিষ্যতের পথকেও স্থির করে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ২০১৯ সালে সিভিল হাসপাতালে ১২০০ শয্যা সুবিধা ছিল। এক বছর পর অতিমারীর সময় এই হাসপাতাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই একটিমাত্র স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র কতো জনের জীবন বাঁচিয়েছে? আমেদাবাদের এসভিপি হাসপাতাল করোনা অতিমারীর সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। গুজরাটে যদি এই ধরণের আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা না থাকতো তাহলে অতিমারীর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কতটা কঠিন হতো একবার ভেবে দেখুন। আমাদের বর্তমানের উন্নতির পাশাপাশি ভবিষ্যৎকেও রক্ষা করতে হবে। আপনাদের আশীর্বাদ আমাদের উন্নয়ন যাত্রাকে চালিয়ে যেতে শক্তি যোগাবে। আমি আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবারও যেন নীরোগ থাকে। এই কামনা সহ আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ!