জয় কৃষ্ণগুরু!
জয় কৃষ্ণগুরু!
জয় কৃষ্ণগুরু!
জয় জয়তে পরম কৃষ্ণগুরু ঈশ্বর!
কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রমে সমবেত হওয়া সকল সাধু, সন্ন্যাসী ও ভক্তবৃন্দকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। বিগত এক মাস ধরে কৃষ্ণগুরু একনাম অখন্ড কীর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কৃষ্ণগুরুজী জ্ঞান, সেবা ও মানবিকতার যে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন, তা আজও অনুসরণ করা হচ্ছে দেখে আমি আনন্দিত। গুরুকৃষ্ণ প্রেমানন্দ প্রভুজীর আশীর্বাদ ও সহযোগিতায় এবং কৃষ্ণগুরু ভক্তবৃন্দের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের পবিত্র ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমি আশা করি, আসামে এসে এই অনুষ্ঠানে আমিও আপনাদের সঙ্গে অংশ নেবো। অতীতে মহান কৃষ্ণগুরুজীর সান্নিধ্যে আসার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু, আমার পক্ষ থেকে হয়তো কিছু ত্রুটি ছিল, তাই আমি এসে পৌঁছতে পারিনি। আমি আশা করি, কৃষ্ণগুরুর আশীর্বাদে অদূর ভবিষ্যতে আপনাদের প্রণাম করার ও সাক্ষাতের সুযোগ পাব।
বন্ধুগণ,
বিশ্ব শান্তির জন্য প্রতি ১২ বছর অন্তর কৃষ্ণগুরুজী মাসব্যাপী অখন্ড একনাম জপের সূচনা করেছিলেন। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, ১২ বছর অন্তর এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হ’ল কর্তব্য পালন করা। দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে মানুষ এখানে আসেন, তাঁরা গত ১২ বছর কি কি হয়েছে, তার পর্যালোচনা করেন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন। প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভ মেলার আয়োজনও আরেকটি উদাহরণ। ২০১৯ সালে আসামের জনগণ সফলভাবে ব্রহ্মপুত্র নদে পুষ্করম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। তামিলনাডুর কুম্বাকোনামেও প্রতি ১২ বছর অন্তর মহামহম উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতি ১২ বছর অন্তর ভগবান বাহুবলির মহামস্তকাভিষেকের আয়োজন করা হয়। নীলগিরি পাহাড়ে নীল কুরুংজি ফুল ১২ বছর অন্তর ফুটলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কৃষ্ণগুরু একনাম অখন্ড কীর্তনও প্রতি ১২ বছর অন্তর আয়োজিত হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্য ও তার অধ্যাত্ম সাধনা অখন্ড কীর্তনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়। এই উপলক্ষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
কৃষ্ণগুরুজীর ব্যতিক্রমী প্রতিভা, তাঁর অধ্যাত্ম সাধনা এবং তাঁকে ঘিরে নানা অভূতপূর্ব জনশ্রুতি আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। ছোট-বড় বৈষম্য রাখা উচিৎ নয় – তাঁর এই শিক্ষা অনুসরণ করে দেশ গত ৮-৯ বছর ধরে সকলের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছে। যাঁরা একসময় বঞ্চিত ছিলেন, তাঁদের আজ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আসাম বা আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অবহেলিত ছিল। এ বছরের বাজেটে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও অর্থনীতির সঙ্গে পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রয়েছে। এ বছরের বাজেটে পর্যটন সংক্রান্ত ক্ষেত্রের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে ৫০টি পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশ ঘটানো হবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এর সুফল পর্যটনরা পাবেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও আসাম এইসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে প্রভূত উপকৃত হবে। আজ এই অনুষ্ঠানে আমি সকল সাধু-সন্ত ও বিদ্বজনদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে চাই। আপনারা সকলে জানেন, বিশ্বের বৃহত্তম নৌ-বিহার গঙ্গা বিলাসে প্রচুর বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে বেরিয়েছেন। বেনারস থেকে পাটনা হয়ে বিহারের বক্সা ও মুঙ্গেরের পর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে এই জাহাজ বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে। খুব শীঘ্রই এটি আসামে পৌঁছবে। পর্যটকরা নদী তীরবর্তী অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ভারতের সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল গুরুত্ব হ’ল – এর সঙ্গে নদী তীরের যোগসূত্র থাকা। আমি নিশ্চিত যে, গঙ্গা বিলাসের মধ্য দিয়ে আসামের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছবে।
বন্ধুগণ,
বিভিন্ন সংগঠনের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রম মানুষের কল্যাণের চিরায়ত হস্তশিল্প ও দক্ষতা বৃদ্ধির নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চিরায়ত দক্ষতাকে বিশ্ব বাজারে নতুন পরিচিতি দিতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ দেশ-বিদেশের মানুষ আসামের শিল্পকলা, রাজ্যের জনগণের দক্ষতা ও স্থানীয় বাঁশ থেকে উৎপাদিত পণ্যের বিষয়ে অবগত রয়েছেন। আপনারা জানেন, অতীতে বাঁশকে গাছ হিসাবে বিবেচনা করা হ’ত, ফলে বাঁশ কাটা বেআইনি ছিল। আমরা ঔপনিবেশিক সময়কালের সেই আইনের পরিবর্তন করেছি। বাঁশকে ঘাস শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। ফলে, চিরায়ত এক কর্মসংস্থানের সুযোগ আবার উন্মুক্ত হয়েছে। বাজেটে এইসব সামগ্রীর মানোন্নয়নের জন্য দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যে এ ধরনের পণ্যের স্বীকৃতি দিতে ‘একতা মল’ গড়ে তোলা হবে। আসামের কৃষক, হস্তশিল্পী ও যুবক-যুবতীদের তৈরি করা সামগ্রী বিক্রির জন্য একতা মল – এ রাখা হবে। এইসব পণ্য সামগ্রী শুধু মাত্র আসামেই নয়, বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও বিক্রির জন্য রাখা হবে। একতা মল – এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকরা আসামের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
আসামের হস্তশিল্পের প্রসঙ্গ উঠলেই গামোসা বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। আমার নিজের গামোসা পরতে ভালো লাগে। প্রতিটি সুন্দর গামোসার সঙ্গে আমাদের আসামের মা ও বোনেদের কঠোর পরিশ্রম যুক্ত আছে। গত ৮-৯ বছর ধরে গামোসার চাহিদা দেশ জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিপুল চাহিদা মেটাতে বিপুল সংখ্যায় মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মহিলা কর্মরত। এখন এই গোষ্ঠীগুলি দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। এবারের বাজেটে মহিলা সম্মান সেভিং সার্টিফিকেট – এর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। তাঁরা তাঁদের সঞ্চয়ের থেকে বেশি হারে সুদ পাবেন। এছাড়াও, এবারের বাজেটে পিএম আবাস যোজনা খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৭০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে, যাতে যেসব দরিদ্র পরিবারের পাকা বাড়ি নেই, তাঁরা পাকা বাড়ি পাবেন। এই বাড়িগুলির বেশিরভাগই মহিলাদের নামে নিবন্ধিত হচ্ছে। অর্থাৎ, বাড়িগুলির আইনি মালিক মহিলারা। এবারের বাজেটে আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ফলে, তাঁদের সামনে নতুন নতুন সুযোগ আসবে।
বন্ধুগণ,
কৃষ্ণগুরু বলতেন, দৈনন্দিন আধ্যাত্মিক কাজে প্রাণ ও মনকে নিয়োজিত করো। এই মন্ত্রের প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে, যার ফলে সমাজের উন্নয়নে মন্ত্রের জোরে এগোনো যায়। কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রম এই মন্ত্রের সাহায্যে সমাজের প্রতিটি স্তরে কাজ করে চলেছে – আমি এজন্য অত্যন্ত আনন্দিত। আপনারা যেসব সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত, তা আসলে দেশের শক্তির উৎস। সরকার দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করে। কিন্তু দেশের কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি হ’ল সমাজের ক্ষমতা ও জনগণের অংশগ্রহণ। আমরা দেখেছি, মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযান কিভাবে সাফল্য লাভ করেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিতেও জনগণের অংশগ্রহণের জন্যই সাফল্য এসেছে। দেশের ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন – মহিলা ও যুবসম্প্রদায়ের জন্য সেবাশ্রম বেশ কিছু সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এবং পোষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। খেলো ইন্ডিয়া ও ফিট ইন্ডিয়া যুবসম্প্রদায়কে যুক্ত করতে আপনারা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যোগ ও আয়ুর্বেদকে জনপ্রিয় করে তুলতে আপনাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, হস্তশিল্পীরা যখন কোনও যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন করেন, তখন তাঁরা দক্ষ বলে বিবেচিত হন এবং তাঁদের বিশ্বকর্মা বলা হয়। এই প্রথম দেশ চিরায়ত কাজে যুক্ত হস্তশিল্পীদের দক্ষতা বিকাশে উদ্যোগী হয়েছে। তাঁদের জন্য পিএম – বিশ্বকর্মা কৌশল সম্মান বা পিএম বিকাশ যোজনার কথা এবারের বাজেটে ঘোষিত হয়েছে। এই প্রকল্পের বিষয়ে বিশ্বকর্মা বন্ধুদের কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রম বিস্তারিতভাবে জানালে তাঁরা উপকৃত হবেন।
বন্ধুগণ,
সারা পৃথিবী ২০২৩ সালকে মিলেট বর্ষ হিসাবে উদযাপিত করছে। ভারতের উদ্যোগে এই উদযাপন শুরু হয়েছে। মিলেট অর্থাৎ মোটাদানার শস্য ‘শ্রী অন্ন’ হিসাবে এখন পরিচিতি পাচ্ছে। শ্রী অন্ন সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে কৃষ্ণগুরু সেবাশ্রম সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশ্রম থেকে যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়, তা শ্রী অন্ন দিয়ে তৈরি করার আহ্বান জানাচ্ছি। একইভাবে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে আরও বেশি করে জানাতে হবে। সেবাশ্রম প্রকাশন আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিষয়ে প্রচার করছে। আমি নিশ্চিত যে, আপনাদের এইসব উদ্যোগের ফলে ১২ বছর পর যখন আবারও অখন্ড কীর্তন হবে, সেই সময় দেশ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আরও একবার আমি সাধু-সন্ন্যাসী ও পবিত্র আত্মার মানুষদের প্রণাম ও শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।