নমস্কার!
মধ্যপ্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল জি, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী হরদীপ সিং পুরী জিসস, ডঃ বীরেন্দ্র কুমারজি, শ্রী কৌশল কিশোরজি, মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের মন্ত্রীগণ, অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংসদ ও বিধায়কগণ, ইন্দোর সহ মধ্যপ্রদেশের অনেক শহর থেকে আজকের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হওয়া আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা আর এখানে উপস্থিত সকল শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ।
আমরা যখন ছোট ছিলাম, যখন পড়াশোনা করতাম, তখন ইন্দোরের নাম শুনলেই সবার আগে দেবী অহিল্যাবাঈ হোলকর, মাহেশ্বর প্রমুখের সেবাভাবের কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠত। সময়ের সঙ্গে ইন্দোর বদলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রগতির জন্য বদলেছে। কিন্তু, দেবী অহিল্যাজির প্রেরণাকে ইন্দোরবাসী কখনও হারিয়ে যেতে দেননি। দেবী অহিল্যাজির সঙ্গেই আজ ইন্দোরের নাম উচ্চারিত হয় আর তখন যে কথাটি প্রথম মনে পড়ে, সেটি হল পরিচ্ছন্নতা। ইন্দোরের নাম মনে পড়তেই মনে জাগে নাগরিক কর্তব্য। ইন্দোরের জনগণ যত ভালো, ততটাই ভালোভাবে তাঁরা নিজেদের শহরকে গড়ে তুলেছেন আর ইন্দোরবাসীরা যতটা সেব বা আপেলের ভক্ত নন, ইন্দোরের জনগণ নিজের শহরকে সেবা করতেও জানেন।
আজকের দিনটি পরিচ্ছন্নতার জন্য ইন্দোরের অভিযানকে একটি নতুন শক্তি প্রদান করতে চলেছে। ইন্দোরবাসী আজ সিক্ত বর্জ্য পদার্থ থেকে বায়ো-সিএনজি উৎপাদনের জন্য গোবর-ধন প্ল্যান্ট পেয়েছেন। এজন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি শিবরাজজি এবং তাঁর টিমকে বিশেষ প্রশংসা করব যাঁরা এই কাজটিকে এত কম সময়ে সম্ভব করে তুলেছেন। আমি আজ সুমিত্রা (মহাজন) তাইজির প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাইব, যিনি সাংসদ হিসেবে ইন্দোরের পরিচয়কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। ইন্দোরের বর্তমান সাংসদ, আমার বন্ধু, ভাই, শঙ্কর লালওয়ানিজিও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথে ইন্দোরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও উন্নত করে তোলার জন্য লাগাতার কাজ করে চলেছেন।
আর বন্ধুগণ,
আজ যখন আমি ইন্দোরের এত প্রশংসা করছি, তখন আমার নিজের সংসদীয় ক্ষেত্র বারাণসীর কথাও উল্লেখ করতে চাইব। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে কাশী বিশ্বনাথ ধামে দেবী অহিল্যাবাঈ হোলকরজির অনিন্দ্যসুন্দর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ইন্দোরের জনগণ যখন বাবা বিশ্বনাথকে দর্শন করতে যাবেন, তখন তাঁরা সেখানে দেবী অহিল্যাবাঈজির মূর্তিও দর্শন করতে পারবেন। আপনাদের তখন নিজেদের শহর সম্পর্কে আরও গর্ব অনুভব হবে।
বন্ধুগণ,
নিজেদের শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে আর সিক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আজকের এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের প্রত্যেক বাড়ি থেকে যে সিক্ত বর্জ্য পদার্থ বেরোয়, গ্রামে পশুদের এবং খেত থেকে বর্জ্য পদার্থ বেরোয় – এসব কিছুই এক প্রকার গোবর-ধন। শহরের সিক্ত বর্জ্য আর পশুধন থেকে গোবর-ধন, আর এই গোবর-ধন থেকে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি, তারপর পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি থেকে ‘উর্জাধন’ উৎপাদন – এই শৃঙ্খলা উন্নত জীবন-ধন গড়ে তুলবে। এই শৃঙ্খলার প্রতিটি পর্যায় কিভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ও পরস্পরের পরিপূরক, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ রূপে ইন্দোরের এই গোবর-ধন প্ল্যান্ট এখন ভারতের অন্যান্য শহরকেও প্রেরণা যোগাবে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আগামী দু’বছরে দেশের ৭৫টি বড় নগর প্রশাসন এ ধরনের গোবর-ধন বায়ো-সিএনজি প্ল্যান্ট গড়ে তোলার কাজ সম্পূর্ণ করতে চলেছে। এই অভিযান ভারতের শহরগুলিকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে, দূষণমুক্ত করে তুলতে, পরিবেশ-বান্ধব শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যন্ত সহায়ক হবে। এখন তো শুধু শহরেই নয়, এমনকি দেশের গ্রামে গ্রামেও হাজার হাজার গোবর-ধন বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে, আমাদের পশুপালকেরা গোবর থেকেও অতিরিক্ত আয় করতে শুরু করবেন। আমাদের গ্রাম-দেহাতে কৃষকদের মালিকানাহীন পশু থেকে যত ধরনের সমস্যা হয়, তা-ও এ ধরনের গোবর-ধন প্ল্যান্টের মাধ্যমে হ্রাস পাবে। এই সকল প্রচেষ্টা ভারতের দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার দায়বদ্ধতাকেও পূরণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
গোবর-ধন যোজনা অর্থাৎ, আমাদের বর্জ্য থেকে সম্পদ উৎপাদনের অভিযান কতটা সফল ও প্রভাবশালী হয়েছে, এর তথ্য যত বেশি মানুষ জানতে পারবেন, তত ভালো। গোবর-ধন বায়ো-সিএনজি প্ল্যান্টের মাধ্যমে ইন্দোর নগর নিগম প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ হাজার কিলো বায়ো-সিএনজি পাবে। তাছাড়া, প্রতিদিন ১০০ টন জৈব সারও এখান থেকে উৎপন্ন হবে। সিএনজি-র ফলে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে এবং সেজন্য প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে উঠবে। এভাবেই এখানে যে জৈব সার উৎপাদিত হবে তা থেকে আমাদের ধরিত্রী মাতাও নতুন জীবন পাবেন, আমাদের ধরিত্রী মায়ের কায়াকল্প হবে।
একটা অনুমান অনুসারে, এই প্রকল্প থেকে যে সিএনজি তৈরি হবে তা দিয়ে ইন্দোর শহরে প্রতিদিন প্রায় ৪০০টি বাস চালানো যাবে। এই প্রকল্প থেকে কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর কোনও না কোনভাবে কর্মসংস্থান হবে। অর্থাৎ, এই প্রকল্প শহরে ‘গ্রিন জবস’ বা পরিবেশ-বান্ধব কর্মসংস্থানেরও সহায়ক হবে।
ভাই ও বোনেরা,
যে কোনও সমস্যার মোকাবিলার দুটি পদ্ধতি থাকে। প্রথম পদ্ধতি হল, সেই সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেওয়া, আর দ্বিতীয়টি হল, সেই সমস্যার এমন সমাধান করা যাতে সংশ্লিষ্ট সবাই স্থায়ী সমাধান পান। বিগত সাত বছর ধরে আমাদের সরকার যত প্রকল্প রচনা করেছে, সেই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে, স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হয়েছে, এক সঙ্গে অনেক লক্ষ্যসাধনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর কথা বলা যেতে পারে। এই অভিযানের ফলে আমাদের গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের জীবনে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মা-বোনেদের সম্মান রক্ষা, নানা রোগ থেকে জীবন রক্ষার পাশাপাশি গ্রাম ও শহরগুলিকে সুন্দর করে তোলা আর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে তোলার মতো অনেক কাজ একসঙ্গে হয়েছে। এখন আমাদের অগ্রাধিকার হল প্রত্যেক বাড়ি থেকে, প্রত্যেক গলি থেকে যত বর্জ্য নিষ্কাশিত হয়, সেগুলি এবং শহরের প্রান্তে আগে থেকে অনেক বছর ধরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থের যে পাহাড়, সেগুলি থেকে শহরকে মুক্ত করা। এক্ষেত্রেও ইন্দোর একটি উন্নত মডেল হয়ে সকলের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আপনারাও জানেন যে এই নতুন প্রকল্পটি যেখানে স্থাপিত হয়েছে তার পাশেই দেওগুডরিয়াতে বর্জ্যের পাহাড় ছিল। প্রত্যেক ইন্দোরবাসীর জন্য এই বর্জ্যের পাহাড় ছিল আসলে সমস্যার পাহাড়। কিন্তু এখন ইন্দোর নগর নিগম ১০০ একরের এই ডাম্প সাইটকে ‘গ্রিন জোন’-এ পরিবর্তিত করে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ সারা দেশের অসংখ্য শহরে লক্ষ লক্ষ টন বর্জ্য দশকের পর দশক ধরে এভাবেই হাজার হাজার জমিকে দখল করে রেখেছে। এই বর্জ্যের পাহাড়গুলি শহরগুলির জন্য বায়ু দূষণ এবং জল দূষণের কারণও হয়ে ওঠে এবং এর ফলে এগুলিও অনেক ক্ষেত্রে নানা রোগের উৎস। সেজন্য স্বচ্ছ ভারত মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য সারা দেশে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হল, আগামী ২-৩ বছরে সারা দেশের সমস্ত মহানগর ও শহরগুলিকে এই বর্জ্যের পাহাড় থেকে মুক্তি দেওয়া এবং সেই এলাকাগুলিকে ‘গ্রিন জোন’-এ রূপান্তরিত করা।
এর জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে যথাসম্ভব সাহায্যও করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক যে ২০১৪ সালের তুলনায় এখন দেশের সমস্ত মহানগর ও শহরগুলিতে বর্জ্য নিষ্কাশনের ক্ষমতা প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশকে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ থেকে মুক্তি প্রদানের জন্য ১,৬০০-রও বেশি স্থানীয় প্রশাসনের এলাকায় ‘ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফেসিলিটি’ও গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আগামী কয়েক বছরে দেশের প্রত্যেক শহরে এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এ ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা ভারতের শহরগুলিতে সার্কুলার ইকনমি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও নতুন শক্তি যোগাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ক্রমে পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা শহরগুলিতে আরও একটি নতুন সম্ভাবনার অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে। এই নতুন সম্ভাবনাটি হল, পর্যটন শিল্প। আমাদের দেশে এমন কোনও শহর নেই যার কোনও ঐতিহাসিক স্থান নেই ,বা যে শহরে কোনও পবিত্র স্থল নেই। আমাদের যে জিনিসটির অভাব আছে সেটি হল পরিচ্ছন্নতা। যখন শহর পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে, তখন অন্যান্য স্থান থেকে মানুষও সেখানে বেড়াতে আসতে চাইবেন। সাধারণ মানুষ বেশি বেড়াতে আসবেন। এখন যেমন অনেকেই শুধু ইন্দোরের পরিচ্ছন্নতা দেখতে এই শহরে বেড়াতে আসেন। এই শহরকে এত পরিচ্ছন্ন করে তোলার জন্য এখানে যে কাজ হয়েছে তা কেমনভাবে হয়েছে সেটা একটু এসে দেখতে চান। কাজেই, যেখানে পরিচ্ছন্নতা বাড়বে, সেখানে পর্যটন বাড়বে, সেখানে একটি সম্পূর্ণ নতুন অর্থ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
সম্প্রতি ইন্দোর শহর ‘ওয়াটার প্লাস’ হওয়ার সাফল্য অর্জন করেছে। এটাও অন্যান্য শহরের সামনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী একটি কাজ হয়েছে। যখন কোনও শহরের জলের উৎসগুলি পরিচ্ছন্ন থাকে, নির্মল থাকে, নালার নোংরা জল তার মধ্যে এসে না পড়ে, তখন সেই শহরে একটি ভিন্ন প্রাণশক্তি সৃষ্টি হয়। আমাদের সরকার চেষ্টা করছে যাতে ভারতের অধিকাংশ শহরকে ‘ওয়াটার প্লাস’ করে তোলা যায়। এর জন্যই স্বচ্ছ ভারত মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ওপর এতটা জোর দেওয়া হচ্ছে। ১ লক্ষেরও কম জনসংখ্যা-সম্পন্ন নগর নিগমগুলিতে নোংরা জলের ট্রিটমেন্ট বা পরিশোধনের পরিষেবা বাড়ানো হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে যদি সৎভাবে সমাধানের চেষ্টা করা যায়, তাহলে পরিবর্তনও সম্ভব হয়। আমাদের দেশে তেলের কুঁয়ো নেই। পেট্রোলিয়ামের জন্য আমাদের বাইরের দেশ থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে জৈব-জ্বালানি ও ইথানল উৎপাদনের উৎস চিরকালই রয়েছে। এই প্রযুক্তিও অনেক আগেই আমাদের দেশে এসে গিয়েছিল। কিন্তু, আমাদের সরকারই এই প্রযুক্তিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি জোর দিয়েছে। ৭-৮ বছর আগে ভারতে ইথানল ব্লেন্ডিং খুব বেশি হলে ১ শতাংশ হত, কোথাও কোথাও ১.৫ বা ২ শতাংশ হত। এর থেকে এগোনো সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্ত আজ ভারতে পেট্রোলে ইথানল ব্লেন্ডিং প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বিগত সাত বছরে এই ব্লেন্ডিং বা পেট্রোলে ইথানল মেশানোর জন্য পর্যাপ্ত ইথানলের সরবরাহ অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
২০১৪ সালের আগে দেশে প্রায় ৪০ কোটি লিটার ইথানল মিশ্রণের জন্য সরবরাহ করা হত। আজ ভারতে ৩০০ কোটি লিটারেরও বেশি ইথানল মিশ্রণের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। কোথায় ৪০ কোটি লিটার, আর কোথায় ৩০০ কোটি লিটার! এর ফলে, আমাদের চিনি কারখানাগুলির স্বাস্থ্য উন্নত হয়েছে আর আখ চাষীরা অনেক বেশি সম্পন্ন হয়ে উঠেছেন।
বন্ধুগণ,
আরও একটি বিষয় নিয়ে আমি বলব। সেটি হল ‘পরালি’ বা ফসল উৎপাদনের পর মাঠে থেকে যাওয়া অবশিষ্টাংশ। এই ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে আমাদের কৃষকরা যতটা সমস্যায় পড়তেন, ততটাই শহরের নাগরিকরাও সমস্যায় পড়তেন। কারণ, ফসলের অবশিষ্টাংশ জ্বালিয়ে দিলে নিকটবর্তী শহরগুলি ধোঁয়ায় ভরে উঠত। আমরা এবারের বাজেটে ফসলের অবশিষ্টাংশ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা ঠিক করা হয়েছে যে কয়লা দিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানাগুলি চলে, সেগুলিতে এখন থেকে ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হবে। এর ফলে, কৃষকদের সমস্যা যেমন দূর হবে, তেমনই ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে কৃষকদের অতিরিক্ত রোজগারও হবে।
এভাবেই আমরা এটাও দেখেছি যে আগের আমলে সোলার পাওয়ার বা সৌরশক্তি নিয়ে কতটা উদাসীনতা ছিল। ২০১৪-র পর থেকে আমাদের সরকার গোটা দেশে সৌরশক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অভিযান শুরু করেছে। এর পরিণামে আজ ভারত সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাঁচটি দেশের মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছে। আমাদের সরকার দেশের অন্নদাতা কৃষকদেরকে ‘উর্জাদাতা’ বা শক্তি প্রদানকারী কৃষক করে তুলছে। তাঁদের খেতের আলে বসানো থেকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ তাঁরা এখন বিক্রি করতে পারছেন। সারা দেশে কৃষকদের লক্ষ লক্ষ সোলার পাম্পও সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
আজ ভারত যা কিছু অর্জন করছে তাতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের পাশাপাশি ভারতবাসীর পরিশ্রমেরও অনেক বড় অবদান রয়েছে। এই গণ-অংশীদারিত্ব ও পরিশ্রমের ফলেই আজ ভারত ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন ফিউচার’ বা পরিবেশ-বান্ধব ও নির্মল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। আমাদের যুব সম্প্রদায়, আমাদের মা ও বোনেরা, আমাদের লক্ষ লক্ষ সাফাই কর্মচারীদের ওপর অটুট ভরসা রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি। ভারতের যুব সম্প্রদায় নতুন প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জন-জাগরণের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যেমনটি আমাকে বলা হয়েছে যে ইন্দোরের সচেতন ভগিনীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছেন। ইন্দোরের নাগরিকরা বর্জ্য পদার্থকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে বাড়ির বাইরে ফেলেন যাতে বর্জ্যের ‘প্রসেসিং’ বা প্রক্রিয়াকরণ এবং ‘রিসাইক্লিং’ বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে সুবিধা হয়। যে কোনও শহরের নাগরিকদের এমন ভাবনা, এমন চেষ্টা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে সফল করে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পুনর্নবীকরণ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার সংস্কারকেও শক্তিশালী করে। এটা দেশের জন্য একটি বড় সেবা। এটাই তো তথাকথিত ‘লাইফ’ অর্থাৎ, লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশ-বান্ধব জীবনশৈলীর দর্শন, সুস্থভাবে বাঁচার উত্তম পদ্ধতি।
বন্ধুগণ,
আজকের এই অনুষ্ঠানে আমি ইন্দোরের পাশাপাশি সারা দেশের লক্ষ লক্ষ সাফাই কর্মচারীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। শীত হোক, গ্রীষ্ম হোক, আপনারা কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নিজেদের শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্যে। করোনার এই কঠিন সময়েও আপনারা যে সেবাভাব দেখিয়েছেন, তার ফলে শহর ও গ্রামগুলি নির্মল থেকেছে, অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষায় আপনাদের এই কাজ সহায়ক হয়েছে। এই দেশ তার প্রত্যেক সাফাই কর্মচারী ভাই-বোনের কাছে অত্যন্ত ঋণী। আমরা নিজের শহরকে পরিচ্ছন্ন রেখে, নোংরা ছড়াতে না দিয়ে, নিয়ম পালন করে এই সাফাই কর্মচারী ভাই-বোনেদের নিষ্ঠা ও আপ্রাণ চেষ্টাকে সাহায্য করতে পারি।
আমার মনে পড়ছে প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলার কথা। আপনারা হয়তো দেখেছেন যে এই প্রথম বিশ্বে ভারতের কুম্ভ মেলার একটা নতুন পরিচয় তৈরি হয়েছে। আগে তো ভারতের কুম্ভ মেলার পরিচয় ছিল আমাদের সাধু-মহাত্মারা, তাঁদের মহিমা নিয়ে কথা হত। কিন্তু এই প্রথমবার উত্তরপ্রদেশে যোগীজির নেতৃত্বে প্রয়াগরাজে যে কুম্ভ মেলা আয়োজিত হয়েছে তার পরিচয় পরিচ্ছন্ন কুম্ভ রূপে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা বিশ্বে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় খবরের কাগজগুলিতে কিছু না কিছু প্রশংসার কথা লেখা হয়েছে। এই ঘটনা আমার মনে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেজন্য আমি যখনই কুম্ভ মেলায় পবিত্র স্নান করতে গিয়েছিলাম, সেই পবিত্র কুম্ভে স্নান করে আসার পর আমার মনে সেখানকার সাফাই কর্মচারীদের জন্য এতটাই ভক্তিভাব জেগে উঠেছিল যে আমি সেখানকার সাফাই কর্মচারীদের পা ধুয়ে দিয়েছিলাম। এভাবে তাঁদেরকে সম্মান জানিয়েছিলাম, এভাবে তাঁদের থেকে আমি আশীর্বাদ নিয়েছিলাম।
আজ আমি দিল্লি থেকে ইন্দোরের সমস্ত সাফাই কর্মচারী ভাই ও বোনেদের সাদর প্রণাম জানাই, তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানাই। এই করোনাকালে আপনারা এই সাফাই অভিযান চালু না রাখলে আমাদেরকে না জানি কত নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। আপনারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁদেরকে যেন ডাক্তারের কাছে না যেতে হয় তা নিয়ে ভেবেছেন। সেজন্য আপনাদের সবাইকে প্রণাম জানাই।
ভাই ও বোনেরা,
এই ক’টি কথা বলেই আমি নিজের বাণীকে বিরাম দেব। আরও একবার সমস্ত ইন্দোরবাসীকে বিশেষ করে, আমার প্রিয় ইন্দোরের মা ও বোনেদের শ্রদ্ধা জানাই কারণ, মা ও বোনেরা যে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা বাড়ির বর্জ্যকে একদমই এখানে-সেখানে ফেলছেন না, সেগুলিকে আলাদা আলাদা করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলছেন, সেজন্য আমার মা ও বোনেরা অনেক বেশি অভিনন্দনের অধিকারী আর আমি অভিনন্দন জানাব আমার প্রিয় খুদে ভাই-বোনেদের যারা বাড়ির কাউকে যেখানে-সেখানে নোংরা আবর্জনা ফেলতে দেয় না। গোটা ভারতের স্বচ্ছ ভারত অভিযান সফল করার ক্ষেত্রে আমার খুদে ভাই-বোনেরা অনেক বেশি সাহায্য করেছে। এমনকি, ৩-৪ বছর বয়সী বাচ্চারাও তাদের দাদু-দিদিমাকে বলেছে যে নোংরা এখানে ফেলো না। তারা নিজেরা চকোলেট খেয়ে তার র্যাপার যেখানে-সেখানে ফেলেনি, ডাস্টবিনে ফেলেছে। তারা কাগজ ছিড়ে যেখানে-সেখানে ফেলে নোংরা করেনি। আমার ছোট ছোট ভাই-বোনেরা এই যে কাজ করেছে, এটাও আমাদের ভাবী ভারতের ভিতকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়ক হবে। আমি তাদের সবাইকেও আজ হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সবাইকে এই বায়ো-সিএনজি প্ল্যান্টের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ! নমস্কার!