ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও আমার ছোট ভাই ফিজির উপপ্রধানমন্ত্রী, ভারতের সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ, ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেটিভ অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ, সমবায় ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা সহযোগীরা এবং ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ,
আপনাদের সবাইকে আজ আমি স্বাগত জানাচ্ছি, আমি একা নয়, বস্তুতপক্ষে আমি একা তা পারবও না। ভারতের লক্ষ লক্ষ কৃষক, গবাদি পশুপালক, মৎস্যজীবী, ৮ লক্ষাধিক সমবায় সংস্থা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত ১০ কোটি মহিলা এবং সমবায় ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত তরুণরা, আমি আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
এই প্রথম ভারতে আন্তর্জাতিক সমবায় জোটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতে আমরা এখন সমবায় আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছি। ভারতের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক সমবায় আন্দোলনকে নতুন হাতিয়ার এবং ২১ শতকের জন্য নতুন চেতনা প্রদান করবে।
বন্ধুগণ,
সমবায় গোটা বিশ্বের কাছে একটি মডেল। তবে, ভারতে সমবায় হচ্ছে, আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ভিত্তি। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনেও প্রেরণা যুগিয়েছে সমবায়। শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষমতায়ন নয়, সেই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্যও একটি সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে তুলেছিল এই সমবায়। মহাত্মা গান্ধীর গ্রাম স্বরাজ (স্বশাসিত গ্রাম)-এর ভাবনা গোষ্ঠীগত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন শক্তি যুগিয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমে তিনি খাদি ও গ্রামোদ্যোগের মতো ক্ষেত্রে নতুন আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। একই সময়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং দুগ্ধ সমবায়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনে এক নতুন দিশা দিয়েছিলেন।
বন্ধুগণ,
আজ ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করতে সরকারের ক্ষমতা এবং সমবায়ের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে। আমরা ‘সহকার সে সমৃদ্ধি’ (সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি)-র মন্ত্রকে অনুসরণ করছি। ভারতে আজ ৮ লক্ষের বেশি সমবায় সোসাইটি রয়েছে, যার অর্থ হল বিশ্বের প্রতি চারটি সমবায়ের মধ্যে একটি রয়েছে ভারতে। গ্রামীণ ভারতের প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকায় সমবায় রয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ – বিশ্বের প্রতি ৫ জনের একজন এবং প্রত্যেক ৫ জন ভারতীয়ের একজন – সমবায় ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। চিনি, সার, মৎস্য চাষ এবং দুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমবায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ভারতে এখন প্রায় ২ লক্ষ আবাসিক সমবায় সমিতি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সংস্কারের মাধ্যমে সমবায় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকেও আমরা মজবুত করেছি। বর্তমানে দেশের সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে ১২ লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চিত রয়েছে। আগে এই ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু, এখন সেগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় আনা হয়েছে। সমবায় ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকেও সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গোটা সমবায় পরিমণ্ডল বদলাতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বেশকিছু সংস্কার করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হল, সমবায় সোসাইটিগুলিকে বহুমুখী করে তোলা। এই লক্ষ্যে পৃথক সমবায় মন্ত্রক গঠন করেছে ভারত সরকার। সমবায় সোসাইটিগুলিকে বহুমুখী করার লক্ষ্যে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের উদ্যোগে সমবায় সমিতিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা গোবর্ধন প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বর্তমানে আমরা ২ লক্ষ গ্রামে বহু উদ্দেশ্যসাধক সমবায় সমিতি গড়ে তুলছি, যা আগে ছিল না। উৎপাদন এবং পরিষেবা ক্ষেত্রেও সমবায়কে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। সমবায় ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম শস্য মজুত ভান্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে ভারত। এই সমবায়গুলি দেশজুড়ে মজুবত ভান্ডার গড়ে তুলছে, যা চাষীদের পক্ষে সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
কৃষক উৎপাদক সংস্থার (এফপিও) মাধ্যমে আমরা ছোট ছোট চাষীদের সংগঠিত করছি। সরকার এই এফপিও-গুলিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এবং প্রায় ৯ হাজার এফপিও ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছে। আমাদের লক্ষ্য হল, একটি শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা।
বন্ধুগণ,
বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বের অগ্রগতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মহিলাদের যে সমাজ যত বেশি সুযোগ-সুবিধা দেবে, সেই সমাজ তত দ্রুত এগোবে। ভারত বর্তমানে মহিলা-পরিচালিত উন্নয়নের যুগে প্রবেশ করেছে এবং আমরা এর ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। সমবায় ক্ষেত্রেও মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছেন ৬০ শতাংশের বেশি মহিলা। আমাদের লক্ষ্য হল, সমবায় পরিচালনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো। এই লক্ষ্যে আমরা মাল্টি-স্টেট সমবায় সোসাইটি আইন সংশোধন করেছি। এখন মাল্টি-স্টেট সমবায় সমিতিগুলিতে পরিচালন পর্ষদে একজন করে মহিলা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে এখন ১০ কোটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত। গত এক দশকে ভারত সরকারের কাছ থেকে এই গোষ্ঠীগুলি কম সুদে ৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি গ্রামাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সম্পদ সৃষ্টি করছে। ক্ষুদ্র এবং আর্থিক ভাবে দুর্বল সমবায় সমিতিগুলিকে সাহায্য করতে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। সম্মিলিত আর্থিক প্ল্যাটফর্ম বড় বড় প্রকল্পে অর্থের জোগান এবং সমবায়গুলিকে ঋণ প্রদান করতে পারে।
বন্ধুগণ,
বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতি সমবায় আন্দোলনের পক্ষে এক উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করেছে। সমবায়গুলিকে বিশ্বের দেশগুলির অখন্ডতা রক্ষা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বার্তাবাহক হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা অবশ্যই উদ্ভাবন এবং আমাদের নীতিকে সুসংহত করার পথে হাঁটব। ভারত মনে করে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমবায় নতুন শক্তি যোগাতে পারে। বিশেষত গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির জন্য অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট মডেল প্রয়োজন, যা সমবায়গুলি প্রদান করতে পারে।
বন্ধুগণ,
ভারত আজ অন্যতম দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি নয়, আমাদের লক্ষ্য হল, এর সুযোগ সুবিধা দরিদ্রের মধ্যে দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ভারত সব সময় মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। কোভিড অতিমারীর সময় আমরা বিভিন্ন দেশকে সহায়তা প্রদান করেছিলাম, যার মধ্যে গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ ছিল। শুধুমাত্র কাঠামোগত বা আইনি কাঠামোর মধ্যে সমবায়গুলির গুরুত্ব সীমাবদ্ধ নেই, সমবায়ের মূল সারবস্তু হল, এর চেতনা। সহযোগিতার সংস্কৃতির মধ্যেই সমবায়ের চেতনা নিহিত রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষে এই চেতনা আরও শক্তিশালী হবে। আমি আবার আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আগামী ৫ বছরে এই শীর্ষ বৈঠক অসংখ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে এবং তার মাধ্যমে সমাজ ও প্রতিটি দেশে ক্ষমতায়ন হবে এবং সমাজ সমৃদ্ধ হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ!