নমস্কার!
‘জিতো কানেক্ট ২০২২’ শীর্ষক এই শীর্ষ সম্মেলন স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উৎসবের পাশাপাশি, অমৃত মহোৎসবের সাথে একসঙ্গে আয়োজিত হচ্ছে। এখান থেকে দেশ স্বাধীনতার অমৃতকালে প্রবেশ করছে। এখন দেশের সামনে আগামী ২৫ বছরে সোনালী ভারত নির্মাণের সঙ্কল্প রয়েছে। সেজন্য এবার আপনারা আন্তর্জাতিক জৈন বাণিজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যে থিম রেখেছেন, এই থিমও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অত্যন্ত উপযুক্ত মূল ভাবনা। ‘টুগেদার, টুওয়ার্ডস, টুমরো’! একসঙ্গে ভবিষ্যতের দিকে! আর আমি বলতে পারি যে এটাই তো সেই মূল ভাবনা যা আমাদের সরকারের ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টার সম্মিলিত ভাবনা, যা স্বাধীনতার অমৃতকালে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের মন্ত্র হয়ে উঠেছে। আগামী তিনদিনে আপনারা ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টার এই সম্মিলিত ভাবনার বিকাশ যাতে চতুর্দিশায় হয়, এই ভাবনার বিকাশ যাতে সর্বব্যাপী হয়, এই ভাবনার বিকাশে সমাজের প্রান্তিকতম ব্যক্তিটিও যেন বাদ না যান, তেমন ভাবনাকেই যেন আপনাদের এই শীর্ষ সম্মেলন শক্তিশালী করে তোলে। এটাই আমার আপনাদের প্রতি শুভকামনা। এই শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের যত অগ্রাধিকার রয়েছে, যত সমস্যা রয়েছে, সেগুলি মোকাবিলা করার জন্য সমাধান খোঁজার কাজ করা করা হবে। সেজন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অনেক অনেক শুভকামনা!
বন্ধুগণ,
এমনিতে আমার অনেকবারই আপনাদের মধ্যে আসার সৌভাগ্য হয়েছে, আর এবারও আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় আরও আনন্দ পেয়েছি। যদিও এই সাক্ষাৎ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি হচ্ছে, তবুও তো আপনাদের সকলকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের চেহারাগুলি চোখের সামনে দেখতে পেয়ে আমার আনন্দ হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
এই তো গতকালই আমি ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করে ফিরেছি, আর ভারতের সামর্থ্য ও সঙ্কল্পকে এবং স্বাধীনতার অমৃতকালে ভারতে উদ্ভূত সুযোগগুলি সম্পর্কে আমি কিছুটা বিস্তারিতভাবেই সেসব দেশের অনেক মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে ফিরেছি। এই আলোচনা থেকে আমি এটা বলতে পারি, যে ধরনের আশাবাদ, যে ধরনের বিশ্বাস আজ ভারতের প্রতি খোলাখুলি সামনে উঠে আসছে, তাতে আমি অভিভূত। আপনারাও বিদেশে যান, আর আপনাদের মধ্যে যাঁরা বিদেশে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছেন, আপনারা সবাইও নিশ্চয়ই এই বিষয়টা অনুভব করেন। প্রত্যেক ভারতবাসী, তিনি বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে কিংবা ভারতের যে কোনও প্রান্তে থাকুন না কেন, প্রত্যেক ভারতবাসী আজ তাঁর দেশের জন্য গৌরব অনুভব করছে। আমাদের আত্মবিশ্বাসও এর ফলে একটি নতুন প্রাণশক্তি পাচ্ছে, নতুন শক্তি পাচ্ছে। আজ ভারতের উন্নয়নের সঙ্কল্পগুলিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষেরাও তাঁদের লক্ষ্যগুলি প্রাপ্তির মাধ্যম বলে মনে করছেন; তা সে ‘গ্লোবাল পিস’ বা বিশ্ব শান্তি হোক, ‘গ্লোবাল প্রসপারিটি’ বা বিশ্ব সমৃদ্ধি হোক, ‘গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস’ বা বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত ‘সলিউশন্স’ বা সমাধানগুলির পথ হোক, কিংবা ‘গ্লোবাল সাপ্লাই চেন’ বা বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষমতায়ন হোক – বিশ্ব এখন ভারতের দিকে তাকাতে শুরু করেছে আর অত্যন্ত ভরসার সঙ্গে তাকাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মানুষদের থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণের সঙ্গে জড়িত মানুষেরা, কিংবা আপনাদের মতো সচেতন সমাজের নাগরিকেরা, অথবা বিভিন্ন বিজনেস কমিউনিটি বা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের লোকেরা, তাঁদের ‘এরিয়াজ অফ এক্সপার্টাইজ’ বা বিশেষজ্ঞতার ক্ষেত্র – যাই হোক না কেন, যাঁদের ‘এরিয়াজ অফ কনসার্ন্স’ বা আগ্রহের ক্ষেত্র যাই হোক না কেন, ভাবনার ক্ষেত্রে তাঁদের যতই ভিন্নতা থাকুক না কেন, ভারতের উদয় কিন্তু সবাইকে যুক্ত করে, সবাইকে সম্মিলিত করে। আজ সবারই মনে হয় যে ভারত এখন ‘প্রোবাবিলিটি’ এবং ‘পোটেনশিয়াল’ থেকে এগিয়ে বিশ্বকল্যাণের জন্য ‘পারপাস’এর পাশাপাশি ‘পারফর্ম’ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
একবার আপনাদের সঙ্গে এমনই আলাপ-আলোচনার সময় আমি স্বচ্ছ মন, স্পষ্ট ইচ্ছাগুলি এবং অনুকূল নীতিসমূহের কথা বলেছিলাম। এই নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছিল আপনাদের সঙ্গে। বিগত ৮ বছরে এই মন্ত্রগুলিকেই সম্বল করে এগিয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আসছে তা আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনুভব করছি। আজ দেশ ট্যালেন্ট বা মেধা, ট্রেড বা বৃত্তি এবং টেকনলজি বা প্রযুক্তিকে যতটা সম্ভব ততটা বেশি করে উৎসাহিত করছে। আজ দেশে প্রতিদিন কয়েক ডজন স্টার্ট-আপ চালু হচ্ছে। সেজন্য যে কোনও ভারতবাসীর গর্ব হবে। বিশেষ করে, দেশের নবীন প্রজন্ম তো গর্বিত হবেনই। আজ দেশ প্রতিদিন কয়েক ডজন স্টার্ট-আপ রেজিস্টার করছে। প্রত্যেক সপ্তাহে সেগুলি থেকে গড়ে একটা করে ইউনিকর্ন-এ পরিণত হচ্ছে। আজ দেশ হাজার হাজার কমপ্লায়েন্স বাতিল করে জীবনকে সহজ করে তোলা, জীবিকাকে সহজ করে তোলা, ব্যবসাকে সহজতর করে তোলা – একের পর এক এ ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্বকে বাড়িয়ে তুলছে। আজ ভারতে কর ব্যবস্থা ‘ফেসলেস’ হয়ে উঠেছে, ‘ট্রান্সপারেন্ট’ হয়েছে, ‘অনলাইন’ হয়েছে, ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ট্যাক্স’ বা এক দেশ, এক কর ব্যবস্থা – ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের এই স্বপ্নগুলিকে আমরা সাকার করে তোলার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আজ দেশ ম্যানুফ্যাকচারিং বা শিল্প উৎপাদনকে উৎসাহ যোগানোর জন্য লক্ষ কোটি টাকার ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম’ বা উৎপাদন সংযুক্ত উৎসাহ ভাতা প্রকল্পকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
সরকারি ব্যবস্থায় কিভাবে স্বচ্ছতা আসছে, এর একটি উত্তম উদাহরণ আমাদের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তনে পরিস্ফুট হচ্ছে। যখন থেকে গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস বা জিইএম পোর্টাল চালু হয়েছে, তখন থেকে সমস্ত সরকারি ক্রয় একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সকলের সামনে সম্পাদিত হচ্ছে। এখন দূরদুরান্তের গ্রামের মানুষও, ছোট ছোট দোকানদারও এমনকি সেলফ হেল্প গ্রুপ বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও সরাসরি সরকারকে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছে। আর আজ এখানে আমার সামনে এমন মানুষেরা রয়েছেন যাঁদের ডিএনএ-তে বাণিজ্য রয়েছে। কিছু না কিছু বাণিজ্যের প্রবৃত্তি সব সময় আপনাদেরকে সঞ্চালিত করে - এটাই আপনাদের স্বভাব এবং শিষ্টাচারের মধ্যে রয়েছে। আমি জৈন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন বা ‘জিতো’-র সদস্যদের অনুরোধ জানাব, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আপনাদের সবাইকে অনুরোধ জানাব যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই জিইএম পোর্টালকে আপনারা ব্যবহার করুন, একবার তাকে স্টাডি তো করুন! একবার সেই পোর্টালকে ভিজিট করুন, আর আপনাদের এলাকায় এমন কোন পণ্য রয়েছে যেগুলি সরকারের প্রয়োজন, আর সরকার সেগুলি কেনার জন্য সহজেই এর উৎপাদকদের কাছে পৌঁছতে পারে। এক্ষেত্রে আপনারা সবাই অনেক সাহায্য করতে পারেন। আপনারা এই পোর্টালে গেলেই বুঝতে পারবেন যে সরকার কত ভালো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। আজ এই জিইএম পোর্টালে ৪০ লক্ষেরও বেশি বিক্রেতা যুক্ত রয়েছেন যাঁরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে চান, এরকম ৪০ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই সেখানে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। আর আমি এজন্য অত্যন্ত আনন্দিত যে এক্ষেত্রে অধিকাংশ নথিভুক্ত করা বিক্রেতারাই অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির মালিক, ছোট ছোট ব্যবসায়ী, ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগী। আমাদের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির বোনেরাও এর বিক্রেতার তালিকা রয়েছেন। একথা জেনে আপনাদের আরও ভালো লাগবে যে এক্ষেত্রেও ১০ লক্ষেরও বেশি বিক্রেতা মাত্র বিগত পাঁচ মাস ধরে এই পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান একথা স্পষ্ট করে যে এই নতুন ব্যবস্থার ওপর মানুষের ভরসা কত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিসংখ্যান এটাও দেখায় যে যখন সরকারের ইচ্ছাশক্তি থাকে আর সরকার জনগণের পাশে থাকে, যখন ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টার ভাবনা প্রবল হয়, তখন পরিবর্তনকে কেউ রুখতে পারে না, তখনই পরিবর্তন সম্ভব হয়। আর এই পরিবর্তন আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনুভবও করতে পারছি।
বন্ধুগণ,
আমাদের ভবিষ্যতের পথ ও গন্তব্য উভয়েই অত্যন্ত স্পষ্ট। আত্মনির্ভর ভারতই আমাদের পথ এবং আমাদের সঙ্কল্প। আর এটি কোনও সরকারের পথ বা সঙ্কল্প নয়, এটি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর পথ এবং সঙ্কল্প। বিগত বছরগুলিতে আমরা এর জন্য প্রতিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, আবহকে ইতিবাচক করে তোলার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করেছি। দেশে গড়ে উঠতে থাকা সঠিক আবহের সদ্ব্যবহার করে সঙ্কল্পগুলিকে সিদ্ধ করার কাজের নেতৃত্ব এখন আপনাদের মতো আমার কর্মযোগী বন্ধুদের কাঁধে রয়েছে। জৈন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন বা ‘জিতো’র সদস্যদের মতো সক্ষম ব্যক্তিদের কাঁধে রয়েছে। আপনারা যেখানেই যাবেন, যাঁদের সঙ্গেই আপনাদের দেখা হবে, আপনাদের দিনের অর্ধেক সময়ের নেতৃত্বই এর জন্য যথেষ্ট। কারণ, আগামীদিন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার স্বভাব রয়েছে আপনাদের। আপনারা বিগত দিনের পরিস্থিতিগুলিকে থামিয়ে বসে থাকার মতো মানুষ নন। আপনারা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা রচনা করার মানসিকতা নিয়ে আগামীদিনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষ। আমি তো আপনাদের মধ্যেই লালিতপালিত হয়েছি, আমি আপনাদেরকে চিনি, আপনাদের প্রকৃতি কেমন! আর সেজন্য আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাই যে আপনারা যেমন বিশেষ করে, আমার প্রিয় নবীন প্রজন্মের আন্ত্রেপ্রেনাররা, উদ্ভাবকরা, জৈন সমাজের নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের দায়িত্ব একটু বেশি। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে জৈন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন একটি সংস্থা রূপেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছে এ দেশের মানুষ। আপনাদের মতো সকল সদস্যের প্রতি দেশের এ বিষয়ে প্রত্যাশা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। শিক্ষা হোক, স্বাস্থ্য হোক কিংবা ছোটখাট ওয়েলফেয়ার বা সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা, জৈন সমাজ সব সময়েই বেস্ট ইনস্টিটিউশন্স বা শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘বেস্ট প্র্যাক্টিসেস’ বা শ্রেষ্ঠ অভ্যাসগুলিকে এবং ‘বেস্ট সার্ভিসেস’ বা সর্বোত্তম পরিষেবাকে সর্বদাই উৎসাহ যুগিয়েছে, আর আজও এক্ষেত্রে আপনাদের প্রতি সমাজের প্রত্যাশা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশেষ করে ব্যক্তি হিসেবে আমি আপনাদের কাছে অনেক প্রত্যাশা করি আর চাই যে আপনারা স্থানীয় পণ্যের ওপর জোর দিন। ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে আপনারা সবাই রপ্তানির জন্য নতুন গন্তব্যও খুঁজে নিন, আর আপনাদের এলাকার স্থানীয় শিল্পোদ্যোগীদেরও স্থানীয় পণ্যের প্রতি সচেতন করুন। স্থানীয় পণ্যের উৎকর্ষ এবং পরিবেশ দূষণকে আটকানোর জন্য আমাদের ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’কে ভিত্তি করে কাজ করতে হবে! আর সেজন্য আজ এই জৈন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর যত সদস্য রয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আমি আজ একটি ছোট্ট হোমওয়ার্ক দিতে চাই। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে আপনারা এটা করবেন। হয়তো মুখে বলবেন না, কিন্তু অবশ্যই করবেন। আপনারা করবেন তো? একটু দু’হাত ওপরে তুলে আমাকে বলুন, করবেন তো? ঠিক আছে, তাহলে বলছি! আপনারা একটা কাজ করবেন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসবেন, বসে একটি তালিকা তৈরি করবেন। একদিন সকাল থেকে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত বাড়ির কোন সদস্য কতগুলি বিদেশি পণ্য ব্যবহার করেন। কত বিদেশি পণ্য আপনাদের পারিবারিক জীবনে, আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করেছে - তার একটি তালিকা তৈরি করুন, কতগুলি বিদেশি পণ্য আপনাদের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছে, কতগুলি সাধারণ ব্যবহারের কাজে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে! প্রত্যেক ক্ষেত্রে কতগুলি বিদেশি পণ্য আপনারা ব্যবহার করছেন তার একটা তালিকা তৈরি করে ভাবুন যে এর পরিবর্তে ভারতে তৈরি কোনও পণ্য যদি ঘরে আনেন তাহলে কি আপনাদের কাজ চলবে? যে যে জিনিসের ভারতীয় বিকল্প পাওয়া যায়, সেগুলিকে টিকমার্ক করুন। পরিবারের সবাই মিলে ঠিক করুন যে এর বিকল্প ভারতীয় পণ্য পাওয়া যায় কিনা। মনে করুন, ১ হাজার ৫০০টি পণ্যের তালিকা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০টি এরকম পেলেন যে সেগুলিকে আপনারা এখনই পালটে স্বদেশী পণ্য আনতে পারেন। আর তারপর ভেবে নিন আগামী মাসে আরও ২০০টি, তার পরের মাসে আরও ১০০টি করবেন। তারপর প্রতি মাসে ২০, ২৫, ৫০টিও পরিবর্তন করা যেতে পারে। আপনাদের মনে হতে পারে যে এই অমুক অমুক জিনিস আপনাদের এখনও বাইরে থেকেি আনতে হবে। কারণ, দেশী বিকল্পের দাম অনেক বেশি বা দেশী বিকল্প ঠিকভাবে পাওয়া যায় না। ঠিক আছে, ততটা কম্প্রোমাইজ করে নিন। কিন্তু বন্ধুগণ, আপনারা কি কখনও ভেবেছেন যে আমরা কিভাবে আজও মানসিক রূপে দাসত্ব করছি? সেজন্যই যখন আজ আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি, আর নিজের অজান্তেই অসংখ্য বিদেশি পণ্যের দাসত্ব করছি – এই দ্বিচারিতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমাদের দেশে এভাবেই ঢুকেছিল। কেউ টেরও পায়নি। আর সেজন্য আমি বারবার অনুরোধ করছি, আর আমি ‘জিতো’র সমস্ত সদস্যদেরকেও অনুরোধ করছি, আপনারা যদি কিছু না করতে চান, করবেন না! আপনাদের যদি আমার কথা ভালো না লাগে, তাহলে কিছুই করবেন না, কিন্তু একবার আমার অনুরোধে কাগজে লিখে তালিকাটি অবশ্যই বানাবেন! আর এটা বানানোর সময় বাড়ির সব সদস্য যেন একসঙ্গে বসেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন! কারণ, আপনি হয়তো জানেনই না যে রোজ আপনার বাড়িতে কী কী জিনিস সত্যি সত্যি ব্যবহার হচ্ছে। আবার যে জিনিসগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে কোনগুলি বিদেশ থেকে এসেছে, সেটাও হয়তো আপনারা অনেকে জানেন না। কেউ হয়তো আপনাকে সেগুলি বিদেশ থেকে আনার জন্য অনুরোধও করেননি। কিন্তু আপনি নিজে থেকেই নিয়ে এসেছেন। আর সেজন্যই বারবার আমি আপনাদেরকে ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর কথা বলছি। এটা যদি আপনারা করতে পারেন, তাহলে আমাদের দেশের মানুষের অনেক কর্মসংস্থান হবে, আমাদের দেশের মানুষের সামনে অনেক নতুন নতুন সুযোগ খুলে যাবে। আমরা যদি আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলি নিয়ে গর্ব করি, তবেই বিশ্ববাসী আমাদের জিনিসগুলিকে নিয়ে গর্ব করবে। কিন্তু আমাদের গর্ব করাটাই হচ্ছে প্রথম শর্ত বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ,
আপনাদের কাছে আমার আরও একটি অনুরোধ, এই ‘আর্থ’-এর জন্যও, ‘আর্থ’ বলতে আমি বোঝাচ্ছি ‘ই এ আর টি এইচ’এই বর্ণগুলি! কোনও জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষ যখন ‘আর্থ’ শব্দটি শোনেন, তখন তাঁর মনে হয় অর্থ – নগদ অর্থের চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু আমি একটু অন্য ‘আর্থ’-এর কথা বলছি। যে ‘আর্থ-এর অর্থ পৃথিবী, আমি সেই ‘আর্থ’-এর ইংরেজি বানানের কথা বলছি বন্ধুগণ! আমার জন্য ‘আর্থ’ শব্দের ‘ই’-র মানে হল এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশ সমৃদ্ধ হয় এমন বিনিয়োগ, এমন ভাবনাকে আপনারা উৎসাহিত করুন। আগামী বছর ১৫ আগস্টের মধ্যে দেশের প্রত্যেক জেলায় কম করে ৭৫টি ‘অমৃত সরোবর’ গড়ে তোলার প্রচেষ্টাতে আপনারা কিভাবে সাহায্য করতে পারেন, তা নিয়েও আপনারা অবশ্যই আলাপ-আলোচনা করবেন। আর আমি যেমন ‘ই’ দিয়ে এনভায়রনমেন্ট বুঝি, তেমনই ‘আর্থ’-এর ‘এ’ দিয়ে বুঝি এগ্রিকালচার। এগ্রিকালচার বা কৃষিকে লাভজনক করে তোলার জন্য ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক কৃষি, জিরো কস্ট বাজেটিং সম্পন্ন ফার্মিং, ফার্মিং টেকনলজি বা কৃষি প্রযুক্তি এবং ফুড প্রসেসিং সেক্টর বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে আমাদের ‘জিতো’র নবীন প্রজন্মের সদস্যরা এগিয়ে আসুন, স্টার্ট-আপ শুরু করুন, অর্থ বিনিয়োগ করুন। তারপর আমরা গুরুত্ব দেব ‘আর’ বা রিসাইক্লিং-কে। এই রিসাইক্লিং সুনিশ্চিত করতে আমাদের সার্কুলার ইকনমির ওপর জোর দিতে হবে। ‘রিইউজ’, ‘রিডিউস’ এবং ‘রিসাইকেল’-এর জন্য কাজ করতে হবে। তারপর ‘টি’ অর্থাৎ টেকনলজি বা প্রযুক্তিকে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আপনারা ড্রোন টেকনলজির মতো অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তিকে কিভাবে সুলভ করে তুলতে পারেন, তা নিয়েও অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে পারেন। ‘এইচ’ বলতে আমি বুঝি হেলথ কেয়ার। দেশের প্রত্যেক জেলায় মেডিকেল কলেজের মতো ব্যবস্থার গড়ে তোলার জন্য সরকার আজ অনেক বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলায় জেলায় নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠছে। এই উদ্যোগকে আপনাদের সংস্থা কিভাবে উৎসাহ যোগাতে পারে তা নিয়ে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করবেন। আয়ুষ-এর ক্ষেত্রে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে প্রোমোট করার জন্য আপনাদের কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব অবদান রাখার প্রত্যাশা দেশ করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের জন্য অনেক উন্নতমানের পরামর্শ আসবে, অনেক উন্নতমানের সমাধানও বেরিয়ে আসবে। আর আপনারা সর্বদাই মনে রাখবেন যে আপনাদের নামই হল ‘জিতো’। কাজেই আপনাদের জিততেই হবে। আপনারা যেন নিজেদের সঙ্কল্পে বিজয়ী হন, নিজেদের সঙ্কল্পগুলিকে সিদ্ধ করেন, বিজয়, শুধু বিজয়ের কামনা নিয়ে এগিয়ে যান – এই শুভেচ্ছা জানিয়েই আরও একবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা!
জয় জিনেন্দর! ধন্যবাদ!