নমস্কার!
এই গুরুত্বপূর্ণ ‘শিক্ষক পরব’ কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানজি, শ্রীমতী অন্নপূর্ণা দেবীজি, ডঃ সুভাষ সরকারজি, ডঃ রাজকুমার রঞ্জন সিংজি, দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীগণ, জাতীয় শিক্ষানীতির মূল রূপ প্রস্তুতকারী সমিতির অধ্যক্ষ ডঃ কস্তুরি রঙ্গনজি, তাঁর টিমের সকল মাননীয় সম্মানিত সদস্যগণ, সারা দেশ থেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সকল বিদ্বান প্রধান শিক্ষক ও আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা!
আমি সবার আগে এ বছর জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার প্রাপক আমাদের শিক্ষকদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনারা সবাই এই কঠিন সময়ে দেশে শিক্ষার স্বার্থে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যে নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন, নিজেদের অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয় ও প্রশংসনীয়। এই কর্মসূচিতে আমাদের যে ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত রয়েছে, আমি তাদের চেহারাও স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছি। বিগত দেড়-দুই বছরে প্রথমবার এরকম ঔজ্জ্বল্য তোমাদের চেহারায় দেখা যাচ্ছে। তোমাদের চেহারায় এই চমক সম্ভবত স্কুল খোলার কারণে এসেছে। দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলা, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারা, ক্লাসে বসে পড়াশোনা করার মজা, এসবের আনন্দই অন্যরকম হয়। কিন্তু এই উৎসাহের পাশাপাশি আমাদের কঠোরভাবে করোনার বিধি-নিষেধগুলি পালন করে যেতে হবে, সুস্থ থাকার খাতিরে তোমাদেরকেও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
আজ ‘শিক্ষক পরব’ উপলক্ষে অনেক নতুন প্রকল্পের শুভারম্ভ হয়েছে আর এখন আমরা একটি ছোট্ট তথ্যচিত্রের মাধ্যমে এই সকল প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছি। দেশ যেহেতু এখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, এই অমৃত সময়ে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির সময় ভারত কেমন হবে তার জন্য আজ ভারত নতুন সঙ্কল্প গ্রহণ করছে। আজ যে প্রকল্পগুলি শুরু হয়েছে সেগুলি ভবিষ্যৎ ভারতকে নতুন রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আজ এখানে ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০’, ‘নিষ্ঠা ৩.০’, ‘টকিং বুকস’ এবং ‘ইউডিএল-বেসড আইএসএল ডিকশেনারি’-এর মতো কিছু প্রোগ্রাম এবং ব্যবস্থা উদ্বোধন করা হয়েছে। স্কুল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাস্যুরেন্স ফ্রেমওয়ার্ক বা সংক্ষেপে এসকিউএএএফ-এর মতো আধুনিক ব্যবস্থারও সূত্রপাত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এগুলি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শুধু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেই প্রতিস্পর্ধী করে তুলবে না, আমাদের যুব সম্প্রদায়কে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে অনেক সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
এই করোনার সঙ্কটকালে আপনারা সবাই দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সামর্থ্য কত বেশি। সমস্যা অনেক ছিল, কিন্তু আপনারা সবাই সেই সমস্যাগুলিকে দ্রুতগতিতে সমাধান করেছেন। ‘অনলাইন ক্লাসেস’, ‘গ্রুপ ভিডিও কল’, ‘অনলাইন প্রোজেক্টস’, ‘অনলাইন একজামস’ – এ ধরনের শব্দ আগে অনেকে শোনেইনি। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা, অভিভাবকরা, আমাদের যুব সম্প্রদায় এগুলিকে অত্যন্ত সহজভাবে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলেছেন!
বন্ধুগণ,
এখন সময় এসেছে, আমরা এই ক্ষমতাগুলিকে আর একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা এই কঠিন সময় থেকে যা কিছু শিখেছি, সেগুলিকেও নতুন দিশায় পরিচালিত করি। সৌভাগ্যক্রমে আজ দেশে একদিকে যেমন পরিবর্তনের আবহ, এর পাশাপাশি নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মতো আধুনিক এবং ভবিষ্যৎমুখী নীতিও রয়েছে। সেজন্য বিগত কিছু সময় ধরে দেশ ক্রমাগত শিক্ষাক্ষেত্রে একের পর এক নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, একটি রূপান্তরণের পথে এগিয়ে চলেছে আর এর পেছনে সবচাইতে বড় শক্তি কী? সেদিকেই আমি আপনাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই অভিযান নিছকই নীতি-ভিত্তিক নয়, এটি অংশগ্রহণ-ভিত্তিকও। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি রচনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষকদের অবদান রয়েছে। আপনারা সকলে এর জন্য প্রশংসার পাত্র। এখন আমাদের এই অংশীদারিত্বকে একটি নতুন স্তর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এর সঙ্গে আমাদের সমাজকেও জুড়তে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“ব্যয়ে কৃতে বর্ধতে এব নিত্যম বিদ্যাধনম সর্বধন প্রধানম।।”
অর্থাৎ, বিদ্যা সকল সম্পদের মধ্যে, সকল সম্পত্তির মধ্যে সবচাইতে বড় সম্পত্তি। কারণ বিদ্যাই এমন ধন যা অন্যকে দিলে, দান করলেও বৃদ্ধি পায়। বিদ্যাদান, শিক্ষাদান, দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আনে। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত আপনাদের মতো সমস্ত শিক্ষকরা হয়তো হৃদয় দিয়ে এটা অনুভব করেছেন। কাউকে নতুন কিছু শিখিয়ে যে সুখ আর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় তার কোনও তুলনা হয় না। ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০’ এই পুরাতন পরম্পরাকে এখন একটি নতুন শরীরে প্রস্তুত করবে এবং শক্তিশালী করে তুলবে। দেশ যে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর পাশাপাশি ‘সবকা প্রয়াস’-এর সঙ্কল্প নিয়েছে, ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০’ এই সঙ্কল্পের বাস্তবায়নে অত্যন্ত জীবন্ত মঞ্চের ভূমিকা পালন করবে। স্পন্দিত মঞ্চের মতো। এতে আমাদের সমাজকে, আমাদের বেসরকারি ক্ষেত্রকে এগিয়ে আসতে হবে আর সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার উৎকর্ষ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“ব্যয়ে কৃতে বর্ধতে এব নিত্যম বিদ্যাধনম সর্বধন প্রধানম।।”
অর্থাৎ, বিদ্যা সকল সম্পদের মধ্যে, সকল সম্পত্তির মধ্যে সবচাইতে বড় সম্পত্তি। কারণ বিদ্যাই এমন ধন যা অন্যকে দিলে, দান করলেও বৃদ্ধি পায়। বিদ্যাদান, শিক্ষাদান, দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আনে। এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত আপনাদের মতো সমস্ত শিক্ষকরা হয়তো হৃদয় দিয়ে এটা অনুভব করেছেন। কাউকে নতুন কিছু শিখিয়ে যে সুখ আর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় তার কোনও তুলনা হয় না। ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০’ এই পুরাতন পরম্পরাকে এখন একটি নতুন শরীরে প্রস্তুত করবে এবং শক্তিশালী করে তুলবে। দেশ যে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর পাশাপাশি ‘সবকা প্রয়াস’-এর সঙ্কল্প নিয়েছে, ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০’ এই সঙ্কল্পের বাস্তবায়নে অত্যন্ত জীবন্ত মঞ্চের ভূমিকা পালন করবে। স্পন্দিত মঞ্চের মতো। এতে আমাদের সমাজকে, আমাদের বেসরকারি ক্ষেত্রকে এগিয়ে আসতে হবে আর সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার উৎকর্ষ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে হবে।
বন্ধুগণ,
অনাদিকাল ধরে ভারতে সমাজের সামুহিক শক্তির ওপর ভরসা করা হয়েছে। অনেক শতাব্দী ধরেই এটা আমাদের সামাজিক পরম্পরার অংশ। যখন সমাজের সবাই মিলে কোনও কাজ করে, তখন ইপ্সিত পরিণাম অবশ্যই আসে। আর আপনারা হয়তো এটা দেখেছেন যে বিগত কয়েক বছরে গণ-অংশীদারিত্ব আবার ভারতের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। বিগত ৬-৭ বছরে গণ-অংশীদারিত্বের শক্তি দিয়ে ভারতে এমন সব কাজ হয়েছে যা কেউ কল্পনাও করতে পারত না। তা সে ‘স্বচ্ছ ভারত আন্দোলন’ হোক কিংবা ‘গিভ ইট আপ’-এর ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে প্রত্যেক গরীবের বাড়িতে রান্নার গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়া, গরীবদের ডিজিটাল লেনদেন শেখানো – প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতের প্রগতিতে গত ৬-৭ বছরে গণ-অংশীদারিত্বের প্রাণশক্তি যুক্ত হয়েছে। এখন ‘বিদ্যাঞ্জলি’ও একটি নতুন সোনালী অধ্যায় হয়ে উঠতে চলেছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে আমি এই ‘বিদ্যাঞ্জলি’র অংশীদার হয়ে ওঠার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা সবাই দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন। দু’কদম এগিয়ে আসুন। পেশাগত জীবনে আপনি হয়তো একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার কিংবা গবেষক, বৈজ্ঞানিক, আইএএস অফিসার কিংবা কোথাও কালেক্টর রূপে কাজ করছেন। কিন্তু নিজের অবসর সময় আপনিও কোনও স্কুলে গিয়ে বাচ্চাদেরকে কত কিছু শেখাতে পারেন। আপনাদের কাছ থেকে সেই বাচ্চারা যা কিছু শিখতে পারবে, তার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের নতুন পথ খুঁজে পেতে পারে। আপনারা এবং আমরা এরকম কত মানুষ সম্পর্কে জানি যাঁরা ইতিমধ্যেই এরকম কাজ করছেন। কোনও এক ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার উত্তরাখণ্ডের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন। কোনও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক গরীব শিশুদের অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন, তাদের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে দিচ্ছেন। অর্থাৎ, আপনারা সমাজে যে ভূমিকাতেই থাকুন না কেন, সাফল্যের যে সিঁড়িতেই আপনার অবস্থান হোক না কেন, দেশের যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আপনাদের ভূমিকা কার্যকরী হতে পারে, আপনাদের অংশীদারিত্ব সোনা ফলাতে পারে। সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিকে আমাদের খেলোয়াড়েরা অসাধারণ সাফল্য এনেছেন। আমাদের যুব সম্প্রদায় তাঁদের এই সাফল্য থেকে অনেক প্রেরণা পেয়েছে। আমি আমাদের অলিম্পিয়ান খেলোয়াড়দের অনুরোধ করেছি যাতে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে প্রত্যেক খেলোয়াড় ন্যূনতম ৭৫টি স্কুল পরিদর্শন করেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই খেলোয়াড়েরা আমার অনুরোধ সানন্দে স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি সমস্ত মাননীয় শিক্ষকদের অনুরোধ জানাই, প্রধান শিক্ষকদের অনুরোধ জানাই যে আপনারা নিজেদের এলাকায় এই খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, তাঁদেরকে নিজেদের স্কুলে নিয়ে আসুন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের কথা বলান। দেখুন এর ফলে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা কতটা প্রেরণা পাবে, কত প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে।
বন্ধুগণ,
আজ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শুভারম্ভ হচ্ছে ‘এসকিউএএএফ’(স্কুল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাস্যুরেন্স ফ্রেমওয়ার্ক )-এর মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত দেশে আমাদের স্কুলগুলির জন্য, শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কোনও কমন সায়েন্টিফিক ফ্রেমওয়ার্কই ছিল না। আমরা সবাই জানি, কোনও কমন ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া শিক্ষার সমস্ত দিকগুলি যেমন ‘কারিকুলাম’, ‘পেডাগোগি’, ‘অ্যাসেসমেন্ট’, ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার’, ‘ইনক্লুসিভ প্র্যাক্টিসেস’ এবং ‘গর্ভনমেন্ট প্রোসেস’ – এই সবকিছুর জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ড গড়ে তোলা খুব কঠিন। এর ফলে, দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে, ভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় অসাম্যের শিকার হতে হয়। কিন্তু এসকিউএএএফ এখন এই খাদ পূরণের কাজ করবে। আমাদের সবচাইতে বড় বিশেষত্ব হল যে এই ব্যবস্থায় নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তনের নমনীয়তা রাজ্যগুলির হাতে থাকবে। স্কুলগুলিও এর ভিত্তিতে নিজেদের মূল্যায়ন নিজেরাই করতে পারবে। এর ভিত্তিতে স্কুলগুলিকে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের জন্য উৎসাহিত করা যাবে।
বন্ধুগণ,
শিক্ষায় অসাম্যকে সমাপ্ত করে তাকে আধুনিক করে তোলার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ডিজিটাল এডুকেশনাল আর্কিটেকচার অর্থাৎ, এন-ডিয়ারও বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে। যেমন ইউপিআই ইন্টারফেস ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তেমনই ‘এন-ডিয়ার’ সকল শিক্ষা ও শিক্ষণমূলক গতিবিধির মধ্যে একটি ‘সুপার কানেক্ট’-এর কাজ করবে। একটি স্কুল থেকে দ্বিতীয় স্কুলে যেতে হলে কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে হলে ‘মাল্টিপল এন্ট্রি-এক্সিট’-এর ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ, ‘অ্যাকাডেমিক ক্রেডিট ব্যাঙ্ক’ এবং ছাত্রছাত্রীদের কর্মকুশলতার রেকর্ড – সবকিছু ‘এন-ডিয়ার’-এর মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যাবে। এই সমস্ত রূপান্তর আমাদের ‘নিউ এজ এডুকেশন’-এর চেহারাও গড়ে তুলবে আর উৎকর্ষ শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যকেও বিলীন করবে।
বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই একটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত যে কোনও দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা শুধুই ‘ইনক্লুসিভ’ হলে চলে না, একে ‘ইক্যুইটেবল’ও হতে হয়। সেজন্য আজ দেশ ‘টকিং বুকস’ এবং ‘অডিও বুকস’-এর মতো প্রযুক্তিকে শিক্ষার অংশ করে তুলছে। ইউনিভার্সাল ডিজাইন অফ লার্নিং, অর্থাৎ ইউডিএল-ভিত্তিক ১০ হাজার শব্দের ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিকশেনারিও বিকশিত করা হয়েছে। আসামের বিহু থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর ভারতনাট্যম পর্যন্ত সাংকেতিক ভাষা আমাদের দেশে অনেক শতাব্দীকাল ধরে কলা ও সংস্কৃতির অংশ। এখন দেশ প্রথমবার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকে একটি বিষয় রূপে পাঠ্যক্রমের অংশ করে তুলছে যাতে যে বিশেষ শিশুদের এভাবে শেখার প্রয়োজন রয়েছে, তারা যেন অন্যদের থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে না পড়ে। এই প্রযুক্তি দেশের দিব্যাঙ্গ যুবক-যুবতীদের জন্য একটি নতুন বিশ্ব গড়ে তুলবে। এভাবে ‘নিপুণ ভারত অভিযান’-এর মাধ্যমে ৩-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ‘ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমের্যাসি মিশন’ চালু করা হয়েছে। তিন বছর বয়স থেকেই দেশের সমস্ত শিশু যাতে অনিবার্যভাবে প্রি-স্কুল শিক্ষা পায় তা সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চলেছি। এ সকল প্রচেষ্টাকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাব আর এর ফলে আপনাদের সবার, বিশেষ করে আমাদের শিক্ষক মিত্রদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“দৃষ্টান্তো নৈব দৃষ্টঃ ত্রি-ভুবন জঠরে, সদগুরঃ জ্ঞান দাতুঃ”
অর্থাৎ, গোটা ব্রহ্মাণ্ডে গুরুর কোনও উপমা হয় না, কোনও তুলনা হয় না। যে কাজ গুরু করতে পারে, তা কেউ করতে পারে না। সেজন্য আজ দেশ তার যুব সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট যত প্রচেষ্টা করছে তার নিয়ন্ত্রণ সর্বদাই আমাদের এই শিক্ষক ভাই-বোনেদের হাতেই থাকবে। কিন্তু দ্রুতগতিতে পরিবর্তনশীল এই সময়ে আমাদের শিক্ষকদেরকেও নতুন ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগুলি সম্পর্কে দ্রুতগতিতে শিখে নিতে হবে। এর জন্য যে প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে তার নাম হল ‘নিষ্ঠা’। এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পে একটি খুব ভালো নিষ্ঠা আপনাদের সামনে এখনই তুলে ধরা হয়েছে। এই ‘নিষ্ঠা’ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের একটি খুব ভালো নিষ্ঠার উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এই ‘নিষ্ঠা’ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশ তার নিজস্ব শিক্ষকদের এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত রাখছে। এখন সেই লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে আর তার পরবর্তী পদক্ষেপ হল যাকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করি, সেটি হল ‘নিষ্ঠা ৩.০’। আমাদের শিক্ষকরা যখন যোগ্যতা-ভিত্তিক শিক্ষা, আর্ট ইন্টিগ্রেশন, হাই অর্ডার থিঙ্কিং এবং ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর মতো নতুন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন তখন ভবিষ্যতের জন্য যুব সম্প্রদায়কে আরও সহজভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
ভারতের শিক্ষকদের যে কোনও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা তো রয়েছেই, পাশাপাশি তাঁদের কাছে নিজেদের বিশেষ পুঁজিও রয়েছে। তাঁদের এই বিশেষ পুঁজি, এই বিশেষ শক্তি হল তাঁদের অন্তরের ভারতীয় শিষ্টাচার আর আমি আপনাদেরকে আমার দুটি অভিজ্ঞতার কথা জানাতে চাই। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যখন প্রথমবার ভুটান গিয়েছিলাম, সেখানকার রাজ পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানকার শাসনতন্ত্রে রাজ পরিবারই সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। সেই পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলছিলেন যে আগে আমাদের দেশে প্রায় সমস্ত শিক্ষক ভারত থেকে আসতেন আর এখানকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে পায়ে হেঁটে গিয়ে তাঁরা পড়াতেন! আর যখনই তাঁরা শিক্ষকদের সম্পর্কে কথা বলছিলেন, ভুটান রাজ পরিবারের সদস্যদের চেহারায় শ্রদ্ধা ও সম্মানের ছাপ ফুটে উঠছিল, তাঁদের চোখে চমক দেখতে পেয়েছি। আবার যখন আমি সৌদি আরবে গিয়েছিলাম আর সম্ভবত সৌদি আরবের রাজার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন তিনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমাকে বলছিলেন যে, আমাকে ভারতের শিক্ষকরা পড়িয়েছেন। এখন দেখুন, শিক্ষক যে দেশেই থাকুন না কেন, তাঁর প্রতি যে কোনও ব্যক্তির মনে একটা ভক্তিভাব থাকে।
বন্ধুগণ,
আমাদের শিক্ষকরা যে নিজেদের কাজকে শুধু পেশা হিসেবে মানতেন তা নয়, তাঁদের জন্য পড়ানো একটা মানবিক সংবেদনা মাত্র, একটি পবিত্র এবং নৈতিক কর্তব্য। সেজন্য আমাদের দেশে শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পেশাদার সম্পর্ক থাকে না, একটি পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এই সম্পর্ক সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। সেজন্য ভারতের শিক্ষক বিশ্বের যেখানেই যান, নিজেদের একটি ভিন্ন ছাপ ছেড়ে যান। ফলে আজ ভারতের নবীন প্রজন্মের শিক্ষকদের জন্যও বিশ্বে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের আধুনিক এডুকেশন ইকো-সিস্টেমের হিসেব অনুযায়ী, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আর এই সম্ভাবনাগুলিকে সুযোগে রূপান্তরিত করতে হবে। এর জন্য আমাদের ক্রমাগত উদ্ভাবন জারি রাখতে হবে। আমাদের শিক্ষণ শিক্ষা প্রক্রিয়াকে লাগাতার ‘রিডিফাইন’ এবং ‘রিডিজাইন’ করে যেতে হবে। যে প্রাণশক্তি আপনারা এখনও পর্যন্ত দেখিয়েছেন, তাকে আমাদের আরও উচ্চতা প্রদান করতে হবে, আমাদের আরও সাহস যোগাতে হবে। আমাকে বলা হয়েছে যে ‘শিক্ষক পরব’-এর এই পবিত্র উৎসব উপলক্ষে আজ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টি আমাদের দেশে বিশ্বকর্মা জয়ন্তী রূপে পালন করা হয়। এই বিশ্বকর্মা তো নিজেই নির্মাতা, এই বিশ্বকর্মা সৃষ্টির দেবতা। যাঁরা ৭ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করছেন, তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই। এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সারা দেশের এতজন শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং নীতি-নির্ধারকরা যখন একসঙ্গে আলোচনা ও মন্থন করবেন, তখন এর মাধ্যমে এবং স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে এই অমৃতের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। আপনাদের এই সামুহিক মন্থনের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতিকে সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। আমি চাইব যে আপনারা এভাবে নিজেদের শহরে ও গ্রামে স্থানীয় স্তরেও চেষ্টা করে যাবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই লক্ষ্যে সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়নে নতুন গতি আসবে। অমৃত মহোৎসবে দেশ যে লক্ষ্যগুলি ধার্য করেছে, সেগুলি আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়িত করব। এই শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।