নমস্কার!
‘রোজগার মেলা’য় সমবেত আমার তরুণ বন্ধুরা।
আপনাদের সকলকেই জানাই অনেক অনেক অভিনন্দন। দেশের ৪৫টি শহরের ৭১ হাজার তরুণ ও যুবার কাছে আজ পৌঁছে যাচ্ছে নিয়োগপত্র। হাজার হাজার পরিবারে এক সমৃদ্ধির যুগ শুরু হতে চলেছে আজ থেকে। গত মাসে ধনতেরাসের দিন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল ৭৫ হাজার তরুণ ও যুবকের কাছে। সরকারি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার যে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে, আজকের ‘রোজগার মেলা’ তারই এক বিশেষ দৃষ্টান্ত।
বন্ধুগণ,
গত মাসে ‘রোজগার মেলা’র যখন সূচনা হয় তখন আমি বলেছিলাম যে বিভিন্ন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তথা এনডিএ ও বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেও ‘রোজগার মেলা’র আয়োজন করা হবে। আমি খুশি যে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট সরকার হাজার হাজার তরুণ প্রার্থীদের কাছে নিয়োগপত্র পৌঁছে দিয়েছে। কয়েকদিন আগেই উত্তরপ্রদেশ সরকারও বহু তরুণকেই এই নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, দাদরা ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউ এবং চণ্ডীগড়েও ‘রোজগার মেলা’র মাধ্যমে হাজার হাজার তরুণ প্রার্থীকে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। আগামী পরশু, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর এই ধরনের ‘রোজগার মেলা’র আয়োজন করতে চলেছে গোয়ার রাজ্য সরকার। আবার, ২৮ নভেম্বর তারিখে ‘রোজগার মেলা’ আয়োজিত হবে ত্রিপুরায়। ডবল ইঞ্জিন সরকারের এটাই হল দ্বিগুণ সুবিধা। দেশের তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে নিয়োগপত্র বন্টনের এই অভিযান অর্থাৎ, ‘রোজগার মেলা’ চালিয়ে যাওয়া হবে নিরন্তরভাবে।
বন্ধুগণ,
ভারতের মতো একটি নবীন রাষ্ট্রে কোটি কোটি তরুণ ও যুবকরাই হলেন জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। জাতি গঠনের কাজে উৎসাহী ও মেধাবী তরুণদের সর্বোচ্চ সংখ্যায় সামিল করার বিষয়টিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আজ আমার ৭১ হাজার নতুন সহকর্মীদের জাতি গঠনের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। কঠিন প্রতিযোগিতায় কঠোর শ্রম ও যোগ্যতার মধ্য দিয়ে সফল হয়ে আপনারা আজ সংশ্লিষ্ট পদগুলিতে নিযুক্ত হচ্ছেন। এই কারণে শুধু আপনারাই নন, অভিনন্দন প্রাপ্য আপনাদের পরিবার-পরিজনদেরও।
আমার তরুণ সহকর্মীবৃন্দ,
এক বিশেষ সময়ে আপনারা আপনাদের নতুন দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন। দেশে বর্তমানে অমৃতকালের সূচনা হয়েছে। এই অমৃতকালে এক উন্নত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সঙ্কল্পবদ্ধ হয়েছেন দেশবাসী। দেশের সঙ্কল্প পূরণের পথে আপনারা সকলেই হলেন সারথী। যে নতুন দায়িত্বগুলি আপনারা পালন করতে চলেছেন তার মূল অর্থ হল, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাই, কর্তব্য পালনের সময় নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে আপনাদের সচেতন হতে হবে। একজন সরকারি কর্মী রূপে দেশকে সেবা করে যাওয়ার জন্য আপনাদের সকলেরই উচিৎ দক্ষতা অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রযুক্তির সাহায্যে প্রত্যেক সরকারি কর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে কেন্দ্রীয় সরকার সচেষ্ট। ‘কর্মযোগী ভারত’ – প্রযুক্তির এই মঞ্চটিতে অনেক অনলাইন কোর্সেরই সন্ধান পাওয়া যাবে। এই মঞ্চটির সূচনা হয়েছে সাম্প্রতিককালে। আপনাদের মতো যাঁরা নতুন সরকারি কর্মী রূপে কাজে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের জন্য ‘কর্মযোগী প্রারম্ভ’ নামে একটি বিশেষ কোর্সেরও আজ সূচনা হচ্ছে। ‘কর্মযোগী ভারত’ মঞ্চটিতে যে সমস্ত অনলাইন কোর্সের কথা বলা হয়েছে, আপনারা তার সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করবেন বলেই আমি মনে করি। কারণ এই কোর্সের মাধ্যমে আপনাদের দক্ষতাই শুধু বৃদ্ধি পাবে না, সেইসঙ্গে আপনাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনও নানাভাবে উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বজুড়ে অতিমারীর ঘটনা এবং যুদ্ধ-বিগ্রহের পরিস্থিতিতে বিশ্বের তরুণ সমাজ আজ নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উন্নত দেশগুলিতেও যে এই সঙ্কট ঘনিয়ে আসতে চলেছে, এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বহু বিশেষজ্ঞই। তবে, অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা একথাও বলেছেন যে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রসারে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ অনুকূল। পরিষেবা রপ্তানির দিক থেকে ভারত এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের একটি বড় শক্তি। আন্তর্জাতিক স্তরে একটি বিশেষ নির্মাণ তথা উৎপাদন কেন্দ্র রূপে ভারতের যে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে, এই আত্মবিশ্বাসেরও জন্ম দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উৎপাদন-ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা সহ আমাদের অন্যান্য যে কর্মসূচিগুলি রূপায়িত হচ্ছে এক্ষেত্রে তার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে একথা সত্য, কিন্তু এর মূলে রয়েছে ভারতের দক্ষ শ্রমশক্তি ও যুব সমাজ। শুধুমাত্র পিএলআই কর্মসূচির মাধ্যমেই প্রায় ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বা ‘লোকাল টু গ্লোবাল’ – যে অভিযানগুলির কথাই আমি উল্লেখ করি না কেন, তার সবক’টিই দেশে কর্মসংস্থান তথা স্বনিযুক্তিকে উৎসাহিত করে চলেছে। এর অর্থ হল, সরকারি ও বেসরকারি - দুটি ক্ষেত্রেই নতুন নতুন কাজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তরুণ ও যুবকদের নিজেদের শহর ও গ্রামগুলিতেও যেভাবে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে তাঁদের আর অন্য শহরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে না। নিজের নিজের এলাকার উন্নয়নে তাঁরা আত্মনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
স্টার্ট-আপ থেকে স্বনির্ভর কর্মসংস্থান এবং মহাকাশ থেকে ড্রোন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতে তরুণ ও যুবকদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়ে চলেছে। ভারতে বর্তমানে ৮০ হাজারটির মতো স্টার্ট-আপ গড়ে উঠেছে যেখানে তরুণরা সুযোগ পাচ্ছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সম্ভাবনা প্রমাণ করার। ওষুধ সরবরাহের কাজই হোক কিংবা কীটনাশক ছড়ানোর কাজ, ‘স্বামীত্ব’ কর্মসূচির আওতায় জমি পরিমাপ করার কাজই হোক কিংবা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কাজকর্ম – ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার দেশে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই ড্রোনের সাহায্যেই নতুন নতুন কাজের সুযোগ পৌঁছে যাচ্ছে তরুণ ও যুবকদের কাছে। মহাকাশ ক্ষেত্রের দ্বার তরুণদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত আমাদের সরকার গ্রহণ করেছে তার মাধ্যমে তাঁরা বহুলাংশেই উপকৃত হতে চলেছেন। মাত্র ২-৩ দিন আগে আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম মহাকাশ রকেটটির সফল উৎক্ষেপণের ঘটনা।
যাঁরা এখন তাঁদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী তাঁদের কাছে ‘মুদ্রা’ কর্মসূচির আওতায় ঋণ সংগ্রহের পথও এখন উন্মুক্ত। দেশে এ পর্যন্ত ৩৫ কোটির মতো ‘মুদ্রা’ ঋণ দেওয়া হয়েছে। দেশে উদ্ভাবন ও গবেষণাকে যেভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে তার মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই সমস্ত নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার পূর্ণ সদ্ব্যবহারের জন্য আমি আর্জি জানাই দেশের তরুণ ও যুব সমাজের কাছে। আমি আরও একবার আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই দেশের ৭১ হাজারেরও বেশি তরুণ ও যুবককে যাঁরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন। আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগকে যে কোনভাবেই আপনারা অবহেলা করবেন না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আজকের এই নিয়োগপত্র সরকারি কাজে যোগ দেওয়ার এক বিশেষ প্রবেশদ্বার। এর অর্থ হল, এগিয়ে চলার এক নতুন জগতে আপনারা প্রবেশ করতে চলেছেন। কাজের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান অর্জন ও আহরণের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের যোগ্যতাকে আরও উন্নত করে তুলুন। বরিষ্ঠ সহকর্মীদের কাছ থেকে ভালো ভালো বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করে আপনাদের কাজ করার ক্ষমতাকেও সেইসঙ্গে বাড়িয়ে তুলুন।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের মতোই এখনও শিক্ষার্জন করে চলেছি। আমার মধ্যে যে ছাত্রটি লুকিয়ে রয়েছে তাকে আমি কখনই ঘুমিয়ে পড়তে দিই না। প্রত্যেকের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার জন্য আমি প্রস্তুত। যত তুচ্ছ বিষয়ই হোক না কেন, তা থেকেও শিক্ষা গ্রহণে আমার কোন আপত্তি নেই। ফলে, একই সময়ে আমি অনেক কাজই একসঙ্গে করতে পারি কারণ সেই ক্ষমতা ও দক্ষতা আমি অর্জন করেছি। আপনারাও তা করে দেখাতে পারেন। তাই, ‘কর্মযোগী ভারত’ মঞ্চটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আমি আপনাদের পরামর্শ দিচ্ছি। অনলাইন প্রশিক্ষণ সম্পর্কে এক মাস পরে আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা আমাকে জানান। যদি কোনও ভুল-ত্রুটি থেকে থাকে তা কিভাবে সংশোধন করা সম্ভব তার পথও আপনারা বাতলে দিতে পারেন। এই মঞ্চটিকে কিভাবে আরও ভালো করে গড়ে তোলা যায়, সে সম্পর্কেও আপনারা আপনাদের প্রস্তাব ও পরামর্শ পাঠাতে পারেন। আমি সেজন্য অপেক্ষা করে থাকব। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সহকর্মী তথা অংশীদার। একই পথের পথিক আমরা। ভারতকে এক উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যেই আমাদের এই একসঙ্গে পথ বেয়ে চলা। আসুন, আরও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা সঙ্কল্পবদ্ধ হই। আপনাদের জন্য রইল আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
অসংখ্য ধন্যবাদ!