আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী ডাঃ জিতেন্দ্র সিংজী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শ্রী অজিত দোভালজী, মন্ত্রিসভার মাননীয় সচিব, সিবিআই – এর নির্দেশক, অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
সিবিআই – এর ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই হীরক জয়ন্তী উৎসবের অবকাশে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে আপনারা ৬০ বছরের সফর পূর্ণ করেছেন। এই ছয় দশকে নিশ্চিতভাবেই অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, অনেক সাফল্যও এসেছে। আজ এখানে সিবিআই সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের একটি সংকলনও প্রকাশ করা হ’ল। এই সংকলন সিবিআই – এর বিগত বছরগুলির যাত্রাপথকে তুলে ধরেছে। অনেক শহরে সিবিআই – এর নতুন নতুন দপ্তরের শুভ সূচনা থেকে শুরু করে ট্যুইটার হ্যান্ডেল ও অন্যান্য কিছু ব্যবস্থার আজ শুভ সূচনা হয়েছে। এগুলি নিশ্চিতভাবেই সিবিআই-কে আরও শক্তিশালী করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সিবিআই – এর কর্মীরা তাঁদের কাজ ও দক্ষতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে একটি বিশ্বাস গড়ে তুলেছে। আজও যখন কারও মনে হয় যে, কোনও কেস অসাধ্য, তখনও আওয়াজ ওঠে যে মামলাটিকে সিবিআই – এর হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ। অনেকে আন্দোলন করেন আর দাবি তোলেন যে, অমুক কেসের তদন্তের দাবি সিবিআই-কে দেওয়া হোক। এমনকি, পঞ্চায়েত স্তরেও অনেক মামলার তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার দাবি ওঠে। যথাযথ ন্যায় পেতে সুবিচারের সহায়ক একটি ব্র্যান্ড রূপে সিবিআই আজ সকলের প্রথম পছন্দ।
সাধারণ মানুষের এমন ভরসা জয় করা কোনও সাধারণ সাফল্য নয়। এই ভাবমূর্তি ও আস্থা গড়ে তোলার জন্য বিগত ৬০ বছরে যাঁরা অবদান রেখেছেন, এই সংগঠনে কর্মরত সেইসব আধিকারিক ও কর্মচারীরা অসংখ্য শুভেচ্ছার দাবিদার। এখানে অনেক আধিকারিক ও কর্মীকে তাঁদের উৎকৃষ্ট সেবার জন্য পুলিশ পদক প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছে। আজ আমি যাঁদের সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি, যাঁরা আজ সম্মানিত হয়েছেন, তাঁদেরকে ও তাঁদের পরিবারের সমস্ত সদস্যদের আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ,
এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে অতীতের সাফল্যগুলিকে সম্বল করে আগামী দিনের, সমস্ত সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা মন্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনারা এখানে যে চিন্তন শিবিরের আয়োজন করেছেন, তার উদ্দেশ্যও নিজেদেরকে আত্মসমালোচনা ও আত্মোন্নয়ন করা। পুরনো অভিজ্ঞতাগুলি থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যতের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এটাও এই সময়েরই দাবি, যখন দেশ স্বাধীনতার অমৃতকালের যাত্রা শুরু করেছে। কোটি কোটি ভারতবাসী আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করার শপথ নিয়েছে। আর উন্নত ভারত গড়ে তোলা পেশদার এবং দক্ষ সংস্থাগুলির সক্রিয় উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। আর সেজন্য সিবিআই – এরও অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিগত ছয় দশকে সিবিআই বহুমুখী, বহুমাত্রিক এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছে। আজ সিবিআই – এর পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ অর্থাৎ কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত; মহানগর থেকে শুরু করে জঙ্গল পর্যন্ত এখন সিবিআই আধিকারিকদের ছুটতে হচ্ছে। সংগঠিত অপরাধ থেকে শুরু করে সাইবার অপরাধ পর্যন্ত কত বিচিত্র মামলার তদন্ত সিবিআই-কে করতে হচ্ছে।
কিন্তু, সিবিআই – এর প্রধান দায়িত্ব হ’ল দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করা। দুর্নীতি কোনও সাধারণ অপরাধ নয়। যে কোনও দুর্নীতি গরীব মানুষের অধিকার হনন করে। দুর্নীতি অনেক অপরাধের ধারাবাহিকতা চালু করে, নতুন নতুন অপরাধকে জন্ম দেয়। দুর্নীতি, গণতন্ত্র ও সুবিচারের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বিশেষ করে, যখন সরকারি ব্যবস্থায় দুর্নীতি বেড়ে যায়, তখন তা আর গণতন্ত্রকে পল্লবিত-পুষ্পিত হতে দেয় না। যেখানে দুর্নীতি থাকে, সেখানে সবার আগে দেশের নবীন প্রজন্মের স্বপ্নগুলি বলিপ্রদত্ত হয়, তরুণরা তাঁদের প্রতিভা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না। যেখানে দুর্নীতি থাকে, সেখানে শুধু একটি বিশেষ বাস্তু ব্যবস্থাই পল্লবিত-পুষ্পিত হয় - এটাই দুর্নীতিগ্রস্ত বাস্তু ব্যবস্থা। দুর্নীতি, প্রতিভার সবচেয়ে বড় শত্রু। আর এখান থেকেই স্বজন-পোষণ ও পরিবারবাদ অঙ্কুরিত হতে থাকে। ক্রমে নিজের শিকড় শক্তিশালী করতে থাকে। যখন সমাজে স্বজন-পোষণ ও পরিবারবাদ শক্তিশালী হয়, তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের সামর্থ্য হ্রাস পায়। আর যখন রাষ্ট্রের সামর্থ্য হ্রাস পায়, তখন উন্নয়ন অবশ্যই প্রভাবিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত, দাসত্বের দীর্ঘ অন্ধকারময় সময় থেকে আমরা একটি দুর্নীতির পরম্পরাও পেয়েছি। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হ’ল, স্বাধীনতার পরও অনেক দশক ধরে এই পরম্পরাকে বিনষ্ট না করে কোনও না কোনোভাবে কিছু মানুষ একে শক্তিশালী করে গেছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা স্মরণ করুন, ১০ বছর আগে যখন আপনারা আপনাদের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছিলেন, তখন দেশের অবস্থা কেমন ছিল? তৎকালীন সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি প্রকল্প ছিল সংশয়দীর্ণ। দুর্নীতির প্রতিটি মামলায় পূর্ববর্তী কোনও অনুরূপ মামলা থেকে বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল। তুমি এইটুকু দুর্নীতি করেছো আর আমি এত বড় দুর্নীতি করে দেখাবো। আজ দেশে অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে লক্ষ-কোটি অর্থাৎ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু, সেই সময় বিভিন্ন কেলেঙ্কারির আকার নির্ধারণের জন্য লক্ষ-কোটি টাকার সময়সীমা বিখ্যাত হয়েছিল। এত বড় বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে, কিন্তু অভিযুক্তরা নিশ্চিন্ত ছিল। তারা জানতো যে, তখনকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাদের পেছনে রয়েছে। এর ফল আমরা কী পেলাম, রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর দেশবাসীর ভরসা অবলুপ্ত হচ্ছিল। গোটা দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আক্রোশ ক্রমাগত বাড়ছিল। এর ফলে, সমগ্র ব্যবস্থা ছিন্ন-ভিন্ন হচ্ছিল। ক্ষমতাসীন সরকার ও নেতারা সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছিলেন। এভাবে দেশে একটি নীতি পক্ষাঘাতের আবহ গড়ে উঠেছিল। আর এই আবহ দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যহত করছিল। বিদেশ থেকে কোনও বিনিয়োগকারী আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছিলেন। দুর্নীতির সেই কালো সময়ে ভারতের অনেক বেশি লোকসান হয়েছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালের পর আপনারা যখন আমাদের প্রথমবার দেশ শাসনের দায়িত্ব দিলেন, তখন আমরা আরেকবার সরকারি ব্যবস্থায় ভরসাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলাম। সেজন্য আমরা কালো টাকা থেকে শুরু করে বেনামী সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য মিশন মোডে কাজ করতে শুরু করি। আমরা দুর্নীতিবাজদের পাশাপাশি, দুর্নীতিকে উৎসাহ যোগায় এমনসব কারণের উপরও প্রহার করতে শুরু করি। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, তখন সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়াও কতটা প্রশ্নের মুখে ছিল। আমরা এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করি। আজ যখন আমরা ২-জি এবং ৫-জি স্পেকট্রামের বন্টন প্রক্রিয়ার মধ্যে তুলনা করি, তখন এর ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনারা জানেন যে, এখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি বিভাগ কেনাকাটার জন্য জেম ব্যবস্থা মেনে চলে। আজ প্রতিটি বিভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এই ডিজিটাল মঞ্চ থেকে অধিকাংশ কেনাকাটা করছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং – এর কথা বলি, ইউপিআই – এর মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের কথা বলি। কিন্তু, আমরা ২০১৪ সালের আগের ফোণ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাও দেখেছি। সেই সময়ে যখন দিল্লিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের একটি ফোনে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া যেত। এই ব্যবস্থা আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি – আমাদের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিগত বছরগুলিতে আমরা অনেক পরিশ্রম করে আমাদের ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে অনেক সমস্যা থেকে বের করে এনেছি। ফোন ব্যাঙ্কিং – এর সেই দিনগুলিতে কিছু মানুষ ২২ হাজার কোটি টাকা দেশের ব্যাঙ্কগুলি থেকে লুঠ করে বিদেশে পালিয়ে যায়। আর আমরা সরকারের দায়িত্ব পেয়ে ফিউগিটিভ ইকনোমিক অফেন্ডার্স বা পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী আইন প্রণয়ন করেছি। এই আইন প্রয়োগ করে ইতিমধ্যেই বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই অর্থনৈতিক অপরাধীদের ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
দুর্নীতিবাজরা দেশের রাজকোষ লুন্ঠনের আরেকটি উপায় তৈরি করেছিল, যা কয়েক দশক ধরে চলছিল, তা হ’ল – সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের প্রাপ্ত অর্থ লুন্ঠন। পূর্ববর্তী সরকারগুলির আমলে গরীব সুবিধাভোগীদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হ’ত, তা অধিকাংশই তাঁদের হাতে পৌঁছনোর আগেই লুন্ঠিত হ’ত। তাঁদের জন্য বরাদ্দ রেশন থেকে শুরু করে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ, ছাত্র বৃত্তি, পেনশন – এরকম অনেক সরকারি প্রকল্পের প্রকৃত সুবিধাভোগীরা প্রতারিত হতেন। একজন প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছিলেন যে, সরকার থেকে এক টাকা বরাদ্দ করলে সুবিধাভোগীদের হাতে তা গিয়ে ১৫ পয়সা পৌঁছয় আর ৮৫ পয়সা চুরি হয়ে যায়। কিন্তু, আপনারা জানেন যে, বিগত দিনগুলিতে আমরা কিভাবে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ২৭ লক্ষ কোটি টাকা দরিদ্র সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিয়েছি। সেই হিসাব দেখতে গেলে এই ২৭ লক্ষের মধ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ কোটি টাকা অন্য কোথাও চলে যেত। আজ জন ধন, আধার, মোবাইল – এই ত্রয়ীর সংযোগে প্রত্যেক সুবিধাভোগী তার সম্পূর্ণ অধিকার পাচ্ছেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ৮ কোটিরও বেশি ভুতুড়ে সুবিধাভোগীকে ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে মেয়ের জন্মই হয়নি, সেই মেয়ে বিধবা হয়ে যেত, আর বিধবা পেনশন চলতো। এভাবে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
বন্ধুগণ,
একটা সময় ছিল, যখন সরকারি চাকরির ইন্টারভিউতে পাশ করানোর জন্য খুব দুর্নীতি হ’ত। এই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ ব্যবস্থাই বাতিল করে দিই। একটা সময়ে দেশে ইউরিয়া কেলেঙ্কারির ফলে কৃষকদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হ’ত। আমরা ইউরিয়াকে নিমের প্রলেপ দিয়ে এই সমস্যারও সমাধান করি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কেনাকাটার দুর্নীতি প্রায়ই হ’ত। বিগত ৯ বছরে আমরা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে কেনাকাটা করেছি। আর এখন তো আমরা ভারতেই আমাদের প্রয়োজন অনুসারে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে জোর দিয়েছি।
বন্ধুগণ,
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে এরকম অনেক পদক্ষেপের কথা আপনারাও জানেন। আমিও তালিকা পেশ করতে পারি। কিন্তু, তা না করে আমাদের উচিৎ অতীতের প্রতিটি অধ্যায় থেকে কিছু না কিছু শেখা। দুর্ভাগ্যবশত, দুর্নীতি সংক্রান্ত অনেক মামলা এখনও চলছে, বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে এগুলি নিষ্পত্তিতে। এমন মামলাও আমরা দেখেছি যে, যার এফআইআর হয়ে যাওয়ার ১০ বছর পরও কোন ধারায় মামলা চলবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলতো। আজও এরকম অনেক মামলা চলছে, যেগুলি অনেক বছর পুরনো।
তদন্ত দেরী হলে দু-ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রথমত, দুর্নীতিকারী দেরীতে শাস্তি পায় আর অন্যদিকে নির্দোষকে কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে যে, এই প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা যায়। দুর্নীতিকারীদের যত দ্রুত শাস্তি দেওয়া যায়। সেজন্য আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাক্টিস নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। এই অধ্যয়ন তদন্তকারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের একটি কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আজ দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির কোনও অভাব নেই। আপনাদের কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে প্রভাবিত হয়ে কাজ থামানোর প্রয়োজন নেই।
আমি জানি যে, আপনারা যাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তারা অনেক শক্তিশালী মানুষ। অনেক বছর ধরে তারা সরকার ও ব্যবস্থার অংশ ছিলেন। আর অনেক রাজ্যে তো তারা আজও শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। অনেক বছর ধরে তারা যে দুর্নীতির বাস্তু ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তা প্রায়ই তাদের কুকীর্তিকে ঢেকে দেওয়ার সপক্ষে এবং আপনাদের মতো সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেজন্য তারা সিবিআই – এর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেলে। এরা আপনাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে যাবে। কিন্তু, আপনাদের সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজেদের লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। কোনও দুর্নীতিকারীকে রেহাই করবেন না। আমাদের চেষ্টায় যেন কোনও ত্রুটি না থাকে। এটাই দেশের ইচ্ছা, এটাই দেশবাসীরও ইচ্ছা। আর আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, দেশ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, দেশের আইন আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, দেশের সংবিধানও আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভালো ফল পেতে ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সির মধ্যে লালফিতের ফাঁসকেও সমাপ্ত করতে হবে। যৌথ এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি তদন্তের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাসের আবহেই এই লালফিতের ফাঁস দূর করা সম্ভব হবে। এখন দেশের ভৌগোলিক সীমানার বাইরেও জনগণকে পণ্য ও পরিষেবার বড় পরিমাণে আদান-প্রদান চলছে। যেভাবে যেভাবে ভারতের আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেভাবে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।
ভারতের সামাজিক গঠন প্রক্রিয়ায় আমাদের একতা এবং সৌভ্রাতৃত্বে, আমাদের অর্থনৈতিক হিতে, আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর দৈনন্দিন আক্রমণও ক্রমবর্ধমান। আর এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই দুর্নীতিগ্রস্তরা অর্থ বিনিয়োগ করছে। সেজন্য আমাদের অপরাধ ও দুর্নীতির বহুজাতিক চরিত্রকেও বুঝতে হবে, অধ্যয়ন করতে হবে। এর মূলে পৌঁছতে হবে। আজ আমরা প্রায়শই দেখি যে, আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অপরাধও আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাধানের পথও খুঁজতে পারি। আমাদের তদন্তে ফরেনসিক বিজ্ঞানের ব্যবহারও যথাসম্ভব বাড়াতে হবে।
বন্ধুগণ,
সাইবার অপরাধের মতো বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আমাদের প্রতিনিয়ত নানা উদ্ভাবক পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নবীন শিল্পোদ্যোগীরা তাঁদের সঙ্গে আরও নবীন প্রজন্মের উদ্ভাবকদের যুক্ত করতে পারেন। আপনাদের সংগঠনে অনেক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ-তরুণী রয়েছেন। যাঁদেরকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বন্ধুগণ,
আমাকে বলা হয়েছে যে, সিবিআই ৭৫টি এমন প্রথা শনাক্ত করেছে, যেগুলিকে সমাপ্ত করা যেতে পারে। বিগত বছরগুলিতে সিবিআই আধিকারিক ও কর্মীরা নিজেরাই এই বিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন, যাতে এই প্রক্রিয়া অপ্রতিহত ও অক্লান্তভাবে এভাবেই জারি থাকে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই চিন্তন শিবির একটি নতুন আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেবে, এই চিন্তন শিবির নতুন নতুন মাত্রায় পৌঁছনোর পথ সৃষ্টি করবে। কঠিন থেকে কঠিন সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি আধুনিক করে তুলবে। আর আমরা আরও বেশি কার্যকর হয়ে উঠবো, আরও বেশি সুফলদায়ক হব এবং সাধারণ নাগরিকের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনবো। সাধারণ নাগরিক কারও ক্ষতি করতে চান না। এমনকি, ক্ষতিগ্রস্তও হতে চান না। আমাদের তাঁদের ভরসাতেই এগিয়ে যেতে হবে, যাঁদের হৃদয়ে এখনও সততা সঞ্জীবিত আছে। আর এই সংখ্যা এখনও কোটি কোটি। হ্যাঁ, আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষ এখনও সৎ। এত বড় সামর্থ্য আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস যেন কখনও কমে না যায়, সেটা দেখতে হবে বন্ধুগণ।
এই হীরক জয়ন্তী উদযাপন মহোৎসব উপলক্ষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনারা আগামী ১৫ বছরে কী করবেন, আর আপনাদের মাধ্যমে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত দেশ কোন লক্ষ্যে পৌঁছবে, এই দুটি লক্ষ্য স্থির করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। ১৫ বছর এজন্য বললাম যে, ১৫ বছর পর সিবিআই – এর যখন ৭৫ বছর পূর্তি হবে, তখন আপনারা কতটা সমর্থ, সমর্পিত ও সংকল্পে ঋদ্ধ হবেন, আর যখন দেশ ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে, তখন এই দেশের আশা-প্রত্যাশার অনুরূপ আপনারা নিজেদের সংস্থাকে কোন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন, সেদিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছেন।
আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
ধন্যবাদ!