ভারত মাতার জয়।
ভারত মাতার জয়।
ভারত মাতার জয়।
এখানে উপস্থিত আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সমস্ত সহকর্মী, দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আজ এই অনিন্দ্যসুন্দর ভবনে উপস্থিত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, দেশের ৭০ টিরও বেশি শহর থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হওয়া আমার সমস্ত বন্ধু, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং আমার পরিবারের সদস্যরা।
আজ ভগবান বিশ্বকর্মাকে আরাধনা করা হচ্ছে। এই দিনটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী কারিগর এবং শিল্পকর্মীদের জন্য উৎসর্গীকৃত। আমি বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে সমস্ত দেশবাসীকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। আমি আনন্দিত যে আজ আমি সারা দেশের লক্ষ লক্ষ বিশ্বকর্মা বন্ধুদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কিছুক্ষণ আগে, আমি অনেক বিশ্বকর্মা ভাই ও বোনের সঙ্গে কথা বলেছি। আর তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম বলেই এখানে আসতে দেরি হল। আসলে নীচে আয়োজিত প্রদর্শনীটি এতই আকর্ষণীয় যে আমার না দেখে তাড়াতাড়ি চলে আসতে ইচ্ছে করেনি। আমি আপনাকে সবাইকে এটি অবশ্যই দেখার অনুরোধ জানাই। আমাকে বলা হয়েছে যে এই প্রদর্শনী আরও ২-৩ দিন চলবে, তাই আমি অবশ্যই দিল্লির জনগণকে এটি দেখতে বলব।
বন্ধুগণ,
ভগবান বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা হস্তশিল্পের দক্ষতা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি দিয়ে ঐতিহ্যগতভাবে কাজ করতে থাকা লক্ষ লক্ষ পরিবারের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করবে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
এই প্রকল্পের পাশাপাশি আজ দেশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র-যশোভূমি। এখানে যে ধরনের কাজ করা হয়েছে তা আমার শ্রমজীবী ভাই-বোন, আমার বিশ্বকর্মা ভাই-বোনদের দৃঢ়তা ও তপস্যাকে প্রতিফলিত করে। আজ আমি এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র- যশোভূমি উৎসর্গ করছি দেশের প্রত্যেক কর্মীকে, প্রত্যেক বিশ্বকর্মা বন্ধুকে। আমাদের বিপুল সংখ্যক বিশ্বকর্মা বন্ধুও এই যশোভূমির সুবিধাভোগী হতে চলেছেন। আজ, আমি বিশেষ করে এই অনুষ্ঠানে ভিডিওর মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা হাজার হাজার বিশ্বকর্মা বন্ধুদের বলতে চাই যে, এই বিশাল প্রাণবন্ত কেন্দ্রটি আমাদের প্রতিটি গ্রামে উৎপাদিত আপনাদের তৈরি পণ্য, কারুশিল্প এবং হস্তশিল্পকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে চলেছে। এটি বিশ্বের কাছে আপনার শিল্পসৌকর্য, আপনার দক্ষতা, আপনার প্রতিভাকে তুলে ধরবে। এটি ভারতের ‘লোক্যাল’ বা স্থানীয় পণ্যগুলিকে ‘গ্লোবাল’ বা বিশ্বজনীন করে তুলতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
আমাদের শাস্ত্রে কথিত আছে- 'ইয়ো বিশ্বম জগতম্ করোত্যসে স বিশ্বকর্মা'
অর্থাৎ যিনি সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করেন বা এর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নির্মাণ কাজ করেন তাঁকে "বিশ্বকর্মা" বলা হয়। যে বন্ধুরা হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের সমৃদ্ধির মূলে রয়েছেন তাঁরাই আমাদের বিশ্বকর্মা। আমাদের শরীরে মেরুদন্ড যেমন ভূমিকা পালন করে, তেমনি এই বিশ্বকর্মা সঙ্গীরা সামাজিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আমাদের এই বিশ্বকর্মা বন্ধুরা যেসব কাজের সঙ্গে জড়িত, যেসব দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত, সেগুলি ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন করার কথা কল্পনা করাও কঠিন। দেখুন, লোহার যন্ত্রপাতি যারা নির্মাণ করেন, তাঁরা ছাড়া আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় কিছু করা কি সম্ভব? কখনোই না। তেমনই গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত জুতোর কারিগর, ক্ষৌরকার, পোষাক প্রস্তুতকারক – এমন অসংখ্য পেশার মানুষদের গুরুত্ব শেষ হতে পারে না। এমনকি রেফ্রিজারেটরের যুগেও, অনেক মানুষ আজও মাটির মটকা অথবা কুজোর জল পান করতে পছন্দ করে। বিশ্ব যতই এগিয়ে যাক, প্রযুক্তি যেখানেই পৌঁছুক না কেন, এগুলির ভূমিকা ও গুরুত্ব সবসময়ই থাকবে। আর তাই সময়ের প্রয়োজন হল এই বিশ্বকর্মা সঙ্গীদের চিনে রাখা আর তাঁদের আত্মনির্ভরতা অব্যাহত রাখতে সবরকম ভাবে সাহায্য করা।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার আজ আমাদের বিশ্বকর্মা ভাই ও বোনদের সম্মান বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হয়েছে, তাঁদের সামর্থ এবং সমৃদ্ধি বাড়াতে তাঁদের সহযোগী হিসেবে আপনাদের কাছে এসেছে। বর্তমানে, এই প্রকল্পটি বিশ্বকর্মা সহযোগীদের ১৮টি বিভিন্ন ধরণের পেশার কাজকে গুরুত্ব দেবে। আর এমন গ্রাম খুব কমই রয়েছে যেখানে এই ১৮ টি পেশার মানুষ নেই। এর মধ্যে রয়েছেন যারা কাঠের কাজ করেন , কাঠের খেলনা প্রস্তুতকারী কারিগর, লোহার কাজ করেন যে কর্মকার, সোনার গহনা প্রস্তুতকারক স্বর্ণকার, মাটির কাজ করেন যে কুম্ভকার, মূর্তি তৈরি করেন যে ভাস্কর, জুতার কারিগর, মানুষের বাড়ি তৈরির কাজ করেন যে রাজমিস্ত্রি, চুল কাটেন যে ক্ষৌরকার , যিনি কাপড় কাচেন , পোষাক প্রস্তুতকারক , মালা প্রস্তুতকারক, মাছ ধরার জাল প্রস্তুতকারক, নৌকা প্রস্তুতকারক — এরকম বিভিন্ন ধরনের পেশার মানুষদের এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনায় সরকার ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
অনেক বছর আগে, তা প্রায় ৩০-৩৫ বছর হবে আমি একবার ইউরোপের ব্রাসেলস-এ গিয়েছিলাম। সেখানে কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় পেলে আমি যার কাছে গিয়ে ছিলাম, তিনি আমাকে একটি গহনা প্রদর্শনী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তাঁকে কৌতুহলবশত জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এখানে এসব জিনিসের বাজার কেমন? তিনি যে জবাব দিয়েছিলেন, সেটি আমার জন্য বড় বিস্ময় ছিল। তিনি বলেছিলেন, স্যার, এখানে মেশিনে তৈরি গহনার চাহিদা সবচাইতে কম। অনেক বেশি টাকা দিয়েও মানুষ হাতে তৈরি গহনা কিনতে বেশি পছন্দ করেন। আপনারা সবাই নিজেদের হাতে, নিজেদের পেশাগত দক্ষতায় যে সুক্ষ্ম কাজ করেন, গোটা বিশ্বে তার চাহিদা ক্রমবর্ধমান। আজকাল আমরা দেখি যে অনেক বড় কোম্পানি তাদের পণ্য তৈরি করার জন্য অনেক ছোট ছোট কোম্পানিকে বরাত দেয়। সারা বিশ্বে এটা একটা অনেক বড় শিল্পোদ্যোগ। আউটসোর্সিং-এর কাজ আজ আমাদের এই বিশ্বকর্মা বন্ধুদের কাছেও যাওয়া উচিত। আপনাদেরকেও বড় সরবরাহ শৃঙ্খলের অঙ্গ করে নেওয়া উচিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে এই বিশাল সরবরাহ শৃঙ্খলের অংশ হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছি। আমরা আপনাদের দরজায় বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলির সামর্থ্যকে পৌঁছে দিতে চাই। তারা আপনাদের দরজায় এসে দাঁড়াবে, কড়া নাড়বে। কাজেই বুঝতে পারছেন, এই প্রকল্পটি আমাদের বিশ্বকর্মা সঙ্গীদের আধুনিক যুগে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা, তাঁদের সামর্থ্য বৃদ্ধির একটি প্রয়াস।
বন্ধুগণ,
বদলে যাওয়া এই সময়ে আমাদের বিশ্বকর্মা ভাই-বোনেদের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামের ব্যবহার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশ্বকর্মা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার আপনাদের সকলকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোর দিয়েছে। যেহেতু আপনারা প্রত্যেকেই পরিশ্রম করে প্রতিদিনের রোজগার প্রতিদিন করেন, সেজন্য এই প্রশিক্ষণের সময় আপনাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। আধুনিক সরঞ্জাম কেনার জন্য আপনাদেরকে ১৫ হাজার টাকার ‘টুলকিট ভাউচার’ও দেওয়া হবে। আপনারা যে পণ্য তৈরি করবেন, সেগুলির ব্র্যান্ডিং এবং প্যাকেজিং থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে সরকার আপনাদের সব ধরনের সাহায্য করবে। এর পরিবর্তে সরকার চায় যে আপনারা যেন টুলকিট সেই দোকান থেকেই কেনেন যাদের জিএসটি নিবন্ধিকরণ আছে। এক্ষেত্রে কালোবাজারি চলবে না। আর আমার অনুরোধ যে এই সরঞ্জামগুলি যেন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-ই হয়।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
আপনারা যদি নিজের ব্যবসা বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে যাতে আপনাদের প্রারম্ভিক পুঁজির সমস্যা না হয়, সেদিকেও সরকার লক্ষ্য রেখেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বকর্মা সঙ্গীদের কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের কাছ থেকে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি চাইছে না তার মানে আপনাদের হয়ে মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে। কোনরকম গ্যারান্টি ছাড়াই ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন, আর এই ঋণ পরিশোধে আপনাদের খুব কম সুদ দিতে হবে। সরকারের এই ব্যবস্থা আপনাদের প্রথমবার প্রশিক্ষণ এবং প্রথমবার নতুন সরঞ্জাম কেনার জন্য ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। আর আপনারা যখন রোজগার করে এই টাকা পরিশোধ করে দেবেন, তখন আপনাদের আরও ২ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হবে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
আজ দেশে সেই সরকার রয়েছে যে সরকার বঞ্চিতদের অগ্রাধিকার দেয়। আমাদের সরকারই প্রথমবার ‘এক জেলা, এক পণ্য’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক জেলার বিশেষ পণ্যগুলি উৎপাদনে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আমাদের সরকারই প্রথমবার ঠেলাওয়ালা, পথের দু’পাশে বসে থাকা হকার আর রেলপথের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ‘পিএম স্বনিধি যোজনা’র মাধ্যমে অর্থ ঋণ দিয়ে সাহায্য করেছে। তাঁদের জন্য ব্যাঙ্কের দরজা খুলে দিয়েছে। আমাদের সরকারই স্বাধীনতার পর প্রথমবার ‘বাঞ্জারা’ এবং অন্যান্য যাযাবর জনজাতির স্বার্থে কাজ করেছে। আমাদের সরকারই স্বাধীনতার পর প্রথমবার দিব্যাঙ্গজনদের জন্য প্রত্যেক স্তরে, প্রতিটি স্থানে বিশেষ পরিষেবার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। যাঁদেরকে কেউ কখনও গুরুত্ব দিত না, সেরকম গরীবদের জন্য এই সরকার কাজ করছে। তাঁদের মতো গরীব পরিবারের সন্তান এই মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাঁদের সেবকে পরিণত হয়েছে। তাঁদের সম্মানজনক জীবনযাপন সুনিশ্চিত করতে, সব ধরনের পরিষেবা তাঁদের দরজায় পৌঁছে দিতে মোদী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্যের যখন মিলন হয়, তখন কেমন আশ্চর্যসাধন হতে পারে তা গোটা বিশ্ব এবার জি-২০ হস্তশিল্প বাজারেও দেখেছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যত বিদেশি অতিথিরা এসেছিলেন, তাঁদেরকে উপহার হিসেবে আমরা আমাদের বিশ্বকর্মা সাথীদের তৈরি করা পণ্যই উপহার দিয়েছি। আজ ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্রের প্রতি এই সমর্পণ আমাদের প্রত্যেকের, গোটা দেশের দায়িত্ব। আমরা কি এখন একটু নিস্তেজ হয়ে পড়েছি? আমি বলার পরেই আপনারা তালি বাজাচ্ছেন। আপনাদের নিজেদের যখন তালি বাজানোর কথা তখন বাজাচ্ছেন না। আপনারা বলুন, আমাদের দেশে যত জিনিস আমাদের এই কারিগররা তৈরি করেন, আমাদের এই ছোট ছোট হস্তশিল্পীরা তৈরি করেন, তা বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়া উচিত কি উচিত না? বিশ্বের বাজারে বিক্রি হওয়া উচিত কি উচিত না? তাহলে আগে আমাদের প্রথমেই ‘ স্থানীয় পণ্যের জন্য সোচ্চার’ হতে হবে, আর তারপর স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
সামনেই গণেশ চতুর্থী, ধনতেরাস, দীপাবলী সহ অনেক উৎসব-অনুষ্ঠান আসছে। এই দিনগুলিতে আমার প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে আবেদন যে আপনারা ‘লোকাল’ জিনিস কিনবেন। আর যখন আমি ‘লোকাল’ কেনার কথা বলছি তখন অনেকেরই হয়তো মনে হচ্ছে যে দীপাবলীর প্রদীপ ছাড়া আর কিছু ‘লোকাল’ কেনার নেই। আরে ভাই, অনেক ছোটখাটো জিনিস থেকে শুরু করে বড় বড় জিনিস, যাতে আমাদের এই বিশ্বকর্মা সাথীদের হাতে ছোঁয়া আছে, তাঁদের দক্ষতার ছাপ আছে, ভারতের মাটি এবং ঘামের গন্ধ আছে, আমি সেগুলির কথা বলছি।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
আজকের উন্নয়নশীল ভারত প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার নিজস্ব পরিচয় তৈরি করছে। কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি যে কিভাবে ‘ভারত মণ্ডপম’ নিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসা হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র – ‘যশোভূমি’ এই পরম্পরাকে আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই ‘যশোভূমি’র প্রত্যক্ষ বার্তা হল আমাদের এই ভূমিতে যা উৎপন্ন হবে তা থেকে শুধু যশলাভই হবে। এই কেন্দ্রটি ভবিষ্যতের ভারতকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
ভারতের বড় বড় আর্থিক সামর্থ্য, বড় বাণিজ্যিক শক্তিকে তুলে ধরার জন্য ভারতের রাজধানীতে যে মানের বিক্রয়কেন্দ্র ও প্রদর্শনশালা হওয়া উচিত, এটি তেমনই একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে ‘মাল্টি-মোডাল কানেক্টিভিটি’ আর ‘পিএম গতি শক্তি’র আশ্চর্য মিলন ঘটেছে। আপনারা দেখুন এটি বিমানবন্দরের খুবই কাছে। এর সঙ্গে বিমানবন্দরকে যুক্ত করার জন্য মেট্রো পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। আজ এখানে মেট্রো স্টেশনেরও উদ্বোধন হয়েছে। এই মেট্রো স্টেশনটি সরাসরি এই কমপ্লেক্সের সঙ্গে যুক্ত। এই মেট্রো সুবিধা থাকার ফলে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের অনেক সময় সাশ্রয় হবে। এখানে যাঁরা আসবেন তাঁদের জন্য রাতে থাকার, মনোরঞ্জনের, সব রকম কেনাকাটার এবং পর্যটনের মতো সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত একটি গোটা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে উন্নয়ণের এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থে নতুন নতুন ক্ষেত্র বিকশিত হয়। আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে কেউ এত বড় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্পর্কে ভাবতেও পারতেন না। আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে কেউ এরকম শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমের কথা কল্পনাও করতে পারতেন না। এখন বিশ্বে আরও একটি বড় ক্ষেত্র গড়ে উঠছে যেখানে ভারতের জন্য অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রটি হল কনফারেন্স ট্যুরিজমের। গোটা বিশ্বে আজ এই কনফারেন্স ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি ২৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। প্রত্যেক বছর বিশ্বে ৩২ হাজারেরও বেশি বড় বড় প্রদর্শনীর আয়োজন হয়, এক্সপো-র আয়োজন হয়। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, যে দেশের জনসংখ্যা ২ থেকে ৫ কোটি, তারাই এই ধরনের সুবিধা তৈরি করে উপার্জন করছে। আমাদের তো ১৪০ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে। যাঁরা আসবেন, তাঁরা অনেক লাভবান হবে্ন। অনেক বড় বাজার রয়েছে আমাদের। কনফারেন্স ট্যুরিজমের খাতিরে যাঁরা আসেন, তাঁরা সাধারণ পর্যটকদের থেকে অনেক বেশি, অনেকগুণ বেশি টাকা খরচ করেন। এত বড় ইন্ডাস্ট্রিতে ভারতের অংশীদারিত্ব আজ মাত্র ১ শতাংশ। ভাবুন! মাত্র ১ শতাংশ। ভারতেরই অনেক বড় বড় কোম্পানি প্রত্যেক বছর তাদের এই ধরনের অনুষ্ঠান দেশের বাইরে আয়োজন করাতে বাধ্য হয়। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে দেশ ও বিশ্বের কত বড় বাজার আমাদের সামনে রয়েছে। এখন আজকের নতুন ভারত এই কনফারেন্স ট্যুরিজমের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করার কাজকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
আর বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই জানেন, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম সেখানেই হয় যেখানে অ্যাডভেঞ্চারের নানারকম সুবিধা থাকে। মেডিকেল ট্যুরিজম সেখানেই হয়, যেখানে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা থাকে। স্পিরিচ্যুয়াল ট্যুরিজম সেখানে হয়, যেখানে ঐতিহাসিক, ধার্মিক এবং আধ্যাত্মিক গতিবিধি থাকে। হেরিটেজ ট্যুরিজমও সেখানেই হয় যেখানে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বাহুল্য থাকে। একইভাবে, কনফারেন্স ট্যুরিজমও সেখানেই হয় যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য, বৈঠকের জন্য, প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা থাকে। সেজন্য ‘ভারত মণ্ডপম’ আর ‘যশোভূমি’র মতো এই ধরনের কেন্দ্রগুলি আমরা গড়ে তুলছি যা এখন দিল্লিকে কনফারেন্স ট্যুরিজমের সর্ববৃহৎ হাবে পরিণত করতে চলেছে। ফলে, শুধু ‘যশোভূমি’ কেন্দ্রেই কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ‘যশোভূমি’ ভবিষ্যতে এমন একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে যেখানে গোটা বিশ্বের মানুষ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, মিটিং, একজিবিশন – এসব কিছু আয়োজনের জন্য ভিড় করবেন।
আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাঁরা একজিবিশন এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করেন, সেরকম প্রত্যেককে আমরা ভারতে, দিল্লিতে এই ‘যশোভূমি’র মতো কেন্দ্রগুলিতে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমি দেশের, পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ – প্রত্যেক প্রান্তের চলচ্চিত্র শিল্প এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বিশিষ্ট জনেদেরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা নিজেদের সমস্ত পুরস্কার সমারোহ, চলচ্চিত্র উৎসব এখানেই আয়োজন করুন। চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে আপনাদের যে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, তারও আয়োজন এখানে করতে পারবেন। আমি সমস্ত আন্তর্জাতিক ইভেন্ট সংস্থা ও প্রদর্শনী ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বন্ধুদেরকেও ‘ভারত মণ্ডপম’ এবং ‘যশোভূমি’র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানাই।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘ভারত মণ্ডপম’ ও ‘যশোভূমি’ একদিন আমাদের দেশের আতিথেয়তা, ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব এবং ভারতের স্থাপত্য-সৌকর্যের প্রতীক হয়ে উঠবে। ‘ভারত মণ্ডপম’ ও ‘যশোভূমি’ উভয়েই ভারতীয় সংস্কৃতি এবং অত্যাধুনিক পরিষেবা - এই দুইয়ের সঙ্গম। আজ এই দুই অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিষ্ঠান নতুন ভারতের যশোগাথাকে দেশের নানা প্রান্ত এবং বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে। এই ‘ভারত মণ্ডপম’ ও ‘যশোভূমি’ নতুন ভারতের সমস্ত আকাঙ্ক্ষার প্রতিবিম্ব তুলে ধরবে, যাঁরা নিজেদের জন্য সবচাইতে উন্নত পরিষেবা চান, তাঁদেরকে সেই পরিষেবা দেবে।
বন্ধুগণ,
আমি আজ যা বলছি সেই শব্দগুলি লিখে রাখুন। ভারত আর থামবে না। আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে, নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করতে হবে আর সেই নতুন লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়নের পরেও চুপ করে বসলে চলবে না। আর এই সবকিছুই আমাদের সকলের পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব হবে। দেশকে ২০৪৭ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের সামনে মাথা উচু করে ‘উন্নত ভারত’ হিসেবে গড়ে তোলার সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই সময়টি আমাদের প্রত্যেকের জন্য কাজে লেগে পড়ার সময়। আমাদের বিশ্বকর্মা সাথীরা আমাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র গর্ব। আর এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র এই গর্বকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার একটি অসাধারণ মাধ্যম হয়ে উঠবে। আরও একবার আমার সমস্ত বিশ্বকর্মা সাথীদের এত বড় আশাবাদী প্রকল্পের জন্য আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই নতুন কেন্দ্র ‘যশোভূমি’ যেন ভারতের যশের প্রতীক হয়ে ওঠে, দিল্লির গৌরব আরও বাড়ায়, এই মঙ্গলকামনা করে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নমস্কার।