বিহারের রাজ্যপাল শ্রী ফাগু চৌহ্বানজী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারজী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী পীযুষ গোয়েলজী, শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদজী, শ্রী গিরিরাজ সিংজী, নিত্যানন্দ রায়জী, শ্রীমতী দেবশ্রী চৌধুরীজী, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদীজী, অন্যান্য মন্ত্রীগণ, সাংসদ এবং বিধায়ক গণ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে যাঁরা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আমার বিহারের ভাই ও বোনেরা।
বন্ধুগণ, আজ বিহারে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি ইতিহাস রচিত হলো। কোসী মহাসেতু এবং কিউল ব্রিজের পাশাপাশি বিহারে রেল যাতায়াত রেল পথের বৈদ্যুতিকীকরণ এবং রেলওয়েতে মেক-ইন-ইন্ডিয়াকে উৎসাহ প্রদান, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এক ডজন প্রকল্পের আজ উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস হলো। প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বিহারের রেল নেটওয়ার্ক যেমন শক্তিশালী হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব ভারতের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও এর মাধ্যমে শক্তিশালী হবে। বিহার সহ পূর্ব ভারতের কোটি কোটি রেল যাত্রীদের এই নতুন এবং আধুনিক পরিষেবাগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, গঙ্গা, কোসী ও সোন নদীর শাখা প্রশাখা বিধৌত এই বিহারের অনেক অংশ, এই নদীগুলির জন্যই পরস্পর বিচ্ছিন্ন। বিহারের প্রায় প্রত্যেক অংশের মানুষকে এই প্রবহমান নদীগুলির কারণে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে অনেক দীর্ঘ পথ পার হতে হয়। ন
নীতীশজী যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, পাসওয়ানজী যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই এই সমস্যা দূর করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারপর একটা দীর্ঘ সময় এসেছে যখন এই লক্ষ্যে তেমন কাজ করা হয়নি। ফলে বিহারের কোটি কোটি মানুষের এই সমস্যার সমাধান কল্পে একটি নতুন সংকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। বিগত ৫/৬ বছরে একের পর এক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ, চারবছর আগে উত্তর এবং দক্ষিণ বিহারের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টিকারী দুটি মহাসেতুর কাজ একটি পাটনায়, আর অন্যটি মুঙ্গেরে শুরু করা হয়েছিল। এই দুটো সেতুর উদ্বোধনের পর থেকেই উত্তর বিহার এবং দক্ষিণ বিহারের মধ্যে জনগণের আসা-যাওয়া আরও সহজ হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা কয়েক দশক ধরে উন্নয়নের অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত ছিল, সেই অঞ্চলগুলির উন্নয়নে নতুন গতি এসেছে। আজ মিথিলা ও কোসী অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি মহাসেতু আর সুপৌল-আসনপুর কুপহা রেলপথটিও বিহারবাসীর পরিষেবায় সমর্পিত হলো।
পাশাপাশি প্রায় সাড়ে আট দশক আগে এক ভয়ানক ভূমিকম্প মিথিলা এবং কোসী ক্ষেত্রটিকে আলাদা করে দিয়েছিল। আজ এতদিন পর আমরা আবার এই দুটো অঞ্চলকে এই মহাসেতুর মাধ্যমে যুক্ত করতে পেরেছি, তাও করোনা-র মতো বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে। আমাকে বলা হয়েছে যে এর শেষ পর্যায়ের কাজে অন্যান্য রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। এমনিতে এই মহাসেতু আর এই প্রকল্প শ্রদ্ধেয় অটলজী এবং নীতীশবাবুর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। ২০০৩ সালে যখন নীতীশজী রেলমন্ত্রী ছিলেন এবং অটলজী প্রধানমন্ত্রী তখনই নতুন কোসী রেললাইন প্রকল্পের পরিকল্পনা রচিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশই ছিল মিথিলা এবং কোসীর জনগণের সমস্যা দূর করা। এই ভাবনা নিয়েই ২০০৩ সালে অটলজী এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই অটলজীর সরকার চলে যায়। তারপর কোসী রেল লাইন প্রকল্পের গতিও তেমনই শ্লথ হয়ে যায়। সরকারের মনে যদি মিথিলা অঞ্চলের জন্য কোনো ভাবনা থাকত, বিহারের জনগণের সমস্যা নিয়ে কোনো ভাবনা থাকত, তাহলে কোসী রেল লাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো। এর মাঝে রেল মন্ত্রক কার কার হাতে ছিল এবং কাদের সরকার ছিল সে বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। কিন্তু সত্যি এটাই, যে গতিতে কাজ চলছিল যদি ২০০৪ সালের পর সেই গতিতেই কাজ হতো তাহলে আজকের এই দিন নাজানি কবে আসতো, আরও কত বছর লেগে যেত, কত দশক লেগে যেত, হয়তো প্রজন্ম পেরিয়ে যেতো। কিন্তু আমরা দৃঢ় নিশ্চয়তার সঙ্গে এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর যখন সরকারের দৃঢ় নিশ্চয়তা থাকে আর নীতীশজীর মতো কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তখন কী করা সম্ভব নয়! মাটি আটকে রাখার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুপৌল-আসনপুর কুপহা রুটের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে যে ভীষণ বন্যা এসেছিল সেই সময় এই প্রকল্প অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা সত্বেও এই কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। অবশেষে এই কোসী মহাসেতু এবং এই সুপৌল-আসনপুর কুপহা রুট আজ বিহারের জনগণের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
আজ কোসী মহাসেতু হয়ে সুপৌল-আসনপুর কুপহা-র মাঝে ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়ার ফলে সুপৌল, অররিয়া এবং সহরসা জেলার মানুষের অনেক লাভ হবে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে উত্তর পূর্ব ভারতের বন্ধুদের জন্য একটি বিকল্প রেল পথও তৈরি হয়ে যাবে। কোসী এবং মিথিলা অঞ্চলের জন্য এই মহাসেতুর সুবিধা যতটা আনন্দের বিষয় এই গোটা এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পোদ্যোগ এবং কর্মসংস্থানও ততটাই উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, বিহারের জনগণ এটা খুব ভালোভাবেই জানেন যে বর্তমানে নির্মিলী থেকে সরায়গঢ় পর্যন্ত রেলপথে যাত্রা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়। সেজন্য দ্বারভাঙ্গা-সমস্তিপুর-খগড়িয়া-মানসি-সহরসা এতটা পথ ঘুরে যেতে হয়। এখন সেদিন আর দূরে নেই, যখন বিহারের মানুষকে এই ৩০০ কিলোমিটার সফর আর করতে হবে না। ৩০০ কিলোমিটারের এই দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটারে পার হওয়া যাবে। ৮ ঘন্টা রেল যাত্রা মাত্র আধাঘম্টায় সম্পূর্ণ করা যাবে। অর্থাৎ যাত্রাপথের দূরত্ব ও সময় বাঁচানোর পাশাপাশি এই প্রকল্পের সাফল্য বিহারের জনগণের অনেক অর্থও সাশ্রয় করবে।
বন্ধুগণ, কোসী মহাসেতুরই মতো কিউল নদীতে নতুন রেল ইলেকট্রনিক ইন্টার লকিং পরিষেবা শুরু হওয়ার ফলে এই গোটা পথে রেল পরিষেবা এবং গতি দুটোই বাড়তে চলেছে। এই নতুন রেল সেতু নির্মাণের ফলে ঝাঁঝাঁ থেকে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন পর্যন্ত মেন লাইনে এখন ট্রেনগুলি ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগে ধাবিত হবে। ইলেকট্রনিক ইন্টার লকিং চালু হওয়ায় হাওড়া-দিল্লি মেইন লাইনে ট্রেনগুলির আসা-যাওয়া অনেক সহজ হবে। অনাবশ্যক বিলম্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং রেল যাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ হবে।
বন্ধুগণ, বিগত ৬ বছরে ভারতীয় রেলকে নতুন ভারতের আকাঙ্খাগুলি এবং আত্মনির্ভর ভারতের প্রত্যাশাগুলির কথা ভেবে নতুনভাবে সংস্কার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ ভারতীয় রেল, আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। আজ ভারতীয় রেলের ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্ক-কে মনুষ্যবিহীন লেভেল ক্রসিং থেকে মুক্ত করে আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ করা হয়েছে। আজ ভারতীয় রেলের গতি অনেক দ্রুত হয়েছে। আজ আত্মনির্ভরতা এবং আধুনিকতার প্রতীক, “বন্দে ভারত”-এর মতো ভারতে নির্মিত ট্রেনগুলি রেল নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে উঠছে। আজ ভারতের যে অঞ্চলগুলিতে রেল ছিল না, সেই অঞ্চলগুলিকে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য, রেল পথের প্রশস্তিকরণ এবং বৈদ্যুতিকীকরণ-এর ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করছে।
বন্ধুগণ, রেলওয়ের আধুনিকীকরণের এই ব্যাপক প্রচেষ্টা দ্বারা সব থেকে বেশি লাভবান হবে বিহার এবং তার সঙ্গে গোটা পূর্ব ভারত। বিগত কয়েক বছর ধরে মেক-ইন-ইন্ডিয়া-কে উৎসাহ যোগানোর জন্য মাধেপুরা-তে ইলেকট্রিক লোকো ফ্যাক্টরি এবং মঢ়ৌরা-তে ডিজেল লোকো ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হয়েছে। এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমেই বিহারে প্রায় ৪৪,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এটা শুনে প্রত্যেক বিহারবাসী গর্বিত হবেন যে আজ বিহারে ১২,০০০ হর্স পাওয়ারের সব থেকে শক্তিশালী বিদ্যুৎ ইঞ্জিন নির্মিত হচ্ছে। বারাউনি-তে বিদ্যুৎচালিত ইঞ্জিনগুলির মেরামতি ও দেখাশোনার জন্য বিহারে প্রথম লোকো শেডও কাজ করতে শুরু করেছে। বিহারের জন্য আরেকটি বড় খবর হলো যে আজ বিহারে রেল নেটওয়ার্কের প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। বিগত ৬ বছরেই বিহারে ৩,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে। আজ এর সঙ্গে আরও ৫টি প্রকল্প যুক্ত হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিহারে যে ধরণের পরিস্থিতি ছিল সেখানে রেলওয়ে জনগণের আসা-যাওয়ার একটি বড় উপায় ছিল। আজ বিহারের রেলওয়ের পরিস্থিতি শুধরানো কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম। আজ বিহারে যত দ্রুত গতিতে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের কাজ চলছে তার প্রেক্ষিতে আমি একটি তথ্য দিতে চাই। ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী ৫ বছরে বিহারে প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার রেল লাইন কমিশন হয়েছে। সহজ শব্দে যদি বলি, ২০১৪-র আগে ৫ বছরে মাত্র ৩২৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন পাতা হয়েছিল। ২০১৪ সালের পর, ৫ বছরে বিহারে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রেললাইন কমিশন হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ থেকেও বেশি নতুন রেললাইন গড়ে উঠেছে। এখন প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ হাজিপুর-ঘৌসবর-বৈশালী নতুন রেললাইন চালু হওয়ার জন্য বৈশালীনগর, দিল্লি এবং পাটনা থেকেও সরাসরি রেল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এই পরিষেবার মাধ্যমে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্প অনেক শক্তিশালী হবে। আমাদের যুব সম্প্রদায়ের বন্ধুদের নতুন কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। এভাবে ইসলামপুর-নটেসর নতুন রেল লাইনের মাধ্যমেও জনগণের অনেক উপকার হবে। বিশেষ করে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষদের এই নতুন পরিষেবা হওয়ায় অনেক সুবিধা হবে।
বন্ধুগণ, আজ দেশে মালগাড়ি এবং যাত্রীগাড়ি উভয়ের জন্য আলাদা আলাদা ট্রাক গড়ে তোলার ব্যাপক ব্যবস্থা অর্থাৎ ডেডিকেটেট ফ্রেট করিডোর বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে বিহারের প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দীর্ঘ ডেডিকেটেট ফ্রেট করিডোর তৈরি হচ্ছে যা অতি দ্রুত সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রেনগুলি বিলম্বে আসা-যাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি পণ্য পরিবহণেও অনেক সময় সাশ্রয় হতে চলেছে।
বন্ধুগণ, যেভাবে করোনার এই সঙ্কটকালে রেলওয়ের কাজ এগিয়ে চলেছে, যেভাবে রেলওয়ে কাজ করছে তার জন্য আমি ভারতীয় রেলের লক্ষ লক্ষ কর্মচারী সেই বন্ধুদের বিশেষ প্রশংসা জানাই। দেশের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক-কে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিনরাত এক করে কাজ করছে। স্থানীয় স্তরে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও রেলওয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। করোনা কালে ভারতীয় রেলের যাত্রী পরিষেবা কিছু সময়ের জন্য থেমে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু রেলকে সুরক্ষিত এবং আধুনিক করে তোলার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেছে। দেশের প্রথম “কিষান রেল”, অর্থাৎ রেল লাইনে চলমান কোল্ড স্টোরেজও বিহার এবং মহারাষ্ট্রের মধ্যে এই করোনা কালেই চালু করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, যদিও এই কর্মসূচীটি রেলওয়ের, কিন্তু রেলওয়ের পাশাপাশি এটি জনগণের জীবনকে সহজ করার আর উন্নত করার বিবিধ প্রচেষ্টার আয়োজন স্বরূপ। সেজন্য আমি আপনাদের সামনে আজ আরেকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই, যা বিহারের জনগণের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। নীতীশজীর নেতৃত্বে সরকার গঠনের আগে পর্যন্ত বিহারে হাতে গোনা দু-একটা মেডিকেল কলেজ ছিল। এর ফলে বিহারের রোগীদের কঠিন সমস্যা হতো পাশাপাশি এই রাজ্যের মেধাবী যুবক-যুবতীদের ডাক্তারি পড়ার জন্য অন্য রাজ্যে যেতে হতো। আজ বিহারে ১৫টির বেশি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলি বিগত কয়েক বছরে হয়েছে। কয়েক দিন আগেই বিহারে একটি নতুন এআইআইএমএস স্থাপনের প্রকল্পও মঞ্জুর করা হয়েছে। এই এআইআইএমএস দ্বারভাঙ্গায় গড়ে তোলা হবে। এই নতুন এআইআইএমএস-এ ৭৫০ শয্যা-র নতুন হাসপাতাল তো গড়ে উঠবেই, এর মধ্যে এমবিবিএস-এর ১০০টি এবং নার্সিং-এর ৬০টি আসনও থাকবে। দ্বারভাঙ্গায় এই এআইআইএমএস গড়ে উঠলে এর মাধ্যমে হাজার হাজার নতুন কর্ম সংস্থানও সৃষ্টি হবে।
বন্ধুগণ, দেশের কৃষকদের কল্যাণের লক্ষ্যে কৃষি সংস্কারের লক্ষ্যে গতকাল দেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিল ছিল। গতকাল বিশ্বকর্মা জয়ন্তীর দিন লোকসভায় ঐতিহাসিক কৃষি সংস্কার আইন পাস হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আমাদের অন্নদাতা কৃষকদের অনেক বন্ধন থেকে মুক্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম কৃষকদের কৃষি কার্যে একটি নতুন স্বাধীনতা এনে দেওয়ার কাজ শুরু হল। তাঁদেরকে স্বাধীন করা হল। এই সংস্কারের মাধ্যমে কৃষকদের নিজস্ব উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিকল্প সৃষ্টি হবে, আরও বেশি সুযোগ আসবে। আইনগুলি পাস হওয়ার জন্য আমি সারা দেশের কৃষকদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কৃষক এবং গ্রাহকের মাঝে যে দালালরা থাকে, যাঁরা কৃষকদের রোজগারের অনেকটা অংশ নিজেদের পকেটে ঢোকায়, তাঁদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই আইন আনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এই আইন কৃষকদের জন্য রক্ষাকবচ হয়ে এসেছে। কিন্তু কিছু মানুষ যাঁরা দশকের পর দশক ধরে ক্ষমতা ভোগ করছিলেন, দেশে রাজত্ব করছিলেন, তাঁরা কৃষকদের এই বিষয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। তাঁরা কৃষকদের মিথ্যে কথা বলছেন।
বন্ধুগণ, নির্বাচনের সময় কৃষকদের প্রভাবিত করার জন্য তাঁরা বড় বড় কথা বলেন, লিখিতভাবেই বলেন। নিজেদের ইস্তেহারে সেসব ঘোষণা লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু নির্বাচনের পর তাঁরা ভুলে যান। আর আজ যখন সেই বিষয়টাই এনডিএ সরকার করছে যা এত দশক ধরে দেশ শাসনকারী রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে ছিল সেটিই যখন কৃষকদের হিতের প্রতি সমর্পিত আমাদের সরকার করছে তখন তাঁরাই নানারকমভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন। যে এপিএমসি আইন নিয়ে তাঁরা এখন রাজনীতি করছেন কৃষি বাজারের বিভিন্ন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের যাঁরা বিরোধিতা করছেন সেই পরিবর্তনের কথা তাঁরাই নিজেদের ইস্তেহারে বার বার লিখেছেন। কিন্তু এখন যখন এনডিএ সরকার এই পরিবর্তন এনেছে তখন তাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন, কৃষকদের বিভ্রান্ত করার পথে নেমেছেন। নিছকই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে তাঁরা একের পর এক উদাহরণ সামনে নিয়ে আসছেন। কিন্তু তাঁরা এটা ভুলে যাচ্ছেন যে দেশের কৃষকরা কতটা জাগ্রত। তাঁরা এটা দেখতে পারছে যে কিছু মানুষ কৃষকরা যে নতুন সুযোগ পাচ্ছেন সেগুলিকে পছন্দ করছে না। কৃষকরা এটাও দেখতে পারছেন যে তাঁরা এই সময়ে দালালদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বন্ধুগণ, এরাই আগে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে বড় বড় কথা বলতেন, কিন্তু কখনো নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন নি। কৃষকদের তাঁরা যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাঁরা সেগুলি পুরণ করেন নি বলেই বর্তমান এনডিএ সরকার সেগুলি পূরণ করেছে। এখন এটা অপপ্রচার করা হচ্ছে যে সরকার কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের লাভ থেকে বঞ্চিত করবে। তারা আরও মনগড়া কথা বলছে যে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার আর ধান, গম কিনবে না। এটা মিথ্যে কথা, ভুল কথা, তাঁরা কৃষকদের ধোকা দিচ্ছে। আমাদের সরকার কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে কৃষকদের যথোচিত মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ। আগেও ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সরকারি ক্রয় আগের মতোই জারি থাকবে। কোনো ব্যক্তি নিজের উৎপাদিত ফসল, তা তিনি যাই উৎপাদন করুন না কেন বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বিক্রি করতে পারেন, যেখানে ইচ্ছে বিক্রি করতে পারেন। তাঁরা যদি কাপড় তৈরি করেন সেই কাপড় তাঁরা যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারেন। তাঁরা যদি বাসন তৈরি করেন সেই বাসনও তাঁরা যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারেন। যাঁরা জুতো তৈরি করেন তাঁরাও যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারেন। শুধু আমার কৃষক ভাই-বোনদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল, তাঁদেরকে দালালদের মাধ্যমে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। এখন নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত ফসল দেশের যে কোনো বাজারে নিজেদের পছন্দ মতো দামে বিক্রি করতে পারবেন। এটা আমাদের সমবায়গুলি, কৃষি উৎপাদক সঙ্ঘ এফপিও গুলি এবং বিহারে প্রচলিত জীবিকার মতো মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি সোনালী সুযোগ নিয়ে এসেছে।
বন্ধুগণ, নীতীশজীও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। তিনি ভালোভাবেই বোঝেন যে এপিএমসি আইনের মাধ্যমে কৃষকদের কী কী ক্ষতি হচ্ছিল। সেজন্যই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের শাসনকালের গোড়ার দিকেই নীতীশজী বিহার থেকে এই আইনকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। যে কাজ কখনও বিহার করে দেখিয়েছে, আজ গোটা দেশ সেই পথে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, কৃষকদের জন্য গত ৬ বছরে এনডিএ আসনে যত কাজ করা হয়েছে তা আগে কখনো করা হয়নি। কৃষকদের একেকটি সমস্যা বুঝে নিয়ে সেগুলি সমাধানের জন্য আমাদের সরকার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছে। দেশের কৃষকদের বীজ কেনা, সার কেনার মতো ছোট ছোট প্রয়োজনগুলি বাস্তবায়নের জন্য যাতে কারো কাছ থেকে ঋণ না নিতে হয় একথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী কিষান কল্যাণ যোজনা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশের ১০ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি জমা করা হয়েছে, মাঝে কোনো দালাল ছিল না। কৃষকদের জলের সমস্যা দূর করতে দশকের পর দশক ধরে অসম্পূর্ণ থাকা সেচ প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনার মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। তেমনি ইউরিয়া, যার জন্য লম্বা লম্বা লাইনের দাঁড়াতে হতো, যা কৃষকের খেতে কম পৌঁছতো আর ঘুরপথে কারখানাগুলিতে বেশি পৌঁছে যেতো। এখন সেই ইউরিয়াকে ১০০ শতাংশ নিম-কোটিং করে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। আজ দেশে বৃহৎস্তরে কোল্ড স্টোরেজের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পগুলিতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষকদের গবাদি পশুকে অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার জন্য সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, মুরগি পালনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য, মধু উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বিকল্প প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ, আমি আজ দেশের কৃষকদের অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে নিজের কথা বলতে চাই, স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। আপনারা কোনোভাবে বিভ্রান্ত হবেন না। এই মানুষদের থেকে দেশের কৃষকদের সতর্ক থাকতে হবে। এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকতে হবে। যাঁরা দশকের পর দশক ধরে দেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল আর আজ কৃষকদের মিথ্যে কথা বলছে। তাঁরা কৃষকদের রক্ষার জন্য ঢাক পেটাচ্ছে, কিন্তু আসলে কৃষকদের অনেক বন্ধনে বেধে রাখতে চায়। তাঁরা দালালদের স্বার্থ দেখছে, তাঁরা কৃষকদের রোজগারকে মাঝপথেই যারা লুন্ঠন করতো তাদের সঙ্গ দিচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য দেশের যে কোনো স্থানে, যে কাউকে বিক্রি করার স্বাধীনতা প্রদান একটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। একবিংশ শতাব্দীর ভারতের কৃষক বন্ধনের মধ্যে থেকে নয়, ভারতের কৃষকরা মুক্তমনে চাষের কাজ করবে। যেখানে মন চাইবে নিজেদের ফসল বিক্রি করবে। যেখানে বেশি পয়সা পাবে সেখানেই বিক্রি করবে, কোনো দালালদের মুখাপেক্ষী থাকবে না আর নিজেদের ফসল এবং আয় বাড়াবে। এটি দেশের প্রয়োজন এবং সময়ের দাবিও বটে।
বন্ধুগণ, কৃষক থেকে শুরু করে মহিলা, নব যুব-যুবতী প্রত্যেকের জীবনকে দেশের বিকাশের স্বার্থে ক্ষমতায়িত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আজ যতগুলি প্রকল্প জাতির উদ্দেশে সমর্পণ করা হলো সেগুলি দায়িত্বেরই একেকটি অংশ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন এবং শিলান্যাস হলো, সেগুলি বিহারের জনগণ, এখানকার যুব সম্প্রদায়, এখানকার মহিলাদের জন্য অত্যন্ত লাভদায়ক হবে।
বন্ধুগণ, করোনার এই সঙ্কটকালে আমাদের সবাইকে খুব সামলে চলতে হবে। সামান্য অবহেলা আপনাদের এবং আপনাদের প্রিয়জনদের অনেক বেশি ক্ষতি করে দিতে পারে। সেজন্য আমি বিহারের জনগণের কাছে, দেশবাসীর কাছে নিজের অনুরোধ আবার রাখতে চাই। আপনারা অবশ্যই মাস্ক পড়বেন এবং ঠিকভাবে পড়বেন, দু-গজের দূরত্ব সর্বদাই মনে রাখবেন, এগুলি পালন করবেন, ভীড় এড়িয়ে চলবেন, নিজেরা ভীড় করবেন না। আপনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, আপনার ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য আরোগ্য সেতুতে যেভাবে বলা হয়েছে নিয়মিত সেরকম কাঢ়া পান করুন, ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে যান, নিয়ন্তর নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখুন, আপনারা সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন!!
আপনাদের পরিবার সুস্থ থাকুক এই কামনা সহ আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।