নমস্কার!
অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে উপস্থিত দেশের শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কজি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালজি এবং আমার মন্ত্রিসভার সদস্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী সঞ্জয় ধোতরেজি, বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর চেয়ারম্যান ডঃ রাজীব মোদীজি, সিনেট মেম্বারগণ, এই সমাবর্তনের সম্মানিত অতিথিগণ, অধ্যাপকগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীবৃন্দ এবং আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ আইআইটি গুয়াহাটির এই ২২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আপনাদের সবার সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছি। এমনিতে সমাবর্তন যে কোনও ছাত্রের জীবনে একটি বিশেষ দিন হয়। কিন্তু এবার যে ছাত্রছাত্রীরা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করছেন তাঁদের জন্য এটা একটি ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। বিশ্বব্যাপী মহামারীর এই সময়ে সমাবর্তনের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি অনেকটাই বদলে গেছে। সাধারণ পরিস্থিতি হলে তো আমি আপনাদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত হতাম। কিন্তু তবুও, এই দিন, এই মুহূর্ত ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই মূল্যবান। আমি আপনাদের সবাইকে, সমস্ত যুব বন্ধুদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রচেষ্টার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে,
জ্ঞানম বিজ্ঞান সহিতম য়ৎ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসে অশুভাৎ
– অর্থাৎ, বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞানের সমস্ত সমস্যাগুলির থেকে, দুঃখের থেকে মুক্তিসাধন – এই ভাবনা, সেবার জন্য নতুন কিছু করার এই প্রাণশক্তি, এটাই আমাদের দেশকে হাজার হাজার বছরের এই যাত্রাপথেও জীবিত রেখেছে, জীবন্ত রেখেছে। আমরা গর্বিত যে আমাদের এই ভাবনাকে আমাদের দেশের আইআইটি-র মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও আজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আপনারা সবাই আজ হয়তো অনুভব করছেন, যখন আপনারা এখানে এসেছিলেন, তখন আপনাদের মনের মধ্যে কতটা রূপান্তরণ হয়েছিল। আপনাদের চিন্তা প্রক্রিয়া কতটা বিস্তারিত হয়েছিল। আইআইটি গুয়াহাটিতে যখন আপনারা নিজেদের শিক্ষার যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আপনাদের মধ্যে ক্রমে একটি নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার বিবর্তণকে আপনারা নিজেরাই হয়তো অনুভব করেছেন। এটাই এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে, আপনাদের অধ্যাপকদের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য সবচেয়ে বহুমূল্য উপহার।
বন্ধুগণ, আমি স্পষ্টভাবে মনে করি, একটি দেশের ভবিষ্যৎ হল সে দেশের আজকের যুবসম্প্রদায় কী ভাবছে সেটা। আপনাদের স্বপ্নই ভবিষ্যতের ভারতের বাস্তব হয়ে উঠতে চলেছে। সেজন্য এই সময়টি হল ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার সময়। এই সময়টি হল নিজেদেরকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে তোলার সময়। যেভাবে যেভাবে আজ অর্থনীতি এবং সমাজে পরিবর্তন আসছে, আধুনিকতা যেভাবে পুনর্নবীকৃত হচ্ছে, ভারতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রেক্ষিতেও সেভাবে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আইআইটি গুয়াহাটি আগে থেকেই এই প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে আইআইটি গুয়াহাটি দেশের প্রথম এমন আইআইটি যেখানে ই-মোবাইলিটি নিয়ে দু'বছরের রিসার্চ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে বিজ্ঞান ও কারিগরির সংহতির ক্ষেত্রেও আইআইটি গুয়াহাটির বি-টেক লেভেলের সমস্ত পাঠ্যক্রম অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমি আস্থাবান যে এই ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি পাঠ্যক্রম আমাদের শিক্ষার সমস্ত দিককে ভবিষ্যৎমুখী এবং ভবিষ্যতের উপযোগী করে তুলবে। আর যখন এ ধরনের ভবিষ্যৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোনও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যায়, তখন তার ফলাফল বর্তমানেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে দেখা যায়।
আইআইটি গুয়াহাটি এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় 'কোভিড-১৯ রিলেটেড কিটস' যেমন, ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া, ভাইরাল আরএনএ এক্সট্র্যাকশন কিট এবং আরটি-পিসিআর কিটস উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করেছে। এমনিতে আমি এটা ভালোভাবেই বুঝতে পারি যে এই অতিমারীর সময় অ্যাকাডেমিক সেশন চালিয়ে যাওয়া, নিজেদের গবেষণার কাজ জারি রাখা – এসব কিছু আপনাদের জন্য কতটা কঠিন প্রতিপন্ন হচ্ছে। কিন্তু তবুও আপনারা এই সাফল্য পেয়েছেন। আপনাদের এই উদ্যোগের জন্য, দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে আপনাদের এই অবদানের জন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
বন্ধুগণ, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কতখানি গুরুত্ব রয়েছে এটা আপনারা সবাই খুব ভালোভাবেই জানেন। বিগত দিনগুলিতে আপনারা হয়তো জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে অনেক কিছু পড়েছেন এবং অনেক আলাপ-আলোচনাও হয়তো করেছেন। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি আমাদের একবিংশ শতাব্দীতে আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদের জন্যই রচিত হয়েছে। এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদের জন্য, যাঁরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবেন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতকে বিশ্ব নেতা করে তুলবেন। শুধু তাই নয়, এই শিক্ষানীতির মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে যা আপনাদের মতো ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছাতালিকা বা উইশ লিস্টের সবচেয়ে ওপরের দিকে ছিল।
বন্ধুগণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা এই উচ্চশিক্ষার যাত্রাপথে চলতে চলতে এটা অবশ্যই অনুভব করেছেন যে শিক্ষা এবং পরীক্ষা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জীবনে যেন বোঝা না হয়ে ওঠে, ছাত্রছাত্রীদের মনের মতো বিষয় নিয়ে পড়ার স্বাধীনতা যেন থাকে, এই দিকগুলি মাথায় রেখেই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে 'মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি' করে তোলা হয়েছে। বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা রাখা হয়েছে। মাল্টিপল এন্ট্রি অ্যান্ড একজিট-এর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, দেশের নতুন শিক্ষানীতি শিক্ষাকে প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়েছে, প্রযুক্তিকে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাভাবনার অখণ্ড অংশ করে তুলছে। অর্থাৎ, ছাত্রছাত্রীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে পড়বে, আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও পড়বে। শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা বৃদ্ধি, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এগুলির জন্য পথ খুলে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রশাসন এবং মূল্যায়ন পর্যন্ত প্রযুক্তির ভূমিকা যাতে প্রসারিত হয় সেকথা মাথায় রেখে ন্যাশনাল এডুকেশন টেকনলজি ফোরামও গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের একটি এমন ইকো-সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যেতে হবে যেখানে আমাদের যুবক-যুবতীরা প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন শিখবে, তেমন শেখানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনও করবে। আমাদের আইআইটি-র বন্ধুদের জন্য এক্ষেত্রে সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন নতুন সফটওয়্যার, নতুন নতুন ডিভাইস এবং গ্যাজেট যা শিক্ষা পদ্ধতিতে বিপ্লব আনবে, সেগুলি সম্পর্কে আপনাদেরই ভাবতে হবে। এটা আপনাদের সবার জন্য একটি সুযোগ। আপনারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ক্ষমতা বের করে আনুন এবং তাকে ব্যবহার করুন।
বন্ধুগণ, দেশের গবেষণা সংস্কৃতিকে উন্নত করতে নতুন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা এনআরএফ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এই এনআরএফ গবেষণা ক্ষেত্রে অর্থসংস্থান থেকে শুরু করে অর্থ প্রদানকারী সংস্থাগুলির সমন্বয়সাধন করবে, আর শিক্ষার সমস্ত ক্ষেত্রে বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কলার সমস্ত বিষয়ে সকলের জন্য অর্থের যোগান দেবে। যে সম্ভাবনাপূর্ণ গবেষণা হবে সেগুলিতে ফলিত বাস্তবায়নের সুযোগ থাকবে, সেগুলিকে দেওয়া হবে ও বাস্তবায়িতও করা হবে। সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পোদ্যোগগুলির মধ্যে সমন্বয় ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রায় ৩০০ নবীন বন্ধুকে পিএইচডি উপাধি দেওয়া হচ্ছে। আর, এটা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা সবাই এখানেই থেমে থাকবেন না। আপনাদের জন্য গবেষণা যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয় আর আপনাদের চিন্তা প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে ওঠে।
বন্ধুগণ, আমরা সবাই জানি যে জ্ঞানের কোনও সীমা থাকে না। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে। উদ্দেশ্য হল, আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলি যেমন খুলবে, আমাদের দেশেও তেমনই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খুলবে। সারা পৃথিবীর গ্লোবাল এক্সপোজার আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের মধ্যেই পাবেন। এভাবে ভারতীয় এবং বিশ্বের নামী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনিময় পাঠ্যক্রমকেও উৎসাহ যোগানো হবে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ওই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে যে ক্রেডিট অর্জন করবে, সেগুলি যেন আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বীকৃতি পায়, এখানেও সেগুলিকে মূল্য দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, জাতীয় শিক্ষানীতি ভারতকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা গন্তব্য রূপেও প্রতিষ্ঠিত করবে। আমাদের শ্রেষ্ঠ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিদেশেও তাদের ক্যাম্পাস চালু করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হবে। আইআইটি গুয়াহাটিকে দেশের সীমানার বাইরে প্রসারের এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলটি ভারতের 'পূর্বের জন্য কাজ করো নীতি'র একটি কেন্দ্রস্থলও বটে।
এই অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতার সদর দরজা। এই দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মূলভিত্তি সংস্কৃতি, বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ক্ষমতায়ন। এখন শিক্ষা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি নতুন মাধ্যম হয়ে উঠতে চলেছে। আইআইটি গুয়াহাটি এই মাধ্যমেরও একটি বড় কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি নতুন পরিচয়ও গড়ে উঠবে। আর এই অঞ্চলে নতুন নতুন কাজের সুযোগ গড়ে উঠবে। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নকে গতি দিতে এখানে রেলপথ, সড়কপথ, বিমানবন্দর এবং জলপথের সংহত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আইআইটি গুয়াহাটির বিকাশ এই কাজেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে।
বন্ধুগণ, আজ এই সমাবর্তনের পর অনেক ছাত্রছাত্রী এখানেই থেকে যাবেন, আবার অনেকে এখান থেকে চলেও যাবেন। আইআইটি গুয়াহাটির অন্য ছাত্রছাত্রীরাও এই সময় আমার কথা শুনছেন, আমাকে দেখছেন। আজ এই বিশেষ দিনে আমি আপনাদের কাছে কিছু অনুরোধ রাখব, কিছু পরামর্শও দেব। বন্ধুগণ, আপনাদের জীবনে এই অঞ্চলের অনেক বড় অবদান আছে। আর আপনারা এই অঞ্চলকে দেখেছেন, বুঝেছেন এবং অনুভবও করেছেন। এই অঞ্চলের যে সমস্যাগুলি রয়েছে, এই অঞ্চলের যে সম্ভাবনাগুলি রয়েছে – এসব কিছু আপনাদের গবেষণায় কিভাবে স্থান পেতে পারে সেটা আপনাদের ভাবতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস এবং জলবিদ্যুৎ শক্তি ক্ষেত্রেও এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে ধান, চা ও বাঁশের মতো সম্পদ রয়েছে। আর রয়েছে পর্যটন শিল্প যেগুলি আমাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনে প্রাণশক্তি যোগাতে পারে।
বন্ধুগণ, এখানে যে জৈব বৈচিত্র্য আর অপরিসীম পরম্পরাগত জ্ঞান এবং দক্ষতা রয়েছে, এই পরম্পরাগত দক্ষতা জ্ঞানের এমনকি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রূপান্তরণও পরম্পরার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়ে আসছে। একটি প্রজন্ম এই জ্ঞান দ্বিতীয় প্রজন্মকে দিয়েছে। তাদের থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলি এই জ্ঞান পেয়েছে। এভাবে এই প্রক্রিয়া চলে আসছিল। আমরা কি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সবকিছুকে যুক্ত করতে পারি? আমরা কি এর ফিউশনের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করতে পারি? আমি মনে করি আমরা একটি আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কৃতির জ্ঞান, দক্ষতা এবং বিশ্বাসগুলিকে সমৃদ্ধ এবং অত্যাধুনিক পেশাদার উন্নয়ন প্রকল্পে পরিণত করতে পারি? আমার পরামর্শ হল, আইআইটি গুয়াহাটি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক, আর একটি সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমস স্থাপন করুক। এর মাধ্যমে আমরা উত্তর-পূর্ব ভারত তথা দেশ ও বিশ্বকে এমন অনেক কিছু দিতে পারব যার মূল্য অপরিসীম।
বন্ধুগণ, আসাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারত দেশের এমন একটি এলাকা যা অত্যন্ত সম্ভাবনাপূর্ণ কিন্তু এই এলাকায় বন্যা, ভূমিকম্প, ধ্বস এবং অনেক শিল্প দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয়ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই বিপর্যয়গুলি প্রতিরোধে এই রাজ্যগুলির অনেক শক্তি এবং উদ্যোগ ব্যয় করতে হয়। কার্যকরীভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। আমি আইআইটি গুয়াহাটিকে অনুরোধ করব যে আপনারা একটি সেন্টার ফর ডিজাসটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এডুকেশনও স্থাপন করুন। এই কেন্দ্রটি এই এলাকার জনগণকে বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তুলবে, আর বিপর্যয়গুলিকে সুযোগে পরিণত করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আইআইটি গুয়াহাটি এবং এই প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে আসবেন। তাহলেই এই সঙ্কল্প বাস্তবে পরিণত হবে। বন্ধুগণ, বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের নিজেদের দৃষ্টিশক্তিকে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তির বিস্তৃত ক্যানভাসে ছড়িয়ে দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কি গবেষণা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উপযুক্ত এলাকাগুলি চিহ্নিত করতে পারব? এমন সব এলাকা, এমন সব বিষয় যেগুলি নিয়ে দেশের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, আমরা কি সেগুলি চিহ্নিত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে পারি?
বন্ধুগণ, আপনারা যখন বিশ্বের যেখানেই যাবেন, নিজেদের গর্বিত আইআইটিয়ান রূপে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু আমার আপনাদের প্রতি প্রত্যাশা হল, আপনাদের সাফল্য, আপনাদের গবেষণার অবদান যাতে আইআইটি গুয়াহাটির গর্বের বিষয় হয়। অধ্যাপক্রা যেন গর্বের সঙ্গে বলতে পারে যে আপনারা এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা আইআইটি গুয়াহাটিতে আপনাদের অধ্যাপকদের এই সুযোগ, এই গুরুদক্ষিণা দেবেন। গোটা দেশ, ১৩০ কোটি দেশবাসী আপনাদের ভরসা করে। আপনারা এভাবেই লাগাতার সফল হোন, আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্যের সারথী হয়ে উঠুন, নতুন নতুন অনেক শিখর স্পর্শ করুন, জীবনে যেসব স্বপ্ন সাজিয়েছেন সেই সমস্ত স্বপ্ন যেন আপনার সঙ্কল্প হয়ে ওঠে। যে সঙ্কল্প নিয়েছেন, সেগুলির মধ্যে যেন পরিশ্রমের পরাকাষ্ঠা থাকে, আর নিত্যনতুন সাফল্যের উচ্চতা অতিক্রম করে চলুন। এভাবে অনেক শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য, আপনাদের পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই করোনার সময়ে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়, আপনারা যেমন তাঁদের কথা ভাববেন, আপনাদের পরিবারও তেমনই আপনাদের কথা ভাববে, আপনাদের চারপাশের সকলের কথা ভাববেন, আপনাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন, নিজেকেও সামলে রাখবেন, চারপাশের সমস্ত আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবকে সামলে রাখবেন, সবাইকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবেন, নিজেরাও সুস্থ থাকবেন।
এই ভাবনা নিয়ে সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সবাইকে ধন্যবাদ।