হর হর মহাদেব!
উত্তর প্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজী, মঞ্চে উপবিষ্ট সকল সম্মানীয় অতিথি, কাশী সংসদ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশীগ্রহণকারীরা এবং রুদ্রাক্ষ কেন্দ্রে উপস্থিত কাশীবাসী, আমার সহ-নাগরিকবৃন্দ!
ভগবান শিবের আশীর্বাদে বর্তমানে কাশীর গৌরব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। জি-২০ শিখর সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত বিশ্ব মঞ্চে নিজের পতাকা উচ্চ স্থানে আসীন করেছে। কিন্তু, কাশী নিয়ে আলোচনা সর্বদাই বিশেষ গুরুত্ব রাখে। কাশীর পরিষেবা, সংস্কৃতি এবং সঙ্গীত – জি-২০’র সকল অতিথিরাই এই সবকিছুর জন্য কাশীকে বিশেষভাবে মনে রাখবেন।
বন্ধুগণ,
বাবার আশীর্বাদে কাশী এখন উন্নয়নের নতুন গতি লাভ করেছে। আপনারা কী তা অনুভব করছেন না করছেন না? আপনারা জবাব দিলেই আমি এর উত্তর জানতে পারবো। আমি যা বলছি, তা সত্যি বলে কী আপনারা মনে করেন? আপনারা পরিবর্তন দেখতে পারছেন? কাশী কী ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে? কাশীর নাম কী সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে?
বন্ধুগণ,
আজ আমি বেনারসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছি। সমগ্র উত্তর প্রদেশে ১৬টি অটল আবাসিক বিদ্যালয় উদ্বোধনেরও সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এই সাফল্যের জন্য কাশীবাসীকে অভিনন্দন জানাই। উত্তর প্রদেশের সমগ্র জনগণ এবং শ্রমিক পরিবারগুলিকেও জানাই অভিনন্দন।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
২০১৪ সালে আমি যখন এখান থেকে সাংসদ হয়েছিলাম, তখন কাশীর জন্য কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম। বর্তমানে উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। দিল্লির টানাপোড়েনের মধ্যেও আমি অবিরাম আপনাদের কাশী সংসদ সাংস্কৃতিক মহোৎসবে কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। আমি যখন রাতে দেরী করে ফিরি, তখনও কয়েক মিনিট সময় নিয়ে কী কাজ হচ্ছে, তা জানতে ভিডিও-গুলিকে দেখি। আপনাদের উপস্থাপনা আমি দেখেছি। অত্যন্ত মনোগ্রাহী! সুমধুর সঙ্গীত এবং দুরন্ত উপস্থাপনা! সাংসদ হিসেবে এই অঞ্চলের বহু প্রতিভার সঙ্গে আমার সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান হবে। এবারে ৪০ হাজার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ দর্শকও এসেছেন এই অনুষ্ঠান দেখতে। আগামী দিনে বেনারসের জনগণের প্রচেষ্টায় এই উৎসব কাশীর বিশেষ পরিচয় হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যাঁরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের অভিজ্ঞতা লেখেন, তবে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। সমগ্র বিশ্ব তখন জিজ্ঞেস করবে - ওহ্, আপনিও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্য কাশী শীঘ্রই নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠবে।
আমার পরিবারের সদস্যরা,
কাশী এবং এর সংস্কৃতি একে-অপরের পরিপূরক। কাশীর প্রতিটি কোণায় সঙ্গীতের সুর ধ্বনিত হয়। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই শহর ভগবান নটরাজের। নটরাজ তান্ডব থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সবরকম নৃত্যশৈলী। ভগবান শিবের ডমরু থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সঙ্গীতের সুর। কাশীতে সঙ্গীত ও নৃত্য ছাড়া কোনও উৎসবই সম্পূর্ণ হয় না, তা কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠান হোক বা বুধওয়ামঙ্গলই হোক না কেন। সঙ্কট মোচন বা দেব-দীপাবলী অনুষ্ঠানের সময়ও এখানে সঙ্গীত ও নৃত্যের নানাদিক পরিস্ফুট হয়।
বন্ধুগণ,
কাশীতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীতের বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে আপনারা তবলা, সানাই, সারেঙ্গী, সেতার, বীণার সুর শুনতে পাবেন। খেয়াল, ঠুমরি, দাদরা, চৈতি, কাজরির মতো বিভিন্ন সুর শত শত বছর ধরে এখানে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শেখানো হয়। বেনারসের তেলিয়া, পিয়ারি, রামাপুরা, কবির চৌরা এলাকাগুলি সঙ্গীতের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। বেনারসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গুরুদের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে আমার।
বন্ধুগণ,
আজ কাশী সংসদ খেল প্রতিযোগিতা পোর্টালের সূচনা হয়েছে। সংসদ খেল প্রতিযোগিতা বা সংসদ সাংস্কৃতি মহোৎসব – যাই হোক না কেন, কাশীর জন্য এ এক নতুন ঐতিহ্যের সূচনা হ’ল। আমরা এখন কাশী সংসদ জ্ঞান প্রতিযোগিতারও আয়োজন করবো। এর ফলে, কাশীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, উৎসব ও খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে জনগণের উৎসাহ বাড়বে। বেনারসের গ্রামীণ ও শহর এলাকার বিভিন্ন স্তরে এই সংসদ জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
বন্ধুগণ,
কাশীর জনগণেরও কাশী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিৎ। এখানকার সকল পরিবারই তা হলে হয়ে উঠবে কাশীর দূত। পাশাপাশি, প্রত্যেকে যেন তাঁদের জ্ঞান যথাযথভাবে বিতরণ করেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। আমি এখানে নতুন কিছু শুরু করতে চাই। আপনারা সকলে কী তাতে যোগ দেবেন? আপনারা জানেন না, আমি কী বলতে চাই, তবু ইতিমধ্যেই আপনারা সম্মতি জানিয়েছেন। দেখুন, যে কোনও পর্যটন ও তীর্থ স্থানে একজন গাইড বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সঠিক তথ্য জানা একজন গাইড। এমন কেউ নন, যিনি বলবেন, কাশী ২০০ বছরের পুরনো শহর। আবার কেউ বলবেন আড়াই বছর, আবার কেউ বলবেন ৩০০ বছর। যেখানে সত্যিটা হ’ল ২৪০ বছর পুরনো শহর এটি। বর্তমানে পর্যটন গাইড কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস। যেখানে মানুষ বেড়াতে আসেন, সেখানকার সম্পর্কে তাঁরা সঠিক তথ্য জানতে চান। এইজন্য তাঁরা অর্থ ব্যয় করতেও প্রস্তুত। তাই আমি চাই, কাশী সংসদ পর্যটন গাইড প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে। আপনারা গাইড হয়ে উঠুন। জনগণকে বিস্তারিত তথ্য দিন। এখানকার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন এবং অর্থ উপার্জন করুন। আমি এই কাজটি করতে চাই, কারণ কাশীর নাম সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক – এটাই আমার লক্ষ্য। কাশীবাসীর কাছে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাই আমি।
আমার পরিবারের সদস্যরা বেনারস বহু শতক ধরে শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে পড়তে আসেন। এমনকি, আজও বহু দেশের জনগণ বেনারসে সংস্কৃত শিখতে আসেন। এই চিন্তাভাবনাকে মাথায় রেখেই আজ এখানে আমি অটল আবাসিক বিদ্যালয় উদ্বোধন করেছি। ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আবাসিক স্কুলগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। সমাজের দুর্বলতর শ্রেণীর জনগণ, শ্রমিক শ্রেণীর জনগণের ছেলেমেয়ে এবং কোভিডে পিতামাতা হারিয়েছেন, এমন ছেলেমেয়েরা এই বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষালাভ করতে পারবে। এই বিদ্যালয়গুলিতে সঙ্গীত, শিল্পকলা, কম্প্যুটার ও খেলাধূলার প্রশিক্ষকও থাকবেন। অর্থাৎ, অনুন্নত শ্রেণীর শিশুরাও এখন গুণগত ও সুসংহত শিক্ষার সুযোগ পাবেন। একইভাবে আমরা আদিবাসী জনগণের ছেলেমেয়েদের জন্য অটল আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছি। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতিতে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার পুরনো চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছি। আমাদের বিদ্যালয়গুলি আধুনিক মানের করে গড়ে তোলা হচ্ছে। শ্রেণীকক্ষগুলিও আরও ঝকঝকে করা হচ্ছে। দেশের হাজার হাজার বিদ্যালয়কে আধুনিক করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী অভিযানের সূচনা করেছে সরকার। এর আওতায় বিদ্যালয়গুলিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
একজন সাংসদ হিসেবে কাশীতে চালু করা সব নতুন উদ্যোগেই আমি আপনাদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আমি অটল আবাসিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মধ্যে অনেকেই পাকা বাড়ি দেখেনি। কিন্তু, জীবনে উন্নতি করার জন্য দৃঢ় সংকল্প। তাদের এই আত্মবিশ্বাস আমাকে বিশেষভাবে ছুঁয়ে গেছে। আমি তাদের শিক্ষকদের অভিনন্দন জানাই। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের শিশুদের সুশিক্ষার জন্য তহবিল মঞ্জুর করে। কোথাও কোথাও তা ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয়। যোগীজীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে বেশ কিছুদিন আগে কথা হয়েছিল। তিনি শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। আজ তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অটল আবাসিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে – তাতে তাদের মেধা ফুটে উঠেছে বারবার। আমি বিশ্বাস করি, আগামী ১০ বছরে এই বিদ্যালয়গুলি কাশী ও উত্তর প্রদেশে বিশেষ পরিবর্তন আনবে।
আমার প্রিয় কাশীবাসী,
এভাবেই আপনারা আমাকে আশীর্বাদ করে যাবেন! আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
হর হর মহাদেব!