আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী পীযূষ গোয়েল, শ্রী নারায়ণ রানে, বোন শ্রীমতী দর্শনা জার্দোশ, তাঁত শিল্প ও ফ্যাশন জগতের সব বন্ধু, তাঁত ও খাদির বিশাল ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত সব উদ্যোক্তা ও তাঁত শিল্পী, এখানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
কয়েকদিন আগে জমকালো ভাবে ভারত মন্ডপমের উদ্বোধন হয়েছে। আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আগেও এখানে এসে স্টল দিয়েছেন বা তাঁবু খাটিয়েছেন। আজ আপনারা নিশ্চয়ই পরিবর্তনের ছবিটা দেখতে পারছেন। এই ভারত মন্ডপমে আজ আমরা জাতীয় তাঁত শিল্প দিবস উদযাপন করছি। ভারত মন্ডপমের এই চমৎকারিত্বের ক্ষেত্রেও দেশের তাঁত শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরনো ও নতুনের এই সঙ্গমই আজকের নতুন ভারতের সংজ্ঞা। আজকের ভারত শুধু ভোকাল ফর লোকাল নয়, একইসঙ্গে নিজের পণ্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরার এক মঞ্চ। কিছুক্ষণ আগে আমি কয়েকজন তাঁত শিল্পীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তাঁত শিল্প ক্লাস্টারগুলি থেকে আমাদের তাঁত শিল্পী ভাই ও বোনেরা আজ এখানে এসেছেন। আমি তাঁদের সবাইকে আন্তরিকভাবে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা,
আগস্ট হল বিপ্লবের মাস। ভারতের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের স্মরণের এটাই প্রকৃষ্ট সময়। এই দিনেই স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। স্বদেশী আন্দোলন কেবল বিদেশী বস্ত্র বয়কটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, একইসঙ্গে ভারতের স্বাধীন অর্থনীতির জন্য অনুপ্রেরণার এক উৎসও ছিল। এই আন্দোলনে ভারতের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁত শিল্পীদের মেলবন্ধন ঘটেছিল, আর সেকথা মাথায় রেখে সরকার এই দিনটিকে জাতীয় তাঁত দিবস হিসেবে উদযাপন করছে। গত কয়েক বছরে তাঁত শিল্পের প্রসার এবং তাঁত শিল্পীদের কল্যাণে নজিরবিহীন কাজ হয়েছে। দেশে এখন স্বদেশী নিয়ে এক নতুন বিপ্লব এসেছে। সামনেই ১৫ আগস্ট, এই সময়ে লালকেল্লার প্রাকার থেকে এই বিপ্লবের কথা বলতে আমার তো ইচ্ছে করবেই। কিন্তু আজ, সারা দেশের অসংখ্য তাঁত শিল্পী বন্ধু আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সামনে তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের সুবাদে ভারতের এই সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আমার হৃদয় গর্বে ভরে উঠছে।
বন্ধুরা,
আমাদের পোশাক, পোশাকের ধরনের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের একটা যোগসূত্র আছে। বিভিন্ন ধরণের পোশাকশৈলী আছে। একজনের পোশাকের ধরণ দেখে বলে দেওয়া যায় তিনি কোন্ অঞ্চলের মানুষ। সেজন্যই আমাদের বৈচিত্র্যই আমাদের পরিচয়। একদিক থেকে দেখলে পোশাক আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপন করার একটা সুযোগ এনে দেয়। নতুন বা আলাদা পোশাকের দিকে আমাদের চোখ চলে যায়। ভারতে পোশাকের এক বর্ণময় রামধনু রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যে আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে, তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চলে যাঁদের ঘরবাড়ি, উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দা যাঁরা, মরুভূমিতে যাঁরা থাকেন, যাঁরা সমতলের অধিবাসী – তাঁদের প্রত্যেকের পোশাকের মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। এই বৈচিত্র্যকে তালিকাভুক্ত করে এর সঙ্কলনের কথা আমি একবার বলেছিলাম। আজ ভারতীয় বস্ত্র এবং শিল্পকোষের সূচনার মধ্য দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন হল বলে আমার খুব ভালো লাগছে।
বন্ধুরা,
ভারতের শিল্প এক সময়ে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর এর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি, এর পুনরুজ্জীবনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। এমনকি খাদি শিল্পকেও মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। যাঁরা খাদি পরতেন তাঁদের খাটো করে দেখা হতো। ২০১৪ সালের পর আমাদের সরকার এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়। আমার মনে আছে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের গোড়ার দিনগুলিতে আমি দেশের মানুষের কাছে খাদির পোশাক কেনার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এর ফল কী হয়েছিল তা আজ আমরা সবাই দেখতে পারছি। গত ৯ বছরে খাদির উৎপাদন ৩ গুণেরও বেশি বেড়েছে। খাদির বিক্রি বেড়েছে ৫ গুণ বেশি। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও খাদির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। কয়েকদিন আগে প্যারিস সফরের সময়ে আমি একটি খুব বড় ফ্যাশান ব্র্যান্ডের সিইও-র সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনিও আমাকে বলেছিলেন, খাদি ও ভারতীয় তাঁত নিয়ে বিদেশে মানুষের আগ্রহ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
বন্ধুরা,
৯ বছর আগে খাদি ও গ্রামোদ্যোগের ব্যবসার পরিমাণ ছিল মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে। বর্তমানে তা বেড়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত ৯ বছরে এই শিল্পে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থের প্রবাহ এসেছে। এই টাকা কোথায় গেছে? এই টাকা গেছে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত আমার গরিব ভাই বোনেদের হাতে; এই টাকা গেছে গ্রামে; এই টাকা গেছে আদিবাসীদের হাতে। নীতি আয়োগের প্রতিবেদন অনুসারে তাঁত শিল্পের ব্যবসা বাড়ায় গত ৫ বছরে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ভোকাল ফর লোকালের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নাগরিকরা এখন সর্বতোভাবে দেশীয় পণ্য কিনছেন, এটি এখন এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমি আবারও দেশের মানুষের কাছে একটি আর্জি রাখছি। সামনেই আসছে রাখিবন্ধন, গণেশ উৎসব, দশেরা, দীপাবলি, দুর্গা পূজোর মতো বিভিন্ন উৎসব। এই উৎসবগুলির সময় আমাদের স্বদেশী সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করতে হবে, তবেই আমরা আমাদের কারিগর, তাঁত শিল্পী ভাইবোন এবং তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো। রাখিবন্ধন উৎসবে বোন তার ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দেয়, ভাই তার বোনকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই সময়ে সে যদি বোনকে গরিব মায়ের তৈরি করা কোনো সামগ্রী উপহার দেয়, তাহলে সে একইসঙ্গে মাকেও রক্ষা করতে পারে।
বন্ধুরা,
বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলি একইসঙ্গে সামাজিক ন্যায়ের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠায় আমার খুব ভালো লেগেছে। দেশজুড়ে গ্রাম ও শহরগুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এদের অধিকাংশই দলিত, অনগ্রসর, পাসমান্দা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত। গত ৯ বছরে সরকারের উদ্যোগে এই ক্ষেত্রে শুধু কর্মসংস্থানই বিপুলভাবে বাড়েনি, তাঁত শিল্পীদের উপার্জনও বেড়েছে। বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস সংযোগ, স্বচ্ছ ভারত প্রভৃতি প্রকল্পের সর্বাধিক সুফল এই মানুষেরাই পেয়েছেন। মোদী আপনাদের বিনামূল্যে রেশনের গ্যারান্টি দিয়েছে। আর মোদীর গ্যারান্টি দেওয়া মানে সারা বছর আপনি অবশ্যই পেট ভরে খাবারের সংস্থান করতে পারবেন। মোদী আপনাদের পাকা বাড়ির গ্যারান্টি দিয়েছে, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার গ্যারান্টি দিয়েছে। জীবনের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য তাঁত শিল্পীরা দশকের পর দশক ধরে যে অপেক্ষা করে এসেছেন, আমরা তাঁর অবসান ঘটিয়েছি।
বন্ধুরা,
সরকার শুধু বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য বজায় রাখার উপরেই গুরুত্ব দেয়নি, এই ক্ষেত্রকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার উপরেও জোর দিয়েছে। সেজন্যই সরকার তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উপার্জনের দিকে নজর দিয়েছে এবং তাঁত ও হস্তশিল্পীদের সন্তানদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পুরণে মনোযোগী হয়েছে। তাঁত শিল্পীদের ছেলে মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৯ বছরে ৬০০-রও বেশি তাঁত ক্লাস্টার গড়ে তোলা হয়েছে এবং হাজার হাজার তাঁত শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাজ সহজ করতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং পণ্যের গুণমান ও নকশা উন্নত করতে সরকার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অঙ্গ হিসেবে তাঁত শিল্পীদের কম্পিউটার চালিত পাঞ্চিং মেশিন দেওয়া হয়েছে। এতে খুব চটপট নতুন ডিজাইন তৈরি করা যায়। সরকার তাঁত শিল্পীদের সস্তায় কাঁচামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, কাঁচামাল পরিবহণের খরচও সরকার বহন করছে। মুদ্রা যোজনায় তাঁত শিল্পীরা এখন ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ পেতে পারেন।
বন্ধুরা,
আমি যখন গুজরাটে ছিলাম তখন সেখানকার তাঁত শিল্পীদের সঙ্গে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি। আমার সংসদীয় কেন্দ্র কাশী অঞ্চলের অর্থনীতিতেও তাঁত শিল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমি প্রায়শই তাঁত শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করি, কথা বলি। সেজন্যই আমি এই শিল্পের বাস্তব সমস্যাগুলি জানি। সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা এবং বিপণনের ব্যবস্থা করা আমাদের তাঁত শিল্পীদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সরকার এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে। হাতে তৈরি পণ্যের বিপণনের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও একটি করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। সেজন্যই সরকার দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরে ভারত মন্ডপমের মতো প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এইসব প্রদর্শনীতে শিল্পী ও কারিগরদের বিনামূল্যে স্টল দেওয়ার পাশাপাশি দৈনিক ভাতা দেওয়া হয়। খুবই আনন্দের বিষয় যে আমাদের যুব সমাজ, নতুন প্রজন্ম এবং নতুন স্টার্ট-আপগুলি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং হস্ত ও তাঁত শিল্পের বিপণনে নতুন কৌশল ও উদ্ভাবনের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে। এর ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এখন ‘এক জেলা এক পণ্য’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলার বিশেষ পণ্যকে তুলে ধরা হচ্ছে। এইসব পণ্যের প্রসার ও বিক্রির জন্য দেশজুড়ে রেল স্টেশনগুলিতেও বিশেষ স্টল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্য এবং জেলার তৈরি তাঁত ও হস্তশিল্প সামগ্রীকে এক ছাদের তলায় এনে সেগুলির প্রচারের জন্য সরকার প্রতি রাজ্যের রাজধানীতে একতা মল তৈরি করছে। এতে আমাদের তাঁত শিল্পী ভাই বোনেরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। আমি জানি না, আপনারা গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি দেখেছেন কি না। সেখানে একটা একতা মল গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তের তাঁত শিল্পী ও কারিগররা যে পণ্য তৈরি করছেন, তা সেখানে রয়েছে। ফলে সেখানে যাওয়া পর্যটকরা ওই একতা মল থেকে ভারতের যে কোনো প্রান্তের জিনিস কিনতে পারছেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের স্বাদও পাচ্ছেন তাঁরা। দেশের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে এই একতা মল গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এগুলো আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানেন? প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি যখন বিদেশে যাই, তখন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আমাকে কিছু উপহার নিয়ে যেতে হয়। আমি সবসময়ই উপহার হিসেবে সেইসব সামগ্রীই নিয়ে যাই যেগুলো আপনারা তৈরি করেন। তাঁরা এই উপহার পেয়ে শুধু এর প্রশংসাই করেন না, আমি যখন তাঁদের বলি এটা অমুক গ্রামের অমুক মানুষেরা তৈরি করেছেন, তখন তা তাঁদের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
বন্ধুরা,
আমাদের তাঁত শিল্পের ভাই বোনেরা যাতে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সুফল পেতে পারেন, তার প্রচেষ্টা চলছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, সরকার পণ্য সামগ্রী কেনা ও বিক্রির জন্য একটি পোর্টাল তৈরি করেছে – সরকারি ই-মার্কেট প্লেস – জেম। প্রান্তিকতম শিল্পী, কারিগর ও তাঁত শিল্পীরাও এর মাধ্যমে নিজের পণ্য সরাসরি সরকারকে বিক্রি করতে পারেন। বিপুল সংখ্যক তাঁত শিল্পী এর সুবিধা পাচ্ছেন। হস্ত ও তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার সংগঠন বর্তমানে জেম পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত।
বন্ধুরা,
বিশ্বের বৃহত্তম বাজার যাতে তাঁত শিল্পীরা পান সেই লক্ষ্যে সরকার সুস্পষ্ট কৌশল নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলি এখন ভারতের তাঁত শিল্পী, কারিগর, কৃষক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলির পণ্য নিতে আগ্রহী হচ্ছে। এই ধরণের বহু কোম্পানীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়েছে। এদের বিশ্বজুড়ে বড় বড় দোকান, খুচরো বিপণী শৃঙ্খল, অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে। এই কোম্পানিগুলি এখন ভারতের স্থানীয় পণ্য বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেবে। এইসব বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থাগুলি আমাদের মিলেট বা শ্রীঅন্ন, তাঁতের পণ্য সহ সবকিছুই বিশ্বের বাজারে পৌঁছে দেবে। এই পণ্যগুলি ভারতে তৈরি, ভারতের মানুষের ঘামের গন্ধ এতে মিশে রয়েছে কিন্তু এর সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলবে এইসব বহুজাতিক সংস্থা। এর ফলে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।
বন্ধুরা,
সরকার যখন এই সব প্রয়াস চালাচ্ছে, তখন বস্ত্র শিল্প ও ফ্যাশান দুনিয়ার সঙ্গে জড়িত বন্ধুদের আমি একটা কথা বলতে চাই। আজ আমরা বিশ্বের প্রথম তিনটি অর্থনীতির মধ্যে একটি হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। এই সময় আমাদের ভাবনা চিন্তা ও কাজের পরিধিও আরও বাড়াতে হবে। আমরা চাই আমাদের তাঁত শিল্প, আমাদের খাদি, আমাদের বস্ত্রশিল্প বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠুক। কিন্তু এটা বাস্তবে পরিণত করতে হলে সকলের সহযোগিতা দরকার। শ্রমিক, তাঁত শিল্পী, ডিজাইনার, শিল্পমহল – প্রত্যেকের একনিষ্ঠ প্রয়াস প্রয়োজন। ভারতের তাঁত শিল্পীদের দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদনের মাত্রাকে যুক্ত করতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে প্রযুক্তিকে। ভারতে এখন আমরা এক নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান দেখছি। প্রতিটি পণ্যের জন্য ভারতে বিপুল পরিমাণ তরুণ ক্রেতা সৃষ্টি হয়েছে। বস্ত্র কোম্পানিগুলির কাছে এ এক বিশাল সুযোগ। সেজন্যই স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করে তোলা এবং এতে বিনিয়োগ করা এই কোম্পানিগুলির দায়িত্ব। বিদেশ থেকে রেডিমেট পণ্য আমদানির মানসিকতা আমাদের ত্যাগ করতে হবে। আজ আমরা যখন মহাত্মা গান্ধীকে স্মরণ করছি, তখন আমাদের আরও একবার সংকল্প নিতে হবে যে, আমরা আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকবো না। এত তাড়াতাড়ি এটা কিভাবে হবে, এত তাড়াতাড়ি স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খল কী করে গড়ে উঠবে, দয়া করে এসব অজুহাত দেবেন না। ভবিষ্যতের ফসল ঘরে তুলতে হলে এখন আমাদের স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতেই হবে। এটাই উন্নত ভারত গড়ে তোলার পথ, এটাই আমাদের স্বপ্ন পূরণের পথ, এটাই ভারতীয় অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার পথ, এটাই ভারতকে বিশ্বের প্রথম তিনটি অর্থনীতির মধ্যে সামিল করার পথ। এই পথ অনুসরণ করলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো; আমাদের স্বদেশীর স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হবে।
বন্ধুরা,
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যাঁরা নিজেকে এবং নিজের দেশকে মর্যাদা দেন, সেজন্য গর্ব অনুভব করেন তাঁদের সবার পোশাক হল খাদি। যাঁরা স্বনির্ভর ভারতের স্বপ্ন বুনছেন, যাঁরা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র উপর জোর দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে খাদি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি একটি অস্ত্র।
বন্ধুরা,
আগামী পরশু আগস্টের ৯ তারিখ। আজকের দিনটি যেমন স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তেমনি ৯ আগস্ট ভারতের বৃহত্তম আন্দোলনগুলির মধ্যে একটির সাক্ষী। এই দিনেই পুজ্য বাপুজীর নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। বাপু ব্রিটিশদের স্পষ্ট বলেছিলেন - ভারত ছাড়ো। এর পরই দেশে এমন চেতনার সৃষ্টি হয়েছিল যাতে ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। আজ বাপুর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে একইরকম ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে আমাদের এগিয়ে চলতে হবে। যে কারণে ব্রিটিশদের তাড়াতে হয়েছিল, সেই একইরকম কারণ আজও দেখা দিয়েছে। আজ আমরা একটা স্বপ্ন দেখছি, উন্নত ভারত গড়ে তোলার সংকল্প আমাদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কিছু অপশক্তি আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াচ্ছে। সেজন্যই আজ সারা ভারত সমস্বরে বলছে – ভারত ছাড়ো, দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, পরিবারতন্ত্র ভারত ছাড়ো, তোষণবাদ ভারত ছাড়ো। এইসব অপশক্তি আজ দেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ খাড়া করে তুলেছে। আমরা আমাদের সমবেত প্রয়াসে এই অপশক্তিগুলিকে পর্যুদস্ত করতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। তবেই ভারতের জয় হবে; দেশের জয় হবে; প্রতিটি দেশবাসীর জয় হবে।
বন্ধুরা,
১৫ আগস্ট ‘হর ঘর তেরঙ্গা’। বছরের পর বছর ধরে দেশের জাতীয় পতাকা তৈরি করে আসছেন, এমন কিছু বোনের সঙ্গে আজ আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছি। গতবারের মতো এবারও এবং আগামী প্রতি বছরও ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ অভিযানকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেউ যখন তাঁর বাড়ির ছাদে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, আর সেই পতাকা পত পত করে উঠতে থাকে তখন তা শুধু আকাশেই ওড়ে না, আমাদের মনের ভেতরেও ওড়ে। আমি আপনাদের সবাইকে জাতীয় তাঁত দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের অজস্র ধন্যবাদ!