নমস্কার !
আপনারা আজ আবুধাবিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিভিন্ন প্রান্ত এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আপনারা এসেছেন। কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যে হৃদয়ের টান রয়েছে। এই ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামের প্রতিটি হৃদস্পন্দন বলছে – ভারত ইউএই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হোক! প্রতিটি কণ্ঠ বলছে – ভারত ইউএই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হোক। আজ আমরা এখান থেকে সেইসব স্মৃতি সঙ্গে করে নিয়ে যাব, যা আমাদের সঙ্গে জীবনভর থেকে যাবে।
আমার ভাই ও বোনেরা,
আজ আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে এসেছি। আমি সেই দেশের সুরভি নিয়ে এসেছি, যেখানে আপনারা জন্মগ্রহণ করেছেন। আমি আপনাদের জন্য ১৪০ কোটি ভারতীয় ভাইবোনের একটি বার্তা নিয়ে এসেছি। আর সেই বার্তাটি হল, ভারত আপনাদের জন্য গর্বিত এবং আপনারা দেশের গর্ব। আপনাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আবুধাবির আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ আমাকে অভিভূত করেছে। সময় বাঁচিয়ে এখানে আসার জন্য আমি আপনাদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
বন্ধুগণ,
আজ আমাদের মধ্যে রয়েছেন মান্যবর শেখ নাহিয়ান। তিনি একজন ভালো বন্ধু এবং ভারতীয়দের শুভাকাঙ্খী। ভারতীয়দের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রশংসনীয়। এই অনবদ্য অনুষ্ঠানের জন্য আমি আমার ভাই শেখ মহম্মদ বিন জায়েদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁর সহায়তা ছাড়া এ ধরনের অনুষ্ঠান সম্ভব ছিল না। ২০১৫ সালে আমার প্রথম সফরের কথা মনে পড়ছে। তিন দশক পর সেটা ছিল কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর। কূটনীতির দুনিয়া তখন আমার কাছে একেবারে নতুন ছিল। সেই সময় যুবরাজ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁদের পাঁচ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন। আমি তাঁদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখেছি, তা কখনও ভুলবো না। প্রথম বৈঠকে আমার মনে হয়েছিল, আমি যেন কোনো প্রিয়জনের বাড়িতে এসেছি। পরিবারের একজন সদস্যের মতোই তাঁরা আমাকে সম্মান দিয়েছেন। কিন্তু বন্ধুগণ, এই সম্মান আমার একার নয়, এই সম্মান, এই অভ্যর্থনা ১৪০ কোটি ভারতীয়ের। এই সম্মান সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বসবাসকারী প্রতিটি ভারতীয়ের।
বন্ধুগণ,
সেই দিন আর আজকের দিন, গত ১০ বছরে এটি আমার সপ্তম আমিরশাহি সফর। ভাই শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আজও আমাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। তাঁর সেই উদ্দীপনা এবারও একই রকম দেখেছি।
বন্ধুগণ,
আমি আনন্দিত যে, ভারতেও আমরা চার বার তাঁকে স্বাগত জানানোর সুযোগ পেয়েছি। এই কয়েকদিন আগে তিনি গুজরাট সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তার দু-ধারে দাঁড়িয়ে তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ আমিরশাহিতে তিনি আপনাদের যত্ন নিয়ে থাকেন, আপনাদের স্বার্থের দিকে নজর রাখেন, এটা অত্যন্ত বিরল। সেই কারণেই মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন।
বন্ধুগণ,
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আমাকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দ্য অর্ডার অফ জায়েদ-এ ভূষিত করেছে। এই সম্মান শুধু আমার নয়, এটি লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের সম্মান, এটি আপনাদের সম্মান। আমি যখনই আমার ভাই শেখ মহম্মদ আল জায়েদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, তখনই সব ভারতীয়ের খুব প্রশংসা করেন। আমিরশাহির উন্নয়নে আপনাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এমনকি এই জায়েদ স্টেডিয়ামের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে আপনাদের শ্রম। কোভিডের সময় আমরা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে উদ্বিগ্ন হতে বারণ করেছিলেন। টিকা সহ ভারতীয়দের চিকিৎসায় সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে আমি যখন আবুধাবিতে একটি মন্দির তৈরির প্রস্তাব দিই, তিনি কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ তাতে সায় দিয়েছিলেন। এমনকি পছন্দমত জমিও দেন। এখন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আবুধাবিতে সেই মন্দির উদ্বোধনে এসেছি।
বন্ধুগণ,
স্থলে এবং মহাকাশে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বন্ধুত্ব এক নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা একে অন্যের অগ্রগতিতে পরস্পরের সঙ্গী হয়েছি। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হল মেধা, উদ্ভাবন এবং সংস্কৃতি। এখন সব ক্ষেত্রে আমাদের এই সম্পর্ক প্রসারিত হচ্ছে। আমিরশাহি আজ ভারতের তৃতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। আমিরশাহি এখন ভারতে সপ্তম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। আমরা দুই দেশই মানুষের জীবনযাত্রা ও ব্যবসার পথ সহজ করার লক্ষ্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করে চলেছি। এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে আজ আমরা একগুচ্ছ চুক্তি করেছি। প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও ভারত ও আমিশাহির মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
গোষ্ঠীগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত ও আমিরশাহি যা অর্জন করেছে, তা গোটা বিশ্বের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। বাস্তবিকপক্ষে আমরা এক উন্নত ভবিষ্যতের সূচনা করছি। হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের দু-দেশের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন রয়েছে এবং ভারতের আশা, দিন দিন এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে।
বন্ধুগণ,
আমি জানতে পেরেছি, এই স্টেডিয়ামে এখন শত শত পড়ুয়া উপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে আমিরশাহিতে ১.২৫ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী ভারতীয় স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করছেন। এই তরুণ বন্ধুরাই ভারত ও আমিরশাহির সমৃদ্ধির শরিক হতে চলেছেন। মান্যবর শেখ মহম্মদ বিন জায়েদের সহায়তায় গত মাসে আইআইটি দিল্লির আবুধাবি ক্যাম্পাসে স্নাতকোত্তর পাঠক্রমের সূচনা করা হয়েছে। দুবাইতে শিগগিরি সিবিএসই-র কার্যালয় চালু হতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আজ প্রতিটি ভারতীয়ের লক্ষ্য হল, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলা। কোন দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে? আমাদের ভারত ! কোন দেশ স্মার্ট ফোনে সবচেয়ে বেশি ডেটা ব্যবহার করে? আমাদের ভারত ! কোন দেশ সবচেয়ে বেশি দুগ্ধ উৎপাদন করে? আমাদের ভারত ! ইন্টারনেট ব্যবহারে কোন দেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে? আমাদের ভারত ! কোন দেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল প্রস্তুত করে? আমাদের ভারত ! কোন দেশে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম রয়েছে? আমাদের ভারত ! কোন দেশ প্রথম প্রয়াসেই মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গিয়েছিল? আমাদের ভারত ! কোন দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পতাকা পুঁতে দিয়েছিল? আমাদের ভারত ! কোন দেশ একসঙ্গে ১০০টির বেশি উপগ্রহ উৎক্ষেপণের রেকর্ড গড়েছিল? আমাদের ভারত ! কোন দেশে ৫জি প্রযুক্তির কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে? আমাদের ভারত !
বন্ধুগণ,
মাত্র ১০ বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বে একাদশতম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। আপনারা কি জানেন মোদী গ্যারান্টি কী? মোদী তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে, ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করার গ্যারান্টি দিয়েছে এবং মোদীর গ্যারান্টির অর্থ হল, এই গ্যারান্টি পূর্ণ হবেই। আমরা ৪ কোটি পরিবারকে পাকা বাড়ি দিয়েছি। ১০ কোটির বেশি পরিবারে নলবাহিত জল সংযোগ প্রদান করেছি। ৫০ কোটির বেশি মানুষকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আওতায় এনেছি। ৫০ কোটির বেশি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসার সুবিধার্থে ১.৫ লক্ষের বেশি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির গড়ে তুলেছি।
বন্ধুগণ,
যাঁরা সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন, তাঁরা দেখেছেন, ভারত এখন কীভাবে দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে। আজকের ভারতে আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হচ্ছে। আজকের ভারতে নতুন বিমান বন্দর, আধুনিক রেল স্টেশন গড়ে উঠছে। ভারতে বড় বড় পরিকাঠামো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ভারত বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে ডিজিটাল বিপ্লবের সঙ্গে আপনারা সবাই পরিচিত। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার প্রশংসা আজ বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে আমিরশাহিতে আমাদের সহকর্মীরাও এর থেকে উপকৃত হন। আমরা এখানে রুপে কার্ড চালু করেছি।
বন্ধুগণ,
শিগগিরই আমিরশাহিতে ইউপিআই চালু করা হবে। ভারত গোটা বিশ্বের কাছে স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে উঠেছে। গোটা বিশ্ব মনে করে যে, বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি আনন্দিত যে, ভারত এবং আমিরশাহি একত্রে এই বিশ্বাসের ভিতকে মজবুত করছে। গত ১০ বছরে আপনারা দেখেছেন, বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়রা যখনই সমস্যায় পড়েছে, সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে।
বন্ধুগণ,
২১ শতকের জন্য ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একসঙ্গে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করছে। আপনারা সবাই এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আপনারা এখানে যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, তা ভারতকে শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন এবং ভারত ও আমিরশাহির মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে মজবুত করার কাজ অব্যাহত রাখুন। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি আবার আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার সঙ্গে বলুন : ভারত মাতা কি জয় ! ভারত মাতা কি- জয় ! ভারত মাতা কি- জয় !
আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা যেখানেই থাকুন, আমি যেন যথার্থভাবে আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারি। আপনারা কি আমাকে সাহায্য করবেন?
ভারত মাতা কি- জয় !
ভারত মাতা কি- জয় !
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।